এখন সময়:রাত ১১:০০- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১১:০০- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

‘আত্মপরিচয়’ এবং রবীন্দ্রনাথ 

সৌভিক চৌধুরী

রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশি বছরের দীর্ঘ জীবনে সাহিত্য এবং সঙ্গীতের অজগ্র কীর্তি মানুষকে দিয়ে গেছেন। এই কীর্তিমান হওয়ার পেছনে নিরহঙ্কারী চেতনার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে প্রকাশিত  হওয়ার আকাক্সক্ষা তাঁর মধ্যে দেখা যায়। জীবনের মাঝামাঝি এসে তিনি নিজের সম্পর্কে পরিচয়ের এক বার্তা দেয়ার সূচনা করেছিলেন। তাঁর এ অভিপ্রায় মূলত আত্মজীবনী লেখার চাইতে নিজের পরিচয়ের বিশেষ প্রকাশকে  প্রাধান্য দিয়েছিল , যা সাহিত্য সঙ্গীতের চর্চার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করে। আর তা করতে গিয়ে তাঁর ‘আত্মপরিচয় ‘প্রবন্ধের অবতারণা। এতে ৫টি প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হয়েছে এবং সর্বশেষ প্রবন্ধটি তিনি লিখেন জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৭ অর্থাৎ ১৯৪১ সালে মৃত্যুর দুই মাস আগে । রবীন্দ্রনাথের সাথে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের একসময়কার বিরোধের প্রেক্ষিতে বলা যায় কবিগুরু এই প্রবন্ধের অবতারণা করেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাথে রবীন্দ্রনাথের বিরোধ একসময় বাংলা সাহিত্যকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিলো যা ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধের মাধ্যমে সূচনা হয়।

দ্বিজেন্দ্রলাল এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের অহমিকার সন্ধান পেয়েছিলেন। বঙ্গদর্শন সম্পাদকের আহ্বানে রবীন্দ্রনাথ জবাবও দিয়েছিলেন এক অনন্য কায়দায়। তিনি বলছেন “আমি মনে জানি, অহংকার প্রকাশ করিবার অভিপ্রায় আমার ছিলনা। অত্যন্ত সাধারন কথারও যখন জীবনের বিশেষ অবস্থায় বিশেষ উপলব্ধি হয়, তখন আমাদিগকে হঠাৎ একটা আলোকের মত চমৎকৃত করিয়া দেয়। নিজের কথা বলা মাত্রেই  অহমিকা আছে। আত্মজীবনী লিখিতে গেলে সেই আত্মাকে বাদ দিয়া লেখা চলে না, সেই অনিবার্য অহমিকার জন্যই আমি উক্ত লেখার আরম্ভে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছিলামÑ এটাকে ইচ্ছাপূর্বক অহংকার করিতে বসিয়া  মাপ চাওয়ার বিড়ম্বনা বলিয়া মনে করিবেন না।‘

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য সাধনার মাঝে কখনো আত্মতুষ্টি খোঁজেননি। ‘আত্মপরিচয়ের’ দ্বিতীয় প্রবন্ধে এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য চোখে পড়ে। সাহিত্যে দেবার মতো যা তিনি যোগ্য মনে করেছেন  তাই তিনি দিয়েছেন, লোকে যা দাবি করেছে তা যোগাতে তিনি চেষ্টা করেননি। তাঁর নিজের মতো করে তিনি দিয়েছেন, তাঁর কাব্য পাঠকের  কাছে কতটা সমাদরণীয় তিনি তা কখনো খুঁজে দেখেননি। তিনি বলছেন, ‘যে ছন্দে যে ভাষায় একদিন কাব্যরচনা আরম্ভ করিয়াছিলাম তখনকার কালে তাহা আদর পায় নাই এবং এখনকার কালেও যে তাহা আদরের যোগ্য তাহা আমি বলিতে চাই না। কেবল আমার বলিবার কথা এই যে, যাহা আমার তাহাই আমি অন্যকে দিয়াছিলামÑ ইহার চেয়ে সহজ সুবিধার পথ আমি অবলম্বন করি নাই। অনেক সময় লোককে বঞ্চনা করিয়াই খুশি করা যায়Ñ কিন্তু সেই খুশিও কিছুকাল পরে ফিরিয়া বঞ্চনা করে সেই সুলভ খুশির দিকে লোভ দৃষ্টিপাত করি নাই। ‘কবিগুরু অনেকটা ত্যাগের মনোভাব নিয়ে নিজেকে এগিয়ে  নিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ পরিচয়ে নিজে যেমন ছিলেন একজন কবি, তাঁর নিজের ভেতরেও একজন কবি প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে ,তাই তো তিনি সেই কবিকেও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেন সমাজের জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিভূ হিসেবে । কবিগুরুর  জীবন যেমন গড়ে উঠেছে সুখদুঃখ , যোগবিয়োগ আর  বিচ্ছিন্নতাকে কেন্দ্র করে তেমনি এক সৃষ্টিশীলতার  অখন্ড তাৎপর্য তাঁকে নিয়ে গেছে বিপুল খ্যাতির অনন্য উচ্চতায়। তাঁর ভেতরের সেই কবি এক সুগভীর বেদনার দ্বারা , বিচ্ছেদের দ্বারা, বিপুলের সাথে, বিরাটের সাথে তাঁকে যুক্ত করে দিচ্ছে। যে কবি তাঁর সমস্ত ভালোমন্দ , অনুকূল -প্রতিকূল উপকরণ নিয়ে জীবনকে রচনা করে চলেছে তাকে তাঁর কাব্যে তিনি অভিহিত করেছেন ‘জীবনদেবতা’  হিসেবে। এই ‘জীবনদেবতা’ শুধু যে ইহজীবনের সমস্ত খ-তাকে ঐক্যদানের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে রবীন্দ্রনাথকে সামঞ্জস্যময় করেছে তাই নয়, অনাদিকাল থেকে বিচিত্র বিস্মৃত অবস্থার মধ্য দিয়ে তাঁকে তাঁর বর্তমানকে প্রকাশের অবস্থায় নিয়ে গেছে। এই ‘জীবনদেবতাকে ‘অবলম্বন করেই কবি এই জগতের তরুলতা পশুপক্ষীর সাথে একটা পুরানো ঐক্য অনুভব করেছেন। তাইতো এই রহস্যময় বিশাল জগতকে তাঁর অনাত্মীয় ও ভীষণ বলে মনে হয়না। প্রকৃতির সাথে এক নিবিড় সম্পর্কে  রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে যান। এটি তাঁকে আরও সৌন্দর্যপ্রেমী হিসেবে আমাদের  কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।

‘আত্মপরিচয় ‘প্রবন্ধগুচ্ছের তৃতীয় প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ধর্মতত্ত্ব এবং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ধর্মের বিশেষ রূপ নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা যে ধর্মের মানে বুঝি সেটি ‘সম্প্রদায়গত’ অর্থে ব্যপকভাবে প্রকাশিত । কিন্তু না ,সেটি আমাদের পরিচয় হতে পারে না । কবিগুরুর মতে, ‘একটি ধর্ম মনের ভিতর গোপন থেকে তাকে সৃষ্টিময় করে তুলেছে। একটি প্রাণধর্ম অন্তরে অস্তিত্বের জানান দেয়। তিনি মনে করেন ‘মানুষের আর একটি প্রাণ আছে , সেটা শারীর প্রাণের চেয়ে বড়ো সেইটে তার মনুষ্যত্ব। এই প্রাণের ভিতরকার সৃজনী  শক্তিই হচ্ছে তার ধর্ম। ‘অর্থাৎ যতই বলি আমরা হিন্দু ,মুসলমান, খ্রিস্টান, বৈষ্ণব কিংবা শাক্ত, এগুলো তো বিশেষ একটি পরিচয় বহন করে, যা সম্প্রদায়গত, কিন্তু মনুষ্যত্বের অনুভব অন্তরাত্মায়  উদ্ভূত  একটি বিশেষ বিষয়।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের ধর্মের আদর্শ নিয়ে ভেবেছেন। তিনি যখন তাঁর নিজের ধর্মকে নিয়ে ভাবেন তখন তিনি মনে করেন না যে তিনি বিশেষ কোনো ধর্মে সিদ্ধি লাভ করেছেন।  তিনি সমস্তকে নিয়ে সম্পূর্ণ থাকার পক্ষপাতী ।অর্থাৎ সত্যকে সমগ্রতার মধ্যে নিয়ে আসতে হয়। সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতির মাঝে যে একটি সুষমা রয়েছে তার পরেও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা আর বৈষম্য। এসবকে তুচ্ছ করে নয় বরং তাকে গ্রহণ করে নেয়াটাই সংগত। তিনি বলেছেন,‘শিব যেমন সমুদ্র মন্থনের সমস্ত বিষকে পান করে, তবেই সে  শিব। তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা করে তবে শিব। তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা করে পৃথিবীটি বস্তুত যেমন, অর্থাৎ নানা  অসমান অংশে বিভক্ত, তাকে তেমনি করে জানার সাহস থাকা চাই। “তাই সমস্তের প্রতি অনুগত করেই নিজেকে  তিনি প্রকাশ করেছেন। এই ‘সমস্তের’ মধ্যে মৃত্যু, ভয়, জীবন, শক্তি, প্রেম, স্বার্থ, শান্তি এ সব কিছুই আছে। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার পরিচয় পাওয়া যায়। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে রয়েছে, জীবনের প্রতি তার যথার্থ শ্রদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায়নি। কবিগুরুর ভেতরে ধর্মতত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, পরমেশ্বরের আত্মার সাথে জীবাত্মার যে পরিপূর্ণ প্রেম তাতেই ধর্মবোধের উপলব্ধি এবং এই প্রেমের একদিকে দ্বৈত, আরেকদিকে অদ্বৈত, একদিকে বিচ্ছেদ আরেকদিকে মিলন, একদিকে বন্ধন অন্যদিকে মুক্তি।

রবীন্দ্রনাথ একজন কবি এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন, তাইতো তিনি বিশ্বকবি। ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধাবলীর চতুর্থ প্রবন্ধে তিনি তাঁর কবিত্ব পরিচয়ের কথা বলেছেন এভাবে, ‘যারা মাটির কোলের কাছে আছে, যারা মাটির হাতে  মানুষ, যারা মাটিতেই হাঁটতে আরম্ভ করে, শেষকালে মাটিতেই বিশ্রাম করে আমি তাদের সকলের বন্ধু , আমি কবি।‘ কথাটি তিনি বলেছিলেন তাঁর ৭০ বছরের জন্মদিনে। কবিজীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি বহু বিচিত্র রসের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। বিচিত্র লীলায় নানা সুরে চঞ্চল হয়ে ওঠা নিখিলের যে চিত্ত  তাতে তিনি এক হয়ে গিয়েছিলেন, আর তার স্পর্শে তিনি নিজেও হয়ে উঠেছিলেন সৃষ্টিশীল। “জীবনের এই দীর্ঘ চক্রপথ প্রদক্ষিণ করতে করতে বিদায়কালে আজ সেই চক্রকে সমগ্ররূপে যখন দেখতে পেলাম তখন একটি কথা বুঝতে পেরেছি যে, একটিমাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর কিছুই নয়, আমি কবি  মাত্র।” রবীন্দ্রনাথের এই উপলব্ধি এক অমরতা লাভ করে, তিনি তাঁর কবিত্ব শক্তির বিষয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে  কখনোই তিনি এই বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হন নি। তিনি বিচিত্রের লীলাকে অন্তরে গ্রহন করে তাকে বাইরে  লীলায়িত করেছেন। কারন তিনি বিচিত্রের দূত। প্রকৃতি তার রূপ, রস, বর্ণগন্ধ নিয়ে যেমন মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়েছে,  তেমনি তা কবিকে মুগ্ধ করেছে মোহময় আবেশে। জগত সংসার এই প্রকৃতিকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তিনি তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘পৃথিবীর প্রেমের মধ্য দিয়াই সেই ভূমানন্দের পরিচয় পাওয়া, জগতের এই রূপের মধ্যেই সেই অপরূপকে সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ করা, ইহাকেই তো আমি মুক্তির সাধনা বলি। জগতের মধ্যে আমি মুগ্ধ, সেই মোহেই আমার মুক্তিরসের আস্বাদন। ‘রবীন্দ্রনাথ তাই তাঁর সৃষ্টিকর্মের জগতকে প্রসারিত করার উৎস খুঁজেছেন এই প্রকৃতির মাঝেই। বালকবয়সে ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ ‘লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃতি এবং মাটিকে শ্রদ্ধা না করলে, যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে না পারলে জীবনসমুদ্র পার হওয়া সম্ভব নয়।

রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন কোলকাতার ব্রাহ্ম পরিবারে। ব্রাহ্মদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। তবে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ছিল সবচেয়ে আধুনিক, আর নাম ও মতাদর্শ উভয়  দিক দিয়েই আদি ব্রাহ্ম সমাজ ছিল অতি প্রাচীন। সেই আদি ব্রাহ্ম সমাজেই রবীন্দ্রনাথের জন্ম। জীবনের প্রথম ৪৪ বছর তিনি সাহিত্য, সঙ্গীত, সমাজ ভাবনা এবং ধর্মীয় পরিচয়ে যেখানে সীমাবদ্ধ ছিলেন, পরে একটা সময় সেখান থেকে তিনি সরে গিয়েছিলেন। নতুন মনোজগতে তিনি ধর্মীয় পরিচয়ে হলেন গৌণ, সেখানে মুখ্য হয়ে প্রকাশিত হলেন মনুষ্যত্বের দর্শনে। মানবতার ধর্মে তিনি ছিলেন এক স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রকাশিত আর তাঁর সেই পরিচয় অটুট ছিল আজীবন।

‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধাবলীর শেষ প্রবন্ধটি কবি লিখেছিলেন তাঁর জীবনসায়াহ্নে এসে ১৯৪১ সালের ১৪ এপ্রিলে (১লা বৈশাখ,১৩৪৭)। তাঁর উপলব্ধি কর্মযোগে, প্রকৃতির সঙ্গে আনন্দের যোগে। ছোটোবেলা থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে তাঁর যোগ এবং এর ভেতর দিয়ে এর রসাস্বাদন করা, এগুলো তাঁকে ভিন্নতা এনে দিয়েছিলো। তিনি নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন সৃষ্টিশীলতার প্রতিভূ হিসেবে। তিনি চেয়েছেন মানুষে মানুষে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি বলছেন “যতবড়ো ক্ষমতাশালী হোন না কেন, সত্যভাবে প্রকাশ পেতে হলে বন্ধুতা চাই, আপনাকে ভালো লাগানো চাই, ভালো লাগাবার জন্য নিখিল বিশ্বে তাইতো অসংখ্য আয়োজন। তাই তো শব্দের গান জাগছে , রেখার থেকে রূপের অপরূপতা। সে কি  আশ্চর্য, সে  আমরা ভুলে থাকি। “রবীন্দ্রনাথ সবসময়ই ভালো লাগার বিষয়গুলো প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজে যেমন ছিলেন বন্ধুভাবাপন্ন, আন্তর্জাতিকভাবেও গড়ে নিয়েছিলেন বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি, সমগ্র বৈশ্বিক চেতনায় তিনি ছিলেন অনন্য, বিশ্বব্যপী তাঁর পরিচয় ছিলো ব্যাপক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টিকর্মকে বুদ্ধি এবং আনন্দের মাধ্যমে নিযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

 

প্রচ্ছন্নভাবে তিনি তাঁর নিজের ধর্মীয় পরিচয়ের  একটি বার্তা দিয়েছেন মূলত একেশ্বরবাদীতার দর্শনে। ‘আত্মপরিচয়ের ‘পঞ্চম প্রবন্ধে তিনি বিশ্বাসকে উপনিষদের ধারণায় প্রকাশ করতে চেয়েছেন। বাল্যকালে এই ধর্মশাস্ত্রের অধ্যয়নের ফলে তাঁর মন বিশ্বব্যপী পরিপূর্ণতাকে অন্তর্দৃষ্টিতে মানতে অভ্যস্ত করেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন তমেবৈকং জানথ আত্মানমÑ সেই  এককে জানো, সর্বব্যপী আত্মাকে জানো, আত্মন্যেব, আপন আত্মাতেই, প্রথাগত আচার অনুষ্ঠানে নয়, মানবপ্রেমে আর  শুভকর্মে, বিষয়বুদ্ধিতে নয়, আত্মার প্রেরণায়।

‘আত্মপরিচয়ের’ প্রতিটি প্রবন্ধেই রবীন্দ্রনাথ জীবনব্যপী সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে নিজস্ব বোধের অনুরনন ঘটিয়েছেন। তাঁর সমালোচকদের তিনি দেখিয়েছেন নিজের সাহিত্য দর্শন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর পরিচয় তিনি বাঙালি। তিনি একজন চিন্তাশীল লেখক, একজন দার্শনিক। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। তাঁর সারাজীবনের এই সৃষ্টিকর্ম নিয়ে তিনি নিজেই যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধাবলীতে, তা আমাদের চেতনাকে পরিশীলিত করেছে। রবীন্দ্রোত্তর আজকের এই সময়ে তাঁর নিজস্ব পরিচয় এবং স্বকীয়তায় বাঙালী আত্মমর্যাদা খুঁজে পায় অবিসংবাদিতভাবে।

 

সৌভিক চৌধুরী, প্রাবন্ধিক, বাচিকশিল্পী

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে