সুলতানা কাজী :
আমাদের সম্পর্কে নিজের যে আবেগীয় মূল্যায়ন এবং নিজের প্রতি নিজের যে দৃষ্টিভঙ্গি, নিজের প্রতি নিজের অনুভূতি, সেটাই হলো আত্মসম্মান বা আত্মমর্যাদা। স্মিথ এন্ড ম্যাকলের (২০০৭) এর মতে, আমরা নিজের সম্পর্কে যা কিছু মনে করি, সেটাই আত্মমর্যাদা। আমরা নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলি অনেকেই। এতে আত্মসম্মান কমে যায়। নিজেকে ভালোবাসার মাঝে একটা চিরন্তন সৌন্দর্যময়তা আছে। আমরা বিভিন্ন কাজের চাপ, রোগ-শোক কিংবা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নিজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ি অনেকেই। এ কারণে আমরা বলতে থাকি, আমি পারি না, আমাকে দিয়ে হবে না, আমি ব্যর্থ, আমি খারাপ, আমাকে কেউ সম্মান করে না…. ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সমাজের মানুষ কিছুটা সুযোগ লুফে নেয়। জীবনটা ভাঙা-গড়ার। প্রতিকূলতাকে পাড়ি দিতে নিজের আত্মসম্মান ভীষণ জরুরি আমাদের। আত্মসম্মান বা আত্মমর্যাদা বাড়ানোর কিছু কৌশল
নিজের মতো করেই তুলে ধরলাম…
০১। মন তখনই ভালো থাকবে, যখন শরীর ভালো থাকে। নিজের যতœ নিতে প্রায় সবাই ভুলে যাই। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে মানসিক শক্তি ও সুস্থ থাকতে হবে আমাদের। সবার পারিবারিক ও সামাজিক ব্যস্ততা আছে, তারপরও নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
০২। নিজের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু নিজেকেই হতে হবে। নিজের সমালোচকও নিজেকে হতে হবে। প্রেরণামূলক, উদ্দীপনাপূর্ণ ইতিবাচক মন্তব্যগুলো নিজের প্রতি করতে হবে। আমি স্মার্ট, আমি বুদ্ধিমান, আমি কর্মঠ…. এ কথাগুলো নিজের উদ্দেশে বলতে হবে নেতিবাচকতাকে ইরেজ করে ইতিবাচকতা আনয়ন করতে হবে নিজের মধ্যে। পরিবর্তনগুলো আস্তে আস্তে নিজেকে সফল করতে সহায়ক হবে।
০৩। আমরা মানুষের উপকার করি। সেটার বিনিময় প্রত্যাশা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আত্মমর্যাদার উন্নয়নে মাঝে মাঝে মানুষকে বিনিময়বিহীন কিছু করতে হবে। এতে মানসিক প্রশান্তি আসবে।
০৪। ছোট থেকেই বড় হতে হয়। পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন প্রত্যেকেই ছোট থেকেই বড় হয়েছেন। বিন্দু বিন্দু জল থেকে সিন্ধুর উৎপত্তি। ছোট কাজে লেগে থেকে ধৈর্যের মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হয়। একাগ্রতা নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
০৫। আমরা অন্যদের প্রতিযোগী ভাবি। নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হবে। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যের সাফল্যে কাতর না হয়ে নিজের সাথে নিজে প্রতিযোগিতা করতে হবে। গতকালের আমি থেকে, আজকের আমি ব্যতিক্রম…এ মনোভাব নিয়ে এগুতে হবে।
০৬। মানুষের সব দিন ভালো যায় না। পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় শান্ত থেকে। অতীতের ভালো কথা, সফলতাগুলো স্মৃতির আয়নায় আনতে হবে। সেসময় সফল হয়েছিলাম কীভাবে, কোনো প্রবলেম কীভাবে সল্ভ হয়েছিলো, তা গভীরভাবে খুঁজে বের করতে হবে। এতে বর্তমানের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হবে।
০৭। আমাদের অনেক কাজ করতে ভালো লাগে। যেমন: কেউ ছবি আঁকি, কেউ গান করতে ভালোবাসি, বই পড়তে ভালোবাসি, ঘুরতে ভালোবাসি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবাসি। এ ভালোলাগাগুলোর চর্চা করতে হবে। সত্যিই ভালো লাগবে। কষ্টের সময় চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করলে, তা-ই করতে হবে।
০৮। নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে সংগতি রেখে যার যেরকম পছন্দ সেরকম ঘর সাজানো দরকার। ঘরই প্রশান্তির একটা বিরাট স্থল। ঘরের পরিবেশ নান্দনিক হলে জীবনে প্রফুল্লতা আসবে।
০৯। আমরা প্রায় সকলেই ভুল করি। মানুষ ভুল করে, এটাই স্বাভাবিক। ভুল থেকে শেখা যায়। নিজেকে ক্ষমা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে আমাদের।
১১। আমরা যে বিষয়গুলো ভয় পাই বা ভয়ের কারণে করা থেকে দূরে থাকি, প্রথমে সে ভয়কে দূর করতে হবে। ভয়গুলোকে আকাশের তারা ভেবে, দূরে না গিয়ে সেগুলোকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। অভিজ্ঞতা থাকুক বা না থাকুক, সুযোগ পেলে কাজটি করার চেষ্টা করতে হবে। সফল না হলেও, অভিজ্ঞতার খাতায় যোগ হবে সেটি।
১২। নতুন নতুন কাজে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে আমাদের। এতে আর্থিক লাভবান না হলেও, দক্ষতা বাড়বে। নিজের ভিতর শক্তি সঞ্চার হবে। কর্মজীবন বা শিক্ষাজীবনে যা জানা দরকার তা পড়ালেখা করেই জানতে হবে।
সবশেষে বলি…নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে নিজেই। আমরা যেমনটা হই না কেনো, নিজেকে কখনো নিচে নামানো উচিত হবে না। নিজেই নিজের শক্তি। নিজের তুলনা নিজেই। আমরা প্রত্যেকে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার তাগিদে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
সুলতানা কাজী, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক