২৯ ডিসেম্বর জন্মদিন উপলক্ষে কবি আমিনুল ইসলামকে নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন
আমিনুল ইসলাম : জীবন ও সাহিত্য
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগহণকারী আমিনুল ইসলাম এমন একজন কবি যাকে ‘জাতকবি’, ‘নিবেদিতপ্রাণ’ ,‘ নিভৃতচারী’, এইসব অভিধায় বর্ণনা করা যায়। কিন্তু তার কবিতা পাঠ করলে বোঝা যায় তিনি একজন মৌলিক কবি। তিনি কবিতা লেখার জন্য নিজস্ব ভাষা নির্মাণ করেছেন যা একইসঙ্গে নাগরিক এবং বাস্তবতামন্ডিত। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর অনেক কবিতার বিষয় হয়নি, সেখানে ব্যবহৃত অনেক নতুন শব্দ তিনি অনায়াসে এবং শিল্পিত ভঙ্গীতে ব্যবহার করেছেন । এই বৈশিষ্ট্যের জন্য তাঁকে ‘আধুনিক ’ বলতে দ্বিধা হয় না। তিনিই ডিজিটাল যুগের প্রথম কবিতা রচয়িতা, একথা বলা হলে অত্যুক্তি হবে না। তিনি এসময়ের সবচেয়ে একজন আলোচিত কবিও বটে। তার কবিতা নিয়ে কাব্যবোদ্ধাদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রায়শ জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যপাতায়, লিটল ম্যগাজিনে চোখে পড়ে। আমিনুল ইসলাম বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের একজন শক্তিমান ও গুরুত্বপূর্ণ কবি। কবিতা রচনায় দশকের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে তিনি কবিতার নিজস্ব একটি ধরন নির্মাণে সক্ষম হয়েছেন। দুর্বোধ্য নয় অথচ গভীর ব্যঞ্জনাময়–এটি হচ্ছে তার কবিতার সবচেয়ে বড় দিক। তার কবিতায় জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতা, স্বদেশ ও বিশ্ব, ঐতিহ্য ও বর্তমান এবং শহর ও প্রকৃতির অপূর্বসুন্দর মেলবন্ধন ঘটেছে। তাকে ‘ শিকড়বৈভবের কবি’, ‘ প্রতœ-ঐতিহ্যের কবি’, ‘ স্বাধীন কবি’, ‘প্রতীকী প্রতিবাদের কবি’, আধুনিক প্রেমের কবি’, ‘উত্তরাধুনিকদের চেয়েও অগ্রসর কবি’, ‘ উত্তর-ঔপনিবেশবাদী কবি’ প্রভৃতি অভিধায় অভিহিত করেছেন আলোচকগণ। মননশীল প্রবন্ধের জন্যও তিনি সমানভাবে স্বীকৃত। তিনি এসময়ের সবচেয়ে আলোচিত একজন কবি। তাকে নিয়ে ‘পুনশ্চ’, ‘অদ্রি’, ‘পাতাদের সংসার;, ‘দৃষ্টি’ প্রভৃতি লিটল ম্যাগাজিন ক্রোড়পত্র এবং বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। আমিনুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম নিয়ে ড. হরিদাস ঠাকুরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘সমবায় আঙিনায় সৃজনশীলতার আলো : একজন আমিনুল ইসলাম’ নামক বিশাল আয়তনের গ্রন্থ। আমিনুল ইসলামের কবিতা নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব নাজিয়া ফেরদৌস রচিত এবং ঢাকাস্থ বেহুলবাংলা নামক প্রকাশনী থেকে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘আমিনুল ইসলামের কবিতা: ভিন্ন ধারায় সত্যানুসন্ধান’ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
কবি আমিনুল ইসলাম: সময়ের নির্ভীক পথিক –
শাহানা সিরাজী
কবিরা স্বপ্নবান মানুষ। তারা স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্ন দেখান। সে স্বপ্ন ব্যক্তির, সে স্বপ্ন জাতির, সে স্বপ্ন বিশ্ববাসীর। কবির চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখে আর দশজন। যার স্বপ্ন নেই, তিনি আর যাই হোন- কবি হতে পারেন না। স্বপ্ন মানে শুধু সুখকল্পনা নয়; স্বপ্ন হচ্ছে ভবিষ্যৎ পথচলার প্রত্যাশা ও দিশা। স্বপ্ন হচ্ছে নির্মাণের আর পুনর্নিমাণের প্রেরণাভ‚মি। স্বপ্ন হচ্ছে জীবন ও জগতকে দেখার ও গড়ে তোলার বীজতলা। এই প্রেরণাভ‚মি এই বীজতলায় মাটি জোগান দেয় অতীত, জল ও বীজ দেয় বর্তমান, আর আলো দেয় ভবিষ্যৎ। স্বপ্ন বাস্তবতার হুবহু ছবি নয়; স্বপ্ন বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন কোনো ইউটোপিয়াও নয়। বাস্তব আর অবাস্তবের সুসংমিশ্রিত উপাদানে তৈরী স্বপ্নের শরীর ও মন। মানুষের সব স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয় না; কখনো কখনো স্বপ্নের ঘরে জোরপ‚র্বক ঢুকে পড়ে দুঃস্বপ্ন। কখনো বাস্তবের পাথর- দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে চ‚র্ণবিচ‚র্ণ হয়ে যায় স্বপ্ন। কখনো আকাশচারী স্বপ্নের পাখি ঝড়ের আঘাতে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে ভগ্নডানায় । কিন্তু স্বপ্ন দেখা শেষ হয় না। কারণ, স্বপ্নই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। ফলে দগ্ধীভ‚ত স্বপ্নের ছাইভষ্ম থেকে ফিনিক্স পাখির মতো আবার জন্ম নেয় নতুন স্বপ্ন। মানুষের জীবন ব্যক্তিপর্যায়ে এবং সমষ্টি পর্যায়েও- স্বপ্ন দেখা , স্বপ্নভঙ্গ আর নতুন করে স্বপ্নে পাওয়ার দোলাচলে দোলায়িত অস্তিত্ব।
আমিনুল ইসলামের একটি কবিতার এবং কবিতার বইয়ের নাম ‘জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার’। ‘জলচিঠি নীল স্বপ্নের দুয়ার’ নামকরণটি তাৎপর্যপূর্ণ। স্বপ্নের চিঠি আর তার গন্তব্যের মধ্যে ব্যবধান এক আকাশ। তবু সে চিঠি সেখানে পৌঁছাতে চায়। হয়তো পারে হয়তো পারে না। প্রথমত কবিতাটি এক আশ্চর্য স্বপ্নভঙ্গের। কী সেই স্বপ্ন? তা কি ব্যক্তিক না সামষ্টিক? তার জবাব ঐ কবিতায় নেই। তা পাঠককে কল্পনা করে নিতে হয়। অথবা খুঁজে দেখতে হবে গ্রন্থের অন্যত্র। আমাদের বোধ-চেতনা জলবায়ুর মতো বদলে যাচ্ছে । অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ধূসরিত, বেদনার বালুচরে জেগে ওঠে অবাঞ্ছিত ঝোপ-ঝাড়। চেতনার গভীরে নীলজল কোনো কাক্সিক্ষত ছবিই আঁকে না কিংবা আঁকতে পারে না অথবা অদৃশ্য-অশরীরী ছায়ার নিষ্ঠুরতায় বাঁধা পড়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে। মুখে বিষাদের ছায়া অথচ চোখের কোণে আশার ঝিলিক । সেই ঝিলিকে থাকে আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়ার নিবিড়তা। মানুষ-প্রকৃতি-নিসর্গ কেউ কারো থেকে আলাদা নয়। তাই প্রকৃতি যখন বিষণœ মুখে তাকায় মানুষ কী করে স্থির থাকে! প্রকৃতির বিষণ্নতার জন্য তো দায়ী অমানবিক বিষয়-আশয়। এখানেই কবি মন চিৎকার করে – রুদ্র রুক্ষ চিন্তার লোলুপ দরজা ভেঙে বের করতে চায় জীবনের গ‚ঢ় অর্থ। আমিনুল ইসলাম এমনই চিন্তার ধারক ও বাহক । তাঁর কাছে জীবন মানে নদী । নদী কারো একার নয়। যে জীবন খেয়ে-পরে জাবর কাটে, মানুষ-সমাজ- রাষ্ট্রের কল্যাণে কারো কাজে লাগে না- সে জীবন তো নিতান্তই আধ-খাওয়া সিগারেট। জীবন-স্বপ্ন-বাস্তবতা ত্রিমাত্রিক সরল রেখায় অবস্থান করলেও স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শেখায় । সে স্বপ্নের ভিত্তিমূল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ক্যানভাসে কবি আমিনুল ইসলাম সিদ্ধহস্ত অর্ঘ্যকমল । কবিতার শব্দ চয়ন-বিন্যাস, বিষয় প্রকরণ , বর্ণনাশৈলী, উপমায় মিথ-ইতিহাস -ঐতিহ্যের ব্যবহারে ভিন্ন স্বাদ-ভিন্ন মেজাজ কবিকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমÐিত করেছে । কবিতার অঙ্গনে তাঁর নিজস্ব জগৎ নতুন আবরণে আবৃত । প্রেমচেতনা-পরাবাস্তবতা বিষয়ক কবিতার উপস্থাপনায় তিনি অনন্য। আধুনিক ইলেকট্রোনিক জীবনের গতিতে দ্রæত প্রবেশরত ভিনদেশী প্রতিশব্দের ব্যতিক্রমী ব্যবহার তাঁর কবিতায় নিয়ে এসেছে নতুন ব্যঞ্জনা এবং এখানে তিনি সার্থক ও ঈর্ষণীয়।
‘মাল্টিকালার স্বপ্নের ফুটবল নিয়ে খেলতে খেলতে
কিপার-হীন পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েও
পেলের পায়ে শেষ পর্যন্ত গোল হবে না
হে প্রভু, এও কি সম্ভব?’
[সে এক অদ্ভ‚ত ব্যর্থতা, জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার]
আমিনুল ইসলাম একজন আগাগোড়া প্রেমিক কবি। আমিনুল ইসলাম হালকা প্রেমিকের মত প্রেমকে সাতরাস্তার মোড়ে উলঙ্গ না করে বরঞ্চ তার অস্তিত্বে সৌন্দর্যের পোশাক পরিয়ে দিয়েছেন। নিজের চারদিকে অদৃশ্য আবরণে নতুন রহস্য সৃষ্টিতে দেখিয়েছেন কৃতিত্ব। ভৌগোলিক সীমারেখা ছাপিয়ে কখনো বোখারা-সমরখন্দ, কখনো সিন্ধুপারে আবার কখনো ইস্তাম্বুল-আংকারায় খুঁজেছেন প্রিয়তমাকে সাবিহা, সুরি প্রভৃতি নামের যুবতীর মাঝে । তিনি মিশরের সৌন্দর্যের রানি নেফারতিতিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন ‘ নেফারতিতির সঙ্গে’। তাঁর কবিতায় এসেছে ইটালির সুন্দরী যুবতী সোফিয়া, ভারতের সেরা সুন্দরী নায়িকা মধুবালা। আবার স্বদেশের জোয়ানা, সুমনা, সুজাহা, পপি, রুমি, সানজিদা, ম্যারিনা , শাহানা ইত্যাদি নামের নারীও হয়েছে তার প্রেমের কিবতার নারী। তিনি স্বদেশকে ধারণ করে হয়ে উঠেছেন বিশ্বপ্রেমিক। কোনো ক‚পমЂকতা বা অনুদার আঞ্চলিকতা তাকে আটকাতে পারেনি। প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন,‘ এই দেশে এইড সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের সকল মানুষের। সুন্দরের ধ্যান, তাঁর স্তব-গানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম। যে ক‚লে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি।’[অভিনন্দনের জবাব] আমিনুল ইসলাম প্রেমভাবনার কবিতার মাঝেও আমরা একজন বিশ্বনাগরিকের দেখা পাই। তুর্কি নারী সুরিকে নিয়ে লেখা তার কবিতায় তিনি বলেছেন,
‘ভালোবাসা এমনই হয়! এই নিয়ে আাজও বহু বিতর্ক।
থাক্ না বিতর্ক; সে তো বিভেদকামীদের মЂকমনের
জলঘোলা করার কুয়ো; ভালোবাসা খোঁজে ঐক্যের আকাশ;
তাই বিতর্কের ঝড়েও সে বন্ধ করে না আন্তঃভৌগোলিক
ডানা। আমার ডানায় মিশে আছে তোমার ডানার ছন্দ
আর বুকে যে উষ্ণতা- তারও কোনো জাতভ‚গোল নেই।
যদি কান পাততে-আমার ফুসফুসের স্রোতেলা বাণী
উম্মে কুলসুমের গান হয়ে মাতিয়ে দিতো তোমার রক্ত।’
[ভালোবাসার আকাশে নাই কাঁটাতারের বেড়া, জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার]
আমিনুল ইসলাম শব্দের অভিনব ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু শুধুমাত্র শব্দের খেলাই কবিতার দেহ নয়। কবিতার দেহে থাকে বোধ চিন্তার খোরাক। থাকে প্রাণ। নদী যেখানে সাগরে মিশে তার নাম মোহনা। এখানে ব্যক্তি কবি আর প্রেমিক কবি একাকার। ব্যক্তি কবি নদী হলে প্রেমিক কবির প্রেমসাগর । সাগর-নদী এক হয়ে হয়েছে চাঁদের মোহনা। একের ভেতর বহু। অনেকের কবিতাকে মনে হয় কেবল শব্দের জঞ্জাল, আবার অনেকের কবিতাকে মনে খসখসে, শুকনো খড়। চুলায় দিলেই নিঃশেষ। ভাবনার অবকাশ থাকে না। ডাইমেনশন থাকে না। সোজা মানেই সোজা । অনাবৃত। আমিনুল ইসলামের কবিতায় থাকে ঢাকনা, থাকে খোলস। ঢাকনা খুললেই ভিন্ন কিছু । খোলসের ভেতর কী জানতে হলে খোলস তুলে নিতে হবে। বোধের অরণ্যে যেতে হলে পায়ে পায়ে হাঁটতে হবে।
‘তাদের হতাশ মুখের ছবি আজও আমার
ডিএসএলআর চোখে স্টিল ফটোগ্রাফ হয়ে আছে।
বুয়েট এবং মেডিকেল কলেজের ছেলেমেয়েরা,
যারা আমাকে চিনে,
আজও আমার দিকে মার্কিনী চোখে তাকায়।’
[অবুঝের সমীকরণ, জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র]
কবিরা সাধারণত লিখে থাকে কাজল চোখ, হরিণচোখ কিন্তু কবি লিখলেন মার্কিনীচোখ। এ চোখের রহস্য কী? মার্কিনরা দুনিয়া জুড়ে মাতব্বরি করছে লোভে, আধিপত্য বিস্তারে। ঠিক তেমনি কবির সহপাঠিরা যারা অংকে সমঝদার হয়ে বুয়েটে-মেডিকেলে চান্স পেয়েছে তারা এখনো অংকে কাঁচা কবিকে দখল করতে চায়, প্রয়োজনে যুদ্ধ বাঁধাতে চায়। আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। উপমার এমন আধুনিকতা আধুনিক বাঙালি কবিদের কবিতার আদি-অন্ত কোথাও চোখে পড়েনি। ‘দুঃখের পহরী,’ ‘ভিটেমাটিহারা শোক’, প্রাচ্যের শরীরে’,‘পড়শি ভ‚গোল,’ ‘ভেড়া জ্ঞান’ নেকড়ে-ভ‚মি’,‘ ‘নগ্ন সাফল্য’, ‘সংখ্যালঘু বৃক্ষরাজি’,‘মানুষ নেকড়ে হলে বৃহত্তম গণতন্ত্রও জঙ্গল হয়ে ওঠে’,‘সুদখোর ভবিষৎ’ এধরনের উপমায় থাকাচাই মুন্সিয়ানা । তাঁর কবিতায় অভিনব উপমার ব্যঞ্জনা মুগ্ধতা আনে। ‘হাঙরশাসিত আটলান্টিক’, সিংহশাসিত আফ্রিকা’, এশিয়ার রজনীগন্ধা’,ক্যারেবীয় সমদ্রগুল্মের গড়ায়’, ফুলকুঁড়ির ঘ্রাণমাখা দ্বিধায়’, কিশোরীর স্বপ্নতাড়িত লজ্জায়’ প্রভৃতি উপমা অভিনব-সুন্দর। আমিনুল ইসলামের প্রতিবাদের-বেদনার কবিতার ভাষা সাংকেতিকতা, পরিহাস, স্যাটায়ার, শ্লেষ প্রভৃতি কাব্যালংকারে সমৃদ্ধ। তিনি বাহ্যত সহজ ভাষায় কথা বলেন কিন্তু সেই আপাত সহজতার আড়ালে থাকে শাণিত বক্তব্য। তার জোছনার মতো সহজতা রচনা করে রাখে কুয়াশামাখা আড়াল। ‘আমাকে গ্রহণ করো’ কবিতায় কবি প্রেমিকাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে মানুষ হিসেবে তিনি বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু আসলে সেটি প্রেমের কবিতার আড়ালে যুদ্ধবাজ, মিথ্যাচারী, ক্ষমতালোভী, প্রেমবৈরী মানুষ ও রাষ্ট্রগুলোর মুখোশ উন্মোচন। এখানে ভাষা নয়, প্রেম শব্দটিকেই তিনি আড়াল হিসেবে ব্যবহার করেছেন সূক্ষè বুদ্ধিমত্তার সাথে।
‘আমি মধ্যপ্রচ্যের সিএনএন বা ফক্স নিউজের
রিপোর্টার ছিলাম না কোনোদিন
কোনোদিন চাকরি করিনি কোন দেশের গোয়েন্দা বিভাগে,
আমাকে বিশ্বাস করো।’
কী দারুণ মেটাফর! আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে রিপোর্টার এবং গোয়েন্দা বিভাগ সত্য উন্মোচনে ভ‚মিকা রাখে কিন্তু কার্যত দেখা যায় এ দুটো পক্ষ প্রচন্ড রকম ডাবল স্টান্ডার্ড। তাই কবি প্রেমিকার কাছে নিজেকে এই ভাবে উপস্থাপন করছেন যে তিনি তো রিপোর্টার কিংবা গোয়েন্দা বিভাগের কেউ নয় যে তাকে অবিশ্বাস করবে প্রেমিকা। এই একটি ছত্রে যেমন ব্যক্তিগত জীবনের নির্যাস বেরিয়ে এসেছে তেমনি বেরিয়ে এসেছে জাতীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধান্দবাজি প্রযোজিত রাষ্ট্র ও মিডিয়ার প্রহসন।
আমিনুল ইসলামের কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞানকে সামষ্টিক মাত্রায় নিয়ে আসার নিপুণ কৌশল । জাগতিক বিভিন্ন বিষয়ের তুমুল উপস্থিতি। অর্থনৈতিক- রাজনৈতিক- সামাজিক-রক্ষণশীলতার বিষয়াবলি কবিতায় নানান ব্যঞ্জনায় প্রস্ফুটিত। আমিনুল ইসলাম এখানেই স্বতন্ত্র। প্রসঙ্গক্রমে এবার আসা যাক্ তার আসি ‘ওরে কর্ণফুলীরে, সাক্ষী রাখিলাম তোরে’ কবিতাটিতে যা তার ‘প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ’ কবিতার বই হতে গৃহীত।
‘ওরে ও কর্ণফুলী, সাক্ষী রইলে তুমিও
যেমন সাক্ষী আছে জমজমের পানি,
রং বদলানো মৌসুমী হাওয়া-
ভিন্ন গান শোনালেও আমি আজো ভালোবাসি তাকেই-
……………………………………………………….
সুমি জানে, আমিও জানি, তার নামটি জানালেই
শুরু হবে ঝড়, উথালপাথাল হবে নদী;
জলের শপথ ভেঙে-
এই আমি কী উচ্চারণ করবো সেই নাম ?
আচ্ছা আধুনিক এবং উত্তরাধুনিক কোনো কবি এখনো জমজমের পানিকে উপমা হিসেবে এভাবে উপস্থাপন করেছেন? তাও আবার প্রেমের কবিতায়! চোখে পড়েনি। আমিনুল ইসলাম করেছেন। মুসলিম সমাজে জমজম অতি পবিত্র পানি। ইসলামিক মিথোলজিতে জমজমের কদর সীমাহীন। সেই জলের শপথ করেছেন, কোরানের অনেক আয়াতে রকম শপথ আছে যেমন- সুরা আসর। সময়ের শপথ। সুরা তীন। তীন ও জয়তুনের শপথ। সুরা আদ্ দোহা’-তে আছে মধ্যদিনের আলোর দোহাই , নিশার দোহাই ইত্যাদি। কবিকে হয়তো এই শপথই প্রলুব্ধ করেছে । তিনিও জমজমের শপথ করেছেন খরস্রোতা নদী কর্ণফুলীকে শপথ করেছেন। একদিকে পবিত্রতার শপথ অন্য দিকে যৌবনের প্রতীক খরস্রোতা কর্ণফুলীর শপথ কবির চিন্তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। অনুরূপ শৈল্পিক সুচারুতার প্রমাণ রেখেছেন তিনি ‘প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘বিপরীত বাসনায়’ নামক কবিতায়। এ কবিতায় জীবনের নানা দিককে নানান ভাবে সম্বোধন করেছেন। ‘হে পরিপাটি’, হে বাধ্যবাধ্যকতা’, হে অভিভাবক দুপুর’ হে অর্থনীতির এমফিল মন’, হে সাবধানতার বোতাম’। পরিপাটি জীবন মানেই আর্টিফিশিয়াল, লোক দেখানো; কবি এজীবনকে এলোমেলো করে দিতে চান যেমন এলোমেলো করে শিশুরা তাদের মার্বেল । বাধ্যবাধকতা মানেই সন্ধি করা। কবির কাজ তো সন্ধি করা নয়? একটি প্রেমের কবিতার কাঠামোর মাঝে তিনি জীবনের বহুবিধ অনুষঙ্গকে মোহনীয় সুচারুতায় উপস্থাপন করেছেন। কবিতাটিতে তিনি একদিকে ভাবনার অভিনবত্ব এনেছেন আবার একইসঙ্গে প্রকাশশৈলীর নতুন চমক দেখিয়েছেন। এভাবে তিনি ক্রমাগত সৃষ্টি করে গেছেন নিজের সৃজনশীলতার পথ।
আমিনুল ইসলাম সহজাত কাব্যপ্রতিভার কবি। তিনি জোর করে কবিতা লেখেন না। তার হাত দিয়ে কবিতা রচিত হয় অনায়াস সক্ষমতায়। বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ধর্ম, প্রযুক্তি যে কোনো বিষয় নিয়ে তিনি মানোত্তীর্ণ কবিতা রচনা করতে পারেন। গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি নিয়ে কি কবিতা লেখা যায়? আমিনুল ইসলাম লিখেছেন। শুধু লেখেননি, অভিনব উপমার মনোহারিত্ব, অনুপ্রাসের অনুরণন, অন্ত্যমিলের মাধুর্য আর ছন্দের দোলায় তাকে আবৃত্তিযোগ্য, সুখশ্রাব্য ও ব্যঞ্জনাময় উৎকৃষ্ট সৃষ্টিতে উন্নীত করেছেন।
‘যখন তুমি মেজোরিটি আলোক-অভ্যুত্থান
যখন তুমি মাইরোরিটি ফেয়ার প্রোটেকশন
যখন তুমি সংখ্যা বলে নওকো স্বৈরাচারী
যখন তুমি ঝগড়ারাতে যুক্তি-অভিসারী…
না লাগলেও ভালো যখন গাইতে দেবে গান
তখন তমি ডেমোক্রেসী- তোমায় ওয়েলকাম।’
[যখন তুমি ডেমোক্রেসি, জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র]
আমিনুল ইসলামের কবিতায় বিস্ময়কর উত্তরণ ঘটেছে নিজস্ব শব্দসম্ভারের সমৃদ্ধকরণে। মানুষ প্রতিনিয়ত অতীত ছাপিয়ে ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায় । আমিনুল ইসলাম বোধের প্রান্তিক অন্বেষণে শ্রাবণের রঙ, হেমন্তের ঐশ্বর্য আর বসন্তের দুরন্ত বাতাস, বৈশ্বিক রাজনীতির হোলি খেলার চালচিত্র, অনিয়ম, শাসনতান্ত্রিক গরম হল্কার দীর্ঘশ্বাস ও মানবীয় যে আবেদন এঁকেছেন কবিতায়- তাতে তাঁকে নষ্ট সময়ে দর্শকবিরল মঞ্চে বিবেক বললে অত্যুক্তি হবে না । এসময়ের তিনি একজন সফল মানবতাবাদী কবি । তবে তার মূল শক্তি নতুন ব্যঞ্জনায় চমৎপ্রদ সমাসবদ্ধ শব্দ নির্মাণে এবং তার মাধ্যমে অনিঃশেষ ব্যঞ্জনাগর্ভ চিত্রকল্প সৃষ্টিতে। ‘ফুসফুসের স্রোতেলা বাণী’ , ‘ ফোন-রহস্যের ব্রডশীট জবাব’, ‘আন্তঃমহাদেশীয় হৃদয়’, ‘আন্তঃভৌগোলিক ডানা’, ‘উদ্ভিদ-আদালত’, ‘রোগারোদ’ , ‘সামন্তরাত’, ‘বৈষম্যবৈরী গতির ফর্মুলা’, ‘সমুদ্রনিন্দা’, ‘ভুল-উষ্ণতা’, ‘মাল্টিমিডিয়া’, ‘কন্ডাক্ট রুলস ’, ‘ইনভাইয়লেবেল’, ‘ডিসিপ্লিন এন্ড ‘আপিল রুলস’, ‘মোর ভ্যালুয়েবল,’ কনফ্লিকটিং’, ‘ডিমার্কেটেড’, ‘ক্লাসিফিকেশন’, ‘ওয়ারেন্ট আব প্রিসিডেন্স’, ‘অয়লী এন্ড ইনভিজিবল’, ‘এন্টিস্মাগলিং টাস্কফোর্স’, ‘সিগন্যাল’, ‘ইউনিফর্ম’,‘ হাইপোথিসিস’, ‘ডিডাকশান’, ‘বিধাতার সাপ্লাই রেজিস্টার’, পোস্টপেইড বিল’, ‘সিরাতুল মোস্তাকিম’, ‘ত্বীন-জইতুন’, ‘সিদরাতুল মুনতাহা’, ‘স্বপ্নের উঠোনে সনদহীন উমেদার’ ‘মানিব্যাগের হাসি’ ‘ মেঘের অবজারভেশন টাওয়ার’,‘কুয়াশার শামিয়ানা টাঙানো মোহনা’ ‘মাইনাস ফর্মুলার বাহাদুরী’, ‘ কেরামিন কাতেবিনের গোপন ডায়েরি’, ‘চাঁদ-তারার প্রটোকল’,‘স্বপ্নের ঝুলনা বাঁধা অলৌকিক বাগান’ ‘আকাশের বিলবোর্ড’ ‘উইকেটমুখী উত্থিত বাসনা’ , বেদনার চোরাইমাল’ ‘ নৌকামার্কা হৃদয়’ ইত্যাদি শব্দ ও শব্দবন্ধের ব্যবহার তাঁকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমÐিত করেছে । স্রষ্টা ও শিল্পী হিসেবে কবি হয়ে উঠেছেন অনন্য ।
আমিনুল ইসলামের কবিতায় উপমা এসেছেন ভিন্নভাবে এবং অভিনবত্ব সহকারে। যেমন- ‘বৈশ্বিক ডানার দিনে বেড়াহীন আকাশ মিডিয়া’, ‘সিন্দুকভরা সম্ভাবনা’,‘নিজেরা আর ধানের গোছার মতো যূথবব্ধ নয়’ ‘স্বাধীন গেরস্তালী’, ‘নেফারতিতির আলো’, টাইবাঁধা প্রাণ’, ‘মন্ত্রপুত কর্পুর গন্ধ’, ‘নন্দিনী ভাবনা ’, ‘অনুরাগের গন্ধঘন চিন্ময় বাগান’ বৈদগ্ধের রেণুমাখা আধভেজা ঠোঁট’,‘ফ্রয়েডীয় রাস্তার বেণীমাধব মোড়’ ‘প্রেমের সাম্রাজ্যে কুতুবমিনার’ ‘ঢেউ ঢেউ চুম্বন’, ‘ মেরুনরং সময়’, ‘চাঁদের ফাইল’,‘সাগরের সমকামী ঢেউ’, ‘অক‚ল গাঙের চুল’, ‘চ‚ড়ান্ত প্রেমের পোশাকে আবৃত’, ‘ আম-অধরা মানবী’, ‘জাদুবাস্তবতার তেল’, ‘অভিচারী রঙের জাগলারি’, ‘মাঝটাকের মতো আড়ালিত মরুভ‚মি’, ‘কৈশোরের ক্লাসমেটের মতো নীলাকাশের নীলিমা’-এমনি অসংখ্য মনকাড়া , মনে নাড়া দেওয়া উপমায় ভরপুর তার কবিতা। আর উপমা হচ্ছে কবিতার প্রাণ। কবিতার প্রাণ থেকে পাঠক চুষে নেবে শিল্পরসের নির্যাস। আমিনুল ইসলামের প্রতিটি কবিতাই উপমায় অনন্য এবং ব্যতিক্রম।
আমিনুল ইসলামের অন্যতম শক্তি হচ্ছে মুগ্ধতার ঐশ্বর্য। তিনি শব্দের সাথে শব্দের অভ‚তপ‚র্ব মেলবন্ধন ঘটিয়ে রচনা করেন অনিঃশেষ মুগ্ধতার নান্দনিক বাগান। ‘সুবেহ-সাদিক মাখা দিগন্ত’ ,‘বৃষ্টির ভর্তুকি আর মৌসুমের বরাদ্দ’ ‘বৃষ্টির ড্রেজারে পথ কেটে হয়ে উঠেছে ডাকাতিয়া নদী’ ‘জোয়ার ভাটার অভিজ্ঞ হেডমিস্ট্রেস কীর্তনখোলা’ ‘লায়েক পতিত জমি’ অক্সিজেন মাখা আলো’, ‘কুয়াশার কামিজ পরা গোলাপের বাগান’, ‘রোদলা স্টেশন’, ‘স্বপ্ন-পাহারাদার’, ‘ সিংহ-সম্পাদিত শেওড়াপাড়ার সবুজপাতা দৈনিকের পাতায়’,‘পাঁচতারা বটগাছ’, ‘নিশকুটুম’, ‘সমুদ্রের চুম্বন’, ‘ তিরিশের কোমরে উত্থান-উদাসীন যৌবন’, ‘স্বপ্নের হার্ডডিস্ক’, ‘লে-অফ ঘোষিত কবিতার কারখানা’, ‘প্রকৃতির তামাদি আইন’, ‘ওপেন মার্কেটের ফোরকালার নগ্ননাভি’, ‘আচরণবিধির কাঁটাতার’, ‘সত্যবাদিতার সিলেবাস প্রতিবাদের পরিধি’, ‘ট্যাক্টফুলনেসের টাইয়ের ভারে ন্যুজ প্রশাসন’, ‘টমাহকশাসিত উ™£ান্তÍ পৃথিবী’, ‘ফোরকালার আদিমতা’, তিলাঘুঘুর অন্ত্যমিল কবিতা’, ‘অনুবাদযোগ্য নীরবতা’,র‘চকলেট-অধরেরর মিষ্টি মালিকিন’ -এ রকম চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শব্দ তুলে এনে জুতসই পেরেক মারতে পারা সাধক কবি হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। তার এক একটি কবিতা যেন এক একটি সময়ের দলিল। এক একটি চিত্রকল্প যেন একটি একটি বাগান। ‘পাঁচ ছয়’ শীর্ষক কবিতায় কবি নিজেই প্রশ্ন করেছেন: ‘আচ্ছা, যুবতী চাঁদের গন্তব্য কী? / অথবা চাঁদের দুধে চোখ দিয়ে উত্তাল যে সমুদ্র,তার?’ তারপর কসমোপলিটন শহর, শুক্লাপক্ষের অধরে কিংবা কৃষ্ণপক্ষের নাভিতে , সকালের শিশির সিক্ত খাড়ি পেরিয়ে কবি পৌঁছে গিয়েছেন সেই এক মিনিটে যেখানে পাটিগণিত চলে না, চলে হাওয়ায় উদোম ছয়ের নাভিতে কালো তিল খোঁজার আহ্নিকগতির ট্রেন, যে ট্রেন ধরতে ফেল করলে গন্তব্য ভুল ঠিকানায় হয়! তিনি কথার যাদুতে সৃষ্টি করতে পারেন অভিনবত্ব এবং অনিঃশেষ মুগ্ধতার ঐশ্বর্য। চেনা জিনিস নতুন রূপ-রস-প্রাণের ঐশ্বর্য নিয়ে উপস্থিত হয়পাঠকের কাছে। আরেকটি উদাহরণ:
‘যারা বিবেচক- যারা সৎ ও সংসারী
তারা কেনে মেপে কাঁচা মরিচের ঝাল
আমি গাঁজাখোর হাটভাঙ্গা হাটুরিয়া
ঘরে ফিরি চুমে বয়েসী চাঁদের গাল।
মাতাল হরফে এঁকে দিয়ে যাই আমি
সাঁঝের উরুতে অবৈধ আলোর উল্কি
মর্নিং শিফ্টের ভিজিটিং প্রফেসর
বলে দেবে এই আলোআঁধারির ভুল কি।
সুখের শরীরে বারোয়ারী এঁটো ঘ্রাণ
আমি চুমে যাই বেদনার গোল নাভি
তুমি দেখাওনি ব্যালান্স সীটের ভাঁজ
আমিও চাইনি ব্যাংক-রিজার্ভের চাবি।’
[এই তো জীবন, শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ]
বর্তমান সময়ে পত্রিকার পাতা খুললেই যার লেখা এবং যার কবিতা নিয়ে কাব্যবোদ্ধাদের লেখা বেশি চোখে পড়ে তিনি কবি আমিনুল ইসলাম। এসময়ে এত মোহময়তাভরা এত প্রাণপ্রাচুর্যময় কবিতা আর কোনো কবি লিখছেন কি না, তা চোখে পড়ে না। এত আলোচনাও চোখে পড়ে না আর কোনো কবির কবিতা নিয়ে। আমিনুল ইসলাম উৎকৃষ্ট মানের কবিতা লিখে চলেছেন বিরামহীন। একদিন ঠিকই তিনি পৌঁছে যাবেন কবিতার জলচিঠি হাতে নিয়ে সার্থকতার নীলস্বপ্নের দুয়ারে।
আমিনুল ইসলামের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা :
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যার দিক থেকেও তিনি অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্য ২৫। কাব্যগ্রন্থসমূহ:তন্ত্র থেকে দূরে-(২০০২); মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম-(২০০৪); শেষ হেমন্তের জোছনা(২০০৮); কুয়াশার বর্ণমালা (২০০৯); পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি-(২০১০); স্বপ্নের হালখাতা(২০১১); প্রেমসমগ্র-(২০১১); . জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার-(২০১২); শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ-(২০১৩); কবিতাসমগ্র-(২০১৩); জোছনার রাত বেদনার বেহালা : (২০১৪) ; তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকউন্ট ( ২০১৫) প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), ভালোবাসার ভূগোলে(২০১৭); নির্বাচিত কবিতা ( ২০১৭); অভিবাসী ভালোবাসা ( ২০১৮) , জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯) ( বাছাই কবিতা ( ২০১৯), প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ ( ২০২০), হিজলের সার্কিট হাউস(২০২১); রমনার কোকিল(২০২২)। প্রকাশিত ছড়ার বই : ১.দাদুর বাড়ি-(২০০৮); ২. ফাগুন এলো শহরে-(২০১২) ৩. রেলের গাড়ি লিচুর দেশ (২০১৫)। প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ: বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ-(২০১০)। প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ: নজরুল সংগীত : বাণীর বৈভব ( বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত)
আমিনুল ইসলাম তার কাব্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যেই নানাবিধ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে:
(১) রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা ২০০৪;
(২) বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১০ ;
(৩) শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ ;
(৪) নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩
(৫) এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ ;
(৬) দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
(৭) কবিকুঞ্জ পদক ২০২১;
(৮) পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১;
(৯) আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০২১।
শাহানা সিরাজী, কবি-কথাশিল্পী, মুন্সীগঞ্জ