এখন সময়:রাত ৮:৫৩- আজ: বুধবার-৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

এখন সময়:রাত ৮:৫৩- আজ: বুধবার
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

ঋতুপর্ণ’র রেইনকোট প্লাটনিক

ওয়াহিদুর রহমান শিপু

ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন একান্তই সত্যজিৎ রায়ের ভাবশিষ্য। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। এত অল্প সময়ে এইরূপ বিরল প্রাপ্তি পৃথিবীর খুব কম চলচ্চিত্রকারের অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। ১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম হয়। তার বাবা-মা উভয়ইে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। যাদবপুর য়্যুনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন করেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও অন্যতম প্রতিভূ। ঋতুপর্ণ ঘোষ বিনির্মিত একমাত্রিকতায় ভরপুর হিন্দি চলচ্চিত্র রেইনকোট।ওই একটি হিন্দি চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনা করেন।  এই মুভির আখ্যানধর্মী দিকটা অপ্রথাগত অর্থাৎ  ছোট, বিস্তারও সামান্য ;কিন্তু এর  গল্পের নতুনত্ব ক্রেভিড, ক্লাইম্যাক্স সর্বোপরি সহজাত আবেগপ্রবণ- অনুভূতির সম্যক সাবলীল  আত্মপ্রকাশ যার লিরিক্যাল ছন্দের সঙ্গে বাদলবিলাসের পাখোয়াজি প্রাকৃতিক  ছান্দোগ্য ল্যান্ডস্কেপে একাকার হয়েছে অর্থাৎ ছবি জুড়ে থাকা বাদলদিনের কাব্যিক কোমলতা রেইনকোট মুভিটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

প্রখ্যাত আমেরিকান গল্পকার ও ‘হেনরির ছোটগল্প  ঞযব এরভঃ ড়ভ ঃযব গধমর থেকে অনুপ্রাণিত  হয়ে এই ছবিটির বিনির্মাণ করেছিলো ঋতুপর্ণ ঘোষ। এরভঃ ড়ভ ঃযব গধমর হচ্ছেন তিনজন সন্মান্য গুণি মানুষ যারা স্বয়ম্ভূ ঈশ্বরের তরফ থেকে এসেছিলেন, মনে রাখা জরুরি এই গল্পের থিমটি মি; হেনরি বাইবেলিক এসেন্সে নির্মাণ করেছিলেন।  ওই গল্পের সেমেটিক ও মাইথলজিক্যাল নামটি ওই গল্পের অন্তর্গত আতœত্যাগ এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা খুব সম্ভব ঋতুপর্ণকে টেনেছিল। অবশ্য হেনরির গল্পের অনুষঙ্গের বাইরে রেইনকোট  চলচ্চিত্রের কাহিনি অবশ্য সম্পূর্ণ তাঁর নিজের সৃষ্টি। বাদলদিনের স্মৃতিকাতরতামাখা আবহে, সুর ও সংগীতের অনন্য সম্মিলনে এ ছবিতে তিনি খুলে দিয়েছেন প্রেম এবং জীবনের গহিন –গোপন কোনো দ্বার। যে দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে মনোজ এবং নীরুর সাথে একান্ত হয়ে যায় যে কেউ, খুঁজে নেয় ফেলে আসা অতীতের কোনো বাঁক। অনেকগুলো কারণেই ঋতুপর্ণ ঘোষের বৈচিত্র্যময় নির্মাণঝুলিতে রেইনকোট এক অনন্য সংযোজন।

চূড়ান্ত বক্তব্যর আগে রেনকোট –এর গল্পটা সংক্ষেপে স্মরণ করে নেওয়া যাক শুরুতেই।

মফস্বল এলাকা ভাগলপুরের একটি বাড়িতে মনোজ  (অজয় দেবগন)  থাকে তার বৃদ্ধ মায়ের সাথে। মনোজ অবিবাহিত। বয়স তার ত্রিশের কোটার সন্নিকটে। যে জুট মিলে সে জব করত, আকস্মিকভাবে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে চাকরি হারায়। ব্যবসা করতে চাইলেও ব্যালেন্স তথা ক্যাপিটাল প্রয়োজন —- কাজেই কলকাতায় তারা কলেজ জীবনের পুরনো বন্ধুদের কাছে সে ধার চাইতে মনস্থির করে।

ট্রেনে যাত্রা শুরুর আগে মায়ের সাথে মনোজের কথোপকথনের দৃশ্য দিয়ে রেনকোট এর সূচনা ঘটে। কলকাতার উদ্দেশে ছুটতে থাকে ট্রেন, পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে নামলিপি আর ব্যাক ভয়েসে বাজতে থাকে,সুবাহা সুবাহা ক্যায়া খেয়ালো আজে,ওয়াপাস গোকুল চালে মাথুরারাজে। মাথুরা নাগারপাতি কাহে তুম গোকুল যাও? মথুরা খেকে শ্রীকৃষ্ণের গোকুল যাওয়ার মুহূর্তের সাথে মনোজের ভাগলপুর থেকে কলকাতা যাত্রার এক রকম গীতিময় সংযোগ স্থাপিত হয় এখানে আর এখানেই যেন মনোজের আত্মায় ভর করেছে স্বয়ং বিশ্বপ্রেমিক সুরেশ্বর কৃষ্ণ। মনের সব অস্থিরতা সরিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা এই পরম মমতা ও আকুতিমাখাসহ প্রান্তিককরণ সাঙ্গীতিক বহি: সুর ও স্বর  দর্শককে মুভির থিমের ভেতর প্রবেশে বাধ্য করে নিয়ে যায় ছবির স্বকৃত মহা কাব্যিক গোলিঘোঁজে।

কলকাতায় মনোজ তার কলেজ জীবনের বন্ধু অলোকের বাড়িতে ওঠে। পরদিন সকাল গড়ানোর পর থেকেই কন্টিন্যুয়াসলি বৃষ্টি। মনোজের দ্বিধান্বিত ভাব প্রকট হয়ে ওঠে, তবুও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়ে বের হতে হয়। পুরোনো বন্ধুদের অফিসে ঘুরে ঘুরে সে টাকার জন্য দেখা করে। দুপুরের পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসে দুয়ারে কড়া নাড়ে দক্ষিণ কলকাতাস্থ এক বাড়িতে। বাড়ির ভেতর থেকে প্রথমে কোনো রেসপন্স  পাওয়া যায় না, তবে কিছুক্ষণের তেতর দরজা খুলে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর পরে মনোজের সাথে চাহনির বিনিময় হয় নীরজার (ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন)।

এরপর ধীরে লয়ে মনোজ ও নীরজার সম্পর্কের গল্পটা দর্শকের সামনে প্রস্ফুটিত  হতে শুরু করে। প্রেমের পরম্পরাগত   গল্পগুলো যেমন হয়, এ গল্পটি ও তার থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। ভাগলপুরে একই মহল্লায় মনোজ ও নীরজার বেড়ে ওঠা। এরপর প্রেম…  কিন্তু বিত্তবান পরিবার থেকে সম্বন্ধ এলে কলকাতা শহরে বিয়ে হয়ে যায় নীরজার। প্রেমিক মনোজ, কিংবা তার নীরু (নীরজা) কোনোভাবেই ঠেকাতে পারেনি সেই বিয়ে।

কিন্তু প্লাটনিক প্রেমের কি এত সহজে বিচ্ছেদ হয়। পুরোনো প্রেম ভুলতে পারেনি বলেই কলকাতা শহরে পা দিয়ে মনোজের সাধ জাগে শুধু একনজর নীরজাকে দেখার। বাইরে ঝম্পক তালে বৃষ্টি, তাঁর মাঝে এক নির্জন সুনসান বাড়িতে দীর্ঘ ছয় বছর পর মুখোমুখি হয় প্রেমিক– প্রেমিকা । মুহূর্তেই দুইজন দুজনের কাছে তাদের পুরোনো ‘মান্নু ‘এবং  নীরু ‘ হয়ে ওঠে।

 

স্মৃতিকাতুরে শ্যাউলার দলা দেয়ালের গায়ে লেপ্টে সবুজাভ প্রলেপযুক্ত ধোঁয়াশা ক্যানভাস তৈরি করে আর তৎক্ষণাৎ আকস্মিকভাবে তার ওপর ঘাত প্রতিঘাত আঘাত লেগে সেলুলায়েডে প্রতিবিম্বিত হয়। চরিত্ররা নস্টালজিয়ায় ভরন্ত পরিভ্রমণ করতে থাকে। ফিরে যায় ফেলে আসা অতীতে। শুধু একটানা কথা বলে চলে দুইজনে, তাতেই এ প্রেমের বিরহ দর্শকহৃদয়ের মনিকোঠায় সেইসাথে দর্শকদের ভাবনা বিশ্বের ভেতরেও প্রবেশ করে। রেইনকোট ছবিটির অনন্যতা চিত্রকলার বিবেচনায় প্রথমত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এর চিত্রনাট্যের চমক–জাগানিয়া বিন্যাস। ঋতুপর্ণ ঘোষ বাংলাভাষী হওয়ার এর চিত্রনাট্যের হিন্দি রূপান্তরের জন্য তিনি ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় ও সমীর শর্মার সাহায্য গ্রহণ করেছেন। স্বাভাবিক জীবনের আড়ালে মানুষের নিজস্ব জগতের সূক্ষ্ম  অনুভূতিমালা অসাধারণ ভঙ্গিমায় চিত্রিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রে।

 

ওয়াহিদুর রহমান শিপু, প্রাবন্ধিক

রেম্ব্রান্টের জন্মশহর লেইডেন, ইনডেক্স পোয়েট্রি বুকস এবং কেইস নুটবুমের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ বছর ছয়েক আগে জার্মান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত নাট্যোৎসব থিয়েটার ট্রেফেন এর ছাপ্পান্নতম আসরে যোগ দিতে বার্লিন গিয়েছিলাম, পৃথিবীর আরও কুড়িটি দেশের

আমরাই শেষ জেনারেশন

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর আমরাই শেষ জেনারেশন, যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক,

আন্দরকিল্লা সাহিত্যপত্রিকা এবং স্মৃতিকাতর চাটগাঁ

প্রবীর বিকাশ সরকার “আন্দরকিল্লা” ম্যাগাজিনটি ২৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, আদৌ কম কথা নয়! সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিষয়ক একটি সাময়িকী বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর