এখন সময়:রাত ১:০০- আজ: বুধবার-১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:রাত ১:০০- আজ: বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং তাজউদ্দীন এক ও অভিন্ন

অজয় দাশগুপ্ত

বাংলাদেশে এমন ও একজন নেতা ছিলেন যিনি দেন দরবার ছাড়াই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছিলেন সমাধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর তাদের প্রচ্ছদ কাহিনিতে তাজউদ্দীন আহমদের এ পরিচয় ছেপেছিল বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। পরিচয়টা ছোট কিন্তু বলছে অনেক কথা। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার প্রাণপুরুষদের একজন ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের কথা এলে তাজউদ্দীন আহমদের নাম আসে। আসতেই হয়। কোনো রাজনীতি কোনো স্বজনপ্রীতি, কোনো বন্ধ্যাচিন্তা দিয়ে তা আটকানো যায় না।যাবেইবা কেন? ইতিহাসের প্রতিটি দিন তো বাস্তব কার্যকারণ দিয়েই লেখা। তাহলে সৎ ইতিহাসের সত্যকাহনে আমরা বিচ্যুত হই কেমনে? আজ বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের কথা এলে বঙ্গবন্ধু যেমন অবধারিত, তাজউদ্দীন আহমদ তেমনই অনিবার্য। পুরো ষাটের দশকজুড়ে আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক প্রস্তুতি তার পুরোভাগের নির্বাহী মানুষটিকে, পরিকল্পক মানুষটিকে আমরা ভুলি কী করে?

বাংলাদেশে এখন আদর্শবাদী মানুষ নাই। রাজনীতিতে আদর্শ নাই তেমন নেতা নাই বলে দু:খ করি আমরা। কিন্তু কেন নাই? কবে থেকে আদর্শ চলে গেলো ?

 

কবে থেকে পর হলো আমাদের ? একবার যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান দেখবেন ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট আমরা জাতির জনককে হারানোর পর যে শেষ রেখা ছিল তাও কেড়ে নেয়া হয়েছিল ৩ নভেম্বর। সে রাতে খুনী মোশতাক ও তার সহযোগীদের হাতে শেষ হয়ে গিয়েছিল জাতির আদর্শ। নির্মম ভাবে খুন হয়েছিলেন চার জাতীয় নেতা। যাঁদের একজন তাজ উদ্দীন আহমদ । যিনি না হলে যিনি না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কি হতো বা কি হতে পারতো তা ভাবা বা অনুমান করাও দু:সাধ্য। এখন আমরা যেমন দেখি রাজাকার ও দালালের ছানাপোনারা কিলবিল করছে তখন তারা ছিল আরো শক্তিশালী। তাদের সাথে ছিল আমেরিকা চীন আর পাকিস্তান । ফলে লড়াইটা সহজ ছিল না। অকুতোভয় তাজ উদ্দীন আহমেদ এসব অপশক্তি তো বটেই ঘরের দুশমনদের সামলেই আমাদের কে জয়ী করিয়েছিলেন। সে মানুষটি কি আসলেই সে ভাবে আলোচিত বা নন্দিত ? আজকের প্রজন্ম কি তাঁকে চেনে না জানে ? যদি না জানে তো সে দায় কা’র ? যুদ্ধাপরাধী সহ দালালদের বিচার বা শাস্তি হয়েছে বলে ইতিহাস পাপ মুক্ত হয়েছে বলি আমরা কিন্তু এই যে অন্যভাবে ইতিহাসের বিস্মরণ তাজ উদ্দীনের মতো নেতাকে সামনে না আনা তাও কি  ইতিহাসে সত্যের অপালাপ নয় ? এর দায়িত্ব নেবে কে?

 

বহুকাল হয় লিখেছিলাম বঙ্গবন্ধু গান্ধীর মতো জনক হয়ে তাজউদ্দীন কে নেহেরুর মত দেশ চালাতে দিলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের কোন সুযোগ থাকতোনা এই দেশে। মুজিবনগর সরকার নামটি ও ধারণাটি যাঁর তাঁকেই আমরা মুজিববিরোধী ভেবে একা করে দিয়েছিলাম। দেশ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যিনি পরিবারের সাথে না থেকে অফিসের মেঝেতে ঘুমাতেন  সে তাঁকে কা’রা কলকাতাতেই গুলি করে মারতে গিয়েছিল?

আলোচনার কালে জুলফিকার আলী ভুট্টো ইয়াহিয়া কে বলেছিল, মুজিব একা আসেনা কেন? ঐ সাদা হাফহাতা সার্টের লোকটাকে কাবু করা যায়না।

যখন তিনি জীবন দিলেন তখন তিনি যাঁদের জন্য প্রাণ দিলেন সে মানুষ বা দল কারো কিছু নন। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে, পাকিস্তান,  আমেরিকা  চীনের মত দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করে দিয়ে যাওয়া নেতাকে কি আমরা জাতীয় বীর মানি? না দল না নেতারা না ক্ষমতা কেউই তীব্র আলো সহ্য করতে পারেননা। তাদের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। অথচ দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর আলোকিত জীবন জানা জরুরী। নয়তো কোনকালেও  আদর্শ বলে কিছু থাকবে না।

 

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এই মানুষটি বলতে গেলে একাই লড়াই করেছিলেন। এর  আগের একটা ঘটনা বলি। একাত্তরের শুরুতে পাকিস্তানিরা গোল টেবিল বৈঠক ও আলোচনার নামে সময় নষ্ট করছিলো। ভেতরে ভেতরে বাঙালি নিধনের ব্লু প্রিন্ট তখন রেডি। ইয়াহিয়ার সাথে বৈঠকে থাকতেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঝানু বদমেজাজি আর জমিদার পুত্র। ভুট্টো বলেছিলেন, শেখ মুজিবকে তাও বোঝানো যায়, কিন্তু সাদা হাফ হাতা শার্টের লোকটা কেন থাকে সাথে?  ঠবৎু ফরভভরপঁষঃ ঃড় পড়হারহপব যরস. স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোসহীন,নির্ভিক।

একাত্তরে ভারতেও মতভেদ ছিলো।একদল চাইতো না ভারত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। বাজপেয়িরা চাইতেন সিকিমের মতো দখল নিক। অক্টোবর মাসে ইন্দিরা গান্ধী ইউরোপ ও আমেরিকা ট্যুরে যাবার সময় ইঙ্গিত দিলেন, এবার এসপার বা ওসপার। দরকার হলে সামরিক এ্যকশানে যাবেন তাঁরা। ব্যস। অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগ নেমে পড়লো প্রচারে। খন্দকার মোশতাক গংও চুপ থাকলো না। তারা চাইলো বিদেশ গিয়ে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশানের ঘোষণা দিতে। সে সময় কঠিন হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একা সামাল দিয়েছিলেন তিনি। এবং ইন্দিরা গান্ধী জানিয়ে দিয়েছিলেন কেবল এই একটি মাত্র মানুষকেই তাঁরা জানাবেন, কি হচ্ছে বা কি হতে পারে।

কলকাতায় যখন নেতারা বিলাসও বিনোদনে ব্যস্ত তিনি তখন তাঁর অফিসের মেঝেতে ঘুমাতেন। একটি রাতও স্ত্রী পরিবারের সাথে কাটান নি। সোহেল তাজ তখন শিশু। তার অসুস্থতার সময় তিনি তাকে না দেখে ছুটেছিলেন  মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের দেখ ভাল করতে। পরিবার কে বলতেন তোদের তো মা আছে এইসব ছেলেদের যে কেউ নাই। এরা তো দেশের জন্য জান দিতে এসেছে। তাঁর এই ভালো কাজের বিনিময়ে তখনকার এক যুব নেতা একরাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিল তাঁকে হত্যা করবে বলে।কারণ তিনি কারো কথা শোনেন না। কারো কান কথায় কান দেন না। তাঁর

আদর্শ দেশের মুক্তি ।

তিনি মৃত্যুকে পরোয়া করতেন না। তাই দল যখন তাঁকে একা করে দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু অনেক দূরে, তখনও তিনি  আদর্শ  আর  আনুগত্যের জন্য জান দিতে দেরী করেন নি। বরং জেলখানায় সহবন্দী কামরুজ্জামান সাহেব যখন গোলাগুলির শব্দে ভীত হতবিহ্বল তখন শান্ত কন্ঠে বলেছিলেন, যান অজু করে নামাজটা পড়ে  আসেন। মৃত্যুর জন্য এমন শান্ত অপেক্ষা বিরল।

বায়াত্তুরের ১১ জানুয়ারী তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম হচ্ছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার লড়াই। তাই পার্লামেন্টারি শাসনই ভালো। এবং তিনি সরে যাচ্ছেন তাঁর পদ থেকে। বঙ্গবন্ধুকে জানাতে চেয়েছিলেন নয় মাসের অভিজ্ঞতা ও শত্রু মিত্রের আসল চেহারা। কিন্তু বাইরে অগণন দর্শণার্থী আর নেতাদের ভীড়ে একসময় হারিয়ে গেলেন তিনি। সে কথা  আর কোনদিন বলার সুযোগ পান নি। বলতে পারলে ও বঙ্গবন্ধু জানতে পারলে হয়তো দেশ ও সমাজের চেহারা হতো একেবারে অন্য ধরণের। কিন্তু মোশতাকেরা তা হতে দেয় নি। আজও দেয় না।তবু একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ আর তিনি এক ও অভিন্ন।

ইতিহাসে মহাভারতের এই অর্জুনের নাম তাজউদ্দীন আহমেদ।

শুভ জন্মদিন।

 

অজয় দাশগুপ্ত, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সিডনী প্রবাসী

 

প্রাচীন বাংলার স্বচ্ছ ইতিহাস রচনায় তাম্র-শিলালিপি মুদ্রা ও প্রত্ন-ভাস্কর্য কতটা দরকারি

ড. আবু নোমান উৎস বা সূত্র যতটা স্বচ্ছ যৌক্তিক ও প্রায়োগিক হয় ইতিহাস তত বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এ কারণেই ইতিহাস রচনায় উৎসের ভূমিকা অত্যন্ত

আন্দরকিল্লার উদ্যোগে আনন্দ আড্ডা ও দুই কবির জন্মদিন পালন

রুহু রুহেল বিগত ১ জানুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যা ছয়টায় শিল্প, সাহিত্য ও সমাজভাবনামূলক কাগজ ‘আন্দরকিল্লা’র ২৭ বছরে পদার্পণ, দুই কবির জন্মদিন পালন, ‘আন্দরকিল্লা’র ডিসেম্বর সংখ্যার পাঠ

রাজা মহারাজাদের ‘হারেম’

বাবুল সিদ্দিক   ‘হারেম’ শব্দটি তুর্কি শব্দ। কেউ কেউ বলেন হারেম শব্দটি আরবি শব্দ হারাম থেকে এসেছে। যার অর্থ নিষিদ্ধ। সহজ ভাষায় হারেম অর্থ মহিলাদের

অরক্ষিত সময়ের গল্প

মনি হায়দার সে পাহারাদার, সুতরাং নারী ও রাত তার কাছে অতৃপ্তির আধার। গল্পটা একজন পাহারাদারকে নিয়ে অথবা  একজন পাহারাদারের গল্পও হতে পারে। গাছ গাছই, যে

রুয়েলিয়া, রুয়েলিয়া

শোয়ায়েব মুহামদ শাহানা বলে, বেলায়াত স্টুডিও থেকে কি ছবিটা তুমি নিতে পারছো? বেলায়াত এসেছে খানিক আগে, ট্রেনে। এসে জোহরের নামাজ শেষে গুটানো জায়নামাজ টেবিলে রেখে