দশক ছয় হলে
সন্ধে হতে হতে ভয় কি বাড়ে তবে
আমাকে দেবে গালি আবারও আজ রাতে
আমারই বিরক্তি না মেনে গতদিন
যেভাবে ছুড়ে তির মেটায় যত ঝাল
কেউ না কেউ খুব! ফিরতে বাড়ি দেরি
হলেই হুংকার বাবার, আর মা তো
নফল নামাজের খবর জানিয়েই
‘আমার কি চিন্তা হয় না ভেবেছিস’
বলেই দুই চোখ মোছেন আলগোছে।
পিতার প্রয়াণের বছর কুড়ি পর
কার সে ত্রাসে ডরি, স্বেচ্ছাচারী কে সে?
আমিই স্বাধীনতা দিইনি তাকে আজও?
নিজেই কচ্ছপ মধ্যবিত্তের;
কীভাবে কাকে দেই সুযোগ মুক্তির!
কিন্তু ব্যথা পেলে বুঝি কি বেঁচে আছি?
যদিও, ভিখারির ফিরিয়ে দিয়ে হাত
হারাই মনুষ্য হবার কী সুযোগ!
আয়ুর গণনায় দশক ছয় হলে
বামন হয়ে পড়ি অস্কারের চেয়ে!
আমার ড্রাম নেই; অথচ সন্তান,
বন্ধুগণ মিলে মাতে কী উৎসবে!
ওদের উল্লাসে অথবা সংগীতে
ধরে না চিড় কোনও কাচের দেয়ালেও।
পেছনে প্রান্তর সমর-উত্তর,
ধ্বংসাবশেষেও ধোঁয়ার কু-লী।
সামনে স্মৃতিদের উপন্যাস শুধু।
নিঝুম রাত চিরে কোথাও পড়ে টুপ
চোখের পানি তবু; নাকি সে অনুভবে
অশ্রুপতনের শব্দে জাগে কেউ
যে-জলে বুদ্বুদ আর কী তোলে ঢেউ!
একদিন আড়াল থেকে দেখা
তার সাথে দেখা কেন প্রতিদিন, খুইয়ে ফেলেছি যাকে;
এ কেমন বাঁচা, পাঁজরের খাঁচা ধসে খুলে পড়ে কিছু!
প্রাপ্তবয়স্করা সকলে কি খসিছে পরস্পর
থেকে অবিরাম, যদিও শপিং মলে, রাস্তায় ছোটে
মিছিল যেমন ধাবমান মহাসড়কের ইতিহাসে?
অথচ অমিল স্বগত কথার অনুক্ত ঢেউ বাজে।
বিদায় দেবার কেউ না থাকলে তবে কি লেমোস আমি,
ঘোষণাই দেবো নিজের দেহাবসানের, দেখতে কারা
অথবা ক’জন আসে ফুল হাতে, অশ্রু ঝরাতে ভুলে!
আমার কফিনে অভাব ঘটে না কিছুই অর্পণের;
অথচ শূন্য হয় না কারোরই বক্ষ অথবা ঘর।
কেবল প্রয়াত বাবা ও বন্ধু কেঁদেছে শবের পাশে;
আলাদা হবার কালে ক্রন্দসী মায়ের ভুলি না মুখ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে যত শিশু আমার বুকের ’পর।
আড়াল থেকেই দেখে যাই সব, পৃথিবীতে কে কাহার;
ক্রোধের শিকার হতে পারি বলে সামনে আসি না আর।
দুই ছন্দের একক কবিতা
আতর না মেখে গায়ে বলেছি ফুলের দিকে চাও,
স্নানের আগে ও পরে নিজের সুরভি কিছু দাও।
পুষ্পের মুকুট পরে হলুদ শাড়িতে যাও কই?
নাছোড় তো নই আমি, তবু সদা সঙ্গী নামে রই।
তোমার সুগন্ধে রুদ্ধ কেন শ্বাস!
আমি কি কোল* তবে, প্রিয়র সং¯্রবে
মরবো নির্ঘাত? অথচ প্রাণিটির
চেয়েও ঢের বড়ো আমার উত্থান।
না মরে অদূরে থেকে তাহলে আপন ভেবে চলি;
অসম্ভব মিলনের আশাও কীভাবে বল ভুলি!
*কিছুটা কাঠবিড়ালির চেহারার অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণির পুরুষটি
নারীর সাথে প্রথম মিলনেই মারা যায়।
নিছক পুরুষ ব’লে
কী তবে আমার ঘোর অপছন্দ তোর
না বাতলে-বুঝিয়ে ছুড়ে গালি ভয়ংকর
ভূপাতিত করলি কেন আমাকে হঠাৎ!
নিছক পুরুষ ব’লে অজানা খেয়ালে?
অথচ সারমেয়, ষাঁড়, এমনকি হাঁসের
রিরংসা আবৃত, শুধু প্রয়োজন ছাড়া।
ভেবেছি তাহলে কেন আমার ঝুলন!
কী হেতু ঘণ্টির শোভা এ-বিতিকিচ্ছিরি!
না আমি নিলাজ কিংবা উদোম উন্মাদ;
কারোর বিরুদ্ধে নই চোরাবালি, ফাঁদ।
নিগ্রহ তোমার তবু ঠেকাতে না পারি।
যদিও আদিতে মাতৃগর্ভে থাকি নারী!