অনুবাদ: লুনা রাহনুমা
আভেরির সঙ্গে সেন্ট্রাল পার্কে হাঁটছিলাম। আভেরি নাইট, নিউ ইয়র্কের মস্ত চোর, দস্যু ও খুনী।
“কিন্তু, প্রিয় আভেরি,” আমি বললাম, “ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে। নিঃসন্দেহে তুমি আধুনিককালের অপরাধ জগতে অত্যন্ত বিস্ময়কর কিছু কাজের কৃতিত্ব দেখিয়েছ। পুলিশের ঠিক নাকের নিচে অসাধারণ কিছু কাজ করে দেখিয়েছ। অসীম সাহসের সাথে তুমি কোটিপতিদের বাড়িতে প্রবেশ করেছ এবং একটি খালি বন্দুক দেখিয়ে তাদেরকে দমিয়ে রেখেছ। আর শেষমেশ তাদের ঘরের রৌপ্য এবং রতœ নিয়ে নির্ভয়ে বেরিয়ে এসেছ। মহাসড়কে বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানির মধ্যেই তুমি লোকজনকে বালির বস্তায় বন্দি করেছ। দুর্দান্ত প্রকাশ্যে আর সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সঙ্গেই তুমি একাধিক হত্যা এবং লুট করেছ। কিন্তু এখন যেহেতু তুমি একটি খুন করার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে আমার কাছে ছুঁটে এসে গর্ব করে দাবি করতে চাইছ যে খুনের দায়ে তোমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য যে গোয়েন্দাকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তুমি তাকে জানো। আর আমাকে তার মুখোমুখি উপস্থিত করতে পারবে। অবশ্যই আমি তোমার এই কথায় সন্দেহ প্রকাশের ফুরসৎ চাইব। ভুলে যেও না, এখন তুমি নিউইয়র্কে আছো।”
আভেরি নাইট প্রশ্রয়ের হাসি হাসে।
“আপনি আমার পেশাগত গৌরবকে তিরস্কার করছেন, ডাক্তার,” একটি ঝাঁঝালো স্বরে বলল সে। “আমি আপনার ভুল ভেঙে দিবো।”
আমাদের কাছ থেকে প্রায় বারো গজ সামনে সম্ভ্রান্ত চেহারার একটি লোক ঝোঁপের চারপাশে হাঁটছিল। ঝোপের ঠিক পাশেই রাস্তাটি বাঁক নিয়েছে। আভেরি আচমকা তার রিভলবার বের করে লোকটির পিছনে গুলি করল। আভেরির শিকার পড়ে গেল। আর কোনোরকম নড়াচড়া ছাড়াই সেটি মাটিতে পড়ে রইল।
দুর্দান্ত খুনিটি এরপর খুব আস্তে ধীরে এগিয়ে গেল। মৃত লোকটির জামাকাপড় থেকে টাকা, ঘড়ি, একটি মূল্যবান আংটি ও গলাবন্ধ স্কার্ফের পিনটি খুলে নিয়ে এলো সে। তারপর মৃদু হেসে আবার আমার কাছে এলো। আর আমরা পুনরায় হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
দশ পা আগাতেই একজন সদস্যের সঙ্গে দেখা হলো আমাদের। পুলিশটি একটু আগে যেদিকে গুলি হয়েছে সেদিকে দৌঁড়াচ্ছিল। আভেরি নাইট পুলিশকে থামায়।
“এইমাত্র আমি একটা লোককে খুন করেছি,” ভীষণ গুরুতর মুখে বলে আভেরি, “আর আমি লোকটির শরীর থেকে মূল্যবান সবকিছু চুরি করেছি।”
“ভাগ,” ক্ষুব্ধস্বরে বলে পুলিশ, “না হলে এক্ষুনি আমি তোকে ভেতরে ঢুকাব। পেপারে নিজের নাম দেখতে চাস, তাই না? আগে কখনো দেখিনি কোনো পাগলাকে গুলি চালানোর পর এত জলদি এসে উপস্থিত হতে। পার্কের বাইরে যা, এক্ষুনি। নিজের প্রাণ বাঁচা, নইলে আমি তোর প্রাণ নেব।”
এরপর কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকি আমরা। তর্কের স্বরে বললাম, “একটু আগে তুমি যে কাজটি করেছ সেটি খুব সহজ কাজ ছিল। কিন্তু তুমি যখন এমন কোনো গোয়েন্দাকে খুঁজে বের করবে যাকে আসলে পাঠানো হয়েছে তোমার ওপরে গোয়েন্দাগিরি করতে, তখন দেখবে কাজটি কত কঠিন।”
“হয়তো তাই,” বেশ হালকাভাবে বলল আভেরি। “আমি স্বীকার করি যে আমার সাফল্য কিছুটা নির্ভর করে আমার পেছনে তারা কোন ধরণের টিকটিকি লাগিয়েছে তার উপরে। যদি খুব সাধারণ এলেবেলে কেউ হয়, তাহলে আমি তাকে লক্ষ নাও করতে পারি। তবে তারা যদি কোনো বিখ্যাত গুপ্তচরকে লাগিয়ে মামলাটিতে আমাকে সম্মানিত করতে চায়, তাহলে আমি সেই গুপ্তচরের বিপরীতে আমার ধূর্ততা এবং অনুসন্ধিৎসু ক্ষমতার লড়াইয়ে মিলিত হতে ভয় পাই না।”
পরদিন বিকেলে আভেরি তার তীক্ষè মুখের সন্তুষ্ট দৃষ্টি নিয়ে আমার অফিসে প্রবেশ করল।
“কেমন চলছে রহস্যজনক খুন খারাবি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“যেমন চলে,” হাসতে হাসতে বলল আভেরি। “আজ সকালে আমি থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মনে হচ্ছে আমার নাম এবং ঠিকানা লেখা কিছু কার্ড সম্বলিত একটি কার্ড-কেস পাওয়া গেছে লাশের পাশে। পুলিশের কাছে তিনজন সাক্ষী আছে যারা গুলি করার ঘটনাটি দেখেছে এবং তারা পুলিশের কাছে আমার শারীরিক বিবরণ দিয়েছে। এই খুনের মামলাটি এখন আছে বিখ্যাত গোয়েন্দা শ্যামরক জোলনেসের হাতে। তিনি সাড়ে এগারোটার সময় হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়েছেন কেসের তদন্তে। দুইটা পর্যন্ত আমি বাড়িতে অপেক্ষা করলাম। ভাবলাম তিনি হয়তো ফোন করবেন।”
আমি হাসলাম, ঠাট্টার সুরে।
“শ্যামরককে তুমি কখনোই দেখবে না। অন্তত আরো দুই কি তিন সপ্তাহের আগে তো নয়ই। এই হত্যাকা-ের কথা সবাই ভুলে না যাওয়া পর্যন্ত।” আমি কথা চালিয়ে গেলাম। বললাম, “তোমার বুদ্ধির তীক্ষèতা সম্পর্কে আমার আরও উচ্চ ধারণা ছিল আভেরি। যে সাড়ে তিন ঘন্টা তুমি বাড়ি বসে অপেক্ষা করছিলে, সেই সময়ে সে তোমার নাগালের বাইরে চলে গেছে। এতক্ষণে সে সত্যিকার অপরাধী সনাক্তকরণ তত্ত্ব অনুযায়ী তোমাকে জালে আটকানোর চেষ্টা করছে। আর এমন পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত কোনও অপরাধী তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়নি। আমি তোমাকে বলব এই কেসটি তুমি ছেড়ে দাও।”
“ডাক্তার,” তীক্ষè ধূসর চোখে আচমকা ঝলকানি তুলে আর চিবুক চৌকো করে আভেরি বলল, “রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও আপনার শহরে অপরাধীর পরবর্তী বৈঠক ছাড়াই ডজন খানেক হত্যাকা-ের মতো কতক ঘটনা রয়েছে, আর আছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও। আমি এই রেকর্ড ভাঙার উদ্যোগ নেব। আগামীকাল আপনাকে আমি শ্যামরক জোলনেসের কাছে নিয়ে যাব। আপনার সামনে আমি তার ছদ্মবেশ উন্মোচন করাবো। আর প্রমাণ করব যে আপনাদের এই শহরে আইনের দায়িত্বে থাকা একজন অফিসার এবং একজন নরহত্যাকারী মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে।”
“করে দেখাও,” আমি বললাম, “আর তাহলে তুমি আমাদের পুলিশ বিভাগের আন্তরিক ধন্যবাদ পাবে।”
পরদিন আভেরি আমাকে ডেকে একটি ট্যাক্সিতে উঠালো।
“এক দুই বার মিথ্যা গন্ধ পেয়েছি আমি, ডাক্তার,” আভেরি স্বীকার করে। বলল, “গোয়েন্দাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা জানি আমি। আর সেগুলোর কয়েকটি অনুসরণ করেছি শ্যামরককে খুঁজে বের করার তদন্তে। খুন করার পিস্তলটি ছিল .৪৫- ক্যালিবার। আমি ভেবেছিলাম যে, সূত্র ধরে শ্যামরককে আমি পঁয়তাল্লিশ নাম্বার রাস্তায় অবশ্যই খুঁজে পাব। এরপর আবার কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গিয়েও খুঁজলাম গোয়েন্দাকে। কারণ মৃত লোকটির পিঠে গুলি করা হয়েছে মানে স্বাভাবিকভাবেই ইঙ্গিত করে যে লোকটি সামাজিক বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। কিন্তু কোথাও আমি গোয়েন্দা শ্যামরকের হদিস খুঁজে পেলাম না।”
“ৃআর তুমি কোনোদিন পাবেও না,” জোর দিয়ে বললাম আমি।
“সাধারণ পদ্ধতিতে খুঁজলে পাবো না,” আভেরি বলল। “হয়তো আমি এক মাস ব্রডওয়ের রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথা হাঁটতে থাকব ব্যর্থ হয়ে। কিন্তু আপনি আমার অহংকারে খোঁচা মেরেছেন ডাক্তার। আর আজ যদি আমি আপনাকে শ্যামরক জোলনেসকে দেখাতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আপনার শহরে আমি আর কখনও হত্যা বা ডাকাতি করব না।”
“ফালতু কথা, আভেরি,” আমি জবাব দিলাম। “যেখানে আমাদের চোরেরা আমাদের বাড়িতে ঢুকে বিনয়ের সঙ্গে হাজার হাজার ডলার মূল্যের গহনা দাবি করে, আর তারপর সেগুলো নিয়ে বেরিয়ে যাবার এক বা দুই ঘন্টা আগে ডিনার করে ও পিয়ানো বাজায়, সেখানে তুমি একটা নিছক খুনি হয়ে আশা করো যে তোমার পেছনে লাগানো গোয়েন্দাকে তুমি খুঁজে বের করে ফেলবে?”
আভেরি নাইট কিছুক্ষণের জন্য চিন্তায় ডুবে গেল। আর দীর্ঘক্ষণ পর তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
“ডাক্তার,” আভেরি বলে, “পেয়ে গেছি। আপনার মাথায় টুপি লাগান। আমার সঙ্গে চলুন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে আধ-ঘণ্টার মধ্যে আপনি শ্যামরক জোলনেসের সামনে দাঁড়াবেন।”
আভেরি নাইটের সঙ্গে একটি ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম আমি। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে সে কী নির্দেশ দিয়েছে তা শুনতে পাইনি। তবে গাড়িটি চমৎকার গতিতে ব্রডওয়ে ধরে যাত্রা আরম্ভ করেছে। এই মুহূর্তে ট্যাক্সিটি পঞ্চম অ্যাভিনিউতে বাঁক নিয়ে আবার উত্তরের দিকে এগিয়ে চলেছে। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে স্পন্দিত এক হৃদয় নিয়ে বসেছিলাম আমি এই বিস্ময়কর এবং প্রতিভাধর গুপ্তঘাতকের পাশে। যে ঘাতকের বিশ্লেষণাত্মক প্রতিভা এবং দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস তাকে উৎসাহী করেছে আমাকে এক খুনির সঙ্গে লেগে থাকতে, এবং নিউইয়র্কের গোয়েন্দাদেরকে একযোগে তাড়া করে তার পেছনে লেগে থাকতে। যদিও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সেটি আসলে সম্ভব হতে পারে।
“তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি কোনো ফাঁদে পা দিচ্ছ না?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। “মনে করো তোমার তদন্তের ক্লু, তা যাই হোক না কেন, আমাদেরকে কেবল পুলিশ কমিশনার এবং কয়েক ডজন পুলিশের সামনে নিয়ে ফেলল!”
“প্রিয় ডাক্তার,” আভেরি সামান্য দৃঢ়ভাবে বলল। “এখন আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব যে আমি জুয়াড়ি নই।”
“আমাকে ক্ষমা করবে,” আমি বললাম। “কিন্তু আমার মনে হয় না শ্যামরককে তুমি খুঁজে পাবে।”
এভিনিউর সুন্দরতম একটি বাড়ির সামনে থামল আমাদের ট্যাক্সিটি। আর বাড়িটির সামনে একটি লোক হাঁটাহাঁটি করছিল। লোকটি দীর্ঘ লাল গোঁফওয়ালা, যার কোটে গোয়েন্দার ব্যাজ দেখা যাচ্ছে। সহসা লোকটি মুখের নকল গোঁফ খুলে মুখ মুছতে আরম্ভ করলো। তৎক্ষণাৎ আমি চিনতে পারলাম নিউইয়র্কের বিখ্যাত গোয়েন্দার সুপরিচিত অবয়ব। গোয়েন্দা শ্যামরক বাড়ির দরজা-জানালায় তীক্ষè দৃষ্টি বুলাচ্ছে।
“তাহলে ডাক্তার,” আভেরি বলে, নিজের কণ্ঠে বিজয়ের উচ্ছ্বাস দমন করতে না পেরে বলল, “আপনি দেখেছেন তো?”
“সত্যি বিস্ময়কর- অবিশ্বাস্য!” আমাদের ট্যাক্সি ফিরতি পথে চলতে আরম্ভ করেছে আর আমি চিৎকার না করে পারলাম না। বললাম, “কিন্তু তুমি কীভাবে করলে এটা? কোন অনুসন্ধান তত্ত্বের গুণে”
“প্রিয় ডাক্তার,” এই মহান খুনী বাধা দিয়ে বলল, “অনুসন্ধান তত্ত্ব গোয়েন্দারা ব্যবহার করে। আমার তত্ত্ব প্রক্রিয়াটি আরও আধুনিক। আমি এটিকে বলি লবণাক্ত তত্ত্ব। ছোটখাটো ক্লু ধরে রহস্য সমাধানের ক্লান্তিকর মানসিক যন্ত্রণার ভেতরে না গিয়ে আমি সরাসরি তাৎক্ষণিক একটা উপসংহারে পৌঁছে যাই। এই ঘটনায় আমি যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছি তা আপনাকে ব্যাখ্যা করছি।
“প্রথমত আমার যুক্তি ছিল যে যেহেতু অপরাধটি ঘটেছে নিউ ইয়র্ক সিটিতে দিনের আলোয় একটি পাবলিক প্লেসে এবং অদ্ভুতভাবে নৃশংস পরিস্থিতিতে। আর যেভাবে হাতের কাছে পাওয়া সর্বাপেক্ষা সুচারু গোয়েন্দার হাতে মামলাটির ভার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে অপরাধী কোনোদিনই ধরা পড়বে না। আপনার কি মনে হয় না ডাক্তার যে আমার এই অনুমান পূর্ব দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যায় যুক্তিসঙ্গত আছে?”
“হয়তো আছে,” দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলাম আমি। “কিন্তু যদি বিগ বিল ডেভৃ”
“ওই কথা বাদ দিন,” একটা হাসি দিয়ে বলল আভেরি, “ওসব কথা আমি বেশ কয়েকবার শুনেছি। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাকিটুকু বলছি বরং।
“নিউ ইয়র্কে ঘটে যাওয়া হত্যাকা-ের ঘটনাগুলো যদি শেষপর্যন্ত অমীমাংসিতই থেকে যায়, সেক্ষেত্রে আমার যুক্তি ছিল যে যদিও এসব অপরাধের জন্য সেরা গোয়েন্দা মেধাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু অবশ্যই এটি নির্ভুল যে সেসব গোয়েন্দারা তাদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ভুল পথে চালিয়েছেন, কারণ তারা অপরাধীকে ধরতে পারেনি। এবং শুধুমাত্র ভুল পথেই নয়, বলতে হবে একেবারে সঠিক পথের বিপরীতে। আর এটাই ছিল আমার তদন্তের প্রধান ক্লু।
“সেন্ট্রাল পার্কের লোকটিকে আমি হত্যা করেছি। এখন, আপনার কাছে আমি আমাকে বর্ণনা করছি শুনুন।
“আমি লম্বা। আমার কালো দাড়ি। এবং আমি প্রচার-পরিচিতি ঘৃণা করি। বলার মতো অর্থ আমার নেই। আমি জাউ খেতে পছন্দ করি না। এবং আমার জীবনের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা হচ্ছে যে মৃত্যুর আগে আমি সম্পদশালী হবো। আমি ঠান্ডা এবং হৃদয়হীন স্বভাবের মানুষ। নিজের সহকর্মীদের ব্যাপারে আমি যতœশীল নই। আর আমি কখনও ভিক্ষুক কিংবা দাতব্যকে একটি পয়সাও দেই না।
“এবারে তাহলে, প্রিয় ডাক্তার, এটাই আমার সত্যিকারের বর্ণনা, ওই বুদ্ধিমান গোয়েন্দা যাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। আপনার মতো যারা নিউইয়র্কে সম্প্রতি ঘটা অপরাধ ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত আছেন, তারা আমার বক্তব্যের ফলাফল অনুমান করতে পারবেন। যখন আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আপনার অবিশ্বাস ভরা চোখের সামনে আমি সেই গোয়েন্দাকে দেখাব যার উপরে আমাকে বন্দি করার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তখন আপনি আমাকে নিয়ে হেসেছিলেন। কারণ আপনি বলেছিলেন যে নিউইয়র্কে গোয়েন্দা এবং খুনি কখনো মুখোমুখি হয় না। আমি আপনাকে দেখিয়েছি যে এটি সম্ভব।”
“কিন্তু তুমি কীভাবে করলে এটা?” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
“কাজটা খুব সহজ ছিল,” বিশিষ্ট খুনি জবাব দিল। “আমি ধরে নিয়েছিলাম যে গোয়েন্দা তার কাছে যেসমস্ত ক্লু আছে, সে ঠিক সেগুলোর বিপরীতে যাবে। আপনাকে আমি আমার বর্ণনা দিয়েছি। তাই, গোয়েন্দাটি অবশ্যই সেইমতো একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করবে। আর সে খুঁজবে সাদা দাড়িওয়ালা একজন ছোটখাটো লোককে। যে সংবাদপত্রে আলোচনায় আসতে পছন্দ করে। যিনি খুব ধনী। জাউ যার প্রিয় খাবার। যে গরীব হয়ে মরতে চায়। এবং যে অত্যন্ত উদার ও পরোপকারী স্বভাবের। এই পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর আমার মনে আর কোনো দ্বিধা ছিল না। তৎক্ষণাৎ আমি আপনাকে সেই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি যেখানে শ্যামরক জোলনেস অ্যান্ড্রু কার্নেগির বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মারছিল।”
“আভেরি নাইট,” আমি বললাম, “তুমি এক আশ্চর্য প্রতিভা। যদি তোমাকে পুনঃসংস্কারে বিপত্তির কোনো ভয় না থাকত, তাহলে নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীর জন্য তুমি কতই না চমৎকার একটি রতœ হতে পারতে!”
ও হেনরি:
উইলিয়াম সিডনী পোর্টার, (সেপ্টেম্বর ১১, ১৮৬২-জুন ৫, ১৯১০)। তিনি নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবরোতে জন্মগ্রহণ করেন। ও হেনরি তাঁর ছদ্মনাম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আলোচিত ছোট গল্পকার। আমেরিকান জীবনযাপন নিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক গল্প লিখেছেন তিনি। এক সময় কলেজ পাঠ্য হওয়ায় তার লেখা ‘দ্য গিফট অব ম্যাজাই’ গল্পটি বাংলাদেশে খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয়।
লুনা রাহনুমা, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, লন্ডন প্রবাসী