নাজমুল টিটো : মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও লেখকের মুক্তচিন্তাই পারে একটি দেশের শিল্প-সাহিত্যকে দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এবং উন্নত সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথকে আরো প্রশস্ত করতে। তার জন্য দরকার শাসকগোষ্ঠীর আনুকূল্য ও সদিচ্ছা। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সৃজনকার্যের সূচনা হয় চর্যাপদ দিয়ে। ইতিহাসবিদ ও ভাষাতাত্ত্বিক গবেষকদের মতে যার রচনাকাল ধরা হয় খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক। যা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৬৫০ – ১২০০ খ্রি.),
হিসেবে চিহ্নিত।
বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে। চর্যাপদের যে ৫১টি পদ উদ্ধার হয়েছে সেগুলো মূলত বৌদ্ধ সহজিয়াদের ধর্মতত্ত্ব সাধন ভজনমূলক গান। এ যাবত চর্যায় মোট ২৪ জন কবির নাম পাওয়া গেছে। এঁরা সবাই সিদ্ধাচার্য ছিলেন। এঁরা হলেন: লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গু-রী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জয়নন্দী, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। এদের মধ্যে লাড়ীডোম্বীর পদটি পাওয়া যায়নি। এই নামগুলির অধিকাংশই ছদ্মনাম এবং ভনিতার শেষে তাঁরা নামের সঙ্গে ‘পা’ (<পদ) শব্দটি সম্ভ্রমবাচক অর্থে ব্যবহার করতেন। চর্যার কবিরা ছিলেন পূর্ব ভারত ও নেপাল রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী। কেউ পূর্ববঙ্গ, কেউ উত্তরবঙ্গ, কেউ বা রাঢ়ের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ বিহার, কেউ ওড়িশা, কেউ বা আবার অসম বা কামরূপের বাসিন্দাও ছিলেন।
লুইপাদকেই আদি সিদ্ধাচার্য মনে করা হয়। তাঞ্জর বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ছিলেন বাঙালি। তিনি মগধের বাসিন্দা ছিলেন। রাঢ় ও ময়ূরভঞ্জে আজও তার নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। শবরপা, কুক্কুরিপা ও ভুসুকুপা বাঙালি ছিলেন বলে ভাষাতাত্বিকদের অনেকের অনুমান। কেউ কেউ ভুসুকুপাদকে শান্তিপাদের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। এঁরা ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ক্ষত্রিয়, বণিক এমনকি অন্ত্যজ শ্রেণি থেকেও এসেছিলেন। কেউ কেউ রাজবংশজাতও ছিলেন। ছদ্মনাম ধারণ করায় এঁদের জাতি স্থির করা যায় না। এঁরা হিন্দুধর্মের সনাতন শাস্ত্রবিধান মানতেন না বলে এঁদের বেদবিরোধী ও নাস্তিক ভাবা হয়।
চর্যাপদের ভাব ও ভাষা সর্বত্র সহজবোধ্য নয়। তাই এর ভাষাকে ভাষাবিজ্ঞানীরা সান্ধ্যভাষা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। কারণ আলো-আঁধারির মত কতেক বোঝা যায় কতেক যায় না। যেটুকু বোঝা যায় তাতেই ভাষাতাত্বিকদের গবেষণায় সুস্পষ্ট হয়েছে চর্যাপদ আবিষ্কারের ফলে বাংলাভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা তৎকালীন মানুষের জীবনদর্শন, সমাজচিত্র, পারিবারিক চিত্র, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের নিঃসংশয় বর্ণনায় নির্মেদ চিত্র পাই তৎকালীন সমাজের। চর্যাপদ রচিত না হলে বাংলাভাষার প্রাচীন যুগ সম্পর্কে অনেক তথ্যই অজানা থেকে যেত এবং বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসও হত অসম্পূর্ণ। আধুনিক ছান্দসিকরা বাংলা ছন্দের গঠনের ক্ষেত্রে চর্যাপদের ছন্দের প্রভাবকে উচ্চ শিরে স্বীকার করেন। বাংলা কবিতায় যে অন্ত্যমিল দেখা যায়, সেই অন্ত্যমিলেরও উৎস হল চর্যাপদ।
চর্যাপদে ব্যবহৃত রূপকল্প ও প্রবাদ পরবর্তীকালেও বাংলাভাষায় স্থান করে নিয়েছে গৌরবের সাথে।
গু-রীপাদের ৪ নম্বর পদে দেখি শাশ্বত প্রেমের আকুতি কতটা তীব্র ও স্পষ্ট:
“জোইণি তঁই বিণু খনহিঁ ন জীবমি।
তো মুহ চুম্বী কমলরস পীবমি”।।
অর্থাৎÑ (যোগিনী, তোমাকে ছাড়া মুহুর্তকালও বাঁচব না। তোমার মুখ চুম্বন করে কমলরস অর্থাৎ পদ্মমধু পান করব।)
শবরপাদের ২৮ নম্বর পদে দেখা যায় নরনারীর প্রেমের আরেক অপূর্ব চিত্রণÑ
“উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।
উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহাডা তোহৌরি।
ণিঅ ঘরনি ণামে সহজ সুন্দারী।।
ণাণা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেলি ডালী।
একেলী সবরী এ বণ হি-ই কর্ণ কু-লবজ্রধারী”।।
অর্থাৎ (উঁচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে। তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জামালিকা। নানা তরু মুকুলিত হলো। তাদের শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত হলো। শবর-শবরীর প্রেমে পাগল হলো। কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও উদ্দাম। শয্যা পাতা হলো। শবর-শবরী প্রেমাবেশে রাত্রিযাপন করলো।)
দারিদ্র্যতার মাঝেও বাঙালি সমাজের হৃদ্যতা পূর্ণ আতিথেয়তার চিরন্তন রূপ ঢেণ্ঢণের ৩৩ নম্বর পদে ফুটে ওঠেÑ
“টালত মোর ঘর নাহি পরবেষী।
হাড়ীত ভাত নাঁহি নিতি আবেশী।।
বেঙ্গ সংসার বডহিল জাঅ।
দুহিল দুধ কি বেন্টে ষামায়।।”
অর্থাৎ- (টিলার উপর আমার ঘর, কোনও প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতেও ভাত নেই, তবু নিত্য অতিথি আসে। ব্যাঙের মতো প্রতিদিন আমার সংসার বেড়ে চলেছে, যে-দুধ দোহানো হয়েছে তা কি আবার ফিরে গাভীর বাঁটে।)
দুঃখ কষ্টের মাঝেও বাঙালির বিনোদন কোন কালেই কমতি ছিল না বীণাপাদের ১৭তম পদটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণÑ
“নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী।
বুদ্ধ নাটক বিষমা হোই।।”
অর্থাৎ- (বজ্রযান নাচছেন, দেবী গাইছেন আর বুদ্ধনাটক অভিনীত হচ্ছে।)
চাটিলের ৫ নম্বর পদে দর্শন চিন্তার পরিস্ফুটন হতে দেখি Ñ
“ভবণই গহণগম্ভীরা বেগেঁ বাহী।
দুআন্তে চিখিল মাঝেঁ ন ঠাহী।”
অর্থাৎÑ (ভবনদী গহন ও গম্ভীর অর্থাৎ প্রবল বেগে প্রবহমান। তার দুইতীর কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল।)
কুক্কুরীপাদ ২ নম্বর পদে প্রহেলিকার মাধ্যমে তত্ত্বীয় কথাকে সন্নিবেশিত করেন সহজবাচ্যে
“দুলি দুহি পিটা ধরন ন জাই।
রুখের তেন্তলি কুম্ভীরে খাঅ।।”
অর্থাৎ-( মাদী কাছিম দোহন করে দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে না। গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে।)
চর্যাপদে ব্যবহৃত প্রবাদ বাক্যের আবেদন আধুনিক যুগে এসেও কমেনি।
(১) “আপনা মাংসেঁ হরিণা বৈরী”
অর্থাৎ-(হরিণের মাংসই তার জন্য শত্রু)
পদ-৬, ভুসুকুপা।
(২) “হাতের কাঙ্কন মা লোউ দাপন”
অর্থাৎ-(হাতের কাঁকন দেখার জন্য দর্পণের প্রয়োজন হয় না)
পদ-৩২, সরহপা।
(৩) “হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী”
অর্থাৎ-(হাঁড়িতে ভাত নেই, অথচ নিত্য প্রেমিকেরা এসে ভীড় করে)
পদ-৩৩, ঢেগুণপা।
(৪) “দুহিল দুধু কী বেন্টে সামায়”
অর্থাৎ-(দোহন করা দুধ কি বাটে প্রবেশ করানো যায়?)
পদ-৩৩, ঢেগুণপা।
(৫) “বর সুন গোহালী কিমু দুঠ্য বলন্দেঁ”
অর্থাৎ-(দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো)
পদ-৩৯, সরহপা।
(৬) “আন চাহন্তে আন বিনধা”
অর্থাৎ-(অন্য চাহিতে, অন্য বিনষ্ট)
পদ-৪৪, কন্কনপা।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাভাষার ইতিহাসে সামগ্রিকভাবে ‘চর্যাপদ’-এর গুরুত্ব অপরিসীম। চর্যাপদের কবিদের স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার প্রয়াসে সৃষ্ট পদগুলো হয়ে উঠেছে অকৃত্রিম ও অনবদ্য। ফুটে ওঠেছে সময় ও সমাজের বাস্তব চিত্র। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের সুকুমার বৃত্তির চর্চা তথা শিল্প সাহিত্যের সুস্থ বিকাশে সৃজনকর্তাদের ইতিবাচক মুক্তচিন্তা যেমন জরুরী অন্যদিকে তা প্রকাশ ও বিকাশে শাসক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন। তাই চর্যাপদ রচনাকালের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পাশাপাশি বিশ্লেষণের আবশ্যকতা সমান জরুরি।
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন এই চর্যাপদের রচনাকাল খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক ধরা হলেও মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খ-িত পুঁথি উদ্ধার করেন। এতে ৪৬টি পূর্ণাঙ্গ ও ১টি খ-িত পদ পেয়েছিলেন। পুঁথিটির মধ্যে কয়েকটি পাতা ছেঁড়া ছিল। প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যার যে তিব্বতি অনুবাদ সংগ্রহ করেন তাতে আরও ৪টি পদের অনুবাদসহ ওই খ-পদটির অনুবাদও পাওয়া যায়। মূল পুঁথির পদের সংখ্যা ছিল ৫১। তার আগে ১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে চর্যাপদের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কারে উদ্দীপ্ত হন। ১৮৯৭ সালে বৌদ্ধ লোকাচার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি প্রথমবার নেপাল ভ্রমণ করেন। ১৮৯৮ সালের তার দ্বিতীয়বার নেপাল ভ্রমণের সময় তিনি কিছু বৌদ্ধধর্মীয় পুঁথিপত্র সংগ্রহ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়বার নেপাল ভ্রমণকালে “চর্যাচর্যবিনিশ্চয়” নামক একটি পুঁথি নেপাল রাজদরবারের অভিলিপিশালায় আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে ভাষা প-িতেরদের মতানৈক্য থাকলেও এটি যে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন তাতে কারো দ্বিমত নেই। মোটা দাগে চর্যার রচনাকাল যদি ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ধরা হয় তাহলে এবার দেখা যাক ওই সময়ে শাসকগোষ্ঠী কারা ছিল? চর্যাপদের কবিদের জন্মস্থান যতটুকু নির্ণয় করা গেছে তাতে দেখা যায় কবিরা ছিলেন পূর্ব ভারত ও নেপাল রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলসহ পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ বা রাঢ় বঙ্গের কেউ কেউ বিহার, কেউ ওড়িশা, কেউ বা আবার অসম বা কামরূপের বাসিন্দা ছিলেন। শাসনামল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় ৪০০ বছর এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিল পাল বংশ (৭৫১-১১৬১খ্রি.)। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের সম্রাট পদে গোপালের অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। বাংলার ইতিহাসে পালযুগকে অন্যতম সুবর্ণযুগ মনে করা হয়। পাল সম্রাটরা ছিলেন ধ্রুপদি ভারতীয় দর্শন, সাহিত্য, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যশিল্পের বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক। তারা একাধিক বৃহদায়তন মন্দির ও মঠ নির্মাণ করেছিলেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সোমপুর মহাবিহার। তারা নালন্দা ও বিক্রমশিলা মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন। তাই বাংলাভাষার ভিত্তি ও বাংলার প্রথম সাহিত্যকীর্তি “চর্যাপদ” এই পাল যুগেই রচিত হয়েছিল বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার দাবি রাখে। পাল আমলে সংস্কৃত, মৈথিলীর পাশাপাশি প্রাচীন বাংলাভাষার প্রচলনের সাক্ষ্য পাওয়া যায়।
পালবংশের মতো এত দীর্ঘ কালের শাসন ইতিহাসে বিরল। বিস্তৃত সাম্রাজ্যের সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা, প্রজাবৎসল শাসননীতি, বিভিন্ন শিল্পকলার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধন এবং সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চা এসবই পাল যুগের কৃতিত্ব। পাল রাজাগণ ছিলেন বৌদ্ধ কিন্তু প্রজাদের অধিকাংশ ছিল হিন্দু। রাজা ধর্মপাল রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্মীয় সম্প্রীতির নীতিকে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এই উদার নীতি দীর্ঘ পাল শাসনামলে অনুসৃত হয়েছে। ফলে রাজাগণ বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু দেব-দেবতা বা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সম্রাটদের অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে। হিন্দু-বৌদ্ধের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থান ছিল পাল যুগের সমাজ জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পাল স¤্রাটদের উদারনীতি ও পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এতটা খ্যাতি লাভ করেছিল যে তা আহরণের জন্য নিকটবর্তী ও দূরবর্তী বহু দেশ থেকে বিদ্যার্থীরা তৎকালীন বাংলায় ছুটে আসতো। এ সময়ে বাংলার বৌদ্ধ প-িতবর্গ দূর-দূরান্তে বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি পাল শাসনামলে চর্যাপদ রচনার মধ্য দিয়েই প্রাচীন বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সূচনা হয়। বাংলা সাহিত্যের নব আকাশে সুশোভিত হয় চর্যাপদ খ্যাত উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির। আর তা সম্ভব হয়েছিলো সৃজনশীল কবিদের মুক্তচিন্তার চর্চা ও উৎকর্ষে এবং পাল রাজাদের উদারনৈতিক মনোভাবের ফলে।
তথ্যসূত্র ঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খ-, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (২০০৬), মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
চর্যাগীতি-পদাবলী, সুকুমার সেন (১৯৯৫),
আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, মাহবুবুল আলম।
বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্রগুপ্ত (২০০১), গ্রন্থনিলয়, কলকাতা।
ড. নির্মল দাশ (১৯৮২), চর্যাগীতি পরিক্রমা, আলফা পাবলিশিং কনসার্ন।
চর্যাগীতিকা: মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত), ষষ্ঠ সংস্করণ, ১৪১৪ বঙ্গাব্দ, স্টুডেণ্ট ওয়েজ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
Bagchi, Jhunu (1993), The History and Culture of the PHuntington, Susan L. (1984), The “Påala-Sena” Schools of Sculpture.
Paul, Pramode Lal (1939), The Early History of Bengal Indian History.
Sengupta, Nitish K. (2011). Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib Penguin Books India.
নাজমুল টিটো : প্রাবন্ধিক ও গবেষক