এখন সময়:বিকাল ৪:৪৬- আজ: শুক্রবার-২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:বিকাল ৪:৪৬- আজ: শুক্রবার
২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

তারুণ্যের ভ্রান্তি ও ইতিহাসের দায়

অজয় দাশগুপ্ত :

এখন দেশে তারুণ্যের ভেতর রাজনীতি কোন প্রভাব ফেলে না। বলা হয় তারা রাজনীতি বিমুখ। বিমুখ কি না বলা মুশকিল তবে রাজনীতি তাদের টানে না। এমন কি বয়সীদেরও টানে না। কারণ বিশ্বায়ন ও ডিজিটালায়ন সবকিছু বদলে দিয়েছে। হাতের মোবাইল বা কম্পিউটার একাই একশ। তারপর ও ইতিহাস তো ইতিহাস ।সে না থাকলে মানুষ অসহায়,তার চেতনা ভোঁতা অতীত মৃত। তারুণ্য রাজনীতি করুক চাই না কিন্তু ইতিহাস জানুক। দেশকে জানুক। নয়তো মুক্তিযুদ্ধের দেশ কি তার জায়গায় থাকবে?

আমি যখন কম্বোডিয়ার জাদুঘরে গিয়েছিলাম কেবল যে বেদনা অনুভব করেছি তা কিন্তু না। আমার মনে হয়েছিল দেশ ও জাতিকে অতীত জানানোর আসল কাজটি আমরা করি নি। ওরা করেছে। ওদের জাদুঘরে যে সব মানুষেরা বিপ্লবের নামে মানুষ খুন করতো বা যাদের অপকর্মে দেশ জাতি ভুগেছিল তাদের নাম ঠিকানা তো আছে ই পরবর্তীকালে তাদের সমাজে ফেরার আকুল আকুতি ও মার্জনা চাওয়ার দলিল ও আছে। যাতে কোনকালে তারা অস্বীকার করতে না পারে । এখন আমার মনে হয় ওরা ভবিষ্যত ভেবেই এমন কাজ করে রেখেছে। যা করা হয় নি বলে আমরা যে কোন বৈরী পরিবেশ সামনে আসলেই তারুন্যকে দায়ী করি। বলতে থাকি না, এরা আসলে উচ্ছন্নে গেছে। এদের ভেতর দেশপ্রেম বলে কিছু নাই।

আমরা যখন তরুণ তখন বা তারও আগে তারুণ্যের ভেতর দেশ প্রেম ছিল। কিন্তু কেন ছিলো? মানলাম দেশ স্বাধীন হবার আগে পাকিস্তান বিরোধিতার কারণে দেশ প্রেম টগবগ করতো। কিন্তু স্বাধীনতার পরও কি তার কিছু কম ছিলো? যে বাংলাদেশের টাকা পয়সা ছিলো না, যে দেশের পোশাক আসতো বিদেশের পুরনো কাপড় হিসেবে, খাবারের ঠিক ছিল না, সে দেশকে পাগলের মতো ভালোবেসেছি আমরা। চাকরি নাই ব্যবসা নাই বাণিজ্য নাই সারাদেশ দ্রোহের আগুনে জ্বলছে তখনো আমরা  আশা ছাড়ি নি। একদিকে রাজপথে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলন অন্যদিকে আমাদের জীবনে ছিল প্রেম। আজ ফিরে তাকালে দেখি সে সময়কালের যুবক যুবতীরা ভালোবাসায় বাঁচতো। আজকের দিনে ভালোবাসা নাই একথা বলি না কিন্তু এতো চয়েস এতো পছন্দ অপছন্দের সুযোগ ছিলো না। ছিলো না যৌনতার ছড়াছড়ি। কথাগুলো বলার কারণ, যৌনতা নির্ভর ডিজিটাল জগতের বাসিন্দারাই আবার সমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়াশীল। যা সময় সময় আমাদের সামনে চলে আসে। আর তখন একদল হাহাকার করে আরেক দল করে জান্তব উল্লাস।

তারুণ্য যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে বা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ইতিহাসের প্রতি দায়িত্ববান না হব তার দায় কি আসলে তাদের? বিতর্ক না করে ধারাবাহিকভাবে ইতিহাসের দিকে তাকালেই এর জবাব মিলবে। আজকে যারা পথভ্রষ্ট বা ইতিহাস মানছে না ইতিহাস তাদের জন্য কি করেছে? কী করেছেন ইতিহাস লিখিয়েরা? দু একটা টক শো আর কলাম লিখলেই দায়িত্ব শেষ?  মনে রাখার মতো একটা কথা আছে যেখানে বলা হয়েছে, রাজনীতি ও ভালোবাসার ভেতর মেটাফরমিক মিল আছে। তারুণ্য প্রেমে পড়ে সুন্দর মুখশ্রী দেখে তারুণ্য পেরিয়ে যাওয়া মানুষ প্রেমে পড়ে শরীর দেখে, তরুণেরা রাজনীতি করে আদর্শ মনে রেখে আর বেশী বয়সের রাজনীতিক নেতারা দেখেন এম পি বা মন্ত্রিত্ব।

উধাও আদর্শের দেশ বা সমাজে কেন তারুণ্য ভালো দিকে পা বাড়াবে? কেন তারা রাজাকারী আদর্শ ধারণ করবে না?  যারা চাইলে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে সার্থক সর্বজনীন করতে পারতেন তাঁরা হয় অদৃশ্যে নয়তো কোণঠাসা। তাঁদের কাজ তাঁরা করতে পারেন নি বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক দিন আগেই ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হলো। সুদূর সিডনি শহরে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এখনো চলছে। নাচ গান আনন্দ এসব আছে সাধে আছে তাদের আন্তরিক আতিথেয়তা। দেখে মুগ্ধ হয়েছি ভারতীয় রেঁস্তরা গুলিতে পত পত করে উড়ছে তাদের জাতীয় পতাকা। মানুষকে ডেকে ডেকে বিনামূল্যে ভরপেট খাওয়াচ্ছিলেন তারা। উদ্দেশ্য? ব্যবসা নয় স্বাধীনতা ও ভারতীয়ত্বের প্রচার। পাকিস্তানীরা ও তাদের স্বাধীনতা দিবস পালনে তৎপর। আমাদের জাতি ২৬ মার্চের ঘরোয়া অনুষ্ঠান ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কিছু ই করে নি। আজ এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি জাতীয় দিবসগুলোর ভেতর বাংলা নববর্ষ আর একুশে যে ভাবে পালন করা হয় ২৬ মার্চ আর বিজয় দিবস ঠিক সেভাবেই অবহেলিত। যে কোন কারণেই হোক এটা সত্য আর এর মূল্য আমরা চুকাচ্ছি। ৭০ বছর পর আমাদের স্বাধীনতা ও ইতিহাস কেমন হবে তার কোন ধারণা ও করা যায় না এখন।

যে কোন দিবস আজ বিতর্কিত। রাজনীতির কঠিন কথা থাক। এটা তো মানতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আগলে রেখেছেন সবকিছু। তিনি আছেন বলেই আমাদের বাংলাদেশ উন্নতির পথে। তাঁর প্রজ্ঞা আর বিবেক বোধে যে উন্নয়ন তার সুফল কেন ঘরে তুলতে পারছে না তারা? এর কারণ জানা থাকলেও মানি না  আমরা। মানলে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসতো তারুণ্য। তারা তাঁকে পছন্দ করলেও এ কাজ করতে আসে না। কারণ সাংগঠনিকভাবে এসব কাজ করার মানুষ নাই। আখের গোছানোর রাজনীতি সংগঠনকে একা করে ফেললে যা হয় তাই হচ্ছে। এখন যেটা দেখছি দেশের বাইরের তারুণ্যও আজ বিভ্রান্ত। এদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যত। এদের যদি এখন ই আমরা পথে আনতে না পারি আমাদের  কি হবে কে জানে?

দেশের ইতিহাসে নানা ধরণের বিভ্রান্তি থাকায় গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত ঘটনাও  সবাই স্বীকার করে না। আবারো বলি আমরা যারা দেশের বাইরে উন্নত নামে পরিচিত গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি আমাদের চোখের সামনেই আছে খোলা পথ। যে পথ ধরে হাঁটছে আগামী কালের যুব সমাজ। মনে হয় দূর থেকে মনে হয় এরা রাজনীতি করে না। ঠিক কিন্তু রাজনীতি বোঝে জানেও। প্রতিবার ভোট এগিয়ে এদের সাথে কথা বললে টের পাই তারা রাজনীতি ও অর্থনীতির সমীকরণ কতটা ভালো বোঝে। সে কারণেই গণতন্ত্র ব্যাহত হয় না। তরতর করে এগিয়ে চলে মুক্ত সমাজ। আসল কথা এটাই অবরুদ্ধ আর সীমাবদ্ধ কোন জাতি সত্তা এগুতে পারে না। তার গ্রহণ বর্জনের শক্তি যখন কমে আসে তখনই তার বুকে তা-ব আর আঘাত এসে হানা দেয়। আজ সে অবস্থাই ভোগ করছে প্রিয় স্বদেশ।

সম্ভাবনাময় দেশের জন্য এটা ভালো কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুফলভোগকারী নতুন প্রজন্মের মনের অন্ধত্ব বা আমাদের চেতনাতে সাধে যে ব্যবধান তা ঘুচাতে হবে। ঐ যে বলছিলাম প্রেম এর শক্তি অবিনাশী। তারুণ্যের স্বভাবধর্ম কি? তারা প্রেমে পড়বে কাঁদবে হাসবে সুস্থ জীবনে থাকবে। তার বাইরে যে কোন বিষয়ে বাড়বাড়ি মানেই নিজেদের ভবিষ্যত ঘোলাটে করে তোলা। যে দেশ আপন শক্তি ও পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসরমান তার সাথে চলতে হবে তাদের। তাদের মনে রাখা উচিৎ কোন আবেগ অন্ধ ভক্তি আর দূর দেশের উস্কানি দেশ চালাতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার এই দেশ তাদেরই চালাতে হবে। সে জন্যে তাদের মনে বিশ্বাস আর শক্তি জাগানো জরুরি। কি ভাবে? এসব মিডিয়া নির্ভর হিরো আলমদের হটিয়ে আনতে হবে আসল হিরোদের। তারা সামনে এলেই বিভ্রান্তি দূর হবে। যে ইতিহাসে রুমি জামি বা মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জ্বলতা তাকে এত সহজে পরাস্ত হতে দেয়া যায়?

আমরা পারি। এবং পারবো। দেশ বিদেশের প্রগতিশীল বাংলাদেশী জনগোষ্ঠি এক হলেই কাজ হবে। কারণ দেশটা কেবল অন্ধদের নয়। চোখ থাকিতে অন্ধদের জমানা দূর হোক। জাগুক তারুণ্য।

 

 

অজয় দাশগুপ্ত

প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, সিডনী প্রবাসী

ভাষার যতো মান অপমান

অজয় দাশগুপ্ত : বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমাদের মাতৃভাষার নাম বাংলা ভাষা। আপনি আশ্চর্য হবেন জেনে প্রবাসের বাঙালিরা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের সন্তানদের বাংলা শেখায়। এ

চাঁদপুর চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির কবিতা উৎসবে ১০ গুণী ব্যক্তির পুরস্কার লাভ

আন্দরকিল্লা ডেক্স : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির কবিতা উৎসব-২০২৫। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় চাঁদপুর শহরের ইউরেশিয়া চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবুজ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্কুলের শতবর্ষ উদযাপন

আন্দরকিল্লা ডেক্স : শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া চট্টগ্রামের হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাহাড়তলী অন্যতম একটি। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল ২০২৪

কেনো ইহুদিরা জাতি হিসেবে এত বুদ্ধিমান?

মূল লেখক: ডঃ স্টিফেন কার লিওন অনুবাদক— আসিফ ইকবাল তারেক   ইসরাইলের কয়েকটি হাসপাতালে তিন বছর মধ্যবর্তীকালীন কাজ করার কারণেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার চিন্তা

আগমনী এবং দুর্দান্ত দুপুর

দীপক বড়ুয়া ঋষিতার মুখে খই ফুটে। কালো মেঘে ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ার সময়। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বৃষ্টির জল গড়িয়ে পরে। আনন্দে বৃষ্টি ফোটা ছুঁয়ে হাসে। মাঝেমধ্যে