এখন সময়:রাত ৮:২৫- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৮:২৫- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

দুপুর রঙের বৃষ্টি (পর্ব-১২)

রাজ কুমার শেখ :

নাজের ঘুম ভাঙে অনেক বেলায়। আজ রমি আসবে বলেছে। মিনাও আসতে পারে। গত রাতে যা ঘটেছে তা এখন ও মনে করতে চায়না। নোরিন ফুপু কেন তাকে আড়াল করে? তবে কি ওই বাগান বাড়ির সাথে কোনো যোগাযোগ আছে? কেনই বা অত রাতে ওখানে গিয়েছিলেন?  কি আছে ওখানে? ওর মাথায় প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। এক বার ডেকে গেছেন নোরিন ফুপু। ওর আজ কলেজ নেই। মিনা আর রবিন এলে ওরা আজ যাবে ঘুরতে। এখানেই মিনারা খাবে। নোরিন ফুপু রাঁধবেন। ভালো বিরিয়ানি করেন। বটি কাবাব। রুমালি রুটি।  পায়েস। হাঁড়িয়া কাবাব। আজ বিরিয়ানি হবে। নোরিন ফুপু খুব ব্যস্ত। রাত করে ঘুমানো খুব কষ্টের। সকালে উঠতে মন করে না। নাজ উঠে আয়নার সামনে আসে। নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে। নাজ এই সকাল রোদের মিঠে বাতাসে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় দূরে কোথাও। ওর ভরাট বুকে এখন ভারী বাতাস ওঠানামা করছে। রমি কতবার ওর বুকের কাছে এসে চুমু খেতে চেয়েছে। নাজ এ সব একেবারে পছন্দ করে না। নাজ ওকে বাঁধা দিয়ে বলেছে, রমি, সব পেতে চেয়ো না।

কেন?

এমনি।

তুমি কি আমাকে ভালো বাসো না?

নাজ এ কথার কোনো উত্তর দেয় না। তার যে এখন অনেক কাজ। তার মাকে সে খুঁজে বের করবে। তার মা কি বেঁচে আছে?  এ কথার উত্তর দিতে পারে নোরিন ফুপু। কিন্তু তিনি কেন বলতে চান না? এ সবের কোনো মানে হয়! ও বেশ বিরক্ত হয়। নাজ কলতলে গিয়ে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ চোখ ধুয়ে নেয়। মনটা একটু তাজা তাজা হয়ে ওঠে। গরম চায়ে চুমক দিতে থাকে একটু একটু করে। মিনা সোজা ওর বাড়িতে চলে আসবে। ওকে সকাল সকাল বের হতে বলেছে ও। না হলে সব ঘুরে দেখা হবে না। আজ ওরা বের হবে বেড়াতে। রমিও আসবে। নাজ চা খেয়ে ওর ঘরটা গুছিয়ে নেয়। ও যা এলোমেলো। মিনা কিন্তু খুব গুছানো। ওর শোবার ঘর খুব ভালো। নাজের খুব পছন্দ।  ওর ঘর থেকে দূরের খেত দেখা যায়। সবুজ সবুজ গন্ধ বাতাসে মিশে ভেসে আসে। সফেদ বক উড়ে যায় সবুজ খেতের ওপর দিয়ে। নাজ মুগ্ধ হয়ে সে দিকে তাকিয়ে থাকে। মনটা কেমন যেন করে ওঠে। কুমারী বুকের বাতাস কেমন ভারী হয়ে আসে। নাজ একা ছটফট করে। বালিশে বুক চেপে ধরে। যেন কোনো পুরুষ তাকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। তার কাছ থেকে যেন মুক্তি পাবে না সে। সে মুক্তি পেতেও চায়না। তবে তেমন করে সে কাউকেই বসাতে আজও পারেনি। রমি আছে রমির মতো করে। নাজ তাকে কাছে আসতে আজও দেয়নি। কেমন একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে ও। ওর মনে শান্তি নেই। কেমন একা একা বড়ো হয়ে উঠলো। তার আপনজন বলতে তার ফুপু। তাকে ছাড়া আর কাউকেই ও আপন মনে করতে পারে না। আসলে ওর মন ভিজে না। কেমন যেন একটা শুকনো শুকনো। ওর মায়ের পরশ টুকু পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। তার বেড়ে ওঠা। তার ভালো বাসা। অভিমান। তার মা কিছুই জানলো না নাজ বড়োই একা। তার বাপকেও সে কোনো দিনই দেখেনি। হায়রে মানুষের জীবন!

ওর মনটা হঠাৎই খারাপ হয়ে গেল। বাগানে পাগলা তিতিরটা ডাকছে। হয়তো ওর মতোই সেও একা। খোলা জানালা দিয়ে রোদ এসে ওর বিছানায় আঁকিবুঁকি এঁকে দিয়েছে।  নাজ একটু চুপ করে বসে তিতিরের ডাক শুনছে। বাতাসে কেমন এক মাদকতা। মনটা বড়ো উতলা হয়ে ওঠে। ও যেন পালাতে চায়। এই তিতিরটার মতোই। দূরে কোথাও। বড়ো ঝকমারি লাগে। আর ভালো লাগেনা। পড়াশোনা শেষ করে ও কি করবে ভেবে পায়না। তবে তার আগে ওর মাকে খুঁজে বের করবে।

ওরা সকালের নাস্তা খেয়ে বের হয়েছে। রমির আসতে দেরি হয়ে ছিল। নাজ বেশ রেগে গেছিল। মিনা ঠিক সময় মতোই এসেছে। নাজ আজ হালকা রানি কালারের শাড়ি পরেছে।  কপালে  মিহি টিপ। মাথার রেশমঘন চুল ওর পিঠময় ছড়ানো। ওকে দেখে মিনা বলে, নাজ, যে কোনো ছেলে তোর প্রেমে পড়ে যাবে। যে কেউ তোকে আদর করতে চাইবে।

কেন ভালোবাসবে না?

তা বাসবে। তুই যা।

কি?

সুন্দরী।

বলছিস?

হুম। রমিকে কি তোর পছন্দ নয়?

নারে। ও শুধুই বন্ধু। তার বেশি কিছু নয়। সহজে কি কাউকে মন দেওয়া যায়?

কেন যায় না? দেওয়া যায়।

তুই না পায়ে পা দিয়ে বেশ ঝগড়া করতে শিখেছিস।

নাজ ঠোঁটে লিপিস্টিক দিতে দিতে বলে কথাটা।

তোর কাছেই শিখেছি।

আরে রমিটা তো এখনো এলো না।

এসে কি করবে? তোর তো মন সে পাবে না।

তোর এত দরদ কেন মিনু?

নারে ছেলেটা তোকে ভালোবাসে।

দূর ছাই! বাদ দে ও সব। চল ফুপু আজ রুমালি রুটি দিয়ে কাবাব খাওয়াবে। পেটপুরে খেয়েদেয়ে তারপর ঝগড়া করবো।

আরে রমি আসুক।

আসবে আসবে। তুই কখন বের হয়ছিস। খিদে লাগবে তোর।

তোর মতো আমি অত পেট কাঁদা নই।

তাই নাকি?

হুম।

বেশ শুকিয়ে থাক।

ওরা কাঠগোলা বাগান ফেলে নশীপুর রাজবাড়ি থেকে আরও কিছুটা গিয়ে নদীর পাড় ঘেঁষে বসে তিনজনে। বেশ মনোরম পরিবেশ। আকাশে নীল রং। মেঘ নেই। ঝকঝকে রোদ। রমি বেশ আয়েশ করে বসে নাজের পাশে। নাজকে ও বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। নাজ আজ খুব সেজেছে। মিনা তো সে কথা বার বার বলছে। মিনা আজ নাজের খুব পেছনে লেগেছে। ও ওমনিই। মিনার কথায় ঝাঁঝ থাকেনা। ওর কথায় নাজ কখনো রাগ করে না। ও ভীষণ মিশুক। সহজে মিশতে পারে। আজ ওদের ডেকেছে নাজই। বেশ কদিন ধরে ওদের কথাটা বলবে বলে সে মনস্থির  করেছে। তার এই লুকোচুরি জীবন ভালো লাগছে না। কেন তার মায়ের কথা ওর ফুপু বলেন না? নাজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না।

একসময় নাজ ওদের সব খুলে বলে। রমি অবাক হয়ে শুনছিল। মিনাও কেমন হয়ে গেল এ সব শুনে। তারপর এক সময় মিনা বলে, নাজ, তুই এত কষ্টে আছিস তো কোনো দিনই বলিসনি?

কি করে বলি বলতো? আমি নিজেই দিশেহারা। কি করবো ঠিক করতে পারছিলাম না।

তোর মায়ের কথাটা আগে জানতে হবে। কেনই বা বলবেন না ফুপু?  তবে কি কোনো গোপন কিছু?

বেশ অবাক হয়ে বলে মিনা।

কোথায় থেকে শুরু করবে তা ভেবে পায় না। রমি এতক্ষণ চুপ করে বসে শুনছিল ওদের কথা। রমি নাজকে বলে, নাজ, যে বাড়িতে ফুপু গেছিলেন। সেখানেই কিছু না লুকিয়ে আছে। অবশ্য এটা আমার ধারণা। ফুপু কেন ও বাড়িতে রাতে সবার চোখের আড়ালে যান? তোমাকেও তো কিছু জানায় না। ও বাড়িটা কতদিনের পুরানো? ও বাড়িটাতে কে বাস করতেন? তার সঙ্গে ফুপুর কি সম্পর্ক? এ সব জানতে হবে। তাহলে মনে হয় সব জানা যাবে। নাজ এ কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে যায়। রমির কথা গুলো ফেলে দেবার মতো নয়। ও ঠিক কথায় বলেছে। কেমন একটা রহস্য রহস্য মনে হচ্ছে। এ দিকে বেশ বেলা হয়ে গেছে। ওদের খিদেও পেয়েছে। নাজ এবার উঠতে বলে। ওরা নশীপুর রাজবাড়ির সামনে থেকে একটা টাঙা নেয়। আজ বেশ ঝলমলে রোদ। বাতাসে নাজের চুল এলোমেলো হয়ে যায় বার বার। ও হাত দিয়ে ঠিক করছে না। রমির চোখে মুখে এসে পড়ছে। চারপাশে ইতিহাসের গন্ধ। ফুরফুরে হাওয়া। নাজের মনটা আজ ভালো নেই। ওর মায়ের কথা ভাবছে। বুঁদ হয়ে আছে ও। মিনা দুপাশের ঘন আম বাগান দেখছে। রমিও চুপচাপ। টাঙা ছুটে চলেছে। ঘোড়ার পায়ের শব্দ হচ্ছে। রমু নশীপুর রাজবাড়ির কথা ভাবছিল। এই নশীপুর রাজবাড়িটি কাঠগোলা বাগানের পশ্চিম দিকে এই রাজবাড়িটি অবস্থিত। রাজা দেবী সিং নাকি ছিলেন নৃশংসতা ও অত্যাচারের রাজা। তিনি নাকি মুর্শিদাবাদের প্রাচুর্যের কথা শুনেই বাণিজ্যের জন্য এখানে আসেন। এবং ধীরে ধীরে আধিপত্য বিস্তার করেন। এবং পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিং এর সুনজরে পরে রাজত্ব বিভাগে অধিষ্ঠিত  হন। ১৭৭৬ সালের ভয়াবহ মন্বন্তরের সময় দরিদ্র প্রজাদের ওপর জোর করে কর আদায় করেন। আরও অনেক কিছু তার নিষ্ঠুরতার কথা জানা যায়।

রমি কেমন এক গভীর ভাবনায় তলিয়ে যায়। ঘোড়া ছুটে চলেছে। মিনাও কোনো কথা বলছে না। নাজ উদাস হয়ে বসে আছে। তার ভাবনার অতলে ডুবে সে। মন তার ভালো নেই রাত থেকে।

ওরা এসে নামলো নাজের বাড়ির সামনে। ওর ফুপু ছুটে এলেন।

নাজ, মেহমান কি আজ শুকিয়ে থাকবে? ও বেটি, এসো তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবে। সেই কখন থেকে বসে আছি। ওরা ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে। বিরিয়ানির খুশবু ছড়িয়ে গেল গোটা ঘরে। মিনা বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে।  সত্যিই ফুপুর হাতে জাদু আছে। দরাজ হাতে বিরিয়ানি তুলে দিচ্ছেন ফুপু। দারুণ স্বাদ। মিনা বেশ অনেকটা খেল।

বেলা পড়ে আসছিল। এবার ওদের যাওয়ার পালা। মিনাকে নাজ আটকে দিল। কাল কলেজ করে একেবারে যাবি, বলে ও।

রমি চলে যায়। ওকে সকালে কাজে বের হতে হবে। ফের আসবো বলে, ও গিয়ে অটো ধরে। নাজ মিনাকে নিয়ে নদীর পাড় গিয়ে বসে। বিকেলের সূর্য ডুবে যেতে দেখে। নদীর শীতল বাতাস কেমন একটা গন্ধ মিশে আছে। নাজ আজ বড়ো উতলা। মনের কথা আজ ওদের সঙ্গে শেয়ার করে একটু হালকা লাগছে। কত রাত সে ঘুমোতে পারেনি। শুধু তার মায়ের কথা ভাবতো। তার মা নেই এ কথা সে কখনো মানতে পারে না। কেমন যেন হয়ে যায় ও। আজ তার মাকে বেশি বেশি করে মনে করছে। মা থাকলে আজ কত মজা হতো। মিনাদের আদর করে খাওয়াতো। তার চারপাশে মা মা গন্ধটা ভাসতে থাকে। নাজ সে গন্ধ নিতে থাকে বুক ভরে।

রাজ কুমার শেখ, গল্পকার

 

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে