কবরের কাছে এলে
আব্বার কবরের সামনে গেলে
কেমন মাটি মাটি ভাব জেগে ওঠে।
আব্বা শুয়ে আছে
সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে।
তার পাশে আমার মা
আর বাবা মা’র পাশে ঘুমিয়ে আছে ভাই।
হয়তোবা তাদের পাশে একদিন
আমিও ঘুমিয়ে যাবো চিরতরে।
আহা, মাটির গন্ধ থেকে বেরিয়ে আসছে
আমার আব্বার গায়ের গন্ধ,
আমি খুঁজে পাচ্ছি মায়ের জার-সৌরভ।
কেমন জানি সব কিছু সাড়ে তিন হাত
বিছানার মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
মাত্র সাড়ে তিন হাত দুনিয়াতেÑ
আমাকেও যেতে হবে।
যেতে হবে সকলকেই।
কবরের কাছে এলে পৃথিবীটা
খুব ছোট মনে হয়। সবকিছু
মাটির মতোন লাগে শুধু।
তোমাকে বলিনি
কতো বার তোমাকে একটি কথা বলতে চেয়েছি।
তোমার ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি,
তুমি ক্লাস থেকে বের হলেই বলবো কথাটি।
প্রতিটি ক্লাস ছুটির পর অপেক্ষা করেছি,
তুমি নীল চুল উড়িয়ে চলে গেছ
আমি কিছুই বলতে পারিনি।
নিউ মার্কেট, হাই লেভেল রোড কিংবা
চট্টেশ্বরীর সামনের সবুজ গাছ জানে,
আমি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থেকেছি।
কলেজের কৃষ্ণচূড়া গাছ অথবা বৃক্ষঘেরা
পর্তুগিজ ভবন এখনো বলবে…
আমি কতো বিকেল
তোমাকে একটি কথা বলবো বলে
অপেক্ষায় থেকেছি, কিন্তু বলিনি।
এতো কাল পরে সে সব সিনেমার দৃশ্যপট
স্মৃতির জলসায় নূপুর বাজায়।
যে কথাটি বলার জন্য বাউল হয়ে ঘুরেছি
তা তুমি জানো, কিন্তু বলোনি।
তুমি চলে গেছ না জানার ভান করে,
আমিও বলিনি তোমায়, তুমি জানো বলে।
চিম্বুক রেস্তোরাঁ
চিম্বুক রেস্তোরাঁর লাল চেয়ার গুলোতে বসে
তাবৎ আভিজাত্য আর সৌখিনতার মেলা।
বারান্দার ফুলের টব গুলো বিপণি বিতানের
গুলগুলি দিয়ে বাহারি পণ্যের পশরা
পিপাসিত চোখে দেখছে। ললনারা
সিøভলেজ ব্লাউজ পরে ভিড় করছে,
দোকান গুলোতে চলছে তুমুল বেচা কেনা।
পাশেই জলসা সিনেমায় রংবাজ রাজ্জাক
কবরীকে নিয়ে দারুণ বৃষ্টিতে ভিজছে।
তার পাশে নূপুর সিনেমায় ববিতার সাথে
অনন্ত প্রেমে জমে গেছে নায়ক রাজ।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকলেই বলা-বলি
করছে আগামী রোববার রাজ্জাক শাবানার
অবুঝ মন সকলকে কাঁদিয়েই ছাড়বে।
অনেক প্রেম অনেক জ্বালা ছবিরকথা
বলতে বলতে চিম্বুকে চায়ের কাপে ঝড়।
তবুও কেউ কেউ বলছে মেলোডিতে
সোফিয়া লরেনের টু ওমেনের বেদনার কথা।
চিম্বুক রেস্তোরাঁর ওয়েটার মোস্তাফা
আর কামাল কিংবা অন্যরাও জানে
ছোট ছোট সমুচা আর চায়ের সাথে
লাল চেয়ারে বসে সকলে জীবনের কথা বলে।
সিনেমায় দৃশ্যের মতো ভেসে বেড়ায় চিম্বুকের স্মৃতিরা।
জলসা, নূপুর কিছুই নেই, নেই স্মৃতির চিম্বুক রেস্তোরাঁ।
সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে
সবকিছু কেমন যেন হারিয়ে ফেলছি।
জামার জেবে যে পত্রখানি এতো কাল
যত্ন করে রেখেছিলাম- তা আর পাচ্ছি না।
মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আব্বা
যে হাত ঘড়িটি কানুনগোদের দোকান থেকে
কিনে দিয়েছিলো তাও খুঁজেপাচ্ছি না।
সিগেরেটের প্যাকেটটি টেবিলে রেখে
একটু হেলান দিয়েছিলাম, তাও দেখি
আর নেই। ছোট বেলায় দিল আহমদ
আমাকে কোলে নিয়ে গ্রাম ঘুরে বেড়াতো,
সেও সেদিন চিরকালের জন্য চলে গেল।
যে বন্ধুটি এতো দিন সৎ ভাবে আমাকে
ছায়া দিত, তার মধ্যে সততার লেশ মাত্র
আর খুঁজে পেলাম না। যাদেও উপকার
করতে গিয়ে স্বজনদেও অবহেলা করেছি
তারাও অকৃতজ্ঞতার জলে ডুবে গেছে।
হারিয়ে যাচ্ছে যা কিছ ুভালো ছিলো।
এটাকেই বোধ হয় সময় বলে।
একটা সময় এসে সব কিছুর মতো
সময়ও হারিয়ে যায় নিশ্চয়।