আগস্ট এভিনিউ
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
সেনা নিবাসের বাইরে অশ্লীল অংকে তুমুল বৃষ্টি
কাঁচের টুকরো টুকরো বৃষ্টি ফেটে ফুটে
গড়াগড়ি খাচ্ছে রক্তবৃষ্টি, কাঁটাবৃষ্টি এবং কেঁচো।
বৃষ্টি কাঁদছে।
কোথাকার জল কোথায় গড়িয়ে গড়িয়ে অনূদিত হচ্ছে!
টরন্টো শহরে ডেনফোর্থ সড়কে ঝুলে আছে-
আগস্ট এভিনিউ।
মোড়ে, ইন্টারসেকশনে দাঁড়িয়ে দেখি:
বেসরকারি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
একটি হেলিকপ্টার মেঘের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে অনন্তে,
চলে যাচ্ছে অন্তরীক্ষে, স্বর্গে।
দুঃখী চট্টগ্রাম স্বপ্ন দেখে
(একটি গণ-সচেতনতামূলক ছড়া)
এজাজ ইউসুফী
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে
দুঃখী চট্টগ্রাম,
উন্নয়নের নামে কত
ঝরে রক্ত ঘাম।
রাস্তাগুলো দখলে নেয়
চাঁদা তুলে কেউ,
হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলে
পিছু যে নেয় ফেউ?
ম্যাগা সিটি বলে লোকে
সিটি করপোরেশন?
বিলবোর্ডে মুখ ঢাকা পড়ে
নোথোরাইজেশন।
কর্ণফুলির দূষণ নিয়ে
কত্তো সেমিনার,
বর্জ্যে ভরা নদী নালা
ভীষণ অত্যাচার ।
খেলার মাঠে ‘গরুর’ মেলা
নেই যে খোলা মাঠ,
রাস্তাগুলো ময়লা ভাগাড়
হাইজ্যাকারের হাট।
সড়কবাতি অচলমতি
দিনে জ্বলে বেশি,
রাতের বেলায় সিআরবিতে
রাত-পরীদের হাসি।
যানজটেরও দুর্ভোগেতে
কর্মঘণ্টা নাশ,
সড়ক জুড়ে এধার-ওধার
লক্কর-ঝক্কর বাস।
হাসপাতালে রোগী আসে
সিট পাওয়াটা ভার,
মৃত্যুঘণ্টা বেজেই চলে
মর্গে জায়গা তার!
‘একটু খানি বৃষ্টি হলে’ই
নগর জুড়ে পানি,
পত্রিকাতে ছাপলে খবর
হবে তার মানহানি।
উড়াল পথে দেয় না উড়াল
রিকশা চলে আগে,
দিনের শেষে ক্যাশিয়ারে(?)
টাকা গুনে ভাগে।
দৃষ্টিনন্দন পাহাড় কাটে
ভূমিদস্যুর দল,
পাহাড় ঢালে বস্তিগুলো
মানুষ মারার কল?
স্কুলের নেই পার্কিং-এর লট
মা-বাবাদের হেপা,
এ-সব দেখে শুনে তারা
হয়ে ওঠেন ক্ষেপা।
সিডিএ আর করপোরেশন
দড়ি টানাটানি,
কবে এসব শেষ হবে গো
বলতে পারেন গুণী?
এখানো বেশ সময় আছে
হবেন কী সাবধান?
নাকাল তোমায় করতে পারে
দুঃখী চট্টগ্রাম।
কোথায় নিয়ে যাবে?
(বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে নিবেদিত)
শুক্লা ইফতেখার
সে এক প্রলয়প্রসূত নিকষ কালো নিশীথ রাত,
সে এক মৃত্যুভয় মথিত অতল অন্ধকার রাত,
মহাকালের বুক চিরে উঠে এলো ব্রুটাসের উত্তরসূরীরা
দখলে বত্রিশ নম্বর বাড়িটি,
দখলে মাতৃভূমির জšে§র ইতিহাস।
রাত্রির নগ্ন নৈঃশব্দ্য ভেঙে খান খান –
খুলে গেল সহস্র দরজা দিগন্তের দিকে।
শস্য শ্যামলা স্বদেশের বুকে আর একবার জ্বলে উঠলো
বীরত্বের বহ্নিশিখা –
উন্মুক্ত কক্ষ পেরিয়ে বজ্রকণ্ঠে তাঁর একটাই প্রশ্ন
‘‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে এসেছিস?’’
কাছে-দূরে, প্রান্ত থেকে প্রান্তরে, বত্রিশ নম্বরের পথে পথে
একটি শব্দ, একটি বাক্য প্রতিধ্বনিত হলো।
কোথায়? কোথায়? ওরা তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে?
নিরুত্তর প্রশ্নটি বাড়ির দোতলার একটি একটি সিঁড়ি পেরিয়ে
অকুল নিস্তব্ধতায় হারিয়ে গেল।
নীরবে গড়িয়ে পড়ল দুধের বাটি লক্ষশিশুর মুখ থেকে
গোলাপেরা হলো বৃন্তচ্যুত।
অর্বাচীন তো জানতে পেলো না,
মৃত্যুতে হয় মহীয়ানের নূতন জনম
আকাশজোড়া জ্যোর্তিময়ের দ্বিগুণ বিচ্ছুরণ।
মানুষ সন্ধান
আশীষ সেন
এ বড়ো ভ্রান্তির কাল বড়ো দুঃসময়
হাত বাড়াও, সাথে পেতে চাও যাকে
ভুল মানুষ ওঁৎ পেতে থাকে।
কোথায় মানুষ খোঁজাখুঁজি অগণন ভিড়ে,
আছে কি কোথাও কিছু কাঁচ-কাটা হীরে?
কারও কাছে বলো না-কি আছে,
নাহলে মানুষ আজও
কী আশায় বাঁচে।
হাত নামিও না, ওই হাত কষ্টিপাথর,
ঠিক সাথী চিনে নেবে, লোকায়ত সমাজের প্রেমে
নামো পথে, নেমে এসো, পথে এসো নেমে।
একা একা তুমি আর কতটুকু বদলাবে রাতের আঁধার
সমবেত আয়োজনে একদিন গড়ে উঠবে
যৌথ খামার।
বন্ধুর জন্য খোলা চিঠি
নাজিমুদ্দীন শ্যামল
ও বন্ধু, কেমন আছো তুমি?
তোমাদের পাটের চারা ডুবে গেছে জলে,
তোমাদের ভাতের থালা চলে গেছে বলে
তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
তোমাদের কষ্টের গান বা মিছিলের শ্লোগান,
তোমাদের গর্ভের ধন আর স্বপ্নের বাগান,
কারা বিকিয়ে দিয়েছে জলের দামে
তোমরা কি তা জানো?
তোমাদের গল্প কিংবা ধান ভরা উঠান,
তোমাদের বউয়ের ঝুমকা আর মাটির বিছান
কিভাবে শুধু স্মৃতি হলো সংগোপনে
তোমরা কি তা জানো?
তোমাদের দিন কাটছে অনাহারে,
রাত কাটছে বিষণœতায়, ছেলেমেয়ে
পড়শী স্বজন জ্বলছে জানি এক নাগাড়ে।
তবু জানতে বড় ইচ্ছে করে আমার,
প্রিয় সুহৃদ কেমন আছো, কুশলাদি সবার।
মুজিব আমার স্বাধীনতা
আ ন ম ইলিয়াছ
আজো নামে ভাবায়- মীর, না জাফর!
দুটো একসাথে নয়- সিরাজ
সে তো গর্ব বাড়ায়- সাহসে ,সততায়
নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকারে , অস্তিত্বে ,গৌরবে।
বর্গীরা চেটেপুটে খেল দুশো বছর
হায়নারা পঁচিশ ; হিংস্র নেকড়ের মতো
ক্ষত -বিক্ষত ধূসর বিবর্ণ স্বদেশ
বহমান ইতিহাস সাক্ষী।
স্বপ্নচারীর স্বপ্ন ভেলায় ভেসে
স্বাধিকার মন্ত্রে দীক্ষিত মহানায়কের
হাত ধরে আসে স্বপ্নের স্বাধীনতা
মুজিব; সেতো আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ
অতঃপর ব্যস্ত জনক। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত স্বদেশ
উচ্চ শিরে দাড়াবে বিশ্ব দরবারে।
হঠাৎ, বিশ্বস্ত সহচরের অবিশ্বস্ত কাজ
ওলট-পালট বাংলা,বাতাসে তীব্র আর্তনাদ।
আতংকিত পরিবেশে কাটে অস্থির সময়।
এক মূহুর্তে সব নিস্তব্ধ; উন্মুক্ত আকাশ-
যেন উত্তরের হিমে কেড়ে নেয়
শরীরের সব উত্তাপ- বিশ্ব কিংবদন্তীর।
এতিম বাঙ্গালি, এতিম বাংলাদেশ।
বৃষ্টি বেদনার কাব্য – ১৬
কুমকুম দত্ত
শ্রাবণের অঝোর সন্ধ্যায়
মেঘ-বৃষ্টির নৃত্য আকাশে ;
দু’কূল ছাপিয়ে প্রেম আসে
ডুবেছে কদমের ঘ্রাণে
শহর বেদনায়।
দেখি অবাক চোখে তোমাকে
চলে যেতে যেতে ফিরে তাকাতে ;
চোখের ইশারায় বলে গেছে
একান্তে অনেক কিছু।
প্রেমবন্ধ্যা
দালান জাহান
বুকের ভেতর জীবন্ত মরুভূমি টের পাই
তৃষ্ণা ও বিতৃষ্ণার সমান দৈতছায়া
দুঃখ¯্রােতে মিশে হাশরের মাঠে হারায়।
প্রতিদিন হৃদয় পোড়া প্রতিদিন বসন্তগন্ধ
আজও কষ্টের দলা ভেঙে
কেউ দেয়নি একটি চন্দ্রফুল
বিরহী ব্রম্মপুত্র ও আমার জন্য রাখেনি
একটিও নিদ্রান্ধ ঝিনুক অক্ষর।
তবুও স্পন্দনকুঁচি নিয়ে
ঝাপ দেইনি কোন কল্পবাসির ঘুঘুচুক্ষে
একমুঠো কাঙাল আলো
ভিক্ষে চেয়ে বলিনি কতো অসহায় আমি
পৃথিবীর কেউ আমায় ভালোবাসেনি
অথবা আমি এক প্রেমবন্ধ্যা।
উড়াল
অনুপমা অপরাজিতা
শ্রাবণের আমন্ত্রণে ঠায় দাঁড়িয়ে
একটি কদম্ব হাত
অথবা
চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতার গল্প
মধ্যদুপুরে শুরু হয় কী
জ্বরের প্রলাপে জলপট্টির মুহূর্ত
সময়ের চামড়া ঢেকে দেয় উড়াল
প্রয়োজনটুকু ছাড়া বাকি সব কুয়াশা
রোদ ফুরোলেই মিলিয়ে যায়
দীর্ঘ ছায়াটাও ছোট হয়ে যায় মধ্যাহ্নে
ছোট হয়ে যায় লাবণ্য
রঙের আড়ালটুকু স্পর্শ করবার
থাকে না মুষ্টিবদ্ধ করতল!!
=================
মায়ের মুখের মতো
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
ফেলে আসা গ্রামখানি হারিয়ে ফেলেছি।
মরা নদীর মতোন হারালো কোথায়!
মানুষের মুখে আর হৃদয়ের
কোন ছাপ নেই
প্রণয় ও ভালোবাসা ফিকে প্রায়
চরপড়া নদীর মতো।
জীবনানন্দের রূপসী বাংলার ছবি
অসুরের প্রতাপেই খান খান
মানবত্ব খুন ১৫ আগস্টে।
ফেলে আসা আমার সহজ গ্রাম
হারিয়ে ফেলেছি।
ব্যবধানে গ্রাম বেশ্যার মতন
তবুও আমার গ্রাম ভালোবাসি
খুঁজে ফিরি মায়ের মুখের মতো
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে।
====================================
মুজিবুর এসেছে সেরা ত্রাতা হয়ে
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
খোলামেলা উছল উঠোন ও মাঠের ধূলো কাদা জল মেখে
মুজিবুর এসেছে সবুজে ছাওয়া নির্মল শৈশব থেকে
আঙ্গিনার পুকুর বাইগার নদীর দুরন্ত সাঁতারে মিশে
মুজিবুর এসেছে সকালের কোমল সবুজাভ শুভাশিসে।
টলমলে ঝিলে শাপলার হাসি দুরন্ত কৈশোর শেষে
মুজিবুর এসেছে মায়া-মানবিক ফেরিওয়ালা রূপ-বেশে
চারিদিকে গুমোট অসহনীয় ক্ষণ শোষণের কালো ত্রাসে
মুজিবুর এসেছে নিঃস্বের হয়ে দাঁড়াতে সকলের পাশে।
ভুল যথাতথা অনিয়ম প্রথা নেয়া যায় আর কত মেনে
মুজিবুর এসেছে প্রতিরোধ হয়ে লাগামটা ধরেছে টেনে
নব উদ্যোমে নব চেতনায় জেগে নব সুরুজের প্রাতে
মুজিবুর এসেছে অসীম সাহসের বীর ঝা-া নিয়ে হাতে।
সাতই মার্চের ভাষণেই সেরা কবিতার ছবি এঁকে
মুজিবুর এসেছে পল্টন-উথাল মাঠের জনরোষ থেকে।
মুক্তির নেশায় ঝাঁপিয়ে পড়া সেই আগে পিছে ডান-বামে,
মুজিবুর এসেছে সেরা ত্রাতা হয়েই সশস্ত্র সংগ্রামে।
বুকের তাজা টগবগে খুনে মা- মাটির সবুজ রাঙা
মুজিবুর এসেছে, করেছে সবার উদীপ্ত বোধ চাঙা!
মুক্তির নেশায় উত্তপ্ত হওয়ার জয়বাংলা স্লোগান মেনে
লাল সবুজের পতাকায় মোড়া মানচিত্র দিয়েছে এনে।
===========================
আমার সকাল
আখতারুল ইসলাম
পাখির গানে ফুলের ঘ্রাণে মনের মাঝে ছন্দ
শিশির ধোয়া মিষ্টি সকাল মিঠে রোদের গন্ধ।
গন্ধ আমায় ছন্দ শেখায় ছড়ায় বুকে আলো
শীতল হাওয়ার গল্প কথায় মন হয়ে যায় ভালো।
টিনের চালে ঘুঘুর গানে কেমন যেন খেলা
উঠোন জুড়ে ফুল পাখিদের চলছে কত মেলা।
নরোম রোদে হাসছে দেখো পদ্ম দিঘির জল
পাশেই নদী চলছে ছুটে ঢেউয়ের কোলাহল।
খোঁজে ফিরে ফুলের গন্ধ ছন্দে হারায় মন
পাতার ফাঁকে লুকিয়ে আছে শিশির ভেজা বন।
খানিক দূরে পাহাড়পুরে মেঘ নামে নীল খামে
সূর্য তখন অবাক চোখে হঠাৎ যেন থামে।
স্বপ্ন জাগায় বুকের ভেতর এই সকালের ছবি
রঙতুলিতে আঁকছে বসে শিল্পী নয়তো কবি।
সকাল আমায় বলছে ডেকে আয়রে কাছে আয়
দোল দিয়ে যায় মিষ্টি হাওয়া মধুর সুরে গায়।
জাতিসত্তা
রফিক আনম
হলুদ ফুলের দেশে আমার মায়ের জন্মভূমি ;
সেখানে জন্মেছি আমি প্যানোয়ায় সাগরের পাশে।
মাথিন কূপের জলে শতোপালঙ বিরহে পুড়ে
রাংকূটে বুদ্ধের বটে অশোকের আশ্রমে প্রস্বস্তি।
আদিনাথ, জিঞ্জিরায় রোহিঙ্গা দস্যুর কুক্ষিগত
মায়ের সোনার বালা ফিরিয়ে দেন সায়েস্তা খান।
ক্যাপ্টেন হিরন কক্স নিজ নামে বাজার বসায়;
আধুনিক বাংলাদেশে তিলোত্তমা কবিতানগর।
হলুদ ফুলের দেশে ওরা ফিরে এসেছে আবার
শরণার্থী বেশে ত্রাস; পালংবাসী সংখ্যালঘু ত্রস্নু
সোনাদিয়া, চকরিয়া রোহিঙ্গার লীলাভূম যেনো
রোহিঙ্গার জন্মপেশা খুনাখুনি মাদক পাচার
মেডাম কক্স পিয়ার, ফেরত চাই কক্সের লাশ;
নমো নমো জাতিসত্তা নিরাপদ মায়ের আবাস
বায়বীয়
রাশিদা তিথি
ফিরে ফিরে আসে উদয় অস্ত,
এক উপন্যাসের আখ্যান!
বহুল পঠিত, নেই আর কোনো
আবেদন তার।
স্মৃতির প্রদাহে পুড়ছে পক্ষ,
আশ্রয় পেল না আষাঢ়ের মেঘে,
লুটে নেয় রোদ আকাশ জমিন;
পায়ের তলায় মাটি ফেটে ফেটে
ধুলো হয়ে আছে,
পর্বত ওড়ে, দাড়াই কোথায়?
ছড়িয়েছি মাঠে কাঁকর কেবল
কি-বা দেবে ফল!
ভর করে আছি বাতাসে বাতাসে
বায়বীয় সব,
বুক ভরে শ্বাস, দৃষ্টির সীমা
অনুভব যত
শূন্যে শূন্যে তপ্তবাষ্পে
আশ্বিনি মেঘ,
অনেকে পেয়েছে ফেরার ঠিকানা
আমি দিন গুনি,
বায়বীয় জলে ছিপ ফেলে আছি।
==========================================
আমাদের রবীন্দ্রনাথ
রওশন মতিন
খুব সহজেই আমরা বলতে পারি,
রবীন্দ্রনাথ আমাদের কত আপন,
বাড়ির পাশের চির সবুজ বৃক্ষটির মতো
আমাদের জাগিয়ে রাখে সারাক্ষণ ।
কি লিখলেন তিনি সৃষ্টি মুখর অবিরাম,
তিমির বিনাশী রবি শ্যামল বাংলার কবি,
দেখেছেন মানুষের সুখ-দুঃখের নিত্য গাঁথা-
এঁকেছেন প্রাণের তুলিতে তাদের ছবি।
আমাদের রবীন্দ্রনাথ রবির মতোই সমুজ্জ্বল,
বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা তাঁর বুক,
খোলা জানালায় যেমন আকাশ দেখি,
দেখি সেই প্রিয় শান্ত-সৌম্য মুখ
রবীন্দ্রনাথ চির সবুজ বৃক্ষটির মতো
নিভৃতে উপস্থিত প্রতি ঘরে ঘরে,
কতদিনের চেনা আমাদের রবীন্দ্রনাথ-
দেখি আবার নতুন করে সখ্যতা গড়ে ।
রবীন্দ্রবৃক্ষের আলো-বাতাস প্রতিদিন
ছুঁয়ে যায় এই মাটি ও হৃদয়- মন,
সৃষ্টির মুখর রবীন্দ্রনাথ চিরকালীন-
আমাদের প্রিয় পড়শী একান্ত আপন ।
======================================
গৃহকে গ্রহণ করো
মামুন সুলতান
আটলান্টিক ডুবে যায় ঝড় ও জোছনায়
দিশাহীন তুফানঢেউ নটরাগে গিলে খায় টাইটানিক
বিধ্বংসী ধৃষ্টতা নিয়ে জেগে থাকে জলের জনক
চুলের খোঁপার মত ঘূর্ণমান ধূর্ত জলের ফাঁদ
সাগর সংগমে যায় সৌখিন মনের সুখশিকারী লোক
জলের ফান্দে কখনো পড়ে গেলে ভুলে যায় প্রিয়ার মুখ
নিজেকে চেনার মতো চেনা হয় মহাকাল তিলের সমান
নোনা সাগরে কখনো রেখো না মিঠাপানির বিশ্বাস
চোরাবালির মতোন ফাঁদ আছে জেনে রাখো অনুরাগী
সাবধানী চরণ ফেলে ছুঁয়ে এসো আটলান্টিকআয়োজন
ঘরের ব্যাঙের সাথে ইতরামি করে ধরো সাগরের সীমা
গৃহকে গ্রহণ করো প্রশান্তির প্রবল বিহ্বলতায়
পৃথিবীর সবসুখ জড়ো হবে তোমার গ্রহময় গৃহসুধায়।
বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে
রেজাউল করিম রোমেল
আজ বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে
মনে পড়ছে তোমার কথা
এমনি এক বর্ষার বৃষ্টি-তে
ভিজেছিলে তুমি।
ভিজেছিলাম আমিও…
কতদিন সে মুখখানি দেখি না
এই বর্ষার বৃষ্টিতেই
তোমার সাথে আমার হয়েছিল
প্রথম দেখা।
তুমি বলেছিলে-ভাল আছেন?
আমি বলেছিলাম-হ্যাঁ ভাল,আপনি?
তুমি বললে-ভাল আছি
আসুন বৃষ্টিতে ভিজি।
তোমার সাথে ভিজে ছিলাম আমিও
তারপর মন দেয়া নেয়া।
পুরোনো সেই সুখ স্মৃতিগুলো আজও
বুকের সুরে সুরে বাজে
বর্ষার বৃষ্টি-তে ভিজেছিলে তুমি,
ভিজেছিলাম আমিও…
===============================
অনুভবে মিশে থাকো
ফজিলা খাতুন
অনুভবে মিশে থাকো সুন্দর মেঘের মত
বাতাসের মৃদুতা স্পর্শে, ফুলের মধুর গন্ধে,
মন উড়ানো মধু পুষ্পের সম্পর্ক সবুজ মাটির মাধুর্যে।
সেই ভোরের স্নিগ্ধ বৃষ্টিতে, আকাশের প্রভাতে লাগা
আলোকিত ছায়ায়, দিনের সূর্যের প্রভা, রাতের চাঁদের আলোয়।
অন্তরে মোহনী স্পন্দন সুরের মৃদুতায় নাচবে তোমার
অনুভূতির মধুর প্রণয়ে,
অগণিত প্রেমের অসীম মহাসাগরে
আমার মধুর কবিতার সাথে জড়িয়ে রাখবে তোমার স্বপ্নে।
============================
বিশ্বাসের গোলাপ গুচ্ছ
সাগর আহমেদ
বিশ্বাসের গোলাপ গুচ্ছটি হাতে করে
তুমি আমার ফুল বাগানে দাঁড়িয়ে থাকতে
ভালোবাসা ছড়াতো অপূর্ব সৌন্দর্য
আর তার খুশবু ,
আমি প্রতিদিন হেঁটে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে
তোমাতেই ভাসতাম শুধু
প্রেম যেনো ঢেউ ভেঙে এগিয়ে চলা ময়ুরপঙ্খী নাও,
অবিশ্বাস দূরে ঠেলে তাই বিশ্বাসের হাতটি বাড়াও।
===========================
ইদানীং বিভ্রান্ত যৌবন
রুদ্র সাহাদাৎ
বৃষ্টি দেখে কাঁদি না আর কোনো প্রহর
যদিও ভুলে গেছি হাসি সেই কবে
মাঝেমধ্যে তোমাকেই কেনো যে বারবার মনে পড়ে
জানি না, বুঝি না ঠিক ।
সাগরপাড়ে তোমাকে দেখি,বালুচরে তোমাকে দেখি
শপিংমলে তোমাকে দেখি,রাজপথে তোমাকে দেখি
মেঠোপথে তোমাকে দেখি ।
কি যে হয় চোখে, কি যে হয় হৃদমাঝার
জানি না, বুঝি না ঠিক ঘুমের ভেতর তুমি হাঁটো
গুন গুন করতে করতে দেখা হয় বারবার
ইদানীং বিভ্রান্ত যৌবন কখন কি করছি
কখন কি দেখছি মনেই আসে না…
============================
ঘড়ি
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
হে নিদ্রাহত জীবনের দুঃখ
অস্তগামী যবনিকার ঘূর্ণিপাকে ঘুরে চলছে হরদম
হিসেবের আয়ূভুক তিনকাটা
তুমি আমি আর নিখিল;
এক তুলিতে অগণিত ছবি এঁকেছেন যে চিত্রকর
তাঁকে ভুলে কাটে নিদাঘবেলা
শুধুই অসার জীবন;
ধরণীর পেছনে লাফিয়ে দোড়ায়
অবিমৃষ্য মায়ামোহ টান…
জন্মান্তর হিসেবরেখার ডানামেলে
ঘুরে ঘুরে ছায়া ফেল নিয়তির চরাচরে
তুমি নিরন্তর অনুগ্রহ হও
ক্রমশঃ ধীরে চালাও গাণিতিক বৈইঠা
পৃথিবী ভ্রমণ সমাপ্তির চুড়ান্ত পর্চা ছাপাবার আগে
হেঁটে যাও গতিস্থির
হেঁটে যাও দয়াদ্রচিত্তে;
বনানীর গভীর ফাঁদে আটকা পড়েছে
হেলালির চোখভর্তি স্বপ্ন
চাঁদের শরীরের মতো ঘামছে ক্লান্তির হৃদয়
ঘ্রাণের মুখ ফেরাও
তবে নসিবের তিনকাটা!
অনন্ত ধূমকেতুর পথে তৃপ্তির রেণু হয়ে বিলাও পরাগায়ন সুখ…।
===========================
বিষটোপ
ঝুটন দত্ত
পাখিরা আকাশের নির্মল আনন্দ ধারা,
পাখি শিকারের ঘোর বিরোধী আমরা।
তবুও নিধনযজ্ঞ
পাখির কাবাব চিবিয়ে হাড় মাংস এক করা প্লেটের ফুটো দিয়ে ঝরে অকাল-অসীমের বেদনা;
থাই গ্লাসে আটকে থাকা রুদ্ধশ্বাসে পুরনো শহরের দেয়াল জুড়ে কয়েকটি ভাত শালিকের কান্না।
===========================
কষ্ট করে ফলায়
হেদায়ত উল্লাহ
দেশে হাজার কৃষক আছে
মাঠে করে কাম
কষ্ট করে ফসল ফলায়
পায় না উচিৎ দাম।
জীবন তাদের যুদ্ধে কাটে
তবু পায় না সুখ
নিত্যদিনেই বয়ে চলে
অসহনীয় দুখ।
রোদে পুড়ে জলে ভিজে
মাঠে ফলায় ধান,
খাঁটি মানুষ এরাই মোদের
অর্থনীতির প্রাণ।
এরাই দেশের অমূল্য ধন
দেশের রাখে মান
সবার চেয়ে তাদের বেশি
দেশের প্রতি টান।
সোনার বাংলা গড়তে তারা
ঝরায় রক্ত ঘাম
তবু তারা খেলার পুতুল
পায় না দেশে দাম।
============================
মহা মুজিবুর
মোস্তাফিজুল হক
জনতার কবি মানে মহা মুজিবুর,
নিপীড়িত কানে কানে চেতনার সুর।
মার্চের সাতে পাই আলোর দিশা,
শত্রুর কানে ঢুকে তরল সিসা।
মুজিব মানে তো দেশ আর স্বাধীনতাÑ
জন্ম তারিখে তাঁর লেখা সেই কথা।
এক-সাত সতেরোটা সংখ্যা রেখা,
মুক্তির উচ্ছ্বাসে মিলেছে দেখা।
তর্জনী উঠে যায় দূর-বহুদূর,
কবিদের কবি যেন ছন্দমধুর।
সেদিনের তর্জনী সূর্য সমানÑ
মুক্তিকামীরা রণে হয় আগুয়ান।
একদেশ সাতবীর উঁচু শির লাল,
বিপরীত রাশি গড়ে সংগ্রামী সাল;
হুরমতি প্রাণে জাগে ত্যাগের তৃষাÑ
রক্তের ¯্রােতে ভাসে যত বিবমিষা।
রাত্রির ঘোর টুটে কাটে অমানিশা,
আমরা পেয়েছি দেশ, রাষ্ট্রের ভিসা।
আঁধার ছুঁয়েছে মনন
শেখ নূরুল আমীন
চারিদিকে থই থই করছে আলো
অসহ্য যন্ত্রণার শিকার হয়ে ঝালাই মিস্ত্রি
অনেক আগেই কালো চশমা এঁটেছে–
কতগুলো কাক নিজেদের শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে
আলোতে বের হওয়া তাদের জন্য দোষনীয় কিনা !
অন্ধকার উজিয়ে বের হতে চায় লতাগুল্ম পাখির ছানা
অসহায় মানুষের চেতনা কারখানার শ্রমিক সন্ধ্যামালতি
ফুলচাষী যুবক সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর!
পদার্থের দোষগুন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে আমজনতার চৌকাঠে-
সুবিবেচক হৃষ্টপুষ্ট মানুষ ইতিমধ্যেই রঙিন ছাতার নিচে
আশ্রয় নিয়েছে
পরজীবীরা নিতান্তই মুখোশ পরে বজ্রের আলোর নাচন দেখে
কতিপয় দিনমজুর ফ্লোরসেন্ট বাতির আলোতেই শরীরের ভাঁজ
গণনা করে তৃপ্ত
এখানে আলোর মাঝেও বৈষম্য আবিষ্কার করে কেউ কেউ–
আবার কেউ বলে আঁধার ছুঁয়েছে মনন!
===============================
আজ আবারও বৃষ্টি হবে
রুদ্র সাহাদাৎ
আজ আবারও বৃষ্টি হবে পাড়ায় পাড়ায়
আষাঢ়ের খোলা মাঠে এসো কথা হবে
গণতন্ত্রের মন্ত্র পড়ে
কথা হবে সাম্য ও শান্তির- কবিতার পঙক্তিমালায়
কথা হবে গানে গানে সুরে সুরে
কথা হবে নদী ও সমুদ্রের
কথা হবে মাছ ও মাংসের
কথা হবে এই যে বেঁচে আছি,
-সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তায়।
আজ আবারও বৃষ্টি হবে রাজপথ মেঠোপথ
আষাটের খোলা মাঠে এসো কথা হবে
ভালোবাসার মন্ত্র পড়ে
বৃষ্টিচা -এর সাথে মিষ্টি মধুর ছন্দে গুন গুন
করতে করতে কাটবে কিছুক্ষণ….
==========================
ভালোবাসার কাব্যকথা
রাসু বড়ুয়া
একটি কথা বলব আমি না হয় দু’টি কথা
সেই কথাতে ভাঙে যদি তোমার নিরবতা।
ও সুন্দরী ও প্রেয়সী তাকাও মুখটা ফিরে
মনটা তোমার গলতে পারে হয়তো ধীরে ধীরে।
তুমি আমার গহিন মনে সদ্য ফোটা ফুল
কারো সাথে তোমার আজো হয় না কোনো তুল।
বারে বারে তুমি আমার মনটা কেড়ে নিলে
সুবাসিত হৃদয়খানা উজাড় করে দিলে।
তুমি আমার জীবন-মরণ তুমি আমার সাথী
তোমায় নিয়ে সারাটাদিন কত মালা গাঁথি।
আমি তোমার প্রাণ হতে চাই আমি তোমার আশা
উজাড় করে দেব প্রিয় রঙিন ভালোবাসা।
নিঝুমরাতে দুইজনাতে জ্বালবো আলোকবাতি
প্রেমসাগরে সাতার কেটে কাটব দিবা-রাতি।
যত আছে পাড়া-পড়শী থাকবে না অজানা
বলতে পারো আমাদের প্রেম খাটি ষোলো আনা।
তুমি আমি লাইলী-মজনু সিরি-ফরহাদ হবো
দুইজনে একসাথে মিলে তাজমহলে রবো।
সপ্তডিঙি নাও সাজিয়ে দেব সাগর পাড়ি
পঙ্খীরাজের ঘোড়ায় চড়ে যাব চাঁদের বাড়ি।
চাঁদের দেশে তারার সাথে ভাব জমাব কত
মিটিমিটি তারা হয়ে জ্বলব অবিরত।
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা হয়ে ভাসব
ডানা মেলে উড়ে উড়ে মনের সুখে হাসব।
হাসি-খুশি থাকতে পারি যদি থাকি ভালো
মিলেমিশে করব যে দুর মনের যত কালো।
এবার তুমি হাসিমুখে একটু চেয়ে দেখো
তোমার আমার ভালোবাসা মনের খাতায় লেখো।