আমার কবিতা
(গাজা‘র নির্ভীক শিশুদের–কে)
শ.ম.বখতিয়ার
আমার কবিতা
হাওয়ায় উড়িয়ে দেবো নির্দ্বিধায়,
বৃক্ষের শাখায় ঝুলে থাকবে সবুজ পাতা হয়ে
স্নিগ্ধ ছায়া দেবে রুদ্র উজ্জ্বল দুপুরে
ক্লান্ত পথিক গাইবে ভাটিয়ালি গান
আকাশের গায়ে মেঘ হবে
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে অঝোরে
দাবদাহে পাখিরা উঠবে মেতে শারদ সঙ্গীতে
কাটা ঘুড়ি হয়ে উড়বে বাতাসে
দুরন্ত বালক দল ছুটবে সবুজ মাঠে ঘাটে
মহা আনন্দ উল্লাসে
নন্দনকাননে রক্তজবা গোলাপ হয়ে ফুটবে
শহিদ মিনার রঞ্জিত হবে গৌরবে
মুখরিত হবে বাসর ঘর সৌরভে
আমার কবিতা
হাওয়ায় উড়িয়ে দেবো নির্দ্বিধায়
ফিলিস্তিন গাজায় স্বাধীন পতাকা হয়ে উড়বে
রক্তাক্ত নির্ভীক শিশুদের হাতে।
======================
দিশা
সারাফ নাওয়ার
বাঁধ ভাঙা চোখের জল মুক্তা হয়ে যায়
দূরের আলোর ছোঁয়ায়
এই আলো কোন ধ্রুপদি মনের
তপ্ত জলও অগ্নি চোখের গভীর জীবনের।
বাইরের পৃথিবী ঘুমিয়ে তখন
আরোপিত নিয়মে।
সময়ের অন্ধকার গহিনে জাগ্রত
ত্যাজ ও অভূতসত্য
গভীর আঁধার খুঁড়ে তখনই
উঠে আসে কালের অমৃত বাণী!
ভরকেন্দ্র চারদিকের বর্তমান
সাড়া দেবে সে সুশীল উত্তরে
রাতের বৃক্ষরা সে-যাবৎ জেগে থাকে
অপেক্ষায়
তারাদের সাথে…
সকাল তার প্রতিফলন
নদী যার প্রবাহ
পর্বতেরও দৃঢ়তা ফিরে পাওয়া
পাখিদেরও মুগ্ধ ওড়াওড়ি সহাস্য সমগ্রে…
কালোরক্তের চুল
শাহীন মাহমুদ
বয়সের পত্রালি এখন ধূসর
পত-পত করে উডছেনা আর
তোমার কালোরক্তের চুল।
হারিয়ে গেছে মধ্যরাতের নগ্ন সাঁতারো শরীর
তরল শিখার রিবন বেয়ে নেমে আসে গাঢ অন্ধকার।
যদি পারো আমার অনঘ মনোঘর ফিরিয়ে দিও
আলতো করে শুইয়ে দিও
তোমার নিমেষ শব্দগুলো
আমার অনন্তনিন্দ্রায়
নিদ্রিত চোখের পাতায়।
=======================
নিঃশেষের কথামালা
মজুমদার শাহীন
চক্রযানে যাত্রা করবার আগে
স্টেশনে ফেলে এসেছি সকল আয়োজন;
ভাতের থালা-শেভিংক্রিম-রেজার টুথব্রাশ –
সাতপুরুষের ভিটে-মাটি, ফুলের বাগান-
নিজ সাকিনের জন্মপরিচয় ;
বাঁশবাগানের ঝির ঝির শব্দের মধ্যে
হেলে পরা চাঁদের গান-
দীঘির জলে গোসলের দাপাদাপি।
ফেলে এসেছি, মায়ের স্নেহ – বাবার কবর-
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা
আজানের সুর, পিতামহির লাগানো
নিম গাছের ছায়া আর আদর;
সযতনে বেধে দেয়া মায়ের তাবিজ –
আমের আচার – দুধের ক্ষির
বয়ে চলা নদী – বকের ঝাঁক
মাছের রূপালী ডানা- স্বপ্নের সবুজ জমিন
জলকন্যার যৌবনের ভাষা;
রবি ঠাকুরের কবিতাবলিÑ
মধু কবির কপোতাক্ষ নদী-
জীবনানন্দের অতৃপ্ত প্রেম, নজরুলের বিদ্রোহ-
ফাগুনের হাওয়ায় ঝরে যাওয়া
গাঁয়ের মাটির ফুল;
নিজেই দিয়েছি বিসর্জনের খাতায়।
আজ আমি এক নিরাসক্ত ঈশ্বর – এক নির্বীজ দেবতা
নিজের আগুনে নিজেই পুড়ে ছাই।
===========================
গণসঙ্গীত
সুজন আরিফ
ভালোবাসা নিয়ে এখন আর ঘরে ফেরা হয় না।
কুৎসিত কণ্ঠের টুঁটি চেপে বাজিয়ে দেই গণসঙ্গীত
শালারা দৌড় লাগায়, ভোঁ দৌড়।
কিন্তু একেকটা যে স্বাস্থ্যবান ইমারত
ইতিমধ্যেই গিলেছে সব যাবতীয় আহার
অমনি বিশ্বাসটাকে পিটিয়ে আধমরা করে দেই।
শালারা!”মুখে শেখ ফরিদ,আর বোগলে ইট!”
ভালোবাসা নিয়ে এখন আর ঘরে ফেরা হয়না।
================================
পীড়িত সময়ের দাবি
হোসেইন আহমদ চৌধুরী
ঘরশূন্য ভিটায় জ্বলে অক্ষম সময়
পীড়িত আত্মার কোঁকানিতে
বাড়ে না নিরাময়ের কচ্ছপ গতি
নিদয় ঈশ্বরের হাতে ঘোড়ার লাগাম।
হেরে যাওয়া বসন্তের দুরন্ত দৌড়
অতৃপ্তির তৃপ্তিতে কুয়াশার আঁধার
ভিখিরি সময়ের জোরাজুরি ডাক
গৃহত্যাগী আজ স্বপ্নের পয়গাম।
কালাপানি দ্বীপান্তর, লোকান্তরে
রোদেলা দিনের প্রেমময় ঠিকানা
চূড়ান্ত অমাবস্যার কপালের ভাঁজ
মাঙ্গলিক তিলকের বিমূর্ত নিলাম।
দুরারোগ্য আঁধারের চিকিৎসার পর
পীড়িত সময়ের শব্দহীন দাবি
অকৃপণ রোদ্দুরে ভাসুক ধরণী
রাতের বিবর হোক সুখের পানাম।
=========================
পোষাকি লখিন্দর
বিশ্বজিৎ মণ্ডল
যা কিছু অবলীলায় বলে দিতে পারি
পারিনি,পক্ষাঘাতের ভয়ে….
মধ্য দুপুরের তছনছ আগুন মেখে উড্ডীন
জাহান্নামের চূড়োয়
ভেবে নিয়েছি,বেমানান শহর ছেড়ে…
একদিন চলে যাবো,নিষিদ্ধ বাসরে
অপরূপ দংশনে ঢলে পড়বো, পৃথিবীর
শেষ লখিন্দর
==============================
রক্তাক্ত ফিলিস্তিনি
আলী আকবর বাবুল
হে বিধি, এই রক্তাক্ত ফিলিস্তিনির হোলি খেলা কে রুখবে
মানবতা আজ নিস্তব্ধ!
গোলা বারুদের গন্ধে দূষিত নীল আকাশ,
নারী থেকে শিশু আজ লালে লাল
এমন দাবানল
কে নেভাবে
হে খোদা নিস্তার হোক, বন্ধ হোক এই নিশানা!
বর্বরতা ও হায়েনার দল
নিধন করছে- শিশু থেকে নবজাতক
মানবতা আজ নীরবে – নির্বোধে কাঁদছে
অস্তিত্ব হারাচ্ছে স্বাধীন ফিলিস্তিনি
দখলদার ইসরাইল ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে
আরব জাহানের পবিত্র মাটি
হত্যাযজ্ঞের রক্তাক্ত প্রান্তর
নিপাত যাক ইসরাইল
মুক্তি পাক মানবতা!
হে আল্লাহ, হে রহিম – এমন নিষ্ঠুর হয়ো না,
নিপাত করো কলিজা পোড়া দগ্ধ আগুন!
========================
নিঠুরের লগে আলাপ
মোহামেদ সাইফুল হাসান
এইহানে আইজ তোমার লগে হইবে কথা
নিঠুর তুমিতো আমার সব কাইড়া নিলা ,
তোমার সিংহাসনে তাই দোষ ফিইক্কা মারি
অশ্রু ঝরাইয়া অন্তররে দেই শান!
আশ্রয় কাইড়া বিবাগী বানাইলা,
বাউ-ুলে বানাইলা,
একখান ওগল পাতার ঘর বানাইতে পারলানা?
ওরে আমার ঘরামি!ম্যালা ক্ষ্যামতা তোমার-
খালি জিন্দারে মুর্দা বানাও,
বুক থেইকা জলজ্যান্ত মানুষ নামাও!
কৃতদাশের বকেয়া করের হিসাব বুঝো
অন্তরের বেদনা বুঝোনা ক্যা?
=============================
আঁতেল গেমার
আকলিমা আঁখি
মুখ ও মুখোশের উৎসবে
যত চৌকস খেলোয়াড়ই হও না কেন
জেনে রেখো হেরে গিয়েও গোলাপ পেতে শিখেছি।
খেয়ালের ক্রীড়নক বানালে মাটি হবো মাঠের ;
নিজেকে মই ভাবো যদি-যেন আমি বৃক্ষের ঝুরি।
জলের ডানায় কে কলঙ্ক আঁকে বলো!
আগ্নেয়গিরি বুকে বৃথাই অগ্নিগোলা ছুড়া ;
পর্বতের মিত্র হতে একখ- পাথরও আলগা করলে
ধ্বসে পড়ে সমূহ আতœীয়তার ভিত।
রক্তগোলাপ হৃদয়ই জবার প্রার্থনা বেদি।
কোন সে অসিক্রীড়ক খ-ায় আমাদের জল সায়র!
===========================
খুঁজি তোমাকে গোধূলি আভায়
মানস কুমার বড়ুয়া
আমি এখনো খুঁজি তোমাকে অপরূপ রূপে মানস সরোবরে
খুঁজে পাবো আশা অনেকের ভিড়ে শীতের সকালে ঢাকা কুয়াশা চাদরে।
খুঁজি তোমায় শরৎ প্রাতে ঝরা শিউলি ফুলের মাঝে
শেষ বিকেলে খুঁজি নদীর ধারে যেন বসে আছ
তুমি ভালোবাসার সাজে।
হরেক রকম গোলাপের সৌরভে অবিরাম খুঁজি তোমায়
আমি আবার খুঁজি তোমায় অসীম গগনে নীলের মেলায়।
বৈশাখের তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে খুঁজি এখনো তোমাকে
খুঁজি নীলিমায় ভাসমান মেঘের দলের ফাঁকে ফাঁকে।
আমি আমার ফেলে আসা মধুর প্রেমের স্মৃতি
আঙ্গিনায় খুঁজি তোমাকে বারবার
শত সহ¯্র দিবা রাত্রি ক্ষয়ে ক্ষয়ে খুঁজতে খুঁজতে একাকার।
আমার জমানো চোখের জলে সৃষ্টি সাগরে এখনো খুঁজি তোমায়
সেই সাগরের বুকে মায়ার তরী ভাসিয়ে খুঁজি মায়াবী জোছনায়।
খুঁজি নতুন কুঁড়ির নতুন পাতায় কচি সবুজের হাসিতে
এখনো খুঁজি হৃদয় দিয়ে সুরের মূর্ছনায় পাগল করা সেই বাঁশিতে।
খুঁজি তোমায় ঘন বর্ষায় অঝোরে ঝরা শীতল বারিধারায়
দু’জনে ভিজে যেন একাকার পরস্পরে জড়াজড়ি গায়।
একা একা খুঁজি তোমায় নিস্তব্ধ নিশুতি রাতে মনের বাতি জ্বালিয়ে
খুঁজি বিভোর স্বপ্নে মন জোছনায় স্বপ্নীল আলো ছড়িয়ে।
মনের টানে খুঁজতে যাই ¯্রােতস্বিনী কর্ণফুলির ধারে ধারে
হয়ত তোমাকে দেখব কোন এক তরীতে, মিলব দু’জনে গোপন অভিসারে
রোজ রোজ খুঁজে খুঁজে অস্থির আমি বড়ই ক্লান্ত
এবার ফিরে এসো প্রিয় মোর হৃদয়ে করো হে প্রশান্ত।
হয়ত খুঁজে পাবো একদিন গোধূলি আভায় মধুর ভালোবাসা দিবসে
হৃদয় বন্ধনে মিলবো দু’জনে বসন্তে মিষ্টি প্রেমের পরশে হরষে।