এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৩৫- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৩৫- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

পদাবলি : ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সংখ্যা

অনুভবে ত্রি-মাত্রিক ছায়াদৃশ্য

সাথী দাশ

 

এক.

বিস্তৃীর্ণ মাঠ পেরিয়ে দিগন্তরেখা, ওখানে দু’চোখ

রেখে দেখাম লাল সূর্যের লাফিয়ে ওঠা।

অদ্ভুত শিহরণ এক, চোখে-শরীরে; নতুন করে

শুরু হলো নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলার। বাহিরপানে

বেঁধেছিলাম ঘর; নিজস্ব ঘরটাও ছিলো ভেতরপানে।

দু’কদম এগুলোইে ভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি,

ভিন্নভিন্ন গন্ধ, মাখামাখি হয়ে যায় মাতাল সৌরভে।

 

দুই.

আকাশ জুড়ে দেখো, ভেসে আসা থোকা থোকা কালো মেঘ;

মানুষের মধ্যেও আছে।

মেঘের গভীরে জমাট বাঁধা ঈর্ষা-ক্রোধ-বীভৎসতা;

মানুষের মধ্যেও আছে।

আকাশের ছাদটা পরিষ্কার হয়, পরিবর্তনীয় রূপটা দেখি

রোদের ঝিলিকে মেঘ কেটে যায়।

কঠিন অনুশীলনে নিখাদ তপস্যায়

পরিবর্তনীয় রূপটা যে একদিন

মানুষের মধ্যেও দেখা যায়।

 

তিন.

শব্দের বাগানের উৎসমূল তুমি; তোমার

ঝলক উপস্থিতি শব্দগুলো খসে পড়ে

ঝিনুক, ভাঙা মুক্তার মতো। পরখ করে সযতেœ

মালা গাঁথি তোমার জন্যে, শুধু তোমার জন্যে।

তোমার অন্তরচাপা ভালোবাাসর ঝরনায়

শব্দের মালাটি কণ্ঠস্বরে ছড়িয়ে দিতে দিতে

আপনভোলা চক্ষুতে তোমার মুখটাই ভাসে।

 

ভালোবাসা ভালোবাসা শব্দটা কয়জনেই বা বোঝে!

ভালোবাসা মানে যে অন্তর্গত বেদনা বোধ।

ভালোবাসা মানে রাতের গভীরতায়

ভাসতে থাকা সুরের ঝংকারধ্বনি।

ভালোবাসা মানে অন্তর্গত ভূমে এক অদ্ভুত

হাহাকার আর শরীরী প্রবাহে শীতল ¯্রােত।

তবুও ভালোবাসা সুরের ওঠাপড়া ঝংকার

তবুও ভালোবাসা সাধ-আহ্লাদ, সুখ-দুঃখের

মোড়কে ঢাকা মানুষের চোখে খুশির তজল্লি।

 

 

 

 

 

 

===============================

 

 

 

 

এই দাঁড়িয়ে থাকা

জ্যোতির্ময় নন্দী

 

অনেককিছুই তো দাঁড়িয়ে থাকে

বাজে পোড়া তালগাছ

বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের একাংশ

ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার আগে

খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ…

 

উত্তিষ্ঠত জাগ্রত মহাজন বাণী– তবু

সব দাঁড়ানোকে উত্থান বলা চলে না

অনেক দাঁড়ানোই পূর্বাভাস

আসন্ন সমূহ পতনের

 

তবুও  যতক্ষণ শ্বাস কিছু আশ নিয়ে

এই দাঁড়িয়ে থাকা

ইতিবৃত্তের ইতি দিয়ে

চূড়ান্ত দাঁড়ি টানার আগে

===========================

 

 

হোসাইন কবির-এর দুটি কবিতা

 

ক.

আলোতে ভয়, আঁধারে আঁকড়ে আছি

নিঃশব্দে চলে যেতে বলে কে যেন থমকে দাঁডায়

আলো আঁধারের সীমান্ত রেখায়

 

আমি তো নীরবে নিবিড় নিঃশব্দ হতে পারিনি

শুধু বিপরীত স্রোতে ভাসমান খড়কুটো কিংবা

মেঘশূন্য নীলিমায় বিচ্ছিন্ন পালক হয়ে ভেসে যাই সংযোগসূত্র বিহীন

 

নিঃশব্দে চলে যেতে বলে কে যেন থমকে দাঁড়ায়

দরজাকবাটে বেওয়ারিশ প্রতিবিম্বে পুরানো আয়ানায়

 

আমার আলোতে ভয়, আঁধারে আঁকড়ে আছি

 

খ.

আহ্বান, অবগাহনে

চোখের সামনে ছিলো দহনের শিখা

দেখতে পাইনি

চোখের সামনে ছিলে এক চিলতে নদী

টের পাইনি

 

নদীরও কী যন্ত্রণা থাকে!

মানুষ যেভাবে কাঁদে ব্যথা-বেদনায়

 

উদাস ঘণ্টা ধ্বনি বাজে কী কোথাও

কেনো বাজে! অবিরত জলের নিক্কনে

তবু আহ্বানÑ

এসো নদী হয়ে ডুবে যাই

জলঘূর্ণির সুরের মূর্ছনায়

========================

 

 

একদিন আশ্চর্য সকালে

ওমর কায়সার

 

একদিন আশ্চর্য সকালে

পৃথিবীর সব ছায়া তরুচ্ছিন্ন হবে।

পাখির ঝাঁকের মতো আকাশ আবৃত করে

উড়ে যাবে আল আকসার দিকে।

 

সমস্ত নদীর বুক শূন্য করে

আকুল স্রোতের ধারা হাজির হাজির বলে

অবলীলায় ভূমধ্যসাগরের বুকে

নোনা আলিঙ্গনে আত্মাহুতি দেবে।

বালুর কাফনে ঢাকা প্রয়াত নদীর দেহে

হাহাকারে শোনা যাবে শুধু ঘুমপাড়ানিয়া গান।

 

কোনো এক আশ্চর্য সকালে

পৃথিবীর সমুদয় মেঘ শুধু বৃষ্টি দেবে বারুদের ঘ্রাণে

রক্তে ভেজা উদ্বাস্তু জায়নামাজে।

 

একদিন মৃতদেহভরা উপত্যকা থেকে ভেসে আসা সুর

সকল শিশুকে টেনে নিয়ে যাবে,

তারা সুনিপুণ গেরিলার মতো

হিংসার শৃঙ্খলা ভেঙে ছুটে যাবে

ইন্তিফাদার রক্তিম পতাকার কাছে।

এই ঘোর নাকবার দিনে

বিধ্বস্ত ভূমির পাশে জলপাইফুলের ঘ্রাণে

কোন্ স্বপ্নে মেতে ওঠে আশ্চর্য রঙিন

আশ্চর্য রঙিন

আশ্চর্য রঙিন

এক নয়া ফিলিস্তিন?

 

 

 

 

==========================

 

শুনো সবুজের আহবান

হো সে ই ন  আ জি জ

 

তুমি কি ভাসায়েছ নাও, হৃদনদে, স্রোতের উজান

তুমি কি পাও না শুনতে সবুজ সময়ের আযান?

 

আমার সবুজ সময় তোমাকে দিলাম

তুমি নিলে না, দিলে অগ্নিবর্ষা বিবর্ণা দুপুর

শ্যামল অরণ্য পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হলো

শুকিয়ে খটখটে হলো জলাকীর্ণ নদী, পুকুর।

 

দাঁড়াও কিঞ্চিৎ, শুনে যাও সুবর্ণ সবুজের ভাষা

মাটিচাপা দিও না, প্রাণ ফিরে পাক সবুজ ভালোবাসা।

 

ভাসাও নৌকো তোমার, প্রাণদ সবুজের জলে

যেখানে সবুজ, নৃত্য করে সবুজের গণমিছিলে।

 

 

=====================

 

অ্যাশট্রের দিন

সারাফ নাওয়ার

 

একটু আগেও অ্যাশট্রেটি পৃথিবীতে ছিল, ছিল দিন আর রাতের স্পর্শে।বাতাসও কথা বলে যেত অবসরে। তার প্রিয় ছিল ট্রাফিকের শব্দ, জনপদের ব্যস্ততা। তার চেয়েও পছন্দ বৃষ্টির মৃদঙ্গসুর, নদীর কলসিতে জলের উচ্ছ্বাস। সবই আসে অ্যাশট্রের কানে–সন্ধ্যায় কামিনীর ভেজা ঘ্রাণ, শীতের সাথে কুয়াশার প্রণয়। এসবই পরিচিত তার।

 

সুদূর আসবে কোন্ নিকটের কাছে? তার পরের শীতের দিনগুলো ভ্রমণে কোথায় যাবে? অজানা নয় মোটেও কিছু।

 

দেখিনি অ্যাশট্রের মুখ। শুনেছি কেবল পড়ে গিয়ে  ভেঙে পড়ার ছন্দ। প্রকৃতির নিজস্ব নির্মাণ; তাই ভাঙার পরেও থামেনি ঝনঝন ধ্বনি। সময় ফিরে তাকায় ভাঙা টুকরোয়। পাশে থেকেও খেয়াল করিনি অ্যাশট্রেটিকে। তবে তাকে ধারণা করা যায়। ধাতুর পরম্পরায় এক উজ্জ্বলতর বিশ্বাস। প্রধান চরিত্র চুরুটের, ধারাবাহিক গল্পের।

 

কামনার শাদা চাদরে রক্তিম জবার হাসিতে যে কিনা ভুলে যায় নিজেকে চিরকালের জন্য। আর কাউকে দেয়ার নয় অ্যাশট্রের প্রধান চরিত্র। ততদিনে খোঁজা হোক সিগারেটের ভস্ম, তার কী মানে? আর কী তার বিকল্প সুখ? একটু আগেও অথচ এসব ভাবনার বিষয় ছিল না, জানা ছিল না শাদা বিছানায় ফুটে উঠবে রক্তজবা।

 

 

 

=================================

 

 

এখনো সতীদাহ

মজুমদার শাহীন

 

সে ছিলো অনেক চেনা,

কালিদহে সতীদাহে মরে ছিল যে, তার কিছু ছাই আস্তিনে মিশে আছে।

কি আশ্চর্য! একটু আগেও

যে মানুষ ছিল, সে এখন উড়ন্ত

ছাই কনা। সে ঢুকে যাচ্ছে পঞ্চায়েতের ধুতিতে, কাপালিকের

মন্দিরায়- তার প্রেম পুষ্পাঞ্জলি।

এমন লোভাতুর শরীর কে না দেখে বল?নারী মরে গেলেও নারী,

তার শরীর আরাধ্য। রস রসায়নে

পুজোর ছলে ফুলকে স্পর্শ কর,

যাকে ছিড়েছ নিষ্ঠুর হাতে,

যেন সতী নারী ফুল হয় সতীদাহে।

দেখ, এখনো রামমোহন ফুল হাতে বেকুব প্রেমিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ফিরে এসো চিঠি

স্বপ্না সুরাইয়া

 

চিঠি, তুমি ছিলে সকলের তৃষ্ণার জল

সুখে – দুখে, প্রেমে – আবেগে

শোকে – স্মৃতিতে অপেক্ষার ক্ষণ।

কোথায় হারালে?

আবার এসো

নতুন কোন শুভ বার্তা,

নয়তো সহানুভূতি সঙ্গে করে।

তোমাকে পেতে

আমারই মতো

ইচ্ছে কী হয় কারো!

ইন্টারনেট উপড়ে ফেলে

আবার এসো ঘরে ঘরে,

পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে

পোঁছে দাও তোমার বার্তা।

খাম নামে একটা ঘরে

লুকিয়ে আসতে প্রিয়জনের  দ্বারে।

 

প্রেরণ করতে চিঠি –

কখনো রোদে পুড়ে পুড়ে

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে,

কখনো শীতে কাঁপতে কাঁপতে,

কুয়াশা ঠেলে ঠেলে

উলঙ্ঘন হয়ে চলেছি।

পিওন বুঝি এসে গেল

ডাক বুঝি চলে গেল,

কত রুদ্ধশ্বাস!

 

 

=================================

 

 

তবুও বেঁচে আছি

রা জী ব কু মা র দা শ

 

আমি বেঁচে আছি কারো না কারোর

জণ গণ মনে;

বেঁচে আছি কারোর কুশোদক হাতে

বেঁচে আছি কারোর নির্মম ছলনা  বিনোদনে।

 

বেঁচে আছি কসাই হাতে মাংস কাটার চাপাতি ছোরা প্রাণে;

বেঁচে আছি তীরান্দাজী বর্শা ফলার

চারপাশে জমাটবাঁধা কালো রক্তের

আবরণী কলা কফিনে;

 

বেঁচে আছি নির্বাণ

প্রেমিকা নীলার হৃদয়কণ্ঠ কলঙ্ক মনে;

 

বেঁচে আছি এই তো আনন্দ

 

কেমন আছি কোথায় আছি কীভাবে

আছি?

 

হয়তোবা কোনো এক অজানা গল্পের

প্রয়োজনে তবুও বেঁচে আছি।

তোমাকেই বলছি

শারমীন আফরোজ

 

আজকাল কেনো জানি-

নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়।

মনে হয়,

কোথাও যেনো কেউ নেই ,

চারিদিকে ধু ধু বালুচর।

আমি একা দাঁড়িয়ে আছি

ক্লান্ত, বিধস্ত, তৃষ্ণানার্থ।

নিয়তি মুখ ভেঙ্গচিয়ে মুচকি হাঁসছে

আমার দিকে তাকিয়ে।

না, একেবারেই না-

এ আমার দুঃখ বিলাস নয়

এ এক কারণ ছাড়া  কার্যের মতো,

সমাধান হীন এক রসায়ন।

প্রতিদিন রাতে ,আমি আমার সৎকার করি

আবার সকালে নবরুপে জন্ম নি।

তারপর,

চলতে থাকি একাকী।

আচ্ছা?

একটু স্নিগ্ধ বাতাস হবে

অথবা

এক গ্লাস বিশুদ্ধ জল?

তোমাকেই বলছি।

 

 

===========================

 

কেউ যখন পরিণত হয়ে ওঠে

আবু জাফর দিলু

 

কেউ যখন পরিণত হয়ে ওঠে

এখানে গাজুরি অচল অতিশয়,

ফুটে ওঠার আগে কিছুই নয়।

 

কচি-কুঁড়ি যখন মাথা তুলে ওঠে

সর্বাঙ্গ তখন তার ফুল হয়ে ফোটে;

প্রকৃতির ছোঁয়া স্বপ্ন ডানায় উড়ে

ফাগুনের আকুতি চক্রাকারে ঘুরে।

বৃক্ষ চারা ওঠে আপনার দেহ ছেড়ে,

প্রতিক্ষণে তিল-তিল করে ওঠে বেড়ে, গড়ে স্বপ্নীল ভুবন সুনির্মল বাতাস, পরিণত হয়ে ওঠে সুউচ্চ আকাশ।

হৃদয় চায় তার আকাক্সিক্ষত সময়,

নইলে কালোত্তীর্ণ কবিতা কি হয়?

রীতিসিদ্ধতা, ধ্যানমগ্নতা না থাকে যদি জীবন-নদী কি চলে স্বাচ্ছন্দ্যে নিরবধি?

কেউ যখন পৌরুষে পরিণত হয়ে ওঠে,

আপনার খোশবু তখন মৌবনে ছোটে।

 

=============

 

 

আহ্বান

শঙ্খশুভ্র পাত্র

 

তিনটা তিপান্ন মতে সূর্যোদয় বারো জানুয়ারি

প্রথম পঙ্ক্তি, শুভ স্বপ্নে জাগে দিব্য-গ্রোতস্বিনী

শীতার্ত ভোরের কাছে সত্যি বলি আমি কিন্তু ঋণী

দীর্ঘ অপেক্ষার পর এ খেলায় ভেসে যেতে পারি।

 

আসলে মনের এই খেলা মানে এক অর্থে লেখা

আমন্ত্রণে মন্ত্র আছে, সোমরসে বোমভোলা, হৃদি…

শিশিরে যে নিশি জাগে কুয়াশায় রোদের পিদিম

ডেকে আনে কল্পতরু এ জগৎ বাস্তবিক একা।

 

মনে রমণসুখ, স্রোতস্বিনী, ওতপ্রোতভাবে

জড়িয়ে নিয়েছি লিপ্সা আর সেই লিপিচিত্রঘোর…

তিনটা তিপান্ন রাত নাকি হিমকুসুমিত ভোর

বঙ্গীয় মতে সে জানালা খুলেছে  সরল স্বভাবে।

 

প্রবাহে বাহানা নেই, আছে শোভা, অতল-গভীর…

ছলাৎছল অবিরল সে ডাক ভোলে কি মুসাফির?

 

 

 

 

=========================

 

রূপবতী গ্রাম

মুস্তফা হাবীব

 

আমার গ্রামের মতো এমন রূপবতী প্রেমা

আর একটিও নেই এই মায়ার পৃথিবীতে।

এখানে  সূর্য এমন রৌদ্র ছড়ায়

তাতে না থাকে ধুলিকণা, না থাকে বুর্জোয়া শোষণ।

এখানে চন্দ্র আকাশ জুড়ে এমন হাসিহাসে

তার কিরণে না থাকে ধু¤্রজাল, না থাকে লুকোচুরি।

 

এখানে আছে মুস্তফা হাবীবের শৈল্পিক গৃহাস্থালি

যার সঙ্গে খেলা করে বসন্ত বাতাস, কুটুম পাখি

যার সঙ্গে উড়ে বেড়ায় কবিতার শঙ্খচিল, হংসমিথুন

এখানে আছে এক মনস্বী ধনাঢ্য ইলিয়াস

যার ঘামঝরা অর্থে নিজকে যতোটা রাঙায়

তারও চেয়ে বেশি রাঙায় মানুষের মন।

তার স্থাপত্য কর্ম স্রষ্টার আরাধনায় অনির্বাণ দীপ।

 

এখানে উত্থিত যতো আগাছাÑ পরগাছা, শিয়াল চতুর

অলৌকিক টান ও নৈসর্গিক রূপের কাছে পরাজিত।

আমার গ্রাম আমার ভালোবাসা

আমার গ্রাম আমার সব স্বপ্ন -আশা, দোদুল দোলা।

এখানে দুগ্ধবরণ কুসুম বালিকারা ফোটে শাশ্বত

সবুজ মখমল মাড়িয়ে যায় উত্তর দখিন পূর্ব পশ্চিম

আমার গ্রাম ঠিক কবিতার মতো সত্য ও পবিত্র।

 

=========================

 

 

 

তৃষ্ণা নিয়ে ঠোঁটে

কাজী শামীমা রুবী

 

গোপন খাঁচায় পুষে ছিলাম অচেনা সুখপাখি।

সেই পাখিটা নেয় না খবর দূঃখ কোথায় রাখি।

রোজ প্রভাতে সে পাখিটা গাইতো আপন সুরে,

ফাঁকি দিয়ে গড়লো নিবাস কোন সে অচিনপুরে।

 

ঠোঁটের কোণে থাকতো চিঠি কাব্য লেখার ছলে।

তুমি আমি অভিন্ন মন প্রেম পূজারীর দলে।

প্রিয়র চোখে জ্বলতো তখন প্রণয় প্রদীপ শিখা

পরজনমেও তুমি আমার ভাগ্যে আছে লিখা।

 

সে পাখিটা আর আসেনা তৃষ্ণা নিয়ে ঠোঁটে।

ললাট জুড়ে অবহেলা ভাগ্যে কেবল জোটে।

ইশারাতে শিস্ বাজিয়ে দেয়না মনাকাশে উঁকি।

কার মনে যে বসত গড়ে হৃদ ভাঙনের ঝুঁকি!

 

সুনীল আকাশ জুড়ে কেবল অশ্রুধারা ঝরে।

প্রেম হারিয়ে মন মন্দিরের সমাধিটা গড়ে।

অন্তঃপুরের জ্বালায় জ্বলে পুরে হলাম খাক,

কষ্টগুলো আমার পুঁজি বন্ধু সুখে থাক।

 

প্রিয়তমার হাসির মাঝে সরলতা খেলতো

ভালোবাসি ভালোবাসি সহস্রবার বলতো।

প্রতিশ্রুতি বেলায় সে যে সোনার চেয়েও খাঁটি।

প্রতারণায় জীবনখানি ষোলআনাই মাটি।

 

=======================

 

 

বঙ্গবন্ধুর ডাক শোনা যায়

সত্যব্রত খাস্তগীর

 

বঙ্গবন্ধুর ডাক শোনা যায়

‘দাবাইয়া রাখতে পারবা না’

একাত্তরের মন্ত্ররে ভাই

পাকবাহিনীর যন্ত্রণা।

 

বঙ্গবন্ধুর ডাক শোনা যায়

স্বাধীনতার মন্ত্রণা

যুদ্ধে যাবার উচ্ছ্বাসে ভাই

রুখতে হবে লাঞ্ছনা।

 

বঙ্গবন্ধুর ডাক শোনা যায়

সূর্য সেনের চট্টলায়

যার হাতে যা আছেরে ভাই

যাও এগিয়ে দীপ্ত পায়।

 

বঙ্গবন্ধুর ডাক শোনা যায়

গড়তে হবে সোনার দেশ

বাংলা নামে প্রাণ জুড়ে ভাই

আকুলতার নেইতো শেষ।

 

 

=======================

 

 

 

প্রবীণ চোখে নবীন স্বপ্ন

এম. আবু বকর সিদ্দিক

 

ঘর থেকে তুই বাইরে গিয়ে

দেখিস রঙিন ফুল,

প্রবীণ চোখে নবীন স্বপ্ন

মস্ত কঠিন ভুল।

 

যে নায় চড়ে যাত্রা শুরু

সে নায়ে ধর হাল,

হরেক নায়ে পা রেখে তুই

করিস না বেতাল।

 

পাকায় পাকায় ঘুরুক চাকা

কাঁচায় দিস না চোখ,

এমন হলে তোর গাড়িতে

চড়বে অন্য লোক।

 

পরের গাছে ফুটল চারা

সেই চারা আজ গাছ,

প্রবীণ চোখে নবীন স্বপ্ন

নেই কি শরম লাজ।

 

========================

খুকি

ইলিয়াছ হোসেন

 

রবি উঁকি দিলে খুকি

ঘাসে খেলা করে,

ঘাসের শুভ্র শিশিরের জাল

পা জড়িয়ে ধরে।

 

ফুলের বাগে গিয়ে খুকি

সুবাস নেয় নাকে,

শালিক শ্যামা ময়না টিয়ে

কাছে ডাকে তাকে।

 

পুকুর নদী ঝর্ণার জলে

গোসল করতে বলে,

খুকি বলে গোসল করবো

মধ্য দুপুর হলে।

 

বিলের ঝিলের পদ্ম শাপলা

ডাকে অনুরাগে,

নৌকায় চড়ে যেতে পারি

মাকে বলো আগে।

 

মায়ে বলে এখন তোমার

লেখাপড়া আছে,

লেখাপড়া শেষে তুমি

যাবে সবার কাছে।

 

======================

 

 

জবানি

মোস্তাফিজুল হক

 

জেকিলের সত্তাটাকে ভালোবাসি বলে

হাইড হয়েছি তাই। মনের অজান্তে অবশেষে

ভেতরে ভেতরে আজ ঘৃণার বারুদ জ্বলে;

পুঞ্জীভূত হয়েছে খুব সামুদ্রিক ঝড়…

 

নিজেকে আড়ালে রাখি, সে সামর্থ্য কই?

আমার সাথিরা আজ উকিল-পুলিশ;

গোপনে গোপনে চলে ছক কেটে অভিযান-

কবিতা খুনের দায়ে ফেরার আসামি আমি!

 

বিষাক্ত লবণ গিলে খুনি পদ্যভূক,

নিজের জবানিটুকু দিতে হবে আগে!

বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে

আমার এখন তবে স্বীয়শক্তি চাই।

 

 

 

===============================

 

 

 

তারপরে এক

তুহিন কুমার চন্দ

 

ঐ থেকে যে বন্দি হলাম ঘরে

তারপরে এক শ্যামলা পাখি

বলছে ডাকি,যতেœ থাকি বাসায়

আশায় থাকি রোজই হবে শেষ

বেশ তো হবে সুস্থ পরিবেশ।

 

তারপরে এক টুকরো মেঘের সাথে

রাত নেমেছে আমার বাড়ির ছাদে

হাতে যে তার লক্ষ তারার ডালি

থালির ভেতর কুমকুম টিপ রাখা

পাখায় শুধু বাংলাদেশটা আঁকা।

 

ঐ থেকে যে বন্ধ ঘরের তালা

পাঠশালাতে ছাড়া গরুর ডাকে

কাকে এবং শকুন করে বাসা

আসা যাওয়ার পথের লোকজনে

গোনে প্রহর সবাই যে আনমনে।

 

আমার ঘরে শিউলি ফোটার ঘ্রানে

প্রাণের দোলায় পুজোর আয়োজন

প্রয়োজন নেই ভিড় করা উৎসবে

হবেই দেখা ঝিনাইদহের গ্রামে

সূর্য নামে মিষ্টি মধুর হাসনরাজার গানে।

 

================================

 

 

অহংকার

মাহবুবা চৌধুরী

 

ফাগুন মাসে এলে তুমি সবাই তোমায় দেখতে পাবে

রাতটা তখন আঁধার ছেড়ে আলোর কোলে লুকিয়ে যাবে

এই মাটিরই পীযুষ বুকে বইবে নদী খরধারায়

আকাশ ছেড়ে শিশির বিন্দু পড়বে ঝরে  তারায় তারায়,

পথগুলো সব সাজবে ফুলে বর্ণমালার আল্পনাতে

শিশির পায়ে মিছিল করে আসবে তরুণ গোলাপ হাতে।

 

তুমি এলে রফিক, সালাম, বরকতেরা ওঠবে জেগে।

তুমি এলে বক্ষপুটে কাব্য ওঠে টগবগে।

 

অমর একুশ হৃদয় জুড়ে অহংকারের বর্ণমালা

আমার ভয়ের রক্তে রাঙা লাল-সবুজের জয়বাংলা।

 

 

============================

 

বসন্ত

লিংকন বিশ্বাস

 

হাতে হাত রেখে পথ চলায়,

রিকশায় পাশাপাশি বসে চোখে চোখ রাখাতে,

উড়ন্ত দোলনায় মেলে যাওয়া চুলের আছড়ে,

টেবিলের এ প্রান্তে বসে গান শোনায়,

সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে শাড়ির আঁচল ওড়াতে,

কপালের ঘাম মোছানোয়,

ইশারায় চোখ টেপানোয়,

প্রকৃতির ফ্রেমে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকাতে,

একটি পলাশ ফুলের নিবেদনে,

ঋতুতে নয়,

যতেœ-ভালোবাসায়, কালের সীমারেখা ছাড়িয়ে

বিরাজিত মনে, ভালোবাসার আখ্যানে,

তুমিই বসন্ত।

 

 

 

 

 

 

 

 

=================

 

সমুদ্র দর্শন

মিনু মিত্র

 

তোমায় নিয়ে ভাসবো বলে

গিয়েছিলাম সমুদ্র পাড়।

ক্লান্ত বিকেল শান্ত চারিধার।

কোথাও ছিল না মানব কুলের বাস

সঙ্গে ছিল শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

তোমার মৌনতায় ক্লান্ত মাঠ, ঘাট

সমুদ্র বললো আমায়, এসো অন্যদিন

ভাসাবো তোমায়, বসাবো চাঁদের হাট।

 

 

 

============================

 

 

একগুচ্ছ হাইকু

টি এইচ মাহির

 

মাছ শিকারে,

ছোঁ মেরে ঠোঁটে নেয়

যুদ্ধ পুকুরে।

 

পুরোনো বাড়ি,

ধূসর কালো রঙ

কম্পিত নাড়ি।

 

নীল আকাশে,

সুতোহীন ঘুড়ি উড়ে

শান্ত বাতাসে।

 

নিঝুম পথ

যাত্রীহীন বাহন

রাত আহত।

 

ঢালু পাহাড়

ধুলো আর বাতাসে,

গাছের হাড়।

 

সারস ঠোঁটে

বাড়িয়ে দেয় লতা,

শাপলা ফোটে।

 

জলের ফোঁটা,

পাতা থেকে মাটিতে

আলোক ছটা।

 

টিনের চালে,

ধাতব শব্দ আসে

নিরব তালে।

 

শিকারী পাখি,

ঠাঁই দাঁড়িয়ে বিলে

সুচালো আঁখি।

 

পাহাড়ি পথে,

সুর আসে পাখির

পাতার সাথে।

 

 

 

 

==================================

 

 

খুকি

শিশির আজম

 

ছেলেটার ছেলেমানুষিই এই হ-য-ব-র-ল’র জন্য দায়ী :

চালের বাতায় মুরগিটা কক্ কক্ করে ডাকছে

পেট ফেটে ডিম না বেরোনো অব্দি তার স্বস্তি নেই

ও-বাড়ির নতুন বউ কলপাড়ে বালতিটা ফেলে দিলে

ঝনঝন ঝনঝন শব্দে তার প্রতিবাদ হলো

আর তখনই হাবা কোথাকার, বুদ্ধু

আমাকে জঙ্গল ভেবে

বউপাখি, মৃগনাভি, লতায় লটকে থাকা নরম

জোনাকপোঁকা

খুঁজতে লাগলো

পেয়েও অনবরত খুঁজতে লাগলো

খুঁজতে লাগ…

দমকা বায়ুর সাথে মা’র চোখ স্থির

বাড়ি কিছুদিন গুম; কাপ, প্লেট, বাজারের থলে

নিজের নিজের মতো স্থান বদলায়

হঠাৎ সানাই এলো দুর্গত বাড়িতে

আত্মীয়স্বজন পাড়াপড়শির জন্য মর্তে ইন্দ্রসভা

টুকটুকে পুতুলের মতো আমাকে সাজিয়ে

তুলে দেওয়া হলো

নতুন টাকার মতো

আনকোরা মচমচে এক ছেলের হাতে

রাতে তার মুখ ভাল করে দেখার আগেই

আমাকে সে শুইয়ে দিল বিছানায়

তারপর ছেলেমানুষের মতো কী কী খুঁজলো

তা দেখতে এলো না কেউ

কেউ দেখতে এলো না

 

============================

 

 

লড়াই বড়াই

নাজমুল ইসলাম সজীব

 

বাজপাখি রাজ করে রসে

একে একে শুষে নেওয়ার তরে

শামুকের প্রলেপে ঝিনুক বসে

গভীরে বসে নলকূপে ধরে।

 

কথার রসে মন বসে

আসক্তের ঘোরে

আসল মানব ভালবেসে

থাকে তব দূরে।

 

বাজপাখির আঁখিতে জ্বলে

নিশান আলো ছোয়ার

ধরা-ছোয়ার বাহিরে থেকে

তবু কাছে পাবার।

 

মানের তরে অভিমানে

পর্দা মেলে দুই নয়নে

আঁখির আলোয় বুক পেতেছি

মৌন-যৌন যৌবনা অয়নে।

 

==========================

 

শব্দ জোনাকিরা জ্বলে

মুহম্মদ নুরুল আবসার

 

এই গ্রামীণ শহরের পুরনো চোরা গলিতে

এখনো তিনি যেন হেঁটে চলেছেন অবিরত

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে

একটুখানি দম নিচ্ছেন, জল খাচ্ছেন,

শেষ বিকেলে ক্ষণিকায় গিয়ে

হাসি-খুশি আলাভোলা মানুষটি

ভাবে আর ভাবে পূর্ণতা, সম্পূর্ণতা

পেতে আর কতো দেরী?

 

ভিড়ের উল্টোদিকে তিনি একা মানুষ

ফেরারী সময়ের ফেরিওয়ালা

সময়ের ঘূর্ণনে ক্ষয়ে যায়, তিনি যেন

মধ্যরাতের অর্ধমৃত চাঁদ।

 

অতঃপর আঁধারের প্রান্তসীমায় এসে

ওই দূর গাঁয়ে শিলালিপি হয়ে আছে

যেখানে নীরব কোলাহলে

শব্দ জোনাকিরা জ্বলে।

 

 

 

 

 

=========================

 

 

 

মায়াহীন শহর

টিপলু বড়ুয়া

 

মধ্যরাতে শহরের অলিতে গলিতে

ফুটপাতে কিংবা ওভারব্রীজে

শুয়ে থাকা ঘুমকাতর মানুষগুলো,

ভোরের শহরে ডাস্টবিনে ময়লার স্তুপে

খাবার খুঁজে বেড়ানো ছেলেগুলো-

দুপুরের শহরে- বাসাবাড়িতে

দোকানপাট কিংবা অফিসে-

ভিক্ষা পাত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নারীগুলো,

অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে প্রতিনিয়ত।

 

কেন ভিখারীর পাত্রে ভিক্ষা  নেই?

কেন অসহায় শিশুদের মুখে খাবার নেই?

ফুটপাতে ঘুমানোর এক চিলতে জায়গাও নেই।

 

মায়াহীন শহরে- কারো প্রতি কারো মায়া নেই-

পুঁজিপতি আর দখলবাজদের শহরে-

নিম্নবিত্তের স্থান নেই।

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে