বধ্যভূমি
মিনার মনসুর
১.
পেছনে মাথার খুলি সারি সারি; রক্ত-কুয়াশায় ডুবে আছে
পৃথিবীর পথ; পদতলে কঙ্কালের পাশা খেলা
তবু থামবার সাধ্য নেই; ফুরসত নেই দম ফেলবার।
ক্ষুধার্ত চিতার মতো ধেয়ে আসে মনুষ্য কাফেলা
কে যে কার পদতলে পিষ্ট হয়- কে যে সহসা পতিত হয়
অন্তহীন খাদে- কে রাখে তাহার খোঁজ!
২.
যেন ক্রুদ্ধ পিকাসোর ছবি! চারপাশে কতো রঙ-
তবু বিবর্ণ প্রান্তর জুড়ে শুধু মৃতদের মেলা;
কারো হাত পিছমোড়া বাঁধা- বেয়নেটবিদ্ধ বুক।
শুধুই শূন্যতা কারো চোখের গোলকে;
কারো-বা কর্তিত স্তন- মস্তক উধাও।
চারপাশে কতো রঙ তবু কালোর কাফেলা কফিনের মতো
ঢেকে দিতে চায় পৃথিবীর প্রাণবন্ত মুখ।
চারপাশে এতো জল তবু
রক্ত ছাড়া কারো কারো মেটে না পিয়াস।
পুরুষের প্রেম
শেলী নাজ
মিথ্যার মেশিন থেকে ক্লান্তিহীন গড়িয়ে পড়ছে
পুরুষ, তোমার প্রেম, ট্যাঙ্ক খালি আর পূর্ণ হচ্ছে
মিথ্যাশ্রমে পুন পুন নির্মাণ করছ দেবীমূর্তি
উৎফুল্ল ইঞ্জিনের বুক, ধকধক, ঘরঘর কাঁপছে
প্রস্তরে গড়ছ তক্ষশীলা, লীলাজল কি মধুর প্রবাহিত
অলিভবর্ণ নাইটি পরেছে যে বৃক্ষ, তার নীরব সঙ্গীতও
না জেনেই তুমি চালান করেছ তোমার কুঠার
সকল রন্ধ্রেই তার ঢেলে দিলে বর্জ্য, ক্ষার
তোমার জন্তুটি ঋজু, শিখিয়েছ চুম্বনের আগে
নমিত কুর্নিশ, জানে বিষকুম্ভ উদয়াস্তরাগে
কীভাবে হানতে হয় উন্মুখ পরাগে, দৈববশে
প্রেমে পড়ি, মেশিনের কলকব্জা আমাকে আবেশে
ধরে রাখে, গিলে ফেলে, অতঃপর রেতঃপাত
আমি চোখ বুজে তখনও নিতে থাকি মিথ্যের প্রপাত!
হিসাব নিকাশ
রজব বকশী
এইসব ফলদ বৃক্ষের মতো
আমিও মাটির দিকে ঝুঁকে থাকি।
পালাক্রমে পার করি
দিনরাত্রির সময় অসময়ের ঢেউ।
অথই অন্ধকারের ভেতর
খেলা করে জীবন জোনাকির ঝিলমিল।
ওইটুকু হীরক আলোর জাদু আয়নায়
নিজেকে দেখতে পাওয়া।
এই জীবন চলার পথে
খানাখন্দ কাঁটা নুড়ি বিপদসঙ্কুল,
হিংস্র বাঘের দাঁত থেকে বাঁচা।
দেখি চারপাশে অসংখ্য মুখোশ
ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিষাক্ত ফণাধর
নীলদংশনে রক্তাক্ত হৃদয়।
এরপরও ফিরে আসি
মানুষের সান্নিধ্যে নিরন্তরÑ
যদিও দুঃখজরা,অহম ও উপেক্ষা
বারবার আক্রমণ করে।
কী পেলাম
আর কী পেলাম না;
সেই হিসাব মিলাতে রক্তঘামের নদী
শূন্যের সমুদ্রে হাবুডুবু খায়।
পথ
দালান জাহান
তুমি যে পথে হেঁটে বাড়ি যাও
আমি সেই পথ পরিষ্কার করি প্রত্যুষে
জ্বলন্ত ক্যাফের শেষে বাদে মুনসুর
যে পথ চলে গেছে তোমার শহর ছেড়ে
এক-একটি কুয়াশা ধরে এনে
আমি মিশ্রিত করি রাতের ধোঁয়ায়।
গণনা করি দূর-দূরত্ব ও ভালোবাসা
গণনা করি মাটি ও মানুষের পা
প্রতিটি সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়।
তুমি যে পথ হেঁটে বাড়ি যাও
আমি একদিন সেই পথ হয়ে ধ্বসে যাবো
যাতে এই হৃদয় ছাড়া
তুমি আর না কোথাও ফিরতে পারো।
নুসরাত সুলতানার দু’টি কবিতা
যেমন ধরুন
ডজন খানেক প্রেম করার পরে কোনো এক প্রেমীর উপলব্ধি হল-
প্রকৃত অর্থে প্রেম বলে কিছু নেই।
যা আছে সেটা হল মনো-দৈহিক প্রয়োজন।
শরীরকে আরও উপভোগ্য বা নান্দনিক ভাবে পেতে–
যেটুকু মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন — তার অধিক সয়না
একুশ শতকের অধিকাংশ প্রেমীরই।
যেমন ধরুন মানুষকে মাছ-মাংস রান্না করে খেতে হয়।
প্রাণীকে হয় না।
প্রাণীকে সঙ্গমের জন্য মন মন খেলা লাগে না।
প্রেমের বাহানা করতে হয় না।
মানুষকে হয় – সঙ্গমের জন্য প্রেমের ধর্ণা ধরতে।
পোশাক আর প্রযুক্তি মানুষকে যেমন সভ্য করেছে।
তেমনি করেছে ছদ্মবেশী, অসৎ এবং বহুমুখের অধিকারী।
মূলত মানুষ ছাড়া আর সব প্রাণী বহুগুণ বেশি সৎ।
মানুষেরই দোষ কী?
একুশ শতকের চকচকে সভ্যতা পারেনি অতিক্রম করতে —
ক্ষুধা, যৌনতা, যন্ত্রণা আর মৃত্যু।
অগ্নিলা ও মেঘবতী
যখন আমি তোমার ঠোঁটে ডুবে মরছিলাম
আমার গর্ভবতী স্ত্রী প্রসব বেদনায়
কাতরাচ্ছিল।
আমি ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করেই
চলে যাব মেঘবতীর কাছে।
দরজা খুলতেই তোমার অবিন্যস্ত চুল,
কাজল ছাড়া চোখ, অন্তর্বাসহীন গোলাপি
ম্যাক্সির আড়ালে খয়েরী নিপল
আমাকে অবিচল পাহাড় করে দিল।
তারপর তোমার আগুনে গলতে লাগলাম
মোমের মতোই।
পুড়ে পুড়ে হালকা হতেই বললাম-
ছাড়ো অগ্নিলা, মেঘবতী খুব অসুস্থ আমি এক্ষুনি যাব।
আমি আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি।
অবাক চোখে তুমি বললে-
আমাকে! আমি!
আমি যেতে যেতে বললাম তুমি অগ্নি
তিনি জল, আমি পুড়তেও চাই, জুড়াতেও চাই।
ততক্ষণে মেঘবতী জন্ম দিয়েছে এক অনিন্দ্য জলপরী।
তাকে কোলে নিয়ে দুফোঁটা চোখের জলে বললাম –
তোমাকে লক্ষকোটি প্রনাম হে জীবন দেবতা।
অবনত হও
রূপক বরন বড়ুয়া
শাখা প্রশাখায় বেড়ে সবুজ মুকুটে
ভুলে গেলে মাটিতে শিকড়
অনেকদূর
গিয়ে
উদর পূর্তিতে মুখে জল তুলে যায়।
পাতারা নুয়ে কি বুঝে ঘুমের আলনায়
ভাঁজ করে রাখে সবুজ বৈভব!
চুপচাপ যতই দোলে
চোখে পতনের রোখ
স্বপ্নে
হলুদ বৌ কথা কও
ক্রমাগত ডাকিছে মৌসুমি ঢংয়ে
বুকের ভেতরে ধরাস ধরাস!
ফিরতে হবে
পুনরায়
আসা হবে কি আবার।
ভয়
যতই উপরে উঠুক পাতার ঝাঁক
সমীরণে ছেড়ে দেবে জন্মের কঠিন বাঁক।
বাতাসের শিসে পাতার কঙ্কাল
সোঁদাগন্ধে হামাগুড়ি দেয়
অতঃপর যাবে, যাবে আগুনের কাছে।
মনে পড়ে আকাশের মতো উঁচু বাসা
আজ নেই আশা, মৃত্যুর জাবর
অবনত হও
মাটিতেই রাখ চোখ।
বিভাজন
পলি রহমান
নির্জনতা-নিঃসঙ্গতার চে’ উপভোগ্য আর কিছু নেই সত্যি;
খলবলিয়ে দু-চারজন যারা আসে আনন্দে ভাসাবে বলে-
আদতে তারাই বেদনার জোয়ার এনে ভাসিয়ে নেয় সঞ্চিত সুখের কলস।
বেদনার সমস্ত ভার বইতে জানি বলে-
সম্পর্কের সুতোটা দাঁতে কেটে,
বেদনাগুলো চাপিয়ে দিয়ে তুমি নির্ভার চলে যাও নিরুদ্দেশের পথে!
তোমার চোখে পড়িমরি ব্যস্ততার ভয়ানক রকম ভিড়।
আমি থৈ থৈ অঢেল সময়ের দিঘিতে সাঁতরে বেড়াই নিজের সাথে নিজে।
আমার দু-হাত ভরা নিভৃতচারী অলস সময়ের সীমাহীন ছড়াছড়ি।
অকাল বসন্তের আগুন, ছুঁয়েছে আমায় আজ,
জল দেবার সময় কই?
তোমার হাতে কত কাজ!
নারীর কাছে নতজানু
আ ন ম ইলিয়াছ
জন্মে’ই অশুচি রেখেছি মাসাধিক
জরায়ুর রক্তিম স্নানে।
বেদনার নীল অনলে গতর পুড়িয়ে
ফুটিয়েছে সুখের সৌরভী ফুল-
দুঃখের বাগানে।
কখনো শ্বেত শুভ্রতার জৌলুসী সাজে
টেনেছ জীবনের যতি মৃত্যুর আস্বাদনে, তবু
আমাকে করনি নিষ্ঠুর ঘাতক।
নারী হে, তুমি জননী আমার।
যৌবনের উন্মাদনায়, জৈবিক উল্লাসে
আবঙ্ক ডুবিয়েছি আদিমতায়,
শঙ্খস্তনে আজন্ম লোভাতুর দৃষ্টি।
কখনো ফিরায়েছ আমায় শুদ্ধতায়
অস্পষ্ট লালিত পাপের
করেছ জৈবিক প্রদাহ মুক্ত
চিরায়ত যোনির উষ্ণ সুখে।
নারী হে, তুমি জায়া আমার।
গৃহবাসী শরীর ছুঁতে চাই মাটি
সময়ের ¯্রােতে।
আরশি নগরে নিরাশার অচিন পাখি,
নিয়ত খোঁজে পড়শি
গৃহহীন মন।
স্বপ্নটুটা দহনে অন্তর পুড়ে যখন
স্বপ্নরাঙ্গা ভোর যেন-
আত্মজার স্ব স্নেহের শাসন-
কিশোরী জননীর আদলে।
নারী হে, তুমি আতœজা আমার।
নতজানু আমি,
নতজানু তোমার কাছে।
বাঁকখালীজলে কাঁদে কবিমুখ
রুদ্র সাহাদাৎ
হারিয়ে খুঁজি নদ নদী খালবিল হাওর
যেমন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় শৈশব
হারাচ্ছি দিন দিন বন প্রকৃতি সবুজ
হারাচ্ছি নিকটবর্তী প্রিয় স্বজন
প্রাক্তন প্রেমিকার মতন হারিয়ে যাচ্ছে ঠিকানা
অচেনা নগরায়ণ, আমার স্বদেশ
কাঁদে নাজিরাটেক কাঁদে মৈনাকনগর,কাঁদে সোনাদিয়া চর
কাঁদে বাবা মা কাঁদে ভাইবোন
আকস্মিক বাঁকখালীজলে কাঁদে কবিমুখ
কেনো তা বারেবার জানতে চায় – খুরুস্কুল…
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ
আ ই না ল হ ক
মাগো; ওরা বলে নাকি মুজিব নেই!
ঘাতকের বুলেটের আঘাতে
আকাশের তারা হয়েছেন,
এক বুক অভিমানে চলে গেছেন একান্ত নিভৃতে।
আচ্ছা মা;
কিংবদন্তির কি মৃত্যু আছে! তুমিই বলো?
হয়তো ওরা জানে না,
শেখ মুজিব চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয়ী, কীর্তিমান;
প্রবাহমান এ রূপসী বাংলায় তিনি চির অম্লান।
শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ;
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কি পৃথক করা যায়?
তোমার ছিল বন্ধু সুজন
[সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ কে]
বদরুন্নেসা সাজু
যেখানে গ্যাছো শান্তি পাও, শান্তি পাও
দূর থেকে মনে হয় এখনো আছো
যেভাবে ছিলে নিজের ঘরে।
যেখানে আছোÑ বৃক্ষ আছে ফুল আছে পাখি আছে
মানুষের ভালোবাসা আছে;
কী গাছ লাগানো হলো কবরগাহে
বকুল কাঠগোলাপ কাঁঠালীচাপা?
গাছগুলো বড় হয়ে অজ¯্র ফুলে ছেয়ে যায়
আবার বৃক্ষতলে সতেজ ফুলগুলো
বিছিয়ে রাখে বলে ভালোলাগে, ভালোলাগে
হলুদ সোনালু, বেগুনি জারুল-লাল কৃষ্ণচূড়াও তাই
কী গাছ লাগানো হলো কবরগাহে?
চিরসবুজ তারুণ্যের প্রতীক কোন বৃক্ষ!
বাদলে ও যে বৃক্ষ সুদৃঢ় থাকে!!
তোমার ছিল মেদহীন পাতলা দেহ
সবাই চিরতরুণ বলতো Ñ বয়সের ভারে মুটিয়ে যাওয়া
মেদবহুল শরীর কখনো ছিল না তোমার।
তোমার ছিল সফলতার জীবন সাহিত্যময় জীবন
তোমার ছিল পড়ালেখার তৃষ্ণাকাতর জীবন
বিশ্বসাহিত্যের ভুবনে প্রবেশের জীবন
অনুবাদ কর্মে সৃষ্টিশীলতার জীবন;
তোমার ছিল লাইব্রেরির সাথে বন্ধুময় জীবন
তার বাইরে তোমার ছিল দৈনিক আজাদীর ‘খোলা জানালা’।
তোমার ছিল সকল বয়সী
বড় ছোট নারী পুরুষ বন্ধু সুজন, সবার সাথে
তোমার ছিল সখ্যতা Ñ সরলতা কথাবলাÑআলাপচারিতা।
দেয়ার ইজ নো অলটারনেটিভ
হোসাইন আনোয়ার
কী ভয়ঙ্কর দুঃসহ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা
জীবনানন্দের ‘অদ্ভূত আঁধার’ এ ঘিরে আছে আমাদের ভাগ্যাকাশ।
মার্স্কীয় বিশ্লেষনে সুঃশীলেরা যে ব্যাখাই হাজির করুক না কেন
পৃথিবীর বর্ণহীন সব দুঃখগুলো আজ আমরা বিসর্জন দিতে এসেছি এখানে।
পুরনো সাফল্যের জীবন্ত মুহূর্তগুলো স্মৃতির অ্যালবামে ধরে রেখে
লাল সবুজ পতাকা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
আমার ইতিহাস, সমাজ-সংস্কৃতি, জারি-সারি, ভাটিয়ালি, বাউলকীর্তন
আমার রবীন্দ্র-নজরুল, সুকান্ত-শামসুর রাহমান আমার কৃষ্টি, আমার চেতনা
সব কিছু ছিনতাই হয়েছে পঁচাত্তরের রক্তাক্ত পট পরিবর্তনে।
ধর্মীয় মৌলবাদ আর প্রতিক্রিয়াশীল মুখোশ পরা জঙ্গীরা
কখন যে মাতৃভূমির লাবণ্য হরণের দানবীয় নেশায় মেতে ওঠে
কখন যে রক্তবানে ভেজায় আমার মায়ের আঁচল
কখন যে ওড়ায় পাক-সার জমিনের চাঁদতারা পতাকা আমার বুকে।
কখন যে আমার সংবিধান ছিন্নভিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলে দ্যায় ডাস্টবিনে
সেই শংকায় আমার রাত আমার দিন কাটে।
তাই কোনো বেশ্যার নগ্নদেহে শুয়ে থাকার মতোই
এই আশ্রমেই পড়ে আছি আমি, নষ্ট বিপ্লবীকে সাথী করে
উজানে দাঁড় টানা কোনো মাঝির মতো
রণাঙ্গনে ফিরবো বলে।
আমার দুই জীবন
সুজাউদ্দৌলা
সারাদিন আমি যে জীবন যাপন করি
রাত্রে ঘুমের ভেতরে তার চিহ্নও থাকে না
যেন বিশেষ পোশাকে বিশেষ বিদেশে চলে যাই।
দিনমান কতো কায়ক্লেশে কাটে, কত তছরুপ
তাই ছানি আর তটস্থ থেকে বাঁচি
ঘুমের গভীরে পাই যেন মাতৃকোল
প্রিয় নারীর বাহুপাশ আর ভালবাসা
সম্মান আর সাফল্যের মুকুট।
আবার কখনো উল্টোটাও ঘটে
সারাদিন কোনমতে কাটলেও, ঘুমের গহনে
তাড়া করে সাপ হন্তারকের ছুরি
পালাতে গিয়ে পা নড়ে না, বুকের ওপর
হাজার মণ পাথর চাপা নিঃশ্বাস খুঁজে পাই না।
দিনে রাতে যাপন দুই রকমের দুই জীবন
এক জীবনের সাথে অন্য জীবনের দেখা হয় না।
বিদ্রোহী কবি
রওশন মতিন
চায়নি সে ধন-মান, চায়নি সে তুচ্ছ-বিত্ত,
অটল পাহাড়ের মতো, তার নির্ভীক চিত্ত,
উজ্জ্বল দু’চোখে উত্তাল স্বাধীনতা দীপ্ত,
পরাধীন শৃঙ্খল ছিঁড়তে সে বিদ্রোহী, ক্ষিপ্ত,
জাগরণী গান গায় বাংলার বুলবুল,
সংগ্রামে বিদ্রোহে, উঁচুশির নজরুল।
পরাধীন শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাধীনতার সূর্য হেসে-
বেড়ায় ভেসে, ফুল-পাখিদের মুক্ত দেশে।
বোবাকন্ঠে শত ব্যথাভার, সিংহের মতো বাব্রী চুল,
আমাদের প্রিয় কবি, জাতীয় কবি, বিদ্রোহী নজরুল।
পরিণীতি
শারমীন আফরোজ
আমি তোমার জন্য
ঝলমলে রোদ্দুর আনতে চেয়েছিলাম,
তুমি তা অবহেলায়
ফিরিয়ে দিয়েছো।
তুমি আধার ভালোবেসে
সন্ধ্যা নামিয়েছো জীবনে ।
তুমি যে শহরে থাকো
আমি সেই শহরের রক্ষী
হতে চেয়েছিলাম।
তুমি তোমার ঘৃণার আগুন জ্বেলে
বন্ধ করেছো শহরের প্রবেশ দ্বার।
আমি তোমার শরীরের
বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহ হতে চেয়েছিলাম।
চেয়েছিলাম, তোমার ভরসার
বিস্তৃত আকাশ হতে।
তুমি–
তা চাওনি।।
আজ তুমি শিমুল তুলার মতো
উড়ছো দিক বিদিক।
আজ তোমার জন্য
আমার কাছে কষ্ট টুকু ও নাই,
সেখানে জায়গা করে নিয়েছে
করুনা।।