মুক্তি
অসীম সাহা
প-বর্গীয় ধ্বনির ভেতরে কোনো জলাশয় নেই।
নেই কোনো বদ্ধ ডোবা কিংবা কোনো কচুরিপানার ঝাঁক।
বহমান স্বচ্ছ জলধারা অসবর্ণ বিবাহবন্ধনে
আবদ্ধ হতেই শুধু ছুটে যায় নদী থেকে সাগরসঙ্গমে।
মাধবীলতার ফুল ফোটে না তো প্রবীণ পুকুরে।
প্রত্যাখ্যান শব্দের আড়ালে তবে
কোন্ বর্ণের অঙ্গীকার আছে?
নিজেও সে জানে না তা। তাই শুধু উপসর্গ, অনুসর্গ
প্রত্যয় কিংবা কারকের বহুবিধ ব্যবহার খোঁজে।
প্রতিটি ধ্বনি আর বর্ণের অন্তর্গত ব্যাখ্যা জানে বলে
উদ্ধৃতিযোগ্য পঙ্ক্তিতে সে ভরে তোলে
আদর্শলিপির সব অনুগত পাতা।
স্বরবর্ণের আদ্যাক্ষরের সাথে প-বর্গীয় ধ্বনির
বিবাহকে বৈধ করে শৈল্পিক সন্তানের পিতার সন্ধান খোঁজে।
‘বঙ্গীয় শব্দকোষে’ যে বর্ণের অভিসার নেই, তাকে নিয়ে
বরযাত্রী যেতে কোনো বৈয়াকরণের জানি সাহস হবে না।
তবুও নাছোড়বান্দা মহাপ্রাণ ধ্বনি চায় ‘সংসদ অভিধানে’
জোড়া কবুতর হয়েই সে উড়ে যাবে দূর কোনো দেশে!
অথচ দিগন্তের প্রেক্ষাপটে তার কাছে স্বপ্নগুলো বহু দূরগামী;
তাই সে তো জীবনের পরমায়ু খুঁজে পেতে
ছুটে যায় ‘ঈশ্বরের’ কাছে!
‘ঈশ্বর’ শোনে না কথা। প-িতের ব্যাকরণ নিপাতনে সিদ্ধ হয়।
কেবল ধ্বনির ক্ষেত্রে ব্যাকরণ নিয়ম মানে না।
প-বর্গীয় ধ্বনি তাই হলফনামার কাছে আশ্রয় খোঁজে।
অবশেষে আয়াত আলীর কাছে নোটারি পাবলিক করে
কম্পিত, করুণ হাতে স্বাক্ষর সেরে নিয়ে
অবরুদ্ধ জীবনের মুক্তি মেলে তার।
সমাপ্তিরেখার টানে ভরে ওঠে শাদা ক্যানভাস।
তারপর অশ্রুর ভেতর থেকে রাত্রির অন্ধকারে কেঁদে ওঠে
বহুদিন অযতেœ পড়ে থাকা একখানি রক্তাক্ত বালিশের ফাঁদ!
=========================
বোধোদয়
শামীম আজাদ
আজ আমার মনে রৌদ্রপাত হচ্ছে।
কতদিন এ দেহদ্বার এমন
দুর্দান্ত বোধ করেনি।
কত শত দশক চলে গেছে
রৌদ্র ও হৃদয়পি-
এভাবে একসাথে বসেনি তো পানে!
ওরা একা একা
রোজা ও রাগে বিশুষ্ক থেকেছে,
কিন্তু এক হতে পারেনি!
আজ আমার অন্ত্রের অঙ্গনে অঙ্গনে
রোদের বীজ গেঁথে যাচ্ছে
মরিচবাতির জ্বালা নিয়ে
আমি এক প্রখর গাছ হয়ে উঠছি।
আমি এক রোদেলা গাছে রূপান্তরিত হয়ে
জেনে মেতেছি সকল।
প্রশ্ন ভাবিতেছি বিচিত্র রকম।
আমার এই ঠোঁটজোড়া
আর গাছের গোলাপ
কী করে পেল এই পায়রার মন?
কেন তারা পালিয়েছিলো আমা থেকে?
কোথায় বা ছিল সারাজীবন?
=================
পান্তা
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
উৎসবে পান্তা-ইলিশের প্রতি বহুবিদ বিরক্ত।
ছোটবেলায় সৎ মা প্রতিদিন পান্তা দিয়ে বলতেন:
সাঁতার কাট, সাঁতার শিখ।
জলভাতে মেয়েটির ডুবে মরার কথা ছিলো।
সে গোপনে ডায়েরি লিখতো, মৃত মা’র কথা লিখতো
এবং আরো একজন। এখন লিখে না।
ছোটবোন লুকিয়ে পড়তো বলে মধুর মিথ্যে লিখতো।
মেয়েটি মরে যাবার কথা ছিলো; কিন্তু সে মৃত্যুকে মা ডেকেছে।
পাখির মনেও বহুবিদ বেদনা থাকে, একাকিত্ব থাকে।
এবং পাখিও আত্মহত্যা করে!
লৌহমানবী গো
হাফিজ রশিদ খান
লৌহমানবী তোমাকে নত করি আমার চরণতলে
চাটো আমার পায়ের ধুলো
চাটো আমার শিশ্নের মল
চাটো আমার দু’গাল
এবার মুখটা তোলো
সুখ পাই তোর উপস্থের বৈশ্বানরে
পুড়ে যাই, ভেসে যাই
লৌহমানবী গো
আমার নিকুঞ্জ হয়ে এবার ব্রীড়ায় পা ফেলে
ফিরে যা ঘরে
তোর সাম্রাজ্যের কুয়াশায় ভেজা বেষ্টনীতে
মাথা কুটে মরুক ভক্তের দল
তৃপ্ত তুই
যৌনতার খরতর জ্বালা নেই আপাতত
তুই কঠিনেরও কঠিন এখন
রুক্ষতর
চোয়ালের সেই কমনীয় চাম …
রংধনু
শুক্লা ইফতেখার
কোনো এক শ্রাবণ দিনে আমরা দু’জন রঙধনু দেখতে গেছিলাম
দূর পাহাড়ের দুরন্তপনায়
সেদিনই শুধু তোমার কথায় পুরনো কোনো হাহাকার ছিল না,
ছিল না কোনো লুকোচুরি খেলা।
সাতরঙ ছেনে নিয়ে বুনেছি বর্ণালি আমার বোধিতে ও বোধে।
মনে পড়ে যায়, সে বিকেলে তো মেঘে মেঘে এক বিন্দুও বৃষ্টি হয়নি।
ভুল বৃষ্টি ভেঙে তুমিই ভেসে উঠেছিলে এক অনির্বচনীয় রঙধনু।
সেই যে আমার প্রার্থিত পরমায়ু।
==================================
চিড়িয়াখানা
সবুজ তাপস
এই হাত দিয়ে ধরে শাখা
মৃগ, পা দিয়ে হাঁটে কুকুর,
এই মাথা দিয়ে বুদ্ধি আঁটে
কাক, মুখ দিয়ে খায় বাঘ,
এই চোখ দিয়ে দেখে বক
মাছ, নাক দিয়ে নেয় গন্ধ
বাড়ির বিড়াল..
এ দেহ চিড়িয়াখানা,
এ অন্তর শ্রী আঁকা না!
হৃদয়ে প্যালেস্টাইন
বিপ্লব বিজয় বিশ্বাস
রক্তের ¯্রােত
ছুটে চলে পথে পথে রাজপথে
ফুলের বাগান কী শস্য ক্ষেতে
ছুটে চলে স্রোত প্রাসাদে প্রাসাদে
গাজার আনাচে কানাচে
মনুষ্যত্বের ফসলি বন্দরে ।
ইহুদি রাজের হামলায় ভাঙে অট্টালিকা
তবুও ভাঙে না প্যালেস্টাইন।
ভাঙে না রাজনীতিখোর পৃথিবীর ঘুম।
রক্তের স্রোতে ভাসে অবুঝ শিশুর দল
ভাসে গর্ভবতী সুন্দরী নারী
জ্যোৎস্নার ধবধবে আলো
সাদা বলাকারা ভাসে উড়ন্ত গাঙচিল
ভাসে মসজিদ ভাসে সোচ্চার পৌরুষ।
রক্তের ¯্রােতে ভাসে জেরুজালেমের ভূমি
স্বপ্নরাঙা জীবনের শৈল্পিক মন।
ভাসে শান্তি সনদের বই।মননের বাতিঘর।
বকুলের মতো মুক্ত জীবন কড়চা ভাসে
জ্বলন্ত প্যালেস্টাইন। তবু তো নেভে না আগুন।
যদিও জমাট রক্তকণায় মুখ থুবড়ে আছে
উজ্জীবিত নির্দোষ প্রাণ ।
দেখো জমাট রক্তকণা ঝুলে
বৃক্ষের পাতায় পাতায়-ছাদে কার্ণিশে
ঝুলে অফিসে অফিসে ঘরে মোচায়।
জমাট রক্তকণা ঝুলে সুন্দরের বোঁটায় বোঁটায়
রঙধনু আর মুক্তিকামী মানুষের চেতনায়।
নেতানিয়াহুর সুরম্য অট্টালিকায় ঝুলে
জমাট রক্তকণা বিস্মিত পৃথিবীর নাকের ডগায়।
মিসাইলের শব্দে শব্দে ভোর হয় প্রতিদিন
মৃত্যুরা থমকে থাকে সারাদিন।
কামানের গর্জনে গর্জনে জর্জরিত গাঁজা
মুর্খ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈত্যপনায়
থরথর করে জেরুজালেমের মাটি
প্যালেস্টাইনের ইস্পাত শরীর।
বিধ্বংসী বারুদের গন্ধে-ধোঁয়ায়
জিঘাংসার কবলে প্যালেস্টাইন।
তবুও বারবার জেগে ওঠে প্রতিবাদী প্রাণ
জেগে ওঠে শত্রুর আক্রোশখেকো
লড়াকু প্যালেস্টাইন।
দৈত্যের মতো ট্যাংকের ভারে
উদ্বিগ্ন পৃথিবী বটে,তবু নীরব নিষ্প্রাণ।
নেতানিয়াহুর দুরন্তপনায়
নীরব পৃথিবীর ন্যূব্জ পিঠে
অপকর্ম কর্ষণ করে ইহুদির জাত ।
হৃদয়ে আমার প্যালেস্টাইন
জেগে আছে জেগে থাক অবিরাম।
তাই আমি ও আমার দেশ
মুক্তির পতাকা হাতে প্যালেস্টাইনের বুকে ….
বাইডেন-ট্রাম্প ধুত্তরি ছাই !
========================
দুই টুকরো
ফারুক মঈনুদ্দীন
ভূগোল
অজানা দেশ খুঁজতে যখন
হাত রেখেছি ম্যাপে,
নতুন স্বাদে কাঁপল আঙুল
সর্বশরীর ব্যাপে।
জলজঙ্গল পাহাড় ছেনে
নোঙর করি দ্বীপে,
কোথায় এলাম? জলভেজা এই
বিজন অন্তরীপে?
সলজ্জ চাঁদ মুগ্ধ আকাশ
তৃষ্ণাকাতর খাঁড়ি
নবীন নাবিক ভাবছে দেবে
কতটা পথ পাড়ি!
কোয়ারেন্টাইন
সঙ্গনিরোধে আড়ালে গিয়েছে
উপোসি ঠোঁটের তিল,
কার ভয়ে ভীরু মুখোশে ঢেকেছে
বিজন টোলের ছায়া
কার কর্কশ স্পর্শ এড়াতে
দুয়ারে এঁটেছে খিলÑ
লুকোতে পারেনি চোখের অতলে
গহন গোপন মায়া।
================================
সেহেরি ও মাখনওয়ালা
জিললুর রহমান
রাত্রি দ্বিপ্রহরে ঘ্যানঘ্যানে কন্ঠ “মা-খেন মা-খেন”
সেহেরির সময় ঘনিয়ে এলে
কলাপাতা মোড়ানো মাখন
পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে যায় রহস্য-মানব
সেহেরি মানেই ঘুম চোখে জেগে গপাগপ খাও
ঝাল ভাত – দুধ-কলা ভাত – আম-দুধ ভাত
– মাখন মাখানো ভাত
সেসব শৈশবকাল এখন অতীত
গভীর ঘুমের স্বপ্নে আজও শুনি
মা-খেন মা-খেন কিংবা
বস্তিঅলা জাগো
উত্তর পঞ্চাশে আজ
একাকী সেহেরিগুলো
শব্দহীন বর্ণহীন গন্ধহীন
বাতাস বিদীর্ণ করে উৎকট সাইরেন
কেবল স্মৃতির মধ্যে সেই কন্ঠ “মা-খেন মা-খেন”
=========================
শান্তিজল
অঞ্জনা সাহা
অনবদ্য শব্দেরা নিঃশব্দ কোলাহলে আত্মাকে জাগিয়ে রাখে
অনুভবের আশ্চর্য বাগানে!
অজস্র ভালো লাগা সব ভালোবাসা জমা থাকে একান্ত গোপনে।
সেখানে আলোকলতার চাষ হয়, ফুলও ফোটে
হৃৎকমলে বেজে ওঠে আনন্দভৈরবী।
তাই সে-ও মেনে নেয় লাঞ্ছিত ক্ষতের গ্লানি,
চলে যায় দূর থেকে বহু বহু দূরে, নাগালেরও বাইরে।
চোরাস্রোত টেনে নিয়ে যায় দ্বিধার পাহাড় ঠেলেÑ
যেইখানে শান্তিজল ভাসিয়ে নেয় নীল নীল ঢেউয়ের খেলায়।
এইখানে ভেসে গেছে মনস্তাপের বিষ;
পড়ে আছে অন্ধকূপে কুনোব্যাঙ এক।
মন ভেসে চলে গেছে ভৈরবীর সুরেÑ
সে কি ফিরে আসবে আর অন্ধকার শূন্য যক্ষপুরে?
========================
দ্বিতীয় মৃত্যুর গান
হোসাইন কবির
ভাবি
আমিও শতবর্ষী প্রাচীন বৃক্ষ-ফসিলসম
নির্জন প্রান্তরে
বিশুষ্ক সীমান্তে
একটি সরলরেখায় চল্লিশ বছর পর!
তখনও পাখিরা
দেবে কি শিস
বেদনার সুরে
ঘাসের ডগায়!
প্রচ- তাপদহন শেষে
পৃথিবীতে নামবে
হিমযুগ
নির্মম বিনিদ্র শোকের মাতম
নিলিমায় নীলে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে
সূর্যাস্তের সব রঙে
আলোর মিছিলে
আমাদের চারপাশে-সম্মুখে পেছনে
কেবলই আঁধার
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়
পৃথিবীর সব ঘরে
প্রজাপতি হৃদয়ে–
কেবলই কর্পূর ন্যাপথালিনের সুতীব্র ঘ্রাণ
আর, তখন দ্বিতীয় মৃত্যুর গান
গাইবে কি অচেনা পাখি ভিন গ্রহের এক !
===============================
উত্তর
সারাফ নাওয়ার
উত্তর পেয়ে গেছি
শব্দের তরুলতাবেষ্টিত বনে।
বহুদিনের পুরোনো চোখের জল
অজান্তে ঝরে গেলে
চোখ ছুঁয়ে যায় নতুন আলো!
এ-জন্মের পুরুষ তুমি
পরের জন্মে নারী হলে
আমি তখন বৃন্দাবনের কানাই।
আছি যমুনায়, আছি বাঁশি হাতে
তমালগাছের ডালে
রাধিকার পেছন-পেছন
মথুরার পথে কৃষ্ণ, ঘাটেও কানাই।
একালে আমি রাধে
মেনেছি ষোড়শ গোপিকা তোমার
তোমাকেই পরিয়ে দেবো
চন্দ্রহার, কানাইয়ের হাতে।
মনে মনে কথা হয়ে গেলো
দুটো দূর একদা নিকটের
বহুদিন পরে!
তারাতে তারাতে কথার উৎসবে
রাতের আকাশ…
==================================
বিউলফ ও চর্যাপদ
রফিকুজ্জামান রণি
বিউলফ ও চর্যাপদের মধ্যমায়
দাঁড়িয়ে আছি কয়েক হাজার বছরÑ
আমি এক কর্কটক্রান্তিরেখা!
==========================
জীবন
আশীষ সেন
প্রতিদিন গুম-খুন হয় সে অস্তাচল তীরে
আকাশের রাজরেখাও কিছুই পায় না হদিশ
নিশ্চুপে হারিয়ে যায় সায়াহ্নের নীল অন্ধকারে
ধীরে ঢাকে চারিদিক ঘন-ঘোর তমসার মেঘে
তবুও ফাটাই কাল, বয়ে চলে জীবনের ¯্রােত
হঠাৎ নৈঃশব্দ্য ভেঙে অমানিশা ভেদ করে জাগে
নবজাতকের মতো তীক্ষè কলস্বর পূর্বাচল তীরে
রক্তাক্ত ভ্রুণের মতো যে আসে, সে জীবনÑ
===========================
পরাহত পাখির আহত স্বর
মানিক বৈরাগী
ছায়া ছিলো যেটুকু মেঘের, তাও ঢেকে দিলো বাজপাখির পালক
করুণাও উধাও কোথাও, চতুর্পাশে সকরুণ অবহেলা
যাদের ক্ষমতার দম্ভে কম্পমান রাজপথ আজ, তারাও একেকটি বাজ!
তাদের তো পাইনি সেদিন! ধূর্ত শেয়ালেরা খুঁজে নিয়েছিলো সুগোপন গর্ত!
পিতৃহারা কন্যার ঘোর অন্ধকারে তারা ছিলো আত্মমগ্ন
অথচ পথের দোয়েল-কোয়েল গেয়েছিলো গান সেদিন, বুবুর ডাকে
সঁপেছে বুক রাজপথে, গ্রামে, গঞ্জে, নগরে, বন্দরে
তাঁদেরকেই আজ দেখি না কোথাও,
খুঁজে পাই না সভা সেমিনারের চেয়ারে,
মিছিল কিংবা শোভাযাত্রার সম্মুখভাগে
সেই সব স্বপ্নোজ্জ্বল চোখের উচ্ছল ডাহুক পাখি ডাকে না আর!
জয়বাংলা স্লোগানে যারা লুকিয়েছিলো ইতিহাসের বাঁশবনে
একে একে সকলে অনুপ্রবেশ করছে, কৃতঘেœর পথধরে
আমার ভয় হয়, নিশিরাতে যদি আবার ডাকে আহত স্বরে পরাহত পাখি,
এই বাজপাখি আবার উড়ে আশ্রয় নেবে বেগম পাড়ায়,
অদূর আগামীতেও কেউ রবে কি পাশে?
=====================
ধাত্রি
আজিজ কাজল
ধাত্রি-মা বেশি চালাক হলে সুস্থ বাচ্চাজন্ম
সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে-
একটি সুস্থ জলাশয় আর একটি সুস্থ মা
দুটোই পৃথিবীর জন্য বয়ে আনতে পারে
কমলাগন্ধ ভবিষ্যৎ।
হিস্ ॥॥
ঢেউ-তোড়ে ভেসে যায় পৃথিবীর সমস্ত দ্বিধা ও সন্ন্যাস
কিছু ঢেউ অতল ও অভিজাত
কিছু ঢেউ ক্ষুধা ও ওষুধ।
পৃথিবীর সমস্ত ডালপালা একটি অন্নভুক পাত্রের পাশেই
বসবাস করে।
=============================
সংসার
মুস্তফা হাবীব
প্রথম প্রেমের দিনগুলো বেশ ভালো ছিল, প্রীতিময়
নদীর জলে খেলতাম হট্টিট্টি গোল্লাছুট খেলা।
যখন খুশি ভ্রমণে বের হতাম —-
নৌকোয় চড়ে আনন্দনগর থেকে চরলক্ষ্মীপুর,
বাসে চড়ে ঢাকা থেকে সোনারগাঁও, চট্টগ্রাম- নাফনদী,
ইস্টিমারে চড়ে মংলা থেকে নবাববাড়ির দরজায়।
তখন আমার ছাত্রজীবন,
নির্ভেজাল আনন্দঘন স্বাধীনতায় ভাসছি ,
মা- বাবার দেয়া অর্থব্যয়ের জবাবদিহি ছিলো না।
অধরাকে নীল চাদর জড়িয়ে হারাতাম জোছনায়,
হারাতাম সাধুর মেলায়,মাধবপাশার দুর্গাসাগর।
যখন নব্বই দশকের শেষদিকে শিরীন শবনম ঘরে এলো,
নির্বিঘেœ বুঝে নিলো আমার আয় ব্যয়ের চৌহদ্দি
তারপর থেকে দিন দিন জবাবদিহি বাড়লো
স্মৃতি রোমন্থনের ফুসরতটুকু কেড়ে নিলো এই সংসার।
রোজ হাঁড়ি পাতিলের খুনসুটি, মনোমালিন্য,
নিত্যদ্রব্য, সৌখিন বিলাসিপণ্য ঘরে তোলার তাগিদ,
বিচিত্র দাবী – আবদার পূরণে দীর্ঘশ্বাস ঝরছে
কখনও হাতের মুঠোয় থাকছে না চা পানের পয়সাও
তবু শুনি, ঘরণী ও কন্যাদ্বয়ের অস্ফুট অপ্রিয় স্বর
‘কী করেছো তুমি আমাদের জন্য? ‘
জানলাম, এরই নাম সংসার!
বৃক্ষের সবুজ পাতাগুলো বয়সের ছোঁয়ায় হলুদাভ হবে
তবু সুখের – তৃপ্তির ঢেউয়ে দুলবে না স্বজনদের মন,
আমিও অতৃপ্তির লোনাজল পান করে হারাবো পৃথিবী।
=============================
অধিকারহীন–জনমানুষের ঘোলাটে–চোখ
সৈয়দ সাদী
অধিকারহীন-জনমানুষের ঘোলাটে-চোখ
প্রতিবাদহীনতার ভেতর গুমরে মরে
বাকরুদ্ধ-বিবেকের নির্লিপ্ত-ভাষা
ছেয়ে থাকা গুমোট এক অন্ধকার নেমে আসে
ধূসর-বিবর্ণ সময়ের ফুটপাত ধরে ।
অসহায়-ছিন্নমূল মানুষের অর্ধ-নগ্ন অবয়ব
দুঃস্বপ্নের চিত্রপট হয়ে
সকরুণ-আকুতি জানায়
মানবিক-বিপর্যয়ের নিঃস্ব-কবিতার রুদ্রস্বরে ।
ভিটে-মাটি উচ্ছেদ হয়ে গ্যাছে সেই কবে
শোষিত-মানুষ চিরকাল শোষিত থেকে গ্যাছে
উন্নয়নের চোরাবালি’তে মাথা গুঁজে
বিলুপ্ত-সাম্য ও মৈত্রী’র বাণী
নিরন্তর হাহাকার করে।
================
নিঃসঙ্গ বাউল
আ ন ম ইলিয়াছ
দু’ভাঁজ শেষে শেষ ভাঁজে আজ
ইচ্ছেগুলো আটকে আছে অষ্টপ্রহর
আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে রাখে
অষ্ট হাতে,
অক্টোপাসের গেরস্থালি।
পলাতকা মন পালায় পালায়
পালাতে চায়, তবু
ফিরতে চাই অবরুদ্ধ বর্তমানে
বারামখানার রঙিন ঝালর
হাছনজানের রূপের টানে।
দুই দুয়ারি মনের ভেতর
অবাধে কার যাওয়া আসা
লালন মনে খুঁজছি আজো,
অচিন পাখি।
স্বপ্নরাঙ্গা সুদিন খুঁজি, তবু
শুধু স্বপ্ন ভাঙে।
খড়দাহে পুড়ছে মাঠ
শস্য সমেত –
শুধু এখন বাড়ছে দহন,
কৃষক মনে।
শুধু অনাদিকালের আশায় ভাসায়
যেন বেহুলা,
লখিনদরের ভেলা, তবু
বুকের ভেতর ভাঙছে পাড়
চরজাগা সুখ অন্য নিবাস।
নগর জুড়ে উল্লাস, তবু
স্বপ্নহারা
নিস্তব্ধতায় হাঁটছি আমি, শুধু
অচিন পথে, যেন
নিঃসঙ্গ এক অচিন বাউল।
========================
উত্থান
সুফিয়া শীলা
জলপ্রপাতের স্রোত নিয়ে সূর্য ডোবে
দুচোখের আগুন কোণে,
বুনো রাজহাঁস বসে থাকে চুপচাপ অন্ধকার ভাঁজে;
স্তব্ধতায় জীবনের কোলাহল মিশে যায়
বিকলাঙ্গ সময়ের দেহে,
অবসন্ন মুমূর্ষু অমায়িক প্রেম কাঁদে অনাদরে।
মধ্যরাতের হুঁইসেল খামচে ধরে নিশীথ নিশ্বাস,
হৃদয় পোড়ার দগদগে চিত্রপট অপ্রকাশ্যেই
করে হাহাকার;
উদ্বেল শ্রাবণ খুঁজে ফেরে তার চেনা গতিপথ,
আপন দেহের তট
ফেলে আসে মেহগনি কাঠের বারান্দা;
ঘাসফুল জীবন।
অহর্নিশ ঝুলে আছে
খড়কুটোর ভেলায় পক্ষাঘাত জঠরে,
কালের দাঁড়টানা ক্ষত
গড়েছে শিকড় যাযাবর আত্মা-মাঝে;
হারিয়েছে নদী গতিপথ তার,
বিবর্ণ সবুজ পাড়;
তবুও যে জাগে চর ¤্রয়িমাণ টানে,
বিষণœ সকালে ভাঙে ঘুম শিশিরের আলো ছেনে।
=======================
মজলুম অসুখ
শাহীন মাহমুদ
গ্রীষ্মকাল মানে তো মরণ
জ্বলে যাওয়া মুখ
তৃষ্ণায় ক্লান্তিতে তাপদহন
তোমাকে দেখার সে এক
মজলুম অসুখ।
গ্রীষ্মকাল মানে তো ক্ষরণ
জল মরুভূমি মন
প্রতারক বৈশাখ গহীনে ডাকে
তোমাকে খুঁজতে যাওয়া পাপ
এক প্রেমহীন তৃষিত মরণ।
শহরে রাত্রি নামে
কুমকুম দত্ত
অন্ধকার ঘনিয়ে শহরে রাত্রি নামে-
হানাদার বুটের শব্দের মতো
বারান্দায় ঝুলে আছে শেষ পৃথিবীর মৃত চাঁদ ;
নিভে যায় আলো প্রিজমের অন্ধকার রাতে
মনে মনে একাত্তর অন্ধকার পার করছি
মাটিচাপা স্বজনের ভয় দীর্ঘশ্বাস ;
প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে অটুট
কোভিড নাইনটিন এ অক্টোপাস।
===========================
কুমারীজলে বাল্যসুখে
রোকসানা পারভীন সাথী
বয়সটা হয়তো ষোল নয়তো কুড়ি
কুমারী জলে বাল্যসুখে কুড়াবো শুধুই নুড়ি
পদ্মদিঘিতে ভাসবো দু’জনে লোবান মাখা রাতে
সোনালু জারুল পারুলের ভেজা দুটি হাতে।
খইরঙা হাঁসের ডাকাবুকো মুখে তরুণ সকালে
ফসলের ওমে রইবো বিভোর শিউলিস্নাত বিকালে
তিতির দুপুরে ধুয়ে নেব ঝুটা টুটা সব অভিমান
জাফরানি সৌরভে গাইবো দুজনে শাপলা শালুক গান।
চালতাফুলের ঘ্রাণে জেগে উঠবে ডাহুকির প্রান্তর
রূপালি আলোর মৌ মৌ সুখে কাঁপবে দুটি অন্তর
রেললাইন বেয়ে হেঁটে যাব মাুসাফির আলপথে
গোমতী ধলেশ্বরীর লাল আঁচলের দ্বৈরথে।
ময়ূরপঙ্খি নাঁয়ে নয়তো বেহুলা-লখিন্দরের ভেলায়
মাতবো দু’জনে বাল্যগাঁয়ে হা-ডু-ডু কানামাছি খেলায়
বৃষ্টিকাতর কদমগুচ্ছ নিয়ে শুধাবে নির্বাক চোখে
একজনমে নয়, জনমে জনমে চাই গো শুধুই তোকে ।
বকুল বিছানো মায়াকাননের দীপিত কমলবনে
যক্ষপ্রিয়ার বিরহ ঘুচাবো সুরভিত মৌবনে
বৃষ্টির ফোঁটায় ঝরবে কথা এলোমেলো একেবেঁকে
মরচে পরা অতীত ধুয়ে নেব দুরন্ত বৈশাখে।
ভবঘুরে শব্দ কবিতা বাঁধে ঘর সপ্তসুরে
প্রজাপতি ডানায় রঙধনু হিয়ায় ছুটবো অচিনপুরে
শ্যামলে সুনীলে ঠাঁই নেব পালতোলা এক ঘরে
সোনা রোদ্দুর ডিগবাজি খাবে বাকবাকুম সুরে।
ভাসবো জলগানে নূপুর কলতানে মধুমতির গাঙচিলে
ডুববো প্রিয়তমা তোর বাঁ গালের ওই তিলে
দেনাজর্জর এলাচিপুরের শালিখ দোয়েল ঘোরে
আদম-হাওয়ার স্রোতে ভেসে যাব গন্ধম সুবাস ভোরে।
===================================
প্রেমিকারা গাছের ডালে
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
প্রেমিকারা সাজে ডালে ডালেÑ
শুক্লা, টেরিবাজারে প্রথম দহন এবং ভুল
শাহানাজ পিতার মৃত্যুর বার্তা দিতে আসে অন্ধকারে
চম্পা আসে চম্পা যায়, ধর্ম ছেড়ে
শিউলি আমেরিকার ঝকঝকে জীবনেÑ
রীতা আছে রীতাও থাকবে জন্মজন্মান্তরে
নিশি ফুটবল, আমি গোলকিপার।
প্রেমিকারা সকলেই ছক্কাÑ
নদীর কণার ফুল ওড়ে
আঁকা পথ বাঁকা পথ ভুলে
সুগন্ধি গলির ছাদ খুলে
আমার প্রেমিকারা সাজে, সাজে ফুলে-ফুলে।
===================================
নিজেকে খুঁজে যাওয়া
য়ানসার হক
তোমার সাজানো শরীরে ডুমুরপাকা ঘ্রাণ
গলায় লটকানো মালার ভূগোল বিস্তারে
কেনো যেন ফিরে আসে রহস্যের উৎসগুহা
জোড়ামুখী নদীর এতো জল কী করে হয় !
নির্মিত আঁধারে দেখি জলের ছবক।
রক্তজট খেলে খেলে কিছু শব্দিত নূপুর
ফিরে ফিরে আসে ঠোঁটের বারুদে
যদিও জানি…..
মেতে আছো তুমি অন্য ভৈরবে
ভেলকি না গোঙানি এসব না ভেবে
নিজেকে খুঁজি মোমবাতি মিছিলে।
=================================
মাধবী
জাফর আলম
বাসন্তী বাতাস এখনো কি তোমার তেমনই প্রিয়?
যেখানেই থাকো,পাতাঝরা দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা নিও!
পলাশবনে এখন, আমাদের কথাগুলো জমা রাখি,
শিমুলের সাথে লুকোচুরি, গায়ে মহুয়ার গন্ধ মাখি।
পৃথিবী আমার নয় মাধবী , তবুও ঘুরেছি তেপান্তর,
টাকার পাথরে গড়া ছিলে তুমি, হায় টাকার ঈশ্বর !
বিপণি থেকে উপাসনালয়, টাকা আর টাকা,
টাকার কাছে ভালোবাসা বলি, দুঃখ জমা রাখা!
লালসার কাছে হার মানিনি, হইনি পটের ছবি,
পলাশ বনে, মহুয়ার সাথে অভিসারে তোমার কবি !
================================
অরণ্যে একটি রাত
মাইনুর নাহার
দিনটা ছিল বাংলা বছরের শেষ দিন
কর্ণফুলীর তীরে তাঁবু টাঙিয়ে আমরা ছিলাম ভোরের অপেক্ষায়
বিচ্ছিরি গরমে হাওয়ার স্পর্শ না পেয়ে জলকেলিতে মেতেছিলাম আমরা ক’জন মানবী
নিস্তব্ধ চারপাশ ধ্যানস্থ পাহাড়
একফালি চাঁদ নিবু নিবু, মরচে পড়েছে যেন।
তাঁবুতে ফিরে চড়ুইভাতিও হয়ে গেলো,
স্মৃতি অথবা বিস্মৃতির গল্পে আচ্ছন্ন অরণ্যে
সেই রাতে চাঁদ গেলে মেঘের আড়ালে
নিচে কিছু ধোঁয়াখোর আর তালবেতালে মানবী;
হাওয়ায় উড়ছে তাদের মাতাল চুল
এইসব বিচ্ছিন্ন মুদ্রাদোষ অন্ধকারে ঢাকা
গন্ধম ফল অমৃত নয়; রহস্যময়
নিশীথ রাত–ধোঁয়ায় ভাসছে পাহাড়ি অরণ্য।
=====================================
বিরল প্রবাহে সোনার হরিণ
আরিফা সিদ্দিকা
বিরল প্রবাহে সোনার হরিণ,
ছুটে চলে নেপথ্যের বিষাদে।
শূন্যতার নীল চোখের তারায় ,
প্রহর কাটে নিস্তব্ধ মায়ায়।
ইচ্ছেডানা শূন্য আকাশ
সময়ের চাকায় বড্ড পরিহাস
গল্পের পাখি রঙ বিকেল,
বৈশাখি হাওয়ায় শুধু ওড়ে
রঙিন ঘুড়ি একলা দুপুর
ভাসে মনপবনের নাও
রুদ্ধ ধারে অসীমের পানে নিয়তি
সোনালি উপখ্যানে মোড়া পৃথিবী
মাধবীরা আজও ঘেরে সবুজে,
বৈশাখি হাওয়ায় চুল ওড়ে লাজে।
গাছের শাখায় হৃদয় অঙ্কন
ভালোবাসা বেঁচে রয় সারাজনম
দিগন্ত জোড়া ফসলের হাতছানি,
এতোটুকু সময়ের ¯্রােতে জেগে থাক স্মৃতি।
জোয়ার ভাটায় স্বপ্ন ভাসাই
নদীর জলে,
ফুলগুলো রঙ হারিয়ে দল হারিয়ে নুয়ে পড়ে।
শুধুই ছুটে চলি চেনা অচেনার ভীড়ে,
অন্য কোন জীবনে,
অন্য এক পৃথিবীতে,,,,,।
=======================
শ্রমিকদিবস নিয়ে দালান জাহানের তিনটি কবিতা
মেহনতি হাত
দুনিয়ায় দুঃখের চেয়ে জীবন্ত
যদি কিছু থাকে
কারখানার তপ্ত আগুনে
তা লোহার মাংস থেকে আলাদা করে
পেট্রোলিয়াম দিয়ে সেলাই করা হয়।
দুনিয়ায় যদি কোন পতাকা
আকাশকে ঢেকে দেয় নিñিদ্রভাবে
এবং তা নিয়ে ঈশ্বর হাসাহাসি করে
তা হাজার কোটি শ্রমিকের মেহনতির হাত।
দুনিয়ায় যদি কোনো সঠিক যুদ্ধ থাকে
যদি কোন সঙ্গত বিপ্লবের স্তুতি লেখা হয়
ভাস্কর্যে, রেড স্কয়ারে
তা কেবলই কান্না!
শ্রমজীবী মানুষের লেলিহান কান্না।
পারমাণবিক
আশ্চর্য এই শহরে দাঁড়িয়ে
একদিন অবুঝ আকাশকে প্রশ্ন করো
কাদের শিরদাঁড়ার উপর
পাষাণ প্রাসাদগুলো দাঁড়িয়ে আছে!
কাদের খুলি ও চোখের মণি থেকে
জন্ম হয় সেই অবিনশ্বর তুলির
যার এক আঁচড়ে সমগ্র পৃথিবী রঙিন হয়ে
কাগজ কাটা ইঁদুরের পিছুপিছু ঘুরতে থাকে।
প্রশ্ন করো ডুবন্ত টাইটানিক
নিমজ্জিত অশ্রুবরফ
গুঁড়িয়ে দেওয়া টুইনটাওয়ার কতো উঁচু কক্ষে
একজন রাঁধুনির জন্মের কান্না
যুদ্ধ হয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলো আকাশে।
প্রশ্ন করো অসংখ্য প্রশ্ন থেকে
যেন একটি পারমাণবিক প্রশ্ন
তোমার পাশে দাঁড়াতে পারে।
শ্রমিকসূর্য
প্রতিটি মে’র স্তুতি খোদাই হয়ে থাকে
শ্রমখেকো কুত্তাদের প্রাসাদে-প্রাসাদে।
শ্রমিকের শোকে ফাটা আগুন রাগে
একদিন ব্রিফকেস ভর্তি দুঃখরা
ফোঁটায় ফোঁটায় গলে পড়ে মৃত্যুর ওপর।
শ্রেণিহীন রক্তঘামে প্রতিদিন সাঁতার কাটে
ঘণ্টা ও ঘামের জন্মছায়া
অন্ধ পৃথিবী চায় বুর্জোয়া অন্ধকার
রাষ্ট্রহীন রক্তমজুর
চিরদিন ঠেলে ওঠায় শ্রমিকসূর্য।
====================================
শৈবালে পিচ্ছিল দিন
আইরিন সুলতানা লিমা
এখানেই ছুটি।
তোমার ধারালো হাসি, নিঃশব্দ গান, নিষ্প্রভ যৌবন।
আবার এ পৃথিবী মুখর কামান্ধ, বৃষভ গর্জনে
বিবস্ত্র প্রহর, অশান্ত চোখ, বন্য ধূসর শহরÑ
খরশব্দ ক্ষিপ্রদিন।
জীবন শকুনি খেলছে সাপলুডু খেলা
শান্তির ছায়া করছে অবহেলা
মোহমুক্তির দুরূহ তর্কজালে
শৈবালে পিচ্ছিল শত শিলার পাহাড়ের মতো
প্রতিদিন ক্লান্তিহীন পৃথিবীর আত্মপরিক্রমা।
স্মৃতির দুয়ারে শঙ্কিত করাঘাত
সময়ের ঢেউ, ইচ্ছের স্রোত কর তুমি রঞ্জিত।