এখন সময়:রাত ১০:২২- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১০:২২- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

পুলিশের তদবির-পুলিশকে তদবির

সনতোষ বড়ুয়া : বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য এখন বিপজ্জনক অবস্থায় আছে, তাই বলা যায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্যের অবস্থা এখন রমরমা। এই ব্যবসা দেশে চলছে অনেকদিন যাবত, বলা যায় এই ব্যবসা নতুন নয়। তবে চাঙ্গা হচ্ছে দিন দিন এই যা’। এই লেনদেন যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে টাকার লেনদেন ছাড়াই এখানে দুর্নীতি হতে পারে। কারো সুপারিশে যদি কোন অযোগ্য লোকের কোন পদে নিয়োগ হয়, তাহলে সেটাও দুর্নীতি। কারণ অযোগ্য লোকের চাকরি হওয়াও দুর্নীতি। তাই সব দুর্নীতিতে আর্থিক লেনদেন নাও থাকতে পারে।

এর ব্যতিক্রমও এক সময় বা মাঝে মাঝে ছিল। এখনো দুয়েকটি আছে। আমি যখন বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করার জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হই তখন জেনারেল এরশাদের শাসন আমল। এনেকেই বলছিল ঘুষ ব্যতিত পুলিশে চাকরি সম্ভব নয়। মনে মনে ঠিক করেছিলাম পরীক্ষা দিয়েই দেখি, চাকরি হলে হবে না হলে নাই। সেদিন দেখেছিলাম পুলিশেও ঘুষ না খাওয়া লোকজন আছে। তবে এদের সংখ্যা হাতে গোনা। আমাদের সময় চট্টগ্রাম রেঞ্জে এস আই নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন রেঞ্জের ডি আই জি জনাব শহুদুল হক। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে পুলিশে আসা অফিসারদের একজন। জিয়াউর রহমান কেন তাদের পুলিশে এনেছিলেন তা’ জিয়াউর রহমানই জানেন। আমদের শারীরিক যোগ্যতা যাচাই, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা শেষে যখন চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হল তখন বুঝলামÑ বানিজ্যের কিছুই তো টের পেলাম না। দুপুরে ভাইবা নিয়ে যদি সন্ধ্যায় নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাহলে বাণিজ্যের সময়ই বা কোথায়। এর মানে এই নয় যে, এরশাদের সময়ে সব চাকুরিই বাণিজ্য ব্যতীত হয়েছে। এটা নির্ভর করেছে মূলত অফিসারের খাইছতের উপর। এর পরও দেখেছি যারা পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়নি তারা বলেছেÑ ঘুষ না দেওয়ায় তাদের চাকরি হয় নাই। যারা পরীক্ষায় পাস করে না তারা বোধহয় সব সময় একথাই বলে। কিন্তু পুলিশে লোক নিয়োগের এই ধারা পরবর্তীতে আর বজায় ছিল না। সামরিক বাহিনী থেকে আসা একজন অফিসার ঘুষ খায়নি মানে সামরিক বাহিনী থেকে আসা সব অফিসারই যে সৎ ছিলেন তা’ নয়। পরবর্তীতে চাকরি করাকালে দেখেছি ডি আই জি শহুদুল হক (পরে তিনি আই জি পি হয়েছিলেন), মতিয়া চৌধুরীর ভাই শহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন ব্যতিত বাকিরা সবাই ঘুষখোর, দুর্নীতি পরায়ণ ছিলেন। শুধু দুর্নীতি নয় অনেকে নারী লিপ্সুও ছিলেন।

 

কোন দেশে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনীতিবিদরা যদি দুর্নীতি পরায়ণ হয়, দেশের মঙ্গলের চেয়ে নিজের পারিবারিক মঙ্গল বেশি কামনা করে সেই দেশে সরকারি আমলা-কামলা সবাই দুর্নীতিপরায়ণ হয়। কারন দুর্নীতিতে সরকারি অনুমোদন লতাপাতায় লাগা হাওয়া বাতাসের মত। লোভের লতার আগা লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে। আমাদেরও আজ সেই অবস্থা। শুধু পুলিশ বিভাগে নয়, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে শিক্ষা সব খানেই দুর্নীতি ব্যতীত অল্প সংখ্যক লোকই কাজ করে। অনেককে বলতে শুনি যেসব অফিসার দুর্নীতিবাজ তারাই কাজে দক্ষ। ঘুষ না খাওয়া অফিসারেরা যেনতেন  ভাবে কাজ সারে। কারণ তারা ঘুষ খায় না বলে ভাল কাজেরও তোয়াক্কা করে না। এটাও আবার সমর্থন যোগ্য নয়। কারন ঘুষ না খাওয়া ভাল, তাই বলে নিজ কর্ম সুচারুভাবে সম্পন্ন না করাও তো দুর্নীতি। কারণ তিনি বেতন নিচ্ছেন তো দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্যই। সে যাই হোক, আজকাল দেখা যায় দুর্নীতিতে  সরকারি এক বিভাগ আরেক বিভাগের সাথে হাত হাত রেখে চেইন গড়ে তুলেছে। এই চেইন গঠনে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিরাও। দুর্নীতিতে দ্রুত অর্থ কামানোর জন্য কী ভীষণ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সেটা আজ একজন নিরীহ নাগরিকও বোঝেন। না বোঝার মত কঠিন বিষয় দুর্নীতি নয়। কিন্তু দেখবেন কোন আড্ডায় যখন দেশের দুর্নীতি নিয়ে কথা ওঠে তখন সেখানে উপস্থিত সবাই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে, বলবে তারা এসবের সাথে জড়িত নয়, এই দুর্নীতির কারনেই দেশের আজ এই হাল অবস্থা। খবর নিলে দেখা যাবে যারা এই অবৈধ লেনদেনের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদের অনেকই আবার এর সাথে জড়িত। দুয়েকজন ব্যতিক্রম অবশ্য সব খানেই আছে। একথা বলার জন্য বাস্তব এক অভিজ্ঞতার কথাই বলি। পুলিশ অফিসারেরা যখন কোন ট্রেনিং এ যায় সেখানে অনেক বন্ধুই একসাথে হয়। গল্প হয় ট্রেনিং এর ফাঁকে ফাঁকে। পুলিশ অফিসারেরা যখন গল্প করে তখন অন্য অফিসারের দুর্নীতির নানা বিষয়ে গল্প করতেও ছাড়ে না। তারা তখন এমনভাবে সেই গল্প করে তারা যেন ধোঁয়া তুলসি পাতা। একবার একজন ও সি দুঃখ করে গল্প করছিলেন যে- তার এক চাচাত ভাইকে তাদের থানার পুলিশ ৫৪ ধারায় ধরে নিয়ে গিয়ে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি কখনো ৫৪ ধারায় কাউকে গ্রেপ্তার করে টাকা নিয়ে ছাড়েননি ? এখন আপনার কেমন লাগছে দেখেন। এখন আপনার যেমন খারাপ লাগছে, আপনি যাদের থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন তাদেরও সেরকম লাগে। এই হল আমাদের অবস্থা। আমরা কেউই অপরের ঘুষ খাওয়া পছন্দ করি না কিন্তু সুযোগ পেলেই নিজে খেয়ে নিই।

 

এবার আসি তদবিরের বিষয়ে। তদবিরও আমার মনে হয় ঘুষের মত। কারন তদবিরে অনুপযুক্ত বিষয় উপযুক্ততা পায়। বাংলাদেশে সরকারি সব বিভাগেই তদবির দুর্নীতি আছে। আমি আমার পুলিশ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আজ পুলিশের তদবির এবং পুলিশকে তদবিরের বিষয়ে আলোকপাত করব।

 

পুলিশ কখন কোথায় তদবির করে? মনে করুন- পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগ হচ্ছে। এই কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য লোক বাছাই করার দায়িত্ব জেলার পুলিশ সুপারের। তিনি আবেদনকারীদের শারীরিক যোগ্যতা যাচাইয়ের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে যোগ্যদের বাছাই করে। এখন কোন জেলায় যদি ৩০ জন কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য আবেদনকারীদের বাছাই পরীক্ষা শুরু হলে সেখানে যদি জেলার মন্ত্রী বা এম পি ১০০ জনের এক তালিকা এস পি কে ধরিয়ে দেয় তাহলে এস পি’র অবস্থা কি দাঁড়াবে? এমতাবস্থায় অনেক সৎ ভাল পুলিশ সুপারকে অসহায় বোধ করতে দেখেছি। ঘাড় তেরা পুলিশ অফিসার না হলে এসব তদবির ঠেকানো সম্ভব নয়। আবার ঘাড় তেরা স্বভাব নিয়ে জেলায় চাকরি করাও সম্ভব নয়। আমাদের দেশের নেতারা নত শিরের অফিসারদের পছন্দ করে বেশি। সবচে’ বেশি পছন্দ করে নিজ নিজ দলের প্রতি অনুগত অফিসারদের। এখানে একটা বিষয় আমি কখনই বুঝতে পারিনি, সেটা হল পুলিশে লোক নিয়োগের ব্যাপারে শারীরিক যোগ্যতাই যেখানে মূল বিচার্য, সেখানে এলাকার মন্ত্রী বা এম পি কি করে বুঝবেন কাকে নিয়োগ করা দরকার? কিন্তু সুপারিশ করে পাঠিয়েই দিচ্ছেন তালিকা। এ ধরনের লোকেরা আবার আইন প্রণয়নও করেন। এই তদবিরের বিষয়ে এক  বাস্তব ঘটনা মনে পরে গেল। আমি তখন রাঙ্গামাটি জেলায় ও সি ডিবি হিসেবে চাকরি করছি। পুলিশ কনস্টেবলদের অফিসার পদে পদোন্নতির পরীক্ষার হলে ডিউটি করছিলাম। এক সময় দেখলাম এস পি মহোদয় এক কনস্টেবলের পাশে বসে আছেন। পরীক্ষা শেষে জানালেন সেই কনস্টেবলের জন্য তদবির এসেছিল তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য। তাই তার পাশে বসে তিনি খেয়াল রাখছিলেন। ফলে সেই কনস্টেবল কিছু লিখতে পারে নাই। ফলাফল শূন্য। এস পি সাহেব ইচ্ছে করেই একাজ করেছেন। তিনি তদবির পছন্দ করতেন না। আমি সেই এস পি কে পছন্দ করতাম তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের জন্য। অবশ্য সেই দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব নিয়ে তিনি কোন সমতল জেলায় চাকরি করতে পারেননি। কারন সমতল জেলায় দৃঢ়চেতা নেতা বেশি। আর আমরা যারা সেই লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার দায়িত্বে ছিলাম তিনি আমাদের সবাইকে খাতা সহ অফিসের একটা কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলেছিলেন- খাতা দেখা শেষ করে তারপর বের হতে হবে। তিনি আমাদের জন্য  খাওয়া-দাওয়া সবই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবে যদি সব জেলায় পরীক্ষা হত তাহলে আমাদের গরিব কনস্টেবলরা অন্তত লাখ লাখ টাকা খরচ করা থেকে বেঁচে যেত। একথাটা আমাদের সিনিয়র অফিসারদের জানা দরকার যে একজন কনস্টেবল যদি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে পদোন্নতি নেয়, পোস্টিং নেয় তাহলে তারা তো সেই টাকা উসুল করে নেয়ার চেষ্টায় থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে নি¤œ পদের অফিসারদের দুনীতিতে ঠেলে দিচ্ছে কারা? উচ্চ পদস্থ ওয়াইট কালার ঘুষখোর অফিসারেরাই। অথচ কোন নি¤œ পদস্থ অফিসার যখন ঘুষ বাণিজ্যে ধরা খায় দেখা যায় সেই ঘুষখোর কোন সিনিয়র অফিসারই তার নি¤œ পদস্থ অফিসারকে বিভাগীয় সাজা দিচ্ছে। এতো গেল পুলিশে নিয়োগ এবং পদোন্নতি পরীক্ষার তদ্বিরের বিষয়। আছে পোস্টিং বিষয়েও তদবির। পুলিশ তদবির করে ভাল জেলা ও ষ্টেশনে পোস্টিং পাওয়ার জন্য। শুধু পুলিশ কেন ভাল পোস্টিং এর তদবির সবাই করে। দেখবেন সরকারের সমর্থক শিক্ষকেরা শহরের কলেজ ছেড়ে মফস্বলের কোন কলেজেই যায় না, একইভাবে চিকিৎসকরাও শহরের বাহিরে যেতে চান না। এই না যাওয়ার জন্য তারা সরকারি দলের নেতা পাতি নেতাদের পেছনে পেছনে ঘোরে। কিন্তু গলাবাজি করার সময় ভাল লোক সেজে গলাবাজি করতেই থাকে। আজকাল মনে হয় সরকারি লবি মেনটেইন করলেই হয় না, সাথে নগদ লেনদেনও  করতে হয়। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক সংশ্লিষ্ট এলাকার মন্ত্রী বা এম পি’র মতামত ব্যতিত এখন আর থানায় ও সি, উপজেলায় উপজেলা কর্মকর্তা, জেলায় এস পি এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয় না। এটা গতবার বি এন পি চালু করেছিল, বজায় রেখেছে আওয়ামী লীগও। কারন এই মতামত এমনি পাওয়া যায় না বা দেয় না । এই মতামতের জন্য ক্যাশ লেনদেন করতে হয়। সুতারাং লাভজনক বিষয়ে সব নেতারাই এক কাতারে। যেমন তারা এক কাতারে শুল্ক বিহীন গাড়ি আমদানিতে। দেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের নেতারা একমত না হলেও নিজেদের ধান্ধা এবং লাভের বেলায় তারা সব সময় এক থাকে। সূক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় একটা সারকেলিক অর্ডারে চলছে এই ঘুষ বানিজ্য। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঘুষ দিয়ে ভাল পোস্টিং আদায় করে নিচ্ছে, ঘুষ আদায় করছে, ভাগ দিচ্ছে আবার পোস্টিং নিচ্ছে। এই দেয়া নেয়ায় সরকারি আমলা, কর্মচারীদের সাথে হাতে হাত রেখে সুশৃঙ্খল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের রাজনীতিবিদরা। দেখতে বাহ কি চমৎকার!!

 

পুলিশের কাছে তদবির

যে পুলিশ অফিসার রাজনৈতিক তদবিরে পোস্টিং নেয়, তাকে শুনে চলতে হয় রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরও। না শুনলে নেতা বলবে- আপনাকে আমি আমার এলাকায় পোস্টিং করে এনেছি আমার কথামত কাজ করার জন্য। কথামত কাজ না করলেই বদলী। মনে প্রশ্ন আসতে পারে অকালিন বদলী কিভাবে হবে? একেবারেই সোজা। নেতা যদি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করে যে- এই অফিসার দিয়ে দলের আর চলবে না, এই অফিসার সব সময় দলের বিপক্ষে কাজ করে! আর কি ? সাথে সাথেই বদলী। একবার মন্ত্রণালয়ের কর্তার মনে বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানের মনে প্রশ্ন আসে না যে যাকে ক’দিন আগেই এলাকার নেতা তদবির করে নিয়ে গেল, সেই একই অফিসার আবার ক্ষতির কারন হয় কিভাবে? তাহলে কি রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারীকে সরকারি দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সরকারি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে?

তাছাড়া জেলা-উপজেলায় কর্মরত অফিসারদের চোখকান খোলা রেখেই চাকরি করতে হয়। কারণ এলাকায় সরকারি দলও নানা দলে উপদলে বিভক্ত। সেকারনে অফিসারকে খেয়াল রেখেই তদবির বাস্তবায়ন করতে হয়। তদবির অনুযায়ী কাজ করার আগে দেখতে হবে কোন উপদল শক্তিশালী। না হলে ঘোর বিপদ। এসব খেয়াল করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতা পাতি নেতারাও। তারাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এলাকায় পুলিশের সাথে দাপট দেখাতে চেষ্টা করে। অফিসারেরা সেইসব নেতাদের বাড় ভাই ডেকে টেকে কোনভাবে চাকরি বাঁচিয়ে ইনকামের পথ পরিষ্কার রাখে। যদি কোন অফিসার পাতিদের কথা না শুনতে চান, তাহলে তাকে নির্যাতিতও হতে হয়। বেশীদিনের কথা নয়। ২০১০ সালে আমি কচুয়া থানায় কর্মরত ছিলাম। একদিন সন্ধ্যায় কলেজের সরকারি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি সাথে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এ সি- ল্যান্ডের অফিসে এসে অফিসারের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে যায় কারন তিনি সরকারি ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। সেই স্থাপনাগুলো ছিল সরকারি দলের লোকজনের অথবা সরকারি দলের লোকজন টাকা নিয়ে সরকারি ভুমিতে স্থাপনা তৈরি করিয়েছিল। বিচার আর কি? অফিসারকেই বদলী হতে হয়। কারন দলের নেতা কর্মী দরকার। অফিসার তো নেতাদের বাসাতেই ঘুর ঘুর করছে ডজন ডজন। মনে হছে একারনেই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন অফিসারের সংখ্যা সব বিভাগেই কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে পুলিশেও। ডোরা সাপ মার্কা অফিসারে ভরে যাচ্ছে দেশ। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, মর্যাদাবান অফিসার এখন খুবই কম, যাদের সামনে বেআইনি তদবিরে নেতা ভয় পাবে। এই পরিণতির জন্য যেমন দায়ী আমাদের নীতিজ্ঞানহীন রাজনীতি, তেমনি দায়ী সরকারি অফিসার, পুলিশ অফিসারের নিন্ম মানসিকতা।

 

এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, যারা ক্ষমতায় থাকে না তারা উচ্চ স্বরে বলে সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা যেন রাজনীতির বাইরে থাকে। কারন রাজনীতি তাদের কাজ নয়। কিন্তু ওই একই দল যখন আবার ক্ষমতায় আসে নেতারা তখন সেকথা বেমালুম ভুলে যায়। তখন তারা চায় সরকারি কর্মকর্তা-করমচারি, পুলিশ সবাই যেন তাদের কথা মত চলে, প্রচলিত আইন অনুযায়ী নয়। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম- তুমি করলে খারাপ, আমি করলে ভাল।

 

সনতোষ বড়ুয়া : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে