এখন সময়:রাত ১০:১৯- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১০:১৯- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

ফজল আলির সাতকাহন

আলী আসকর:

কদিন ধরে মেজাজটা ভালো যাচ্ছে না ফজল আলির। এখন আর আগের মতো বাড়ি ফেরে না কাঁটায় কাঁটায়। তার সংসারে সদস্য বলতে মাত্র তিনজন। ষাটোর্ধ বুড়ি-মা আসমা খাতুন ছাড়া আছে একুশ বছরের বউ রাহেলা আক্তার। প্রত্যেক রাতে বউ-শাশুড়ি হাঁ করে তার জন্য অপেক্ষা করে। দেরির কারণ জিগ্যেস করা যায় না। মুখ ফসকে জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেয় না ফজল আলি, জবাব এলেও তাতে থাকে খ্যানখ্যানে স্বরের ত্যক্তবিরক্ত ভাব। তাই তারা উভয়ে চুপচাপ থেকে কপালের লিখন মেনে নিয়ে সংসারে আর ক্যাচালের স্তূপ করতে চায় না।

ফজল আলি গত বছর নিলামে ঘাট পেয়েছিল। এ বছর ঘাটের নিলাম উঠেছে দ্বিগুণ। এবার ঘাট পেয়েছে কলিম উদ্দিন। তার তিন ছেলেই থাকে সৌদি আরব। ওখানে ব্যবসা করে কাড়িকাড়ি টাকা পাঠাচ্ছে দেশে।

 

এক বছরে কলিম উদ্দিন জমি কিনেছে সাত বিঘারও বেশি। এসব খবরাখবর এলাকার গ্রামবাসীর মুখে মুখে চাউর হয়ে গেছে। কেউ কেউ এসব বিষয় ফজল আলির সাথেও শেয়ার করে। এতে ফজল আলির ভেতরের পুরো জায়গাটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কিছু বলতেও পারে না আবার হজমও করতে পারে না। কলিম উদ্দিন দ্বিগুণ টাকায় ঘাট নিলামে নিয়ে কেন লোকজনের ওপর ভাড়া বাড়ায়নি সেটাও তার কাছে একসময় ক্লিয়ার হয়ে যায়। কলিম উদ্দিন হিসাব নিকাশ করে ধীরে ধীরে তার লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছে। মেম্বার হওয়ার পথ পরিষ্কার করছে। জীবন থাকতে ফজল আলি তাকে কেয়ামতের আগেও সফল হতে দেবে না।

সন্ধার শুরু থেকে আজ আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে। গুমোট ঝিম ধরে আছে চারপাশ। প্রকৃতি এমন চেহারায় ঝিঁঝি পোকারাও মুখ না খুলে চুপসে আছে। রাহেলা আক্তার তার শাশুড়িকে নিয়ে খাটের একপাশে চুপ হয়ে বসে থাকে। রাহেলার কষ্ট শাশুড়িও মনে মনে অনুভব করে। একদিন সেও রাহেলার মতো তরুণী ছিল। এমন সময় মেয়েরা কিসের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সেটাও সে কম বোঝে না। কিন্তু করার কিছুই নেই, তার কাছে এমন কোনো আলাদীনের চেরাগ নেই যে সে নিমিষেই তার একটা বিহিত করে ফেলতে পারে। ফজলের আব্বা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন আসমা খাতুন সংসারে বারুদের মতো ছিল, তবে বয়সের কারণে সে এখন নুইয়ে গেছে, ডাঙায় তোলা মাছের মতো হয়ে গেছে।

ফজল আলি যখন ঘরে ফেরে তখন মধ্যরাত। রাহেলা খাট থেকে নেমে ভেতরে চলে গেল। আসমা খাতুনের চেহারা যেন হঠাৎ রুদ্রমূর্তি ধারণ করল। ও খাট থেকে এক পা নামিয়ে বলল, ‘এখন ক’টা বাজে বলতে পারস?’

‘কতবার কইছি আমার জন্য জাগন থাইকা লাভ নাই। আমার কাজ-কাম বাড়তাছে। ব্যবসা বাড়তাছে। সামনে আরও লেইটে লেইটে আসতে পারি। ভাত দুইড়া বাইড়া রাইখা তোমরা ঘুমাইয়া যাইও। এইডাও না পারলে কোনো অসুবিধা নাই। আমি দোকান থাইকা খাইয়া আমু।’

টেবিলে ভাত নিয়ে এল রাহেলা আক্তার। ভাত ঠান্ডা হয়ে গেলেও তরকারিটা এখনো গরম আছে। দশটার দিকে একবার গরম দিয়েছিল। তরকারি কতক্ষণ আর চুলোয় রাখা যায়। পানি শুকাতে শুকাতে শেষতক আর কিছুই থাকে না।

হাত-মুখ না ধুয়ে খেতে বসে যায় ফজল আলি। রাহেলা তেরচা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দিন দিন লোকটা মারাত্মক খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। সারাদিনে দুই অক্ষরও মিষ্টি কথা নামে না মুখ থেকে। বিয়ের প্রথম দিকে এই তামাটে মুখ থেকে কতোই-না মজার মজার কথা বেরুতো। তার জীবনের অনেক রসালো গল্পও শুনিয়েছে তাকে। কিন্তু দু বছর না যেতেই তার স্বভাবে এমন পরিবর্তন আসবে রাহেলা কখনো ভাবতে পারেনি।

ভোরে উঠে রাহেলা ঘর-উঠোন ঝাড় দিয়ে রুটি বানাতে লেগে যায়। ছয়টা রুটি বানাতে তার বেশি সময় লাগে না। চা-টা করতে অবশ্য একটু বেশি সময় লাগে। রঙটাকে বেশিক্ষণ চুলোয় রেখে ফুটাতে হয়, রঙ বেশি ফুটালে চায়ের রঙ-ঘ্রাণ দুটোই ফাটাফাটি হয়।

চা খেতে খেতে রাহেলা বলে, ‘আজ বিকেলে কি আপনার ঘণ্টা দুয়েক সময় হবে?’

‘বাপের বাড়ি যাইতা চাও নাকি?’

‘না।’

‘সিনেমা দেখতে যাইবা?’

‘না।’

‘তাইলে জলদি কইয়া ফেলো কোথায় যাইবা।’

‘চৌমুহনিতে এক মহিলা ডাক্তার বসে শুনেছি। ঢাকার পাস করা ডাক্তার। এখানকার সব মহিলা ওই ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়। দুই বছর পার হয়ে গেল। আর কতোদিন বসে থাকব, বলুন?’

‘তুমি যাও। আমি যামু না।’

‘সমস্যাটা তো আপনারও হতে পারে, তাই না? একসাথে দুজনকে দেখাবো। চিকিৎসা করাবো।’

‘তুমি কি আমারে হিজড়া মনে করতাছো?’ তেতে ওঠে ফজল বলে। ‘লেখাপড়া তো অনেক করছ। আমার যা দেওয়ার তো আমি দিই। তোমার ওখানে গলদ থাকলে আমি কী করুম, কও?’

এ কথা শোনার পর রাহেলার বুকটা নড়েচড়ে ওঠে। হঠাৎ মুখটা অন্ধকারে নিভে যায়। স্বামীর কথাটুকু সে একেবারে উড়িয়েও দেয় না। কাজের সময় স্বামীর পুরুষত্ব বরাবরই সে টের পায়। বুঝতে পারে নদীর ¯্রােত ঠিকই চলছে। তাহলে কি রাহেলা বাকি জীবনও এমন শুকনো-খরায় দিন কাটাবে? নষ্ট জরায়ুর বোঝা নিয়ে ধুকে ধুকে পার করবে বাকি জীবন? ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বিষয়টা তার মাথায় আর কাজ করে না। স্বামীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সে ঝিম মেরে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।

ঘাটের দিকে তাকাতে ফজল আলির বিরাট কষ্ট হয়। গত বছর এই ঘাটেরই সে রাজা ছিল। ঘাটের মালিক ছিল বলে আশপাশের লোকজন তাকে সমীহও করত বেশ। চা-পানি খাওয়ানোর জন্য টানাটানি করত। অন্যদের মতো সে এখন ¯্রফে কয়েকটি নৌকার মালিক। তার আরও অনেকগুলো নৌকার দরকার। আগামী বছর সে কিছুতেই কলিম উদ্দিনকে নিলামে হাত দিতে দেবে না। যা কিছু করার লাগে পাই পাই করে সবকিছু করবে।

বিকেলের দিকে ফজল আলি রোজ বজলুর চায়ের দোকানের দিকে যায়। বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বজলুর দোকানে ফাটাফাটি বড় আড্ডা চলে। রাষ্ট্র থেকে গ্রামের আনাচে কানাচের রাজনীতির ধোয়ামোছা হয়। আগামী চেয়ারম্যান-মেম্বারের নির্বাচনের কথাও উঠানামা হয়। নির্বাচনের প্রার্থীদের নামও শোনা যায় কারও কারও মুখে। কারও কারও নামের সাথে ফজল আলির নামও নাকি বাতাসে উড়ে। কান কথা কানে এলে ফজল আলি নিজেকে উচ্চমার্গের ভাবতে শুরু করে। বাসর রাতের চেয়েও এ খবরগুলো বড়ই উপাদেয় বলে মনে হয় তার কাছে।

নিজাম উদ্দিন মুখ মলিন করে দোকানের একপাশে বসে আছে। তার দুইটা নৌকা সকাল বিকাল নদীতে ভেসে বেড়ায়। এক বছর আগে এই নৌকা দুটো সে নদীতে নামিয়েছিল। কেউ কেউ বলে এই নৌকার পয়সা নাকি ভূতেরা যুগিয়েছে তাকে। একজন রাজমিস্ত্রির যোগালি থেকে এতো টাকার মালিক কেবল ভূতেরাই করে দিতে পারে।

নিজাম উদ্দিন চোখের ইশারায় ফজল আলিকে বাইরে নিয়ে যায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে তার সমস্যার কথা বলে। তার একটি নৌকা বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে। দামও সে একসময় প্রকাশ্য করে। পাঁচ লাখ দাম দেয়। মেয়ের বিয়েটা আগামী মাসে সেরে ফেলতে হবে। ইতালি থাকে ছেলে। পয়সা কড়িও আছে ভালো। নৌকা কিনার ইচ্ছে থাকলে তাকে কালকের মধ্যে ফাইনাল জানাতে হবে।

মুহূর্তে চিন্তায় ডুবে যায় ফজল আলি। পাঁচ লাখ তার কাছে এখন ক্যাশ নেই। ব্যাংকে তিন লাখ কত যেন আছে। আরও দুই লাখের জন্য তার মাথাটা উথালপাতাল করতে থাকে। কিন্তু নিজাম উদ্দিনকেও সে হ্যাঁ-না জাতীয় কিছুই বলতে পারে না।

আজ এগারোটার আগেই ফজল আলি ঘরে এসে গেছে। রাহেলা ও শাশুড়ির মুখে জমে থাকা অন্ধকারে দ্রুত আলো নেমে আসে। রাহেলার হাত দুটো প্রজাপতি হয়ে ভাত-তরকারি রেডি করে ফেলে। আজ সারারাত সে স্বামীকে বুকের কাছে পাবে। কতোদিন ধরে রাহেলা স্বামীর বুকে গদগদ হয় না!

বিছানাটা ঝটপট করে ফেলে রাহেলা। মশারিটা টাঙিয়ে চারদিকে ঠিকঠাক আছে কিনা বারবার দেখে নেয়। বজ্জাতের মশা একবার ঢুকে পড়লেই সব্বোনাশ হয়ে যায় ঘুমের। পেট না ভরা পর্যন্ত মশার ক্লান্তি শেষ রাতেও শেষ হয় না।

ধীরে ধীরে রাহেলার কাছ ঘেঁষতে থাকে ফজল আলি। খোলা পিঠে হাত রাখে আলতো করে। দুটো আঙুল ছুঁয়ে দেয় ওর নরম ঠোঁটে। ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপতে থাকে। ফজল আলি আরও নিবিড় হয় রাহেলার বুকের সাথে। বাসর রাতের মতো ঠোঁটজোড়া মুখে টেনে নেয়। খলবলিয়ে ওঠে রাহেলা। এমন উষ্ণ মুহূর্তে ফজল আলি চুপে চুপে বলে, ‘কাল দুজনে মিইলা ডাক্তারের কাছে যামু বউ।’

‘সত্যি বলছেন?’ উচ্ছ্বসিত হয় রাহেলা।

‘রাতের বেলায় মাইনষে মিথ্যা কথা বলে না বউ। মিথ্যা বলা বড় পাপ।’

‘ডাক্তার যদি বলে আমাদের কোনো ছেলেপেলে হবে না, তাহলে?’

‘তারও একটা নতুন রাস্তা বাইর কইরা লমু।’

‘আপনি কি আরেকটা বিয়ে করবেন?’

‘ধুর পাগলি, এমন সুন্দরী বউ রাইখা কি কেউ বিয়ার কথা ভাবে?’

‘তাহলে নতুন রাস্তাটা কী?’

‘একটা নবজাতক বাচ্চা কিন্না লইয়া আমু। মেয়ে-বাচ্চা হইলে ভালা অইবো। লেখাপড়া শিখাইয়া ডাক্তার বানামু। বুড়া বয়সেও তোমারে আর অন্য ডাক্তারের কাছে যাইতে অইবো না।’

শুনতে ভালো লাগে রাহেলার। এমন মিষ্টি কথার বান আগে কখনো স্বামীর কাছ থেকে শোনেনি। হঠাৎ আরও বেসামাল হয়ে যায় রাহেলা। দুজনের মাঝখানে আজ এক কণা জায়গাও খালি রাখতে চায় না সে। স্বামীর উদোম পিঠটা দুই হাতের

আঙুল দিয়ে বারবার খুঁটতে থাকে। ফজলও বেশ আরাম পেয়ে চুপ হয়ে থাকে।

‘বউ।’

‘বলেন।’

‘নিজাম উদ্দিনের মেয়ের বিয়ে আগামী মাসে। বিয়ের কেনাকাটার জন্য তার কাছে পরিমাণমতো ট্যাহা-পয়সা নাই। তাই দিশা না পাইয়া কথাডা আমারে কইল।’

‘কী বলল নিজাম ভাইয়ে?’

‘একটা নৌকা বিক্রি করে দেওয়ার কথা কইল। দাম দিছে পাঁচ লাখ ট্যাহা। আমার কাছে এতো ট্যাহা নাই। আছে সব মিলাইয়া তিন লাখের মতো। তার নৌকাটা নতুন। দুই ইঞ্জিনের নতুন নৌকা। চকচকে বোডি। তারে আরো কইছি আমারে সময় দেও, তোর ভাবির লগে আলাপ কইরা দেহি।’

‘ঠিক আছে, দুই লাখ টাকা আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি, তবে…’

‘তবে কী?’ প্রশ্ন করে রাহেলাকে আরও বুকে টেনে নেয় ফজল আলি।

‘কিছু শর্ত মানতে হবে আমার।’

‘কেমুন শর্ত বউ?’

‘আজকের মতো প্রতিদিন এভাবে আমাকে আদর করতে হবে। ঠোঁটে-চোখে আঙুল বুলাতে হবে। বুকে বুক লাগিয়ে সারারাত জড়িয়ে রাখতে হবে। আমি যা বলি তা-ই করতে হবে। কী, পারবেন তো?’

‘ওমা, এইডা এমন কী শর্ত, এইসব তো পানির মতো শর্ত। তুমি দেখবা কাল থাইকা আমি সত্যি তোমার গোলাম হইয়া যামু, কোকিল পাখি হইয়া যামু,’ এই বলে ফজল তার স্বপ্নরাজ্যে ডুবে যেতে থাকে। একসময় তার মন সোনালি স্বপ্ন নিয়ে ঘাটের কাছেও চলে যায়। তার সাতটি নৌকার সাথে আরেকটি নৌকা সে দেখতে পায়। সার বেঁধে আটটি নৌকাই জলতরঙ্গ ভেঙে ভেঙে সামনে এগুতে থাকে। এমন দৃশ্য দেখার জন্য সে এতক্ষণ বউয়ের সাথে কতোই-না অভিনয় করে গেল।

 

আলী আসকর, গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে