এখন সময়:রাত ৯:২৭- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৯:২৭- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

বাংলাদেশের মেলা-পার্বণ

শিমুল বড়ুয়া: মেলা মানে কেনাবেচার হাট, মেলা মানে হাসি-আনন্দ-হৈহুল্লোড়। মেলা মানে উৎসব, মেলা মানে সকল  প্রকার আলস্য-জড়তার সংকীর্ণতার হীনমন্যতার বন্ধন ছিন্ন করে সামাজিক মেলা-মেশার অবাধ বিচরণ। তাই তো কবিকণ্ঠেও ধ্বনিত হয়Ñ ‘আকাশে আবীর মাখা এই সাঁঝ বেলাতে/ মনটা হারিয়ে যেতে চায় আজ মেলাতে। / বাজে বাঁশি বাজে ঢোল / আনন্দ কলরোল / হৃদয় মাতিয়া উঠে অপরূপ খেলাতে।’ (মেলাতে / মহাদেব সাহা।) সাধারণত বছরান্তে বিশেষ কোন স্থানে-দিনে-দিনগুলোতে-উপলক্ষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা মিলিত আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যের কেনা-বেচার নাম মেলা। পৃথিবীর সকল দেশের এক আকর্ষণীয় আয়োজন মেলা। কোথায়, কখন, কী উপলক্ষে প্রথম মেলা বসে তার কোন সঠিক ইতিহাস নেই। তবে বলা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর পর থেকে মেলার যাত্রা। মেলায় আমোদ-ফূর্তির টান যেমন আছে তেমনি সমানভাবে আছে বেসাতির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন। মেলা বেচা-কেনার সমাবেশ হলেও মেলার আনন্দ উপভোগের উপকরণের কারণে মেলা উৎসবে পরিণত হয়। মেলা লোকসংস্কৃতির বাহনও বটে। প্রাচীনকাল থেকে মেলা ধর্মাশ্রয়ী, বর্তমানে তার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য স্মরণে বা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেলা সংগঠিত হয়।

সম্রাট অশোকের (আনু. ২৭৩-২৩২) খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) কলিঙ্গ অনুশাসনে ভাদু ও তুষু নামে দুইটি প্রাচীন মেলার উল্লেখ আছে। হিমালয়ের পাদদেশে হিন্দুদের তীর্থস্থান হরিদ্বার। সেখানে মেলা বসে। মেলাবিদদের মতে, হাজার দুয়েক বছর আগে এই মেলা শুরু। পঞ্চম শতাব্দীর চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকাহিনী মতে তাতর দেশের অন্তর্গত খোটান নগরে বুদ্ধ (মূর্তি) যাত্রা উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী মেলা বসত। ফ্রান্সের এক ভদ্রলোক সিডোনিয়ুস অ্যাপোলিনারিস-এর পঞ্চম শতকের লেখা থেকে জানা যায়, তাঁর দেশে সাঁপান (Champagne)  আর ব্রি (Brie)-তে বেশ বড়ো মেলা বসতো। ইউরোপে নিয়মিত মেলা শুরু হয় খ্রিস্টীয় যুগের শুরুর দিকে বড়ো বড়ো  উৎসবকে কেন্দ্র করে। আমেরিকাতে নিয়মিত মেলা শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, এলকানা ওয়াটসন (Elcanhwatson) নামের এক ভদ্রলোকের উদ্যোগে ১৮১০ সালে প্রথম নিয়মিত ও স্থায়ী মেলা বসে। প্রাচীনকালে মক্কার কাবা কেন্দ্রিক এক বড় মেলা ছিল, যেই মেলা সমস্ত আরব দেশের প্রিয় ছিল যা হযরত মুহাম্মদের ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগে আরম্ভ হয়েছিল। এগুলো হলো প্রাচীন মেলা, এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপলক্ষে মেলা সংগঠিত হচ্ছে। মেলা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন উপলক্ষগামী, উপলক্ষহীন, নিয়মিত, অনিয়মিত, অনেক পণ্যের, এক পণ্যের, উন্মুক্ত, নিয়ন্ত্রিত, স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি। আর প্রত্যেকটি মেলা সাধারণত বছরে একবার বসে, তার স্থিতিকাল এক দিন থেকে আরম্ভ করে এক মাস পর্যন্ত হতে পারে। আবার মেলার পরিসর হতে পারে ছোট, বড় বা মাঝারি। দেশ, অঞ্চল, এলাকা ও উদ্দেশ্যভেদে মেলার কেনা-বেচার পণ্য ভিন্ন ভিন্ন। অনুরূপভাবে আনন্দ-বিনোদনের উপকরণও ভিন্ন ভিন্ন।

বাংলাদেশের সুপ্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান, পালাপার্বণ, উৎসব, লৌকিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, কৃতি পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বছরের বিভিন্ন বিশেষ দিন-তিথি-পূর্ণিমাতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বারো মাসে তোরো পার্বণ, অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি পার্বণকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশে বৎসরের প্রতিটা মাসে গ্রামের মেলা বসে। স্বাদেশিকতাবোধের প্রেরণা থেকেও বাংলাদেশে মেলার প্রবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ধর্মীয় আবরণের বাইরে বৈশাখী ও পৌষ মেলা ছাড়াও বিজয় মেলার আয়োজন শহর থেকে আরম্ভ করে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই মেলাগুলোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে বাংলার লোকায়ত জীবন বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ধারা। বাংলাদেশে সারা বছরব্যাপী হাজার অধিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ তিন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উৎসব উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি মেলা বসলেও এইসব মেলাতে সকল সম্প্রদায়ের আগমনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটে। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ এইসব মেলাতে খুঁজে পায় এক অনাবিল আনন্দ, গড়ে উঠে সর্বজনীনবোধ-ভ্রাতৃত্ববোধ। আবার তিন-চতুর্থাংশ মেলা গ্রামকেন্দ্রিক হওয়ার কারণে মেলা গ্রামীণ জনগণের বেচা-কেনার ও আনন্দ বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ। গ্রামীণ মেলাগুলোতে গ্রাম বাংলার আবহমানকালের অসাম্প্রদায়িক উদারচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, গ্রামের মানুষ ভেতর বাহিরের সংকীর্ণতার সকল অর্গল ভেঙ্গে নিজেকে বাইরে উন্মুক্ত করে, বাহিরকে ভিতরে আহ্বান করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাণীরূপ দেন এভাবে:

“আমাদের দেশ প্রধানত পল্লীবাসী। এ পল্লী মাঝে মাঝে যখন আপনার বাড়ির মধ্যে বাহিরের বৃহৎ জগতের রক্তচলাচল অনুভব করিবার জন্য উৎসুক হইয়া উঠে, তখন মেলাই তাহার প্রধান উপায়। এই মেলাই আমাদের দেশে বাহিরকে ঘরের মধ্যে আহ্বান। এই উৎসবে পল্লী আপনার সমস্ত সংকীর্ণতা বিস্মৃত হয়Ñ তাহার হৃদয় খুলিয়া দান করিবার ও গ্রহণ করিবার এ প্রধান উপলক্ষ্য। যেমন আকাশের জলে জলাশয় পূর্ণ করিবার সময় বর্ষাগম, তেমনি বিশ্বের ভারে পল্লীর হৃদয়কে ভরিয়া দিবার উপযুক্ত অবসর মেলা।”

এক সময় আমাদের দেশ ছিল মেলাময়, এখন বিভিন্ন কারণে স্থিমিত হলেও বাংলার আবহমানকালের মেলা ঐতিহ্য এখনও বিলুপ্ত হয়নি। এখনো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব-পার্বণ-লোকাচারকে ঘিরে গ্রাম-গঞ্জে মেলা বসে। বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে যে-সব মেলা বসে তার সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে বর্তমানে গ্রামে যে-সব মেলা বসে তার বেশির ভাগই সরাসরি ধর্মীয় উৎসবকে উপলক্ষ করে বা ধর্মাশ্রিত লৌকিক আচার-আচরণকে উপলক্ষ করে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার এক জরিপ (১৯৮৩) মোতাবেক মোট মেলার সংখ্যা ১০০৫টি, তার মধ্যে

শতকরা নব্বই ভাগ মেলা হল গ্রামীণ মেলা। বেশিরভাগ গ্রামীণমেলার মূল উৎস ধর্মীয় অনুষঙ্গ হলেও মেলাগুলো সর্বজনীন ও ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্য সমুজ্জ্বল।

হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, কালী পূজা, বারনীর ¯œানযাত্রা, শিবরাত্রি বা শিব চতুর্দশী এবং হিন্দু সাধু-সন্তদের আবির্ভাব ও তিরোভাব দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রায় ৭৩টি মেলা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও বর্ণাঢ্য উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা। ইতিহাসবিদ প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের মতেÑ ‘দুর্গাপূজা কখন শুরু হয়েছে সে বিষয়ে গবেষক ও প-িত ব্যক্তিবর্গ একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। আকবরের চোপদার রাজা কংসনারায়ন বাংলার দেওয়ান তাহিরপুরের রাজা হিসেবেও পরিচিত হয়েছিলেন ষোড়শ শতকে।’ রাজা কংসনারায়ন তাঁর পুরোহিতের পরামর্শে প্রায় আট-নয় লক্ষ টাকা খরচ করে মহাসমারোহে দুর্গা পূজা করেছিলেন। সেই থেকে দুর্গাপূজা শুরু, তবে উৎসবে পরিণত হতে দুর্গাপূজার আরও শতিনেক বছর লেগেছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান হিসেবে যাত্রা, কবিগান, থিয়েটার, সংকীর্তন, ঢপকীর্তন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র দুর্গাপূজা করা হয়, তার মধ্যে অনেকগুলোতে দুর্গাপূজাকে ঘিরে মেলা বসে। গ্রাম-শহর উভয় ক্ষেত্রে সমমর্যাদায় জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজার পাশাপাশি মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি জন্মাষ্টমী, এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হিন্দু সম্প্রদায় এই তিথিতে জন্মাষ্টমী উৎসব হিসেবে পালন করেন। জন্মাষ্টমী পালনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণ মিছিল। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে, জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে ১৫৬৫ সালে (ভাদ্র মাসে) ঢাকায় প্রথম মিছিল বের হয়েছিল, পরবর্তীকালে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানেও বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শহরকেন্দ্রিক বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়। জন্মাষ্টমীকে উপলক্ষ করে অনেক জায়গায় মেলা বসে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের আরেকটা আকর্ষণীয় উৎসব হচ্ছে রথযাত্রা। রথযাত্রা মূলত একটি স্মরণমূলক উৎসব। কৃষ্ণ-বলরাম-সুভদ্রা রথে করে মাতুলালয়ে যাত্রা করাকে স্মরণ করে রথযাত্রা হয়, আবার ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে উল্টো রথযাত্রা উৎসব হয়। এই দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় ৬২টি মেলা বসে। দেশে সবচেয়ে বড় রথযাত্রা ও রথ যাত্রার মেলা হয় ঢাকার ধামরাইয়ে। এরপরে উল্লেখ করতে হয় কুষ্টিয়ার রথের মেলা ও বাগেরহাটের লাউপালা গ্রামের রথের মেলা। উপমহাদেশে সবচেয়ে পুরানো ও বড়ো মেলা হচ্ছে পুরীর রথের মেলা।

চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা বা বারুণী স্নানযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে বারুণীর মেলা সবচেয়ে বড়ো ও প্রাচীন। মেলাটি চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী বা অশোকাষ্টমী তিথিতে বসে। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শিলাইদহের স্নানযাত্রার মেলার উল্লেখ আছে : ‘বসেছে আজ রথের তলায়/ স্নানযাত্রার মেলাÑ /সকাল থেকে বাদল হল / ফুরিয়ে এলো বেলা।’ (সুখদুঃখ ‘ক্ষণিকা’)

হিন্দু সম্প্রদায়ের কালী পূজা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এক্ষেত্রে শিলাইদহের ঠাকুর-জমিদার ও নলডাঙ্গার রাজাদের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার খোকসার মেলাটি অনেক প্রাচীন ও জাঁকজমকপূর্ণ। গড়াই নদীর তীরে কয়েক মাইল জুড়ে মাসব্যাপী মেলা বসত। বর্তমানে মেলাটির স্থিতি, পরিসর ও আকর্ষণ সবই কমে গেছে। দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও কুমিল্লায় কালীপূজা উপলক্ষে মেলা বসে। মেলাগুলো প্রাচীন। কুমিল্লার মেহের কালীবাড়ির দীপান্বিতা মেলা এখনো সাত দিনব্যাপী চলে।

ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। দোলপূর্ণিমায় দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এর অপর নাম বসন্ত উৎসব বা হোলি। দোল পূর্ণিমায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ছেঁউড়িয়ার লালনের সমাধি প্রাঙ্গণের বাউল সম্মেলন ও মেলা, মেহেরপুরের মালোপাড়ার বলাহাড়ি সম্প্রদায়ের উৎসব ও মেলা, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে হরি ঠাকুরের স্মরণোৎসব ও মেলা।

চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। এই চড়কপূজায় তথা মেলায় কিছু ধর্মীয় বীভৎসতা পরিলক্ষিত হয়। পিঠে বড়শি গেঁথে চক্কড় দেওয়া কিংবা জিব্বা বড়শি গেঁথে দেওয়া। চড়ক পূজায় চরম বীভৎস এই বিষয়গুলো আগে বেশি ছিল, বর্তমানে অনেকটা কমে গেছে।

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে শিবরাত্রি উৎসব উপলক্ষে সীতাকু-তে সবচেয়ে বড় মেলা বসে। এ উৎসব-মেলায় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাবেশ ঘটে। এই মেলায় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সমাগম হয়। মেলাটি এখনো তার ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আভিজাত্য বজায় রেখে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া হিন্দু সাধু-সন্তদের আবির্ভাব-তিরোভাব দিবস উপলক্ষে অনেক মেলা বসে। যেমন- নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর প্রেমতলির মেলা, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির হরিঠাকুরের মেলা, নরসিংদীর বাউল ঠাকুরের মেলা ইত্যাদি। হিন্দু সম্প্রদায়ের নামযজ্ঞ তথা নামকীর্তন উপলক্ষেও বেশ কয়েকটি মেলা বসে। যেমন- ঢাকা শহরের হাটখোলায়, সাভারের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমে, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে, ফরিদপুরের শ্রীধামে নামকীর্তন উপলক্ষে মেলা বসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আরো অনেক ধর্মীয় পার্বণ-উৎসব-লোকাচার উপলক্ষে মেলা বসে। তবে বর্তমানে অনেকগুলো মেলা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবং হিন্দুদের দেশত্যাগের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে।

 

মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে খুব কম মেলা বসে। দুই বড় ঈদ উৎসব ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা ও মুহররম উপলক্ষে বাংলাদেশে মেলা বসে। দুই ঈদ উপলক্ষে মেলার সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ১৫ ও ১৬। ইতিহাসবিদ প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের মতে, ঊনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার ধানমন্ডির ঈদগাহে ঈদের নামাজের পর মেলা আয়োজিত হতো। লেখক-গবেষক প্রফেসর আবুল আহসান চৌধুরীর মতে, অবশ্য এরপর বিশ শতকের প্রথম থেকেই ঢাকায় নিয়মিত ঈদের মেলা বসতো চকবাজার ও রমনা ময়দানে। বাংলাদেশে দু’টো ঈদ জাতীয় ধর্মোৎসবে পরিণত হয়েছে ১৯৪৭-এর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে, যা এখনো অব্যাহত ও প্রবল। ফলে দু’টো উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে।

এছাড়া কারাবালার মুহম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান-হোসেনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও আত্মত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করার লক্ষ্যে মুহররম উৎসব করা হয়। যদিওবা এক সময় শুধু শিয়া মুসলমানরা এ উৎসব পালন করতেন, কিন্তু আজকাল মুসলিম শিয়া ও সুন্নী উভয় সম্প্রদায় মুহররম উৎসব পালন করে থাকেন। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের মতেÑ ‘মুঘল আমলে সতেরো শতকে বাংলাদেশে প্রচলন হয়েছিল মুহররমের, বিশেষ করে ঢাকায়। গ্রামাঞ্চলেও হয়তো তখন কোথাও কোথাও তা পালিত হতো। তবে মনে হয়, গ্রামাঞ্চলে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ঊনিশ শতকে। যদিও মুহররম শোকের মাস, মুহররম মানেই আমাদের মনে হয় বিষাদ। কিন্তু বাংলাদেশে তা এখন শুধু বিষাদ নয়, খানিকটা উৎসবও, যেমন- মিশরে।’ বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে মুহররম পালিত হয়। এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এক্ষেত্রে ঢাকার আজিমপুরের মুহররমের মেলাটা অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলা। এরপরেই কুষ্টিয়ার চক দৌলতপুরের মুহররমের মেলা ও মানিকগঞ্জের গড়পাড়ার মেলা। মুহররম উৎসব-মেলার মিছিল, তাজিয়া, দুলদুল ঘোড়া, লাঠিখেলা, ঘোড়াদৌড়, জারিগান, ব্র্যাঘ্র নৃত্য, সিল্কের নানা রঙের নিশান, তলোয়ারের ঝলকানি, আগুনের ফুলকি ইত্যাদি মুহররম উৎসবÑ মেলার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

মুসলিম সম্প্রদায়ের অলি, পীর, দরবেশের ওফাৎ বা মৃত্যু দিবস উপলক্ষে বাৎসরিক যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান-উৎসব হয় তা উরস বা ওরশ বা উরুস নামে পরিচিত। এই উৎসবে ফকির, অলি, পীর বা দরবেশের মাজারে দোয়া, জিয়ারত, মিলাদ, মাহফিল, আধ্যাত্মিক নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া হয়। ওরশ উপলক্ষে প্রত্যেক মাজারের আশেপাশে মেলা বসে। ওরশ উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় ৩০টি মেলার জন্ম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মেলা হচ্ছে: চট্টগ্রামে বিখ্যাত মাইজভা-ার দরবার শরীফের মেলা, রাজশাহীর শাহ মখদুমের মেলা, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের শাহ সুলতানের মেলা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরীর মেলা, ফরিদপুরের সুরেশ্বরের মেলা, কুষ্টিয়ার ঘোড়াপীরের মেলা, নোয়াখালীর নলদিয়ার মেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খড়মপুরের ওরশের মেলা ইত্যাদি। প্রত্যেকটি ওরশের তারিখ নির্ধারিত, উৎসব-মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার, কোথাও কোথাও লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটে।

বৌদ্ধদেরও নিজস্ব উৎসব, পূজা-পার্বণ আছে, যার প্রাচীনত্ব সন্দেহাতীত। বৌদ্ধদের সবগুলো উৎসব-অনুষ্ঠান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পূর্ণিমা তিথিকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। লেখক-গবেষক শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে- ‘আমাদের বাংলাদেশে সহ¯্রাধিক বছর আগেও বৈশাখী পূর্ণিমা মহাসমারোহে পালিত হতো বলে অনুমান করার পক্ষে সঙ্গত কারণ রয়েছে। ধর্মের ‘গাজন’ পশ্চিম ও উত্তরবঙ্গের নানা স্থানে বৈশাখ মাসে অনুষ্ঠিত হতো। মালদহ ও রাজশাহীর গম্ভীরার সাথে ধর্মের গাজন-এর যোগ কতটুকু আছে, বা নেই, তা এই সূত্রে বিশেষভাবে অনুসন্ধান করে দেখার একটি চমৎকার বিষয়। বলা বাহুল্য, ধর্মদেবতা যে বৌদ্ধ দেবতা তা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ভালোভাবেই প্রমাণ করে দিয়েছেন -(মনীষা-মঞ্জুষা, ৩য় খ-), তবে বৌদ্ধ উৎসব পূজা-পার্বণ সর্বশেষ পালরাজত্বের অবসানে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের অভাবে কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। তারপরও বর্তমানে বৌদ্ধদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বকীয় বৈশিষ্ট্য দেদীপ্যমান। বৌদ্ধ উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, মধু বা ভাদ্র পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দানোৎসব, মাঘী পূর্ণিমা, ফাল্গুনী পূর্ণিমা, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণোৎসব উপলক্ষে বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে বা আশে পাশের খোলা মাঠে মেলা বসে। বেশ কিছু মেলার প্রচলন ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে, কিছু বিংশ শতাব্দীতে। অনেক মেলা শুরু থেকে এখনো বর্তমান, কিছু মেলা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো মেলার এখন আর আগের জৌলুস নেই। পূর্ণিমা ছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণোৎসব উপলক্ষে অনেক বৌদ্ধ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রাচীন মেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মহামুনি মেলা। মহামুনি মন্দিরকে ঘিরে কারো মতে অষ্টাদশ শতাব্দীতে, কারো কারো মতে ঊনবিংশ শতাব্দীর ১৮১৩ সালের চৈত্র সংক্রান্তিতে এ মেলা শুরু হয়, এক মাসব্যাপী এই মেলা চলতো। এ মেলায় শুরু থেকে পাহাড়ী ও সমতলীয় বাঙালি বৌদ্ধ উভয়ের সমাগম ঘটে। উপজাতীয় কুমার-কুমারীরা বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে মন্দির ও মেলায় আসে, মন্দিরে তাদের বাগদান তথা বিয়ে হয়। মহামুনি মন্দির ও মেলার খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে মহামুনি মেলা আজও প্রচলিত আছে। তবে আগের মতো লোকসমাগম হয় না, আনন্দ-বিনোদনও তেমন হয় না। পাহাড়ি উপজাতীয় বৌদ্ধরাও কম আসে। তারপরও মেলা চার-পাঁচ দিন চলে। চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণোৎসব উপলক্ষে আরো কয়েকটি বৌদ্ধ মেলা বসে। যেমন- রাঙ্গামাটির চিৎমরম মেলা, বান্দরবানের ছাব্বিলছড়ি বৌদ্ধ মেলা, চকরিয়ার মানিকপুর পরিনির্বাণ মেলা, রামুর রামকোট মেলা, চট্টগ্রামের বাগোয়ানের ফরাচিন মেলা, হাইদচকিয়ার মহামুনি মেলা, সাতবাড়িয়ার মহামুনি মেলা, মছদিয়ার চৈত্য মেলা, চেঁদিরপুনির ধাতুচৈত্য মেলা, চক্রশালার মেলা ইত্যাদি।

বৌদ্ধদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা। তথাগত বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ বা মহাপ্রয়াণ বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয়েছে বলে এই দিনটি বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র দিন। বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। যেমন- চট্টগ্রামের বোয়ালখালী

উপজেলার বোধিধ্রুম মেলা, নোয়াখালীর কৌশল্যারবাগ বোধিদ্রুম মেলা।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সিদ্ধার্থ গৌতম মায়ের গর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন, বুদ্ধত্ব লাভের জন্য গৃহত্যাগ করেন এবং ছয় বছরব্যাপী কঠোর  সাধনায় বুদ্ধত্ব লাভের পর বুদ্ধ বারানসীর ইসিপতনের মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় শিষ্য কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্রীয়, মহানাম এবং অশ্বজিতকে তাঁর অর্জিত ধর্ম-দর্শন দেশনা করার মাধ্যমে ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। তাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। মুসলমান সম্প্রদায়ের যেমন এক মাস ব্যাপী রমজানের সিয়াম সাধনার পর আসে খুশির ঈদ, তেমনি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এ তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস পালন ও ধর্মপ্রাণ গৃহীদের তিন মাসব্যাপী অষ্টশীল পালন শেষে আসে প্রবারণা বা আশ্বিনী পূর্ণিমা উৎসব। ফানুস উড়ানোসহ যথেষ্ট জাঁকজমকপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা ও আশ্বিনী পূর্ণিমা উদযাপন করে। এই দুই উৎসব উপলক্ষে বড় বৌদ্ধ বিহারের আশেপাশে ছোট বা বড় মেলা বসে।

বৌদ্ধদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। আশ্বিনী পূর্ণিমার পর দিন হতে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এ এক মাসব্যাপী প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারকে ঘিরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব উপলক্ষেও বড় বড় বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে মেলা বসে।

মাঘী পূর্ণিমা বুদ্ধের আয়ু-সংস্কার বিসর্জন দিন হিসেবে স্মরণীয়। এই তিথিতে বুদ্ধ আশি বছর বয়সে বৈশালীর চাপালচৈত্যে নিজের পরিনির্বাণ দিবস ঘোষণা করেন। এই উৎসবটির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মেলা। বিভিন্ন জায়গায় এ উপলক্ষে মেলা বসে। যেমন- চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ঠেগরপুনি বুড়া গোসাঁইর মেলা, রাউজানের লাঠিছড়ি গ্রামের চুলামনি মেলা, বিনাজুরীর পরিনির্বাণ মেলা, রাউজান পরিনির্বাণ মেলা, ইদিলপুর গোবিন্দ ঠাকুরের মেলা, ফটিকছড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর শাক্যমুনি মেলা, খাগড়াছড়িতে দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী দশবলরাজ বৌদ্ধ বিহার মেলা ইত্যাদি। এসব মেলায় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে।

ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধত্ব লাভের এক বছর পর বুদ্ধ প্রথম সশিষ্য রাজগৃহ থেকে স্বীয় জন্মভূমি কপিলাবস্তু গমন করেন। ঐ দিন বুদ্ধ কপিলাবস্তুতে জ্ঞাতি সম্মেলনের আয়োজন করেন। বৌদ্ধরা অন্যান্য উৎসবের মতো বিভিন্ন ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করেন। এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে, যেখানে সর্বস্তরের নর-নারীর সমাগম ঘটে। চট্টগ্রামের রাংগুনিয়া উপজেলার ইছামতি ধাতুচৈত্য মেলা, সাতকানিয়া উপজেলার শীলঘাটা পরিনির্বাণ মেলা, ঢেমশা শাক্যমুনি মেলা, চন্দনাইশ উপজেলার ফতেনগর বোধি মেলা, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া চিন্তামনি বৌদ্ধ বিহার মেলা, বান্দরবান সদর থানার রাজবিলার উদালবনিয়া বৌদ্ধ বিহারের জাদী মেলা ইত্যাদি মেলা প্রতি বছর ফাল্গুনী পূর্ণিমাতে অনুষ্ঠিত হয়। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিটি পূর্ণিমা-উৎসবে পাহাড়ী ও সমতলীয় বাঙালি বৌদ্ধরা অনুষ্ঠানাদি-মেলা করে থাকে; ভাষা ও কিছু আচার-আচরণগত পার্থক্য ছাড়া তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বী চাকমা ও তঞ্চাঙ্গ্যাদের প্রধান উৎসব বিঝু উৎসব। বিগত বছরকে বিদায় জানানো আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য বিঝু উৎসব হয়। বাংলা সন ধরে চাকমা- তঞ্চাঙ্গ্যারা বিঝু উৎসব করে। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন (ফুল বিঝু ও মূল বিঝু) ও নববর্ষের প্রথম দিন (গজ্যাপজ্যা বা শুয়ে থাকা বিঝু)Ñ এই তিন দিন বিঝু উৎসব উদযাপিত হয়। বিঝু উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় মেলা বসে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের রাউজানের মহামুনি মেলা (দুই শতাব্দী প্রাচীন), রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর শাক্যমুনি মেলা (দেড় শতাব্দী প্রাচীন), রাঙ্গামাটির চিৎমরম মেলা (প্রায় এক শতাব্দী প্রাচীন), বান্দরবানের ছাব্বিলছড়ি বৌদ্ধ মেলা ইত্যাদি। মেলা প্রাঙ্গণ উপজাতীয়দের নাচ-গানে মুখরিত থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী উৎসব রাজপুণ্যাহ, এই উৎসব উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় রাজপুণ্যাহ মেলা হয়। বান্দরবান জেলায় আছে বোমাং সার্কেল তথা বোমাং রাজা, রাঙ্গামাটি জেলায় আছে চাকমা সার্কেল তথা চাকমা রাজা আর মং সার্কেল তথা মং রাজার অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলায়। জুম কর, ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারি অন্যান্য কর আদায়ের জন্য রাজার পক্ষ থেকে রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তিনি পার্বত্য জেলা শহরে। অনুষ্ঠানের দিন পার্বত্য অঞ্চলের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ কর প্রদানের জন্য ও রাজা বাহাদুরকে সশরীরে দেখা ও উপহার সামগ্রী প্রদানের জন্য সমবেত হয়। সাধারণ মানুষের কাছে এই দিনটি পুণ্যময় দিন। এই উপলক্ষে তিন দিন থেকে সাত দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মেলা বসে, যাকে রাজপুণ্যাহ মেলা বলে। প্রতিবছর একই তারিখে এই অনুষ্ঠান হয় না, তারিখ নির্ধারণ করেন রাজা বাহাদুররা। দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নর-নারী মেলায় আসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা-বেচা করার জন্য, সহজ-সরল পরিশ্রমী উপজাতীয়রা এই শতাব্দী প্রাচীন মেলায় এসে উপস্থিত হয়ে উপভোগ করে নাচ-গান, কীর্তন, সার্কাস, যাত্রা ইত্যাদি। এছাড়া বর্ষ বিদায় ও নববর্ষ বরণ উপলক্ষে প্রচলিত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘বৈসুক’ উৎসব, মারমা-রাখাইন সম্প্রদায়ের ‘সাংগ্রাইং’ উৎসব ও চাকমা-তঞ্চাঙ্গ্যাদের ‘বিঝু’ উৎসব সম্মিলিতভাবে ‘বৈসাবি’ উৎসব নামে উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে বিগত কয়েক বছর ধরে রাঙ্গামাটি সদরে ৪/৫ দিনব্যাপী বড়ো মেলা বসে।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মেলার সংখ্যা খুবই কম। কেবল বড় দিন উপলক্ষে দুই এক জায়গায় মেলা বসে। এক্ষেত্রে শতাব্দী প্রাচীন মেলা হচ্ছে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার অন্তর্গত কালিগ্রামের মেলা। মেলাটি একসময় খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ছিল, প্রায় ১৪/১৫ বিঘা জমিতে সাত দিনব্যাপী এই মেলা চলত। এই মেলার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে কবিগানের আসরে খ্রিস্টধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয় ও যীশুকীর্তন পরিবেশিত হয়। মেহেরপুরের বল্লভপুর মিশন এলাকায় এক সময় বড় দিনের মেলা বসত, বর্তমানে মেলাটি বিলুপ্ত।

চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণোৎসব উপলক্ষে বৈশাখী মেলা বসে। সারা বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২০০ টি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা গ্রামে যেমন বসে তেমনি শহরেও বসে। নববর্ষ বরণোৎসব আমাদের জাতীয় জীবনের একটি ঐতিহ্যম-িত উৎসব, একটি ধর্মনিরপেক্ষ সর্বজনীন উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ এ উৎসব-মেলায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় অংশগ্রহণ করে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সবিশেষ উল্লেখ্য, সম্রাট আকবর তাঁর নবরতেœর অন্যতম রতœ আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজীর পরামর্শে ৩৫৪ দিনের হিজরী চান্দ্রবর্ষ ও ৩৬৫ দিনের ইংরেজি সৌরবর্ষের মধ্যে সমন্বয় করে হিজরি ৯৬৩ সনের ২রা রাবিয়াসসানি, ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল ফসলী অব্দ বাংলা সন চালু করেন। অনেকে মনে করেন সম্রাট আকবরের পূর্বের পহেলা বৈশাখের অস্তিত্ব ছিল, কেননা বাংলা তো একসময় বৌদ্ধ অধ্যুষিত ছিল। বুদ্ধের জন্ম তিথি বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপিত হতো। তাই বাংলায় বৈশাখ উদযাপনের প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য সম্রাট আকবর থেকে শুরু না করে আরো পেছনে ফিরে যেতে হবে।

বাংলা-বাঙালির আরও একটি অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব অনুষ্ঠান হচ্ছে পৌষ মেলা। পৌষ মেলা হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক মেলা ও উৎসব। প্রতিবছর ৭ পৌষ এই মেলা শুরু হয়, চলে তিন দিন ধরে। তবে দোকানীরা সারা পৌষ মাস ধরেই মেলা প্রাঙ্গণে দোকান নিতে পারেন। এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বাংলা লোকসংগীত এর (বিশেষত বাউল গান) অনুষ্ঠান। ১২৫০ বঙ্গাব্দের পরে ৭ পৌষ ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর কবিগুরুর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এই দিনটিকে উপলক্ষ করে মনীষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪/১৮৯৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ৭ পৌষ শান্তিনিকেতনের ব্রাহ্মমন্দির সংলগ্ন মাঠে পৌষ মেলা প্রবর্তন করেন। কিন্তু বাংলাদেশের শেরপুরে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা শেরপুর পৌরসভার নবীনগর মহল্লার রোয়াবিলে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ঢাকায় নাগরিক আবহে নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে স্মারক-সাংস্কৃতিক মেলার সংখ্যাও কম নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্তমানে গ্রাম-শহরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বইমেলা ও বিজয় মেলা বর্তমানে শহর-গ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। লেখক সাহিত্যিকদের আবির্ভাব ও তিরোভাব বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত মেলাগুলো এখন খুব জনপ্রিয়। যেমন- ছেঁউড়িয়ার লালন মেলা, শিলাইদহের রবীন্দ্রমেলা, দরিরামপুরের নজরুল মেলা, সাগরদাঁড়ির মধুমেলা, সুনামগঞ্জের হাসান মেলা, অম্বিকাপুরের জসীম মেলা, লাহিনীপাড়ার মোশাররফ মেলা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের আরও বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলী খেলা (চট্টগ্রাম), ঘোড়দৌড় (মাগুরা), নৌকাবাইচ (রাজশাহী, ফরিদপুর, নওগাঁ) উপলক্ষে মেলা বসে। কুমিল্লায় বসে মাছ মেলা। এসব মেলায় বাংলার আবহমানকালের লোকসংস্কৃতি-ঐতিহ্যের পরিচয় ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের স্বরূপ প্রকাশ পায়। উপর্যুক্ত সব মেলায় বাঁশ, কাঠ ও বেতের নানা-সামগ্রী, মাটির হাড়ি-পাতিল, লোহার দা-কুড়াল, কাস্তে-নিরানী, খুন্তি-বেড়ী, লাঙ্গলের ফলা, পিতল-কাঁসার জিনিসপত্র, তাঁতের তৈরি কাপড়-গামছা, প্রসাধনী সামগ্রী, ¯েœা-পাউডার, নখ-পালিশ, আলতা, সিঁদুর, গয়না, পুতির মালা, মুড়ি ইত্যাদি কেনা-বেচা হয়। মেলা উপলক্ষে আয়োজিত হয় কবিগান, পালা গান, পুতুল নাচ, যাত্রাগান, গাজীর গান, আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানের ও গানের আসর।

 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার চরিত্রের অনেক পরিবর্তন এসেছে, গ্রামীণ মেলাতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এখন গ্রামের মেলাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, কুটির শিল্পের চেয়ে দেশি-বিদেশী বাহারি পণ্যের বেশি বেচাকেনা হয়। আবার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক মেলা আর বসে না। আগের মতো নির্মল আনন্দ-বিনোদন গ্রামীণ মেলায় খুঁজে পাওয়া যায় না। টেপ-রেকর্ডারে ভিসিআরে কুরুচিপূর্ণ নাচ-গান-ছবি প্রদর্শিত হয়, জুয়া খেলার আসর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মেলায় আগের জৌলুস-চাকচিক্য না থাকলেও এখনো মেলা গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-বিনোদনের কেনা-বেচার অন্যতম উৎস। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আগমনে মেলা প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর। মেলায় আগের মতো পালা-গান, গাজীর গান, ঘাটু গান, যাত্রাগান ইত্যাদি লোকসংগীত-এর আসর আর তেমন বসে না। তাই একালের চারণ কবি, লোককবি, গীতিকার, গায়ক শাহ আবদুল করিমের কথায়-কন্ঠে হারানো দিনগুলোর স্মৃতি ধ্বনিত হয় এইভাবে-

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান

মিলিয়া বাউল গান ঘাটু গান গাইতাম।

বর্ষা যখন হইত গাজীর গাইন আইতো

রঙ্গে ঢঙ্গে গাইত আনন্দ পাইতামÑ

বাউলা গান পল্লী গান আনন্দের তুফান

গাইয়া সারিগান নাও দৌড়াইতামÑ

বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, পালা-পার্বণ, উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মেলা আমাদের লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বংশ পরম্পরা শুধু যে বহমান রেখেছে তা নয়, বরং মেলা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার আগমনে প্রেম-প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়। মেলা সাধারণত গ্রামীণ নির্ভর হওয়াতে গ্রামের সাধারণ মানুষ মেলায় তাদের উৎপাদিত ও তৈরীকৃত দ্রব্য কেনা-বেচার মাধ্যমে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে, তদুপরি তাদের আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম বিধায় সারা বছর ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে কখন আবার মেলা বসবে। এই সব মেলার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে আমাদের পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহের মধুর স্মৃতি, আমাদের বাল্যের-কৈশোরের স্মৃতি যা কখনো ভুলার নয়। কিন্তু ক্রমশ আমরা শহরমুখি হওয়ার কারণে গ্রামপ্রধান বাংলার হাজারো গ্রাম আজ বিবর্ণ, ফ্যাকাশে। ফলে উদ্যোক্তার-পৃষ্ঠপোষকের অভাবে সাম্য-সুন্দরের অনাবিল সম্মিলন এ মেলা আজ গ্রাম থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি আমাদের শেকড়কে অস্বীকার করতে শিখাচ্ছে, ক্রমে আমরা গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। আমাদের নিজেদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রয়োজনে এইসব লোকমেলাকে ধরে রাখতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে মেলার কাঠামো পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু একেবারে মুছে দেওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর; এতে করে লোকজ সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ভুলে আমরা শেকড়হীন আগাছায় পরিণত হব। সময়ের পরিবর্তনে দ্রুত পরিবর্তিত জীবনযাত্রার মান ও রুচির দিকে নজর দিয়ে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এইসব মেলাকে ধরে রাখার প্রয়াস নিতে হবে। আঞ্চলিক-গ্রামীণ এ লোকমেলাগুলোতেই আমরা খুঁজে পাব আমাদের আত্মপরিচয়Ñ মূল পরিচয়।

 

তথ্যসূত্র :

১। মেলা, আতোয়ার রহমান, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, জুন ১৯৮৮।

২। বাংলাদেশের উৎসব, মুনতাসির মামুন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ ।

৩। লোকসংস্কৃতি-বিবেচনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, আবুল আহসান চৌধুরী, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১৯৯৭ ।

৪। বৈশাখ ও আমাদের ঐতিহ্যচেতনা, তিতাশ চৌধুরী ,বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ২০০০ ।

৫। নববর্ষ ও বাংলা লোক-সংস্কৃতি, সম্পাদক আবুল কালাম মঞ্জুর মোর্শেদ, অ. আ. প্রকাশন, ঢাকা, এপ্রিল ২০০২

৬। বাংলার বৌদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, শিমুল বড়–য়া, আনোমা, চট্টগ্রাম, ২০১২।

৭। মনীষা-মঞ্জুষা (তৃতীয় খ-), ড. মুহম্মদ এনামুল হক, মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৮৪

 

 

শিমুল বড়ুয়া, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে