এখন সময়:রাত ১১:১৯- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১১:১৯- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

বাজেটের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির বাজেট

আলম খোরশেদ

আর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হবে। আর অমনি শুরু হয়ে যাবে সবখানে বাজেট নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা। প-িতেরা, তথা অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, শিল্পপতি, সাংবাদিক প্রমুখ তো কথা বলবেনই, সেইসঙ্গে আমজনতাও কিন্তু বসে থাকবেন না। তাঁরাও তাঁদের মতো করে যার যার জায়গা থেকে, যার যার বুঝ ও বিবেচনা অনুযায়ী মন্তব্য করবেন বাজেটের ভালোমন্দ বিভিন্ন দিক নিয়ে। অর্থাৎ এই বাজেট বিষয়টি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মূলধারার জনসংস্কৃতির একটা প্রায় অনিবার্য অনুষঙ্গই হয়ে উঠেছে বলা চলে, যাকে আমি এই লেখার শিরোনামে ‘বাজেটের সংস্কৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছি। তবে আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু কিন্তু ঠিক তা নয়, আমি বরং উল্লিখিত এই শব্দবন্ধটিকে উল্টে দিলে যা দাঁড়ায়, সেই ‘সংস্কৃতির বাজেট’ নিয়ে কিছু কথা বলতে উদ্যত হয়েছি এখানে।

প্রতিবছর সংস্কৃতির বাজেট নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে একটা ক্ষোভের জন্ম হয় এইজন্য যে, দেশের মোট বাজেটের তুলনায় সংস্কৃতির বাজেট ক্রমাগত কমতে কমতে ০.১ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে, অর্থাৎ মোটা দাগে সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের এক সহ¯্রাংশ তথা এক হাজারের এক ভাগেরও কম।

 

এবছর সেটি আরও নিচে নেমে এলেও অবাক হব না! তাই আগেভাগেই এবার যেন আমাদের সংস্কৃতি খাতের বাজেট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো হয় সেই দাবি পেশের পাশাপাশি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য, বিধেয় ও কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ উপস্থাপন করার প্রয়াস পেয়েছি নাতিদীর্ঘ এই নিবন্ধটির মাধ্যমে। আশা করছি, এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, বিশেষ করে আমাদের নবনিযুক্ত মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নজরে পড়বে এবং তিনি উল্লিখিত প্রস্তাবনাসমূহ তাঁর সহৃদয় বিবেচনায় নিয়ে তা যথাসাধ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন।

সংস্কৃতিখাতে এত কম বরাদ্দের কথা তুললে শোনা যায় অর্থ মন্ত্রণালয় নাকি বরাবর দুটো কথা বলে থাকে যে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বেশি করে বরাদ্দ দাবি না করলে বা সেই লক্ষ্যে নিজেরা তেমন কোনো বাজেট পেশ না করলে আমরাই বা এর বেশি বরাদ্দ দিই কীভাবে? আর তাছাড়া যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটুকুই তো তারা খরচ করতে পারে না, তাহলে তাদের জন্য এর বেশি অর্থ মঞ্জুর করেই বা কী লাভ! অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কৈফিয়ত যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো বলতে হয় যে, খোদ সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়ে গেছে। আর এই ভূত তাড়ানোর জন্য সম্ভবত এই মন্ত্রণালয়কেই সবার আগে ঢেলে সাজানো দরকার এখন। একটা কথা তো পরিষ্কার যে, আমাদের সরকার মুখে যা-ই বলে থাকুক না কেন, আসলে সংস্কৃতিকে দেশ বা জাতির কল্যাণের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে না। তা নইলে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে একজন পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগ না দিয়ে প্রতিমন্ত্রী দিয়েই বা কেন ঠ্যাকার কাজ চালিয়ে নেবে? আমাদের তাই সবার আগে দাবি তুলতে হবে, শিক্ষার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য নিদেনপক্ষে একজন পূর্ণ মন্ত্রীকে নিয়োগ দিতে হবে বরাবর। এবং এই ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন সত্যিকার অর্থে একজন শিক্ষিত, সংস্কৃতিমান, অগ্রসর ও আধুনিক চিন্তার মানুষ। নির্বাচিত সাংসদদের মধ্য থেকে সেরকম কাউকে পাওয়া না গেলে, প্রয়োজনে টেকনোক্র্যাট কোটায় দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক কিংবা বুদ্ধিজীবী সমাজের কোনো প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সদস্যকেই মন্ত্রী করা যেতে পারে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তা অর্থাৎ সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিবের মতো পদগুলিতেও যাচাই বাছাই করে যথাসম্ভব সংস্কৃতিমনস্ক ও শিল্পবোধসম্পন্ন প্রার্থীদেরকেই নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক।

মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগদানের পাশাপাশি আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি বলে মনে করি। যেমন, একটি সুচিন্তিত, কার্যকর উপদেষ্টা কমিটি গঠন, যার সদস্য হবেন দেশের সৃষ্টিশীল ও চিন্তাশীল মানুষদের মধ্য থেকে সুনির্বাচিত প্রবীণ প্রতিনিধিরা, যাঁদের প্রধান কাজ হবে মন্ত্রণালয়কে তার নানাবিধ সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়ন, তার সাংবৎসরিক কর্মসূচি ও কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণে বুদ্ধি, পরামর্শ ও সৃজনশীল দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করা। আরও একটি বিষয়েও সম্ভবত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। সেটি হচ্ছে, দেশের চৌষট্টি জেলায় যে-চৌষট্টিজন সংস্কৃতি কর্মকর্তা তথা জেলা কালচারাল অফিসার আছেন, তাঁদের নিয়োগপদ্ধতি এবং দায়িত্বের পরিধি বিষয়ে নতুন করে ভাবা। বর্তমানে এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই, তবে আমার শহর চট্টগ্রামে গোড়া থেকেই দেখে আসছি, যিনি এই জেলার কালচারাল অফিসার, তিনিই পদাধিকার বলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন, অর্থাৎ তিনি মূলত শিল্পকলা একাডেমিকেন্দ্রিক যে-সংস্কৃতিচর্চা কেবল সেইটুকুরই দেখভাল করে থাকেন। অথচ তাঁর পদবির মধ্যেই পুরো ‘জেলা’ শব্দটি রয়েছে, যে-জেলার অন্যত্র তো বটেই, ¯্রফে চট্টগ্রাম শহরেই সারা বছর ধরে যে-অজ¯্র সাংস্কৃতিক কর্মকা- হয়, বা আরও যা হওয়া উচিত সে-বিষয়ে তাঁর কী ভূমিকা বা করণীয় আমাদের জানা নেই। এক্ষেত্রে আমার বিনীত পরামর্শ, প্রতিটি জেলার সরকারি শিল্পকলা একাডেমির জন্য একজন করে স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ সৃজন করে, গোটা জেলার জন্য অন্য কোনো একজন সর্বজনমান্য, সুযোগ্য শিল্পজনকে জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা বা অধিকর্তা পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। এতে করে তিনি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা নয়, গোটা জেলার সংস্কৃতিকর্মীদের অভিভাবক, পরামর্শক ও দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে পারবেন, যার সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব জেলার সার্বিক সাংস্কৃতিক পরিম-লে পড়বে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এবার আসা যাক, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে না পারার অভিযোগ বিষয়ে। অবশ্য এই অভিযোগটি শুধু যে এই একটি মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেই সত্য তা কিন্তু নয়, এটা কমবেশি সব মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এমনকি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেলাতেও সত্য। অর্থাৎ, টাকার বরাদ্দ পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সেটা ঠিকঠাকমতো, অর্থপূর্ণ ও ফলপ্রসূভাবে ব্যয় করতে পারাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ও সক্ষমতার বিষয়। আমরা জানি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ টাকার একটা বড় অংশই যায় কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধে, আর বাকিটা কিছু নৈমিত্তিক কর্মসূচি আর কিছু পূর্বনির্ধারিত, অনুষ্ঠান, উৎসবাদির বাস্তবায়নে। সারাদেশের সাংস্কৃতিক আবহ, তৎপরতা, তার গুণমান, পরিবেশ, পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন নতুন ভবিষ্যৎমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য যে-সময় বা সদিচ্ছাটুকুর প্রয়োজন সেটাই হয়তো তাদের নেই। আমি তাই নিজেই চটজলদি কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করছি এখানে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী কর্মবৎসরের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য, যেগুলো আমি মনে করি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিম-লের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে।

*          বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জরিপ করে যেখানে যেখানে সরকারি শিল্পকলা একাডেমির বাইরে আর কোনো উল্লেখযোগ্য মিলনায়তন, অনুষ্ঠানকেন্দ্র, প্রদর্শশালা ইত্যাদির অস্তিত্ব নেই, সেইসব জেলায় অনতিবিলম্বে এক বা একাধিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা হাড়ে হাড়ে জানি এটি কত বড় একটি সমস্যা, এমনকি আমার নিজের শহর চট্টগ্রামের মতো একটি মহানগরেও, অন্য জেলাগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য।

*          আমরা জানি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক, বিপ্লবী, রাজনীতিবিদদের জন্মভিটা কিংবা তাঁদের স্মৃতিধন্য স্থাপনাগুলো হয় বেহাত হয়ে যাচ্ছে নয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজাতীয় স্থাপনাগুলো মন্ত্রণালয় অধিগ্রহণ করে তাঁদের নামে জাদুঘর, সংগ্রহশালা, সংস্কৃতিকেন্দ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমাদের চট্টগ্রামেই বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিধন্য ইউরোপিয়ান ক্লাবটি অযতেœ ও অপব্যবহারে ধ্বংস হতে চলেছে। অথচ এটি হতে পারে চট্টগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসের একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর।

*          অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে, ইউনেস্কো কথিত ওয়ার্ল্ড ইন্ট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ বা বিশ্ব নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাংলাদেশি উপাদানগুলোর তালিকা তৈরি ও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক চুক্তিতে সই করার একযুগ পেরিয়ে গেলেও আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অদ্যাবধি সেই তালিকা তৈরির কাজটি সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি, সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া তো দূরের কথা। মন্ত্রণালয় সেই তালিকাটি দ্রুত তৈরি করে আমাদের মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার প্রয়াস নিতে পারে।

*          সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য সংবৎসর নানাধরনের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, বক্তৃতাসভা ইত্যাদির আয়োজন করতে পারে। আর একাজে দেশের প্রথিতযশা, অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিল্পজনদের ব্যবহার করলে একদিকে তাঁদের যেমন কিছু আর্থিক প্রাপ্তিযোগ ঘটে তেমনি দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীরাও তাদের দক্ষতা ও শৈল্পিক উৎকর্ষ বৃদ্ধির সুযোগ পেয়ে উপকৃত হবেন।

*          একইভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিদেশ থেকেও মাঝেমধ্যে ভালো ভালো শিল্পী ও শিল্পচিন্তকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর শিল্পী, শিল্পসংগঠক ও শিল্পজনদের জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। পাশাপাশি আমন্ত্রিত শিল্পী বা শিল্পীগোষ্ঠীদের দিয়ে সাধারণ দর্শক ও শিল্পীসমাজের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলে তা দেশের সংস্কৃতির উন্নয়নে ইতিবাচক পথ দেখাতে পারে।

*          দেশের সুনির্বাচিত শিল্পীদের নিয়ে সরকারি উদ্যোগে মাঝেমধ্যে বিদেশের মাটিতে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিল্পোৎসবে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যার ফলে একদিকে যেমন আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির উপস্থাপনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের পরিচয় ও ভাবমূর্তির উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি সফরকারি শিল্পীদেরও অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস এবং বৌদ্ধিক অর্জনের ঝুলিটুকু আরও সমৃদ্ধ হবে।

*          আমাদের ’জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র’টিকে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করে বিদেশি সাহিত্যিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের বিদেশি ভাষায় অনুবাদ ও বিপণনের উদ্যোগ নিতে পারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

*          দেশের সংস্কৃতি বিষয়ে নানা মূল্যবান ও জরুরি গবেষণা, জরিপ ইত্যাদির জন্য তারা যোগ্য ব্যক্তি কিংবা শিল্পসংগঠনকে গবেষণাবৃত্তি, ফেলোশিপ, মঞ্জুরি ইত্যাদি প্রদান করতে পারে।

একইভাবে দেশের সাংস্কৃতিক ম-লের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বা বিষয়াদির ওপর তথ্যসমৃদ্ধ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজও করতে পারে মাঝেমধ্যে, যা আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সংরক্ষণে মূল্যবান ভূমিকা রাখবে।*     তারা মূল্যবান ও ব্যয়সাপেক্ষ গবেষণাগ্রন্থ এবং এই জাতীয় দালিলিক রচনাসমূহের প্রকাশের উদ্যোগও নিতে পারে দেশের কোনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে।

*          এছাড়া দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব, মেলা ইত্যাদি, যেমন ধ্রুপদী সংগীতের আসর, লোকনাট্যের উৎসব, সাহিত্যমেলা, কারুশিল্পের প্রদর্শনী, বৃক্ষরোপণ উৎসব ইত্যাদিরও আয়োজন করতে পারে।

মোট কথা, দেশে শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নে কাজ করতে চাইলে, কাজের কিন্তু শেষ নেই এবং এর জন্য যথাযথ বাজেট ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের কাছে পেশ করা হলে সেটি মঞ্জুর না হবারও কোনো কারণ দেখি না। প্রয়োজনে এর জন্য দেশের আপামর সংস্কৃতিকর্মীরা সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করে দাবি আদায়ে সহায়তা করবে মন্ত্রণালয়কে। সবশেষে বলি, অস্বীকার করার উপায় নেই গেল বছরগুলোতে দেশের যথেষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে এবং সেটি হয়তো আরও দৃশ্যমান হবে সামনে, কিন্তু তার পাশাপাশি শিক্ষা এবং বিশেষ করে সংস্কৃতিক্ষেত্রে যদি সমানতালে উন্নতি না হয়, তাহলে এই উন্নয়নেরর প্রকৃত সুফলটুকু আমরা কেউই ভোগ করতে পারব না। সত্যিকার অর্থে একটি উন্নত, সুসভ্য ও সুসংস্কৃত জাতি হয়ে ওঠার স্বপ্নও আমাদের অধরাই থেকে যাবে।

 

আলম খোরশেদ, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে