আজিজুল হক :
বিপাশা’র সাথে আমার বিয়ে হয় তার বড়বোন ‘আশা’ কে দেখতে গিয়ে। আমার এমন অদ্ভুত ও অশোভন কা- নিয়ে সে সময় এবং পরেও আমি অনেক ভেবেছি। কিন্তু যুৎসই কোন ব্যখ্যা খুঁজে পাইনি। “ঞযবৎব রং হড় ষড়মরপ রহ ষড়াব” কথাটাই সম্ভবত সত্যি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে একজন ইন্টার পড়–য়া মেয়েকে আমি বিয়ে করবো এমনটা বিপাশাদের বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভাবতে পারিনি। আসলে আমি বিয়ে বিষয়ে কখনো তেমন করে ভাবিনি, যতোটা আমার পরিবার ভাবছিল। তাদের ভাবনার মূল কারণ আমার বয়স। তা না-কি বেড়ে যাচ্ছিল হুহু করে। ঘরের জানালা দরজা ভেঙে। আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নড়াতে না পেরে ছোট ভাই বিয়ে করে ফেলেছে কোর্টে গিয়ে।
একটা স্বাধীন-সার্বভৌম জীবন নিয়ে আমি আরো ক’টা বছর পার করে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার এক সিনিয়র কলিগ একদিন আমাকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেলো বিপাশাদের বাসায়।
বিপাশার বড় বোন ‘আশা’। কেমেস্ট্রি তে অনার্স শেষ করে ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। লেখাপড়ায় তুখোড়। দেখতেও নাকি মাধবীলতার মতো।
তাদের বাবা মানে আমার হবু শশুর একটা সম্মানজনক সরকারি চাকরি করেন। সামনের ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন। দুই মেয়ে এক ছেলের ছিমছাম সংসার। ছেলেটি অবশ্য একটু বেশি ছোট পড়ে ক্লাস ফাইভে। নাম আশিক।
আমরা যখন বিপাশাদের বাসার পৌঁছি তখন বিকেল গড়াতে গড়াতে একেবারে মাঠের শেষ প্রান্তে। বিপাশাদের সরকারি বাসার সামনের বড় পুকুরে উপচে উঠা জল।
সে জলের ওপর ধুলাউড়া বিকেলের প্রান্তিক আলোর মায়াজাল বিছায়ে আছে অস্তগামী সূর্য।
বাসার দরজা খুলে দিলো বিপাশা। দরজা খোলার সাথে সাথে বাইরের আলোর সব রক্তিম আভা একসাথে গিয়ে পড়লো তার মুখে। শাফায়াত কে সে চিনতো আগে থেকেই। ‘স্লামালাইকুম’, বলে সে আমাদের বসতে বলে ভেতরে চলে গেলো।
কিন্তুক্ষণ পর তার বাবা অর্থাৎ আমার শ্বশুর সালাম সাহেব পর্দা সরিয়ে ভেতরে এলেন। পর্দার ওপারে কয়েকটি পা তখনও দেখা যাচ্ছিল।
আমরা একসাথে দেশ, সমাজসহ নানা বিষয়ে কথা বলামাম। সন্ধ্যা হয়ে এলে বিপাশা আবার এসে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেলো। এবারও টিউব লাইট ভরা আলো গিয়ে তার মুখে পড়লো। আমার শশুর বিপাশাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। সে আমার দিকে এবার প্রসারিত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আবার ‘স্লামালিকুম’ বলে ভেতরে চলে গেলো।
শ্বশুরের ইমামতিতে আমরা তিনজনে মাগরিবের নামাজ পড়লাম।
তারপর নাস্তা এলো বিপাশার হাতে বড় ট্রেতে করে। তার পিছে পিছে বড় মেয়ে আশা, ছেলে আশিক এবং তাদের মা। সবার সাথে পরিচয় হলো। শাফায়াত ভাই আমার পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত সহ দীর্ঘ আমলনামা সবিস্তারে পেশ করলো সবার উপস্থিতিতে। অনেকটা কাঠগড়ায় আসামি দাঁড় করিয়ে উকিলের অভিযোগ দাখিলের মতো করে। এর ভেতর আমার বিয়ে করতে দেরি হবার পেছনে একটা গ্রহনযোগ্য গ্রাউন্ডও তিনি তৈরি করে নিলেন নিজের মতো করে।
আমি তার সত্যমিথ্যা কথায় কান না দিয়ে আগ্রহ নিয়ে আশাকে দেখছিলাম। সুন্দরের ছকে ফেললে দশে চোখ বন্ধ করে আট, নয় দেয়া যায়। আট মানে লেটারমার্ক। নয় মানে তো তিনটা স্টার। টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার, কৃতিত্বের সাথে পাশ। সে একই ছকে আমাকে টেনেটুনে ছয় পর্যন্ত দেয়া যায়।
আমি সামান্য টুকটাক কথা বলার সাথে সাথে আমাদের এই ছয় নয় সংখ্যা নিয়ে ভাবছিলাম। তারপর একে একে আবার সবাই চলেও গেল আশাকে রেখে। সিনেমা নাটকে যেমনটি হয়।
আমি নাটকের নায়কদের মতো স্মার্ট নই। ক্লাসে মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথাবলা, আড্ডা দেয়া আর কনের বাড়িতে বসে কথা বলা যে এক নয় তা সেদিনই বুঝলাম। এর আগে আমি কোনো কনে দেখিনি। এই প্রথম। খুবই বিব্রতকর অবস্থা। আশা সম্ভবত আমার অবস্থা আঁচ করে নিজেই শুরু করলো, আমি মাস্টার্স শেষ করে চাকরি করতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
আমি উৎসাহ দিয়ে বললাম, উত্তম চিন্তা।
তার মুখ দেখে মনে হলো আমার কথায় সে খুশি হয়েছে।
আমি কি জানি কি মনে করে বললাম, চাকরিজীবী কেউ আমার দায়িত্ব নিলে আমি খুশিই হতাম। আমার মন চায় চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে বই পড়ি আর এদিক ওদিক বেড়াই।
আমার কথা শুনে আশা হাসলো। তার সাথে আমিও হাসলাম। তারপর ছকে বাধা দু’চার কথা। কথা শেষে আশা চলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে শাফায়াত ভাইয়ের আগমন ঘটলো। যেনো পর্দার ওপাশেই দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল।
এসেই চোখের ইশারায় জানতে চাইলো, কেমন?
আমিও চোখের ইশারায় জানিয়ে দিলাম, উত্তম।
আমার প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাতে বিপাশাদের বাসা থেকে রাতের খাবার সেরে আসি।
সিলেট শহরে একটা সরকারি দপ্তরে আমি চাকরি করি। অফিস সংলগ্ন কোয়ার্টারে থাকি। এই দপ্তরে চাকুরির একটাই ভালো দিক সব জায়গায় সংলগ্ন অফিসারের থাকার বাসা আছে। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমি অর্ধেক পড়া ঝযধযধন অযসবফ এর “কাশি ও কিন্তারুর দেশে” বইটি টেনে নিলাম। জাপান ভ্রমণের পটভূমিতে লেখা। খ- খ- অসাধারণ চিত্রপটের ভেতরেও আমার মন নেই, যতোই আশা’র কথা ভাবতে ভাবতে পাতা উল্টাই পাতায় পাতায় ভেসে উঠে বিপাশা’র মুখ। কারুকাজহীন সোনালি ধানের মাঠ, ফসলের ক্ষেত, নীড়ে ফেরা এক ঝাঁক বালিহাঁস বালিকার মুখ। নিজের প্রতি নিজের রাগ হয়, নিজকে নিজের কাছে খুব ছোট মনে হয়। সেই ছোট, হীন, কুঞ্চিত চোখে তবুও ঘুরে ফিরে সেই বালিকার মুখ ভাসে। বারবার ঘোর ভেঙে জেগে উঠি, চোখ মেলে দেখি সে বালিকার মুখ। বুকে ওড়ে সুতা কাটা দলছুট বখাটে রঙিন ঘুড়ি। শুধু উড়ে আর উড়ে। অবাধ্য, বেপরোয়া। ভোঁকাটা কানে বাজে ঠাকুরের সে ক’টা লাইন,
“প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস”
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্ত দিন ফেলেছে নিশ্বাস”
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।”
মাসটি ছিল ভাদ্রের মাঝামাঝি, চৈত্র বসন্তের কাছাকাছিও না। এমন আদ্র দিনে বসন্ত বিলাশ নিঃসন্দেহে সর্বনাশের লক্ষণ। আমি চিন্তিত হলাম। মনে মনে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগলাম। আমার এতোদিনের স্বপ্নের খামারে এ কোন নেকড়ের হানা।
জীবনে আমি কখনো কারো প্রেমে পড়িনি, কেউ আমার প্রেমে পড়েছে বলেও মনে হয়না।
প্রেম কি জিনিস আমার জানা নাই। এর অনুভূতি, উপসর্গ কোনকিছুর সাথে আমার পূর্ব পরিচয় নেই। এই অপরিচিত, অপ্রতিরোধ্য অনুভূতিগুলোকে মনে মনে নাম দিলাম ‘অ-প্রেম’।
গুরুজি বেঁচে থাকলে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে বসে হাত জোড় করে বলতাম, গুরুজি আমায় উদ্ধার করুন। আমাকে এ কোন বিভ্রমে ফেললেন?
আমি কল্পনায় গুরুজিকে আমার সামনে এনে বসাই। গুরুজি আরাম কেদারায় চোখ বন্ধ করে আধা শোয়া অবস্থায় আছেন। আমি তাঁর চরণতলে জলচৌকিতে বসা। গুরুজি চোখ বন্ধ রেখেই বলেন, তুই প্রেমে পড়েছিস রে সুনীল, বালিকার প্রেম। বড়ই সর্বগ্রাসী। উজান গাঙের নৌকা। ডুবে মরবি।
আমি করজোড়ে বলি, গুরু আমি সুনীল নই, আপনার পোস্টমাস্টার গল্পের সেই রতন। রতন দস্তিদার। আমাকে উদ্ধার করুন, গুরু।
ওই মাস্টারের মতো স্রোতের টানে টানে সরে যা, দূরে চলে যা।
আমি চাই গুরু, যেতে চাই, পারছি না।
তাহলে গ্রহণ কর। দেবতার দান, তুলে নেয় দু’হাতে ভরে।
তা কি করে সম্ভব গুরু! এ যে একেবারে নয় ছয় ব্যাপার! মুখ দর্শন দেবো কি করে?
উল্টাপাল্টা হিসাব না করে ডিসেন্ডিং অর্ডারে সাজা, তাহলে নয় আর ছয় মিলেই নাইনটি সিক্স হবে রে পাগল, এর চেয়ে বেশি মানুষের জন্য নয়, দেবতাদের জন্য।
গুরুজি, আপনি তো দেবতার মতো, আপনার যোগ নাম্বার কতো হয়েছিল?
তুই বেশি কথা বলছিল। যা, চলে যা, আমি এখন নিদ্রা-যোগ করব।
চলে যাবো, যাবার আগে শুধু একটা বাণী দিন গুরু।
গুরুজি চোখ বন্ধ করেই বলেন,
বিপাশার দুই তীরে চেরি ফোটে, ফোটে থরে থরে
তুলে নে দু’হাতে ভরে, রাখিস তারে যতন করে
আমি গুরুর চরণতল থেকে উঠে এসে সরাসরি মশারির ভেতর ঢুকে পড়ি। বালিশে মাথা রাখতেই হিমাচল থেকে হঠাৎ নেমে আসে সে এক নদী। কলকল ছলছল করে বয়ে যায় বুকের ভেতর। আহা বিপাশা, তোর বুকে এতো জল তবু আমি তৃষ্ণায় মরি।
বিকেলে অফিস শেষে শাফায়াত ভাই সরাসরি আমার বাসায় এসে হাজির। সরাসরি প্রশ্ন, কি রতন সাহেব, পাত্রী পছন্দ হয়েছে?
আমিও সরাসরি উত্তর দিই, হুম খুব।
–গুড, আমি বলছিলাম না, পছন্দ না হয়ে পারেই না। কথা শুরু করে দিই, তাহলে।
–একটু সমস্যা আছে, শাফায়াত ভাই।
–আবার কি সমস্যা।
–আশা, নয় তার ছোটবোন বিপাশাকে।
শাফায়াত ভাই দশ তলার ছাদ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে বললেন, এ কি কথা! এমন সুন্দরী, ব্রিলিয়ান্ট একটা পাত্রী রেখে আপনি পুঁচকে একটা মেয়েকে পছন্দ করে বসলেন? ও মেয়ে তো ‘সি’ পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেছে। কলেজে কেবল নাম দেখিয়েছে, পড়ে না।
–তাতে কি? ইচ্ছে না হলে শুধু শুধু পড়বে কেন? সবার তোর আর এম এ পাস দেয়ার দরকার নাই।
–আপনি হেঁয়ালি করছেন?
–না না, তা কেন করবো? মনের কথাটিই বললাম। যেটা সত্যি।
–ওই ছোট্ট মেয়েটাকে কি ওরা বিয়ে দিবে? আপনার মতো আধবুড়ো লোকের কাছে!
–না দিলে নেই। জোরাজুরির কিছু তো নাই। আপনি জিজ্ঞেস করায় আমি কেবল আমার পছন্দের কথা বললাম, শাফায়াত ভাই।
হাসিখুশি শাফায়াত ভাইকে হঠাৎ খুব বিষণœ মনে হলো। তিনি বিরস মুখে বললেন, ভাই আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত। আপনার ভেতর সমস্যা আছে।
–জি আমারও সে রকম মনে হচ্ছে। গুরুজির কাছে গিয়েছিলাম, তিনি কিন্তু সায় দিয়েছেন।
শাফায়াত ভাই খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
কোন গুরুজি?
–দার্শনিক ঠাকুর তো এক জনই, আমাদের ঠাকুর জি’র কাছে।
শাফায়াত ভাই অহেতুক কথা আর না বাড়িয়ে দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বেশ কদিন পার হয়ে গেলো শাফায়াত ভাইয়ের আর দেখা নাই। আমি নিয়ম করে অফিস করি খাই-দাই করি, আর বইয়ের ভেতর মুখ গুঁজে থাকি। মাঝে মধ্যে বিপাশা নদীটা বুকের ভেতর নড়েচড়ে উঠে। আমি আতংকিত হই। অমাবস্যা, পূর্ণিমা টের পাই। জোয়ারভাটায় ভাসি, ডুবি। আর মনে মনে বলি, হায়রে বিপাশা! এ অসময়ে শুধু শুধু কেন ভাসিয়ে দিতে এলি!
অনেক দিন হয়ে গেলেও আমি শাফায়াত ভাইয়ের দেখা না পেয়ে নিশ্চিত হলাম এমন উদ্ভট প্রস্তাব নিয়ে তিনি নিশ্চয় ওঘর মুখো হননি। হলেও তাকে পত্রপাঠ বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ঘুচতে মানুষ নানা জায়গায় যায়, আমি দুঃখ পুষতে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গেলাম ব্রহ্মপুত্র নদের শহর ময়মনসিংহে। আমার ছোট খালার বাসায়। খালু ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। থাকেন শহরে নিজের বাড়িতে।
প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে জয়নাল আবেদীন পার্ক ঘুরে বেড়াই। ব্রহ্মপুত্রের তীরে গিয়ে বসি। ভরা বর্ষায় ভরা নদী। জল থৈ থৈ।
আমার বুকে ফোঁসফোঁস ফুলে উঠে বিপাশার মুখ। শুনেছি বিপাশার এক শাখা নদী ভুটান তিস্তা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে পড়েছে। সেজন্যই এখানে আসা। নদীর জলে হাত নিয়ে দেখি।
নদে’র গায়ে পড়ে এসে নদী! এও যে একই নিয়তির খেলা।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসে, হেঁটে, গেয়ে, নৌকা ভ্রমণ করে সাতদিন কাটিয়ে সিলেট ফিরে নিজ কর্মস্থলে।
এসে শুনি শাফায়াত ভাই আমাকে নিজে এসে দুদিন খুঁজে গেছেন। আমি এলেই যেন তার সাথে দেখা করি, এমন কথাও গেছেন।
অফিসে গিয়ে এমন খবর শুনে আমার বুকের ভেতর আবার ধক করে উঠে। আবার কোন ঝামেলায় ফেলবেন আমাকে! আমি আর উনার খোঁজে যাই না। একদিন পর খবর নিয়ে তিনিই আমার বাসায় এসে হাজির। সরাসরি বেডরুমে ঢুকে চেয়ারে বসে বলেন, মশারিটা তুলে ফেলেন মিয়া, এটা কবে টাঙিয়েছেন?
আমি আঙুল গুনে গুনে হিসাব করে বলি, মনে করতে পারছি না ভাই, তবে মাস খানেক হবে মনেহয়।
–এখন থেকে রাতে নিয়মিত টাঙাবেন আর সকালে উঠে খুলে ফেলবেন, বুঝলেন কিছু?
উনার মুখে কেমন যেন রহস্যের হাসি। আমি বলি, যাহা প্রতিদিন টাঙাতে হয় তাহা প্রতিদিন খোলার দরকার তো বুঝিনা।
–বুঝবেন বুঝবেন, দিন, আগে সিগারেট দিন, খেতে খেতে বলি।
বেনসনের প্যাকেটটি তার দিকে ঠেলে দিয়ে বলি, বুঝাইয়া কইলেই তো বুঝি, ভাই। অহেতুক মশারি নিয়ে টানাটানি করছেন কেন, ঝেড়ে কাশুন।
–কন্যার পরিবার রাজি, বিপাশার সাথেই আপনার বিবাহ হইবে, ইনশাআল্লাহ।
আমি ধাক্কার মতো খেয়ে বলি, উনারা রাজি হয়েছেন?
–কেন হবে না। আইনে কি নিষেধ আছে!
–তা নাই, কিন্তু বিষয়টি কেমন নয় কি?
–হ্যাঁ, কিছুটা ‘কেমন’ তো আছেই। তবে মোটেও নিষিদ্ধ গন্ধম ফল নয়। বরং বলা যায় বিশুদ্ধ আপেল।
আমি চুপসে গিয়ে বলি, ওই ঘরে আমি মুখ দেখাবো কীভাবে? তার বড় বোন আমাকে যতোবার দেখবে ততোবারই অভিশাপ দেবে। আমি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো।
শাফায়াত ভাই আবার হেসে বললেন, আরে ভাই আপনি তো দুবোন নিয়ে এক ঘরে থাকছেন না। বছর দু’বছরে দেখা হবে একবার। বেশি ভয় পেলে দেখা দেবেন না।
হঠাৎ করে শাফায়াত ভাইয়ের এমন শক্ত ইউটার্ন দেখে আমি রীতিমতো অবাক হলাম। আমি নাহয় নির্লজ্জের মতো বিপাশার কথা বলে ফেললাম। কিন্তু, তার পরিবার কীভাবে রাজি হয়ে গেল, তা আমার মাথায় আসছে না। আমার ভালো চাকরি, ঢাকায় বাড়ি আছে, শুনে? ভদ্রলোক অবসরে চলে যাবেন বলে? অবসরে গেলে কি মানুষ জলে পড়ে যায়?
মেয়েটি সুন্দর। কিছুদিন অপেক্ষা করলে আমার চেয়ে উত্তম পাত্র পাওয়ার সম্ভাবনা শত ভাগ।
আমার ভেতরের টালমাটাল ভাব দেখে শাফায়াত ভাই আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, আরে ভাই এতো ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন? ঘটনা আছে।
আমি আবার অবাক হয়ে বললাম, কি ঘটনা, পরিষ্কার করে বলেন ভাই, আপনি পাখী ভাইয়ের মতো ঘটকালি শুরু করে দিলেন, দেখছি।
তিনি উর্ধ্বমুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, আপনি চাইলেও আশা আপনাকে বিয়ে করত না। তার অন্য পছন্দ আছে। ছেলে তার সাথে পড়ে। মা-বাবা জানে না।
তাছাড়াৃ
–তাছাড়া কি?
ছোট মেয়ের লেখাপড়ার দিকে নাকি মোটেও আগ্রহ নেই। সবকিছুতেই উদাস উদাস ভাব। তাই তারা একসাথে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছেন।
সব শুনে আমার ভেতর একটা শান্তি শান্তি ভাব লক্ষ্য করলাম। যুদ্ধ বিরতির সাদা পতাকার মতো। আমি বললাম, শাফায়াত ভাই, আগে বড়বোনের বিয়ে হয়ে যাক, পরে নাহয় দেখা যাবে।
বিপাশাকে আমি খুব পছন্দ করেছি এটা ঠিক কিন্তু বিষয়টি আমি এখনো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। খুব অসভ্য একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। একদম হাট বাজারের মতো, অবস্থা।
উনি হেসে বললেন, সেটেল ম্যারেজ হাট বাজারের মতোই তো ভাই। কেবল পাত্রপাত্রী হাটে উঠে না, এই যা। ঘরে, মার্কেটে পার্কে দেখাদেখি হয়। মেয়েরা পুরুষ বাছাই করে পুরুষেরা মেয়ে।
বলুন দেখি, আপনি ওই বাসায় প্রেম করতে গিয়েছিলেন? না, কনে দেখতে?
উনি নিজের চেয়ারেই নড়ে চড়ে বসলেন।
–আমি নই, আপনি আমাকে টেনে নিয়ে গেছেন।
–আমি নই, বলুন আপনার ভাগ্য আপনাকে টেনে নিয়ে গেছে। “অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নেয়ামত কে অস্বীকার করবে?”
বিয়ের জটিলতা যতোই হালকা হচ্ছিল আমার ভেতরে আনন্দের সাথে যন্ত্রণাটাও ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো এদিক ওদিক করতে লাগলো।
আমি শান্ত হয়ে বললাম, বিপাশা আর আমার বয়সের গ্যাপ বিশ্রী রকম বেশি হয়ে গেলো, নয় কি?
শাফায়াত ভাই আমাকে একটু ধাক্কা মেরে বললেন, আরে ভাই, বিয়েটা তো নেচে নেচে গিয়ে করবেন শুধু শুধু ক্যাচাল করেন কেনো? আপনাদের মতো আধবুড়োদের নিয়ে এ আরেক সমস্যা, এক পা এগোন দুই পা পেছান। সব কাজেই হাঁটু কাঁপে। একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ।
আমি উনার কথা মতো উঠে দাঁড়ালাম। উনার সাথে সাথে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।
আবার চেয়ারে বসে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করলেন, শুনুন, শুভকাজে সবসময় সোজা পথে ভাববেন। জোড়া মিলে গেলে বয়সের ব্যবধানটা কোনো বিষয় না। বরং যতো বেশি ততো শান্তি। কন্যা হোক, বা বর হোক।
রসুলল্লাহ (সঃ) যখন প্রথম বিয়ে করেন তখন উনার বয়স ছিল পঁচিশ আর মা খাদিজার চল্লিশ। উনাদের বিবাহিত জীবন খুব সুখের ছিল। বিবি আয়েশা (রাঃ) কে যখন বিয়ে করেন তখন উনার বয়স ছিল পঞ্চান্ন আয়েশার (রাঃ) বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। সে জীবনেও দুজনের সুখের অভাব ছিলনা। এ-যুগেও এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে, কেউ কোথাও উঁহু-আহা করছে না। আর জোড়া না মিললে সব বয়সেই সমস্যা।
আমি শাফায়াত সাহেবের বক্তৃতায় কান না দিয়ে ভাবছিলাম বিপাশার কথা। ও কি রাজি হয়েছে না জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। একসময় শাফায়াত ভাইকে বললাম, বক্তৃতা তো ভালোই দিলেন কিন্তু বিপাশা কি এ বিয়েতে রাজি আছে?
–নিশ্চয়, রাজী না হলে তো আপনার হবু শ্বশুর আমাকে ডেকে নিয়ে তারিখ ঠিক করতে বলতেন না। দুটো মেয়ের একসাথেই বিয়ে হবে, একই দিন। আমি বললাম, আমার নিজের কোন তাড়া নেই খুব ধুমধাম করে বিয়ে করারও ইচ্ছে নেই। উনাদের পছন্দের তারিখেই আমি রাজি।
শাফায়াত সাহেব আবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’, বলে সেদিনের মতো উঠে গেলেন।
আমি পুরো বিষয়টি নিয়ে আবার প্রথম থেকে ভাবতে শুরু করলাম। একটা অস্বস্তি পুরো ভাবনা জুড়ে থেকেই গেলো। বিপাশার সাথে বিয়ের পরেও ওই অস্বস্তিটা থেকে যাবে নিশ্চিতভাবে। তবুও একটা সুখ জাগানো সুখ জাগানিয়া অনুরণন অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেলো। আমার নির্ঝঞ্ঝাট পরিবারে তার কোনো অনাদর হবে না, আমার নিজের বিশেষ কোন প্রত্যাশাও কারো কাছে নেই। কিন্তু বিপাশা সম্পর্কে আমি তো কিছুই জানি না। ওর সাথে আমার একবাক্য আলাপ পর্যন্ত হয়নি। মনে পড়ে গেলো কয়েকজন বন্ধুর কথা। তাদের কেউ কেউ দীর্ঘদিন প্রেমের পর বিয়ে করে বছর পার না করতেই নানা রকমের টানপোড়নের ভেতর দিয়ে জীবন পার করছে। তবেও কেউ কেউ ভালোও আছে। আগের দিনের মানুষ বিয়ে করতো কথা না বলে না দেখে, তারা যে খুব অসুখী ছিল তাও নয়।
অসুখী হবার কারণগুলো যতো সহজে আলাদা করা যায় সুখী হবার কারণ আলাদা করা ততো সহজ নয়।
এর কারণ সম্ভবত সুখে থাকে বলেই।
সুখটা কি কেবল অনুভূতি? এই যে আমি আছি একা একা, সুখেই তো আছি। তবে বিয়ে করে কেন একটা ঝুঁকির ভেতর যাচ্ছি? সুখ বৃদ্ধির আশায়?
যদি তা হয়, কিসের সুখ? দৈহিক না মানসিক? না অন্যকিছু?
এসব ভাবতে ভাবতে পশ্চিমের শেষ আলো বিড়াল পায়ে লাফিয়ে আমার চোখের ওপর এসে পড়ে। সে রাঙা আলোয় চোখ রেখে স্পষ্ট দেখি তার মুখ। চোখ বন্ধ করলেও দেখি। বিপাশা, একটা স্নিগ্ধ বালিকার মুখ। সে এখন কেবল আলো আর আঁধারে নয় জয়গা করে নিয়েছে অন্তর জুড়ে। দিঘির সব জল নিয়ে শান্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে, লাল ফিতায় বাঁধা দু’বেণী পিঠের ওপর দুলছে। তার কালো চুল বেয়ে ধ্রুপদী সন্ধ্যা গড়িয়ে কোকিল কালো রাত এসে হাজির হয় ঘরে। কুহু কুহু ডাকে।
লাইট জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না, এই অন্ধকারটাকেই এখন ভালো লাগছে।
পনের দিনের মাথায় বিপাশার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো।
একসাথে দুটো বিয়ের কথা থাকলেও বড়বোন আশা’র বিয়ে হয়নি। জানা গেলো দু’জনেই পড়ছে তাই এ মুহূর্তে বিয়ে করতে আশা রাজি নয়। ঘরোয়া বিয়েতে উপস্থিত অল্প ক’জনের ভেতর কোথাও আশাকে আমি দেখতে পাইনি। সম্ভবত আজ সে এ বাড়িতে নেই। অকারণে একটা কুৎসিত দৃশ্যের মুখোমুখি হতে নিশ্চয় তার মন সায় দেয়নি।
বিয়েবাড়ির কোথাও কোনো উৎসব, আনন্দের আলামত নেই। শশুর শাশুড়ি এমনকি ছোট আশিকের মুখেও না। একটা বিপণœ বিকেলে সকলের মনে কালো ছায়া রেখে আমি বিপাশাকে বাসায় নিয়ে আসি।
বাসায় এসে কিছুটা স্বস্তি বোধ করি। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। মনের ভেতরে থাকা অপরাধবোধটা জেগেই ছিল। একসাথে আশা’র বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো অস্বস্তিটা এভাবে থাকতো না। কিন্তু হয়নি। হয়নি বলেই নিজকে প্রতারকের মতো মনে হচ্ছিল। যদিও কোনোরূপ প্রতারণা সজ্ঞানে আমি করেছি বলে মনে হয়নি। মানুষ সবসময় দোষটা অন্যকারো উপর চাপিয়ে দিতে পারলে হালকাবোধ করে। এই মুহুর্তে আমার যা কিছু হীনতা, দীনতা শ্বশুর বাড়ির লোকের ওপর চাপিয়ে দিয়ে হালকা হতে চেষ্টা করি। তারা না করে দিলেই এতো কিছুর অবতারণা ঘটতো না। নিজকে নিজে প্রবোধ দিই, আমি কোনো দোষ করিনি। কাউকে ভালো লাগা অন্যায় কিছু নয়। সামাজিক, ধর্মীয় বিধান বজায় রেখে বিয়ে করা, অপরাধ নয়।
আমি লজ্জা, নীচুতার শিকল ভেঙে আমার সমগ্র নিয়ে বিপাশার কাছে সমর্পিত হই।
বিপাশার সাথে আমার সংসার জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছে। এ তিন বছরের মাঝে বিপাশাকে কখনো অসুখী মনে হয়নি। আমিও নিজেও বেশ খুশি। আমরা আস্তে আস্তে নিজেদের ভালোলাগা, পছন্দগুলোকে একত্রিত করে একসাথে উপভোগ করি।
ঘরে রান্না না হলে দুজনে বাইরে গিয়ে খেয়ে আসি। অভিযোগ, অনুযোগ কারো কাছেই নেই।
আমি এখন আর সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকি না, রান্না ঘরের কাজে বিপাশাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাই। মাঝেমধ্যে নিজেই রান্না করি। চা বানিয়ে তাকে নিয়ে বারান্দায় বসে চা খাই, আকাশ দেখি। আমার মশারী এখন সকালে নিয়মিত খোলা হয় রাতে লাগাই। বিছানার চাদর সবসময় টানটান থাকে।
সব ঠিকঠাক থাকলে তিনমাস পর আমাদের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসবে। আর কিছুদিন বিপাশার মা-বাবা এখানে আসবে বলে জানিয়েছে।
আমার শ্বশুর এলপিআর শেষ করে পিরোজপুর উপশহরে পিতৃভূমিতে গিয়ে থিতু হয়েছেন। আর বড় মেয়ে আশা লেখাপড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে। আপাতত একটি বেসরকারি কলেজে কেমিস্ট্রির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় টিকে ভাইভা’র প্রস্তুতি নিচ্ছে জোরেসোরে। খুব সম্ভাবনা আছে টিকে যাবার।
বিয়েটা এখনো করেনি, আদৌ করবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। একেবার নাকি একেক কথা বলে।
আমার বিয়ের সময় একটা ছেলের সাথে তার প্রেমের কথা শোনা গেলেও পরে জেনেছি ওটা সঠিক ছিলনা। আমার মতো নির্লজ্জ, নিচু পাত্রকে ওর মা-বাবা হাত ছাড়া করতে চায়নি জেনে আশা প্রেমের নাটকটির অবতারণা করে। তার মা-বাবা কে খুশি রাখার জন্য।
সেদিনের সেই প্রথম দেখার পর তার সাথে আমার আর কখনো দেখা হয়নি। একই শহরে থাকলেও আমার বাসায় সে কখনো আসেনি। এমনকি তার ভাইবোনকে দেখতেও না।
আমার শালক আশিক আমাদের সাথে থাকে। সিলেট পাইলট স্কুলে পড়ে। দু’তিনমাস মাস পর পর আমরা তিনজন এদিকে ওদিক বেড়াতে যাই।
বছরে দু’এক বার বিপাশা, আশিক পিরোজপুর যায়। মা-বাবার সাথে কয়েকদিন বেড়িয়ে আসে। আমি খুব একটা যাই না। উনাদের সামনে গিয়ে আমি এখনো মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারি না। একটা অপরাধবোধ আমাকে কুঁজো করে রাখে।
আমরা দুজন খুব ভালো আছি। কিন্তু ভালো নেই বিপাশার পরিবারের কেউ। বিপাশার মা-বাবার মন সবসময় বিষন্ন থাকে। একটা অপরাধবোধ হয়তো তাদেরকেও তাড়িয়ে বেড়ায়। আশা মা বাবার কাছে খুব কমই যায়। দিনে দিনে মা-বাবার প্রতি তার রাগ-ক্ষোভ বাড়ছে। নানাভাবে তেমন কথা কানে আসে। পুরো বিষয়টার উপর আমার স্ত্রী বিপাশার কোন হাত ছিলনা। তবুও তার ওপরও আশা’র অনেক ক্ষোভ। দেখা হলে ভালো করে কথা বলেনা।
মা-বাবার প্রতি তার রাগ যতোই থাকুক সবচেয়ে বেশি রাগ সম্ভবত আমার উপরই।
সেটা হওয়াই সংগত। সবকিছুর পেছনে তো আমিই, আমার অপ্রতিরোধ্য বাসনা। আমার নিজের দেয়া ‘অ-প্রেম’ কেই এখন আমার কাছে অমিয় প্রেম বলেই মনে হচ্ছে। কারণ সে প্রেমটা আমাদের দুজনকেই আচ্ছাদিত করে আছে পৃথিবীর ওপরে বিরাজমান ওজন স্পেয়ারের মতো।
আশা যেদিন বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে কোন একটি ক্যাডারে জয়েন করবে সেদিন থেকে হয়তো তার অভিমান কমতে থাকবে। একদিন হাইহিল পায়ে খটখট শব্দে হেঁটে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, আপনার মতো একটা পুরুষ আমি এখন পুষতে পারি।
হ্যাঁ, সত্যি করেই বলছি, এমন একটা কথা আমি আশা’র মুখ থেকে শুনতে চাই। আমার মনের প্রশান্তির জন্যই চাই।
আজিজুল হক, গল্পকার