২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের শৃংখলমুক্ত করার চূড়ান্ত দিন এটি। যুগে যুগে শোষিত নির্যাতিত বাঙালি ধীরে ধীরে মুক্তির সোপানের দিকে এগুচ্ছিল সন্তর্পনে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে বীর বাঙালি। এই লাল সবুজের স্বাধীনতার পতাকা অর্জনের জন্য বিশাল ত্যাগ দিতে হয়েছে। ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছে। এক কোটি মানুষকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অসংখ্য মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সুতরাং অনেক দাম দিয়ে কেনা এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অতি মর্যাদাবান।
৫৪তম এই স্বাধীনতা দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি লাখো শহিদদের। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার লাল সূর্য। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়েছে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর সাহসী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাকে। যাঁরা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধকে যৌক্তিক পরিনতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পায় আমাদের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের অনেক সূচকে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ও নীতি থেকে আমরা অনেকটা বিচ্যুত হয়েছি। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আমরা এখনো গড়তে পারিনি। অর্থনৈতিক লড়াইয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন দেশে দিন দিন কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে দারিদ্র। আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা সঠিকভাবে প্রবহমান না থাকলে দেশে দুর্বৃত্তায়নের সৃষ্টি হয়। সুশাসনের অভাবে দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়।
সুতরাং স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে আমরা নতুন করে শপথ নিতে পারি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও ঈদ উপলক্ষে আন্দরকিল্লা’র সকল পাঠক, লেখক ও শুভাকাক্সক্ষীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।