সরকার হুমায়ুন
সৃষ্টির শুরুর দিকের ঘটনা। আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। তারপর মানুষ এবং অন্যান্য জীব জন্তু সৃষ্টি করে ভাবলেন- কি করে এই সৃষ্টি বৈচিত্র্যের প্রবাহ ধারা বজায় রাখা যায়! তিনি জীবজগতের সকল প্রাণীদের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রাণী রাজ্যে এই ক্ষমতা প্রদানের সময় প্রত্যেক প্রাণীদের মতামত নিলেন। যেমন – তিনি প্রথম মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনের জন্য তোমাদের প্রজননের সময়কাল আমি দশ বছর নির্ধারণ করতে চাই। কি বলো?’ মানুষ মন খারাপ করে বলল, ‘মাত্র দশ বছর! আর বাড়ানো যায় না? ‘ আল্লাহ বললেন,’ সরোতো, ‘আমাকে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দাও।’
মানুষ মনে দু:খ নিয়ে আল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। তিনি বানরকে বললেন,’তোমাদের যৌন জীবন বিশ বছর হলে কেমন হয়?’
বানর বলল, ‘ মহান আল্লাহ! আপনি অতি দয়াবান। তবে যৌনতার জন্য আমাদের দশ বছরই যথেষ্ট। আল্লাহ খুশি হয়ে বললেন ,’তাহলে তোমাদের বরাদ্দ থেকে দশ বছর মানব জাতিকে দিয়ে দিলাম।’
তবুও মানুষ বেজার মুখে আল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। আল্লাহ বরাদ্দ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে থাকলেন।
এরপর আল্লাহ সিংহকে ডাকলেন। আল্লাহ সিংহের জন্যও বিশ বছর যৌনকাল বরাদ্দ রেখেছিলেন। সিংহ বলল, দশ বছরই যথেষ্ট। তখন আল্লাহ মানুষের যৌন জীবনকাল আরও দশ বছর বাড়িয়ে দিলেন। এই দশ বছর সিংহের বরাদ্দ থেকে কেটে নিয়ে মানুষকে দেয়া হলো।
এবার আল্লাহ ডাকলেন গাধাকে। তাকেও সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনের জন্য বিশ বছর কাল নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হলো। গাধা বলল- দশ বছরই যথেষ্ট। গাধার ছেড়ে দেয়া দশ বছরও মানুষকে আল্লাহ বরাদ্দ দিলেন। মানুষ খুশিতে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানালেন। হাসিমুখে আল্লাহর নিকট থেকে চলে এলো।
বিশেষজ্ঞ সামস জী বলেন,’ মানুষ তার যৌন জীবনের প্রথম দশ বছর খুব সুখে শান্তিতে পার করে।কেননা , সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনে আল্লাহ মানুষকে দশ বছর সময় দিয়েছিলেন। যৌনতার জন্য মানুষের এটিই আদর্শ সময়কাল। এই দশ বছর পর্যন্ত কোনো প্রকার ঝুট ঝামেলা ছাড়াই তারা যৌনসুখে বিমোহিত থাকে। দশ বছর পার হওয়ার পর শুরু হয় বাঁদড়ামি। পরকীয়ায় আসক্তি দেখা দেয়। নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা শুরু হয়।তবে কি বানরের বরাদ্দকৃত সময়কাল ধার নেয়ার কুফল থেকে এমনটি ঘটে থাকে? এই দশ বছর সময়কালে মানুষ জড়িয়ে পড়ে বহু বিবাহে। যার ফলে মানব সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। এভাবে মানব মনের চঞ্চলতার দশ বছরের পরিসমাপ্ত ঘটে।
তারপর মানুষের যৌন জীবনে আসে রাজসিক জীবন। যেটি সিংহের মতো রাজকীয়। কেননা, যৌন জীবনের এই দশ বছর কাল মানুষ পেয়েছে সিংহের কাছ থেকে।
মানুষের শেয জীবনের যৌনজীবন একটি স্বভাবজাত বিষয়। যেমন – গাধায় পানি গোলা করে খাওয়ার স্বভাবের মতো। এতে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না। সব কিছু চলে অভ্যাসবশত। যৌন জীবনের এই দশ বছর কাল মানুষ পেয়েছে গাধার কাছ থেকে।’
সামস জী আরও বলেন, ‘এই অভ্যাসের বিষয়টি অন্য প্রাণীতে নেই। মানুষ ব্যতীত কোনও প্রাণী সারা বছরই যৌন সম্পর্কে আগ্রহী নয়। তাদের একটি প্রজনন ঋতু আছে। সঙ্গমের ঋতু। সেই মৌসুমটি একবার চলে গেলে … বছরের বাকি অংশে কেউ যৌন সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামায় না। যৌনতা পাওয়া যায় না পাখির মধ্যে। অন্যান্য জীব জন্তুর মধ্যে। এমনকি তাদের সঙ্গম মৌসুমে দেখা যায় না যে, তারা প্রচুর খুশি। আমরা পাখি দেখি, প্রাণী দেখি। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে,তাদের যৌন ক্রিয়াকলাপকে একটি স্বাভাবিক জিনিস বলে মনে হয়। মনে হয় প্রকৃতি তাদের ওপর এটি জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে খুশি দেখাচ্ছে না। শুধু ভালোবাসার জন্য একটি কুকুর আরেকটার দিকে তাকায় না। সে এটি করছে যেন বাধ্য হয়ে। কিছু জৈবিক বাধ্যবাধকতা, অন্যথায় সে আগ্রহী না। সে কারণেই প্রাণীজগতে বিয়ের বিষয়টি নেই। সঙ্গমের মৌসুম শেষ হয়ে গেলে – একে অপরকে বিদায় জানায়!
তবে মানুষের কাছে এটি অভ্যাস। মানুষের কাছে এটি একটি জৈবিক প্রয়োজনীয়তা। একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
গল্পের শেষে সামস জী প্রশ্ন রাখেন, ‘যৌনতা নিয়ে এত কৌতূহল – এত আগ্রহ – এত উচ্ছলতা, এটি কেন শুধু মানুষের মধ্যে? কেন যে এ যুগের শিক্ষিতা অষ্টাদশীরা প্রবীণদের প্রেমে পড়ে? এটি রহস্যময়। আর এই রহস্যের জট খুলতে ইউ টিউবাররা ব্যস্ত সময় পার করছে।
সরকার হুমায়ুন, কল্পবিজ্ঞান লেখক