বিজয়ের ৫২ বছর পরে এসে পেছনের দিকে তাকালে সত্যি অবাক হতে হয়। আমরা কী ছিলাম, এখন কী হয়েছি? যে বাঙালি জাতিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল সেই বাঙালি এখন বিশ্ব সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, অর্জন করেছে মর্যাদার আসন। উন্নয়নের বহুবিধ সূচকে প্রতিবেশী অনেক দেশকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমেÑখাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলা করছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। গোটা জাতি এখন তথ্য প্রযুক্তিতে অভ্যস্থ হয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনীতিতে হয়েছে বিস্তর অগ্রগতি।
বীরের এই অমিত সম্ভাবনাময় জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানি ও তার দোসররা মিলে চেয়েছিল দমিয়ে রাখতে। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। দীর্ঘ নয় মাস বাংলার কৃষক-শ্রমিক-জনতা একাকার হয়ে যুুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৭১ সালের ষোল ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্র্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য উদিত হয়। কিন্তু হানাদার বাহিনী শুধু ত্রিশ লক্ষ বাঙালি নিধন করে ক্ষান্ত হয়নি ধ্বংস করে দিয়েছে এ দেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো, লুট করে নিয়েছে ব্যাংকের টাকা। এ জাতি যাতে ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘তোমরা আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবানা’। সত্যি পারেনি। অদম্য সাহসী বীরের জাতি বাঙালি স্বাধীনতার পর থেকেই নিজেদের আত্মউন্নয়নে মনোনিবেশ করে। বিজয়ের ৫২ বছর পর এসে পেছনে তাকালে বিস্ময়ে অবাক হতে হয়। একাত্তরে আমরা কী ছিলাম, এখন আমরা কী হয়েছি?
কিন্তু এখানেই থেমে গেলে চলবে না। আমাদের যেতে হবে আরো বহুদূর। আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। এ দুটো খাতে আমরা চলমান বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন। আর দেশ থেকে ঘুষ, দুর্নীতি, বিতাড়িত করতে পারলে এ দেশটা সত্যি সত্যি সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে। আসুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের ঘাটতিগুলো পূরণ করি। আমরাও একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়াবো বুক উঁচিয়ে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।