এখন সময়:রাত ৯:৩৫- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৯:৩৫- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

যৌতুক 

লুনা রাহনুমা:

আমার আব্বার ইচ্ছে ছিল আমাকে বিয়ে দিয়ে কমপক্ষে নগদ দশ লক্ষ টাকা যৌতুক নিবেন মেয়ের বাবার কাছ থেকে। আমি দেখতে সুপুরুষ, পোশাকে আশাকে আধুনিক, আচার ব্যবহারে ন¤্র, আমার মতো ছেলে অধিকাংশ মেয়ের স্বপ্ন-পুরুষ। মেয়ের বাবা-মায়েরাও মনে মনে আমার মতো উপযুক্ত ছেলেকে খোঁজেন মেয়ের জামাই হিসেবে। কিন্তু চাইলেই তো আর আমার মতো ছেলেকে জামাই হিসেবে পাওয়া সহজ নয়, কারণ আমাকে নগদ টাকা দিয়ে কিনতে হবে আমার বাবার কাছ থেকে। আমার বাবা ভীষণ রকমের রাগী মানুষ, উনি একবার রেগে গেলে আমাদের ঘরে আমার মা সহ আমরা সবাই একরকম কাঁপতে থাকি, ভয়ে। এমনকি আমাদের ঘরের প্রাণহীন আসবাবপত্রগুলিও প্রাণলাভের আশংকায় কেঁপে উঠে। সেকি ভয়ানক উনার ক্রুদ্ধ হুঙ্কার!

আমার বড় ভাই শিপন, আমাদের চাচাতো বোন রেখা আপাকে ভালোবাসত। ছোটবেলা থেকে তাদের দুজনের প্রেম। তখন ভাইয়া প্রকৌশল বিদ্যা পড়া শেষ করে চাকরি করছে দুই বছর হলো। ভালো বেতন পায়। রেখা আপারও মাস্টার্স শেষ। আব্বার রাগের ভয়ে ভাইয়া আমাদের বাড়িতে কাউকে বিয়ের কথা বলতে পারছিল না।

ওদিকে রেখা আপার বিয়ের জন্য আমার বড় চাচা চিন্তা করছেন খুব। রেখা আপা গো ধরেছে, শিপনকে ছাড়া আর কাউকে সে বিয়ে করতে পারবে না। বাধ্য হয়ে বড় চাচা একদিন নিজেই এসে তাঁর মেয়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ার বিয়ের কথা বললেন। আমার আব্বা যথার্থ সম্মানের সাথে বড় ভাইকে সাফ জানিয়ে দেন, শিপনের মতো এমন ভালো বেতনের ইঞ্জিনিয়ার জামাই পেতে হলে কমপক্ষে বিশ লক্ষ টাকা নগদ দিতে হবে।

 

কিন্তু এটাকে যৌতুক বলা যাবে না। এটা ভবিষ্যতে মেয়ের সুখী জীবনের জন্য বাবার দেয়া উপহার।

 

আমরা সবাই একমত হলাম আমার বাবার কথার সাথে। বাবা তো ঠিকই বলেছেন। রেখা আপা মাস্টার্স পাশ হতে পারে, কিন্তু আমার ভাইয়ের তো একটা মান-সম্মান আছে, নাকি! যদু, মধু, কদুরা ও আজকাল লাখ পাঁচের কমে কারো মেয়েকে ঘরে তোলে না। আমরা ঠকে যাব নাকি রেখা আপা চাচাতো বোন বলে!

 

আমার বড় চাচা অনেকক্ষণ তার আদরের ছোট ভাইটির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মনে হচ্ছিল তিনি নিজের কানে যা শুনলেন, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না। আরো বেশ কিছুক্ষণ পর একটিও কথা না বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ান চাচা। ধীরে চলে যান আমাদের বাড়ি থেকে।

 

শিপন ভাইয়ের প্রেমে পাগল রেখা আপাকে বড় চাচা বাড়ি ফিরে কী বলেছিলেন আমরা তা শুনিনি, তবে তার একমাস পর রেখা আপার বিয়ে হয়ে যায় আমাদের চেয়ে অনেক বড় ঘরে। খানদানি পরিবারের বৌ এখন রেখা আপা। সন্ধ্যাবেলা দুলাভাইয়ের সাথে বড় জিপে করে আসে আমাদের এলাকায়। আমার ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়া তখন অফিস থেকে সিএনজি করে ফিরেছে হয়তো। ভাইয়ার দিকে ফিরেও তাকায় না রেখা আপা। সুদূর অতীতে যৌথ জীবনের যতসব স্বপ্ন এঁকেছিল তারা দুইজন একসাথে, সেসবের একটিরও ছায়া পড়ে না রেখা আপার জৌলুশভরা কোমল চাহনিতে। ভাইয়া অবশ্য পড়ে আব্বার কথা মতোই বিয়ে করেছে সেখানে, যেখানে অর্থনৈতিক লাভ বেশি হবে বলে কাগজের হিসেবে দেখা গিয়েছিল।

*

আমার আব্বার মতন সৌখিন মানুষ খুব কম দেখেছি আমি জীবনে। সবসময় ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরতেন। উনার কাপড় ঘরের সবার কাপড় থেকে আলাদা করে ধোয়া হতো। বিছানার চাদর, গামছা, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, গেঞ্জি, মোজা, আন্ডারওয়ার, রুমাল, আর সবকিছু। আব্বার কাপড় শুকানোর জন্য আলাদা তার টানানো ছিল বাড়ির ছাদে। সেখানে অন্য কারো কাপড় ছোঁয়ানো নিষেধ ছিল। আব্বা নিজের খুব যতœ করতেন। ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া, গোসল করা, হাঁটতে যাওয়া, ব্যায়াম করা, ঘুমাতে যাওয়া সবকিছুর রুটিন করা ছিল। সংসারে কোথাও বিরাট কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও আমার আব্বা উনার রুটিনে হেরফের করতেন না। আব্বাকে দেখে আমি শিখেছি কেমন করে নিজেকে ভালোবাসতে হয়। আর সবাই যাই বলুক না কেনো, সবার উপর আমিই সেরা।

 

আমাদের গ্রামের সকল বিশেষ কাজে আব্বার ডাক পড়ত মুরুব্বি হিসেবে। আব্বা একটি মসজিদের ইমাম হয়েছেন অনেক বছর আগে। কয়েক গ্রামের মানুষ উনাকে দারুণ সমীহ করে। আব্বা নিজে উকিল থেকে অনেকগুলো বিয়েও দিয়েছেন। সবগুলো বিয়েতে তিনি বিয়ের পাত্রকে মোটরসাইকেল, সাইকেল, নগদ টাকা, বাজারে দোকান করে দেয়া, বা কিছু না কিছু মোটা আয় পাইয়ে দিতেন মেয়ের বাবার কাছ থেকে। বিয়ের দিন তাই বিয়ের পাত্র ও পাত্রী দুই বাড়ি থেকেই অনেক খাওয়া দাওয়া আসত আমাদের বাড়ি। আমরা নিজের বাড়িতেও উৎসব উদযাপন করতাম সেই দিনগুলিতে।

 

আমরা দুই ভাই ছিলাম। আমাদের কোনো বোন ছিলো না। অবশ্য বোনের জন্য আমাদের কারো মনে কোনো হাহাকারও ছিল না। আব্বা বলতেন, ঘরে মেয়েবাচ্চা জন্ম হলে শুধু নিয়ে যায় আজীবন। দাও, দাও, আর দাও। পয়সা খরচ করে বড় করো, এত্তোগুলো টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দাও, বিয়ের পরেও ছেলের বাড়ির নানা আবদার মিটাও, ঈদে-চাঁদে নানান ছল ছুতোয় এটা দাও, সেটা দাও! তাই মেয়েসন্তান মানেই এক্কেবারে অযথা খরচা আজীবন। তারচেয়ে কারো যদি দশটি সন্তান হয়, দশটিই যেন ছেলে হয়। তার মতো সুখী আর কে আছে এই ভবে, যার ঘরে একাধিক পুত্র সন্তান জন্মেছে!

*

পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমি খুব আদরে বড় হয়েছি। লেখাপড়ার দিকে আমার ঝোঁক কম ছিল ছোটবেলা থেকেই। আসলে লেখাপড়া আমার মাথায় ঢুকত না। আমি সেজেগুঁজে ফুলবাবু হয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতাম বেশি। আব্বার মতো নিজের যতœ করি খুব মন দিয়ে। মাড় দিয়ে ইস্ত্রি করে কাপড় পরি। স্কুলে যাওয়া আর আসার সময় এলাকার সুন্দরী মেয়েদের কার কী লাগবে, খুব দায়িত্বের সাথে সেসব করে দিতাম। বাড়ির বাজারের টাকা চুরি করে বন্ধুদের হোটেলে নিয়ে চা সিঙ্গারা খাওয়াতাম। এলাকায় কারো বাড়ির পানির কল নষ্ট, ঘরের চালার উপরে ময়লা জমে পানি আটকে আছে, আমি দৌড়ে উঠে সব পরিষ্কার করে দিতাম একেবারে বিনা পয়সায়। কারো বুড়ো দাদাকে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে নিতে হবে, সঙ্গে যাবার কেউ নেই, ডাক পড়ত আমার। আমি ছিলাম

 

 

সকল কাজের কাজী। আমার আম্মা আমাকে লেখাপড়ায় মনোযোগী করাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমার আব্বা জানতেন, আমাকে বিয়ে দিয়ে যৌতুক নিয়ে জমজমাট কোনো ব্যবসা সাজিয়ে দিবেন আমাকে তিনি। তাই আমার আসলে চিন্তার কোনো কারণ ছিল না। আমার বাবার মতো আমিও জানতাম, পুরুষ মানুষ সোনার আংটি, মূর্খ হলেও এর কাঠামো অনেক দামি।

 

টেনেটুনে ডিগ্রিটা পাশ করে আমি ছোটখাটো একটি ব্যবসার খোঁজে উঠে পড়ে লাগলাম। ভাইয়ার মতো চাকুরীজীবি হবার ইচ্ছে নেই। আমি বাণিজ্য করব। বাণিজ্যে কাঁচা টাকা হাতে আসে। কত মানুষ হাবিজাবি ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে গেল! আমি পড়া মুখস্ত করে পরীক্ষায় পাশ নাম্বার তোলার চেয়ে মাথা খাটিয়ে টাকা উপার্জনের জন্য নিজেকে বেশি যোগ্য মনে করি সেই ছোটবেলা থেকেই।

 

মফস্বলে বাবা-মা আর ভাইয়াকে রেখে চলে এলাম ঢাকায়। সারাদিন নানারকম মানুষের সাথে যোগাযোগ করে একটা ব্যবসার ধান্দা করতে থাকি। বিভিন্ন বয়েসী লোকের সাথে উঠা বসা করা শিখে ফেললাম। কিন্তু সবখানেই যেন একটা শনির দশা আমার কপালে। কোনোকিছুই ঠিক জুৎ হয় না। না হলো মফস্বলের বাজারে, না হলো রংবেরঙের ঝালর টানানো বর্ণিল এই ঢাকা শহরে।

 

বছর পাঁচ চেষ্টা করেও যখন কিছুই করতে পারলাম না তখন আমার আব্বার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। তিনি আমার সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। রেগে হুংকার ছুঁড়েন আব্বা। জরুরি তলব পাঠান আমাকে ঢাকা শহর ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে।

 

গ্রামের লোকজনের কাছে সংবাদ পেলাম পিতা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। আমাদের কয়েক গ্রাম পরের গ্রামের এক ধনী লোকের একমাত্র কন্যা। তারা আমার বাবার দাবি মতন নগদ টাকা দিতে রাজি। আমাকে বিদেশে পাঠানোর খরচও দিবে বিয়ের পর, যদি আমি চাই। আর দেশে থাকলেও খারাপ হবে না। কারণ হবু শশুরের সম্পত্তি দেখাশোনা করে রাখলেও আমার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যাবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

 

কিন্তু ততদিনে আমি ঢাকার আলো বাতাসে নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছি। আর আমার বয়স ত্রিশ পার হয়ে গিয়েছে। ঢাকার দূষিত বায়ু, ভেজাল খাবার, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম, গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছি। ফার্মগেটের যে মেসটিতে থাকতাম আমি, তার জানালায় দাঁড়িয়ে হাজারবার কতোরকমে ভেবেছি কীভাবে এই ঢাকা শহরে টিকে থাকা যায়! হাত জোর করে সর্বশক্তিমানের কাছে মোনাজাত ধরে বলেছি, নিচের রাস্তায় শত শত গাড়ির ভিড়ে একটি রংচটা, টেপ খাওয়া, ছোট্ট মারুতি অন্তত আমার হউক!

 

কিন্তু অনেক অপেক্ষার পরেও কোনো পথই যখন আমাকে আমার স্বপ্নের দিকে টেনে নিলো না তখন উপায়ান্ত না দেখে ধীরে ধীরে মনস্থির করছিলাম এবার আব্বার কথা মতো গ্রামেই ফিরে যাব। লাভের হিসেবে যেখানে লভ্যাংশ সর্বাধিক, সেখানেই বিয়ে করে ফেলব। কিন্তু গ্রামে যাবার মাত্র কিছুদিন আগেই আমার সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে গেল। এই ঢাকা শহরেই। কী অবিশ্বাস্য, তাই না!

*

ধানমন্ডির লেকে বিকেলে হাঁটতে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। পরস্পরের মোবাইল নাম্বার বিনিময় করেছি একসময়। আর মোবাইলে কথা হয়েছে আমাদের অনেকদিন। মেয়েটি শিক্ষিতা, একটি ভালো চাকরিও করে। ঢাকায় ওদের নিজেদের বাড়ি। আমার মাথায় হিসেব কষা হয়ে গিয়েছিল দ্রুত। যদিও সে ডিভোর্সী, একটি ছোট মেয়ে আছে ওর। কিন্তু তাতে কী! আমি রাজি। সব অবস্থাতেই আমি ছিলাম ওকে বিয়ে করতে। আর বিয়ের পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই ভীষণ প্রেম হলো আমাদের দুদজনের মধ্যে। প্রেমে অন্ধ আমার ঢাকাইয়া প্রেমিকা আমার বেকারত্ত্ব, অসহায়ত্ত্ব, অক্ষমতার সবকিছু মেনে নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল।

 

আর প্রেমের মূল্য দিতে গিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো আমার আব্বার কথা অমান্য করলাম আমি। যৌতুক ছাড়া বিয়ে করলাম। মেসের পাট চুকিয়ে উঠে গেলাম নবনীতার ফ্ল্যাটে। আমাদের তিন বছরের মেয়ে নেহা আমাকে খুব পছন্দ করেছে। সারাক্ষণ আমার পিঠের উপরে লিটল মাঙ্কির মতো বসে থাকে। নিজেকে খুব সুখী মনে হতে থাকল আমার। যদিও একটা ভয় কাজ করত মনে, আব্বা না আবার ছেলের বোকামি সহ্য করতে না পেরে হার্ট এট্যাক করে মরে পড়ে থাকেন গ্রামের বাড়িতে! তবে খুশির কথা যে, তেমন কিছু ঘটেনি। এমনকি কয়েক বছর পর আব্বা নিজে ঢাকায় এসে আমার ও নবনীতার সংসারে থেকে গিয়েছেন সপ্তাহখানেক। নবনীতা মন প্রাণ দিয়ে যতœ করেছে আমার আব্বার।

 

এরপর কতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। আমাদের সুখী দাম্পত্য জীবনে আমি ও নবনীতা আরো দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছি। নবনীতা তার অফিসে প্রমোশন পেয়েছে বেশ কয়েকবার। কর্মদক্ষতা আর কর্মনৈপুণ্যের জন্যে অফিসে ওর খুব সুনাম।

 

আমি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমার স্ত্রী অফিসের কাজ নিয়ে বাড়িতে ব্যস্ত থাকলে, ওকে আমি একদম বিরক্ত করি না। নবনীতা যাতে ওর ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারে তাই সব সময় ওকে খুশি রাখতে চেষ্টা করি। মাস শেষে নবনীতা বেতনের পুরো টাকা আমার হাতে তুলে দেয়। আমি হিসেবে করে কিছু টাকা ওকে দেই, ওর খুচরো খরচের জন্য। বাকি টাকা ব্যাংকে জমাচ্ছি। কোথায় কত জমা হচ্ছে, সেসব আমি একাই জানি। নবনীতার মেয়ে নেহা তার বাবার কাছ থেকে একটি ফ্লাট পেয়েছে কয়েক বছর আগে। সেই ফ্ল্যাটের ভাড়া আমি তুলে আনি। ফ্ল্যাট ভাড়ার পুরো টাকা নিজের একাউন্টে জমা করে দেই। আমার শশুরমশাই মেয়ের নামে কয়েকটি এফডিআর রেখে গেছেন। ওনার মৃত্যুর পর নবনীতাকে বুঝিয়ে সেগুলো আমি আমার নামে করে নিয়েছি। আসলে আমার স্ত্রী এত অন্যমনস্ক আর বাস্তবজ্ঞানহীন যে অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলোর সবটা আমাকে একই সামলাতে হয়। তাছাড়াও সে অফিসে এত ব্যস্ত থাকে যে ব্যাংকের লোকজন কখন ওদের মা ও মেয়ের সমস্ত টাকা মেরে দেবে, একেবারেই টের পাবে না নির্ঘাত।

 

নিজেকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। আমার বুদ্ধিমত্তা, চৌকষ মেধা, আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সুদক্ষতা আমাকে আত্মতৃপ্তি এনে দেয় বারবার। গতমাসের শুরুতে হিসেব অনুযায়ী আমার সব একাউন্টে ক্যাশ টাকা জমা আছে তিন কোটির কাছাকাছি। একজন যৌতুক লোভী বাবার ছেলে হয়েও আমি একটি পয়সা যৌতুক না নিয়েই বিয়ে করেছি। তাও আবার একজন ডিভোর্সীকে। কথাটি ভাবলে নিজেকে আমার মহৎ, পুরুষোত্তম, বীর, অথবা এই ধরণের কোনো উপাধিতে ভূষিত করতে ইচ্ছে করে। আমার আব্বার ইচ্ছে ছিল আমাকে বিয়ে দিয়ে কমপক্ষে নগদ দশ লক্ষ টাকা যৌতুক নিবেন মেয়ের বাবার কাছ থেকে। আব্বা আসলে আমাকে একটি দামি সোনার ডিম জুগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যেটাকে বিক্রি করে আমি কিছুদিন চলতে পারতাম। কিন্তু নিজের বুদ্ধি আর পরিশ্রমগুণে আমি সোনার ডিম পাড়া জীবন্ত হাঁস পেয়ে গেছি একটা। এসব পাওয়াকে কখনো যৌতুকের মতো জঘন্য শব্দে কলঙ্কিত করা যাবে না। বরং বলতে হবে আমি আসলে একজন ভাগ্যবান পুরুষ।

 

লুনা রাহনুমা, কবি ও গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে