কামরুন নাহার মিশু
“ঠেঙামারা মহিলা সবুজ সংঘ” নামক ক্ষুুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জনাব হোসনে আরা বেগম প্রথম জীবনে একজন পুরুষ ছিলেন। নাম ছিল আবদুস সালাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লতিফ হলে থেকে অন্য আট দশটা পুরুষ সহপাঠীর সাথে পুরুষের মতো করেই জীবন যাপন করেছিলেন। হঠাৎ ওভারিতে টিউমার ধরা পড়ায় সেটার অপারেশনের পর তিনি রুপান্তরিত হলেন নারীতে। বাধ্য হয়ে চলে এলেন লতিফ হল থেকে মন্নুজান হলে। সুমন, রুমন, রাহাত, রাফিকে বাদ দিয়ে রুমমেট হিসাবে পেলেন আয়েশা, খাদিজা, আনোয়ারা নামক মেয়েদের। স্বাধীন জীবন যাপনের পরিবর্তে মেনে নিলেন শৃঙ্খলিত জীবন। এই সত্য গল্পটা কম বেশি সবাই জানেন। না জানলেও অসুবিধা নেই। গুগল সার্চ করলে বিস্তারিত জানা যাবে। ২০১২ সালে আমি ভবানীগঞ্জ কলেজের লেকচারার ছিলাম। একদিন কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম কলেজের পাশের গ্রামের দুই সন্তানের জননী এক মহিলা নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হয়েছে। মহিলাকে আমি স্বচক্ষে না দেখতে পেলেও আমার খুব কাছের অনেকেই দেখতে পেয়েছেন। তিনি পরবর্তীতে পুরুষ হয়ে মাঠে নাকি অন্য পুরুষদের সাথে ফুটবলও খেলেছেন। শুনতে পেয়েছি এখন তিনি অন্য নারী বিয়ে করে সংসারও করছেন। এসব মোটেও রূপকথা নয়। একেবারে দিনের আলোর মতো সত্য ঘটনা। এসব সৃষ্টির রহস্য। এ রহস্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এবার আসি শরিফ থেকে শরিফা হওয়ার ব্যাপারটা। আস্ত দাড়ি, গোঁফওয়ালা দশাসই পুরুষ, নারীদের সাজ পোশাক পরে রীতিমতো জনসন্মূখে ঘুরে বেড়ায়। শরীরে পুরুষ হয়ে অন্তরে নারী হওয়া নিয়ে গর্ব করে, আনন্দ পায়। বিষয়টা মানসিক সমস্যা। এসমস্যা নিশ্চয়ই সমাধান আছে। এদেরকে কোনোভাবেই গ্রহণ করা উচিত নয়। অথচ অনেকেই এদেরকে প্রমোট করে, পছন্দ করে। তাদের জীবন যাত্রাকে বয়কট না করে প্রশ্রয় দেয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা ঘৃণিত ও নিন্দনীয়। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টা দৃষ্টিকটু।
একটা সমাজের প্রায় পুরুষ যদি নারীদের সাজ পোশাক পরে অন্তরে নারীত্ব লালন করে চলাফেরা করে। এরা জীবনসঙ্গী হিসাবে অন্য পুরুষকে বেছে নেবে। সাধারণ নারীরা তো এদের পছন্দ করবে না। তাহলে নারী পুরুষকে নিয়ে বংশবৃদ্ধির যে ব্যাপারটা সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে আসছে সেটা ব্যাঘাত ঘটবে। মোট কথা সৃষ্টির সৌন্দর্য নষ্ট হবে। রূপান্তর নাটক নিয়ে ফেসবুক যখন তোলপাড় তখন সময় করে গতকাল নাটকটা দেখলাম। যেভাবে সবাই গণহারে ওয়াল্টন আর জোভানকে বয়কট করল। ভাবলাম দেখে আসি কি না কি করে এরা সমাজকে নষ্ট করছে। দুঃখজনক হচ্ছে আমি তেমন কিছুই দেখতে পাইনি। বরং মনে হচ্ছে সুন্দর, সাবলীল একটা গল্প। জোভান ভালো অভিনয় করেছে। সামিরা খান মাহিও বেশ প্রাণবন্ত ছিল।দেখুন ময়লা ঘাটলে কেবল আবর্জনাই বের হয়। আমার মনে হয় অনেকেই চোখে আঙুল দিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে না দিলে নাটকটা দেখে আমার ঠেঙামারা সবুজ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা হোসনে আরা বেগমের কথাই মনে হতো। প্রত্যয়ের কথা মনে হতো না, মন্টিরায়ের কথা মনে হতো না। দেখুন আমরা লুত (আঃ) এর আমলে সমকামিতার কারণে একটা জাতী ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারটা সব মুসলীমরাই জানি। আমরা এই ঘৃণিত ও নিন্দনীয় বিষয়টাকে কেউ প্রশ্রয় দেব না। নিজের ভাই, বোন, বন্ধু-বান্ধব, বা সন্তানের মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ দেখতে পেলে সাথে সাথে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আবার হরমোনের সমস্যার কারণে কেউ সত্যি সত্যি নারী থেকে পুরুষ বা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হলে তাদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ করব। কারো আত্মীয়, স্বজনের মধ্যে কেউ তৃতীয় লিঙ্গের হলে তাদেরকেও অন্য সবার মতো সুস্থভাবে সমাজে সকল সুবিধা ভোগ করার সুযোগ করে দেব। অযথা জোভান বা ওয়াল্টনকে বয়কট করব না। কারণ নাটকে তেমন কিছু ছিল না।
কামরুন নাহার মিশু, প্রাবন্ধিক