এখন সময়:রাত ৯:৩৪- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৯:৩৪- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

রোদে মেঘে আনাগোনা

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

 

বাঁশের বেড়ার ফুটো দিয়ে কতো কীইতো দেখা সম্ভব হয়। রাত দশটায় ঝগড়াঝাটি, সকাল দশটায় ঝগড়াঝাটি, বিকেল পাঁচটায় ঝগড়াঝাটি। এখন সতী-সাহাব পরিবারের কমন বিষয়।

 

সতী আর সাহাব। কচি পাতার মতো  নতুন সংসার।পালিয়ে আসা।

মুরুব্বিরা চান তাদের কথামতোই অনুগত ছেলেমেয়েরা সংসারের আবেদন করবে।মুরুব্বিরা মনে করিয়ে দেবেন। পাত্র অনুসন্ধান হবে। দেখাদেখি হবে। ঘাঁটাঘাঁটি হবে।খুনসুটি হবে। যাচাই-বাছাই হবে।পছন্দ অপছন্দ তো আছেই।

যদিও কতিপয়  ক্ষেত্রে উল্টোটিও ঘটে। এরা আবার কয়েক কাঠি ওপরে। ঝাঁপিয়ে প্রেমের রোগ হবে। চুটিয়ে সবার নাকের ডগায় প্রেম করে যাবে। তারপর লেখাপড়া,চাকরি,ব্যবসা,সব হিসেব কড়ায় গ-ায় আমলে নিয়ে সংসারে টুপ করে ঢুকে পড়বে।

মুরুব্বিরা সেটা মানতে নারাজ। কেউ কেউ এটাকে সঠিক মনে করেন।

তাই সতী-সাহাব জুটি পালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নেয়, দেরী করে না।

চল পালিয়ে যাই— গানটা এদের কাছে ভালো লাগে স্কুল জীবন থেকেই।

 

বুলির বাবা তাদের বাড়িঅলা। বাসা ভাড়া এদের কাছে দেবেন না, একদম সাফসুতরো আলাপ।

কিন্তু দূতিয়ালি করে নিশানের বৌ সাকসেসফুল।

আজকেই বিয়ে হলো, জিনিসপত্র কেনা হলো, রাতেই হালকা ডিনার হবে। ফ্রে-সার্কেলের কয়েকজন, একদম নাছোড়বান্দা টাইপের যারা তাদের জন্য জাস্ট সিম্পল একটা  ট্রিট।সমবয়েসি দূর সম্পর্কের মামা, আর দারোয়ান লোকমান ভাই। তাদের সকল জোড়াতালির বিরাট হোতা।

কারোরই রান্নার প্রশিক্ষণ নেই। বিয়ের আগে অনেকে ছোটবেলায় মা-চাচিদের যৌথ প্রয়াসে ডুবে থেকে শিখে ফেলে।

সতী আদুরে এবং বাবার একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলাটা অভিজ্ঞতাহীন ছিলো।

তাই এখন  সংসার নামক বাসটি স্টপেজে এসেছে।

তাই সদ্য মাস্টার্স করা সতী মায়ের কিচেনে এটা ওটা করার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রশ্নের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছিলো।

আচ্ছা মা,ডাল রান্নায় পেঁয়াজের সাথে কি রসুন দিতে হয়?

কেনরে রে?

না, এমনি। জাস্ট জানতে চাইলাম।

তারপর লুকিয়ে পড়া সতী হঠাৎই বেরিয়ে গেলো।

আরেকদিন সতীর জিজ্ঞাসা, মা দেড় মাসের বাচ্চার গায়ে কি লোশন মাখা যায়?

এবার মায়ের চোখ রসুনের মতো সাদা এবং বড় হয়ে গেলো।

তোর কী হয়েছে, বলতো!

আবারও নিজেকে লুকিয়ে ফেললো সতী।

বিষয়টা মা গিয়ে বাবাকে বললেন, ওগো শুনছো—-।

বাবার এসব শোনার টাইম কম।

ওদিকে সাহাবকেও প্রশ্নটা করে।

সাহাব একটু অবাকই হলো, তোমার মুখে হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন?

না, আমরা আফটার অল সংসারটা শুরু করতে যাচ্ছি তো,তার ই কতিপয় আগাম প্রস্তুতি।

আচ্ছা, বুঝেছি। কিন্তু তাতে এতো আগাম প্রস্তুতির কী দেখলে?

কেন নয়? এগুলো কী অবান্তর? অভিজ্ঞতা নিতে হবে না?

অবশ্যই। কেউ কী তোমার মতো এরকম বিসিএস এর মতো স্টাডি করে সংসার শুরু করে? সংসার শুরু করে দেয়। তারপর ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে আগায়। অভিজ্ঞতা পরে হয়।

তারপর যুক্তি, পাল্টা যুক্তির সংযোজন বিয়োজন, প্লাস-মাইনাস। শেষে যখন দুপক্ষের মুরুব্বিরা আত্মীয়, অনাত্মীয়ের মধ্যে সার্কুলার দিয়ে ফেলেছেন,আর কড়া মার্কিংয়ে রাখতে শুরু করেছেন, শ্যেনচক্ষু হানা শুরু করেছেন,তখনই সতী,সাহাব জীবনের কঠিন ক্যালকুলাসটার ফাইনাল রেজাল্ট বের করে ফেলে।

নাহ, চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে।

বাসা ভাড়া নেয়া হলো। সাহাবের এক আত্মীয় এ বাসার দারোয়ান।তার সহযোগিতা একশতে একশ।শর্ত প্রযোজ্য,ভরপেট কাচ্চি,আর বিশটাকা দামের পানের খিলি।

সংসারের বিউগল বাজিয়ে দিলো বন্ধুরা।

সাহাবের মা কোমলপ্রাণ। ছেলে এতবড় বেইমানি করবে মানতেই পারেননা।

কিন্তু সন্ধ্যায় একদম রাখঢাক না করে ঘটনাটা বলে ফেলার পরে মা এভাবে স্ট্রোক করে ফেলবেন ভাবতেই পারেনি সাহাব।

হাসপাতালে আইসিইউতে চার-পাঁচ দিনের জেল খেটে বেরুনোর পর শিয়রে দাঁড়ানো সতীকে দেখে জিগ্যেস করেন, মেয়েটা ভারি মিষ্টি। কে রে?

মার সামনে গুটিয়ে যাচ্ছিল সাহাব।

 

সতী পায়ে ধরে সালাম করার পরই মোটামুটি বুঝেই ফেললেন,বললেন,শোন্, তোরা লেখাপড়া করেছিস,নিজেদের জীবন নিজেরা গড়ে নে।ভালোমন্দ নিজেরা হিসেব করে নে।

 

মাকে জড়িয়ে ধরে সতী, সাহাব।

কিন্তু সতীর বাবা-মা,আমার বাবাকে কী করে ম্যানেজ করব—?

ওটা ম্যানেজ করা যাবে।

 

ম্যানেজ করার আগেই তেজকুনি পাড়ার নীল কালারের বাসার চার তলায় একটি ইউনিটে ব্যাংকার সাহাব,হাইস্কুল টিচার সতীর জন্য টুনি বাল্বের হাজারো বাতি ঝলসে উঠলো।

দুয়েক দিন গেলো বিয়ের নানান পর্ব। শরীরেও বিয়ের ঘ্রাণ, রঙ লেগে আছে। তারপর ব্যস্ত পৃথিবীর সবাই নিজ নিজ কাজে সরতে শুরু করে।আগের তুলনায় দ্রুতই গড়াচ্ছিল মনে হয় পৃথিবীটা।

কিচেনে আরো কিছুদিন ডাল,আলুভর্তা, ডিম পোঁচ খেতে হবে। এর চাইতে বেশি কিছু অভিজ্ঞতা নেই। ভাগ্যিস পাঁচতলার  দিনটা আন্টি পেঁয়াজ কাটার নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন।মাছটাতে সাহস হয়না। তাছাড়া ওটার আঁশটে গন্ধে পেটের ভেতর থেকে সব ওয়াক আউট করার হুমকি দেয়। মাংসের সাথে মসল্লা, তেলের হিসেব-নিকেশটা দ্বিঘাত সমীকরণের মতো জটিলতর লাগে।

চেষ্টা করতে গিয়ে হাফ লিটার তেলের বোতলটা চুলোর ওপর পড়ে গেলো, আর যত বিপত্তি।

পোড়া হাত নিয়ে কিছুদিন সতী বিছানায় শুয়ে শুয়ে সাহাবকে বলে দেয়। আর সাহাব ভুলভাল মিশিয়ে রান্না করে।

দুপুরের পরে ডাইনিং টেবিলের ওপরে অনভিজ্ঞ বালক-বালিকা সহজ সরল খাদ্য খায়, আর বলে ওফ, ফাইন, ঝাক্কাস, অসাম, সেইই স্বাদ — এরকম ফেসবুকীয় শব্দের ভেতরে তৃপ্তি খুঁজতে থাকে।

সাহাব এবার বিচলিত। কেননা, সতীর ভেতর থেকে তার বিবমিষার লক্ষ্মণটা প্রকাশ করে। মকবুলের গলির মোড়ে ডাক্তার আংকেল প্রেসার মাপেন। ইউরিন টেস্ট স্ট্রিপ কিনতে বলেন।

স্ট্রিপের গায়ে দুটো লাল দাগ দেখে ডাক্তার আংকেল একটু মোলায়েম হাসি হাসলেন।

সাহাব একটু ইতস্তত করে,আংকেল,কোনো প্রবলেম?

প্রবলেম তো আছেই। আপনারা কেন আমার জন্য মিষ্টির অর্ডার করছেন না?

 

সত্যি সত্যি সাহাব ডাক্তার আংকেলকে দুই কেজি বালিশমিষ্টি দিয়ে আসে।

তিন মাস পর সতীর অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেননা,স্কুলটা গ্রামে। কখনো ভ্যান, কখনো পায়ে হেঁটে যাওয়া। রাস্তায় পিচ ছিল। ছাল ওঠা অর্জুন গাছের মতো অবস্থা। দাউদের মতো ছোপ তার গতরে। ভাঙা রাস্তা বলে অটো, সিএনজি চলে না। শহরের সাফসুতরা মানুষেরা আসে, জরিপ করে, মাপজোখ করে। তারপর চলে যায়। রাস্তার জায়গায় রাস্তা পড়ে থাকে। বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ হাওয়া। আবারও প্রজেক্ট আসে। কিন্তু রাস্তায় আলকাতরা পড়ে না। পড়ে তিন নাম্বার ইটের খোয়া। বুলডোজার আসে। আপাতত রাস্তা সমতল চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে। আবার বর্ষার সাথে সাথে সুরকি উঠে যায়। এটাই যেন নিয়তির বিধান।

 

মিসক্যারেজ!

সতীর জন্য বিশাল একটা ফর্দ ধরিয়ে দেন ডাক্তার।

হিউম্যান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আল্ট্রা করাতে হবে।সঙ্গে লিপিড প্রোফাইল।

রিপোর্ট অনুযায়ী ব্লাড ভরার পর বেড রেস্ট।

বাসায় ফিরে অগ্রিম বানানো ছোট ছোট কাঁথাগুলো দেখে ভেতরটা পাড়ভাঙা নদীর মতো তোলপাড় করে।

 

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, কবি ও গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে