এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৪৯- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৪৯- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

লাবণী

হানিফ ওয়াহিদ

তুমি আমাকে আগের মতো আর ভালোবাসো না, লাবণী?
তোমাকে আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি, রিয়াদ। ঘাসের দিকে তাকিয়ে থেকেই লাবণী উত্তর দিল।
তাহলে আমার কথায় রাজি হচ্ছো না কেন? সামান্য একটা বিষয়,,,, কেউ তো আর দেখছে না,,,
লাবণী তীক্ষè গলায় বলল, এটা মোটেই সামান্য বিষয় নয়, রিয়াদ। আমি নিজেকে নষ্ট করতে পারবো না। কেউ না দেখলেও আল্লাহ তায়ালা ঠিকই দেখবেন। আমি অপবিত্র শরীর নিয়ে কারও ঘর করতে যাবো না। ভালোবাসার অধিকার নিয়ে অন্যায় আবদার করো না,,,
রিয়াদ অভিমানের সুরে বলল, তোমার উপর কি আমার কোন অধিকার নাই?
লাবণী দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, না। বিয়ের আগে একজন পুরুষ নারীর উপর সব অধিকার খাটাতে পারে না। তাদের মধ্যে যতোই ভালোবাসা থাকুক।
আর কোন কথা খুঁজে না পেয়ে রিয়াদ চুপ করে রইল। লাবণীর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
রিয়াদ এবং লাবণী। বসে আছে কলেজের মাঠে, মুখোমুখি। কলেজে সবাই ওদেরকে মানিকজোড় হিসেবেই চিনে।
লাবণী একমুহূর্তে রিয়াদের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে, এটা কলেজের অনেকেই বিশ্বাস করে।
সবাই জানে, এই কলেজের সবচেয়ে সুখী প্রেমিক প্রেমিকা হচ্ছে ওরা।
কিন্তু হঠাৎ করে রিয়াদ বদলে গেছে।
লাবণীর কাছে হঠাৎ করে এতোদিনের অতি আপন মানুষটাকে অচেনা মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তেই বুক ফেটে কান্না চলে আসছে। মনে হচ্ছে এই লোকটা তার কেউ নয়।
তার নিজেকে কখনোই এতোটা অসহায় মনে হয়নি।
কাঁদতে দেখে রিয়াদ লাবণীর হাত ধরে বিরক্ত গলায় বলল, কাঁদছো কেন লাবণী? আমি কি তোমার কাছে অন্যায় আবদার করেছি? আজকাল এসব ব্যাপার? তোমার যত্তসব আজাইরা সেন্টিমেন্ট। খুঁজে দেখ, তোমার বান্ধবীরা অনেকেই এসব করে। বিয়ের আগে এগুলো এখন ডালভাত হয়ে গেছে।
লাবণী কোন উত্তর না দিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগল। সে রক্ষণশীল পরিবারে বড়ো হয়েছে। সে জানে, রিয়াদ যা বলছে তা চিন্তা করাও পাপ। অনেকদিন যাবৎ সে চাপ দিয়ে আসছে, যা অন্যায়।

একবার মনে হয়েছিল, ব্রেকআপ করে ফেলাই দু’জনের জন্য মঙ্গল হবে। কিন্তু তাদের দুই বছরের সম্পর্ক। এতো দ্রæত কি তা শেষ করা যায়? রিয়াদকে সে হাত ধরার অনুমতি ছাড়া কিছুই দেয়নি। রিয়াদ কতবার তাকে ইমোশন দিয়ে বøাকমেইল করতে চেয়েছে, চুমু খেতে, জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে, লাবণী কখনোই রাজি হয় নাই। সে ভালো করেই জানে, চুমু খেতে দিলে বা জড়িয়ে ধরতে দিলেই শারীরিক সম্পর্কে যেতে সহজ হয়ে যায়।
কত বোকা মেয়ের ইমোশনের ফাঁদে পড়ে সর্বনাশ হয়েছে তা কি সে জানে না?
বিয়ের আগে এসব করলে বিয়ের পর আকর্ষণ রইল কই?
রিয়াদ লাবণীর কাঁধে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, তুমি আমার কথা রাখবে না? এই আমার প্রতি ভালবাসা? এই তোমার বিশ্বাস? আমি মনে করেছিলাম, তুমি আমাকে তোমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসো। আজ জানলাম, সব মিথ্যা। সব অভিনয়!
রিয়াদের কথা শুনে বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল। নিজের অজান্তেই দু-চোখ বেয়ে অশ্রæধারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো। পায়ের নিচের মাটি যেন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। লাবণী অশ্রæঝরা চোখে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, ভালবাসি। তোমাকে আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসি। জীবন মরণে শুধু তোমাকে চাই। আমাকে তুমি ভুল বোঝো না রিয়াদ!
রিয়াদ রাগান্বিত হয়ে বলল, ভালবাসো? আমাকে তুমি ভালবাসো? তাহলে আমার কথা মেনে নিচ্ছো না কেন? কিছুদিন পরই তো আমরা বিয়ে করছি। আমি তো কোন সমস্যা দেখছি না! সারাজীবন তো আমি তোমারই থাকছি!!
লাবণী ওর একটা হাত ধরে বলল, দেখ রিয়াদ,আমি নষ্ট শরীর নিয়ে বাসর ঘরে যেতে চাই না। এতোদিন অপেক্ষা করতে পেরেছো, আর কয়টা দিন অপেক্ষা করতে পারবে না? আমার পরীক্ষা শেষ হোক। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন তুমি তছনছ করে দিও না। আমার সব কিছু তোমার, শুধু কয়টা দিন অপেক্ষা করতে পারবে না?
রিয়াদ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, এটাকে নষ্ট হওয়া বলছো কেন? তুমি এখন আমার সম্পদ। আমার সম্পদ আমি যেভাবে খুশি ব্যবহার করবো। আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না, ভালবাসো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে এতোদিন আমাকে অপেক্ষায় রাখতে না। আমার বন্ধুরা দুই মাস প্রেম করে শারীরিক সম্পর্কে যাচ্ছে, অথচ তোমার সাথে আমার সম্পর্ক দুই বছর! আজ যদি না পাই,তাহলে আজকেই আমাদের সম্পর্কের ইতি। যে সম্পর্কে বিশ্বাস নাই, সেই সম্পর্ক আমি রাখতে চাই না!
লাবণী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, আমার পবিত্র ভালবাসাকে তুমি অপমান করতে পারো না। আমি তোমাকে ছাড়া আমার পাশে কাউকে কল্পনা করতে পারি না। তুমিই আমার স্বপ্ন। মেয়েরা একবারই প্রেমে পড়ে,একবারই ভালোবাসে।
রিয়াদ তেজ দেখিয়ে বলল, থাকো তোমার স্বপ্ন নিয়ে। যার কাছে আমার ভালবাসার বিশ্বাস নাই, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। তোমার মতো অহংকারী মেয়ে আমি জীবনে দেখি নাই। তোমার মতো মেয়েরা কখনোই ভালবাসার মর্যাদা বোঝে না!!

বলেই রিয়াদ হনহন করে চলে গেলো।
লাবণী সেখানেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।
চোখ ফেটে আবারও কান্না চলে এল।

লাবণী একা একা বসে ভাবতে লাগল, সে কি রিয়াদের জোরাজুরির কাছে হার মানবে? নিজেকে নষ্ট করবে? লাবণী দেখেছে, বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে অনেক মেয়ের সর্বনাশ হতে। ছেলেরা মিথ্যা অভিনয় করে মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সর্বনাশ করে। তার কাছের একজন বান্ধবী প্রকৃত উদাহরণ। সেও মনপ্রাণ উজাড় করে একটা ছেলেকে ভালোবেসেছিল। ছেলেটা ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে।
লাবণী ভালো করেই জানে,বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে ভালোবাসা মরে যায়। ছেলেদের বিয়ে করার ইচ্ছে নষ্ট হয়ে যায়। জেনেশুনে সে এই ফাঁদে পা দেবে? পরে যদি রিয়াদ পিছিয়ে যায়,তখন কী হবে? সে কি পারবে নষ্ট শরীর নিয়ে আরেকজনের সংসার করতে? এতে করে সেই মানুষটাকে ঠকানো হবে না?
আজ পর্যন্ত রিয়াদ ছাড়া কোন পুরুষ তাকে স্পর্শ করেনি। কুমারী অবস্থায় প্রিয় মানুষের সাথে বাসর ঘরে যাবে,নিষ্পাপ ভালোবাসা নিয়ে সংসার জীবন শুরু করবে, এই স্বপ্ন কি সম্ভব হবে না?
বাসায় গিয়ে বাথরুমে বসে অনেকক্ষণ কাঁদলো লাবণী। কী করবে সে? রিয়াদের কাছে নিজেকে সঁপে দিবে নাকি সম্পর্ক শেষ করে দিবে? দুই বছরের সম্পর্ক একদিনে শেষ হয়ে যাবে? ভালোবাসা কী তাহলে এতোটাই ঠুনকো?
রাতে ঘুমাতে পারলো না সে। চোখের জলে বালিশ ভিজে গেল। এক সপ্তাহ পর্যন্ত রিয়াদ তার সাথে কোন যোগাযোগ করলো না।
বাধ্য হয়ে সে ফোন দিল। রিয়াদ একই কথা বলল, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না লাবণী! বিশ্বাস করলে ফিরিয়ে দিতে না!
লাবণী মনের সাথে কয়েকদিন যুদ্ধ করলো। হয় রিয়াদকে হারাতে হবে, না হয় তার কথা মেনে নিতে হবে।
রিয়াদকে ছাড়া তার চলবে না। ওর কথা মেনে নিতে সম্মত হল সে। পরের দিন ওকে ফোন করে বলল, আগামীকাল আসছি, ব্যবস্থা কর!
কথা শুনে রিয়াদ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। বারবার বলতে লাগল, লাবণী তুমি চমৎকার একটা মেয়ে! লাবণী তুমি এতো ভালো কেন! ওহ, লাবণী তুমি আমার জান!!
পরের দিন ওর এক বন্ধুর নির্জন বাসায় উপস্থিত হলো। তাকে একা পেয়েই রিয়াদ জড়িয়ে ধরলো। লাবণী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, রিয়াদ, তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই এখানে এসেছি। তুমি আমাকে বিশ্বাস কর তো?
রিয়াদ আনন্দিত গলায় বলল, এসব কী বল তুমি? অবশ্যই তোমাকে বিশ্বাস করি, জান! তোমাকে আমি আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসি। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে, বল?
লাবণী রিয়াদের একটা হাত চেপে ধরে বলল, তাহলে আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
অবশ্যই রাখবো। কেন রাখবো না? তোমার জন্য আমি হাসতে হাসতে জীবন বিলিয়ে দিতে পারি। আমার জম্মই হয়েছে শুধু তোমার জন্য!
লাবণী তার ভ্যানিটি ব্যাগটা খুলে একটা স্ট্যাম্প বের করলো, তারপর ঠান্ডা চোখে রিয়াদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এই স্ট্যাম্পে একটা সই কর রিয়াদ, তারপর যা খুশি কর!
রিয়াদ অবাক হয়ে বলল, কী লেখা আছে এই স্ট্যাম্পে?
লাবণী শীতল কণ্ঠে বলল, তেমন কিছু না। শুধু লেখা আছে, কয়েক মাস পরই আমরা বিয়ে করছি। তুমি আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছো।
রিয়াদ লাফিয়ে ওঠে তেজ দেখিয়ে বলল, এই স্ট্যাম্পে আমাকে সই করতে হবে? সই করে সম্পর্ক রাখতে হবে?
লাবণী নির্বিকার গলায় বলল, অবশ্যই সই করতে হবে।
তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না, লাবণী? স্ট্যাম্প দিয়ে কী ভালবাসা হয়?
দেখ রিয়াদ, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই তুমি যা চাইছো তা দিচ্ছি, এখানে এসেছি। যদি তুমি এখন সই না কর তবে বুঝবো তুমি আমাকেই বরং বিশ্বাস কর না!
রিয়াদ রেগে ফায়ার হয়ে বলল, স্ট্যাম্প সই করে তোমাকে ভালবাসতে পারবো না আমি। আমাকে যদি সত্যিকারে ভালবাসতে তাহলে এমন কাজ করতে পারতে না তুমি!
রিয়াদের রাগ পাত্তা না দিয়ে লাবণী শান্ত গলায় বললো, দেখ রিয়াদ, তোমাকে হারাতে চাই না বলেই এখানে এসেছি। আমি যেমন তোমার কথাকে সম্মান করেছি, তোমারও উচিত আমাকে সম্মান দেখানো। সই কর, তারপর যা খুশি কর। আমি বাঁধা দিবো না। সমস্যা কী? দুইদিন পর তো আমরা বিয়ে করছি, তাই না রিয়াদ?
রিয়াদ লাফিয়ে ওঠে চিৎকার করে বলল, তুমি আমাকে বেøকমেইল করতে চাইছো, লাবণী ? ও মাই গড! তুমি তো দেখি বহুত ডেঞ্জারাস মেয়ে! এতোদিন আমি তোমার মতো একটা বাজে মেয়ের সাথে প্রেম করেছি? হায় আল্লাহ!!
লাবণী কান্না জড়িত কন্ঠে বলল, দেখ রিয়াদ, আমি তোমাকে বøাকমেইল করছি না। শুধু ভবিষ্যতে সুন্দর করে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাইছি। এটুকু দয়া তুমি আমাকে করবে না?
না। তোমার কথা আমি শুনবো না। আমি বুঝে গেছি, তুমি খারাপ বাজে একটা মেয়ে।
লাবণী কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, দু’দিন আগেও তুমি আমাকে জান পাখি, প্রান পাখি বলে ডাকতে। আজকে সামান্য কারণে আমাকে বাজে মেয়ে বলছো। এটাই তোমার ভালোবাসা?
রিয়াদ রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করে বলতে লাগল, তুই একটা ডাইনি, বিয়ের আগেই আমাকে ফাঁসাতে চাইছিস, বিয়ের পর তো তুই আমার সব সম্পত্তি লিখে নিবি,,, ও মাই গড! ও মাই গড! আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে,আমি চললাম। বলেই সপাট জোরে দরজা খুলল, তারপর হনহন করে চলে গেলো।
লাবণী ওর যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর চোখের জল মুছে স্ট্যাম্পটা ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এলো!

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে