এখন সময়:দুপুর ১:৫১- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১:৫১- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

শেখ সাদী, আধ্যাত্মিক গুরু ও বিশ্ব পর্যটক

বাবুল সিদ্দিক

পুরো নাম মুহাম্মদ মুসলেহউদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ্ সিরাজী  সংক্ষেপে শেখ সাদী নামে বিশ্বময় পরিচিত। ছিলেন মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের অন্যতম ও বিশ্ব ভ্রমণকারী পর্যটক। ফার্সিভাষী দেশের বাইরেও তিনি সমাদৃত। তার লেখার মান ও সামাজিক ও নৈতিক চিন্তার গভীরতার জন্য তাকে কদর করা হয়। ধ্রুপদী সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সাদীকে একজন উচ্চমানের কবি ধরা হয়। তিনি পারস্য দেশীয় প-িতদের মধ্যে ‘মাস্টার অব পিচ টিচার’ বা ‘দ্য মাস্টার’ নামে ডাকা হয়। দ্যা  গার্ডিয়ান পত্রিকা জরিপ অনুসারে তাঁর ‘বুস্তান’ সর্বকালের সেরা ১০০ টি বইয়ের একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

ফার্সি সাহিত্যে একটি প্রবাদ আছে ‘সাত জন কবির সাহিত্য কর্ম রেখে যদি বাকি সাহিত্য দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়, তবু ফার্সি সাহিত্য টিকে থাকবে, আর এই সাত জন কবির অন্যতম শেখ সাদী।’ ফার্সি গদ্যের জনক শেখ সাদী দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাষী পাঠকদের কাছে অতি প্রিয় কবি। শুধু বাঙালিই নয় বিশ্বজুড়ে তিনি অত্যন্ত সমাদৃত।

প্রথম দিকে তিনি কিশোরদের জন্য উপদেশমূলক গল্প ও কবিতা লিখতেন। গল্পে গল্পে তিনি শুনিয়েছেন সততার পুরস্কার কীভাবে পাওয়া যায়, কীভাবে বিনীত হতে হয়, কিভাবে ন্যায় অন্যায়ের বিবেচনা করতে হয়। এক কথায় মানুষের সামগ্রিক বিকাশকে লক্ষ রেখেই তিনি গল্প, কবিতা রচনা করতেন। শেখ সাদীর লেখা জনপ্রিয় ‘ কাশিদা ‘ তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে :

 

‘ বালাগালা উলা বিকামালিহি

কাশাফাত দুজা বিজামালিহি

হাসুনাত জামিউ খিসালিহি

ছাল্লু আলাইহে ওয়া আলিহি’

 

অর্থ : অতিশয় মহান গুণগান যার/ রূপে যার দূরীভূত হলো অন্ধকার / মনোহর যার সমুদয় আচার / পড় সব দর”দ উপরে তাহার /

 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা : ১২১০ খ্রিস্টাব্দে শেখ সাদী ইরানের সিরাজ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। সাদীর বাবা সে দেশের রাজ দরবারে চাকরি করতেন। সাদির বাবার নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ্ , মায়ের নাম মাইমুরা খাতুন। কৈশরেই কবির বাবা মারা যান।এ জন্য কবির ছেলেবেলা কেটেছিল অনেক কষ্টে। তাঁর মা তাঁকে নিয়া বড় কঠিন বিপদে পড়ে যান। শেষমেষ তাঁকে দেখাশোনার ভার অর্পিত হয় তাঁর নানার ওপর। কিন্তু তার নানার অবস্থাও সচ্ছল ছিল না। এদিকে স্বভাব কবি বলেই সাদীর জ্ঞান তৃষ্ণ ছিল প্রবল। মা ভাবনায় পড়ে গেলেন ছেলেকে কিভাবে মানুষ করবেন। এতিম সাদীকে নিয়ে কতটা কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন তা কবি নিজেই বর্ণনা করেছেন, উঠতি যৌবনের বেপরোয়া সময়টাতে একদিন মূর্খতাবশত: মা -এর সামনে চিৎকার করে উঠলে, মা ব্যথিত হৃদয় নিয়ে ঘরের এক কোনে বসে থাকেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ মনে হচ্ছে তুমি তোমার শৈশব ভুলে গেছ, তাই তেজ দেখাচ্ছ।”  তাঁকে নিয়ে মা- এর ভাবনার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সাদীর অসম্ভব মেধা শক্তি। কিশোর সেখ সাদী আর্থিক অনটনের স্কুলে ভর্তি হতে পারেন নি।কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এক ধনী ব্যক্তির কারনে তিনি মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ পান।ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারন মেধাবী এবং পরিশ্রমী। ‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি ‘কথাটিতে তিনি প্রগাঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। উক্ত মাদ্রাসায় নিশ্চিন্ত মনে বেশিদিন শিক্ষালাভ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। কারণ রাজ্যের সর্বত্র রাজনৈতিক অশান্তি ও বিশৃংখল বিরাজ করছিল। উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় শেখ সাদী বাগদাদ চলে আসেন। বাগদাদের বিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ২১ বৎসর বয়সে শেখ সাদী একটি কবিতা লিখে নিজামিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক আবু ফাতাহ বিন জুজি- কে দেন। সেই শিক্ষক তা পড়ে মুগ্ধ হয়ে শেখ সাদীকে মাসোহারার ব্যবস্থা করে দেন। ৩০ বৎসর বয়সে তিনি মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই সঙ্গে তিনি ধর্ম, দর্শন, আর নীতিশাস্ত্রে অসামান্য পা-িত্য অর্জন করে ‘মাওলানা’ উপাধিতে ভূষিত হন। এরপর তিনি মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে মক্কায় যান। আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল তার – তিনি ছিলেন প্রচ- ভ্রমণ পিপাসু। সে সময় তিনি পারস্য ছাড়াও তুরস্ক, সিরিয়া, জেরুজালেম, আরমেনিয়া, আরব, মিসর,আবেসেনিয়া, তুর্কিস্থান এবং ভারতের পশ্চিমাংশ ভ্রমন করেন।

সেলজুক বংশের পঞ্চম সম্রাট বাদশাহ মুজাফ্ফর উদ্দিন কুতলুগ বিন জঙ্গি ( ১২৩১-১২৬০ ) আমলে ১২৫৬ সালে কবি ছয় দশক পরে তার জীবনে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে সাদী তার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ইরানের জনগণ বিরাট সংবর্ধনা দিয়ে তাঁকে বরণ করেছিলেন। ইরানে ফেরার পরই তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গুলিস্তা‘ রচনা করেন । সাদীর বেশীর ভাগ রচনাই তার সিরাজে প্রত্যাবর্তনের পরেই রচিত। কবির  একজন প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিন কুতলুগ খান। তাঁর রচিত  ‘গুলিস্তা ‘ গ্রন্থটি বাদশার নামে উৎসর্গ করেছিলেন।

অমর রচনা ‘ গুলিস্তা ‘ ও  ‘বোস্তাঁ’ :

শেখ সাদী রচিত একাধিক গ্রন্থের মধ্যে গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ নামক গ্রন্থ দুটি অন্যতম। এই গ্রন্থদুটি পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গদ্য ও পদ্য মিশ্রিত এই গ্রন্থ এখনও অমর হয়ে আছে বিশ্ব সাহিত্য ভান্ডার। গ্রন্থ দুটিতে অনবদ্য পঙতিমালা সৃষ্টিতে যেমন সফল তেমনি সফল অভিভাবকত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে। বর্তমান সময় আমাদের সমাজে নানা ধরনের সন্ত্রাস, নীতিজ্ঞানের সংকট, মাদকাসক্তি প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে, চরিত্রহীনতার কার্যকলাপ বেড়েছে অবর্ণনীয় ভাবে, সুশিক্ষার অভাবে মানুষ অহরহ অন্যায় ও অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। আগেকার দিনে এমন কি ব্রিটিশ দাসত্বের যুগেও মুসলমানদের মধ্যে সাহিত্য চর্চা ছিল। ছেলে মেয়েরা নবী, আওলিয়াদের কেচ্ছা কাহিনি পড়ত এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের মন-মানসিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা করত। শেখ সাদীর ‘ গুলিস্তা ও  বোস্তাঁ ‘ মূলত  সেই নৈতিকতা শিক্ষা দিতে সক্ষম। এই উপদেশবলী আমাদের জাতির জন্য অতি প্রয়োজন। শেখ সাদী ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন নিষ্কলুস চরিত্রের মানুষ।

নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

শেখ সাদী তা দেখিয়েছেন। বাগদাদ থেকে লেখাপড়া শেষ করেই শেখ সাদী দেশ ভ্রমণ করতে বের হন। তিনি এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো দীর্ঘ সময় ব্যয় করে ভ্রমণ করতে গিয়ে শেখ সাদী এমন পা-িত্য অর্জন করেন যে, তিনি বিভিন্ন ভাষা রপ্ত করতে সক্ষম হন। এর মধ্য অনেক ভাষাই নিজের মাতৃ ভাষার মতো লিখতে পড়তে পারতেন। তিনি এত বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন ইবনে বতুতা ছাড়া প্রাচ্য দেশীয় পর্যটকদের মধ্যে কেউই এত বেশি দেশ ভ্রমণ করেন নি। তিনি পায়ে হেঁটে চৌদ্দ বার হজব্রত পালন করেন। শেখ সাদী দৈহিকভাবে অত্যন্ত বলিষ্ট ছিলেন। অনেক সময় ফকির, দরবেশের মতো খালি পায় তাকে চলতে হয়েছে। গুলিস্তা- এ তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনও কালের কঠোরতা ও আকাশের নির্মমতার ব্যাপারে অভিযোগ করি নি। তবে একবার নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি কারণ পায়ে তখন জুতা ছিল না এমন কি জুতা কেনার মতো অর্থও ছিল না । দু:খ ভারাক্রান্ত মনে ইরাকে মসজিদ আল কুফায় উঠলাম। তখন দেখলাম এক লোক শুয়ে আছে যার একটি পা-ইনে। তখন আল্লাহকে শোকরিয়া জানিয়ে খালি পা থাকায়ও সন্তষ্ট হলাম।’

হাঁটতে হাঁটতে তিনি দেখেছেন মুসলিম সা¤্রাজ্যের শেষ- প্রতাপ, সঙ্গে সঙ্গে পতনের দৃশ্য। ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি পাড়ি দিয়েছেন পারস্য সাগর, ওমান সাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগরীয় অঞ্চলসমূহ। কথিত আছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল সমূহ ভ্রমণ বাদে শেখ সাদী আরও তিনবার ভারতবর্ষে পদার্পন করেছিলেন। পাঠান রাজ আলতামাশের সময় তিনি কিছুকাল দিল্লিতে অবস্থান করেছিলেন। তিনি একবার ভারতের বিখ্যাত কবি ও গায়ক আমির খসরুকে দেখতে ভারতে আসেন। ১৩ শতকের শেষের দিকে মুলতানের শাসক যুবরাজ মুহাম্মদ খান শহীদ ও তার পিতা গিয়াসউদ্দিন বলবানের আমন্ত্রণে তিনি ভারতে এসেছিলেন।

পোষাকের পকেটে খাবার রাখার গল্প-  শেখ সাদীর এই গল্পটি ছোট বড় সকলেই জানা। একবার শেখ সাদী সম্রাটের দরবারে দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে রাত হলে এক বাড়িতে একটি ছোট্ট ঘরে আশ্রয় পেলেন। বাড়ির পক্ষ থেকে সামান্য কিছু খাবারও পেলেন। পরের দিন শেখ সাদী বিদায় নিলেন। শেখ সাদীকে পেয়ে সম্রাট অনেক খুশি হলেন। বিদায় বেলায় কবিকে সম্রাট অনেক দামি উপহার ও একটি জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক দিলেন। শেখ সাদী পোশাক পড়ে উপহার নিয়ে বিদায় হলেন। ফেরার পথে সেই একই বাড়িতে আবার রাত্রিকালীন আশ্রয়। বাড়ির লোকেরা এবার তাকে সম্মানের সাথে নিজেদের শোবার ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। একই সঙ্গে অনেক ধরনের খাবারেরও ব্যবস্থা করলেন। সবার সাথে খেতে বসে শেখ সাদী না খেয়ে সব খাবারগুলো পোষাকের পকেটে রাখতে লাগলেন। তা দেখে বাড়ির লোকজন কৌতূহল ধরে রাখতে পারলেন না। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, আপনি না খেয়ে খাবারগুলো পোষাকের পকেটে রাখছেন কেন? “ সাদী বললেন, “ আমি যখন কয়েকদিন আগে এ বাড়িতে রাত্রিযাপন করেছিলাম তখন আমার গায়ে খুব সাধারণ পোশাক ছিল তাই আমার সমাদরও ছিল খুব সাধারণ। আজ আবার যখন এ বাড়িতে আসলাম তখন আমার গায়ে এখন জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক। এ সবই পোশাকের গুণেই হয়েছে তাই খাবারগুলো ওই পোশাকেরই প্রাপ্য। তাই আমি না খেয়ে পোশাককে তা খাওয়াচ্ছি। “এ কথা শুনে খুব লজ্জা পেল এবং এ রকম ব্যবহারের জন্য তারা শেখ সাদীর কাছে ক্ষমা চাইলেন।

সাত বছর দাস জীবন :  শেখ সাদীর জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরপুর। আর এসব অভিজ্ঞতার কথা ওঠে এসেছে তার লেখনীতে। একবার দেশ ভ্রমণের এক পর্যায় তিনি ইরাক ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি কসবা ও টাইগ্রিস নদী ঘুরে দেখেন, সেখানে তিনি সুফিদের সাথে যোগ দেন  যারা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে কঠোর লড়াই করছিল। অন্যদিকে মঙ্গল বাহিনীর আক্রমণের কারণে তিনি ফিলিস্তিনের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের হাতে বন্ধি হন। খ্রিস্টানরা বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরী থেকে আনা ইহুদি বন্দিদের সঙ্গে কবিকে রাখেন। শুধু তাই নয় কবিকে দিয়ে তারা খন্দক খননের কাজ করায়। সেখানে শেখ সাদী সাত বছর দাস হিসাবে ছিলেন। একদিন সৌভাগ্যক্রমে বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। বাবার বন্ধু তাকে দশ দিরহাম মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করে আনেন। এত কষ্ট সহ্য করার পরও শেখ সাদী নিজের লেখায় বারবার বলেছেন, ‘মানবজাতি অভিন্ন মূল থেকে উদ্ভূত।’ তার বিখ্যাত গ্রন্থ বোস্তানে তিনি বলেছেন :

“ নানান দেশ ঘুরে ঘুরে জীবন হল গত যে

নানান রকম লোকের সাথে দিন কেটেছে কত যে

যেথায় গেছি কিছু কিছু নিয়েছি মোর থলিতে,

নিয়েছি ভাল যা পেয়েছি পথের ধারে চলিতে।”

বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে শেখ সাদী অর্জন করেছিলেন বিবিধ জ্ঞান। তাঁর চোখের সামনে ঘটেছিল বহু বিচিত্র ঘটনা। তিনি অবলোকন করেছিলেন বিভিন্ন জাতীর উত্থান, পতনের ইতিহাস। কর্ডোভার মুসলিম সা¤্রাজ্যে যার ঐশ্বর্য একদিন ইউরোপ ও আফ্রিকাকে প্রভাবান্বিত হয়েছিল। ত্রায়োদশ শতাব্দীতে শেখ সাদীর চোখের সামনেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে ধরা পৃষ্ঠ থেকে মুছে গিয়েছিল। এই শতাব্দিতেই সেলজুক এবং খাওয়ারিজম শাহীদের আত্মদ্বন্দ্ব উভয় সা¤্রাজ্যের মূল উৎপাটন করে ফেলেছিল। আব্বাসীয় খিলাফত যা প্রায় প্রায় সারে পাঁচ শত বছর বিপুল বিক্রমে রাজত্ব করেছিল তাও এই শতকেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সাদী দেখেছেন দুর্ভিক্ষের হাহাকার। মিসর ও পারস্যের দুর্ভিক্ষের লক্ষ, লক্ষ মানুষের প্রাণহানি তার হৃদয় বিদীণ করেছিল।

যে দুর্ধষ চেঙ্গিস খাঁর নামে আজও মানবজাতি শিহরিত হয়, তারই পৌত্র নৃশংস হালাকু খান এক বিরাট তাতার বাহিনী নিয়ে ১২৫৮ সালে বাগদাদের উপর হামলা করে। বর্বরদের নির্মম আক্রমণে ইসলামের শেষ খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ নির্দয়ভাবে নিহত হন। এরপর শুর” হয় নির্মম গণহত্যা। নারী পুরুষের রক্তে রাজপথ, গৃহ, টাইগ্রিসের পানি রঞ্জিত হল। রুপকথার নগরী পরিণত হলো এক মহা শ্মশানে। ইবনুল খালিদুন লিখেছেন, “ বাগদাদের বিশ লক্ষ অভিবাসীদের মধ্যে ষোল লক্ষ লোক  এ আক্রমণে নিহত হয়েছিল।”

শেখ সাদী তাঁর গুলিস্তার প্রথম অধ্যায়েই এ সকল জালিমদের বিরুদ্ধে তার লেখনী পরিচালনা করেন। তার প্রায় সমগ্র কাব্য গ্রন্থের ভেতরেই জালেম বাদশাহদের ওপর তাঁর শেষ বাক্য ও অবজ্ঞার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

১২৯২ সালে ইরানের সিরাজ নগরীতে এই মহামানব, আধ্যাত্মিক গুরু শেখ সাদী মৃত্যুবরণ করেন।

 

বাবুল সিদ্দিক, প্রাবন্ধিক, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে