ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীকার আন্দোলন পর্যন্ত এদেশে যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে এর পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন এদেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মীরা। সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে মানুষের মাঝে দেশপ্রেম, যাপিত জীবনের মননশীলতার উন্মেষ ঘটে। একথা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে নি:সন্দেহে বলা যায়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে, ষাট সত্তুর দশকে আমাদের দেশে যে হারে সাংষ্কৃতিক চর্চা হতো এখন তা শূন্যের কোটায় এসে গেছে। পাড়ায়-মহল্লায়-ক্লাবে সংগঠনে এখন কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। হয়না কোনো নাটক বা যাত্রাপালা কিংবা কবিগান। একই অবস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহেও দেখা দিয়েছে। এক সময় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। এখন সে সবের বদলে হয় র্যাগ ডে, মাদার ডে, ফাদার ডে ইত্যাদি। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ সংস্কৃতিকচর্চা বিমুখ শিক্ষার্থী বেরুচ্ছে, যাদের মনে ও মননে সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র লেশ নেই। এতে দেশে দিন দিন সাংস্কৃতিক সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিজাতীয় সংস্কৃতি দেশীয় সংষ্কৃতিকে গ্রাস করে ফেলেছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে সংস্কৃতি বিষয়ক ক্যাডার সৃষ্টির দাবির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ১৭ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পত্র দিয়েছে পাবলিক সার্বিক কমিশন। এতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় যাদুঘর, আর্কাইভ, গণগ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, শিল্পকলা ও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক বা কালাচারাল ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন সংস্কৃতি বিষয়ক বা কালচার অ্যাফেয়ার্স নামে নতুন ক্যাডার সৃষ্টির জন্য চিঠি লিখেন পিএসসি চেয়ারম্যানকে। চিঠিতে তিনি দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা, চর্চা ও উন্নয়ন বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষে পৃথক ক্যাডার সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত ক্যাডারে বাংলা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, চারুকলা, প্রতœতত্ত্ব, নাট্যকলা ও নৃত্যকলাসহ এ ধরণের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেনÑসংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কৃতি ক্যাডার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবিতে বলেছেনÑ‘‘একটি দেশ পরিচিত হয় তার ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দ্বারা। দেশের আত্মপরিচয়ও নির্ধারণ করে তার সংষ্কৃতি।”
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেনÑ“ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত না থাকে তাহলে শিকড়হীন জাতিতে পরিণত হবে। তখন দেশ আর নিজের দেশ বলে পরিগণিত হবে না। বিষয়টি সবাইকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করবো, সংস্কৃতি ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য।”
আমরাও মনে করি বিষয়টি আগামী বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংস্কৃতি চর্চা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। এটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, ততই দেশের সার্বিক মঙ্গল বা কল্যাণ সাধিত হবে।