এখন সময়:বিকাল ৩:১৩- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:বিকাল ৩:১৩- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

স্বাধীনতা : হোক শক্তি ও সাহসের উৎস

অজয় দাশগুপ্ত
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি। এর মানে কি আসলে? সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এ আর এমন কি ? একটা পতাকাই তো। সে তো একজন শিশুও বহন করতে পারে। কিন্তু এর গুরুত্ব রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতবর্ষেও টের পেয়েছিলেন। পতাকা একটি প্রতীক। প্রতীক মানচিত্রও। আসল কাহিনি থাকে বুকের ভেতর। আমাদের স্বাধীনতার কাহিনি অনেক জোরালো আর বেদনার। আমি জানি না কেন এবং কী কারণে আমরা জাতি হিসেবে বিভেদকামী। তবে এই বয়সে এসে এটুকু বুঝি আমাদের বিভেদের কারণ রাজনীতি আর নেতৃত্ব। এই কথাগুলো এখন স্পষ্ট করে বলাও বিপজ্জনক। বাংলাদেশে ৫২ বছরে পদার্পণ করবে। এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি পালন করা হয়েছিল বাংলাদেশে। সে যাই হোক ৫০ পেরিয়ে যাওয়া একটি দেশ ও জাতির জন্য এটুকু জানা জরুরি যে তার ঐক্যহীনতার শিকড় কোথায়?

মজার ব্যাপার এই বাংলাদেশ এবং তার মুক্তিযুদ্ধ আগাগোড়াই রাজনীতির সুবর্ণ ফসল। রাজনীতিই তখন আমাদের পথ দেখাতো। আজ মানুষ যাদের ভয় পায় বা যাদের কথা বিশ্বাস করে না তাঁরাই ছিলেন তখন মুক্তিদাতা। মানে রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলছি। যাঁরা তখন রাজনীতি করতেন তাঁরা মেপে কথা বলতেন। কাজ করতেন অধিক। তখন যে যে দল করুক না কেন পোশাক আচার আচরণ আর কথা ছিল পরিমিত। তাদের আদর্শবোধ ছিল প্রখর। এখন আওয়ামী লীগের সুসময়। এমন ই সুসময় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলাও যায় না। যাক বা না যাক এই আওয়ামী লীগই কিন্তু দেশ স্বাধীনের মূল স্তম্ভ। তাদের নেতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত বছর জেল খেটেছিলেন আর কী কী ত্যাগ করেছিলেন তার প্রমাণ ইতিহাস। সবশেষে সপরিবারের প্রাণ দেয়া বঙ্গবন্ধ পরবর্তীতে চার জাতীয় নেতার জীবন জানলেই আমাদের স্বাধীনতা জানা হয়ে যায়। আমি একবারও তাদের কথা অস্বীকার করি না যারা বেতারে ঘোষণা পাঠ করেছিল বা নানা ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই যখন ইতিহাসের দখল নেয়ার জন্য ঘোষক হয়ে উঠতে চাইলো বা তাকে প্রধান করার জন্য অন্যেরা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। যখন পরবর্তী সেনাশাসক এরশাদ গদীতে তখন তিনি দেখলেন এবং বুঝে নিলেন যে এটা তো মজার খেলা। ইচ্ছে হলেই খেলা যায় তখন আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খেলতে শুরু করলেন। এর ফাঁকে নানা তত্ত্ব আর উদ্ভট যত কা- হাজির। জান দেয়া মানুষদের খাটো করার জন্য তিরিশ লাখ না তিন লাখ কতজন মুক্তিযোদ্ধা কতজন আসলে যুদ্ধ করেছিলেন এসব তর্ক ও ভিত্তি লাভ করে ফেললো। অথচ কথা ছিল যদি একজনও প্রাণ দিয়ে থাকেন একজন মা বোন ইজ্জত দিয়ে থাকেন সেটাই আমাদের জন্য বেদনার। আমাদের জন্য শোকের।

আমরা তা মানলাম না। আজকে আরেক সমস্যা। দুনিয়ার সবদেশ এখন এগোচ্ছে। আমরাও এগোচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি যখন ধাবমান তখন বাক স্বাধীনতা ও ইতিহাস বিষয়ে কথা বলা বন্ধ হবার পথে। এটা স্বাধীন কোনো জাতির জন্য ভালো হতে পারে না। অন্যদিকে বিরোধিতার চেহারা ও ভয়াবহ। আমি আজকাল কোনো বিরোধিতা দেখি না যা দেখি তার নাম অপপ্রচার আর কুৎসা। এটাও আমাদের সমাজ বিকৃতির ফসল। খেয়াল করবেন কোনো শুভ বিষয় বা ভালো কিছু আজকলা মানুষকে টানে না। সামাজিক মিডিয়া চালু হবার পর সবকিছু চলে গেছে অপপ্রচারের দখলে। যারা এখন মাথার ওপর আছেন তাদের দেখলে করুণা হয় । করুণা এই কারণে একটা সময় আমাদের সমাজ যখন অবরুদ্ধ মানুষ কথা বলতে ভয় পেতো বা সামাজিক জগত অন্ধকারে থাকতো তাঁরা পথ দেখাতেন। এখন এরাই অন্ধ।

৫০ বছরের বাংলাদেশ আসলে কোন পথে যাবে বা কোনটি তার পথ? এই জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক। তারচেয়েও জরুরি আমাদের অন্ধকারত্ব আর পরাধীনতার চিহ্নগুলো মুছে দেয়া। যে কোনো সাধারণ মানুষ জানেন ধর্মের নামে পোশাক খাবার আচরণ সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িকতা জেঁকে বসেছে। মানুষের চিন্তার জগত আচ্ছন্ন করে রেখেছেন ওয়াজকারীরা। রাজনীতিবিদদের ভূমিকাও শুভ নয়। তাদের উদ্দেশ্য ঝগড়াঝাটি। টিভি চ্যানেল মিডিয়াজুড়ে খালি নেগেটিভিটির প্রচার। একবারও কেউ ভাবে না এ সবের কি প্রভাব পড়ে তরুণ তরুণীদের মনে। কী ভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম ? আজ স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে এ দেশের সেরা ক্রিকেটার আমাদের গর্ব সাকিব আল হাসানের কাইমব দেখে আমরা লজ্জিত না হয়ে পারি না। আমাদের আইকন নামে পরিচিত লেখক ক্রিকেটার সেলিব্রৈটিদের দেখে তারুণ্য কি শিখবে ? যে স্বাধীনতার মানে হচ্ছে দেদারসে টাকা কামানো। কোন লিমিট ছাড়া টাকার পেছনে ঘোরা ? আর যৌনতা বা তেমন রগরগে বিষয়ে সময় কাটানো ? তাদের দোষ দিয়ে কি লাভ? নেতা পর্যায়ের লোকজন ভিডিও ভাইরালে অডিও টেপে যে সব কথা বলেছেন তা শুনলে মনে হয় নৈতিকতার স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচার আমাদের জীবনে একাকার হয়ে গেছে। এতো লোভ লালসা কিংবা এতটা উগ্রতা স্বাথীন বাংলাদেশের শুরু থকে কয়েক দশক কেউ ভাবতেও পারে নি।

লোভের হাত পা যত বড় হয়েছে ততো আমাদের স্বাধীনতার গর্ব সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ভারতের সাহায্য সহযোগিতা পাশে দাঁড়ানো, আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হতো? না স্বাধীনতা পেতাম আমরা? অথচ কৌশলে একটা প্রজন্মের মাথা বিগড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের এখন দৃঢ় বিশ্বাস একবার বন্ধু হলেও কেউ নাকি চিরকাল বন্ধু থাকে না। হয়তো। কিন্তু রাশিয়ার বেলায় কি বলবো? যে রাশিয়া বা তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকলে আমেরিকা চীন পাকিস্তান মিলে ভারতের বারোটা বাজিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের টুঁটি চেপে শেষ করে দিতো তার বেলায় আমরা কি আসলেই কৃতজ্ঞ? একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বলা উচিৎ এসব ঠুনকো কৃতজ্ঞতায় তাদের কিছু যায় আসে না। এই দেশগুলি আমাদের দেশের চাইতে এগিয়ে। তাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব শিথিল হলে আমরাই পড়বো আমেরিকা চীনের খপ্পরে। পাকিস্তান নেপাল শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশের দিকে তাকালেই আমরা বুঝবো এদের সাথে দোস্তি করার ফল কি বা ভবিষ্যতে কি হতে পারে?

আমি মনে করি আমাদের এই স্বাধীনতা দিবসে এসব বিষয় মাথায় রাখা দরকার। অভ্যন্তরীণ ঝগড়া ফ্যাসাদ আর অনৈক্য দূরীভূত করার বিষয় এখন জরুরি। ৫০ বছর পরও যদি সবকিছু আইন করে কানুন বানিয়ে মানাতে হয় তাহলে সরকার পরিবর্তনের পর আবারো অন্ধকার গ্রাসী ইতিহাসের দু:স্বপ্ন থেকেই যাবে। কে নিশ্চিত করবে নতুন কোনো জোট এসে আবার জাতির জনক সহ ইতিহাসের গায়ে আঁচড় কাটবে না ? এবার তা হলে কি পরিমাণ ভয়াবহ ভাবে তা হতে পারে সেটাই বরং দুর্ভাবনার বিষয়।

শেষ কথাটা এই. আমাদের স্বাধীনতার জন্য শুধু দেশের মানুষজন লড়াই করেন নি। জর্জ হ্যারিসন, রবিশংকর থেকে অস্ট্রেলিয়ান মুক্তিযোদ্ধা ওডারল্যান্ডের মতো মানুষেরা লড়েছিলেন। লড়েছিলেন ফ্রান্সের এক তরুণ বিমান হাইজ্যাককারী। নিজের জীবন বাজী রেখে এরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছিলেন। যে সব বাঙালি জান হাতে যুদ্ধ করেছিলেন যাঁরা বীরাঙ্গনা হয়েছিলেন তাঁদের ত্যাগ আর বীরত্ব শুধু ইতিহাসে থাকলে আমরা টবে রাখা গাছের মতো শুকিয়ে মরবো। আমাদের স্বাধীনতাও ধুঁকবে। আজ বাংলাদেশের ঝলমলে উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটি ফের মনে রাখতে হবে। দেশ মানে ভূখ- আমাদের। পতাকা আমাদের। সঙ্গীতও আমাদের হয়েছে। এখন তা বহন করার শক্তি দরকার। মানুষ ই পারে তা করতে তা করে দেখাতে। ইতিহাস বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ আর আত্মবিশ্বাস থাকলে দেশ ও প্রবাসের বাংলাদেশিরাই পারে স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ ও চমৎকার করে তুলতে। এই পারাটাই হোক ৫২ বছর পর আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা।

অজয় দাশ গুপ্ত, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক (সিডনী প্রবাসী)

 

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে