আলম খোরশেদ
বছরচারেক আগে অর্থাৎ ২০২১ সালে আমরা বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করলাম। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প ও সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনেই বহুবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এই মাইলফলক অর্জনটিকে উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তখন। কিন্তু সেসবের মধ্যে বাংলাদেশের সাহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে, বৈশ্বিক অঙ্গনে উপস্থাপনের তেমন একটা আয়োজন চোখে পড়েনি আমাদের। এরকম সময়ে আমার কলকাতাবাসী তামিল বংশোদ্ভূত অনুবাদক বন্ধু ভেঙ্কটেশ্বর রামাস্বামী আমাকে একটি অদ্ভুত অনুরোধ করে বসলেন। তিনি নারীবাদ, নারীবাদী সাহিত্য ও বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের রচিত সাহিত্য সম্পর্কে আমার আগ্রহের বিষয়ে অবগত ছিলেন। আমার সম্পাদিত বাংলাদেশের নারীবাদী গল্পের সংকলন কাটা জিহ্বার কথা এবং অনূদিত নারীবিশ্বের কবিতাসংকলন নির্জন নিশ্বাস সম্পর্কেও তাঁর পূর্বধারণা ছিল। আর এরই ভিত্তিতে তিনি বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের পঞ্চাশজন প্রতিনিধিত্বশীল নারীর কবিতার একটি ইংরেজি অনুবাদ সংকলন সম্পাদনার দায়িত্ব দিতে চাইলেন আমাকে। সেইসঙ্গে এও জানালেন, আমাদের প্রস্তাবিত গ্রন্থের কবি ও কবিতাসমূহ আমি নির্বাচন করে দিতে পারলে তিনি তাঁর বন্ধু, হায়দ্রাবাদনিবাসী ইংরেজিভাষী কবি ও অনুবাদক নবীনা দাশকে দিয়ে সেগুলো দ্রুত ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে নিতে পারবেন। জানা গেল, নবীনা দাশের পূর্বপুরুষের বাস ছিল এই বাংলাদেশেই এবং তিনি বিখ্যাত কম্যুনিস্ট নেতা মণি সিংহের ভ্রাতুষ্পুত্রী। ফলত বাংলাদেশের ইতিহাস, মানুষ ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর বিশেষ দরদ ও দুর্বলতাও ছিল। রামাস্বামী আরও একটা আশ্বাস দিয়েছিলেন; বইটি তিনি তাঁর বিদেশি প্রকাশকদের কাউকে দিয়ে হয়তো প্রকাশের ব্যবস্থাও করতে পারবেন। আমি শুরুতে একটু দোনামোনা করলেও একপর্যায়ে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই।
তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। বাংলাদেশের নারী লেখকদের সম্পর্কে আমার মোটামুটি ভালো ধারণা থাকার কারণে কবি নির্বাচনে তেমন বেগ পেতে হয়নি, তবে কবিতা নির্বাচনের কাজটা বেশ দুরূহই ছিল। কেননা তখন ঘোর করোনাকাল। নির্বাচিত কবিদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখাসাক্ষাতের সুযোগ খুব কম। তদুপরি আমার বাস চট্টগ্রামে। তাই ফোন ও অন্তর্জালের ওপর নির্ভর করেই এগুতে হয়েছিল মূলত। তবে এব্যাপারে সুদূর রংপুর থেকে প্রকাশিত মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত মননরেখা পত্রিকাটির ‘বাংলাদেশের নারী কবি’ শীর্ষক বিশেষ সংখ্যাটি খুব কাজে দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রয়াত কবিদের কবিতা সংগ্রহের বেলায়। কবি আলী আফজাল খান সম্পাদিত ভিন্নচোখ এর বাংলাবিশ্ব কবিতাসংখ্যা থেকেও সেরকম কিছু কবিতার খোঁজ পাই। কবি ও গল্পকার সুমি সিকান্দার তার মা কাজী রোজী ও শহিদকবি মেহেরুন্নেসার কবিতা যোগাড় করে দিয়ে বড় উপকার করেছিলেন, যদিও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গ্রন্থপ্রকাশের মাত্র দিনকয়েক আগে কাজী রোজী প্রয়াত হওয়ায় বইটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। এখানে উল্লেখ্য, আমাদের প্রস্তাবিত সংকলনটি শুরু হয়েছিল বেগম সুফিয়া কামালকে (১৯১১-১৯৯৯) দিয়ে, কেননা কবিনির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের একটি মানদণ্ড ছিল এই যে, গ্রন্থভুক্ত কবির জন্ম যে সালেই হোক তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশে কিছুকালের জন্যে হলেও জীবিত ও কাব্যরচনায় সক্রিয় থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের কবিদের কবিতা সংগ্রহের কাজে বড় সহায়তা পেয়েছিলাম কবিতা সংগঠন কবিতার প্লাটফর্ম এর অন্যতম কাণ্ডারী, কবি ও অনুবাদক সাবেরা তাবাসসুমের কাছ থেকে। কবি মেঘ অদিতিও কয়েকজন নবীন কবির সন্ধান দিয়েছিলেন আমাকে। এছাড়া ভারতে নির্বাসিত কবি তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন। এই সুযোগে তাঁদের সবাইকে আরও একবার জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
কবিতা তো যোগাড় হল। এবার অনুবাদের পালা। আর এই কাজে বিস্ময়কর ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তর্জমাকার নবীনা দাশ। মাত্র মাসখানেক কালের মধ্যে তিনি প্রায় শতাধিক কবিতা অনুবাদ করে পাঠিয়েছিলেন আমাকে প্রাথমিক সম্পাদনার জন্য। এবং তাঁর সেই অনুবাদে তিনি বিন্দুমাত্র শৈথিল্যের নিদর্শন রাখেননি; যতটা সম্ভব মূলের প্রতি অনুগত থেকেছেন, এমনকি অন্ত্যমিল রক্ষার ক্ষেত্রেও। এবং এরই মধ্যে যথেষ্ট সৃজনশীলতারও পরিচয় দিয়েছেন। যেমন ধরা যাক, বইয়ের সূচনা কবিতা সুফিয়া কামালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিখ্যাত রচনা বেণীবিন্যাস সময় তো আর নেই এর কথা। এই শিরোনামের ভাবানুবাদ তিনি করেন, অ্যারাইজ আউট অভ দা লক, যেখানে ‘লক’ শব্দটির মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন নারীর কেশরাজি তথা বেণীবিন্যাসের কথা বলেন, তেমনি অন্যদিকে শব্দটির অপর অর্থ তালা কিংবা শৃঙ্খলের দিকে ইঙ্গিত করে তা থেকে বেরিয়ে এসে নারীকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবার আহ্বানও জানান, যেটি আদতেই সুফিয়া কামালের এই কবিতার মূল প্রতিপাদ্য ছিল। এই নামটি আমাদের এতটাই মনে ধরে যে, সেটিকে আমরা মূল সংকলনের শিরোনাম হিসেবেই বেছে নিই অতঃপর। তাঁর এরকম বুদ্ধিদীপ্ত সৃজনশীলতা, ভাষাগত নিরীক্ষা ও শব্দ নিয়ে খেলার আরও কিছু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে গোটা বইয়ে। এসবের বাইরে আরও একটি বড় কাজ করেছেন অনুবাদক নবীনা দাশ। তিনি গ্রন্থভুক্ত কবিতাসমুহে ব্যবহৃত প্রতিটি লোকজ, স্থানীয় শব্দ, শব্দবন্ধ, বাক্যানুষঙ্গ, স্থান ও ব্যক্তিনাম, পুষ্প-বৃক্ষ-বিহঙ্গ, পুরাণকথা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক লোকাচার ইত্যাদির ব্যাখ্যাকল্পে প্রায় শ’খানেক টীকাভাষ্যও রচনা করেছেন, যা একজন সত্যিকার পরিশ্রমী ও দায়বদ্ধ অনুবাদকের কাজ, এবং যা এই বইয়ের মর্যাদা ও মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সন্দেহ নেই।
এই সংকলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অর্থাৎ কবি ও কবিতা নির্বাচন এবং তাদের অনুবাদকর্ম সম্পন্ন হবার পর আমরা এর প্রকাশকের সন্ধানে নামি। প্রতিশ্রুতিমতো বন্ধু রামাস্বামী প্রথমেই তাঁর নিজের প্রকাশক ঐধৎঢ়বৎঈড়ষষরহং ওহফরধ-র দ্বারস্থ হন। কিন্তু তারা ২০২১ সালের মধ্যে, কিংবা নিদেনপক্ষে ২০২২ এর প্রথমদিকেই বইটি প্রকাশের বিষয়ে আমাদের দেওয়া শর্তের কথা শুনে পিছিয়ে যায়। এরপর নবীনা দাশ নিজে ভারতের কয়েকটি ইংরেজি বইয়ের প্রকাশনীর সঙ্গে কথা বলে তেমন একটা সদুত্তর পান না। তখন আমরা বিদেশি প্রকাশকদের সঙ্গে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, সরাসরি যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিই। এবং তার সুফল পাই দ্রুতই। লন্ডন ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি প্রকাশনা সংস্থা ইধষবংঃরবৎ চৎবংং বইটি প্রকাশের ব্যাপারে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করে। একইসঙ্গে লন্ডনের আরও একটি প্রকাশনী ঞরষঃবফ অীরং চৎবংংও আমাদের এই বইটির বিষয়ে উৎসাহ দেখায়। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী উবনড়ৎধয ঝসরঃয, যিনি এবছর নোবেল পুরস্কারবিজয়ী দক্ষিণ কোরীয় সাহিত্যিক ঐধহ কধহম এর বিখ্যাত উপন্যাস ঞযব ঠবমবঃধৎরধহ এর ইংরেজি অনুবাদক, আমাদেরকে এমনকি কবিতা অনুবাদের সম্মানীর পরিমাণ বাড়িয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যেই বইটি প্রকাশের বিষয়ে কোনোপ্রকার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হন তাঁর প্রকাশনীর পরিচালকমণ্ডলী। অবশ্য ডেবোরা স্মিথ বইটি প্রকাশ করতে না পারলেও এর পেছনের প্রচ্ছদের জন্য চমৎকার একটি শংসাবচন রচনা করে দিয়েছিলেন আমাদের। আমরা অতঃপর বালেস্টিয়ের প্রেসের কাছেই ফিরে যাই, কেননা তারা আমাদের প্রস্তাবে নিশ্চিত ও সানন্দ সম¥তি দিয়ে রেখেছিল গোড়াতেই। ঠিক হয় ২০২২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখেই তারা বইটিকে বাজারে আনবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দুইটি প্রকাশনা সংস্থারই অন্যতম বৈশিষ্ট্য এরা মূলত দক্ষিণ এশীয় সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বহির্বিশ্বের বইয়ের বাজারে এতদঞ্চলের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের বিষয়ে একধরনের আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে ঠিকই।
এরপর শুরু হল আমাদের প্রকাশক তথা বালেস্টিয়ের প্রেসের স্বত্বাধিকারী যুগল Roh-Suan Tung I Cecily Chen এর সঙ্গে অন্তহীন চিঠিপত্র আদানপ্রদানের পালা, বিশেষ করে চুক্তির খসড়া রচনা ও পাণ্ডুলিপি সংশোধনীর কাজ নিয়ে। একপর্যায়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয় এবং আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ করি তাঁরা গ্রন্থপ্রকাশের সময় ও সংখ্যা, অনুবাদক ও সম্পাদকের সম্মানী প্রদান, কবিদের সৌজন্যসংখ্যা প্রেরণ ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের সব অনুরোধ মেনে তো নিয়েছেনই, সেইসঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বইটি নিয়ে কোন কোন পত্রিকায় তারা আলোচনা লেখাবেন, কোন কোন সাহিত্য উৎসবে অংশ নেবেন, কোন কোন প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেবেন সেসবেরও বিস্তারিত উল্লেখ করেন চুক্তিপত্রে। আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি চমৎকৃত করে এই তথ্যটি যে, বছরে তিনবার আমরা বইবিক্রির হিসাব চাইতে পারব তাঁদের কাছে, যদিও তাঁরা নিজেরা বছরে একবারই আমাদেরকে বইবিক্রির হিসাব ও রয়েলটির টাকা পাঠাবেন। আমাদের মনে যদি তাঁদের দেওয়া হিসাবের বিষয়ে কোনোপ্রকার সংশয় কিংবা জিজ্ঞাসার উদয় হয় তাহলে আমরা নিজখরচে তাঁদের নিয়োগকৃত পেশাদার হিসাবরক্ষকের খাতা দেখতে পারব এবং সেখানে পাঁচ শতাংশের বেশি গরমিল পরিলক্ষিত হলে তাঁরা সেই টাকাটাও আমাদের দিয়ে দেবেন। তাঁদের এরকম পেশাদারিত্বের পরিচয় পেয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভীষণই অবাক ও আপ্লুত হই, কেননা এই ধরনের স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় নিজেদের প্রকাশনাজগতে দেখতে পাওয়ার কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
সে যাক, এরপর আসে পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার বিষয়টি। আমি আর নবীনা মিলে প্রথমে বেশ কয়েক প্রস্থ সম্পাদনা, পরিবর্তন, পরিমার্জনা করে চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি পাঠানোর পর তাঁরা নিজেরাও আরও কতবার যে সেটির ওপর কাজ করেছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তাঁদের লক্ষ্য একটাই: পাণ্ডুলিপি একেবারে শতভাগ নির্ভুল হতে হবে। এরজন্য তাঁরা পুরো পাণ্ডুলিপির বানান সমন্বয় থেকে শুরু করে, ফন্টের আকৃতি ও প্রকৃতি নির্ধারণ, সূচিপত্র ও পৃষ্ঠাবিন্যাসের ক্রম ও অবয়ব পর্যালোচনা, নবীনা-রচিত জটিল টীকাভাষ্য ও আমার লেখা কবিপরিচিতিসমূহের আদ্যোপান্ত পুনর্বীক্ষণ ও সম্পূর্ণীকরণ, (এখানে উল্লেখ্য, জনৈক কবি তাঁর জন্মসালটা কিছুতেই জানাতে চাচ্ছিলেন না, আমি তাই সেই অংশটা শূন্যই রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকাশক সেটা কিছুতেই মানবেন না; অগত্যা নানারকম গবেষণা ও কৌশল অবলম্বন করে আমাকে সেই তথ্যটি উদ্ধার করতে হয়েছিল।) প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও তার নকশা চূড়ান্ত করা পর্যন্ত বহুবার, বহুভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, বইয়ের প্রচ্ছদ হিসেবে আমরা বিখ্যাত ভাস্কর নভেরার একটি ভাস্কর্যকর্মের আলোকচিত্র ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রকাশক শর্ত দিলেন এর জন্য আমাদেরকে শিল্পকর্মটির বর্তমান স্বত্বাধিকারীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি এনে দিতে হবে। কী আর করা! আমি তখন বিশিষ্ট নভেরা-গবেষক রেজাউল করিম সুমনের শরণাপন্ন হয়ে নভেরার স্বামী, ফ্রান্স-নিবাসী Gregoire de Brouhns এর ইমেইল সংগ্রহ করে তাঁকে পত্রাঘাত করি এবং একপর্যায়ে তাঁর লিখিত সম্মতি আদায় করতে সমর্থ হই। এছাড়া আন্তর্জাতিক রীতি অনুসারে গ্রন্থের জন্য আমাকে ও নবীনাকে দুটো দীর্ঘ ভূমিকা রচনার পাশাপাশি, যথোপযুক্ত ও সম্মাননীয় কাউকে দিয়ে গ্রন্থের একটি মুখবন্ধ লেখানোর জন্যও যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ঢাকা লিট ফেস্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং ইংরেজিভাষী কবি সাদাফ সাজ সেটি লিখে দিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করেছিলেন। এর বাইরে, বইয়ের জন্য আরও একটি ব্লার্ব সংগ্রহ করেছিলেন নবীনা নিজে তাঁর বন্ধু, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লেখক ও সাহিত্যের অধ্যাপক বিবেক নারায়ণনের কাছ থেকে। বইটিকে আমরা উৎসর্গ করি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত ও নিপীড়িত নারীসমাজকে এবং একই সঙ্গে বাংলার সর্বপ্রথম নারী ও নারীবাদী কবি, কিশোরগঞ্জের চন্দ্রাবতীকে (জন্ম আনুমানিক ১৫৫০-১৬০০ সালে)।
এতসব কাজ সারতে সারতে ক্যালেন্ডারের তারিখ গড়িয়ে যায় ২০২২ এর সতেরোই ফেব্রুয়ারিতে। দুরুদুরু বক্ষে আমরা তখন বইটিকে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশের কথাটি আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপিটি পাঠিয়ে দিই প্রকাশক বরাবর। আর তার ঠিক চারদিন পর ২১শে ফেব্রুয়ারির সকালেই প্রকাশকের ইমেইল মারফত একটা অনলাইন লিঙ্ক হস্তগত হয় আমার। সেটাতে ক্লিক করতেই ভেসে ওঠে, বালেস্টিয়ের প্রেসের ওয়েবসাইটের ওপরের মূল ব্যানারে জ্বলজ্বল-করা অবিশ্বাস্য ও প্রায় অলৌকিক একটি বাক্য: Just published. Arise out of the Lock: 50 Bangladeshi Women Poets in English. Translated by Nabina Das. Curated by Alam Khorshed. আমার লেখক/অনুবাদক জীবনে এর চেয়ে আনন্দের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।
আলম খোরশেদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও গবেষক




