সহিষ্ণুতা মানবজীবনাচরণ তো বটেই প্রাণীজগতেও বিদ্যমান একটি গুণবাচক বৈশিষ্ট্য। এটা না থাকলে সমাজ ও প্রাণীজগত, এমনকি প্রকৃতিও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। স্থিতি ভারসাম্যতা হারায়, পরিবেশ-প্রতিবেশ অস্বাভাবিক অস্থিরতায় কম্পমান থাকে। এই অস্থির সময়ে মানব ও প্রাণীকূল এবং প্রকৃতিও বিরূপ আচরণ করে, যার কোনটাই শুভ নয়; বরং মহাবিপর্যয়ের অশনি সংকেতের জানান দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সমাজজীবনে এক ধরণের অস্থিরতার আলামত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানবীয় মনোজগতে এক ধরণের ভয় ও আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে। এমনিতেই আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক টানা-পোড়েনের নানামুখী দোলাচলে বর্তমান ও ভবিষ্যত অস্পষ্ট ও কুয়াশাচ্ছন্ন; তদুপরি প্রাত্যহিক জটিলতায় প্রাণ-প্রকৃতি ও মনুষ্যজীবনের স্বাভাবিক ছন্দপতনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় যা প্রতিদিন প্রতিক্ষণে সংঘটিত হয়েছে বা হচ্ছে তা অতীতে কখনও ঘটেনি, এই ঘটনাগুলোর হিংস্রতা, নগ্নতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা ও বীভৎসতায় যেনবা নিজের চোখও অন্ধ হয়ে যায়। আত্মদহন ও মর্মজ্বালায় নিজের ভেতরটাও পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়। তখন নিজেকে ‘বেঁচে আছি’— এটা ভাবতে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে মূঢ় হতে হয়।
সহিষ্ণুতা যেহেতু একটি গুণবাচক বৈশিষ্ট্য সেহেতু এটাকে ধারণ করাটাও একটি ইতিবাচক প্রবৃত্তি। এই বৈশিষ্ট্য ও প্রবৃত্তিহীন একটি মানুষ কখনও কখনও পশুকেও হার মানায়। এমনকি বিষাক্ত সাপেরও একটা নির্দোষ আচরণ থাকে। সাপকে আঘাত না করার আগে পাল্টা আঘাত বা বিষ ঢেলে দেয় না। কিন্তু মনুষ্য সমাজে নির্দোষ ও অপাপবিদ্ধ মানুষ খুন হয়, প্রকাশ্যে ইট দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করা হয়, ধর্ষিতা নারীর বিবস্ত্র ছবির ভিডিও ভাইরাল হয়। এই বিকৃতি ও পশুত্ব অসহিষ্ণুতাজাত উদগ্র ভ্যবিচারের ঘৃণ্য প্রকাশ। আমরা সহিষ্ণুতাকে যদি পরম ধর্ম মনে করে গণ্য করি তাহলে এই ধর্ম পালনে বাধা কোথায়? প্রত্যেক ধর্মেই তো সহিষ্ণুতা ও শান্তিুর সুললিত বাণী বিধৃত আছে। সব কিছু মিলে আমরা কী প্রস্তুর যুগে প্রত্যার্বতন করছি?




