… আর মনে পড়ে জন্মলগ্নের শৃঙ্খলিত করজোড়ে নতজানু থাকার দুর্বিনীত দুঃসময়গুলো। আমরা বা পূর্বাপর পূর্বসুরীরা, যাদের ভাগ্য নিয়ন্তরা ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার মতলবে বৃটিশ-রাজের দেশভাগের কুটজালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক ‘পাকিস্তান’ নামক রাষ্ট্রটি জন্ম নিলেও তার গায়ে গাঁথা ছিলো একটি জন্মদাগ। তাই বাঙালির অকুণ্ঠ একতরফা রায়ে প্রতিষ্ঠিত সদ্য স্বাধীন দেশটিতে বাঙালিরা প্রথম শৃংখলজ্বাল, অনুভব করে যখন ভাষা-সংস্কৃতির উপর আঘাত আসে। তারপর অব্যাহত জাতিগত শোষণ, নিপীড়ন এবং হনন-দমন-দহনের অধ্যায়গুলো পেরিয়ে অতঃপর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বিজয় হাজার বছরের বাঙালির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তাই এই মুক্তিযুদ্ধই বাঙালি জাতি সত্তার অস্তিত্ব রক্ষার মূল শিকড়; তাকে কিছুতেই উপড়ে ফেলা যায়না।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জিত হয়নি বরং একে একে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও মূল স্তম্ভগুলো মুছে দেয়া হয়েছে। যখন যারাই ক্ষমতাসীন ছিল তারা ক্ষমতার তখ্ত রক্ষায় এই কাজগুলো করেছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শনিগ্রহের বলয় শুভ কল্যাণ, প্রগতিসহ সবকিছু গ্রাস করেছে। তারপরও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন, দ্রোহ, অভ্যুত্থান হয়েছে, বৈধ-অবৈধ পথে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মুক্তি না হলেও দেখা গেছে ক্ষমতা বদল ও পট পরিবর্তনের বাঁকে বাঁকে ইতিহাসের উল্টোযাত্রার ঘটনাও ঘটেছে; এমনকি পরিকল্পিতভাবে ইতিহাসের ব্যবচ্ছেদ ও বিকৃত করা হয়েছে। তবে ইতিহাসের শিক্ষাই হলো ইতিহাসের উল্টোযাত্রা কখনো হয়না, এই যাত্রা সোজা ও সরল পথে। উল্টোযাত্রা সাময়িক। যারা এই উল্টোযাত্রার কুশীলব তারাই আবর্জনার ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়। এই অমোঘ ও নিখাদ সত্য মিথ্যা হবার নয়। একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ একটি চির শাশ্বত সত্য ও ইতিহাসের অবিনশ্বর জ্যোতি।
আমরা চাই শৃঙ্খলিত মানুষের সার্বিক মুক্তি। ভুলতে চাই শৃঙ্খলিত করজোড়ের দুঃসহ স্মৃতিগুলো।




