খাতুনে জান্নাত
নাই হয়ে আছি
নীরালোকে দিব্যরথ
ওজন বর্জিত মহাশূন্যতায়
একতারা দোতারারা
মন্দাচ্ছন্ন রাতে ঝাঁপতাল
নৈঃশব্দের বিলে হাবুডুবু
অস্ফুট আশা-ধ্বনি
ধ্বনিগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে বাঁচি
স্মৃতিগুলো জুড়ে জুড়ে বাঁচি
কেন বাঁচি?
হৈচৈ কারাগারে
পলিমাখা মনের স্পর্শে
প্রার্থনায় শুদ্ধ হতে হতে
হয়ে যাই অমৃত দ্রাক্ষা
গ্লাসে গ্লাসে নৈবেদ্য সৃজন
বাতাসের শাড়ি জড়াই
পিঞ্জিরা ভর্তি অরণ্য রোদন…
বেনামি দিনের কিছু ছদ্মনাম
ক্রেডিট কার্ডের খেলাপি ঋণের মতো উচ্চ সুদহারে
ভেতরে গলিত হাড়-মাংস
রক্ত, মজ্জা, মন্দিরা, সরোবর
বেদনা সম্ভারসহ প্লাবিত জলোচ্ছ্বাসে-
আধঘুমো সংসারী বাগিচা
ছাড় দিতে দিতে নিঃস্ব সারগাম বৈশাখী-বাসনা আর মনোরথ
ক্ষতটা রয়েই যায় উচ্চ মূল্যহারে…
নিন্দুকেরা খুশি,
দেখো দেখো ইচ্ছে করে পিছল খেয়েছে
শরীরে নর্দমাক্ততা!
যৌবনে মৌবন নয় উড়িয়েছে লেজকাটা ঘুড়ি!
চেয়েছে ইচ্ছে
শতভাগ উল্লাসের আয়োজন
নুয়েছে প্রজ্ঞায়
হাতের মুঠোয় রোদ
পরিপূর্ণ বোধ
গোধূলি মাখবো বলে সাতরঙে খুঁজি অন্তমিল
জাহাজের পাটাতনে কাত হয়ে সিগারেট ফুঁকুক মন্ত্রমুগ্ধ ঢেউ
আকাশকে শূন্য জেনেও পুঁতে রাখা স্বপ্নের শেকড়…
মান নেই, অভিমানও
অভিযোগ, উপযোগ নেই তো
শুধু বয়ে চলি মেঘনা নদীর মাঝি
সম্মুখে নোয়াচর, আগে ঢেউ,
ঢেউ ও বেদনা ছাড়া জন্ম কে কবে দেখেছে!
কিছু কিছু নাম লোপাট করে কোজাগরী রাত
বিচূর্ণিত বাগান বিলাস;
কবিতার প্রারম্ভকাল
প্রোটন-ভাঙা কোয়ার্কের স্ট্রিং
ছুঁই ছুঁই ধ্বনি শতদল…
বিক্ষিপ্ত বেআব্রু শীত নামে
হিমবাহ ক্রোধ
মেরুদণ্ড দুঃখ পোষে পৌষের পার্বণে
কিছু নামে ধ্বসে শিলালিপি,
মোহেনজোদারোর মতো অতলতায়
হারায় নিরন্তর মনোধারা…
এসব নামের উপর তোমার হাজিরা
গচ্ছিত গোপন একাউন্ট;
ঘাম-ক্রোধ বেদীর উপর
শুশ্রূষার অমিয় দ্রবণ
বাসক পাতার প্রলেপে প্রদাহ ক্ষীণ
অরুন্ধতী কাছে আসে প্রিয় শর্তরাগ
প্রাতঃরাশে মিশে থাকা টোস্ট আর মার্জারিন
কিংবা সুস্থ চা ও চিনিতে
ডায়াবেটিস রোগীর সুগার লেবেল ভরা পেটে ছয় থেকে নয়…
মরিচা ধরা ইচ্ছার মোড়ক উপড়ে ছুটি তথাগত প্যাভিলিয়নে
তালি বাজিয়ে রেফারির উৎসব
জীবনের পেন্ডুলামে ঝুলে থাকা দর্শক হওয়ার ইচ্ছে সরিয়ে
তুমি আসো,
খইফোঁটা সকাল বাঁশরী বাজায়
ভোরের বাগান কুড়িয়ে পুষ্প কুলায়
অমৃত সরোবর উপচে পড়ে,
দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় বিভূতি
দেরিতে হলেও ফুটছে টাইমফুল
এবার হুইসেল বাজাক কালের আম্পায়ার…
গতির ধমনী নড়ে রোদের প্রবাহে
সিআরবির বৃক্ষের মগডাল ছোঁয় আকাঙ্ক্ষার স্নিগ্ধ শিশির
অপেক্ষার জাল উর্ণনাভ ইচ্ছাপাড়ায়
তোমার হাসির চমক, খুশির শিহরণ
ঝিঙে ডালে ফিঙে মাতোয়ারা
সাঁঝের আভায় লেখা হয় ছন্দিত, মন্দ্রিত নামের বানান…
যেসব শব্দেরা মরে গেছে কিশোরী বয়সে
যেসব আনন্দ উবে গেছে ভাসমান দংশনে
তারাও কোরাস গায় হাতড়ে
প্রমত্ত উচ্ছাসী ফসল সম্ভার-
টানেলে, মেট্রোরেলে আকাশ উড়ায়
বাতাসের ওড়না মাখে আনন্দ আবীর
হিজল ফুলেরা চন্দ্রিমা উদ্যানে;
বহু আগে যে কুঁড়ি মরেছিল মান্দারের ডালে
সেও শোভা ধরে বিচ্যুত ফুল-কাঁটা জড়ো হয় পাখির বাসায়
মায়ের আদর-ওমে
তুমি আর আমি মিলে নতুন ঘাটে খুলে দিই সাড়ার সাম্পান…
খুঁজি প্রত্নতাত্ত্বিকতা
হাজার বছর লুকনো ঐতিহ্য
মিথ ও মিথষ্ক্রিয়ার অলিন্দে
মিশে আছো হে আরুদ্র
সত্তার বিস্মিত প্রদোষে
অন্তরে ইনান্না সমব্যাথী সুর
দেহে ইস্পাতের পোশাক
তোমাকে ছ্ুঁবো বলে ট্যাবলেটে এনহেদুয়ান্না প্রার্থনা
আজও স্তব করি দশাবতার স্ত্রোত্র
নিদর্শনে ভাবনার মিড় তুমি ঠিকই দেখতে পাবে…
মিশে থাকো নক্ষত্র-প্রাচুর্যে
চন্দ্রলেখা মগ্ন তারুণ্য
অজন্তা ইলোরা শৈল্পিকতায়…
লালমাই পাহাড়ের গীতিকথা
করুণ মর্মরধ্বনি তাম্রলিপিতে লেখা
নুয়ে থাকা বটের ঝুরি
পাখিদের কানে কানে রূপকথা সৌরভছোঁয়া
ফুলেরা ছড়িয়ে রাখে সম্পর্কের মধু
কাজলরেখার দুঃখ-সুঁই খোলো
ধরতে না পারা সুরে
শুধু তোলপাড় তোলপাড় লিখে
কোনো মধ্যরাত মায়া…
খুঁজেছি আরও কত আগে
সতিদাহের অগ্নিউৎসবে
নারীর বিরুদ্ধে যত সামাজিক বেড়ি
প্রতিবাদ, প্রতিরোধে স্বনাম পুরুষ
তুমি লিখো নাম নিজস্ব নিয়মে…
গ্রীষ্ম তোমাকে দ্রবীভূত করবে
ঘাম দরদর দুপুরগুলো কষ্টে ভেজাবে
তুমি ভয় পেওনা
অদূরে অপেক্ষা করে অগ্নিমুখো প্রেয়সী তোমার
আষাঢ়ের থই থই জলে অনুভূতির সাঁতার
বৃষ্টি প্রেমাতুর
প্রিয়াকে পত্র লেখায় বিভোর কলাপাতার চামরে
অতিথি পাখিরা ভিড় করবে টায়রা বিলে
তুমি হবে রঙিন হে প্রেমকথা…
প্রতিটি উচ্ছ্বাস তরঙ্গ তোলে
সম্পর্ক একটি সম্মোহনী অনুরাগ
ঠোঁটে মোনালিসা হাসি নিয়ে এগোয় চাওয়া,
প্রতিটি ভগ্নতা জোড়া হতে থাকে
যখন পরিপূর্ণ হও
অনেকটা ধ্যানের মতো
বেলি’র মতো গভীর প্রদোষে
প্রবল ঝড়ের আকাঙ্ক্ষা
তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে অর্জুন বৃক্ষ…
কথাগুলো পাখি
ঘাম থেকে ঝরে গোলাপ পাপড়ি
তোমার হাসির ঝলকে উপচায় জীবন কলসি
খররোদে পুড়ে যাচ্ছো কি মন!
তুমি তো আর্য পুরুষ খান খান ভেঙে ফেলো আরুদ্র প্রলাপ
পিয়াসী বাতাস চেটেচেটে খাও ঘাম
ওলো বিশাখা পাতায় লিখে রাখো নাম, জীবন সংগ্রাম
কদম দাও ছায়া
শহুর কঙ্কর ভেঙে হও মিহি
যদি পায়ে ফোটে কোনো ক্ষত
অবিরত ছুটছে সে আরও কিনারে আসবে বলে
জ্যাম ও গ্যাঞ্জাম পুড়ছে দ্রোহে…
বৃষ্টিতে ভিজি আসো কাশফুল স্মৃতি
হেমন্তের বকুল মালতী
তুমিই বিদগ্ধজন তমাল নিবাস
ধ্যানের গভীরতম তত্ত্বকথা
না লেখা অভিধান…




