এখন সময়:দুপুর ২:৩১- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ২:৩১- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

উইলিয়াম রাদিচে: বিশ্বলোকে বাঙালি ও বাংলা ভাষার অকৃত্রিম সুহৃদ

হোসাইন কবির

বাঙালি ও বাংলা ভাষাপ্রেমী বৃটিশ কবি, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক উইলিয়াম রাদিচে আর নেই, পৃথিবীর এ মায়ালোক থেকে অনন্তের পথে যাত্রা করেছেন, অর্থাৎ পরলোকগমন করেছেন, এ সংবাদটি গত ১২ নভেম্বর নজরে আসে সোস্যাল মিডিয়ায় পরিচিতজনদের নানান পোস্টে ও অনলাইন নিউজ মিডিয়ায়। উইলিয়াম রাদিচে ৭৩ বছর বয়সে গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ মারা যান। উল্লেখ যে, তিনি লন্ডনে ১১ নভেম্বর ১৯৫১ সালের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শোনার পর পুরানো কাগজপত্রের ধুলোবালি সরিয়ে কিছু স্মৃতিচিহ্নে আলো ফেলতেই মনে পড়লো ১৯৯৮ সালে তাঁকে ঘিরে কিছু কথা। তাঁর সাথে প্রথম সাক্ষাতের সুনির্দিষ্ট তারিখটি আজ আর মনে নেই। তবে সেবছর রাদিচে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

আদিয়াবাদ শীর্ষক কবিতার কবি, ভাষাবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খ্যাতিমান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান স্যার ছিলেন রাদিচে’র অকৃত্রিম বন্ধু। উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট  রাদিচে’র মৃত্যুর মাত্র আড়াই মাস আগে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামানও মৃত্যুবরণ করেন।

ড. মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ছিলো নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার আদিয়াবাদে। যতদূর মনে পড়ে আদিয়াবাদ শিরোনামে তাঁর একটি কবিতাও রয়েছে। ড. মনিরুজ্জামানের আদিয়াবাদ প্রসঙ্গটি এক ঘরোয়া আড্ডায় বাংলাভাষাপ্রেমী বৃটিশ কবি উইলিয়াম রাদিচে’র মুখেও শুনেছিলাম। গবেষণায় ড. মনিরুজ্জাম ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও স্বভাব ও চৈতন্যে তিনি একজন কবি ও কবিতাপ্রেমী ছিলেন। হয়তোবা সে কারণে, ভিন্ন একাডেমিক বিষয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হবার পরও স্যারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছিলাম।

 

রাদিচে চট্টগ্রাম এলে দেখভালের দায়িত্ব অনেকাংশে মনিরুজ্জামান স্যার নিজ থেকে করতেন। সেবার রাদিচে ওঠেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ক্লাবের রেস্টহাউজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষক আর টুকটাক লেখালেখির সূত্রে স্যার আমাকে স্নেহ করতেন, একদিন স্যার আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রাদিচে’র সাথে। যতদূর মনে পড়ে সেবার  রাদিচে বাংলা কবিতার একটি এন্থোলজি নিয়ে কাজ করছিলেন। আমার সাথে পরিচয়ের সূত্রে আমার সংগ্রহের যতসামান্য কিছু কবিতার বই তাঁকে যোগান দিতে

 

স্যার বলেছিলেন। তবে স্যারের পাশাপাশি রাদিচে’র খোঁজখবর রাখার কিছুটা দায়িত্ব আমার উপরও চলে আসে, বিশেষ করে চ.বি. ক্যম্পাস থেকে শহরে নিরাপদে আসা-যাওয়ার বিষয়টি; যদিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর অবস্থানকালীন চলাচলের জন্য একটি ছোট গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। এসময়ে প্রায়শই আমাকে তাঁর সফরসঙ্গী হতে হতো। রাদিচে বাংলাদেশে অবস্থানের সময় ২/৩ টি বাংলা পত্রিকা সাথে রাখতেন, তা গাড়িতে চলাচলের সময়ও সাথে থাকতো। তিনি চেষ্ট করতেন নিয়মিত বাংলা পত্রিকা পড়তে; এতে তাঁর যুক্তি ছিলো নিয়মিত পত্রিকা পাঠেও ভাষার গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করা যায়, অনেক কিছু শেখা হয়। কেননা ভাষাও এক প্রকার জীবন্ত বিষয়, যার প্রতিনিয়ত রূপ বদল হয়। একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর সাথে ফিরছিলাম, পথে একটি দৈনিকের একটি সংবাদের বিষয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলেনÑ ‘তোমাদের মধ্যে একাত্তরের বিষয় নিয়ে এতো মতপার্থক্য কেনো? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তো অনেক কিছু নিষ্পত্তি হয়ে যাবার কথা; তোমরা দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক করো কেনো? পৃথিবীর কোনো জাতি এমনটা করতে দেখি না; দেখো পত্রিকার পাতা উল্টালে এসব দেখি, তাই তোমার কাছে জানতে চাইছি।’

সেবার তিনি মাসাখানেক চট্টগ্রামে অবস্থান করেছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকটি পারিবারিক আয়োজন ও সাহিত্য আড্ডায় অংশ নিয়েছিলেন রাদিচে, এর মধ্যে কালধারা পরিষদ কর্তৃক সাহিত্য আড্ডা, ছোটো কাগজ সম্পাদক গল্পকার কামাল রহমানের বাসায় সাক্ষাৎকারের নিমিত্তে অপর একটি আড্ডায়। সেসময় আমার আগ্রাবাদস্থ অস্থায়ী আবাসেও রাদিচেকে ঘিরে সাহিত্য আড্ডা ও আলাপচারিতার আয়োজন করা হয়। উক্ত আড্ডায় অংশ নিয়েছিলেনÑ অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, লেখক ও অধ্যাপক মোহিত উল আলম, উইলিয়াম রাদিচে, অধ্যাপক শিরিন আক্তার, কবি ও অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ, সরদার সিরাজুল ইসলাম, কবি ওমর কায়সার, কবি মকুল সেন, গল্পকার কামাল রহমান, শিল্পী রহমান, শিশু সংগঠক ফারজিন রাকিবাসহ অনেকে; আর শিশুদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলো তারা হলোÑ ফায়িকা কবির গল্প, পৃথু রহমান ও অংশু রহমান। উল্লেখ্য যে, এ শিশুরাও আজ ২৬ বছর পর আর শিশু নেই।

আর কালধারা সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত আড্ডাটি কালধারা পরিষদের সদস্য সাহিত্য শুভানুধ্যায়ী জনাব কাশেম ফেরদৌসের  লালখান বাজারস্থ বাসায় অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেনÑ কালধারার কর্ণধার শাহ আলম নিপু, কবি নিতাই সেন, কবি রিজোয়ান মাহমুদ, কবি তৌহিদ আহমেদ, কবি মুকুল সেন, উইলিয়াম রাদিচে, ড. শিরিন আক্তার, মোহিত উল আলম, সংগঠক ও নাট্যজন জাহেদুল আলম, শিশু সংগঠক ফারজিন রাকিবাসহ আরও অনেকে।

রবীন্দ্রপ্রেমী রাদিচে বাংলা কবিতা, বিশেষত রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতই বাঙালির খাবার-দাবার বেশ পছন্দ করতেন; বিশেষত ভাত, মাছ, মাংস, ডাল আর সাথে কাঁচা আম কিংবা জলপাইয়ের আচার তাঁর ভীষণ প্রিয় ছিলো। তিনি বাঙালির খাবার-দাবারের স্বাদ পূর্ণমাত্রায় আস্বাদনের জন্য হাত দিয়ে খেতেন। তাঁর খাবারের রুচি, পছন্দ ও আগ্রহের বিষয়টি আমার স্ত্রী ফারজিন রাকিবা টের পেয়েছিলো। সে তাঁকে সেবার বেশ কবার অত্যন্ত যতেœর সাথে আপ্যায়ন করিয়েছিলো। রাদিচে সেবার কয়েকদিনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গিয়েছিলেন ঘুরতে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসবার পর সে যাত্রায় তাঁর চট্টগ্রাম অবস্থানের সময়টাও শেষ হয়ে আসছিলো। এর মধ্যে এক সন্ধ্যায় তিনি আমার স্ত্রীকে কল করে বললেন- ‘ভাবী, আমি দু-এক দিনের মধ্যে কলকাতা হয়ে লন্ডন ফিরবো, যাবার আগে আমি কি আর একবার আপনার বাসায় দাওয়াত পেতে পারি? আপনার হাতে বাননো আচারটা বেশ মজার হয়েছে, এ আচার থেকে কিছু অংশ কি আমাকে দেয়া যাবে? যা আমি আমার মেয়ের জন্য লন্ডনে সাথে করে নিয়ে যেতে চাই।

এমন অকপট আন্তরিক আবদারে আমার স্ত্রী তাঁকে আপ্যায়নে সানন্দে সাড়া দিয়েছিলো এবং কৌটায় ভরে তাঁর কন্যার জন্য জলপাইয়ের আচার দিতেও ভুল করেনি।

রাদিচে প্রথম যেদিন আমার বাসায় আড্ডায় আপ্যায়িত হয়েছিলেন, খাবার পর্বে তাঁর সাথে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড. মনিরুজ্জামান স্যার। ডাইনিং রুমে খানিকটা আলো কম থাকায় রাদিচে আমার স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো- ‘ভাবী লণ্ঠনের আলো কম, আলোটা বাড়িয়ে দিন।’ মনিরুজ্জামান স্যার সাথে সাথে রাদিচেকে উদ্দেশ্যে করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন- এখানে লণ্ঠন হবে না, হবে বাতি। এ প্রসঙ্গে রাদিচে হাসতে হাসতে বললেন দেখুন ‘বাংলা ভাষার গোলকধাঁধায় আমি এখনো হিমসিম খাচ্ছি, আপনারা বিদায় নেবার সময়ও বলেন- আসি আবার আসা বা আগমন বোঝাতও বলে থাকেন আসি, অর্থাৎ যেতেও আসি, আসতেও আসি আবার সংখ্যায় রয়েছে আরেকটা ৮০; কোনটা কখন বলি বলুন তো! আর বাংলা ভাষার যুক্ত বর্ণ নিয়ে কত যে বিভ্রান্তিতে পড়ি সে বিষয়ে একটা ঘটনার কথা বলি- কলকাতায় অমিতাভ দাশগুপ্তের (সম্ভবত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন) সাথে একবার কুশল বিনিময় করতে গিয়ে এ ভয়ংকর ভাষা বিভ্রাট ঘটিয়েছিলাম; শুনুন তা ‘কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে আসবার ক’দিন আগে অমিতাভের সাথে ফোনে কথা হয়, সে বললো- সে তাঁর শ্বশুর অসুস্থ থাকায় ব্যস্ত আছে, পরের সপ্তাহে আমাকে সময় দেবে। এক সপ্তাহ পর যখন অমিতাভের সাথে দেখা, কুশল বিনিময় করতে গিয়ে আমি শুরুতে বলে বসলাম অমিতাভ, তোমার শুওর এখন কেমন আছে। শুনে তো অমিতাভ হতচকিত হয়ে বললো- শুওর মানে! তখন তাঁকে বললাম বোঝনি; মানে ফাদার-ইন-ল। তখন অমিতাভ হো হো করে হেসে ওঠে বললো, বুঝেছি তুমি শ্বশুর শব্দটা ভুলে গিয়ে ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশিনারি দেখে শ্বশুর শব্দটাকে শুওর ভেবে জানতে চাইছোÑ মূলত আমার শ্বশুর কেমন আছে।’ রাদিচে বাংলা খুবই ভালো বলতেন, লিখতেনও চমৎকার, তাঁর বাংলা হস্তাক্ষরে রয়েছে স্বতন্ত্র ক্যালিওগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য, একটা শব্দের প্রতিটি অক্ষরকে আলাদা করে লিখতেন, তাতে রাবীন্দ্রিক প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে রাদিচে বাংলা ভাষার যুক্তবর্ণ নিয়ে যে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, সেটি যেকোনো বিদেশির পক্ষে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করি, কেননা বাংলা ভাষায় অসংখ্য যুক্তবর্ণ রয়েছে; তা একদিকে ভাষাশৈলীর সৌন্দর্য হলেও এটি যে কিছুটা জটিল, তা স্বীকার করতে হবে। এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে হয়তো আমাদের ভাষাবিজ্ঞানীগণ যুক্তবর্ণের এ বিভ্রান্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়্যাস) বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন রাদিচে। তিনি পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় শিক্ষকতাও করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, রাদিচে’র শিক্ষাগুরু ছিলেন অধ্যাপক তারাপদ মুখোপাধ্যায়।

অনেকের ধারণা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রাদিচেকে তুমুলভাবে আলোড়িত করেছিলো, হয়তো  বাংলা ভাষার প্রতি তার আগ্রহী হয়ে ওঠায় এটাও অন্যতম  কারণ হতে পারে। রাদিচে তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলো যুবক বয়স থেকে। তিনি গেলো শতাব্দীর সত্তরের দশকে অল্প কিছু সময় ভারতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন, সে সুবাদে তিনি তখন কলকাতা, দিল্লি, বেনারস ও চেন্নাই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। তবে রাদিচে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের একজন নিবিষ্ট পাঠক ছিলেন। রবীন্দ্র ভাব-চিন্তার সরোবরে অবগাহন করতে গিয়ে বলা চলে জীবনাচরণে তিনি ছিলেন রবীন্দ্র ধ্যানে মগ্ন এক পূজারী। দৃশ্যত তাঁকে দেখায় দীর্ঘদেহী এক ইউরোপীয় মনে হলেও তিনি ছিলেন মননে ও রুচিবোধে অনেকটাই বাঙালি।

রবীন্দ্রপ্রেমী এ মানুষটি বছরের একটা সময় অন্তত মাসাধিককাল রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে অবস্থান করতে ইংল্যান্ড থেকে ছুটে আসতেন; তার জন্য সারা বছর ধরে পয়সা জমাতেন এবং খোঁজ রাখতেন কোন পথে ভ্রমণ করলে খরচ কম পড়বে। আর এ ছিলো তাঁর নিকট তীর্থযাত্রার মতই। এসব কথা তাঁর মুখ থেকে শোনা। রাদিচে রবীন্দ্রনাথেরÑ পোস্টমাস্টার, জীবিত ও মৃত,  কাবুলিওয়ালা’র অনুবাদ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথেরÑ কণিকা, লিখন, স্ফুলিঙ্গ’র অণুকবিতাগুলি নিয়ে লেখেন ‘পার্টিকলস, জটিংস, স্পার্কস’। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের মূল পা-ুলিপি নিয়েও তিনি গবেষণাধর্মী কাজ করেছিলেন। যতদূর জানা যায় তিনি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৩০টি গল্প অনুবাদ করেছিলেন, যা পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো।

অনুবাদ প্রসঙ্গে তাঁর একটি বক্তব্য আমার আজো পরিষ্কার মনে আছে, প্রায় সব আড্ডায় তিনি তা বলতেন, তাঁর বয়ানে তা হলোÑ ‘বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ বা ভাষান্তর বাংলা ভাষিরা করলে, তা সাধারণত বাংলা শিখিয়ে ইংরেজি ভাষিদের মতো নাও হতে পারে। ওতে  অনেক সময় কিছু সমস্যা থেকে যায়, গতিশীল অনুবাদের স্থলে অনেক সময় বিদেশিদের বোঝানোর মানসিকতা থেকে অতিরিক্ত শব্দ জুড়ে দেবার প্রবণতা দেখা যায়, ওতে অনেকে সময় শব্দের কোলাহলে সাহিত্যের মূল বিষয় হারিয়ে যায়। আপনারা যাঁরা বাঙালি, ইংরেজি ভালো জানেন, তাঁরা আমাদের ভালো কাজগুলো আপনাদের ভাষায় ভাষান্তর বা অনুবাদ করুন, আর আপনাদের ভাষার ভালো সাহিত্যকর্ম আমরা যারা বিদেশি, বাংলাটা শিখেছি, আমরা তা আমাদের ভাষায় ভাষান্তর কিংবা অনুবাদ করবো। কেননা একজন নিজের মাতৃভাষার মানুষই তার ভাষার চলমান সময়ের গতি- প্রকৃতিটা যথার্থভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম, কেননা ভাষাও জীবন্ত শরীরের মতই। একটি ভাষা শিখে সে ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে তা অনেক সময় সময়োপযোগী না হয়েÑ প্রাচীন ধাঁচের অনুবাদ হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।

রাদিচে যেকোনো আড্ডায় প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের দেবতার গ্রাসের কথা বলতেন, হয়তো এটি তাঁর পছন্দের একটি বিষয় ছিলো। রাদিচেÑ দেবতার গ্রাসের ইংরেজি ভাষান্তর হলোÑ ‘স্ন্যাচড বাই দ্য গডস’ – ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সুরকার পরম বীর একে অপেরার আঙ্গিকে রূপ দেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর টুনটুনির বইÑ তাঁর অনুবাদে হয়ে ওঠে ‘দ্য স্টুপিড টাইগার অ্যান্ড আদার টেলস’ এবং মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যÑ তাঁর অনুবাদে হয়ে ওঠে ‘দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ’।

উল্লেখ্য যে রাদিচে’র মা বেটি রাদিচেও ছিলেন ধ্রুপদী ল্যাটিন সাহিত্যের গুনী অনুবাদক ও সম্পাদক। তাই বলা যায় ভাষার প্রতি অনুবাদের প্রতি আগ্রহের বিষয়টি তাঁর রক্তের স্রোতধারায় মিশে ছিলো। যতদূর জানা যায় রাদিচে’র পূর্ব-প্রজন্ম ইটালি থেকে অভিবাসী হয়ে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন।

রাদিচে’র মৌলিক লেখালেখি ও অনুবাদ কর্ম থেমে যায় প্রায় এক দশক  আগে, যখন তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেনÑ এক সড়ক দুর্ঘটনায়। মৃত্যুর আগের এ এক দশক তিনি অনেকটা শয্যাশায়ী হয়ে সময় কাটিয়েছিলেন, তবে পড়ার কাজটি চালিয়ে গেছেন কোনরকমে। এ সময়টা তিনি থাকতেন লন্ডনের নিউ ক্যাসেলে, সেখান থেকেই করেছিলেন অন্তিম যাত্রা।

 

হোসাইন কবির, প্রফেসর, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।