এখন সময়:সকাল ১১:০৫- আজ: শনিবার-২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:সকাল ১১:০৫- আজ: শনিবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

একজন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ ও তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রের কথা

আলম খোরশেদ

অনেকেই জানেন যে, প্রখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞানলেখক জ্যুল ভের্ন এর কিংবদন্তিতুল্য গ্রন্থ ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ অবলম্বনে ১৯৫৬ সালে হলিউডে একই নামে একটা ছবি হয়েছিল যেটি সেবছর অস্কারে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কারও পেয়েছিল। তবে এই ছবির বেশকিছু অংশের শ্যুটিং যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে করা হয়েছিল, প্রধানত সিলেটের শ্রীমঙ্গল ও চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ড এলাকায়, এই তথ্যটি সম্ভবত বহুজনেরই জানা নেই। আর তাঁর পূর্ব পাকিস্তান অংশের শ্যুটিংয়ের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ছত্রিশ বছর বয়সী এক অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তরুণ শিকারি, শৌখিন ফটোগ্রাফার ও পর্যটক জনাব জি. এম. এম. ই. করিম (১৯১৯-১৯৯৯)। তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য চরিত্রের মানুষ, পরবর্তীকালে যাঁর তত্ত্বাবধানেই মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ এর উদ্যোগে পাকিস্তানের প্রথম দুটি বন্যপ্রাণী জরিপ পরিচালিত হয়েছিল ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে। তাঁর এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ১৯৭৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ তথা WWF এর বাংলাদেশ অধ্যায়ের সাম্মানিক উপদেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি একইসঙ্গে Wildlife and Nature Conservation Society of Bangladesh এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন এই উদ্যমী ও স্বপ্নবান মানুষটি। প্রখ্যাত লেখক হাসনাত আবদুল হাইয়ের

 

সঙ্গে এই মানুষটির পরিচয় ছিল। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, জনাব করিমের পুরনো ঢাকার বাড়িতেই নাকি একসময় অনেক ধরনের পশু, পাখি ও প্রাণীর অবস্থান ছিল। বাংলাদেশের ট্যুরিজম বোর্ড প্রতিষ্ঠা এবং দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও অবদানের কথাও হাসনাত আবদুল হাই আমার সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে উল্লেখ করতে ভোলেননি।

 

বেশ কিছুকাল আগে ঢাকার অন্যতম প্রধান শিল্পতীর্থ বেঙ্গল গ্যালারিতে তাঁরই তোলা পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের নগর, গ্রাম, মানুষ, প্রাণ, প্রকৃতি ও দৈনন্দিন জীবনযাপনের দামি ও দুর্লভ কিছু ছবি নিয়ে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী হয়ছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্য তাতে শুধু কেবল স্থিরচিত্র নয়, তাঁর নিজস্ব হাতে-দম-দেওয়া ৮ মিলিমিটার মুভি ক্যামেরায় তোলা কিছু রোমহর্ষক ভিডিও ফুটেজও ছিল। সেখানে আমরা ১৯৪৬-৪৭ সালে সড়কপথে তাঁর পূর্ববাঙলার প্রকৃতি দর্শন অভিযান, যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সুন্দরবন, কক্সবাজার সিলেট, জয়দেবপুর এমনকি জলপাইগুড়ি ভ্রমণ; প্রায় একইসময়ে ট্রেনে চড়ে কলকাতা, নাগপুর, দিল্লি, আগ্রা, পেশোয়ার, মাদ্রাজ ভ্রমণ; ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় সমুদ্রদর্শন, ১৯৪৮-৪৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চল রামগড় ভ্রমণের বেশকিছু সচল ছবিও দেখতে পেয়েছিলাম।

প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত তাঁর ব্যবহৃত রোলিফ্লেক্স ক্যামেরা; পূর্বপাকিস্তানের প্রথম বন্যপ্রাণী সমীক্ষাপ্রসূত পুস্তক The Vanishing Jungle: Two Wildlife Expeditions to Pakistan; আটের দশকের গোড়ার দিকে The Bangladesh Observer দৈনিকপত্রিকার একটি সংখ্যায় ‘অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ চলচ্চিত্রে তাঁর ভূমিকার ওপর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন 22 Days of 80 Day’s এর কাটিং; সিনেমায় দেখতে পাওয়া সেই হাতিগুলোর জোগানদার সিলেটের প্রিতিমপাশা জমিদারির নবাবের চিঠি; ছবির ক্যামেরাম্যান জি. ডব্লিউ. কেলির দুর্দান্ত একটি প্রশংসাপত্র ইত্যাদি দুর্লভ ঐতিহাসিক দলিলসমূহের উপস্থিতিও সেই প্রদর্শনীর মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সন্দেহ নেই। এখানে কেলির সেই চিঠিটিতে জনাব করিম সম্পর্কে লেখা একটি বাক্যের উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না। কেলি লিখছেন: His knowledge of the jungle gained through many tiger shooting expeditions, and his amateur but better than average 8 m.m. colour film records of his trips, give him the ability to understand a film unit’s problems and requirements better than almost anyone I have met outside the professional motion picture field and quite a few inside it. তবে জনাব করিম স্বভাবে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও আত্মপ্রচারবিমুখ, তাই তাঁর এই গৌরবময় ভূমিকা ও অর্জন সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িকেরা পর্যন্ত খুব একটা জানতে পারেননি। এই প্রসঙ্গে অবর্জাভার পত্রিকার প্রতিবেদক তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে এবং বিশেষ করে এমন একটি বিশ্ববিশ্রুত চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সেভাবে জানে না কেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন,‘সত্যি বলতে কি আমি নিজে কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলিনি। তাছাড়া সেইসময়ে দেশে চলচ্চিত্রবিষয়ক কোনো পত্রপত্রিকাও ছিল না।’ প্রতিবেদক আরও লেখেন, মধ্যবয়সী, বহুবিধ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বন্ধুবৎসল ও স্নিগ্ধ স্বভাবের এই মানুষটি, জনাব করিম, এখনও এই ‘আশিদিনে বিশ্বভ্রমণ’ ছবিটির সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে তেমন মুখ খুলতে চান না। তিনি বরং তাঁর যৌবনের দিনগুলোর শিকার-অভিযানের কথা, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের কথা এবং দেশে পর্যটন সংস্কৃতির বিকাশের বিষয়ে কথা বলতেই বেশি উৎসাহ বোধ করেন।

 

আমাদের পরম সৌভাগ্য, জনাব করিমের সুযোগ্য পুত্র জনাব ইফতিখারুল করিম তাঁদের পারিবারিক আর্কাইভে তাঁর গুণী পিতার তোলা যাবতীয় ছবি, সচলচিত্র, বই, চিঠিপত্র, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ব্যবহার্য বস্তু ইত্যাদি খুব যত্ন করে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং একপর্যায়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এইসব অমূল্য রত্নের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেই প্রাজ্ঞ কিউরেটর জনাব সামসুল আলম হেলাল Random Harvests শিরোনামের এই অমূল্য প্রদর্শনীটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, জনাব করিম তাঁর জীবদ্দশাতে এই নামে নিজেই একটি সুবিন্যস্ত অ্যালবাম, আলোকচিত্রসমূহের ক্যাপশনসহ, তৈরি করে রেখেছিলেন, যার একটি কপিও প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনন্দের বিষয়, প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে Random Harvests নামে একটি মূল্যবান, সংগ্রহযোগ্য গ্রন্থও প্রকাশিত হয়, যা নিঃসন্দেহে

আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে আগ্রহীজনদের তৃষ্ণা ও কৌতূহল মেটাতে সহায়ক হবে। আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমাজজীবনের এই দুর্লভ ও মহামূল্যবান সচিত্র উপস্থাপনাটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

আলম খোরশেদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও গবেষক

একজন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ ও তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রের কথা

আলম খোরশেদ অনেকেই জানেন যে, প্রখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞানলেখক জ্যুল ভের্ন এর কিংবদন্তিতুল্য গ্রন্থ ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ অবলম্বনে ১৯৫৬ সালে হলিউডে একই নামে

প্রগতির পথে, জীবনের গান, সকল অশুভ শক্তির হবে অবসান” এই আহবানে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ৫৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

\ ভাস্কর ধর \ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং প্রগতির লড়াইকে দৃঢ় করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। 

আমার বাবা কর্নেল তাহের

জয়া তাহের   আমাকে যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কর্নেল তাহেরের মেয়ে হিসেবে আপনার অনুভূতি কি? আমার চোখের সামনে এক নিমেষেই ভেসে ওঠে ৪০ বছরের অসংখ্য

ছাগল-মাহাত্ম্য

ড. ইউসুফ ইকবাল ভূপৃষ্ঠের বঙ্গ-ভূভাগে দ্রুতবর্ধমান প্রাণিকুলের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য প্রাণিটির নাম ছাগল। আমাদের একচুয়াল ও ভার্চুয়াল প্রতিবেশ-বাস্তব ও মেটাফোরিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব অপরিসীম। ছাগলের

সৈয়দ মনজুর কবির-এর অনুগল্প

শুধুই কলিজার টুকরা পারে   সম্প্রতিক সৃষ্টি হওয়া চরম বিপরীতমুখী দুই পরিবারের মাঝে একটি টানা বেড়ার আড়াল। শুধু ওপাশের আম গাছটির ছড়ানো লম্বা ডালটি চলে