এখন সময়:রাত ৯:৫৩- আজ: শুক্রবার-৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:রাত ৯:৫৩- আজ: শুক্রবার
৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

কল কাটার কৌশল

সাদিয়া সুলতানা

সিন্ডারেলা বিড়াল পুষতে চায় জেনে ওর বোনেরা হেসে লুটোপুটি খায়।

ওদের বাড়ি ভর্তি ইঁদুর এখন। সেলফে গোঁজা বই, টেবিলের হাত না পড়া কোণায় রাখা টুকিটাকি, খাটের নিচে গুঁজে রাখা রাজ্যের কেজো, অকেজো জিনিসপত্র সব কেটে কুটে কুটি কুটি করছে ইঁদুরের দল। একটা পুঁচকে ইঁদুর কী করে যেন মায়ের শাড়ির আলমারির ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। চেন্নাই থেকে মামার এনে দেওয়া কাঞ্জিভরম আর কলামকারি শাড়ি দুটার এক পাশে গোল ছিদ্র করে আরেকপাশের চৌকো ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সিন্ডারেলা আলমারির নিচে ঝাড়ু দিতে গিয়ে খুটখাট শব্দ শুনতে পেয়েছিল বলে মায়ের আত্মা কাঁপানো কোনো ক্ষতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই সিন্ডারেলার ইচ্ছেপূরণে নিমরাজি হয়েছিলেন মা। ওদিকে বাড়িতে বিড়াল ঢোকানোর বদলে বাড়ির কর্তা কিনা একদিন একজন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ডেকে নিয়ে এলেন! এই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার পরনে কিম্ভূত জোব্বা না থাকলেও কাঁধে ঝুলানো ঝোলায় ইঁদুর মারার কল ছিল, যেই কলে ধরা পড়ল সিন্ডারেলা। ওকে উদ্ধার করতে কোনো এনজেল বা প্রিন্স কেউই এলো না। মোটকথা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার পিছু পিছু সিন্ডারেলাকে এমন এক শহরে আসতে হলো যেই শহরে মা নেই, বাবা নেই, বোনদের খুনসুটি নেই, এমনকি ইঁদুরের উৎপাতও নেই। শুধু হাতের কাছে তারহীন যন্ত্র মানে ফোনটা ছিল বলে রক্ষে। তাই তো মায়ের কাছ থেকে একদিন সিন্ডারেলা খবর পেলো, ওর বোনেরা আদুরে বিড়াল হয়ে গেছে। দুই প্রিন্স এসে দুই বোনকে ঝুড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। এখন ওরা তিনবেলা ঝুড়ি থেকে শুধু মাথা বের করে আর আদর খায়। আদর ছাড়াও না চাইতেই হাজারও খাবার এসে হাজির হয় ওদের সামনে। প্রিন্সরা ওর বোনদের মতোই গলদা চিংড়ি খেতে পছন্দ করে, খাওয়াতেও পছন্দ করে।

 

মেয়েদের গল্প শেষে মা জানায় ওর ফেলে আসা শহরে ইঁদুরের উৎপাত কমেছে। তবে শেষদিন ওরা শেষবারের মতো দাঁতে শান দিয়ে নিয়েছে। সেই সময়ে সিন্ডারেলার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে ফাইলের ভেতরে থাকা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক আর অনার্স-মাস্টার্সের সার্টিফিকেটগুলোকে কেটে ঝুরঝুরে করে গেছে।

ওসব নিয়ে কোনো দুঃখ নেই সিন্ডারেলার। একটা লুকানো দীর্ঘশ্বাস বা আত্মা পোড়ানো হাহাকারও নেই। ঐসব সার্টিফিকেটগুলো থাকলেই বা কী হতো, কাজে তো লাগতো না কোনো। বরং বেশ হলো, ইঁদুরগুলোর কাজে লাগলো।

ভাবতে ভাবতে মোবাইলের লাল বাটনে চাপ দিয়ে কাজে মনোযোগী হয় সিন্ডারেলা। বাগদা চিংড়িগুলোর ধড় আলাদা করে সিংকের ওপরে চুড়ো করে রাখতে রাখতে ওর মনে পড়ে যায়, চিংড়ি মাছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার এলার্জি। একবার ভুল করে পুঁইশাক আর চিংড়ির চচ্চড়ি করেছিল। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা শাকের বাটিটা মেঝেতে ফেলে মাছ-শাকের ওপরে সিন্ডারেলার মাথাটা ঠেসে ধরেছিল। তপ্ত শ^াস ফেলতে ফেলতে গনগনে কণ্ঠে বলেছিল, ‘মেঝে থেকে বিড়ালের মতো সবটা চেটেপুটে খাবি।’

ছোটবেলা থেকে চিংড়ি মাছ দেখলে লোভ সামলাতে পারে না সিন্ডারেলা। তাই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা যেভাবে বলেছে সেভাবেই খেয়েছিল সবটা তরকারি। খেয়ে এলোমেলো আনন্দে ঘর লাগোয়া বারান্দায় শুয়েছিল দিনের বাকিটা সময়।

আজ কী করে খাবে চিংড়িগুলো? কেজি খানেক চিংড়ি! নাকি ভ্যানওয়ালাকে ডাকবে আবার, বলবে এগুলো পাল্টে একটা তেলওয়ালা রুই মাছ দাও। কিন্তু অমন ধড়বিহীন মাছগুলোকে কেন ফেরত নেবে ভ্যানওয়ালা। নাকি এখনই মাছগুলোকে ও খেয়ে নিবে, কচ কচ কচ…।

মাছের ওপরে নিমগ্ন মাছিগুলোকে দেখে আর খাওয়া হয় না সিন্ডারেলার। কালো পলিথিনে চিংড়িগুলো ভরে ঢাউস ফ্রিজের গভীরে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর শোল মাছের প্যাকেটটা টেনে বের করে। বরফ গলিয়ে মাছ, ডাল, ভাত রান্না করতে করতে ক্লান্তিতে তলিয়ে যায় সিন্ডারেলা। ভাবে বারান্দার মেঝেতে শরীর এলিয়ে দেবে। কিন্তু ঘড়িতে চোখ পড়তেই সতর্ক হয়ে যায়, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ফেরার সময় হয়ে গেছে।

ঘরে ফিরে সে কী করবে আজ? ঝোলা থেকেই বা কী বের করবে? ভেবে ভেবে মাছের তরকারিতে শেষ জ¦াল দিতে গিয়ে কড়াইয়ে তলায় ধরে যায়। ঠিক তখনই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ছুটে আসে…। ছুটে এসে সে সিন্ডারেলার রেশম রেশম চুলের মুঠি ধরে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে না সিন্ডারেলা। জানে, মিথ্যে চেষ্টা করে লাভ নেই। পিঠ পেতে মার খেতে খেতে চমকে ওঠে সিন্ডারেলা, এ কি পায়ের কাছ দিয়ে একটা ধেড়ে ইঁদুর দৌড়ে গেল দেখি! এই বাড়িতেও তবে ইঁদুর আছে! শুনেছিল এ শহরে ইঁদুর নেই, কিন্তু এটা কোথা থেকে এলো?

ইঁদুর দেখলেই বিড়ালের কথা মনে পড়ে। আরও মনে পড়ে যায়, সিন্ডারেলা একদিন বিড়াল পুষতে চেয়েছিল।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা কাজে ফিরে গেলে চারপেয়ে বিড়ালের মতো সিন্ডারেলা ঘরের কোণায় কোণায় ইঁদুরটাকে খুঁজে বেড়ায়। সোফার নিচে, টেবিলের নিচে, আলমারি-ওয়ারড্রোব, খাটের নিচে কুচ কুচ কুচ শব্দ করে চলে ইঁদুরটা, সিন্ডারেলাও মিঁয়াও মিঁয়াও শব্দ করে। এই করে করে ক্লান্ত সিন্ডারেলা একসময় ঘুমিয়ে যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিবস্ত্র অবস্থায় আবিষ্কার করে সিন্ডারেলা। দেখে ওর পরনের শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, অন্তর্বাস বিছানায় কুটি কুটি হয়ে পড়ে আছে। বিছানার চাদরটা পর্যন্ত কুটি কুটি করে গেছে কেউ। কে আবার! সেই ধেড়ে ইঁদুরটার কান্ড বুঝতে বাকি থাকে না সিন্ডারেলার।

হঠাৎ সিন্ডারেলা টের পায় ওর দাঁতগুলো শূল শূল করছে…কিছুক্ষণের মধ্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে এই শূলশূলানি ভাব। কী করবে, কী করলে আরাম পাবে ভেবে বালিশটা টেনে নিয়ে মাড়ি দিয়ে চেপে ধরে। এরপর কখন যে ও কচ কচ কচ করে বালিশের কভার কাটতে শুরু করে বুঝতেও পারে না। যখন বুঝতে পারে তখন দেখে ঘর তুলোয় তুলোয় ভরে গেছে। তারপর সারাদিন ইচ্ছে মতো দাঁত দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র কাটতে থাকে সিন্ডারেলা। কাটতে কাটতে ওর দাঁতগুলো আরো সুঁচালো আর ধারালো হয়ে ওঠে।

হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ যায়, এ কী! হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ফেরার সময় হয়ে এসেছে। কী করবে? ভাবে সিন্ডারেলা, এখন আলমারির পেছনে লুকিয়ে থাকবে, রাত নামলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ঝোলাটাই আগে কাটবে। সেই সাথে ইঁদুর ধরার কলটাও কাটবে। ওপরের মাড়ির দাঁতের নিচে ডান হাতের তর্জনিটা ঘুরিয়ে আনতে আনতে ফিক করে একবার হেসে নেয় সিন্ডারেলা। ইঁদুর হয়ে ইঁদুর ধরার কল কাটবে, তার আগে ওকে শিখে নিতে হবে কল কাটার কৌশল।

 

সাদিয়া সুলতানা, কথাসাহিত্যিক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।