এখন সময়:রাত ১২:৫২- আজ: সোমবার-২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:রাত ১২:৫২- আজ: সোমবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

চট্টগ্রামী প্রবাদের প্রথম গ্রন্থ : রচয়িতা জেমস ড্রমন্ড এন্ডার্সন (অষ্টম কিস্তি)

মহীবুল আজিজ

 

২০৭. সমুদ্রের জলে যারে ন কুলায়,

শিশিরের জলে কি হয়?

“For whom the ocean’s self, to him what is the dew on the grass?” Used by a man of fallen estate who finds a difficulty in making ends meet

 

২০৮. নাই দে-অতে এরন্ডাও গাছ্।

“For whom the ocean’s self, to him what is the dew on the grass?” Used by a man of fallen estate who finds a difficulty in making ends meet.

 

২০৯. অজাগাতে তুলসী

অজাততে রূপসী।

“As the holy tulsi grows in filth, so the lowest castes have the prettiest women.” Virtue is often found in lowly places.

 

 

২১০. অতি চালাকের গলায় দড়ি।

“The too clever man has a rope on his neck.” i. e., over-reaches himself.

 

২১১. আগে জলের ছিটা

হেসে লার্ডি গুতা।

“Sprinkle water first

Strike the blow at last. ” i. e., harsh treatment from a benefactor, or using the thin end of the wedge.

 

২১২. হাড়ি লৈ হৈলেও যাওন্,

ঘডি লৈ হৈলেও যাওন্।

“To go and serve is my lot

‘Tis the same, to take a pan or pot.” Expresses willingness to undertake a fresh task while one is about it.

 

২১৩. বার বাড়ি, তের খামার,

যে বাড়িতে যাই সে বাড়ি আমার।

“Twelve homes and farms thirteen

All is mine where ever I step in.” Used of a man who has many possessions.

 

২১৪. বার ঘরে পাড়া, তের ঘরে মারে,

সাইত্ করিব কারে?

“Twelve huts in my village and thirteen have beat me My witness who shall be?” Used of a man who has no friends.

 

২১৫. আবাতি কাঠাল জারিতে দেওন।

The Jack fruit is raw,

Put it under straw.” Ripening a young jack fruit artificially. Used when incompetent and unripe persons are appointed to office & c.

 

২১৬. কিয়র মাঝে কি?

পানি ভাতে ঘি!

What a mixture, see!

In wet rice is ghee!” Incongruity e. g., if a man plays the fool on a solemn occasion.

 

২১৭. বুদ্ধিতে হক্কল্ ঘটে

কোয়ালর হঙ্গে কেহ না আঁটে।

“Though sense can do it all

It is no match for luck.” Exemplifies the local fatalism.

২১৮. দুধ্ বেচি মদ্ খায়।

He sells milk and drinks spirits.” Used of spendthrifts and profligates. Showing the folly of vice.

 

২১৯. যে যারে ভাবে তে তারে পায়।

What a man wishes, that he gets.” i. e., man’s thoughts and nature determine his fate. Also encourages determination and application.

 

২২০. কেন্ডা দি কেন্ডা খোয়ান্।

Use a thorn to extract a thorn.” i. e., setting a thief to catch a thief. Cf. Proverb No. 144.

 

২২১. ঘর থাকতে পিয়র্গ্যা বাহিরে ভিজে।

“The weaver bird builds its nest in vain,

It lives outside in the wet and the rain.” It is believed that the weaver bird lives outside its nest. Used of a man who does not avail himself of his advantages. e. g., keeps his best clothes locked up; also of misers and stingy people.

 

২২২. বাব্ভূল্যা মরে শীতে আর ভাতে।

The dandy’s lot is told

To die of hunger and cold.”

Used of a man who spends his substance on personal decoration and frivolities.

 

২২৩. যে বলে রাম,

তার হঙ্গে যাম্।

“Whoever says Ram I go with him.” Used of those who are led by others i. e. of those who follows others blindly.

 

২২৪. উর্ধা বোঝা বুধার ঘারে।

“Jack’s load on Tom’s shoulder.” Used of false accusation & c.

 

২২৫. কোলেতে মরে পৈষ্য ন দে।

“(The child) dies at the breast (but the mother) won’t give it in adoption.” æThe dog in the manger” on rather the blindness of affection.

 

২২৬. মরতে হেলা’য়ায় ধরে।

“When a man is drowning he grasps at weeds.”  Drowning men grasp at straws of proverb No 270.

 

২২৭. যার লাগি কাঁদি মরি, র্তা চোখে পানি নাই।

The man for whom I cry

Has no tear in his own eye.” Cf. proverb No 100.

 

২২৮. পর্রে বাত্্  ঢেকি দি’ গালে।

“Breaking another’s boil by letting the dheki (rice-husker) fall on it.” We are all selfish. æNous avons tous assez de force pour supporter les maux d’antrui.”

 

 

২২৯. ঘি আগুনের কাছে রাখিলে উনায়।

“By fire do not your butter lay

For then ‘tis sure to melt away.” Temptation overcomes the reason.

 

২৩০. কোলে বসি দাড়ি হারা।

“Tearing a benefactor’s beard when sitting in his lap.” Typifies ingratitude. Cf. proverb No. 51.

 

২৩১. অভাগা চোরা যেই বাড়ি যায়,

Wherever the unlucky thieves their visits pay,

Are foiled by barking dogs on break of day.” An unlucky man has no chance.

 

 

২৩২. বামন মরে আশে,

চোর মরে কাশে।

“A thief’s cough, a Brahmin’s greed

Each betrays in time of need.”

 

২৩৩. নেক্ পাইয়ে যে কত নয়,

কাচ বাওরিও খোঁজে!

“It is enough for a wretched girl that she has got a husband, and yet she hankers after bracelets.” Used of an importunate person.

 

২৩৪. হাজে কেঁডা বাঝে মাছ্।

“You must risk the hook to catch the fish.” Nothing venture, nothing win.

 

২৩৫. ‘সু’চে ভাঙ্গিবে কাজে কুড়াল লাগান।

“To apply an axe to the work of a needle.” Making a fuss about trifles.

 

২৩৬. কাউয়ার উপর কামান দাবান।

Firing a cannon to kill a crow.” Similar in meaning to proverb No. 235.

 

২৩৭. কি চাষ র্কলো বাগা!

আগনে খায় চাষা বেটা

পুষত্ মারলো টাগা।

“What crops does the metayer reap at last?

In Aghan he ate his share, in Poush he has to fast.”

What a cultivation has he done as a metayer. He has consumed by Agrahayan what he got and is fasting in Poush.” Undertaking an unprofitable work – such as a bhagi tenure, which the ryots do not like, in years of drought.

 

২৩৮. (বাটীর) উতরে বাগ

দক্ষিণে রাখ।

“Make garden in the north (of a homestead) keep open the south (for ventilation).”

One of the most delightful characteristics of the wonderfully cool climate of Chittagong is the strong south wind which blows almost without intermission from February till October.

 

২৩৯. এড়িও ন দে বেড়িও মারে।

He does not give it up, though it shackles him.” The miser who cleaves to an unprofitable possession.

 

২৪০. এক জিদে মরে

(আর) এক বাদে মরে।

“Rancour and quarrels bring ruin.” wR`& and weev` are even commoner sources of ruinous litigation in Chittagong than elsewhere.

 

২৪১. ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়া বাঁধে।

The dheki (husking machine) cannot give up the habit of husking even in heaven.” The leopard cannot change his spots.

 

২৪২. কুকুরে কামড়াইলে আন্ডুর হেটে।

“A dog cannot bite a man higher than his knee.” A low person will take a mean revenge.

 

২৪৩. কুকুরে কামড়ায় বলি’ তারেও কি কামড়াইব (না)?

Shall I bite a dog in return?” One should not take revenge on mean fellows.

 

২৪৪. যে চাহিতে ন পারে পায়ের মুড়ি,

তে চাহে যে দাতের গুড়ি।

Who ne’er my heals could see, now boldly comes,

To pay into my mouth and see the gums.” Rebukes presumption.

 

২৪৫. কোয়ালর দোষে ভাত ন মিলে

ভিটারে দোষে রা’ত্ পোহাইলে।

One gets no food through adverse fate,

But blames by morn his home for that.”

An unfortunate man curses his position in life when dawn brings sober thought. Cf. The story of the Ape and the mole (Aesop’s Fable) Men ought to be satisfied with their position in life.

 

২৪৬. তিলরে তাল করা।

Making a palm fruit of an oil seed.” Making a mountain of a mole hill.

 

২৪৭. কলা দি’ পোলা ভাড়ান।

Alluring a boy with a plantain.” Cheating a fool by imposing trifles upon him.

 

২৪৮. তিন নকলে আসল খাস্ত।

Copy a third time o’er

The original is no more.” A tale gets spoiled by too often telling.

 

২৪৯. পরের মাথায় কাঠাল ভাঙ্গন্।

To break a jack fruit on another man’s head.” Meaning – To make a cat’s paw of a person.

 

২৫০. বিশ্বকর্ম্মার পোয়া বিয়া।

Viswakarma (Vulcun) begetting a mole.”

æParturient montes.”

Viswakarma is here represented in his most ancient form as Prajapati – the creator, and not, as represented in the Epics as Deva-vardhika, the builder of the celestial palaces.

There is a tradition that Viswakarma begot a mole.

 

২৫১. হাবাত্যার আড়ি আঠার সেরে।

A spendthrift calculates his ari at 18 seers.” An ari is a measure of 16 seers. The greedy man is never satisfied.

 

২৫২. সমস্ত রামায়ণ পড়ি কয় “সীতা কার বাপ্।”

He asks whose father is Sita?’ after reading the whole of the Ramayana.” Satirises those who, like Candace’s treasurer, read without understanding.

 

২৫৩. হাতে পাঁজি মঙ্গলবার।

A man, though he has got an almanac in his hand, enquires if it is Tuesday.” Satirises foolish questions.

 

২৫৪. এক গুলিয়ে দুই বাঘ মারণ।

Killing two tigers with one shot.” Killing two birds with one stone.

 

২৫৫. রথও চাহন, কলাও বেচন্।

Seeing the car (festival) and selling plantains.” Combining business and religion, pleasure and profit, & c. & c.

 

[জে ডি এন্ডার্সনের চট্টগ্রামী প্রবাদ বিষয়ক গ্রন্থটি কেবল প্রবাদের সংগ্রহই নয়, এটি বিবিধ সম্ভাবনার বাহকও বটে। প্রবাদগুলোর সূত্রে এন্ডার্সন সমান্তরাল যেসব প্রবাদের উল্লেখ করেন সেগুলো নানা দেশ-জাতির আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সংবাদবাহী। আবার এগুলোর সূত্রে তুলনামূলক বিদ্যাচর্চার একটি দিকও উন্মোচিত হতে পারে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামী প্রবাদসংক্রান্ত কিছু কাজ হলেও সেসব এন্ডার্সনের মতোন এতটা তুলনামূলক বিদ্যাসাধিত নয়। আমরা দেখতে পাই কেবল ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান ও ভাষার মধ্যে তাঁর অনুসন্ধান চলেছে এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর দূরতর দেশ ও ভাষাতেও সম্ভাব্য সাদৃশ্যের সন্ধান করেন তিনি। ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, ফরাসি, লাতিন এইসব ভাষায় চট্টগ্রামী প্রবাদের সমান্তরাল সূত্রগুলোর উপস্থিতি যথার্থই কৌতূহলোদ্দীপক। এর মধ্য দিয়ে দেশ-জাতি-পরিবেশ নির্বিশেষে মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমনকি মনস্তাত্ত্বিক সমধর্মিতার বহু দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়। এ-পর্যায়ে কয়েকটি চট্টগ্রামী প্রবাদের সূত্রে খানিকটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

২০৮-সংখ্যক প্রবাদটি (নাই দে-অতে এরন্ডাও গাছ।) প্রায় একশত ত্রিশ বছর আগেকার একই ভাষিকতা নিয়ে বর্তমানেও প্রচলিত। প্রায় একই ধরনের একটি প্রবাদ পরবর্তীতে চট্টগ্রামী ভাষায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে— কুরা নাই দ্যাশত্ কুরিয়ে বাগ্ দেয়। অর্থাৎ যে-অঞ্চলে মোরগ নেই সেখানে ভোরের ঘোষণা দেয় মুরগি। এটি একটি উপহাস-ব্যঙ্গমূলক প্রবাদ যেটিতে লোকাচার, সামাজিক দৃষ্টি প্রভৃতির চমৎকার প্রতিফলন পাওয়া যায়। এই প্রবাদটির সূত্রে এন্ডার্সন যে-ফরাসি প্রবাদের উল্লেখ করেন সেটির অর্থ হলো— আগন্তুকদের ভিড়ে একচক্ষু লোকটাই কালো। ‘কালো’ বর্ণ দ্বারা এখানে দৃষ্টিআকর্ষণকারী বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। মোটকথা এই তিনটি প্রবাদের একটি সাধারণ নির্গলিতার্থ হতে পারে ‘মন্দের ভালো’। এসব প্রবাদের মধ্য দিয়ে লোকমানস ও লোকচরিত্রের বিভিন্ন মাত্রা লক্ষ করা যায়। এসব প্রবাদের একটি প্রধান বিশেষত্ব হাস্যব্যঙ্গপ্রবণতা, যেমন: “কিয়র মাঝে কি?/ পানি ভাতে ঘি।” (২১৬-সংখ্যক), “দুধ বেচি মদ খায়।” (২১৮-সংখ্যক) এবং “যে বলে রাম,/ তার সঙ্গে যাম্।(২২৩-সংখ্যক)”। ২১৬ এবং ২১৮-সংখ্যক প্রবাদদু’টি ঠিক একই ধরনের প্রকাশে বর্তমানেও প্রচলিত। ২২৩-সংখ্যক প্রবাদে ধর্মের আত্যন্তিক গুরুত্ব কিংবা নেতৃত্বের অন্ধ অনুকারী জনগোষ্ঠির স্বভাবটিকে সনাক্ত করা যায়।

এন্ডার্সনের প্রবাদসংগ্রহে চট্টগ্রামের এমন কিছু প্রবাদের কথা বলা যাবে যেগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই যথেষ্ট প্রাচীনতার ধারক। এগুলো কিভাবে চট্টগ্রামী ভাষায় প্রয়োগের পরিবেশ-পরিস্থিতি পেয়েছিল সেটা নিয়ে গবেষণা চলতে পারে। ভাষাতাত্ত্বিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘গল্পের রূপান্তর’ লেখার মধ্য দিয়ে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষা বা এক দেশ-জাতি থেকে অন্য দেশ-জাতিতে পর্যটনের যে-ধারণাটিকে উপস্থাপন করেছিলেন সেটির আলোকে বলা যায়, ভাষাপ্রকাশের ভ্রামণিকতা একটি জনগোষ্ঠি থেকে অন্য জনগোষ্ঠিতে সুদীর্ঘকালের প্রবাহে সংঘটিত হওয়া সম্ভব। সেরকমই এন্ডার্সন সংকলিত এমন কিছু প্রবাদের কথা বলতে পারা যাবে যেগুলোর উৎস-শেকড় দূর-দূরতর গোলার্ধ। প্রসঙ্গত এটিও কি বলা যায়, হয়তো কেউ কারও প্রবাদ সম্পর্কে না জেনেও একই ধরনের ঘটনার সূত্রে সমধর্মী মন্তব্যের প্রকাশ ঘটালো! এটা সমাজ গবেষকগণ ভালো বলতে পারবেন, আপাতত সেরকম প্রবাদগুলো আমরা লক্ষ করি এস্থলে। ২২৫-সংখ্যক প্রবাদটিতে (কোলেতে মরে পৈষ্য ন দে।”) বলা হচ্ছে, শিশু তার মায়ের কোলে ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছে কিন্তু মা তবু তার শিশুটিকে পরিপালন করবার জন্য অন্যের হাতে তুলে দিতে নারাজ। এ-প্রবাদ থেকে একটা বিষয় বোঝা যায়। প্রথমত এটি সামাজিক অর্থবৈষম্যের একটি দিকনির্দেশক। আর্থিক শোচনীয়তার কারণে দরিদ্র লোকেরা তাদের সন্তানদের অবস্থাপন্ন লোকেদের নিকটে ‘পালক’ হিসেবে তুলে দিতো। সেটা প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী হলেও কখনো-কখনো তা স্থায়ী মেয়াদেরই রূপ নিতো। এন্ডার্সন ‘এ্যাডপ্শান’-এর মাধ্যমে যে-অনুবাদ (‘পৈষ্য’ শব্দের) করেছেন সেটি বস্তুত ইউরোপ, ব্রিটেন বা বহির্বিশ্বের বহু দেশে প্রচলিত একটি সামাজিক ব্যবস্থা। চট্টগ্রামী এ-প্রবাদটির সমান্তরালে এন্ডার্সন ‘দ্য ডগ ইন দ্য মেইনজাহ্’ যে-ইংরেজি প্রবাদটির উল্লেখ করেছেন সেটি আসলে কয়েক শত বছরের প্রাচীনতাচিহ্নিত। এমনকি এটিকে আরও পিছিয়ে বাইবেলের সমকালীন বলেও বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রাচীন যে-গল্প থেকে এটির জন্ম সেখানে বলা হয়, একটি কুকুর গবাদিকে খেতে দেওয়া খড়ভর্তি গামলার ওপর বসে আছে। কিন্তু সেটা তার খাবার নয়, আবার সেটা সে গবাদিকেও খেতে দিতে নারাজ। অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন নেই কিন্তু তবু অন্যকেও সে সুখী হতে দেবে না। এটি বস্তুত প্রায় সব দেশের সমাজ সম্পর্কেই বলা যায়। বাইবেলের ম্যাথু’র গসপেল-অংশে (২৩ : ১৩) বলা হচ্ছে: শোনো হে পাষাণ আইন-প্রণেতা আর গোঁড়ামির ধারকেরা, তোমরা স্বর্গের দরোজা বন্ধ করে রেখেছো, যেখানে তোমরা নিজেরাও ঢুকবে না এবং অন্য কাউকেও ঢুকতে দেবে না।

২২৬-সংখ্যক চট্টগ্রামী স্থানীয় প্রবাদটির (মরতে হেলা’য়ায় ধরে। এর অর্থ ডুবে মারা যাওয়া লোক কচুরিপানা ধরেও বাঁচতে চায়।) ক্ষেত্রেও কৌতূহলোদ্দীপক বহির্দেশীয় সমান্তরাল সূত্রসমূহকে পাশাপাশি রেখে বিচার করা যেতে পারে। এটির ইংরেজি সমান্তরাল প্রকাশে পাওয়া যাচ্ছে: ডুবন্ত মানুষ হাতের নাগালে যা পায় (এমনকি খড়কুটো) তা-ই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। বর্তমান গ্রন্থের ২৭০-সংখ্যক প্রবাদটিও (যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ।) প্রায় একই অর্থ বহন করে। ১ম শতাব্দীতে গ্রিক ডায়োজেনিঅ্যানাস এবং লুসিয়ান-এর রচনায় প্রথম এমন অভিব্যক্তির প্রকাশ লক্ষ করা যায় বলে সমালোচকদের ধারণা। আবার অনেকে ঈশপের (৬২০-৫৬৪ খ্রিপূ) গল্পই এর আদি উৎস বলে মনে করেন। তবে ইংল্যান্ডের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে স্যার টমাস মোর ‘টাওয়ার অব লন্ডনে’ বন্দি থাকা অবস্থায় ‘এ ডায়লগ অব কমফোর্ট এ্যাগেন্স্ট ট্রিব্যুলেশন’ শীর্ষক রচনায় ডুবন্ত মানুষের সামান্য লাঠি ধরে বাঁচার চেষ্টা কথাটি ব্যবহার করেন উপমা হিসেবে। পরবর্তীতে ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ডের নিউ কলেজের (কবি শেলি যে-কলেজের ছাত্র ছিলেন।) ফেলো জন প্রাইম তাঁর ‘ফ্রুটফুল এ্যান্ড ব্রিফ ডিসকোর্স’ গ্রন্থে টমাস মোর-এর উপমাটাই ব্যবহার করেন তবে জন প্রাইম মোর-এর ‘লাঠি’র পরিবর্তে ‘খড়’-এর উপমা ব্যবহার করেন।

২৩৬-সংখ্যক চট্টগ্রামী প্রবাদটির (কাউয়ার উপর কামান দাবান।) উৎসও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক এবং এটি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে প্রাচীন থেকে বর্তমানে এসে  (যেমন: মশা মারতে কামান দাগান।) স্থিতি লাভ করেছে। এই প্রবাদটির দু’টি সমধর্মী রূপ লক্ষ করা যায় ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায়।  ইংরেজি প্রবাদটি হলো: “টু ইউজ আ স্লেজহ্যামার টু ক্র্যাক আ নাট”, যেটির অর্থ: একটা ছোট্ট বাদাম ভাঙবার জন্য মস্ত

 

হাতুড়ি’র ব্যবহার। আমেরিকায় প্রচলিত প্রবাদটি: “টু ইউজ আ ক্যানন টু শুট আ ফ্লাই/স্প্যারো।” এর অর্থ: একটা মাছি/চড়ুইকে মারবার জন্য কামান দাগানো। এসব প্রবাদের গভীর ব্যঞ্জনাবাহিতার কারণেই এগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অজূন করে এবং ছড়িয়ে পড়ে যুগ থেকে যুগান্তরে। ২৪৯-সংখ্যক প্রবাদটি সেরকম একটি অতি জনপ্রিয় প্রবাদ: পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গন্। এটির সংক্ষিপ্ত টীকাভাষ্য হিসেবে এন্ডার্সন ইংরেজি ‘ক্যাট্স্ প’ প্রবাদের উল্লেখ করেন। ‘দ্য মাংকি এ্যান্ড দ্য ক্যাট’ গল্পে দেখা যায় একটা বানর আগুনে পুড়তে থাকা কাঠবাদাম খাবার জন্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একটা বিড়ালকে ব্যবহার করছে। বিড়ালটা লোভের বশবর্তী হয়ে বানরের কাজটা করে দিলেও শেষে বিড়াল প্রতারিত হয় বানরের দ্বারা। সপ্তদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে জঁ দ্য লা ফন্তেইনও ঠিক এই প্রবাদের ব্যবহার করেন তাঁর রচনায়। ২৫৪-সংখ্যক প্রবাদটির (এক গুলিতে দুই বাঘ মারণ।) উৎসও অনেক সমালোচক গ্রিক-ল্যাটিন বলে মনে করেন। ইংরেজিতে “কিলিং টু বার্ডস্ উইথ ওয়ান স্টোন”-এর ব্যবহার ষোড়শ শতকে প্রথম ইংল্যান্ডে লক্ষ করা গেলেও প্রাচীন চিন দেশে এটির উদ্ভব বলে অনেকের ধারণা। হ্যান বংশের শাসনকালে (২০২ খ্রিপূ — ৮ম খ্রিস্টাব্দ) ঝান গুও চে’র আমল এটির সম্ভাব্য উদ্ভবকাল।

কাজেই জেমস এন্ডার্সনের চট্টগ্রামী প্রবাদবিষয়ক গ্রন্থটি নিয়ে বর্তমানেও সমাজ-নৃবিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণার অবকাশ রয়েছে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ গ্রন্থটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন যৌক্তিক কারণেই। চট্টগ্রামের প্রবাদ সম্পর্কে এতটা সুবিন্যস্ত, সুগ্রথিত ও সুব্যাখ্যাত গ্রন্থ পরবর্তীতে আর লক্ষ করা যায় না। সেদিক থেকে জেমস ড্রমন্ড এন্ডার্সনের এ-গ্রন্থ আজও বিদ্যমান সমকক্ষতাহীন ভাবেই।]

 

মহীবুল আজিজ, কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক

আন্দরকিল্লা প্রকাশনার ২৮ বছর আগামীর পথ ধরে অনাদিকাল

রূপক বরন বড়ুয়া আমি মাসিক ‘আন্দরকিল্লা’ কাগজের নিয়মিত পাঠক। প্রতিবারের মতো হাতে নিলাম এবারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঢাকা জুলাই ২০২৫ সংখ্যা, হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই

জলে জঙ্গলে (পর্ব-২)

মাসুদ আনোয়ার   ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বোর্ডের রেজাল্ট আউট হলো। আমি কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। যে কোনোদিন কুমিল্লা বোর্ডও ফল প্রকাশ

স্বপ্নে গড়া অবয়ব

সৈয়দ মনজুর কবির   মনটা যখনই কেমন অজনা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তখনই কেয়া জানালার ধারে এই চেয়ারটাতে এসে বসে। আজ অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে

অন্তহীন সুড়ঙ্গ

সুজন বড়ুয়া   কবর থেকে বেরিয়ে মহিম অশরীরী রূপ নিল। সঙ্গে সঙ্গে গত কয়দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ে গেল তার। ফার্স্ট সেমিস্টারের পর

রাত যখন খান খান হয়ে যায়…

মনি হায়দার   চোখ মেলে তাকায় সোাহেল হাসান। প্রথম দৃষ্টিতে সবকিছু অচেনা লাগে। কোথায় এলাম আমি? উঠে বসতেই মনে পড়ে গতরাতে অনেক ঝক্কি আর ঝামেলার