এখন সময়:সকাল ১১:০৫- আজ: শনিবার-২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:সকাল ১১:০৫- আজ: শনিবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

জলে জঙ্গলে

মাসুদ আনোয়ার

 

এক.

আসলে নূর নবী দরবেশই আমার শেষ ভরসায় পানি ঢেলে দিল। লোকটা যদি চায়ের দোকানে অতগুলো লোকের সামনে ওভাবে বিদ্রূপ না করত, তাহলে হয়তো এই কাহিনি লেখার দরকার হতো না। দিব্যি বাড়িতে থেকে যেতাম এবং এসএসসি পাস করে….

কিন্তু তা হয়নি। নূর নবী দরবেশ এক দোকান লোকের সামনে আমাকে স্রেফ কাত করে দিল। কেবল প্রশ্নটা করেছি, অমনি মাচার ওপর থেকে দোকানদারের কাঁথা-বালিশের বান্ডিলটা হুড়মুড় করে সামনের টেবিলের ওপর পড়ল, আর অবাক হওয়ার প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিয়ে নূর নবী দরবেশ হো হো করে হেসে উঠল। তার সাথে গলা মিলিয়ে চায়ের দোকানের ভেতরে বসা ও বাইরে দাঁড়ানো জনা বিশ-ত্রিশেক লোকও দাঁত বের করল।

সবচেয়ে উঁচু গলা সুলতান সুকানির। নূর নবী দরবেশের কেরামতির এ আসরে ওই হোস্ট। মিনিটে মিনিটে চা-পান-বিড়ি সিগ্রেট আসছে দরবেশ বাবার সামনে। বাবা কথা বলছেন, কথা বলতে বলতে আচমকা ‘হো-উ-ক’ করে একবার হাঁক মারছেন, অমনি সুলতান সুকানিসহ কয়েকজন কানফাটা আওয়াজে চায়ের দোকান কাঁপিয়ে দিচ্ছে, ‘মওলা!’

দরবেশকে ঘিরে বসা লোকগুলো এসেছে নানা আরজু নিয়ে। কারো ছেলের অসুখ, কারো মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কেউ অভাবে আছে, বাবা একটু দোয়া করলে কপালটা ফিরে যায়–

 

নানান ধান্দা।

দিন কয়েক ধরে বেশ নামডাক শোনা যাচ্ছিল বাবার। বাবার বাড়ি চরলক্ষ্মী। বয়স অল্প, কিন্তু এই বয়সেও বিরাট কামেল। যা-ই বলে, তা-ই নাকি হয়ে যায়। কেবল মরা মানুষ বাঁচানো ছাড়া আর সব করতে পারে।

আমি অবশ্য এমন কাউকেই খুঁজছিলাম। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। সবার ধারণা, প্রথম বিভাগ টিভাগ পাব। ছাত্র ভাল হলে যা হয় আর কী? সবাই আশা করে বসে থাকে। গবেষণাজুড়ে দেয় না জানি স্ট্যান্ডই করে বসে কিনা। আমি স্ট্যান্ড না করলেও অন্তত প্রথম বিভাগ পাব, এমন আশা করার লোক নেহাত কম নয়। কিন্তু আমি জানি, পরীক্ষায় কী করে এসেছি। ভূগোলে ‘ভূগোলক’ পাবার ব্যাপক সম্ভাবনা। প্রথম বিভাগ দূরে থাক, রীতিমতো ফেল করার ভয়ে মনে মনে কাঁপাকাঁপি চলছে পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকেই। একটা আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে। যদি ফেল করি, তাহলে….তাহলে বঙ্গোপসাগরের সব পানি ডাঙায় উঠে না এলেও সমালোচনা আর ধিক্কারের যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে, তা সামাল দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। গার্জেনদের গর্জন, শিক্ষকদের দাঁত ঘসটানি, বন্ধুদের টিটকারির রীতিমতো বন্যা বয়ে যাবে।

গর্জন, দাঁত ঘসটানি আর টিটকারি যে কপালে খুব অন্যায্য ভাবে জুটবে, তাও নয়। আপনি যদি দ্বিতীয় শ্রেণিতে ‘আনোয়ারা’ আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘যৌবনের তুফান’কে ‘পাঠ্যবই’ বানিয়ে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনার পক্ষে ক্লাসে প্রথম না হওয়াটা অপরাধ বৈকি? সে ‘অপরাধ’টা করতে পারতাম না বলে প্রতিবছর প্রথম হতাম। তাতেই ‘ভালো ছাত্র’ খেতাবটা কপালে জুটে গিয়েছিল।

যা-ই হোক, বিশাল এক বিশ্বাস আর ভক্তি নিয়ে গিয়েছিলাম নূর নবী দরবেশের কাছে। মাত্র দিনকয়েক আগে এসেছে লোকটা আমাদের অঞ্চলে। এসেই অনেক ভক্ত জুটিয়ে ফেলেছে। প্রায় শুনি ওর কেরামতির কথা। তেমাথার কাসেম সওদাগরের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একজন হঠাৎ বলতে শুরু করল, ‘বুঝলে, এবার বোধ হয় নদী ফিরে যাবে। নূর নবী দরবেশ কসম খেয়ে বলেছে, নদী না ফিরিয়ে সে এখান থেকে যাবে না।’

মেঘনা নদী বড় বাড়াবাড়ি শুরু করেছে আমাদের অঞ্চলে। রাতদিন ভেঙে নিচ্ছে চাকা চাকা মাটি। মানুষের ঘর-বাড়ি, খেতি খোলা গিলে খাচ্ছে। কোথায় ছিল সে পশ্চিমে পুরনো দারোগা হাটের কাছে! মনে আছে, নানার সাথে ছোটবেলায় একবার নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম হেঁটে হেঁটে। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা, কিন্তু দারোগা হাটের দেখা আর মেলে না। নানার সাথে ঘ্যান ঘ্যান জুড়ে দিয়েছিলাম, ‘কই নানাজি, দারোগা হাট কই?’

মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে অনেক পুবে চলে এসেছে মেঘনা। পুরনো দারোগা হাট ভেঙে পুবে যে নতুন দারোগা হাট হয়েছে, সেটাও ভাঙার মুখে। মাঝে মাঝে একা একা কিংবা কয়েকজন মিলে নদী দেখতে যাই। তখন দেখি এক একটা বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে মেঘনার প্রবল স্রোতে। মানুষজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যতিব্যস্ত। পুকুরের মুখ ছেড়ে দিয়ে মাছ ধরে নিচ্ছে, বড় বড় গাছ কেটে লাকড়ি বানিয়ে গরুর গাড়ি বোঝাই করা হচ্ছে। একই বাড়ির লোক বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। যে যেদিকে সুবিধে পাচ্ছে।

বিষণ্ন মুখের সে কর্মব্যস্ত লোকগুলোকে দেখি। তাদের ছেলেমেয়েরা হৈ চৈ করছে, বুড়োরা মাথায় হাত দিয়ে বসা আর মহিলারা বিলাপ করতে করতে জিনিসপত্র গোছানোর কাজ করছে।

যাদের বাড়ি এখনো ভাঙেনি, তাদের মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ। রাস্তাঘাটে, হাটে-বাজারে তারাও কথা বলে নদীর ভাঙন নিয়ে। তবে তাদের কারো কারো গলায় এমন আশাবাদও শোনা যায় যে, নদী অন্তত তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাবে না। তার আগেই অলৌকিক কোনো কারণে পশ্চিম দিকে বিশাল চর দিয়ে পিছিয়ে যাবে। আশাবাদীদের দলে আছেন আমার বড় জেঠাও। খুব বড় গলা করে মাঝে মধ্যে ঘরে বসে কওয়া বলা করেন। তার মনে একটা বিশ্বাস খুব বড় হয়ে কাজ করছে। তার নাকি সব সময় মনে হয়, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থেমে যাবে ভাঙন এবং সেটা অবশ্যই আমাদের বাড়ি ভাঙার আগে। কিন্তু যাদের বাড়ির একদম কাছে এসে গেছে মেঘনা, তাদের বিশ্বাসের জোর অতটা প্রবল নয়। তারা নিয়তিকে মেনে নিয়েছে। সবাই নিজ নিজ সুবিধা মতো মেঘনার পাড় থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে।

নূর নবী দরবেশের ওপর মানুষের বিশ্বাস জমতে শুরু করেছে। অনেকে বোতলে ভরে পানি নিয়ে ওর মুখের ফুঁ দিয়ে পড়িয়ে আনছে। সে পানি খাচ্ছে বিভিন্ন নিয়ত করে। তেমাথার চায়ের দোকানে ফুঁ দেয়া সে পানির ফজিলতও শুনতে পেলাম সবিস্তারে। হাতেম কাকু নূর নবী দরবেশের ফুঁ দেয়া পানি খেয়ে তার মায়ের কোমরের ব্যথা কীভাবে চলে গেছে, তার একটা বিশদ বিবরণও দিয়ে ফেলল।

আমি ছাত্র ভালো ছিলাম, কিন্তু ছেলে হিসেবে মোটেই ভালো ছিলাম না। চঞ্চলতা ছিল একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। মা ছিলেন না, তাই কেমন এক অস্থিরতায় মন আক্রান্ত হয়েছিল বুঝতে শেখার পর থেকেই। ঘরকে পর মনে হতো আর পরের কাছেই যেন নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছিল। এরকম অস্থিরতা প্রভাব ফেলেছিল আমার আচরণে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তাই পাগল, উচ্ছৃঙ্খল, বেকুব এ ধরনের কিছু বিশেষণ জুটেছিল কপালে। বিশেষ করে বাবা আর বড় জেঠাই বেশি ব্যবহার করতেন বিশেষণগুলো। শুনতে শুনতে নিজের সম্পর্কে এ রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে আমারও।

কিন্তু এসব আগের গল্প। একটা ব্যাপার হলো এই যে, বয়সের যে সময়টায় মানুষ হঠাৎ করে সব কিছু এক সাথে বুঝতে শুরু করে, সে হলো কৈশোর। একজন কিশোরের মনে আচমকা যেন সব কিছু একত্রে ক্রিয়া করতে শুরু করে। আর এসময়টায় দরকার কিশোরের প্রতি বড়দের সদয় ও সতর্ক পর্যবেক্ষণ। আমার বেলায় সেটা হয়নি। ফলে শুরু হলো পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া। তাই এসএসসিতে প্রথম বিভাগ পাব, সেরকম দুরাশা বাবা-জেঠা কিংবা শিক্ষকদের মনে থাকলেও আমার ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি ভূগোল পরীক্ষায় খারাপ করে এসে যে ফেল করার ভয়ে মনে মনে কাঁপছি, তা কেউ জানত না। প্রথম বিভাগ না পাই, দ্বিতীয় বিভাগও যে পাব না, একেবারে ফেলই করব—এটা অবশ্য ছাত্র হিসেবে আমার অতীত পারফরমেন্স যাচাই করলে কারো মাথায় আসার কথা নয়।

তেমাথার চায়ের দোকানে হাতেম কাকুর মায়ের কোমরের ব্যথা ভালো হয়ে যাওয়ার কথা শুনে আশান্বিত হলাম। হাতেম কাকু আমাদের পরিচিত। ওর মা বুড়িকেও চিনি। মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে যায় টায়। গ্রাম সম্পর্কে দাদি ডাকি। সুতরাং নূর নবী দরবেশের পড়ানো পানি খেয়ে এরকম চেনা-জানা একজন মানুষের ভালো হয়ে যাওয়ার সংবাদ শোনার পর তার কেরামতিতে বিশ্বাস না করার সঙ্গত কোনো কারণ থাকতে পারে না।

মঙ্গলবার আর শুক্রবার আকবর হাট। মুন্সির হাট রোববার আর বিষ্যুদবার। শনিবার আর বুধবার হলো শান্তিত্মর হাট। মেঘনার উত্তাল ঢেউ শান্তির হাটের গায়ে থাবা বসিয়েছে। খাবলে নিচ্ছে মাটি। দোকানপাট সরে যাচ্ছে। শান্তির হাটে তাই যাওয়া হয় না। এখন চায়ের দোকানে নূর নবী দরবেশের নদী ফিরিয়ে দেয়া-সংক্রান্ত খবর শুনে মনে ভারি একটা ভরসা পেলাম। লোকটা নিশ্চয় সে শক্তি রাখে। নইলে এমন বড় গলা করে বলে কী করে?

পকেটে টাকা-পয়সা থাকুক না থাকুক, বাজারবারে বাজারে যাওয়া চাই। কিছু না, স্রেফ আড্ডা মারা। বাহারদের মেকানিক শপ আর জসিমদের গোলআলুর আড়ত আছে। বেশ দু’পয়সা থাকে প্রায় সময় তাদের পকেটে। হাটবার দিন গেলে চা-সিগ্রেটের আপ্যায়নটা মোটামুটি ভালোই জোটে। সবচেয়ে বড় কথা হলো পরীক্ষার পর স্কুলের পাট চুকে যাওয়ার কারণে যেসব বন্ধুর সাথে এখন আর দেখা হয় না, তারাও আসে ওদের দোকানে। দারুণ আড্ডা জমে ওঠে তখন।

সেদিনও জসিমের টাকায় চা খেয়ে সিগ্রেট ফুঁকছি, এসময় এলো সেবক, নোমান আর পারভেজরা। রেজাল্ট আউট হওয়ার সময় হয়ে এসেছে। দিন পনেরো পরেই জেনে যাব, কে কে পাস করেছে আর কে করেনি। আমার বন্ধুদের মধ্যে অবশ্য ফেল করার মতো কেউ নেই। ছাত্র হিসেবে কম বেশি সবাই ভালো। ফার্স্ট ডিভিশনের আশা কেউ করে না তারা, তবে সেকেন্ড ডিভিশনে যে সবাই উতরে যাবে, এ বিশ্বাস আছে। এদের চালচলনেও দেখছি ব্যাপক পরিবর্তন। সবাই কলেজ টলেজ নিয়ে কথা বলছে। কারো কারো ঢাকায় চলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। গম্ভীর মুখে তা বলছেও।

এসব গল্পে অবশ্য আমি সব সময় শুনিয়েদের দলে। ঢাকা গিয়ে কলেজে ভর্তি হবো, এমনটা আমার সুদূর কল্পনারও বাইরে। ঢাকায় আমাদের আত্মীয়-স্বজন কেউ থাকে না। আমার হয়তো বড়জোর চট্ট্রগ্রাম পর্যন্ত যাওয়া হতে পারে। কিন্তু তার আগে পাস করতে হবে তো? আমার তো সে গ্যারান্টিও নেই। এসএসসিতে এক বিষয়ে ফেল করলেই পুরো ফেল। আমি জানি, আমি ভূগোলে ফেল করব। কারণ পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে হিসেব করে দেখেছি, উনত্রিশের বেশি কোনোভাবেই পাচ্ছি না। তেত্রিশে পাস। সুতরাং ফেল অনিবার্য। একমাত্র অলৌকিক কোনো সাহায্য ছাড়া পাস করার কোনো উপায় নেই।

এখন চায়ের দোকানে নূর নবী দরবেশের কেরামতির কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, তিনি যেন খাস করে আমার জন্যেই এই সময়ে এসে হাজির হয়েছেন। না, আর দেরি করা ঠিক হবে না। কালই যাব বাবার কাছে।

তুমুল হৈ চৈ করছে আমার বন্ধুরা। আমার দিকে কারো মনোযোগ নেই। আস্তে করে সটকে পড়লাম। আজ আমার মন ভালো নেই। শালারা হৈ চৈ করে মরুক। আমি আগে পাসের ব্যবস্থা করে নিই।

 

অনেকক্ষণ লেগেছিল বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। প্রথমত আমি মুখচোরা, দ্বিতীয়ত তোতলা। অনেক লোকের সামনে যেমন মুখ তুলতে পারি না, তেমনি অনেক লোকের সামনে খুলতেও পারি না। বাবা যেখানে অধিষ্ঠিত আছেন মধ্যমণি হয়ে, পান চিবুচ্ছেন, চা খাচ্ছেন আর সিগ্রেট ফুঁকছেন, সেখান থেকে হাত কয়েক দূরে কাঠের বেঞ্চিতে নিজেও প্রায় কাঠ হয়ে বসে আছি। সবাই ‘বাবা, বাবা’ করছে। নূর নবী দরবেশের বাবার বয়সীও জনাকয়েক আছে চায়ের দোকানে। তারাও দেখছি ‘বাবা’ ডাকছে। আমি কী ডাকব ঠিক করে উঠতে পারছি না। বাবা ডাকতে লজ্জা করছে। বাড়িতে জলজ্যান্ত নিজের বাবা রেখে এসে আরেকজনকে বাবা ডাকতে যাব কেন?

দেখলাম, কেউ কেউ মামাও ডাকছে। ‘মামা’ ডাকটা মধুর। মনে ধরল আমারও। ঠিক আছে, আমিও মামা ডাকি। বার কয়েক রিহার্সেল দিলাম মনে মনে। তোতলা মানুষ, কথা বলতে গিয়ে আটকে যাই। মামা ডাকতে গিয়ে ‘মমমমমমম-আ-আ’ করার ইচ্ছে নেই। একবারেই যেন মামা ডাকটা বেরিয়ে আসে, সেটা মকশ করে নিচ্ছি।

মামা…মামা…মামা…মামা…সচ্ছন্দে মামাকে ডাকছি। মনে মনে। জোরে বলতে পারছি না। ঠোঁটদুটো ‘ম’এর মধ্যে আঠার মতো এঁটে যাচ্ছে, ছুটছেই না। জোর করতে গেলে ‘¤¤¤ম্ম’ পর্যন্ত, ‘আ’ আর আসেই না।

হায়রে তোতলামি! ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় হুজুর স্যারের হাতে অমন বিশাল একখানা চড় খেয়েও সারেনি।

‘¤¤¤ম্ম–আ–ম্মা!’ আচমকা বেরিয়ে এল ডাকটা। ‘মামা’ এবং ‘আম্মা’র  মাঝামাঝি। দরবেশের কান অবধি পৌঁছেছে বলে মনে হলো না। আশে পাশের লোকজনও দেখি চেয়ে দেখল না, এমন জটিল মামা ডাকটা কোত্থেকে এসেছে। দু’একজন তাকাল অবশ্য। তবে তারাও আমার মতো হয় মুখচোরা, নয় তোতলা। অনেকক্ষণ ধরেই তো দেখছি ওদের। ‘বাবা-মামা’ কিছুই ডাকছে না।

যারা তাকাল, তাদের মধ্যে একজন কিন্তু তুখোড়। সে সুলতান সুকানি। আমি চায়ের দোকানে ঢোকার পর থেকে মাঝে মাঝে চোখ বুলাচ্ছে আমার ওপর। না, চোখ বুলাচ্ছে না, চোখের কড়া দৃষ্টি হানছে। লোকটা বছর দুই আগে থেকে খ্যাপা আমার ওপর। জায়গা মতো পেলে হাপিস করে ফেলবে, এমন সন্দেহ করি। কারণ আমার মতো একটা ১৪/১৫ বছরের বাচ্চার কাছে হেরে যাবার এক কাহিনি আছে ওর। একটা গোপন এবং নিষিদ্ধ ভাব নিয়ে লোকটা ভাব জমাতে শুরু করেছিল আমার সঙ্গে। কিন্তু বুদ্ধির অভাবে সুবিধে করে উঠতে পারেনি। মাঝখান থেকে ২০-২৫ টাকা স্রেফ জলে ভেসে গেছে ওর। না, টাকা জলে ভেসে যায়নি, ভেসে গেছে ওই টাকা দিয়ে কেনা বাদামের খালি ঠোঙ্গাগুলো। মূর্খ জাহাজের সুকানি বুঝতে পেরেছে, ‘ইস্কুইল্যা পোলা’ মানে বদের বদ, শয়তানের হাড্ডি।

লোকজনের আসা-যাওয়ার বিরাম নেই। যাওয়ার চেয়ে আসার সংখ্যাই বেশি। ভাগ্যিস, আগে এসে দরবেশ মামার কাছাকাছি জায়গা দখল করে বসেছিলাম। নইলে দেখছি, কাছেই ভেড়া যেত না।

কলা দেখাচ্ছি সুলতান সুকানির কড়া চোখকে। খুব হাসি হাসি মুখ করে চাইছি সবার দিকে। চা খেয়েছি এরই মধ্যে কাপ দুয়েক। একটা কিংস্টর্ক মানে বগা সিগারেট ধরিয়ে লায়েকের মতো ধোঁয়াও ছাড়ছি ফুক ফুক করে। নিজেকে সত্যি সত্যি লায়েক মনে হচ্ছে। এখন আমরা আর ছোট নই। দশজনের সাথে চলার মতো বয়স হয়েছে। মজলিসে বসে স্বাধীনভাবে বিড়ি টানো, কেউ কিছু বলতে আসবে না। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, বাবা-চাচা-বড়ভাই টাইপের কোনো মুরব্বি ধারে কাছে আছে টাছে কিনা।

কিন্তু ফুক ফুক করে ধোঁয়া ছাড়লে তো হবে না। যে কারণে এসেছি, সেটা তো পূরণ হওয়া চাই।

অনেকে দেখছি, মামার সাথে অবলীলায় কথা বলছে। মামাও তাদের কথায় হাসিমুখে সায় দিচ্ছে। ঠাট্টা-মশকরাও করছে মাঝে মধ্যে। এরই মাঝে আবার আচমকা বিকট চিৎকার দিচ্ছে ’হৌক’ করে। সাথে সাথে দোকানসুদ্ধ লোকের কোরাস : ‘মওলা…!’

মনে মনে রিহার্সেল চলছে এখনো ’ম্ম্ম্’ করে। ‘মামা’টা বের করে আনতে পারছি না। ভীষণ রাগ লাগছে। নিজেকে চড়াতে ইচ্ছে করছে। পারছি না। নিজেকে চড় মারলে ব্যথা পাব। হাতটা তো আর হুজুর স্যারের না। নিজের হাত। নিজের হাত দিয়ে কে কবে নিজেকে মারতে পেরেছে আর!

সুলতান সুকানির ব্যস্ততার শেষ নেই। ঘন ঘন চা এনে দিচ্ছে মামাকে। দোকানির ছেলেটাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ছেলেটা একবার নিজের হাতে চা আনছিল। এক ধমকে থামিয়ে দিয়েছে ওকে জায়গায়, ‘সম্বন্ধীর পুত, কিছু বোঝস? শ্শালার ব্যাটা অজু আছে যে, বাবার সামনে চা নিয়ে আসস! দে, এদিক দে।’

ছেলেটার হাত থেকে চা কেড়ে নিয়ে নিজের হাতে নিয়ে এল মামার সামনে। ভক্তি সহকারে টেবিলের ওপর রেখে হাসল। ‘নেন বাবা, চা খান। সিগারেট আছে?’ তারপরই কড়া হাঁক লাগাল দোকানদারের ছেলেটার উদ্দেশে, ‘এই শালার পুত, সিগারেট দেছ না ক্যা বাবারে?’

‘আরে সিগারেটের অভাব আছে নি, মিয়া!’ দরাজ গলায় হাসল নূর নবী দরবেশ। ‘কয় প্যাকেট চাই তোমার? নাও না…’ বলে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢোকাল। এক প্যাকেট, দুই প্যাকেট, তিন প্যা…কেট, চার পাঁচ ছয়….আস্তে আস্তে চোখ কপালে উঠতে শুরু করল আমার। সাত আট প্যাকেট সিগারেট বের করে ফেলল বাবা। রমনা, স্টার, বগা, সিজার….ওরে বাবা! একি কেরামতি! এক পকেটে কয় প্যাকেট সিগারেট আঁটে, অ্যাঁ?

সবার আগে চেঁচিয়ে উঠল সুলতান সুকানি। কাতর গলায় বলল, ‘বাবা, মাফ করে দেন, আর কমু না। আর বেয়াদবি করমু না। এই গালে গালে চড় খাইতাছি…আর বেয়াদবি করুম না।’

‘ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে।’ প্রশান্ত হাসি হাসল বাবা। সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিল। ‘সবাইকে একটা করে দে…সবাইকে সবাইকে….’ তারপরই আচমকা গলা ফাটিয়ে হাঁক, ‘হৌক!’

সাথে সাথে কানফাটানো চিৎকার, ‘মওলা…’

এবার কোরাসে আমিও ছিলাম। সবার ওপরে মনে হলো যেন আমার গলাই। ভক্তিতে আপ্লুত আমি। এক পকেটে বড় জোর তিনটা প্যাকেট ঠাসাঠাসি করে ঢোকানো যায়, সেখানে ছয়-সাত প্যাকেট সিগারেট কেমনে আঁটে? নাহ, কেরামতি না থেকে যায় না।

আর কী আশ্চর্য! এটা চিন্তা করতে করতেই যেন তোতলামি দূর হয়ে গেল। বাজখাঁই স্বর বেরিয়ে এল গলা থেকে, ‘মা-মা!’

নূর নবী দরবেশের সিগারেট-কেরামতি দেখে কেবল শুরু হতে যাওয়া অবাক-গুঞ্জনটা থেমে গেল। সবাই ঘাড় ফেরাল আমার দিকে। দরবেশও। তারপর মধুর গলায় বলল, ‘কী রে ব্যাটা?’

ব্যস, ততোক্ষণে হয়ে গেছে আমার। এত লোকের চোখ আমার মুখে! মুখ আবার বন।

‘বল না ব্যাটা তোর মনের মকছুদ কী? আরে, দেনেআলা তো আল্লা, আমি কেবল উছিলা… কী বলো মিয়ারা?’ হাঁক ছাড়ল ভক্তকূলের উদ্দেশে।

প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি মনের কথাটা বলে ফেলার জন্যে। বাবা হোক, আর মামা হোক, এখন আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে। এই বেলা বলে ফেলতে পারলে মনে হয় কাম ফতে। এতক্ষণ ধরে খেয়াল করেছি, সুলতান সুকানি ছাড়া এতটা সময় এতটা আগ্রহ নিয়ে দরবেশ আর কারো দিকে তাকায়নি। আমার কাজ বোধ হয় হবে….

দাঁত-মুখ খিঁচে শব্দ বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি মুখ থেকে। শেষ পর্যন্ত পারলামও। ‘ইয়ে…ব্বাবা..মাম্মা-হ…আমি প-পরীক্ষায় প্পা…স ’

আর এমন সময় কিনা ধপ্পাস!

মানে মাচার ওপর থেকে দোকানির কাঁথার বান্ডিলটা এসে পড়ল আমার সামনে টেবিলের ওপর। অল্পের জন্যে মাথায় পড়েনি।

মাথা বাঁচল বটে, কিন্তু মুখ গেল বন্ধ হয়ে। কোনো শব্দই বেরোল না আর। স্রেফ হাঁ করে রইলাম। এদিকে সুলতান সুকানিসহ দোকানের লোকেরা গলা ফাটিয়ে হো হো শুরু করে দিল।

ভেবেছিলাম, দরবেশ হয়তো সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবে। ওমা, উল্টো দেখি, বাবাজিও মজা পেয়ে গেছে! কষে একচোট হেসে নিল। তারপর বলল, ‘হ্যাঁ, পাইছস তো পাস? এবার বাড়ি যা। হে হে হে….’

‘হে হে হে!’ আরেকজনের গলা তাল মেলাল বাবাজির সাথে। ‘কাঁথা বালিশ নিয়া যা! বাবায় দিছে পরীক্ষা পাসের দোয়া।’

অপমানে মুখ লাল হয়ে যাওয়া বলে একটা  কথা আছে। চায়ের দোকানে অত লোকের টিটকারির মুখে আমার মুখের রঙ দেখতে পাইনি। তবে আন্দাজ করেছি, লালই হয়ে গিয়েছিল নিশ্চয়।

১৯৭৪। দেশ জুড়ে দুর্ভিক্ষ। যে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা মার্চে, সেটা পেছাতে পেছাতে সেপ্টেম্বরে গিয়ে ঠেকল। ফল বেরোবে ডিসেম্বরে। পরীক্ষা শেষ করার পর টিউশনি করে প্রথম টাকা কামাই করা শুরু করলাম। জনাদশেক ছাত্রকে অঙ্ক শিখিয়ে মাসে একশ টাকা পাই। এক কাপ চা এক আনা, এক প্যাকেট স্টার সিগারেট এক টাকা পঁচিশ পয়সা। সময় ভালোই কাটছিল। বাবার পকেট কাটার দিন শেষ। বাবাও দেখি এখন সমীহ করে কথা বলেন। স্বপ্ন দেখেন আগামীর। ছেলে চাকরি করবে, টাকা কামাবে। একদিন জিজ্ঞেস করে বসলেন, প্রথম বিভাগ পাব কিনা। প্রথম বিভাগ পেলে তার ক্লাসমেট সাহেব মিয়াকে বলে কাটগড় স্কুলের প্রাইমারি সেকশনে মাস্টার হিসেবে ঢুকিয়ে দেয়া যায় কিনা চেষ্টা করে দেখবেন। সাহেব মিয়া কাটগড়ের চেয়ারম্যান। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরপুরুষ। তিনি চাইলে কোনো ব্যাপারই না। তবে সেজন্যে প্রথম বিভাগ তো লাগবেই।

ভুগোলে তেত্রিশ নাম্বার পেলেও আমার দ্বিতীয় বিভাগ কেউ আটকাতে পারবে না, এমন বিশ্বাস আছে। কিন্তু যা বুঝলাম, সে বিশ্বাসের কথা শুনিয়ে বাবাকে খুশি করা যাবে না। তিনি প্রথম বিভাগ চান। বুঝলাম, আমাকে বাড়ি ছেড়ে পালাতেই হবে। যদি ফেল করি, তাহলে মনে হয়, বাবা ঘর থেকেই বের করে দেবেন।

কিন্তু বাবা ঘর থেকে বের করে দেবেন, সেটা তো পরের ব্যাপার। তার আগের প্রশ্ন হলো, আমি মুখ দেখাব কী করে? আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেট এবং শিক্ষকরা আমার ফেলের খবরটা কীভাবে নেবেন, সেটা চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

যেমন বড় জেঠা। খবরটা শুনে প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যাবেন। মিনিট দুয়েক কথাই বলতে পারবেন না। তারপর মুখ খুলে গেলে প্রথম যে বাক্যটা বেরোবে, সেটা হলো, তিনি জানতেন। তিনি জানতেন যে, এ ছেলে কখনো মানুষ হবে না। আর বাবার কথা হবে একটাই, ‘ও যেন আমার ঘরে আর না ঢোকে। আমি ওর ধার আর ধারি না।’

বাবা-জেঠাদের এসব অবশ্য স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সবার বাবা-জেঠাই এরকম বলে থাকেন। পরীক্ষায় খারাপ করলে বলবে না? আদর করবে নাকি?

কিন্তু আমার সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। আমি ভালো ছাত্র। কবিতা লিখি, ইস্কুলে স্বরচিত জারিগান গাই। আমার ক্লাসমেটরা ভীষণ সমীহ করে। তাহলে আমি যদি ফেল করি? আমি যদি ফেল করি, কী ভাববে সেবক-পান্না-পারভেজ-নোমানরা? মুচকি হাসবে আমার প্রতিপক্ষ ভালো ছাত্র তাহের আর তার দল।

এসব ভেবে ভেবে মাথা আউলা অবস্থা। বুঝতে পারছি না কী করব?

পালাতে হবে! আচমকা মাথার ভেতর ঢুকে গেল কথাটা। হ্যাঁ, পালাতে হবে আমাকে। পরীক্ষায় ফেল করে মুখ দেখানো সম্ভব নয় কাউকে। সে বড় লজ্জার ব্যাপার হবে। পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তারপর যদি দেখি পাস করেছি, তাইলে বাড়ি ফিরব। নয়তো নয়। শুরু হবে জীবনের আরেক অধ্যায়। কঠিন সংগ্রামের অধ্যায়। সে সংগ্রামে আমাকে জয়ী হতেই হবে। একদিন মানুষ হয়ে বাড়ি ফিরব। (চলবে)

 

 

মাসুদ আনোয়ার, কথাসাহিত্যিক

একজন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ ও তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রের কথা

আলম খোরশেদ অনেকেই জানেন যে, প্রখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞানলেখক জ্যুল ভের্ন এর কিংবদন্তিতুল্য গ্রন্থ ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ অবলম্বনে ১৯৫৬ সালে হলিউডে একই নামে

প্রগতির পথে, জীবনের গান, সকল অশুভ শক্তির হবে অবসান” এই আহবানে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ৫৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

\ ভাস্কর ধর \ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং প্রগতির লড়াইকে দৃঢ় করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। 

আমার বাবা কর্নেল তাহের

জয়া তাহের   আমাকে যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কর্নেল তাহেরের মেয়ে হিসেবে আপনার অনুভূতি কি? আমার চোখের সামনে এক নিমেষেই ভেসে ওঠে ৪০ বছরের অসংখ্য

ছাগল-মাহাত্ম্য

ড. ইউসুফ ইকবাল ভূপৃষ্ঠের বঙ্গ-ভূভাগে দ্রুতবর্ধমান প্রাণিকুলের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য প্রাণিটির নাম ছাগল। আমাদের একচুয়াল ও ভার্চুয়াল প্রতিবেশ-বাস্তব ও মেটাফোরিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব অপরিসীম। ছাগলের

সৈয়দ মনজুর কবির-এর অনুগল্প

শুধুই কলিজার টুকরা পারে   সম্প্রতিক সৃষ্টি হওয়া চরম বিপরীতমুখী দুই পরিবারের মাঝে একটি টানা বেড়ার আড়াল। শুধু ওপাশের আম গাছটির ছড়ানো লম্বা ডালটি চলে