এখন সময়:দুপুর ১২:২৫- আজ: সোমবার-৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:২৫- আজ: সোমবার
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

নিঃসঙ্গতার ক্রসফায়ার

উত্তম কে. বড়ুয়া

 

অনিক স্বপ্নহীন জীবন কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সে কোথায় যায়, কী করে, কী খায় তা কেউ জানে না। অনিকের অন্তর্জগতের অন্তর্দাহে গতিময় জীবনের ছন্দপতন ঘটে। এক সময় মেধাবী অনিকের সম্ভাবনাময় জীবনটা ছিল কর্মচঞ্চলতায় ভরপুর। ভালো ছাত্র হবার পাশাপাশি দেশের কাজে, সমাজ ও প্রগতিশীল সংগঠনে তার ছিল অবাধ বিচরণ। হঠাৎ দুটি ঝড়ে তার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো।

 

২৫ মার্চ ১৯৭১ সাল। রাত সাড়ে এগারোটার সময় শহরের সর্বত্র শুরু হয় পাক বাহিনীর গোলাবর্ষণ। ফিল্ডগান, মেশিনগান, এসএল আর ও চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেল-এর একটানা শব্দ। দাউ দাউ করে জ্বলছে চট্টগ্রাম শহরের ঘড়বাড়ি। নীরব নিস্তব্ধ রজনীতে ২০-৩০ মাইল দূরে গ্রামগুলি থেকে শোনা যাচ্ছে গোলাগুলির শব্দ। দেখা যাচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা। নিরীহ, নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালীর উপর নির্বিচারে চলছে গণহত্যা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, রাজশাহীসহ এদেশের বিভিন্ন শহরে একযোগে চলছে পাকবাহিনীর তাণ্ডবলীলা। তারা ভেবেছিল মানুষ হত্যা করে, আগুন লাগিয়ে ভয় দেখিয়ে এদেশের মুক্তি সংগ্রামকে দমিয়ে রাখতে পারবে।

 

 

২৬ মার্চের সকাল পর্যন্ত হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে ওরা গুলি করে ও আগুন দিয়ে হত্যা করেছে। বাঙালিদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধকে দমন করার জন্য সকাল ন’টায় কারফিউ ঘোষণা করা হলো। সমস্ত শহরময় সৈন্য আর সৈন্য। সর্বত্র আতঙ্ক আর গুঞ্জন। কী হয়েছে? কোথায় কতজন মারা গেছে? ২৭ মার্চ জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলো মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। কে করবে বিক্রয়? কে করবে কেনাকাটা? চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলছে গ্রামের দিকে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যে যেদিকে পারে শহর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। পলায়নরত জনস্রোতে আছে আমিন চৌধুরীর পরিবার এবং তার ঊর্ধ্বতন বস মোঃ রফিকের পরিবার। তারা উভয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হেডকোয়ার্টারের চাকুরিজীবী। আমিন চৌধুরী রেলওয়ে মেকানিক ও রফিক সহকারী প্রকৌশলী। রফিকের বাড়ি দিনাজপুর। দেশের এই পরিস্থিতিতে দিনাজপুর যাওয়া সম্ভব নয়। তাই জীবন বাঁচাতে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েও তার অধস্তন কর্মচারীর বাড়িতে আশ্রয় নিতে এই ছুটে চলা।

বড়দের কাঁধে, ঘাড়ে, হাতে তল্পি-তল্পাসহ রয়েছে ছোট ছোট বাচ্চা। তারা সকলেই প্রাণ বাঁচাবার আকুল চেষ্টায়ধাবমান। অনভ্যস্ত পদে তাড়াহুড়া করে পথ চলতে গিয়ে অনেকেই হোঁচট খাচ্ছে। অবশেষে সন্ধ্যার সময় তারা পৌঁছল আমিনদের বাড়ি রাউজান থানার পাহাড়তলী গ্রামে। আমিন চৌধুরীর স্ত্রী, পুত্র অনিককে নিয়ে ছোট্ট সংসার। অনিক ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। রফিকের স্ত্রী একজন শিক্ষিকা। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেটি ভারতের যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে। পনের বৎসর বয়সি মেয়েটির নাম প্রজ্ঞা। সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাড়িতে আসার কিছুদিন পর আমিন চৌধুরী গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। প্রজ্ঞা মা-বাবাসহ আমিন চৌধুরীদের বাড়িতে আশ্রিতা। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। বাড়িতে বসে সে নিজে নিজে পড়াশোনা করে পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিল সাথে সাথে অনিককেও পড়াত। অনিকের বয়সি আর কোনো ছেলে-মেয়ে পড়ায় না থাকায় অনিককে সকলে খুব স্নেহ করত। বাড়িতে প্রজ্ঞার সমবয়সি কেউ নেই। তাই প্রজ্ঞা অনিকের কখনও শিক্ষিকা, কখনও অভিভাবক আবার কখনও বন্ধু ও খেলার সাথী। এই অসমবয়সি বালক-বালিকাদ্বয়ের সম্পর্কটা যে কি তা সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। অনিক বিহীন প্রজ্ঞা এক মুহূর্তের জন্যও থাকতে পারত না। অনিকও প্রজ্ঞা আন্টি ছাড়া কিছু বুঝত না। রাত্রে মায়ের সাথে না ঘুমিয়ে গল্প শুনতে শুনতে প্রজ্ঞা আন্টিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ত।

 

জুন ১৯৭১ সাল। পাকিস্তানী সৈন্যরা চট্টগ্রাম শহর নিয়ন্ত্রণে এনে গ্রামের পর গ্রামে প্রবেশ করে চালাত গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ। গ্রাম থেকে ধরে আনত অগণিত নারী ও পুরুষ। কিশোরী, তরুণী ও যুবতি সমস্ত বয়সের সব রকমের মানুষ। খান সেনাদের এক একটি ক্যাম্প ছিল এক একটি বন্দি-শিবির।

 

বন্দি-শিবিরে অত্যাচার, নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি উগ্র লালসায় মেতে ওঠত খান সেনারা। কী করুণ ও কী বীভৎস সেই দৃশ্য। বন্দি-শিবিরে অসহায় মানুষ ও মা-বোনদের করুণ কান্না ও বুকফাঁটা আর্তনাদ শোনা যেত। পাক সেনাদের এই সব কাজে সহযোগিতা করত রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর এদেশি অনুচরেরা। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে থাকাও নিরাপদ নয়। তাই দলে দলে হাজারে হাজারে লোক গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে ভারতের অভিমুখে। প্রজ্ঞার বাবা রফিক সিদ্ধান্ত নিল তারাও ভারতে চলে যাবে। অনিকের বাবা না থাকায় অনিকের মায়ের সাহস হলো না অনিককে নিয়ে ভারতে চলে যাবার। ভারতে চলে যাবার সময় প্রজ্ঞা অনিককে বুকে জড়িয়ে আদর করল, স্নেহ করল, মুখে চুম্বন দিলো কিছুতেই অনিককে ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না। অনিকও প্রজ্ঞাকে ছেড়ে দিতে চাইল না। অনিক বলল প্রজ্ঞা আন্টি আমিও যাব তোমার সাথে, আমাকেও নিয়ে যাও তোমাদের সাথে। প্রজ্ঞা বলল না, অনিক সোনা তুমি তোমার মায়ের কাছে থাকো, তুমি না থাকলে তোমার মা একা থাকবে কি করে। যুদ্ধ শেষ হলে আমরা আবারও চলে আসব। তখন তোমাকে আমাদের দিনাজপুরে নিয়ে যাব। কিন্তু অনিক অবুঝ মনে কিছু না বুঝে মায়ের কথা ভুলে গিয়ে, শুধু প্রজ্ঞা আন্টির সাথে যাব এই বলে বায়না করতে থাকে। অনিকের মা জোর করে অনিককে নিয়ে ধীর পায়ে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। প্রজ্ঞা আন্টি সেই যুদ্ধকালীন সময়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন অনিকের সাথে দেখা হয়নি। এরি মাঝে দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীনতার পর প্রজ্ঞা বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার লেখাপড়া শুরু করলো, পরবর্তী এইচএসসি শেষে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করে ডাক্তার হল, কিন্তু সেই বাল্য বয়সি অনিকের কথা হয়তো প্রজ্ঞার মনে ছিল, হয়তো ছিল না। কিন্তু অনিকের বাল্যকালের সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়লে, সেই আদর স্নেহের জন্য এখনো নীরবে খুঁজে প্রজ্ঞা আন্টিকে।

 

অনিকের বাবা সে যে যুদ্ধ গেল আর ফিরে আসলো না। অনিকের মা স্বামীর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে পড়ল। অবশেষে স্বামীর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা না দেখে ভাইদের সহায়তায় অনিককে এসএসসি পাশ করালো। অনিক চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে মামাদের সহায়তায় ও টিউশানি করে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চট্টগ্রাম শহর বসবাস করে।

 

২.

প্রজ্ঞা এখন পুরোদস্তু ডাক্তার। সে মেডিক্যালে পড়াকালীন  নাহিদ নামক এক ক্লাসমেটকে হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে ভালোবেসেছিল। সে নাহিদ ছাড়া কিছু বুঝতো না, অথচ এই নাহিদের জন্য আজ প্রজ্ঞার মা বাবা, প্রজ্ঞাকে ছেড়ে ভারতে চলে যায়। নাহিদের জন্য প্রজ্ঞা বাংলাদেশে পড়েছিল। নাহিদকে মনপ্রাণ হৃদয়ের সব কিছু দিয়েছিল। কিন্তু তার বিনিময়ে প্রজ্ঞা কিছু পেল না। অবশেষে যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সেই মুহূর্তে জানতে পারে নাহিদ বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। এমনকি নাহিদ শ্বশুরের টাকায় মেডিক্যালে পড়েছিল। এই খবর জানার পর থেকে প্রজ্ঞা আর কোনো দিন নাহিদের সাথে যোগাযোগ রাখেনি। সে এখন একা, বড্ড একা, তবুও ইদানিং যখন প্রজ্ঞার মন খুবই খারাপ এবং বিষণ্ন থাকে তখন অনিকের সাথে কথা বলতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অথচ যখন হাসপাতালে ওয়ার্ডে যায়, তখন ভয়ে ডা. প্রজ্ঞার সাথে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

 

মাসের শেষের দিকে নিজের খরচগুলি চালিয়ে নিতে অনিকের কষ্ট হয়। একদিকে মেসের ভাড়া, খাওয়া খরচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়া খরচের জন্যও পকেটে একেবারে টাকা নেই বলেই চলে। মানিব্যাগ হাতিয়ে দেখে মাত্র আশি টাকা এবং কিছু ভাংতি পয়সা আছে। মোবাইলেও ব্যালেন্স নেই, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। আচ্ছা যা হোক প্রজ্ঞা আন্টি থেকে ১০০০ টাকা নেব, পরে শোধ করে দেবো। হয়তো প্রজ্ঞা আন্টি ফেরত দিলে নাও নিতে পারে। এই কথা ভাববে ভাবতে মেস থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠল। অনিক যখন কল রিসিভ করলো, অপর প্রাপ্ত থেকে কোন সারা শব্দ নেই। অনিক অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করলো সাড়া-শব্দ নেই, কিছুক্ষণ পর আবার ফোন। অনেকদিন পর্যন্ত কে যে প্রায় সময় অনিকের নাম্বারে ফোন করে। অনিক বুঝতে পারে না। অনিক মাঝে মাঝে নম্বর চেক করে দেখলে ওখানেও নো নাম্বার পাওয়া যায়। আজ যখন নম্বর চেক করল তখন নতুন একটি নাম্বার পায়, তা কোনোরকমে সেভ করে রাখলো। পরে একটি রিকশা ডেকে রিকশাতে ওঠে সোজা প্রজ্ঞা আন্টির বাসায় গিয়ে এক হাজার টাকা ধার চায়। আন্টি বললো তোমার টাকার প্রয়োজন হলে, আমাকে নিঃসংকোচে বলতে কোন দ্বিধা করবে না। প্রজ্ঞা আন্টি এক হাজার টাকার পরিবর্তে দুই হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলল। এগুলি আর তোমাতে ফেরত দিতে হবে না। আর হে তোমার জন্য একটি পাঞ্জাবী এনেছি, তুমি এটা পড়ে দেখ কেমন লাগে। আর তুমি জিন্সের প্যান্ট নেবে পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে পড়বে। অনিকের অনেক দিনের সাধ ছিল, জিন্সের প্যান্টের সাথে কাজ করা লম্বা পাঞ্জাবি পড়ার। টাকার অভাবে পড়তে পারেনি এতদিন। আজ যখন প্রজ্ঞা আন্টি পক্ষ থেকে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি এসে গেল মন্দ কী! ঐ দিন প্রজ্ঞা আন্টি বাসায় খেয়ে কাপড়গুলি নিয়ে পুনরায় বাসায় ফিরে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে ছয়শত টাকার একটি কার্ড মোবাইলে রিজার্চ করে নিল। রিক্সা যোগে পুনরায় যখন কিছু পথ অতিক্রম করে হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সাথে সাথে অনিক মোবইল রিসিভ করে। কিন্তু রিক্সার ঝাঁকিতে নেটওয়ার্ক সমস্যা করাতে কিছু বুঝা যাচ্ছে না। অপর প্রাপ্ত থেকে ক্ষীণ মেয়েলি কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ আমি বলছি, কিন্তু নাম বলে না। তারপর অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করতে লাইভ কেটে গেলো। অনিক রিকশার ড্রাইভারকে বলল, তুমি আমাকে ডিসি পার্কে নিয়ে যাও। রিকশা ক্রমান্বয়ে অনিককে নিয়ে ডিসি পার্কে নামিয়ে দিল। অনিক ডিসি পার্কের লাইট পোস্টের কাছাকাছি বসে সেভ করা নম্বরে বাটন টেপার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে চাঁপাকণ্ঠে কোনো ভাব ভঙ্গি ছাড়াই বলল হ্যাঁ বলো। অনিক কাঁপাগলায় বললো সত্যিই কি তুমি বলছ? তোমার নাম কী? অনেকক্ষণ আলাপ হলো। কিন্তু মেয়েটি নাম বলল না। হঠাৎ লাইন কেটে গেল। তারপর অনেক চেষ্টা করল, লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার একটি কথাই শোনা গেল। আপনার ডায়াল করা নম্বরটিতে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অবশেষে হাতঘড়ির দিকে দেখে রাত প্রায় একটা, অগত্যা সে পার্ক থেকে ওঠে ধীরপায়ে মেসে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আসে না। এইভাবে অনেক দিন মোবাইলে অনিকের সাথে আলাপ হয় সেই চোখে না দেখা মোবাইল ফোন বান্ধবীর সাথে। এভাবে একজনের সাথে অন্যজনের সম্পর্ক দৃঢ় হয়ে ওঠে। কিন্তু এখনো একজন অন্যজনের সাথে দেখা হয়নি। তারপরও মনে হয় একজন অন্যজনের দীর্ঘদিনের পরিচিত। অনিক প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষায় থাকে কখন মোবাইলে এই মেয়েটি ফোন আসবে। কথা বলবে। অনিক এই মেয়েটির আলাপে অভিভূত হয়ে হারিয়ে যায়, পৃথিবীর অজানা কোন স্বপ্নের সাজানো দ্বীপে। অনিক মোবাইলে প্রতিটি সময় সামনাসামনি দেখা করতে বললেই, মেয়েটি বলে অবশ্য দেখা করব। এক শুভ মুহূর্তে এক শুভ সময়ে, এভাবে দিন যায়, সময় যায়, অনেক দিন প্রজ্ঞা আন্টির বাসায় যাওয়া হয়নি। মেসেও কেউ নেই ভালো লাগছে না। তাই প্রজ্ঞা আন্টির সাথে দেখা করার জন্য যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অনিক। সেই মুহূর্তে মোবাইলে রিং বেজে ওঠে অপর প্রান্ত থেকে সেই মেয়েটির। অনেকক্ষণ দুইজনের আলাপের পর মেয়েটি সিদ্ধান্ত দিল আমাদের দেখা হবে। সেই কথা শুনার সাথে সাথে অনিক লাফিয়ে ওঠে বলে কবে কখন কোথায়? মেয়েটি বলে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ তে ফয়েজ লেকের পশ্চিম প্রান্তে শিমুলতলার নিচে। আমি কামরাঙ্গা রং শাড়ির সাথে লাল ব্লাউজ পরে সাদা বেলীফুলের মালা দেবো, কপালে লাল টিপ দেবো, তুমি আমাকে চিনতে অসুবিধা হবে না। প্রয়োজনে মোবাইল নম্বরে ফোন করবে। তারপর অনিককে মেয়েটি বলল, তুমি কী পরে আসবে?

অনিক কী পরে যাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। আমতা আমতা করছে। তারপর মেয়েটি বলে দিলো, আচ্ছা তুমি সাদা কাজ করা পাঞ্জাবি এবং জিন্সের প্যান্ট পরে আস। আমার চিনতে যাতে অসুবিধা না হয়। আমি মনে মনে তোমার ছবি কল্পনা করে নিয়েছি, আমার কল্পনা কখনো মিথ্যা হয় না। অনিক হেসে বলল ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমার কথা অনুসারে পাঞ্জাবি এবং প্যান্ট পড়ে আসব। এই বলে কথা শেষ করল। অনিক মনে মনে খুশি হলো, যাক বাবা বাঁচা গেল, প্রজ্ঞা আন্টির দেওয়া জিন্স এবং পাঞ্জাবি খুবই সঠিক স্থানের জন্য প্রয়োগ করতে পারব। মনে মনে প্রজ্ঞা আন্টিকে অনিক অনেক ধন্যবাদ জানায়।

 

চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, অথচ অনিকের মনে হচ্ছে, যদি বারো ঘণ্টায় দিন হতো তা হলে তাড়াতাড়ি চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি চলে আসত। কিন্তু যথারীতি চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি এসে গেল। সকাল সকাল ঘুম…………………….??????

 

 

উত্তম কে. বড়ুয়া, প্যারিস নিবাসী লেখক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।