এখন সময়:রাত ৯:১৭- আজ: শনিবার-১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:রাত ৯:১৭- আজ: শনিবার
১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

পদাবলি (অক্টোবর ২০২৫)

 

নিপুভাই আর কবিতা শুনবেন না

নাজিমুদ্দীন শ্যামল

 

আগ্রাবাদের নিবেদন প্রেসে মাথা নিচু করে

বসে থাকা মানুষটি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

তিনি মানবিক সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের

কথা বলতেন। তিনি সকলকে শিল্প সাহিত্যের

কথা বলতেন। তারপর তিনি অনন্য এক

জীবনের স্বপ্ন বুনে দিতেন সকলের মাঝে।

 

তিনি অকস্মাৎ চলে গেলেন কিছু না বলে  ।

সব কিছু যেন থেমে গেলো। আর আর দেখা-

হবে না কোনোদিন। কোনোদিনও আর বলবনা

নিপু ভাই কেমন আছেন! নতুন একটি কবিতা

লিখেছি, শুনবেন? আমি জানি আর-

কোনোদিন আপনি কবিতা শুনবেন না।

 

 

 

 

========================

 

 

 

 

 

চাঁদফুলের সৌরভ

মুস্তফা হাবীব

 

কখনও ভাবিনি

দিনের আলোয়ে দেখতে পাব

দূর অরণ্যে  ফুটে থাকা  চাঁদফুলের সৌরভ !

বিনামেঘে আনন্দ বৃষ্টি,  কবিতার শিল্পবাড়ি ।

 

কখনও ভাবিনি

ঘুমঘোরে ছোট্ট জলাধার  হয়ে যাবে নদী

মরাবিল হয়ে যাবে তীরহারা ঢেউয়ের সমুদ্র

এবং রাজপরির শরীর থেকে ঝরবে তারার দ্যুতি,

ঘুম ভাঙার পর

কর্পুরের মতো উড়ে যাবে রাতের আনন্দ।

 

তুমি অসম্ভবকে সম্ভব করে

জয় করেছো আমার মনোভূমি ও স্বপ্নের আকাশ

মুখোমুখি বসে ছড়িয়েছো শরীরী সুগন্ধ

তুমি চলে গেলে, রেখে গেলে অনন্য পরশ।

 

একাকিত্বের হিজাবে মুখমণ্ডল ঢেকে

পার করেছি শাশ্বত যৌবন,

তোমার অবর্তমানে খুঁজিনি  আর কোনো

বকুল গন্ধরাজ হাসনুহেনা মধুমালতী

প্রস্তুত করিনি বিকল্প সস্তা প্রণয়নের বীজতলা।

 

 

========================

 

 

পথে পথে বাধা

রেজাউল করিম

 

যেদিকে তাকাই সেদিকে দেখি,

আলোর ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার—

 

যেদিকে যাই,সেদিকে শুধু ধাক্কা খাই

পথে পথে বাধা,যাবো কোথায়?

চিন্তা-দুশ্চিন্তার ঘূর্ণিচক্রে সময় বহিয়া যায়–

তবু সামনে এগুনো ছাড়া তো আর

কোনো বিকল্প পথ নেই—

যেতে তো হবে,যেখানে যাবো ভেবেছিলাম–

আসুক পথে পথে যতসব বাধা,

যেতে যেতে পথের বাধা হয়তো একদিন

অলৌকিক সরে যাবে কিংবা ন্যায্যতার প্রশ্নে

সরিয়ে নিতে হবে;যেভাবে শোষিত বঞ্চিত অপমানিত

হতে হতে সর্বহারার সম্বল হয়ে ওঠে ;

শেষ পর্যন্ত কাস্তে হাতুড়ি…দুনিয়া কাঁপানো দশদিন

 

পথে পথে বাধা,যতসব বাধা দূর হবে একদিন।

 

========================

 

 

 

অসুখ

বিপুল বড়ুয়া

 

বুড়িয়ে গেছে রাস্তা-বাড়ি কোথায় চেনা জানা

ইলেকট্রিকের তারে শালিক বিবর্ণ তার ডানা।

 

কেউ এখন বাড়ায় না হাত সময় আছে কার

ঘড়ির কাঁটায় দিন রাত্তির চমক দেয়া হার।

 

জমাটবাঁধা অন্ধকারে যাচ্ছে কে সে হেঁটে

কে না তাকে ঠিকই দিলো জীবন থেকে ছেটে।

 

আবছায়া কার হাতছানি ঐ ঝিম মারা রাজপথে

কাকেই খোঁজো বেরিয়ে পড়ো স্বপ্নমেদুর রথে।

 

বুকের ভেতর ঘা দিয়ে যায় অনেক অনেক স্বাদ

হয় না চেনা হাতছানি কার পেরিয়ে এসো খাদ।

 

অনেক কিছু বদলে গেছে বদলে গেছে দিন

সুতোর ওপার সেই মুখটির হয়নি শোধ ঋণ।

 

হিসাব অনেক জমেই আছে জগদ্দল এক খাতা

কে বোঝো তা লিখেই রাখা দীর্ঘশ্বাসের গাথা।

 

ঝুলছে দেখা পারাপারের আবছায়া এক সাঁকো

কে বলে যায় শেষ বিকেলে স্বপ্ন কিছু আঁকো।

 

একটি রাত দূর আকাশে লুকিয়ে রাখে মুখ

কেউ কি জানে কার বুকের সে অনন্ত অসুখ।

========================

 

 

আত্মপ্রতারণা

মোস্তফা মঈন

 

নিজের সাথে যারা প্রতারণা করছেন

এমনকি মা-বাবার সাথেও করেছেন

অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ

বিস্ময়কর হলেও তাঁদের মাথায় তুলে দিয়েছেন

দুশ্চিন্তার পাহাড়

তাঁরা ভেবে উঠতে পারছেন না

আদতে তাঁরা সন্তানের সামনে তখনো মানুষ

কি-না

বিষয়টি এমন যে

পিতা-মাতারা সন্তানের মুখোমুখি হয়েছেন

অথচ নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না;

ঠিক করতে পারছে না কী করবেন

ভেতর থেকে প্ররোচিত হচ্ছে

‘বেঁচে থেকে লাভ নেই, মরলেই বাঁচি’

এমন আছি-র চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালো

 

সন্তানের বিশ্বাসঘাতকতায়—

ঠিক বিশ্বাসঘাতকও না

বলতে পারেন, প্রকাশ্যে খুন

নিজের জন্মকে ব্যর্থ করে দেয়ার মতো ঘৃণা!

কেন এমন ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে

কেন এমন আত্মপ্রতারণা

স্বার্থপরতা না-কি আরও কিছু

আরও কোনো জিন অচিন মানুষের ভেতর প্রবেশ করেছে

মানুষ আর মানুষ নেই

কেবলই যৌনতা

কেবলই স্বার্থপরতা?

শুধুই ভোগ, সম্ভোগ আর টাকার খোঁজ?

 

 

========================

 

 

পাহাড় সাগর

নিলয় রফিক

 

সুন্দর পাঠশালায় নতুন শিক্ষার্থী

ফুলের সৌরভে ঘ্রাণ মুখরিত পথ

আনন্দে-উল্লাসে নাচে ব্রহ্মপুত্র-নদ

ধ্যানগুহায় তরল শব্দের অনাথ

 

ফুলগুলো প্রাণহীন টেবিলে- খাতায়

ছুঁয়ে দেখে না শরীর অশান্তির তাপ

মনোঘরে ঘনঘোর মেঘের নূপুর

নবদিগন্তের রথে আলোর প্রদীপ

 

শব্দভূমি অন্তরালে শিল্পের বুনন

সুরভি শহরে রেখা চোখের নজর

যৌবনের তীব্রতেজ ভিজে রসে কেশ

খুলে দাও গুপ্তখিল পাহাড়-সাগর

মেঘ-রাজত্বে মেঘেরই দিন

আবু জাফর দিলু

 

রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি নামে আষাঢ় মাসটি এলে

সারাটা দিন সবার যেন কাটে বন্দি সেলে,

পথে-ঘাটে স্যাঁতস্যাঁত করে শুধুই ঘেন্না কাদা

পাহাড়ি ঢল বন্যার তোড়ে বিষাদ পাখা মেলে।

 

আকাশ জুড়ে মেঘ ছেয়ে যায় ঘুরে এদিক সেদিক

কোথায় কখন জল ছিটাবে সেই ভাবনাটি ভাবে,

খরায় পোড়া জমিনগুলো তাকিয়ে থাকে মেঘে

গাছ-গাছালি বনের প্রাণী কখন জলটা পাবে ?

 

মেঘ-রাজত্বে মেঘের-ই দিন সূর্য যেন কিরণহীন

বিজলী হাঁকায় গুড়ুম গুড়ুম ঢোলের বাড়ির সাথে,

তাবৎ ধরার প্রজারা সব হুকুম তামিল করে

কাউকেই সে ধার ধারে না মন খুশিতে মাতে।

 

চতুর্দিকে আকাশের নীল অসুর ডানায় ঢাকে

মেঘ সমনে রোদের দাপট পায় মাড়িয়ে হাসে,

দিন-মজুরের মুখের আহার কেড়ে নেয় সব পাষাণ

বউ-পোলাপান হা-হুতাশে চোখের জলে ভাসে।

 

গেরাম শহর ধুম বৃষ্টিতে থৈ থৈ করে মাঠ-ঘাট

পাখ-পাখালি বস্তির মানুষ কাঁদে মনের দুখে,

কেউ বুঝে না কারো ব্যথা যে যার মতো জ্বলে

সুখের স্বপ্নে সকল কষ্ট চেপে রাখে বুকে।

 

 

========================

 

 

 

কবিতা আমার

রওশন মতিন

 

ক্লাসিক কিংবা রোমান্টিক কবিতার চিত্র চিত্রনে

কবিতা -ভাব ভাবনার অন্তহীন থিম যাত্রায়

কবিতার মায়াজালে উঁকি দেয় মৃত্যুঞ্জয়ী চাঁদ,

ক্ষ্যাপাটে কিংবা দাপুটে ভাব-ভাবনার কবিতার রেলে

জীবন কোলাজে সপ্তসুরে বাঁধা রাগ-রাগিনীর বোধোদয়ে

নিজেকে নব আবিষ্কার, রেঁনেসার নব যাত্রী -নাবিক, অভিযাত্রিক

চেতনায় ডুব সাঁতারে সহজিয়া অন্তহীন সন্তরণে

ধুলোর আস্তরণে আঁকা জীবনের পদচ্ছাপ,

ছাইভস্ম থেকে জন্মানো কবিতা -ফিনিক্স পাখির উন্মীলন,

কবিতা আমার,প্রসব যন্ত্রণার অদম্য জাগরণে

এক -ই সুতোয় বোনা-অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ আবহমান,

কবিতা আমার অন্ধ নয়, বন্দী নয় গরাদের দেয়ালের সংকীর্ণতায়,

কবিতা আমার মুক্ত -মুক্ত মানব-মানবাত্মার জীবন আখ্যান।

আমার জীবন যেনো

জাবীদ মাইন্উদ্দীন

 

আমার জীবন যেনো

মর্মর ধ্বনি শেষে পত্র ঝরে যাওয়া

প্রচণ্ড খা খা করা রোদ,

পদ্মার ভরা মৌসুমে

রুপোলী ইলিশের অপার অদৃশ্য যাত্রা

বর্ষায় আমি ঠাডা পড়া

কাঠফাটা ঝাঁঝালো শুকনো বিল,

উজানী মাছের চাইয়ে

লটকে থাকা জীবন্মৃত ঢোঁড়াসাপ,

গ্রীস্মে আমার শীতল দখিনা বায়ু,

সূর্যোদয়ে প্রত্যুষের নতজানু শির

মহান প্রভূর কাছে,

উম্মাদনা শেষে

দৌঁড়ে আসে উথাল খেলার মাঠ,

ক্ষয়িষ্ণু উন্মাদ যাযাবর

জীবন কেটে যায়

তাচ্ছিল্যের শিস্ ছুঁড়া ঠোঁটে

আমার জীবন যেনো

মরিয়া ব্যস্ততায় ছুটির দিনের ব্যাংক,

পর্যুদস্ত কিঞ্চিৎ মিথ্যে হাসি,

অকালীন উৎসব প্রবণ

অনাবিল এক ঈদ,

ফুরিয়ে যাবার উদ্ধত প্রাক্কালে

ঝাঁকানাকা দূর দুর্বার

নিষ্প্রাণ আয়োজন শুধু….

 

 

========================

 

আজব ভাবনা

আ ন ম ইলিয়াছ

 

আমার দেহ বলছি সবে,তবু

আমি আমাতে চলছে খেলা,

আমি দেহ বুঝবি যখন

বুঝবি তখন সৃষ্টির লীলা।

সৃষ্টি লীলা খুঁজতে গেলে

পাবিনা খুঁজে আমি’র নিবাস,

আমি যদি দেহখানা হই

দেহখানা তখন কার নিবাস!

দেহের মাঝে নদী আছে

আগুনের কুপি তার ভেতর,

জ্বালাবে যখন আগুনের কুপি

চিনবে তখন আপন-পর।

উপরে আগুন, নিচে আগুন,

কাম আগুনে দিচ্ছে শক্,

উপর আগুন জ্বালিয়ে হলেন

মনসুর হাল্লাজ আনাল হক।

১০ টাকা ভাড়া

শিশির আজম

 

বাসের লোকজনের নিচুস্বরের কথাবার্তায় অনেক কথাই

হারিয়ে যেতে পারতো

হারায় না

ঘূর্ণায়মান বাতাসে উড়ে উড়ে বেড়ায়

প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য আমি ড্রাইভারের দিকে তাকাই

ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ভাবলেশহীন

ড্রাইভারের কথা ভাবতে ভাবতে আমি ভুলে গেছি

ভাড়া দিতে

ভাড়া ১০ টাকা

ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ধীরে

ওকে আমি ১৫ টাকাই দিতে পারি

কেন না ও গাড়ি চালাচ্ছে ধীরে

ওর কথা আমি ভাবতে পারি

আরও কিছুক্ষণ

আর আমার তরতাজা ক্ষতটার আগুন

নিভে যাক

 

 

 

========================

 

 

 

শকুন

হোসাইন আনোয়ার

 

কোথায় যেন অবরুদ্ধ আমি, কোন সুগভীর নর্দমায়।

মধ্যরাতে ‘মিয়াবাড়ি’ কালো কুকুরটার প্রলম্বিত চিৎকার

নিজের অমঙ্গল কামনার হিসেবটাই যেন মিলে যায়।

 

সভ্যতার সকল অর্জন আজ লুন্ঠনের বিস্তীর্ণ উৎসবে প্লাবিত

পাপে পাপে উন্মাদ নদী, নিজ প্রবাহেই ভাঙ্গে তার পার

আন্ধারেই ডুবে যাচ্ছে আলোর ঐতিহ্য

একটু একটু করে।

 

বয়সের ষড়যন্ত্রের কারণে দু’চোখেই ছানি আমার

চোখে আবছা আবছা ঝাপসা দেখি

ইমপেরিয়ালিস্টদের চরিত্রহীন টেকনোলজির

বিশাল উদারতায় শকুনের ঠোঁটে আমার বাংলাদেশ।

 

আমি বিপর্যস্ত কুকুরের মতো ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে আছি

শকুনের দিকে।

প্রচণ্ড এক অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে।

 

এ শালা মাইনষের জীবন!

থু………. থু…………থু……..।

 

===============================

 

আষাঢ়ের গল্প

কাওসার সুলতানা

 

একটু গল্প হোক…

সন্ধ্যার খামে মেঘের ভেলায় শ্রাবণ নামে

মল্লার রাগে মন কি আর সাজে?

যাদুর বাক্সে নব্য নট-নটীরা ভেলকি নাচে

মিথ্যে কথার ফুলঝুরি ভাজে।

বর্ষা রাতের খোলা খাতায় অভিযোগের ধারা নামে

শহর জুড়ে জঞ্জাল আর মিথ্যাচারের খাম জমে।

 

শ্রাবণ দিনে আষাঢ়ে গল্পের পসরা সাজে

ওরাই বলে, ওরাই শোনে

ধর্ম গুরুর ক্যানভাসে শুধু ক্ষত আর রক্ত ঝরে

জীবিতের মাঝখানে –

ওরা কেবল মৃত্যুর মিছিল গোণে।

 

এক নীরস কুটিরে, জীবিত ও মৃতের মাঝখানে –

ওরা উল্লাসের হাসি হাসে,

নিরুপায় – ভাঙাচোরা কঞ্চির জঙ্গলে,

জলের মতো অর্ধমৃতরা ভাসে।

 

আমি বা আমরা!

অগণিত ভাঙা, স্থবির কঞ্চির ভিড়ে,

যেন ভাসছি এক শব —

কোনো ভালোবাসা নেই, আষাঢ়ে গল্পের পসরায়

বিলীন সব।

 

তবু ভ্রম-বিভ্রমের ঘুর্ণিপাকে

শ্রাবণ আমার আজন্ম ভালোবাসা,

দেয় আমায় পূর্ণতা, হারিয়ে যাওয়া ক্ষণ

ফিরে পাবার আশা।

 

আহা… আহা..

হতাম যদি শ্রাবণ দিনের মেয়ে

বৃষ্টির ফোঁটায় চোখের জল নিতাম ধুয়ে।

 

 

একা হয়ে যাই

জাফর ইকবাল সিদ্দিকী

 

অনেক ভীড়ের মধ্যে

ভেসে ওঠে অধরা জীবন

ছুঁয়ে থাকে প্রাণায়াম মন

শরীর শীৎকার ধ্বনি শুনে !!

 

স্ফীত হয় জল,আষাঢ়ে শ্রাবণে।

 

অনুগামী আমাদের ঋদ্ধ জীবন।

এখনো আসন পাতি, মুখোমুখি বসি।

কখনো কখনো ছুঁই, ছুঁয়ে দেখি

তপ্ত ঘামের কূচি, অলস দুপুর।

প্রাইস-ট্যাগ

খুকু আহমেদ

 

নামিদামি এক স্টোর থেকে কুপন এসেছে দেখা

হয়নি সময়মতো-  চৌদ্দ তারিখের পর বাতিল হয়েছে

কুড়ি টাকা পাওয়ার সুযোগ, বাণিজ্যিক প্রলোভন!

‘তোমার সমস্ত কেনাকাটা থেকে কুড়ি টাকা ছাড়’

মূল্যবৃদ্ধির সময়ে ‘ছাড়’ নিঃসন্দেহে লোভনীয়–

কিন্তু সে দোকানে সাধারণ একটা টিশার্ট কিনতে

নির্ঘাত পঞ্চাশ টাকাু  থুক্কু, টাকা নয়, গুনতে হয়

ডলারের নোট। সাথে থাকা ক্রেডিট কার্ডের বায়না,

চোখের কাঙালপনা, নিরীহ মনের আকর্ষণ

নানা রঙে রূপে সাজানো পণ্যের দিকে- এমুহূর্তে

যা না কিনলে চলবে, সুতরাং কমপক্ষে গনাগাঁথা

পাঁচ কুড়ি ছেড়ে এক কুড়ি জিতে কলার নাড়িয়ে

ক্রেতারা ফেরেন- ঝলমলানো সুদৃশ্য ব্যাগের মধ্যে

আগে থেকে বাড়ানো প্রাইস-ট্যাগ চোখ টিপে হাসে

 

 

========================

 

 

কুশিক্ষার প্রভাব

সুজন দাশ

 

পশুর মতো হলে চলা

মানুষ ওদের যায় কী বলা?

নেই চেতনা রুচি,

উদারতা মানবতা

সেসব এখন বাতিল কথা!

চাইছে দিতে মুছি।

 

কথায় কথায় উঠছে তাতি

নেই মানুষ আর মানুষ জাতি

মাতছে হত্যা খুনে,

ন্যূনতম নেইও নীতি

ছড়াচ্ছে ত্রাস সঙ্গে ভীতি!

লাগবে খারাপ শুনে।

 

ধারে কাছে নেইও মায়া

লজ্জা শরম কিংবা হায়া

শান্তি গেছে উড়ে,

যে যার মত দিচ্ছে ভাষণ

চায় ক্ষমতা নেতার আসন

ক্রোধের তাপে পোড়ে,

 

সহিষ্ণুতার বড়ই অভাব

বদলে গেছে চিন্তা স্বভাব

ভদ্রতাবোধ ভুলে,

বর্বরতা হচ্ছে স্থায়ী

রাষ্ট্রসমাজ এতে দায়ী

কুশিক্ষাটাই মূলে।

ব্যক্তিগত জমিন

কানিজ ফাতেমা

 

আমার পরিত্যক্ত  জমিন জুড়ে

অসংখ্য পদ্মফুলের চাষবাস

ভ্রমর ও ভ্রমরীর আনাগোনা

আমার জমিনে মৃদু ঢেউ

মিঠে পানির জমানো অসুখে

মাছেদের খেলা।

আমার ফেলে আসা ফেলে রাখা জমি জুড়ে

নানান জাতের ঘাস

লম্বা চওড়া

সবুজ হলুদ ।

আমার জমিনে বর্গাচাষীদের চোখ

চোখের ভেতরে নীলস্বপ্ন

সোনালি ফসল বেচে সোনার মোহর কেনার বাসনা।

আমার পরিত্যক্ত জমিনের দিকে

আমি চোখ ফেরাতে পারি না

আমি কোন অর্থকরী ফসলের স্বপ্ন বুনিনি সেখানে

আমার জমিন জুড়ে আমারই উদাসীনতা

আমার জমি জুড়ে

আমার বেঁচে থাকা

আমার জমিনে উৎসব আমার জীবনের খসড়া।

 

 

 

 

 

========================

 

 

 

ভাঙনের সুর

সঞ্জয় দেওয়ান

 

অজানা অভিমানের হাওয়ায় ভাঙে

নিমগ্ন ভোর

বুকের ভেতর বাড়ে পোড়ামাটির ক্ষত

মনে জাগরূক ভাঙনের সুর।

 

অচেনা স্রোতে ভাঙে পাড়ের জমিন

মাটির আর্তনাদে ভারী ঘোলা জল

ফেলে আসে জীবনের হাজারো সম্বল।

 

একদিন নদী চলে আপন পথে

মিশে যায় মহাসাগরে

অসময়ে ডুব দেয় অস্তাচলে।

 

========================

 

 

 

দগদগে ঘা লুকিয়ে থাকে

এ বি ছিদ্দিক

 

এভাবেই একসময় নিঃশ্বেষ হয় মনের খেদ

সময়ই বলে দেয় কতোটা নিষ্ঠুর এই প্রেম প্রেম খেলা

তবু রণাঙ্গন থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ কথা নয়!

 

গর্ব খর্ব হলেও এইসব আদিখ্যেতা বহাল থাকে

কোথাও একটি দগদগে ঘা লুকিয়ে থাকে কেবল

এই লুকোচুরি খেলার সমূহ কারণ তো আছেই

পাঠ চুকিয়ে দিতে গেলেই জগতের যতো বিড়ম্বনা!

 

অতঃপর রণে ভঙ্গ দিয়ে হৃদয় ফেরারি হয়ে যায়

খোলা চোখে অথবা চশমায় সবই ভীষণ রঙিন

ত্রিনয়নে কেউ দেখে না জীবন কতোটা হেরে আছে।

 

 

 

========================

 

 

 

জিজ্ঞাসা

গাজী গিয়াস উদ্দিন

 

এ পৃথিবী কি স্বপ্নের কাহিনি?

শূন্য – বিবাদের তত্ত্ব কেউ দেয় না

দেখি ভোগের মরণ কাড়াকাড়ি

 

ইতিহাস দর্শন বিজ্ঞান এর মতো

জন্ম মৃত্যু স্বর্গ-নরক নিয়ে গবেষণা নেই….

আনন্দ বেদনা – সাফল্য ও অভিযোগ শুনতেই

বেলা শূন্য হবে?

 

জাগ্রত নিদ্রিত বিস্মৃত নতুন- পুরাতন

হায় প্রশ্ন

হায় বিশ্বাস ও আশ্বাস

মহাসাগর পর্বতমালা নক্ষত্রমণ্ডলী

দুর্যোগ ছাড়া আর কোন ভাষা জানে সে?

জিজ্ঞাসার দুর্বল আকাঙ্ক্ষা এ ধূসরে বৃথা

প্রকৃতির ব্যর্থ হাহাকারে সত্য অস্ত যাবে?

 

হে বৃক্ষ, কন্ঠের অবরোধ ছেড়ে

জেগে ওঠো

হে বিহঙ্গ, গাও তুমি গম্ভীরা

হে পাহাড়, পাষাণ রুখো

নক্ষত্র জ্বলন্ত নিনাদে – জলোধি তরল দশায়

মৃত্তিকার রহস্য- অগ্নি করো উদগীরণ

হেসে উঠুক সত্য

মুছে যাক মূর্খতা – কুসংস্কার।

তওহিদেরি নকিব

সৌপর্ণ মাছুম

 

তওহিদেরি নকিব নবি সাল্লি আলা

যাঁর আগমে শিরকমুক্ত পবিত্র বাইতুল্লাহ।

 

 

হেরেম হতে আওয়াজ আসে “আমারি নুর আসবে

আমার জিয়ারতকারীরা জিয়ারতে ভাসবে

ধ্বংস হবে নশ্বর উজ্জা সকল গাইরুল্লাহ  ।।

 

 

লাত আর উজ্জা রাজপ্রতিমা বিলাদতে বলে,

“সৌভাগ্যবান কুরাইশ জাতি ; রবিউল আউয়ালে

তাশরীফ এনেছেন আল-আমিন হাবিবুল্লাহ  ।।

 

 

তিন দিবস-রজনী কাবা ভূ-কম্পনে ভীত

সব প্রতিমা উপুড় হয়ে হলো ভূ-লুণ্ঠিত

মোহাম্মদ আল-উম্মি এলেন রসুলুল্লাহ।।

 

 

 

 

========================

 

 

 

 

শান্তির নোবেলে পুড়ছে দেশ

আলী আকবর বাবুল

 

শান্তির নাম লেখা আছে বারুদের খামে,

রক্তে চুয়েছে সেই সম্মানের সনদ।

একজন ঈশ্বর সাজে অন্যের কফিনে দাঁড়িয়েত্ম

তার হাসিতে ছাই হয় ছেলেমেয়ের খেলার মাঠ।

 

দূতাবাসের জানালায় আজ আগুনের রঙ,

সংঘের সভাঘরে বাজে শূন্যতার পিয়ানো।

একটা পদক ঝুলে আছে গরিবের পাঁজরে,

তার ওজনেই ভেঙে পড়ে পুরনো স্বপ্নের ঘর।

 

শান্তির গল্প বলে যে ভাষণে,

সেই কণ্ঠস্বর কাঁপে ড্রোনের পাখায়।

মৃত্যুর ক্যানভাসে আঁকা হয় ঘড়নবষ নষঁব,

আর মৃত শিশুরা হয় পরিসংখ্যানের অলংকার।

 

উন্নয়ন মানে দগ্ধ বুকের ওপর বাণিজ্যমেলা,

গণতন্ত্র এখন রপ্তানিযোগ্য স্লোগান মাত্র।

পতিত রাজনীতি জোড়া লাগায় বিদেশি সেলাই,

আর আগুনে পড়ে দেশের নাম- শান্তির বিজয়ী তালিকায়।

 

 

========================

 

 

শরতেও বর্ষা

চন্দনা চক্রবর্তী

 

কাশফুলে আঁকা দিগন্তভূমি, মেঘে ঢাকা নীল,

শিউলির শ্বাসে বেজে ওঠে বৃষ্টিধ্বনি শীল।

অরূপরাগে বিষণ্ন বায়ু, অশ্রুর গোপন শ্বাস,

শরৎও কেনো রাখে বুকে বর্ষার আবেশ বাস?

 

নীলিমাতে অগ্নিশিখা, তবু ঝরে তৃষ্ণাধার,

বাতাসে মিশে দ্বৈত সুরে বিষাদ-আনন্দের।

ফোঁটার ভেতর প্রতিধ্বনিতে অচেনা এক গান,

শরৎ-ঋতু বোঝে এখন বর্ষারই আহ্বান।

 

 

 

 

========================

 

 

 

 

 

 

চশমার কাহিনি

ইশরাত জাহান রুতমিলা

 

আমার একটাই চশমা, ভরসার মতন,

ভেঙে গেছে ডাঁটা, নেই আর জীবনচঞ্চল মন।

অসাবধান এক ক্ষণে, হারাল সে ভর,

এখন একচোখে দেখি, দৃষ্টি যেন ঝড়।

 

চোখ খুঁজে চশমা, না চশমা খোঁজে চোখ

আবছা সব কিছু, হেঁটে যাই হোঁচট খেয়ে লোক।

ঘরের মেঝেতে দেয়াল মনে হয়,

দরজার জায়গায় যেন আকাশ বইছে হায়!

 

মাথা ধরে বসে আছি, আর কাঁদি মনে মনে,

দাদা ডাকেন “ওই পড়ে গেলে পইরা যাবি টেনে!”

ভাবি, নতুন চশমা হবে, পাল্টাবো দৃশ্যপট,

কিন্তু ডাক্তার? উফ! ভয় লাগে কত!

 

বসে যান সামনে, কাচ বদলান একে একে,

“এইটা ভালো?” “এইটা কেমন?” প্রশ্ন চলে তেড়ে।

বর্ণপরিচয় যেন শেখে আবার চোখ,

ক’বছর পরে এসে পড়ি নতুন লেখার পিঠে ঝোঁক!

 

তবু বাঁচতে চাই, দেখি কিছু রঙ, কিছু রেখা,

চশমা হোক ভাঙা, চোখ হোক কেঁদে বোকা দেখা।

এ জীবন আবছা হোক, তবু হোক আলোয় ভরা,

চশমা ছুঁয়ে দেখি, হোক সে ভাঙা তবু সেরা!

 

 

 

========================

 

 

চিকিৎসক

অপু বড়ুয়া

 

দেহ আর মন

এই দুটি নিয়ে হলো মানবজীবন।

খাইদাই গান গাই নাচি ধিনধিন

কত খুশি কত হাসি কাটে সুখে দিন।

 

হাসি খুশি সুখে থাকি হঠাৎ অসুখ

গায়ে জ্বর, খাওয়া নেই মরা মরা মুখ।

দেহ ভালো নেই তাই মনও ভালো নেই

হারাই এমন হলে জীবনের খেই।

 

তখন ছুটতে হয় ডাক্তারখানা

কীভাবে সুস্থ হবো তার আছে জানা।

ডাক্তার সমাজের মহান সেবক

সুস্থতা ফিরে পেতে চাই চিকিৎসক।

 

 

 

 

 

========================

 

 

 

 

 

নিশি প্রজাপতি

আলেয়া আরমিন আলো

 

ব্যতিব্যস্ত শহরের পথে কিংবা কোনো অলিগলিতেও

আমি কোনো প্রজাপতি ওড়তে দেখি না।

তবে, এ শহরে মধ্যরাতে নিয়ন আলোয় কিছু নিশি

প্রজাপতি নিত্য ওড়ে বেড়ায়,

গাছের আড়ালে কিংবা ল্যাম্পপোস্টের নিচে

ওরা ঝাঁক বেঁধে নয় বরং একলা একাই ওড়ে…

রঙিন ঠোঁটে মেকি হাসিতে ওরা পথচলা পথিকের

মন ভোলায়।

পিচঢালা পথের পাশের কোনো জনশূন্য স্থানে

ওরা পথিককে স্বর্গসুখের তৃপ্তি দিয়ে,

নিজেদের জন্যই করতে হয় ওদের অন্নের উপায়।

 

 

==========================

অলিখিত গল্প

সৈয়দা সামিরা আহমেদ

 

কাহিনিটি নয় কোটি আলোকবর্ষ দূরের

রূপকথা গল্প নয় কোন অচিনপুরের।

রোমান্টিক কাব্য নয়, নয় পূর্ণিমার চাঁদ,

সুকান্তের ঐ ঝলসানো রুটি গদ্যে পাতে ফাঁদ।

নয়-ছয় ভাব নয়, নয় রঙিন ফানুস,

সে হয়তো লালন সাঁইয়ের মনের মানুষ।

এ তোমারই শৈশব শালিকের ছদ্মবেশে,

বলেছেন জীবনানন্দ আবার ফিরে এসে।

 

 

=================

পাথুরে জীবন

টিপলু বড়ুয়া

 

রাতের অন্ধকারে যেখানে

চাঁদ দেখা যায়-

জোনাকিরা মিটিমিটি আলোতে

যেখানে মন রাঙায়-

ঝিঁঝি পোকারা অবিরাম শব্দে

যেখানে বিনামূল্যে গান শোনায়।

 

দালান ঘেরা শহর ছেড়ে আজ-

মন যেন সুদূরে পাড়ি দিতে চায়।

শহরে বন্দী- পাথুরে জীবন যেন আজ-

মুক্তি পেতে  চায়।

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।