তুমি নেই এ নিখিলে
নূ রু ল হ ক
মাঝে মধ্যে মনে হয় তুমি আছো
যেমন তুমি ছিলে সর্বব্যাপী এ নিখিলে
এখন নিশ্চিত আমি , তুমি নেই
আমি আছি পূর্ববৎ সেই মতিঝিলে
তুমি নেই বলেই খেই হারা এ শহরে ইদানীং
থাকে না কিছু শরীরী কিংবা অশরীরী
বুকে বাজে ভ্রমে, রিকশার বেল হিং টিং
চোখ দুটি ক্রমে হয়ে যায় আগ্নেয়গিরি।
এখন এ শহরের উত্তর দিক, অকমর্ণ
হিম আক্রান্ত দ্যুতিহীন, পান্ডুর ফ্যাকাসে
দক্ষিণের মতিঝিল সেও আজ বিবর্ণ
বিরহ শিশির ঝরে পড়ে অস্তিত্বের দূর্বাঘাসে।
যেতে মন চায় না মন আর অন্য কোন দিকে
যদি ফের ফিরে এসে না পাও আমাকে
যদিও একে একে সব কিছু হয়ে আসে ফিকে
শহরের ফুটপাথ অলিগলি দৈব দূর্বিপাকে।
যাহাই বলো, উত্তর দক্ষিণ কিংবা পূর্ব পশ্চিম
তুমি নেই বলে এ নিদাঘে আমি হয়ে গেছি হিম
জোছনা নামে
বিপুল বড়ুয়া
জোছনা নামে, জোছনা নামে
ঝিম নিজঝুম রাতের খামে
কেউ জেগে নেই আবেশ ঘুমে
মিহিন আঁচল সুতোর চুমে।
পাখ পাখালি দূরের আকাশ
হিম হিম হিম উড়াল বাতাস
যাচ্ছে বহে খুশির দোলায়
উদাস এ মন স্বপ্নে ভোলায়।
মিইয়ে গেছে রোদের খেলা
ফুল-পাখিদের উছল মেলা
জোছনা শোভায় মন কী ভরা
দু চোখ বোঝে অবাক পড়া।
জোছনা নামে জোছনা নামে
এমন ছবি যায় কি কেনা
সোনা-রূপো-হিরের দামে।
ধর্মাধর্ম বিসম্বাদ
সেলিনা শেলী
কিছু কিছু তাচ্ছিল্য তুলে রাখি নিজের কোঁচড়ে
করোটি খুঁটে খায় ঘাই হরিণী জেরবার
বিধানের বাঁধন ছিঁড়ে দৌঁড়োয় কতক
মোল্লা পুরুত
কতিপয় মানুষ থাকে,বাকি সব ধর্মের বক!
মানব হত্যার বিধান দেয় যে পুস্তক নিদান
সেখানে তমিস্রার চোখ, লাল সংবিধান
নিষেধের ছোঁড়া ইটে রক্তপাঁজর কেঁদে যায়।
একবিংশ পৃথিবী জুড়ে ধর্মের কী কুৎসিত বাহানা
সৃষ্টিতত্ত্ব, আদি নাম,নৃতত্ত্ব পুঁথিতে পড়ে টান
চাঁদ আজো কেঁদে যায় — মানুষেরা কিছুই বোঝে না!
দীপাবলী সংগী
সরকার অরুণ কুমার
সে আলো আর ফিরবে না কখনো
স্মৃতিদিগন্তে কে ওড়ায় শান্তির পায়রা?
আজ আদর ভাঙা আলোয় বাঁচি কোনমতে
আর স্নায়ুখরায় রোজ যাই ক্ষয়ে ক্ষয়ে।
ভাগ্যের ছুরি অদৃশ্যে খুব চমকায়
ক্রমশ তার নেমে আসা
পারি না রুখে দিতে।
দিনরাত সহ্য করি আঁধারের ভঙ্গী
অপ্রেমে ভুগি! খুইয়ে সেই দীপাবলি সংগী।
হোসেইন আজিজ এর দু’টি কবিতা
এক. অবাক লোকন
ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে
সাটার ওঠানো জানালাটাও স্থির
আমি মন্ত্রমুগ্ধ
চেয়ে আছি ঠায়
থেমে থাকা ট্রেনের জানালায
ট্রেন চলে গেছে
জানালাটাও নিয়ে গেছে
আমি বুঝতেই পারিনি …
দুই. একটি নির্বোধ জিজ্ঞাসা
জ্ঞানকোষ পৃথিবীর ভাঁজে ভাঁজে
ছড়িয়ে আছে সক্রেটিস আশীর্বাদ
উর্বশী অরণ্যে লীলাবতী যৌবন …
এখানে আজ
‘কোনিইন নিউরোটক্সিন’ বিষের আকাল
তবু কেন বোধের এই মহামারী !
অস্থি-মজ্জা
নুসরাত সুলতানা
ছোট বেলায় শিখেছিলাম সম্পর্ক মানেই সবার আগে বন্ধু হয়ে ওঠা
যেমন করে বৃক্ষ বন্ধু হয় মানুষ -পাখি আর পরিবেশের।
যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে মহীরুহ হয়ে ওঠো।
আজ দেখি সম্পর্ক কেবলই জাবেদা খাতা।
উঠতি যৌবনে ভাবতাম – প্রেম মানেই নৈকট্য।
আজ পরিনত বয়সে দেখি- প্রেম হল দূরত্বের সাধনা।
কিংবা তারও অধিক প্রিয় মানুষটির কাছে আত্মমর্যাদার বিপুল সংগ্রাম।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেতে পেতে ভেবেছি- সভ্যতা মানেই
হল পোশাক, ভাষা আর আচরণের শুদ্ধতা।
আজ দেখি -কোনোকিছুই ভোগ কিংবা সম্ভোগে সভ্যতার তেমন কিছু যায়-আসে না
যদি তা সঙ্গোপন মেনে হয়।
সঙ্গোপন আর মিথ্যা পবিত্রতাই সভ্যতার অস্তিত্বের অস্থি-মজ্জা।
প্রণয়মোথিত ঘুম
অনুপমা অপরাজিতা
তন্দ্রালাগা চোখে নিমগ্ন শরতের মেঘদল,
ভ্যানগখের চিত্রকলার জলরঙ আকাশ
তরুণী সবুজ পাতায় পাতায় ঘন নিঃশ্বাস
ওঠা-নামা করে টপফ্লোরের চিলেকোঠায়
জলপাই শাখায় চুইয়ে পড়ে কনে-দেখা
আলোর ঝলক, অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে আছে
বিস্মৃতির ঘোরলাগা দ্বিধা। এলে কিনা
কাত হয়ে দেখি তোমার আনত দৃষ্টি আর
রোমশ চাহনি। উষ্ণ বাতাসের ঘরে ফেরা
বলাকানক্ষত্রতলে সন্তর্পণে সিঁদূরের গাঢ় রঙ
লেগে থাকে প্রসারিত বুকে।হাতের আলিঙ্গনে
খুঁজে ফিরি প্রণয়মোথিত সঙ্গমের ঘুম, আর্তি।
আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
জমকালো রাতটাকে দিন ভাবে খাতুবালা
বুঝে না তো মোহে পড়ে খই নাকি ছাতু ভালা!
চিনিস না তাই আজ খাঁটি তুলা কার্পাস
আগাছায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ!
আহা খাতু এলো সবে চোখে রঙ ছলকায়
তোরও পোয়া বারো,তোর হাত শুধু হাতরায়।
নিজের নাগালে তাদের খুঁজে বার বার-পাস
ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ!
হেসে খেলে গাধা ঘোড়া সাথে নিয়ে নাচছিস
ইনকাম-লাভ এতে জানি ভালো পাচ্ছিস
পকেটটা ভারী আরো হাত টেনে ধার পাস?
আগাছায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ!
নানা ছল বলে রোজ উঠেছিস মেতে
কৌশলে তামশার জাল দিস পেতে
রঙ মাখা মোহ রূপ উপরিও আর-পাস
আগাছায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ!
খুশি মনে মশগুল, গুলে খাস ছোলা-জল
বেহায়া ও নির্লজ্জ নাচে হয় ঘোলাজল!
সেই জলে ডুবে গিয়ে ‘সার্ভ হয় পারপাস’
আগাছায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ!
আয়নায় বন্ধুর মুখ
নাসরিন জাহান মাধুরী
কারো থাকে ঘরে ফেরার তাড়া
কারো আবার নেইতো কোন খোঁজ
কারো থাকে স্বপ্ন পাগলপারা
কারো ভীষণ চরমপত্র রোজ
আমি এখন ফিরিনা তো ঘরে
বাইরেও নেই চেনা কোন পথ
উধাও আমার দৃষ্টি দেশান্তরে
থামেনা তো কোথাও আমার রথ
গল্পগুলো মনের অচিনপুরে
জমিয়ে রাখি তোমায় বলবো তাই
তুমি এখন কোথায় কত দূরে
কেমন করে তোমার দেখা পাই
নৈমিত্তিক সহজ সরল
মো. শহীদুল্লাহ
জলে টলোমল,
পদ্মনাইওরি চেয়ে থাকে
ভিন্নতর আবেগে
জলচোখ ছলোছল।
বীজতলায় নেমে গেছে
দুঃসহ কষ্টকৌতুক,
খলচরিত্রেরা বাহবা কুড়োয়;
এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার নিলামে উঠবে
নিষ্ফলাজমি।
সদরঘাটের আঁজল
আজিজ কাজল
সদরঘাটের সদর পোলা দিগ্বিদিক হাঁটছে
রসুন মারি পিঁয়াজ মারি গন্ধক তারা খুলছে
আটকা মাঝি খটকা ভুলে বারেক ফিরে দেখছে
কর্ণফুলির ঘোলা পানি নতুন জ্বরেতে ভুগছে
মাঝে মাঝেই পালের হাওয়া উজান মারি চায়
ব্যাঙের লাহান ডাক পেড়েছে জাহাজ বন্দরায়
সদরঘাটে খিলি পানে মুখ জুড়ানো রসনায়
বারেক ফিরে তাকে মাঝি ঠুকরে পান খসড়ায়
মাছের-আঁশটে গন্ধ ভুলে গোলাপ ফুলের বউ
এক জালেতেই আটকে ধরে কচি টাকার মউ
ঢিলের বাড়ি খিলের আঁটা চাল পিঁয়াজের বস্তা
সদরঘাটের চেহারা সুরত নাই ভারি সস্তা
টার্মিনালে ঘাটের গলুই চিরল চিপায় হঁলা
লঞ্চ-স্টিমার সাম্পান খুলে পুরান কথার দলা
মাটির চশমা
ওসমান গণি
মৃত্তিকার ভিতর সন্দর্ভ থাকে
মাটির চশমায় পায়ের চিহ্ন, পাখি উদ্ভিদের
খড়কুটো দু’একটা সবুজ-
দু’একটা গবেষণা বহুভূজ তপ্ত উঁচু পাহাড়
চাঁদ, দুঃসহ কবিতা যন্ত্রণা, জীবন্ত টিস্যুর ঝিল্লি
মাটির চশমায় থাকে চোখ নিঃসীম
মর্মভেদী বিস্ময় দিয়ে যায় পৃথিবীর মাটিকে
অকর্ষিত গাঁয়ের স্মৃতিরক্ত ফসলে মুখ, কার?
এইসব স্পষ্ট হল সূর্যালোকিত পৃথিবী অন্তহীন
মানুষ টানটান অদেখা এই মহাশূন্য..
নির্জনতার শিরোনামহীন গল্প
আ ই না ল হ ক
কতদিন গত হলো জোসনার সাথে কথা হয় না
আমার বিষণœতায় দখিনা বাতাস
একবার করুণা করে কানে কানে বলেছিল,
“হাল ছেড়ো না ভায়া, মানুষ তো কত কথায় কবে!
দাঁড়ানো গাছকে সব দূর্যোগ সইতে হয়।”
তবুও দ্বিধান্বিত মনের খচখচানিতে একপায়ে দাঁড়ানো
তালগাছের ‘একলা চলো’ পরামর্শটা খুব কাজে দিল;
তারপর থেকে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি।
পূর্ণিমার কারুকার্যময় আলোকিত চাঁদ গায়ে মেখে
স্বার্থপরের মতো দূরীভূত করি মনের অন্ধকার
এক আধবার যে সমাজের কথা ভাবি না, তা নয়;
কিন্তু অন্ধকারের সুচিকিৎসার মানসিকতা কোথায়?
এখন আত্মাকে আয়ত্ত করাই
গহীন অরণ্যের নির্জনতার শিরোনামহীন গল্প,
তাতে অবশ্য প্রশান্তি মিলে খানিকটা।
কষ্টসহিষ্ণু
নাদিয়া ফারহানা
কষ্টসহিষ্ণু কৃষ্ণচূড়া
কতটা কষ্টের পাহাড় গড়েছো বুকের অভ্যন্তরে ?
আগুনলাল ফুলগুলো কি তবে
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ?
ঊদ্যম তরুণ সবুজকে ঝড়িয়ে
গেয়ে যাও কি দুঃখের গান নীরব অহংকারে ?
কষ্টসহিষ্ণু কৃষ্ণচূড়া
অযতেœই ছুঁতে চাও নীল আকাশ
উষ্ণ বাতাসে ছায়া দাও অবিরত
ক্লান্ত শ্রান্ত নিষ্ঠুর পথিক সুজন
দিনশেষে ফিরে যায় বাড়ি
ভুলে যায় গুলমোহরের শীতল ভূবন।
কষ্টসহিষ্ণু কৃষ্ণচূড়া
ইট কাঠ পাথরের খাঁচায় বন্দী
বন্ধু কবি শিল্পী কবিয়াল
মুগ্ধতায় অবলোকন করে
পত্র পল্লব ঝরা লাল সুন্দরী
তারা দেখতে কি পায় লবনাক্ত জল?
অবশেষে
কৃষ্ণচূড়ার রাঙা আলোয়
দিনমনি লিখে যায় কষ্টসহিষ্ণু বৃক্ষের রূপকথা।
একা
কফিল উদ্দীন দুলাল
বিচিত্র ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে হেঁটে চলা
রাস্তার মতোই একা
বিস্তীর্ণ বিরান প্রান্তরের বুক চিরে নিরবে
নিভৃতে বয়ে চলা নদীর মতোই একা,
সাগরের নীল জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে চলা গঙ্গা
কৈতরের মতোই একা,
জারুলের মগডালে বসে থাকা অনামিকা
অনাদৃতা পাখির মতোই একা,
শরত প্রাতে লাউয়ের লতায় ঝুলে থাকা
শিশির দানার মতোই একা,
হেমন্তের আকাশে হেঁটে চলা নিষ্ফলা
মেঘের মতোই একা,
রাতের আকাশে জেগে থাকা ষোড়শী
বিবাগী শশীর মতোই একা,
বৃষ্টি ভেজা নয়ন তারার বিষণ্ণ দৃষ্টির মতোই একা,
কাজল বিলের জলায় আহারের ধ্যানে মগ্ন
ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা কানি বগার মতোই একা।
হোকনা পথ যতই সর্পিল, যতই আঁকাবাঁকা যতই একা
তবুও থেমে নেই জীবনের রথ, থেমে নেই জীবনের চাকা।
লজ্জাবতী
আলম নজরুল
লজ্জাবতী, লজ্জাবতী লজ্জা কেন পাও
একটুখানি ছোঁয়া পেলে মুখখানি লুকাও।
তোমার কাছে এলে পরে
লজ্জাতে যাও তুমি মরে
পাতার ফাঁকে মুখ লুকিয়ে এদিক ওদিক চাও।
রাতের বেলা ঘুমাও তুমি
সঙ্গে ঘুমায় বনভূমি
ভোরের আলোয় জেগে ওঠে চোখ মেলে তাকাও।
চিকন চাকন ডালে তোমার
দেখি কত ফুলের বাহার
চপল হাওয়ার পরশ পেয়ে নিজেকে হারাও।
ঠুনকো জীবন
সুশান্ত কুমার দে
জীবন হলো এক ফোঁটা পদ্ম পাতার জল
যতটুকু সময় স্থির থাকে রোদ্দুরে ঝলমল।
ওই জলের অন্তর জুড়ে আছে অনেক গুণ
হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি ভালো মন্দের ঊন।
গর্ব করে বাঁচতে চায় স্বার্থ সিদ্ধির ঐ চূড়ায়
মানুষগুলো ছুটে চলে, চড়ে রাঙা ঘোড়ায়।
জীবন থাকে যতটুকু সবটাই ভাবো আমার
পরের দিকে ভিন্ন নজর বাড়াও অহংকার।
এই না আসা, এইতো যাওয় তবু ভেদাভেদ
পরের কষ্টে একটুও পড়ে না কারোর ছেদ!
হিংসা মনোবৃত্তির জীবনটা যে পাপীতাপী
অকারণেই দোষাদোষী বৃথাই ঝাঁপাঝাঁপি।
নিজের টুকু নিজের করে ভরল নাতো মন
বাইরের পানে কু নজর দেখছো সারাক্ষণ।
কখন জানি থামবে পথ, সকল কোলাহল
পদ্মপাতার জল বিন্দু গড়িয়ে পড়ে ভূতল।
ঠুনকো জীবনটা মুছে যায়, ক্ষণিকের ঢেউ
স্মৃতির পাতা, জীর্ণ খাতা দেখলো না কেউ?
সম্পর্ক
শারমীন আফরোজ
কিছু সম্পর্কের বসবাস বুকের গহীনে।
যা দেখা যায় না,ছোঁয়া যায় না,
শুধুই থাকে অনুভবে,আর অনুভূতিতে।
সম্পর্ক গুলো কখনো তার খোলস ছেড়ে
প্রজাপতির মতো উড়তে পারে না।
তাকে বন্দি করে রাখতে হয়
বুকের গোপন কুঠুরিতে।।
এই সম্পর্কের কোন নাম নেই ,
নেই কোনো পরিণতি।
তবুও বুকে ব্যাথা চোখে জল।।
তেমনি এক শিরোনামহিন সম্পর্কের আবর্তে আমি
রোজ ডুবি আর ভাসি।
শিমুল তুলার মতো আমার কষ্ট গুলো
বাতাসে ভর করে ছড়িয়ে যায় দিক বিদিক। ।
কারনে অকারনে,দেখা না দেখায়
বুকের ভেতর সেই সম্পর্কের বসবাস
চলে নিত্য দিন,
তাইতো তার নাম দিয়েছি শিরোনামহিন।।
সময়ের রঙে
সারমিন চৌধুরী
সকাল থেকে বাইরে একটানা বৃষ্টি ঝরছে
সমস্ত নিস্তব্ধতা মিলিয়ে যাচ্ছে তারই কলশব্দে
সারাদিনের তুমুল বর্ষণে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়েছে
বাইরে বেরোবার তাড়াহুড়া নেই কারো আজ
শুধু আমি হাঁটছি অজানা পথে খুব অনিচ্ছায়।
অতীতের চৌরাস্তায় পা ফেলতে চায় না মন
একটা তপ্ত নিঃশ্বাসে ঝলসে যায় পুরানো দিনগুলো
পুড়ে অতীতের রঙিন বসন্ত বাতাসের যৌবন।
যে কলিং বেলের শব্দে কেঁপে ওঠত বুক
এখন পাথর ভাঙা হাতুড়ির আঘাতেও টলে না
অপেক্ষার পর্দা খসে গেছে রেটিনার থেকে,
যদি কিছু না থাকার মাঝেও কিছু থাকে তা স্মৃতি!
যার চাহিদা কেবল চোখ থেকে ঝরে পড়া
কয়েক ফোটা অশ্রুর সীমাবদ্ধতায় প্রবাহমান।
মানুষ পাল্টে যায় অতি দ্রুত সময়ের রঙে-
সাথে বদলায় নগর কিংবা লোকালয়
তোমার শহরটা বদলালো কত দ্রুততায়!
ভেতরের ঘরটা ফাঁকা রেখে পাল্টে নিলে খোলস
বাঁপাশে সযতেœ পুষে রাখা কিছু পরম মুহূর্ত
নিমিষে বিমর্ষ হয়ে গেলো অচেনা অনুভবে।
কত শত মুহূর্ত কিংবা স্মৃতির আল্পনা সময়ের
মুছে গেছে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটায়।
==================
মৃত্যুর পরে
টিপলু বড়ুয়া
মৃত্যুর পরে- আমার সমাধিতে কেউ
ফুল দিও না,
কারণ, সমাধির ঝরা ফুলগুলো
আমি কখনো দেখবো না।
মৃত্যুর পরে- আমার জন্য কেউ
এক ফোঁটা অশ্রুও ঝরাবে না,
কারণ, কারো কান্নার শব্দ আমি
আর কখনো শুনবো না।
মৃত্যুর পরে- আমাকে উৎসর্গ করে-
শত লোকের মুখে খাবার দিও না,
কারণ, কোনো খাবারেই আমার
ক্ষুধার জ্বালা মিটবে না।
মৃত্যুর পরে- আমাকে উৎসর্গ করে-
দু’পয়সা অর্থও ব্যয় করো না,
কারণ, প্রাণহীন জীবনে
আমার আর অর্থের প্রয়োজন হবে না।




