এখন সময়:সকাল ৬:৩৩- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:সকাল ৬:৩৩- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

পদাবলি – নভেম্বর ২০২৪ সংখ্যা

ঐ সব কথা

মঈন চৌধুরী

 

ঐ সব কথা, কবিতার কথা, প্রনয়ে উহ্য থাক,

চেতনা বেচার বাজারে এখন প্রচুর রক্তপাত,

অন্ধ স্বদেশ ভেঙে ফেল দ্বার বুদবুদে গড়া গৃহ,

যন্ত্রণা আজ নীল বিষ সহ নিশ্বাসে তোলা হবে।

 

ঐ সব কথা, কবিতার কথা, যাদুর বাক্সে রাখ

যাচ্ছে সময়, দিন কেটে যায় গতির তীব্র ত্রাসে,

সাপ হয়ে আজ আমিষ বাগানে রক্তপ্রবাহে মিশে,

মিথ্যা প্রনয় চুমুতে দেবো ধ্বংসের শেষ ডাক।

 

ঐ সব কথা, কবিতার কথা, প্রতœ পুঁথিতে থাক,

এই পুরাতন সমতটে থাক ফসিলের সাক্ষর,

আজ এ বঙ্গ মানুষ রঙ্গ সবকিছু মিলেমিশে,

বর্জ্য ভাগাড়ে রাখবে শুধু পোড়া মিথেনের ঘ্রাণ।

 

ঐ সব কথা, কবিতার কথা, হত্যাতে বোঝা ভাল,

ভাঙন ধরেছে, ভেঙে ফেল সব, ভেঙে ফেল অবয়ব,

ক্রন্দনরত কবির চিহ্ন কবিতা ভিন্ন কৃষ্ণ বিবরে ঢুকে,

একটি একক মশাল জ্বালিয়ে আগামীকে দেবে দ্রোহ।

 

 

===========================

 

সীমা ও-পাড়ার মেয়ে

শ.ম.বখতিয়ার

 

আমার বয়স সম্ভবত আট-নয়

সীমার বয়স পাঁচ-ছয়

দুজনের পরিচয় দুটি শিশু

কোনো বাধা নেই

লুকোচুরি কানামাছি খেলা

পুতুলের বিয়ে মালাপাতি কাঁধে চরা

হৈ-হুল্লোড় মারামারি খুনসুটি খামচি কামড়

একসাথে পুকুরে সাঁতার কাটা

ডুব মেরে অগোচরে-

দিন দুপুরে শাপলা তুলে আনা

ঘুড়ি উড়ানো পুকুরে মাছ ধরা

ভর দুপুরে বিলিম্বি চুরি করে

গুড়ো মরিচ লবণ মেখে ভর্তা খাওয়া

কি অপূর্ব অবারিত স্বর্ণাভ সময়

কোনো বাধা নেই।

আমি ছেলে হয়েছি এখন

সীমা ও-পাড়ার মেয়ে

জানলার ফাঁকে একে-অপরকে দেখি

দূর থেকে চুপিচুপি,

কেউ যেনো টের না পায় কখনো।

বাড়ছে বয়স

ক্রমশ বাড়ছে কষ্ট

আমি পুরুষ হলাম

সীমা পুরোদমে নারী

দেশ বিভাগের মতো বিভক্ত হলাম।

 

===============

 

স্টেশন শুধু এক দুঃখের গহন

মজুমদার শাহীন

 

একটা স্টেশন বুকের মধ্যে হুস হুস

ঢং ঢং ঘন্টা বাজায়

আর দুঃখের ডাকঘর ছুটে আসে বুকের চাতালে,

বিচিত্র ফাগুনের যৌবন ঝিক ঝিক মন্দিরা অথবা ঝুমুরে মাতাল নর্তকী।

 

স্টেশন থেকে ছুটে যায় অজগর গাড়ি

ছুটে শিরায় উপশিরায় হাড়ের গভীরে ।

বুকের মধ্যে হলুদ ফিকে পাতা

বাতাসে ঝরে পড়ে দুঃখের কালান্তর,

স্টেশনে না হলুদ না লাল সিগন্যাল

ভুলে গেলে বিপথে যাবে হে।

 

বুকের মধ্যে লম্বা রেলগাড়ি

স্লিপারে স্লিপারে ঘর্ষণের শোক

গরম চুম্বকের ভালোবাসা দিগম্বর

ক্ষুধাভুখ মানুষের পেটে।

 

স্টেশনে দুঃখি মানুষেরা শুয়ে থাকে

জরাজীর্ণ পুষ্টিহীন ভালোবাসাহীন

দুঃখি মানুষের আপন বেহেস্ত এই

ঠিকানা; দরদে আদরে শস্যের দানার

মত তাদের তুলে তুলে রাখে হৃদয়ে ;

 

কত মানুষেরা এখানে নোঙর

তোলে- তাদের চোখে চিক চিক করে

সুখের আজলা জল অথছ স্টেশনে

শুয়ে থাকা মানুষের বুকের মধ্যে পাথর

করাল- মৃত্যুর ঝুমুর বিরহের সুর।

 

ট্রেনের  হাওয়ায় উড়ে কুলিদের ঘাম

কোন মায়ের হারিয়ে যাওয়া শিশুর রুগ্নতা,স্বপ্নহীন কেবলই বেঁচে থাকা

বুকের মধ্যে স্টেশন বাসা বাঁধে কষ্টে ও

কোমলতায়,এই শ্রীহীন  স্টেশনে শুধুই

পতনের শব্দ শোনা যায় ।

 

বুকের মধ্যে কোলাহল ঘন্টা বাজে

ঘুম নেশা কেটে গেলে যন্ত্রণার করাত

বুকের হৃদিতাকে কাটে চৌচীর

কাঠভুখ ঘুণপোকা মৃত্যুর জানালায়

খুলে দেয় দখিনের হাওয়া

 

একদিন বুনে যাওয়া স্বপ্ন গাছ হয়ে

আকাশ ফুঁড়ে ছুঁয়ে যায় প্রত্যাশার মধ্যদুপুর ,কিন্তু স্টেশন শুধু এক

সময়ের ঘেরাটোপ, রোদঘামে ভরে যায়

যাযাবর জীবন, কখনো শেষ হয় না

দুঃখের গহন ।

 

========================

 

 

চেনা সেই তুমি

খাতুনে জান্নাত

 

ঘাসের অন্তরে পা মাড়ানো ব্যাথা-

সয়ে সয়ে ফুল ফোটে

শিশির লিখছে মুছে দেয়ার গল্প…

নদী লিখে গান

পথচলা অনির্বাণ

সে আমার প্রেম

মোটরের শব্দের গভীরে

চিরায়ত শিল্পমুখ

কাব্যবোধে নিঝুম

আলোর প্রত্যাশি

ভাষা নেই,

অবোধ চাহনি

মোটরযানের অন্তরালে

ধুলোর আস্তর মেখে

ভালোবাসি ভালোবাসি…

 

 

=========================

 

 

এখন ধ্রুপদি সময় নয়

হো সে ই ন  আ জি জ

 

তোমার-আমার প্রিয় শহর আজ আর আগের মতো নেই

এখন ঝরছে ঝরঝর বৃষ্টি, রাজপথ হয়ে আছে নদী

পাজামার পা গুটিয়ে একা একা নেমে পড়ি জলে

খুঁজে চলি সুবর্ণ অতীত, প্রয়াত দিনের স্পর্শের আশায়।

 

সাহিত্য সংসদের আড্ডাটাও আজ জমেনি মোটেই

আমি ও আমার প্রেমের কবিতা লেখার খাতা –

দুরাচারী বৃষ্টির জলে জবুথবু, ভিজে একাকার

তাই প্রেমের কবিতা রেখে পাঠ করি দ্রোহের কবিতা।

 

প্রিয়তমা, ধ্রুপদী সময় নয়, নিচ্ছি কমিন সময়ের পাঠ

আমার সর্বাঙ্গ ভেজা অথচ ছটফট করছি দুঃসহ উত্তাপে!

 

 

 

 

===========================

 

 

উকুন

হোসাইন আনোয়ার

 

চেতনায় কিছুই ঠাহর হয়না এখন

নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে ট্রাফিক জ্যামের অস্বস্তি

কোথাও এক টুকরো অক্সিজেন নেই

দ্রব্যমূল্যে সর্বত্রই আগুন। গণমানুষ দিশেহারা

কণ্ঠে মধুর কিন্তু ভয়ানক কিছু বিষাদ সঙ্গীত সাধা যখন

তখন আমার দেশের অরাজঅৈনতিক বুদ্ধিজীবীগণ

প্রশ্নের সম্মুখীন তো হতেই পারেন।

 

কোরআন-বাইবেল-ত্রিপিটক

কিংবা গ্রীক মিথলজি নিয়ে

তাদের প্রা-িত্বের বিষয়ে

হয়তো কারো কোন প্রশ্ন নেই, থাকবেও না।

 

কিন্তু কারো কাপুরুষের মত প্রতিবাদহীন মৃত্যু’র

প্রশ্নতো থাকতেই পারে।

তখন কী জবাব দেবেন আমাদের অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীগণ।

 

আমাদের দুর্দশা দেখে মার্ক্স-লেলিনরা

লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে অনেক আগেই

ফ্রয়েড ইয়ার্কি করে মুচকি মুচকি হাসছে।

ঈশ্বর নিজেই বিব্রত তার এজলাসে।

 

‘উঁকুন’ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার কী অদ্ভুত লড়াইটাই না করছি আমরা।

 

 

 

===========================

মা

সত্যব্রত খাস্তগীর

 

মা যে আমার ধ্রুবতারা

কাজল দীঘির ছায়া

মা যে আমার হৃদয়কারা

ঘুম পাড়ানি মায়া।

 

মা যে আমার অশ্রুভেজা

মেঘনা নদীর বান

মা যে আমার সুখের বোঝা

ধান কুড়াবার গান।

 

মা যে আমার জীবনতরী

স্বর্গলোকের যান

মা যে আমার নাটাই ঘুড়ি

মা যে আমার প্রাণ।

দূর পৃথিবীর গল্প শুনি না আর

গাউসুর রহমান

 

দূর পৃথিবীর গল্প শুনি না আর

মানুষের মনীষা কখনো অর্ধসত্য

কখনো মিথ্যে,

মানুষের পৃথিবীতে কেবল

গতি ও প্রগতিই নেই-

মানুষের পৃথিবীতে জরা আছে;

স্থবিরতা আছে।

 

মানুষ আত্মক্রীড়া করে

আর যৌথ মন্ত্রণায়

কতো কিছু করে,

মানুষের চাওয়ায় হীনতা আছে

দীনতা আছে।

 

মানুষের জীবনে রোদের অন্ধকার আছে,

আবার মানুষের জীবনে আছে-

রোদের শুভ্র-সিন্ধুর উৎসব।

মানুষের মনে মানস-সাধনে আছে

ধুলো আর কাঁটা।

মানুষের দূরবিনে কিছুতেই

সব কিছু ধরা পড়ে না।

 

জ্যোৎস্না যখন গোল হয়ে ঘুরে-

চাঁদকে তখন নিখিল বলে ভুল হয়।

=============================

 

সোনালু ফুলের রেণু

শামীম নওরোজ

 

অলকা, কোথায় যাচ্ছো?  ফেরার সময়

একমুঠো হলুদাভ ঘাস নিয়ে এসো।

ক্ষুধার্তরা মাঝে-মাঝে ঘাস খেয়ে বাঁচে।

আমিয়ো ক্ষুধার্ত। ফিরে এসো তাড়াতাড়ি।

 

এরকম হয়। অনেক কারণ থাকে।

তব্ওু বলতে হয়, প্রেম অযাচিত…

ভালোবাসা দিতে গেলে ভুল হয়ে যাই।

ভুলের ভেতরে থাকে সাপের কু-লী।

 

ভয় হয়। কিছুটা সন্ত্রস্ত। অন্ধকার

নেমে আসে চোখের উপর। এরকম

হয়। ভালোবাসা নিরন্তর অন্ধকার

খোঁজে। আঁধারে চুমুর উজ্জ্বলতা বাড়ে।

 

অলকা ফিরেছে। অপেক্ষা করছে। হাতে

হলুদাভ ঘাস। ভীষণ ক্ষুধার্ত আমি…

 

=============================

 

এক মিনিট

বিদ্যুৎ কুমার দাশ

 

ছিলে তো আমার ছিলে-

আবার নদীর ঘাট পার হলে

নদী থেকে নদী ফেলে

আরেক নদীতে গেলে-

 

চরপড়া ভাটা নদীটিতে কি?

গাঙচিল পাখি উড়ে!

পুকুরে মাছরাঙা দেখেছি-

নদীটির গান অশ্রুত সুরে।

 

ছিলেতো আমার ছিলে-

এক মিনিট কথা হবে কোনদিন

দেখা হলে-

হারানো যৌবনের মেঘের আড়ালে

এক মিনিট দিলেও চলে।

 

============================

 

 

কিছুই হয়নি দেখা

বিজন বেপারী

 

হঠাৎ করে শারীরিক অসুস্থতায়

মনের ব্যাস, ব্যাসার্ধ সমো হয়েছে!

কী যেনো কুগায় মনের অন্তরায়

শরীরের ওজনো কমেছে বিপজ্জনক

হাতে পায়ে তেমন শক্তি নেই,

গায়ের চামড়া তুলতুলে

কেন, এমন হলো?

 

হয়তো বয়স হয়েছে!

চল্লিশ পার হয়েছে দু’বছর আগেই

চোখ,সে তো সিগন্যাল দিয়েছে বছর দশেক আগে

এবার অন্যদের পালা ।

তবে, আমি যে থাকতে চেয়েছি

আরও অনেক অনেক দিন…

দেখতে চেয়েছি মানবতার শেষ কিরকম হয়

সবে তো শুরু হয়েছে, শেষের পালা।

তা কি দেখতে পাবো না?

আমি যে থাকতে চাই

আরও আরও আরও অ-নে-ক দিন

কিছুই হয়নি দেখা আর বাকী আছে অনেক কিছুই লেখা।

 

====================================

 

স্বপ্নবাজ

কাওসার সুলতানা

 

কলমে কলমে ভালোবাসা

ছোটে অলীক ভাবনার ফুলঝুরি

কেমন সেকেলে, আটপৌরে সব।

কলম উঁচিয়ে যুদ্ধের দামামা

আর কি বাজাবে না কেউ?

স্বপ্নবাজেরা কি সব শীতনিদ্রায়?

 

পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ

ঘরে ঘরে বিস্বাদ, ভাঙনের গান –

কর্মক্ষেত্রে অসম বণ্টন

কর্পোরেটের ধাঁধায়

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের প্রাণপাত

ভবিষ্যত ধোঁয়াশা

প্রতি রাতে সমস্যার এই খোলা ঢাকা শহরে

শ্রান্ত, ভগ্নদেহে ঘরে ফেরে

স্বপ্নবাজ ফেরিওয়ালা সব

এলিয়ে পড়ে স্বপ্নহীন নিদ্রায়।

 

বহু শুনেছি মার্কসবাদের তত্ত্ব

সাম্যবাদ আর মুক্তির গান,

বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব থামেনি

থামে না, কারণ আমরা

যুদ্ধ করতে ভুলে গেছি

আমরা ভুলে গেছি-বেঁচে আছি।

 

নগরায়নের থাবায় লুটেরা হানা দেয়

খুবলে খায় তাবৎ সৌন্দর্য,

পাখির ডাক, ধান ক্ষেত, বিল, হাওড়,

হারিয়ে যায় আমার স্রোতস্বিনী নদী।

কালের ইঙ্গিত তাও কি দেখো না

বন্যা, খরা, পাহাড় ধসের মহড়া,

স্রোতের প্রতিকূলে কতকাল আর যুদ্ধ

এখন সময় এগিয়ে যাবার,

কতো আর লেখা যায়

দুঃখ দুর্দশার দলিল?

 

স্বপ্নবাজেরা এবার জাগো

অলীক ভাবনার ডানা ভাঙো,

বোধের কড়া নাড়ো

প্রতিধ্বনি তোলো –

 

আগামিকাল আরেকটি দিন.

বাঁচতে হবে আজকের দিনে

মৃত্যুর পর স্বাধীনতার অনুভব অপ্রাকৃত

 

================================

 

উপমিত উপমা

আনোয়ারুল ইসলাম

 

তোমার আশায় চলছি পথে একলা আমি

হাত ইশারায় তাই কী বুঝি যাচ্ছো ডেকে,

পথ হারিয়ে পাই না খুঁজে পথের দিশা

শিউরে উঠি কষ্ট কাতর আতর মেখে।

 

নদী ছোটে সাগর পানে দু’কূল ভেঙে

সৃষ্টি সুখের স্বপ্ন বোনে অভিসারে,

অন্তহীনা গল্পগাথা দূরের মোহে

নীল পিপাসায় ডুকরে কাঁদে বারেবারে।

 

কেউ জানে না ফুলের আঘাত চোখের কোনে

কেন ঝরায় ঝর্ণাধারা মিষ্টি সুরে,

মেঘ ভাঙা রোদ হঠাৎ যদি বিজলি হানে

নামতাগুলো ভুল হয়ে যায় দিন-দুপুরে।

 

ক্লান্ত পথিক শ্রান্তি ভুলে দাঁড়ায় বাঁকে

এবং নাচায় তর্জনীতে পাপের বোঝা,

সাঁঝেরবেলায় পাখির গানে হৃদয় কাঁপে

আপনজনা চিনতে পারা এতোই সোজা?

 

চাতক চাহে এক ফোঁটা জল তপ্ত খরায়

জীবন মরণ হয় একাকার অনাদরে,

সদাগরী হিসাব নিকাশ কালের ভেলায়

দোদুল দোলায় দেয় যে পাড়ি তেপান্তরে।

 

থাক্ না তোলা ভালোবাসার জয় পরাজয়

সাগর সেচে মুক্তা পেতে নেই কোনো ভয়!

 

======================================

 

 

আকাল

মোহামেদ সাইফুল হাসান

 

বেকারত্বের  কশাঘাতে জীবনকূল ভেঙে ভেঙে বিলীন।

নিবু নিবু রিজিকের উনুন-আগুন,

সামনে এগোতেই দুয়ারের সিঁড়িতে রাখা এক জোড়া

উপহারের রঙিন জুতো হয়ে যায় চুরি!

প্রতিজ্ঞার দৃঢ় বন্ধনও পচে যাওয়া পাটের বস্তার মতো ছিঁড়ে,

আস্তিনে পড়ে থাকা শেষ পয়সাটি চিৎকার করে ওঠে বিনিময়ের ভয়ে,

এখন কেবলই আকাল- জীবিকা ও জীবনসঙ্গিনীর,

সময়ের বিছানায় অন্তর পক্ষাঘাতগ্রস্ত!

===========================

 

বীর বাহাদুর

সুরঞ্জীৎ গাইন

 

রক্ত ঝরানো সেই দিন

নতুন ইতিহাস লিখেছে।

ছাত্র সমাজ হতে বিশ্ব

অনেক কিছু শিখেছে।।

 

বাংলার সন্তান বীর বাহাদুর;

কণ্ঠে তাদের বিপ্লবী সুর।

আঘাত হেনে অন্যায় শাসনের

ঘুম কেড়ে নিয়েছে।।

 

যুগে যুগে প্রাণ করি উৎসর্গ;

স্বদেশে তারা গড়েছে স্বর্গ।

হীনতার কলঙ্ক মুছিয়ে জাতিকে

আলোকিত আগামী দিয়েছে।।

 

 

==============================

 

হেমন্তের আগমনে

আবদুল মোমেন

 

হেমন্ত আসে শীতল আবহে

কুয়াশায় ভেজা ভোর

প্রভাতের রবি স্বাগত জানায়

খুললে ঘরের দোর।

 

সরা মাঠ জুড়ে পাকা ধান ঢুলে

সোনালী লহরি তোলে।

কৃষাণ কৃষাণী হাসি মাখা মুখে

ধান কেটে ঘরে তোলে।

 

গ্রামীণ মেলায় নাগরদোলায়

নবীন প্রবীণ দোলে

জোছনার রাতে কবিগান বসে

কবিয়াল সুর তোলে।

 

নানান স্বাদের মজাদার পিঠা

বানায় সবার ঘরে

নতুন গাছের খেজুরের রস

জমায় সবার  ঘরে।

 

শিউলি কামিনী বকফুল জুই

ছড়ায় মিষ্টি ঘ্রাণ

গাছের ডগায় পাকির কূজন

জুড়ায় সবার প্রাণ।

বিন্দু সিন্ধু

নাজমুল ইসলাম সজীব

 

জন্ম আমার এলে বেলে মাটিতে

একটি ভ্রুণের হাত ধরে

খাঁটিতে আমি তৈরী মাটিতে

ঋণী হয়েই লক্ষ কোটির তরে

অবুঝ হয়ে এসেছি প্রথমে

পিতামাতার ঘরে

অনুভূতির স্তরে কান খাড়া করে

মাটি থেকে পিতামাতার ঘরে

নেত্র থেকে মস্তিস্কের ক্ষেত্রে

স্মৃতি সংরক্ষণে বিচরণ

চোখে কানে মুখে জমে

বর্ণমালার এপিঠ ওপিঠ

হামাগুড়ি গুরুজনের তরে

ভাষা শিক্ষায় একাই ঝড়ে পড়ে

জ্ঞানের এপিঠ ওপিঠ নিয়ে

লড়াই বড়াই করে

প্রাথমিক শিক্ষায় দুর্বলে ঝড়ে

থাকতে হবে সর্ব বিদ্যার তরে

স্নাতক আসে সর্ব বিদ্যার শেষে

কর্মজীবনে স্নাতক যায় নিমিষেই

কর্মেই মানুষ মানুষের তরে

প্রাথমিক শিক্ষা ও কর্মজীবনের মাঝে

চোখের দেখায় জীবন যায় ঝরে।

শৈশবে সু শিক্ষায় ফুল ফুটে

কৈশোরে নীতিবানে যুবক ছুটে

ফল গাছে সমাজ ফুটে ওঠে।

 

 

=====================

ঢাকার যারা আদিবাসী

হোসাইন মোস্তফা

 

চাল-চুলোহীন অনেক মানুষ ঢাকা শহর এসে

দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে কাজকে  ভালোবেসে।

শ্রম সাধনায় কেউ বা গড়ে বাড়ি এবং গাড়ি

দু’হাত দিয়ে ব্যাংকে জমায় টাকা  কাড়ি কাড়ি!

দাপট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ঢাকার অলিগলি

সবাই চিনে চৌধুরী সাব, নাম ছিল যার ছলি।

ঢাকার যারা আদিবাসী কর্মে  অলস থাকে

অনেক বেলা হলেও ঘুমায়  তেল দিয়ে যে নাকে!

চাল- চলনে ফুটানি আর ভাব দেখাবে খানদানি

কাউরে হালায় তোয়াজ করি আমরা এমুন বান্দা নি

লুঙ্গি তুলে হাঁটে যে আর কথা বলে ঢাকাইয়া

হিংসায় মরে জ্বলে পুড়ে থাকে শুধু  তাকাইয়া।

শেষ বয়সে খুঁজে বেড়ায় দারোয়ানেরই চাকরি

ইঁদুর মারা ক্যানভাসার আর, কেউবা বেচে লাকড়ি!

 

=================================

মা, মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী আর জাদুকাটার জল

চন্দনকৃষ্ণ পাল

 

মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী শুরু হয়ে গেলে আমি হাঁটি জাদুকাটা তীরে

শ্রাদ্ধ শান্তি আর মাথা মু-ন শেষে চোখ ভরে জলে

অস্থি বিসর্জন হলো,তার মানে শেষটুকু এ নদীর জলে-

মা শুধু বুকের গভীরে এখন, আর আছে তমালের গাছ

যার পাশে তাঁর ফেলে যাওয়া শরীরটা ছাই হয়েছিলো।

 

ওসব স্মৃতির সাথে আরো কিছু গাছ গাছালীর স্মৃতি

কিছু বা ফলদ,কিছু বা বনজ আর পুষ্প বৃক্ষ আছে

আর কিছু অর্কিডের ঝাড়,তাতে কিছু ফুলের বাহার

সবই আজ ম্রিয়মান,তাঁর কণ্ঠ বাস্তবে তো নেই

নেই আজ তার চলাচল,বনেদি বাড়ির এই পবিত্র মাটিতে

তাঁর ছায়া পড়ে না তো হলুদ বিকেলে।

 

শুধু তার কণ্ঠ বেজে যায় ফেলে যাওয়া সন্তনের কর্ণকুহরে

সেই কণ্ঠ মধুক্ষরা-কেমন আছিস তুই?

সেই কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়

দিগন্তের শেষ সীমানায়…

 

মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী এলে জাদুকাটা তীরে

তোমাকেই খুঁজে ফিরি মা গো, তোমার পদচ্ছাপ খুঁজে ফিরি

তোমার গন্ধ খুঁজি জলের শরীরে।

==========================

 

ভীষণ একা

শারমীন আফরোজ

 

মাঝে মাঝে ভিষন একা লাগে,

ফেসবুকে এতো এতো মানুষ

এদের মাঝে কারো করো সাথে কথাও হয়,

চারপাশের আত্মীয় ,প্রতিবেশী,সন্তান

সব আছে,সবাই আছে

তারপরও–

ভিষন একা লাগে।

নিজেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ মনে হয়।

মনে হয়,কোথাও কেউ নাই।

আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,

আমি পাগলের মতো ফোনে খুঁজতে থাকি

বন্ধুর মতো কাউকে

না,পাইনা।

ঘর থেকে ছুটে বাইরে যাই

খুব চেষ্টা করি কারো নাম মনে করার,

পরেনা মনে।

অবশেষে ক্লান্ত আমি

চোখ বন্ধ করে বিছানা কে আপন করি

ডুবে যাই আরো অন্ধকারে ,নিজের মাঝে।

চোখের জলে তৈরী হয় নদী

সেই নদীতে ভাসি আমি

অতঃপর,সব চলে আগের মতোই।

ঐ আমিটা কে চিনি শুধু আমি।

============================

 

হারানো শৈশব

নজরুল ইসলাম শান্তু

 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে শিশুর মতো হই

ফুলের মতো সতেজ প্রাণে করি গো হই চই

আধো আধো বোলে

বসে মায়ের কোলে

নিত্য পড়ি সকাল বিকেল বর্ণমালার বই;

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে শিশুর মতো হই।

 

ইচ্ছে করে বই জড়িয়ে পাঠশালাতে যাই

বাড়ি ফিরে বাবা-মায়ের আদর সোহাগ পাই

খাল থেকে যাই বিলে

বিল থেকে যাই ঝিলে

দুষ্টুমিতে বুবুর হাতের কান মলাটা খাই;

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে পাঠশালাতে যাই।

 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে গাই নবীনের গান

দেই দু’হাতে লাটাই সুতোয় রঙিন ঘুড়ি টান

ভেঙে নীরবতা

নাচি যথাতথা

দুরন্ত সেই কিশোর মেলায় নিয়ে সতেজ প্রাণ;

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে গাই নবীনের গান।

 

ইচ্ছে করে মেঠো পথে ঘুরি সারা গাঁয়

ভোরের আলোয় শিশির কণা মাখি খালি পায়

মিলে মিশে থাকি

গ্রামের ছবি আঁকি

এক পলকেই যাই হারিয়ে বন বনানির ছায়;

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে ঘুরি সারা গাঁয়।

 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে গড়তে সুখের আসন

যাই হারিয়ে ছেলেবেলায় পেতে মায়ের শাসন

মা যে আমার নাই

মাকে কোথায় পাই

শূন্য যে আজ স্মৃতির চোখে হৃদয় ঝরা ভাষণ;

কোথায় গেলে পাবো বলো আমার মায়ের আসন?

 

 

 

 

 

 

======================

 

 

রিপুচক্র করো বধ

আসাদুজ্জামান খান মুকুল

 

কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মাৎসর্য ও মদ,

রিপুচক্র বলে তারে করে নরে বদ।

এরা ধরে পৈশাচিক বিভীষিকা রূপ,

হৃদয় কুটিরে জ্বালে আগুনের ধুপ!

 

রিপুচক্র বাঁকা পথে মানুষেরে নেয়,

পরিণামে বোধ ক্ষয়ে পশু করে দেয়।

হিতাহিত জ্ঞান টুকু থাকে না যে আর,

তিলেতিলে করে দেয় জীবন অসার।

 

পাপ পথে সদা টানে বহুরূপী সাজে,

কুহকে মাতিয়া মন ধায় বাজে কাজে।

রিপুর তাড়নে ভুলে আপন স্বজন,

রেষে মজে হানাহানি কাড়ে পর ধন।

 

বহিরাঙ্গ হেরি বাড়ে লোভাতুর ভাব,

অহমিকা-পরচর্চা লভে এ স্বভাব।

হৃদয়ের বাসা থেকে প্রীতি করে দূর,

মানবতা ছেড়ে নর হয় যে অসুর।

 

ষড়রিপু করে বধ শুদ্ধ করো মন,

তব পাপে ধরাতলে কাটিবে না ক্ষণ,

বেড়ে যাবে সত্য কর্ম হবে তাতে জয়,

কেটে যাবে দুজাহানে আছে যত ভয়।

 

 

 

 

=====================

 

বিশেষণ

নাসির ওয়াদেন

 

বিশেষণ বেঁচে আছে সৌন্দর্যের ছোঁয়ায়

আমার পেছনে যারা সে,তুমি-র সর্বনাম

আমার পিছনে লাগা

কিছু ঘাস গান গেয়ে করে মাধুকরী

প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে, কি তার নাম?

 

রাত হলে তুমি বাঁচো,গণদাবি নিয়ে বাঁচা

আঁধারে আঁধারে কত কাজ সারি আমি

তোমরা মালুম করতে পারো

পদান্বয়ীর পদ গেলে ঈশ্বর কোথায় থাকে?

ঈশ্বরের ডাক নাম কী? রাখো পাগলামি

 

হয়তো তাই, কিংবা নতুন কিছু আরো, আরো

ভন্ডামী ছেড়ে ঠিক এবার কাজে নেমে পড়ো

==============================

 

মধ্যপ্রাচ্য

এস এম রাকিব

 

উর্বর হয়ে উঠেছে বারুদের উঠোন

পরমাণুর বীজ বুনছে আমেরিকা

প্রত্যেকটা বীজ এক একটা

বিষ বৃক্ষ হয়ে দাঁড়াবে একদিন….

 

বুলেট আর মর্টার শেল  বুকে বেঁধে

বড় হয় প্রত্যেকটা শিশু,

পুষ্টি জোগায় ধর্ম,

আগুন সমুদ্র ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা…

 

গাজা, রাফা এখন শ্মশান

উৎকট লাশের গন্ধ,

লজ্জায় মুখ ঢেকে আছেন

স্বয়ং ঈশ্বর…

 

অসহায় মানুষগুলো খুঁজছে তাকে

আহত ছোট্ট শিশুদের

গগনবিদারী আর্তনাদ!

কোথায় তিনি! ?

আল আকসা, জেরুজালেম, বেথেলহেম

মদিনা অথবা মক্কায়?

 

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি এদের টানেনা

নারী আর পরকাল দিয়ে বাঁধা

এদের বুদ্ধির চৌকাঠ,

কবে যে মানুষ হবে এরা!

===========================

 

নিরক্ষর অনুপ্রাস

এম এ ওয়াজেদ

 

কাতরোক্তির ধ্বনিত শোকগাথা বেড়ে চলে

বেড়ে চলে হ্রাসবৃদ্ধির উপমাহীন অনুদৈর্ঘ্য

প্রতিকারের অযোগ্য প্রকাশিত অন্ধকার

ভুলে যায় শব্দচয়নের আভিজাত্য

সভ্যতার অভ্যুদয়পর্বের কাব্যিক নান্দনিকতা

সমন্বয়বাদের পরিমার্জিত সংস্করণ

শ্লোকের প্রতিচ্ছায়ায় বৈরিতার ভাষান্তরিত স্মৃতিচিহ্ন ।

 

বিবেকহীন প্রেতাত্মা ধ্বংস করে সভ্যতার নিদর্শন

বিস্ফোরিত হয় সাম্রাজ্যবাদের বিষাক্ত সিলিন্ডার

মেঘাবৃত আকাশ শোকাবেগে নিদ্রাহীন উন্মাদ

ভর্ৎসনার হনুমান নির্লজ্জ মানসিক ভারসাম্যহীন

প্রস্তাবনার ধারা উপধারা কৃষ্ণকায় দপ্তরের ঘনফল

মানুষের অধিকার ঔপনিবেশিক কালোবাজারির

প্রলয়ঙ্কর ক্ষিতিধর পর্বতে দাস-বন্দি ।

 

সভ্যতার আকাশ আজ খরস্রোতা অপদেবতার

তীক্ষèধার গিলোটিনে ক্ষতবিক্ষত লাশ ক্রন্দিতা উপকূল

চিররহস্যের স্মরণাতীত স্থায়ী বিচ্ছেদ

নিভিয়ে ফেলে বেদনার প্রদীপ আধার

বরফে জমে থাকা কষ্টের আশ্রয়হীন প্রেমবৃষ্টি

তালাশ করে ছন্দোলয়ের নিরক্ষর অনুপ্রাস ।

 

===========================

 

ছবির দেশ

অপু বড়–য়া

 

দেশটা আমার ছড়ার দেশ

ছন্দ দিয়ে গড়ার দেশ।

পাখির গানে নদীর টানে

ছন্দ জাগায় প্রাণে প্রাণে।

 

বাঁশির সুরে মনটা হারায়

ছন্দ আসে মেঘের ধারায়।

দেশটা আমার ছবির দেশ

সাধক বাউল কবির দেশ।

 

দৃষ্টিজুড়ে সাগর বন

সৃষ্টিসুখে নাচে মন।

দূরের পাহাড় ডাকলে , আয়-

ডানপিটেরা হাত বাড়ায়।

 

হাওড়-বাওর ঝরনা- ঝিল

পাখনা মেলে শঙ্খচিল।

সেইতো কোনো রুপের শেষ

কোথায় আছে এমন দেশ।

 

 

 

 

=============================

অতঃপর

সারমিন চৌধুরী

 

যাদের চোখের ঘুম উবে গেছে

তাদের মনের দেয়ালে বিষের বাণের মতই

অন্ধকার নেচে নেচে ওঠে কোনো পৈশাচিক উল্লাসে

জীবন আর মৃত্যু হিসেবের গিঁট খুলে বসে আয়ু

বেদনার প্রদীপ হয়ে মিটমিটিয়ে জ্বলছে ওই চাঁদ;

চোখের কার্ণিশে হাসছে জোছনা দুঃখের ঝড়ে

ছায়ামগ্ন মেঘ আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে করুণারূপে।

পদে পদে জীবন্ত বিড়ম্বনা ওঁত পেতে থাকে শিকারে।

দুর্ভোগ সচক্ষে দেখে কিনারা খুঁজে নিলেও,

নিষ্পাপ প্রেম পাষাণের বুকে মুষড়ে থাকে আশায়

অতঃপর কেঁপে উঠা ঠোঁটে গুঁজে দেয় যন্ত্রণার তির

বৃথা আকাঙ্ক্ষার আস্ফালন নিয়ে ধুঁকে জীবন।

তবুও, একতারার ন্যায় বাজে প্রেম বাউল মনে

রাতবিরাতে গুনগুনিয়ে ওঠে মরমীয়া সুর

বুক হাতড়ালে দেখা মেলে শুধু মুঠোমুঠো ছাই

শ্মশানের মতো জ্বলছে অবিরত নির্বিকারে।

যে আশা দিয়ে কামনার দানা ছিটিয়ে গেলো

কত পরিকল্পিতভাবে সে প্রণয়ের করতলে

লুকিয়ে রেখেছিলো পিশাচের শীৎকার।

 

====================

ভাবিনি কখনও

আরিফ মোর্শেদ

 

ভাবিনি অন্য কারো হাত ধরবে

তবুও দৃশ্যটা দেখতে হল

আমিও প্রেমিক ছিলাম বটে

কাঁদতে হয়েছে অশ্রুসিক্ত নয়নে!

 

তুমুল প্রেমের গাঢ় স্মৃতি

আজও গাঁথা আছে বুকে,

তুমি আজ মহাসুখী, আমার

ঘুম নেই দুটি আঁখিপাতে!

 

নেতার প্রতিশ্রুতি শুনে যেমন

জনগণ দেয় ভোট,

আমারও অনুমতি ছিল

ছোঁয়ার নরোম রাঙা ঠোঁট!

 

জয়ী হবার পর নেতা যেমন

ভুলে যায় প্রতিশ্রুতির কথা,

ভালোবেসে তার কি ঠেকা-

আমার একটি কথা রাখা!

 

সহজ ছিল না তাকে ছাড়া

বেঁচে থাকা, তবুও বাঁচতে হয়

আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল

যা অঙ্কুরেই বিনষ্ট!

 

সহজ ছিল না এক জীবনের

হিসাব, কতটুকুই বা পেলাম

তিন শব্দের জীবন দিয়ে

দুই শব্দের মৃত্যু নিলাম!

 

==========================

শীতের আগমনে

স্বর্ণা তালুকদার

 

শীতের হিমেল  হাওয়া এলো হেমন্তের বিদায়ে

শুকনো  পাতার  মড়মড়ে  আওয়াজে

প্রকৃতির এমন বৈরী রূপ প্রকাশে

বুনো হাঁসরা উড়ে নীল আকাশে

অথিতি পাখিরা উত্তরে আসে

আনন্দ আর অভিযানের প্রত্যাশাতে

বাতাস  শুধায় বিস্ময়ে কিসের রহস্যে

ধরণীতে প্রণয় যে জেগেছে

প্রকৃতি বদলায়  অল্প  পরিসরেই

হোক না বিধাতার সৃষ্টির  উৎস

আমি আর তুমিও  জানি না

সৃষ্টির এই অজানা রহস্য

পিঠাপুলির  ধুম জেগেছে

চড়–ইভাতির আমেজে ছুটিতে খুশি জমেছে।

 

 

====================

বিড়ম্বনা আর সয়না

পরী ফিরোজা

 

“নীল আকাশের তারা”,

“সবুজ বনের ধারা”,

“নীড় হারা”,

“পাগল পারা”।

এইসব নামের আইডি যারা?

দয়া করে, আমারে,

ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাবেন না তারা।

 

নীল পদ্ম,

জানি, নাম গুলো সব ছদ্ম।

যদি, করতে পারি জব্দ,

পুলিশের কাছে শুনবে, গুতানীর শব্দ।

 

প্রফাইলে নিজের ছবি নাই,

কোতুন, টোকাই টোকাই ,

বাঘ, সিংহ, হরিণ, বিলাই।

ছবিতে পোস্ট দেয় লাগাই,

বাজায়, ভিমরতির সানাই।

মনটায় কয়, ধরি কিলাই ,

এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই।

 

আবার মাঝে মধ্যে, বিদেশিদের ছবি লাগায়,

বেশি বেশি বড় লোক সাজতে চায়।

লোভিদের ভড়কায়,

আবার অনেককে, ফেলে বে-কায়দায়।

 

কি করা যায় এগুলোরে ?

ধোলাই দেবো কি প্রকারে?

জনগন যেন, দেয় রায়,

আমি আছি সেই আশায়।

হা হা হা হা, হি হি হি হি,

খবর আছে নি?

 

===============================

 

শুকনো পাতা

টিপলু বড়ুয়া

 

জীবনটা…

ঠিক শুকনো পাতার মতো

ঝরে পড়ে সময়ে অসময়ে।

শিশুকালে সবুজ আবরণে

¯িœগ্ধ পাতারা হাওয়ায় দোলে।

যৌবণের ছোঁয়ায় সবুজ পাতারা

একে অপরের সাথে প্রেমের গল্প বলে।

 

কিন্তু একদিন…

ভবলীলা সাঙ্গ করে

সবুজ পাতারাও ঝরে পড়ে,

শাখা-প্রশাখার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে

মাটিতেই লুটায়ে পড়ে।

 

জীবনটা…

ঠিক শুকনো পাতার মতো

ঝরে পড়ে সময়ে অসময়ে।

সবুজ রঙে রঞ্জিত দেহ ছেড়ে

ছুটে চলে আপন ঘরে।

 

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।