এখন সময়:দুপুর ১:১৮- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১:১৮- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

পেন-ফ্রেন্ড

বিশ্বজিৎ মণ্ডল

 

“উই দেখুন, আরো একটা ডলফিন। দেখুন, দেখুন। যাঃ, ডুবে গেল তো।” রতন পদ্মার জলে ডলফিন আবিষ্কারের আনন্দে চিৎকার করে উঠলো।

— ‘কোথায়? আমার চোখে পড়ছে না তো!’ আমার চোখে মুখে হা-হুতাশ ছড়িয়ে তোলপাড় জলের দিকে তাকালাম। দুরন্ত স্রোত বয়ে যাচ্ছে। জলে একবার গড়িয়ে গেলে রক্ষে নেই কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে সচরাচর পদ্মা উপভোগ করা যায় না, স্থানীয় ছেলে রতনের দৌলতে অনেক বলে কয়ে পাহারাদারদের রাজি করানো হয়েছে। তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা ওপারে যাওয়ার অনুমতি নেই। অবশ্য ফাঁকা স্থানের জন্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বহমান পদ্মার রূপ। রতন জানালো এখন তো অনেকটা শান্ত বর্ষার সময় এলে দেখবেন ভয়ঙ্কর রূপ। জল বেড়ে যায়। এইসব পার দেখা যায় না। এই প্রবল ঢেউ সরিয়ে কি করে যে মেছেলরা ইলিশ শিকার করে ভাবতেই মগজ শিউড়ে ওঠে। বি এস এফ জওয়ান সময় বেঁধে দিয়েছে দশ মিনিট। হেটেই যেতে যেতে হবে। ইধার গুমনা মানা হ্যায়। আমরা ফিরতে চাই মনটা নিমগ্নতা চাইলেও উপায় নেই। বিউটি বলে দিয়েছে শুভদা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। মায়ের রান্না হয়ে যাবে। রতনকে বললাম, চলো ভাই দেখা তো হলো। এবার বাড়ি ফেরা যাক। তাছাড়া রোদ বেড়ে যাচ্ছে। একটা টুকটুক গাড়ি ধরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাড়ি মানে আমার বাড়ি নয় বিউটিদের বাড়ি। ভাদুরিয়াপাড়া। জলঙ্গী থানার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। ওর আমন্ত্রণে এখানে আসা। বিউটি কেন লিখেছিল শুভ্রদা একদিন আসুন ভালো লাগবে। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ভাদুরিয়া পাড়ায় আসা। বিউটি আমার পেন ফ্রেন্ড। পত্রমিতালী পরিচয় ও তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল, অদ্ভুতভাবে পত্র মিতালীর সেতু গড়ে উঠেছিল।

একটা কম্পিউটার সেন্টারে বাতিল ফর্মে ওর নাম ঠিকানা পেয়েছিলাম। মেয়েটি অক্ষরের পূর্ণ বায়োডাটা পেয়ে গেছিলাম। বাতিল ফর্মটিতে। পত্রমিতালির নেশাখোর মানুষ আমি। ওই ঠিকানা ধরে প্রথমে একটি পোস্টকার্ড ছাড়লাম পত্রমিতালির আমন্ত্রণে। দিন বিশেক পরেই জবাব এল। পত্রমিতালির আমন্ত্রণে সে সাড়া দিয়েছে। ব্যস শুরু হয়ে গেল চিঠি চালাচালি। কত যে চিঠি লিখেছি ওকে। বান্ধবী বলে একটু ওর ভয় করত। মা যদি টের পান তবে মুন্ডু গুঁড়ো করে দেবেন। ভয়ে ভয়ে ওই অনুভূতিকে বাতিল করে ভাইবোনের আদান-প্রদানের খেলা। পিওন কাকাকে গোপনে বলে রেখেছিলাম মায়ের হাতে আমার কোন চিঠি যেন না দেয়। পিওন কাকা কথা রেখেছিলেন।

আমার পত্রমিতালির নেশাটা প্রবল হয়ে উঠছিল। পত্র পাঠের সাথে প্রেম প্রেম খেলা করব কিংবা অবাক প্রেমের গল্প সাজাব এমন বাসনা ছিল না। চিঠি লেখার একটা পাগলামি চেপে বসেছিল। মনের অন্তঃপুরে পদ্মা দেখার বাসনা ছিল। যদি নদী প্রান্তের কোনো স্বজন কোনদিন মিলে যায় তবে অবশ্যই যাবো এমন ভাবনাটা হৃদয়ের কোটরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। স্বপ্নপূরণের মত করে পত্র বান্ধবী মিলে গেল। বিউটি। বিউটি আমার সমবয়সী নয়। আমার চেয়ে আট বছরের ছোট। ওকে আমি দাদা বলতে ডাকতে বলেছি। ওর নিজের কোন দাদা নেই  সম্ভবত ওর মা আমাকে পেয়ে পাতানো ছেলে বানিয়ে ফেললেন। ওর বাবার ছিল মুদির দোকান। সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বেশ চালু দোকান। বেশ বিক্রিবাট্টা হয়। ভদ্রলোক দিলখোলা মানুষ। নির্দেশিকা মতো বাস থেকে নামলে তিনি আমাকে রিসিভ করতে এসেছিলেন। উনার বয়সটা একটু বেশি। আমি বিউটির বাবা বলে মেলাতে পারিনি।

বাড়ি পৌঁছে বুঝে গেছিলাম ,এমন অতিথিবৎসল পরিবারের পরিচয়। গ্রাম্য এলাকা। প্রতিবেশীরা আমাকে ওদের বাড়িতে ঢুকতে দেখেই ইতিউতি মারছিল। সন্দেহ করছিল আমাকে দেখে হয়ত কোন বৈবাহিক সম্পর্কের গন্ধ খুঁজছিল ওরা। কিন্তু কোন বিয়ের প্রসঙ্গ ওঠার আগেই আমি ও পর্ব সমাপ্ত করে দিয়েছিলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম বাবা-মা আছেন। ছোট ভাই আছে। বোন দিদি বলে কেউ নেই। আমি সদ্য শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান করেছি। বিয়ে এখন বছর তিনেক করছি না। ওরা সবাই মুখ টিপে হেসেছিল। লজ্জা পেয়েছিলাম ওদের হাসিতে। ইচ্ছে ছিল বিউটিকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মার ধার বেড়াতে যাব। কিন্তু হয়নি। মাসিমা কোন ভনিতা না করে বলেছেন পাড়াগাঁ বাবা। তোমরা দুজন গেলে কথা উঠবে। তাই রতনের সঙ্গে যাও। আমি লজ্জা পেয়েছিলাম বোকামিতে। ভুলে গেছিলাম নিজের অবস্থানের কথা। আমি ভুলে গেছিলাম, আমি বিউটির নিজের কোনো দাদা নই, ওদের অতিথি। বিউটির পেন ফ্রেন্ড। এটা খারাপ দেখানোই স্বাভাবিক। নিজেকে শুধরে নিলাম। বিষয়টাকে স্বাভাবিক করে রতনের সঙ্গে গিয়েছিলাম সময় মত ফিরেও এসেছি।

এখন মফস্বলের বিকেলে ভাদুরিয়া পাড়া গ্রাম হলেও পাশের গ্রাম ফরিদপুরে বিকেলে বেশ বাজার বসে। বাজারটা সাজানো-গোছানো নয় তবে নানাবিধ সম্ভারে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। রতনের কথাতেই আবার ওর সঙ্গে চলেছি। রতনের কথায় এটা পয়সাওয়ালা লোকেদের বাজার। চেহারা দেহাতি হলেও বুক পকেটে গান্ধী মার্কা লুকানো আছে। ওদের মধ্যে পাচারের কাজে বেশি লিপ্ত থাকে চোরাকারবারীরা। লবণ, কফ সিরাপ, গোরু আরো কত জিনিস পাচার করা হয়। রতন জানালো এখন বর্ডার সিল করে দেওয়া হয়েছে তাই ব্যবসা ধান্দা পানি বন্ধ। তার মধ্যে কিছু কিছু চোরাচালানকারী আছে এদের শনাক্ত করা নাকি কষ্টকর।

বিকেলে বাজারটায় লোকজন থৈথৈ করছে। মোটর দৌরাত্ম্য বড্ড বেশি এটা নাকি কালোবাজারি টাকার অবস্থান। বেশ কয়েকবার সংবাদ পত্রে পড়েছি– এইসব সীমানার খবর। মিটিং এর সঙ্গে কখনো গোলাগুলি। কখনোবা জওয়ানদের গুলিতে পাচারকারীর মৃত্যু। চোরাকারবারের এমন অবৈধ কাজে যুক্ত মানুষদেরও যোগাযোগ আছে। ব্যথা-বেদনায় আবার দিন কাটে তাদের জীবনেও খেলা করে। তবুও এত বিপর্যয়। নিজেই বিরক্ত হয়ে যায় আমি এসব কি প্রসঙ্গ নিয়ে ভাবছি এখানে আমি ঘুরতে এসেছি সুতরাং ঘুরাটাই আমার সমীচীন কাজ। রতন বড্ড মিশুকে ছেলে আমার চেয়ে বয়সে নবীন কিন্তু মনে হচ্ছে অভিজ্ঞতা প্রাচীন ও বিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র দেশদুনিয়ার হাল-হকিকত সম্পর্কে খোঁজ রাখে। রতনকে ভালো লাগছে আমার, ওর সাহস ও আমার বেড়াতে আসাটাকে সার্থক করবে।

–শুভদা, এখান থেকে সরে পড়ুন। মারামারি শুরু হয়েছে। এখনই কাটাকাটি অবস্থা হয়ে যাবে। রতন আমাকে প্রায় টেনে নিয়ে গেল।

বাজারের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে গেছে। একে অপরকে শাসাচ্ছে। রতন বোঝালো ওরা দুটি আলাদা আলাদা গ্যাঙ্গের লোক। পাওনা নিয়ে কথা কাটাকাটি। এসব থেকে নাকি খুব সহজেই রক্তারক্তি হয়ে উঠতে পারে। দু’পক্ষের কাছে চোরা আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। এ বাজারে এমন চলে। ওরা নির্ভয়ে ঘোরাঘুরি করে। এমন একটি উটকো বিপদ দেখে মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। মানুষের মধ্যে এত দুর্বোধ্যতা দেখছি ভেতরটা হু হু করে উঠছে। রতন বোঝানোর আগে শুধু গ্যাঙের সঙ্গে মস্তানদের মধ্যে এসব লড়াই হতো। এখন রংটা বদলে গেছে। ঐসব গ্যাঙস্টারটা এখন কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের আশ্রিত। সুতরাং রাজনীতি মিলেমিশে ক্ষমতা দখলের লড়াইটা তুমুল হয়ে উঠেছে আমি কখনও ওমুখো হই নি। রাজনীতি বিষয়টাকে কোনদিন পাত্তা দিইনি। বাবাও পছন্দ করেন না। আমাদের ব্যবসায়ী কোন দলের পতাকা তলে গিয়ে কোনোদিন দাঁড়ায় নি।

বাড়ি ফিরে বিউটিকে বললাম ঘটনাটা। বিউটি বলল, ওখান থেকে সরে এসে খুব ভালো করেছেন শুভদা। না হলে কোথাকার ছাই কোথায় যে উড়ে গিয়ে পড়ে তার ঠিক নেই। সন্ধে হয়ে গেছে। আপনি ঘরে গিয়ে বসুন, আমি আসছি। গল্প করা যাবে। আমিও সেটাই চাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আজ রাত্রিযাপন করবো বিউটিদের বাড়ি। আগামীকাল বাড়ি ফেরা।

কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে বিউটি ঘরে এলো। বিউটিকে আজই আমার প্রথম দেখা। সেও আমাকে আজ প্রথম দেখলো পত্রমিতালীতে বিস্তারিত পরিচয় দিলেও কেউ কাউকে দেখিনি। জানিনা আমাকে দাদা হিসাবে গ্রহণ করে কতটা খুশি। তবে ওর মা-বাবা তো বেজায় খুশি উৎফুল্লতা প্রকাশ করেছেন। রাতে বিউটির পরিবারের সকলের সঙ্গে কমবেশি কথা হলো। পাড়াগাঁয়ের রাত নির্দিষ্ট সময়ে অতলে তলিয়ে গেলাম কখন সেটা কেউ বুঝতে পারিনি।

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল, গল্পকার, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।