এখন সময়:দুপুর ১২:২৯- আজ: সোমবার-৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:২৯- আজ: সোমবার
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

বখশিশ

হানিফ ওয়াহিদ

 

রতন সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন, তার সামনের চেয়ারে বসে আছেন জলিল সাহেব যিনি একসময় তার অধঃস্তন ছিলেন। ছয় মাস আগেও জলিল সাহেবের চেয়ারে তিনি বসতেন। তিনি রিটায়ার করার পর জলিল সাহেব প্রমোশন পেয়ে এই চেয়ারে বসেছেন।

আগে জলিল তাকে স্যার বলে ডাকতো, এখন নাম ধরে ডাকছে।

তিনি সারাজীবন সৎ জীবনযাপন করেছেন, এক টাকাও ঘুষ নেন নাই। কখনো কাউকে ঘুষ দেনও নাই। ছেলেমেয়েদেরও নিজের আদর্শে মানুষ করেছেন। সারাজীবন কষ্ট করে চলেছেন।

পেনশনের টাকাটা পেলে এবছর  তিনি হজ্জে যাবেন বলে নিয়ত করেছেন। টাকা জমা দেওয়ার তারিখ শেষ হয়ে যাচ্ছে।  জলিল সাহেব একটা সিগনেচার দিলেই তিনি টাকাটা তুলতে পারেন। আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে কয়েকমাস যাবৎ তিনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ঘুরাচ্ছেন।

 

অসুস্থ শরীরে  প্রতি সপ্তাহে একবার এসে ধর্না দিতে হচ্ছে।

তাকে একদিন পাওয়া যায় তো আরেকদিন পাওয়া যায় না।  আজকে পাওয়া গেছে।

রতন সাহেব জলিল সাহেবকে আজকে  চেপে ধরেছেন। বিনীত গলায় অনুরোধ করলেন, আজকেই সিগনেচারটা দিয়ে দিতে।  জলিল সাহেব কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন, আহা, রতন ভাই, এতো অস্থির হচ্ছেন কেন? এতো অস্থির হলে চলে? আপনার টাকা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।  অফিসের একটা সিস্টেম তো আছে, নাকি? যোহর নামাজের সময় চলে যাচ্ছে, চলেন আগে নামাজটা সেরে আসি। দুনিয়ার কাজ আগে, না নামাজ আগে বলেন তো? শুধু দুনিয়ার কাজ করলে হবে?  আখেরাতের কাজ করতে হবে না? পাইবেন তো সেই সাড়ে তিন হাত জায়গা। বলতে বলতে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।

অগত্যা রতন সাহেবকে উঠে দাঁড়াতে হলো। তিনি ভেবেছিলেন বাসায় গিয়ে গোসল সেরে নামাজ আদায় করবেন।

চলেন রতন ভাই, আগে দুই ভাই মিলে নামাজ সেরে আসি, পরে অন্য কাজ। এতো টাকা টাকা করেন কেন ভাই, টাকা নিয়ে কবরে যেতে পারবেন ? এই চিন্তা বাদ দেন তো ভাই।

জলিল সাহেব রতন সাহেবকে এক প্রকার টেনে নিয়ে গেলেন মসজিদের দিকে।  বেশ সময় নিয়ে ওজু করলেন, মেহেদী লাগানো দাড়ি সুন্দর করে খেলান করলেন, তারপর আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে মসজিদে ঢুকলেন।

জলিল সাহেব বেশ সময় নিয়ে নামাজ আদায় করলেন, তারপর তসবিহ হাতে নিয়ে চোখ বুজে  কিছুক্ষণ দোয়া দরুদ পাঠ করলেন । রতন সাহেব নামাজ শেষ করে তার অপেক্ষায় বসে রইলেন।

দু’জনে আবার অফিসে ফিরে এসেছেন। জলিল সাহেব পিয়নকে বললেন দুই কাপ চা পাঠিয়ে দিতে। তারপর রতন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভাবছি আগামী বছর হজ্জটা করে ফেলবো।  টাকা পয়সা শর্ট যাচ্ছে ভাই।  বুঝেন তো, নতুন বাড়ি করায় হাত দিয়েছি,এদিকে আবার আরেক ঝামেলা। আমি একটা মসজিদের সভাপতি, মসজিদ কমিটি আমার কাছে একটা নতুন এসি চেয়েছে। না করি কীভাবে বলেন তো রতন ভাই,,,

রতন সাহেব কী বলবেন বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলেন।

লাঞ্চের কথা বলি রতন ভাই?  আসেন দুই ভাই একসাথে খাবার খাই,,,,

 

রতন সাহেব কুণ্ঠিত গলায় বললেন, না ভাই, বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করবো, সবাই আমার জন্য বাসায় অপেক্ষা করছে। আপনার সিগনেচার পেলেই,,,

জলিল সাহেব কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, রতন ভাই, আপনাদের সময় এখন আর নাই, সময় পাল্টে গেছে। চক্ষুলজ্জা উঠে গেলে যা হয় আর কী!

এই কথা কেন বলছেন ভাই?

আর বলবেন না ভাই,  অফিসের সবাই আশা করে আছে আপনি তাদেরকে একটু বখশিশ টখশিশের ব্যবস্থা করবেন। আমি অবশ্য তাদেরকে বকে দিয়েছি,সবার সাথে কি আপনার তুলনা চলে? সবাইকে একমাপে দেখলে হবে?

ঠিক আছে ভাই, একসময় ওরা তো আমার আপনজন ছিল।  আমি না হয় ওদেরকে হাজার তিনেক টাকা মিষ্টি খেতে,,,,, বলেই তিনি পকেটে হাত দেন টাকা বের করার জন্য।

জলিল সাহেব লাফিয়ে উঠেন, ছিঃ ছিঃ ভাই, কী লজ্জার কথা! আপনাকে বখশিশ  দিয়ে কাজ করতে হবে কেন, আমি আছি না! আপনাকে এক টাকাও বখশিশ  দিতে হবে না।  আপনি আমার ভাই না! এক কাজ করতে পারেন, আপনি তো জানেন আমার ছোট নাতিটা চকলেট খেতে পছন্দ করে, ওর জন্য বিশটা চকলেট কিনে নিয়ে আসেন, ওতেই হয়ে যাবে। আমি আপনার ফাইলে সিগনেচার দিয়ে রাখছি।

রতন সাহেব খুশি মনে  বেরিয়ে গিয়ে বাইরের একটা দোকান থেকে বিদেশী ব্রান্ডের  বিশটা ‘ম্যাক্স ব্রিনার’ এবং পাচি’  চকলেট নিয়ে এলেন। এগুলো বেশ দামী এবং সুস্বাদু চকলেট।

চকলেট দেখেই জলিল সাহেব হায় হায়!  করে উঠলেন। করছেন কী রতন ভাই!  এগুলো তো ইহুদি পণ্য!  উহু, এসব পণ্য তো আমি নাতিকে খেতে দিবো না। আমি এবং আমার পরিবার  ইহুদি পণ্য বয়কট করে চলি তা আপনি জানেন না? আপনারও উচিত এসব পণ্য বয়কট করে চলা।

রতন সাহেব লজ্জিত  গলায় বললেন, তাহলে? এনেই যখন পড়েছি,,,,

এই কথা বললে তো হবে না রতন ভাই। এসব হারামিদের পণ্য তো আমি ঘরে ঢুকাবো না, আল্লাহ পাক নারাজ হবেন।  আপনি এক কাজ করেন, মোড়ে যে ‘বিসমিল্লাহ কনফেকশনারি’ দোকানটা আছে, ওখানে গিয়ে বলেন জলিল সাহেব বিশটা দেশি চকলেট দিতে বলছে। আমার নাম বললেই আপনাকে দেশি ব্রান্ডের চকলেট দিয়ে দিবে।

রতন সাহেব বিসমিল্লাহ কনফেকশনারি দোকানে গিয়ে জলিল সাহেবের নাম বলে বিশটা চকলেট চাইলেন।  দোকানের ছেলেটা বিশটা চকলেট রতন সাহেবকে দিলেন।

দাম কতো ভাই?

আড়ালে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে ছেলেটা  বললো, আপনাকে জলিল মামা পাঠাইছে তো?

রতন সাহেব বললেন, জি।

প্রতিটি চকলেটের দাম পাঁচ হাজার টাকা। আপনি এক লাখ টাকা দিন।

রতন সাহেব অবাক গলায় বললেন, কী বলেন আপনি!  এই চকলেট তো দুই টাকা পিস। আমি আমার নাতির জন্য কিনি তো,,,

দোকানের ছেলেটা আবারও ফিসফিস করে বললো, বাইরের লোকের জন্য এই চকলেট দুই টাকা পিস ঠিকই আছে। যারা ফাইল নিতে আসে তাদের  জন্য পাঁচ হাজার। টাকা দিবেন না, ফাইল পাবেন না।

রতন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, ফাইলের কথা আপনি জানেন কীভাবে?

 

 

যারা ফাইল নিতে আসে তারা সবাই এখান থেকে চকলেট কিনে নিয়ে যায়। ফাইলের ওজন অনুযায়ী চকলেট।   এই দোকানটা জলিল মামার। আমি তার ভাগিনা।  মামা সব বলে রেখেছেন। চকলেট না কিনলে ফাইল পাবেন না।

রতন সাহেব কী করবেন ভেবে পেলেন না, ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন। তার প্রেসার বেড়ে গেছে, চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। সারাজীবন তিনি ঘুষ দেওয়া নেওয়াকে ঘৃণার চোখে দেখে এসেছেন। আজকে কিনা তার অফিসে তাকেই ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে!

অনেকক্ষণ বসে থেকে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, তারপর ক্লান্ত শরীরে হাঁটা শুরু করলেন ব্যাংকের দিকে। চেক বই পাঞ্জাবির পকেটে আছে।

খেয়ে না খেয়ে ব্যাংকে কিছু টাকা জমিয়েছেন মেয়ের বিয়ের জন্য। আজই সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা উঠাতে হবে।

 

হানিফ ওয়াহিদ, রম্যসাহিত্যিক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।