এখন সময়:দুপুর ১২:২৮- আজ: সোমবার-৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:২৮- আজ: সোমবার
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

বাঁশি: চিরন্তন বাংলার গৌরব ও  ঐতিহ্যের নিজস্ব সুর- একাদশ পর্ব

নাজমুল টিটো

 

 

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)

 

(২৭১)

“ঘরের মায়া ঘরের বাইরে করুক রূপরচনা, বাইরের রসিক আনুক তার ফুলের মালা। ঘরের বাণী ঘরের বাইরে বাজাক বাঁশি, বাইরের উদাসী এসে দাঁড়াক তোমার আঙিনায়।”

[৩২, স্ফুলিঙ্গ]

(২৭২)

“বাজে নিশীথের নীরব ছন্দে

বিশ্বকবির দান

আঁধার-বাঁশির রন্ধ্রে রন্ধে

তারার বহ্নিগান!”

[৭৮, স্ফুলিঙ্গ]

(২৭৩)

“ওই শুনি পথে পথে

হৈ হৈ ডাক,

বংশীর সুরে তালে

বাজে ঢোল ঢাক।”

[উৎসব, চিত্রবিচিত্র]

(২৭৪)

“খেয়াঘাটে ওঠে গান

অশ্বথতলে,

 

 

 

 

পান্থ বাজায়ে বাঁশি

আনমনে চলে।

ধায় সে বংশীরব

বহুদূর গাঁয়।”

[ফাল্গুন, চিত্রবিচিত্র]

 

# রূপান্তর-

 

বিশ্বকবির সাহিত্যচর্চায় অনুবাদকর্ম ছাড়াও তাঁর রূপান্তরকর্ম একটি বড় জায়গা দখল করে আছে। তাঁর নিপুন হাতে রূপান্তর কর্ম ছিল বেদ সংহিতা, উপনিষৎ, ধম্মপদ, যুগ্মগাথা, অল্পমাধবগগো, চিত্তবগগো, পুপফবগগো, মহাভারতের মনুসংহিতার অংশবিশেষ, কালিদাস-ভবভূতি, ভট্টনারায়ণ-বরবুনি প্রমুখের লেখা, পালি-প্রাকৃত কবিতা, মরমী কবি তুকারাম, মধ্যযুগের হিন্দি কবিতা, শিখ ভজন, বিদ্যাপতির মৈথিলী রচনা, সংস্কৃত, গুরুমুখী ও মরাঠি রচনার থেকে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষা থেকে অনূদিত বা রূপান্তরিত রবীন্দ্রনাথের বিক্ষিপ্ত কবিতাবলি মূল-সহ রূপান্তর নামে সংকলিত হয়েই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়, ২৫ বৈশাখ ১৩৭২ বঙ্গাব্দে। অষ্টাবিংশ খণ্ড রচনাবলীতে রূপান্তর স্বতন্ত্র গ্রন্থের সকল অনুবাদ যে পারম্পর্যে বিন্যস্ত ও মুদ্রিত হয়েছিল, সে অনুক্রমেই সংকলিত হয়েছে। বর্তমান ঐতিহ্য সংস্করণে বিভিন্ন বিভাগের মূল এবং তাদের অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত হয়েছে। এইসব অনূদিত কিংবা রূপান্তরিত সাহিত্যেও বিশ্বকবি তাঁর অতি প্রিয় বাঁশিকে বিভিন্ন প্রতিশব্দের মাধ্যমে নানান প্রতীকি রূপে ব্যবহার করেছেন।

 

(২৭৫)

“বাদৈ বাদৈ রম্যবীণা বাদে-

অমল কমল বিচ

উজল রজনী বিচ

কাজর ঘন বিচ

নিশ আধিয়ারা বিচ

বীণ রণন সুনায়ে।

বাদৈ বাদৈ রম্যবীণা বাদৈ \”

 

“বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে- অমলকমল-মাঝে, জ্যোৎস্নারজনী-মাঝে, কাজলঘন-মাঝে, নিশি-আঁধার-মাঝে, কুসুমসুরভি-মাঝে বীণরণন শুনি যে

প্রেমে প্রেমে বাজে \”

[শিখ ভজন, হিন্দী : মধ্যযুগ]

 

ক্ষিতিমোহন সেনের কাছ থেকে মধ্যযুগীয় এই হিন্দী মূল ভজনটি রবীন্দ্রনাথ পেয়ে তার অবলম্বনে বাংলায় গান রচনা করেন যার শব্দ ও সুরের দ্যোতনায় নন্দিত হয়ে ওঠে। অমলকমল, কাজলঘন, নিশি-আঁধার, জ্যোৎস্নারজনী, কুসুমসুরভি এই সবকিছুর মাঝে মুরলির সুরে যে কম্পন শুনা যায় তা যেন প্রেমে প্রেমে বাজে।

 

 

(২৭৬)

“এক অধর কৈ নীবি নিরোপলি

দু পুনি তীনি ন হোঈ।

কুচ জুগ পাঁচ পাঁচ শশি উগল

কি লয় ধরথি ধনি গোঈ \

আকুল অলপ বেয়াকুল লোচন

আঁতর পূরল নীরে।

মনমথি মীন বনসি লয় বেধল

দেহ দসো দিশি ফীরে \

ভনহি বিদ্যাপতি দুহুক মদিত মন

মধুকর লোভিত কেলী।

অসহ সহথি কত কোমল কামিনী

জামিনি জিব দয় গেলী \ ২৯

 

“এক হাত অধরে, এক হাত নীবিতে,

কিন্তু তিন হাত তো নেই-

কুচযুগে যে পাঁচটা পাঁচটা

শশী উদিত হই[ল]

কী দিয়ে ধনী সেটা গোপন করে!

অল্প আকুল, ব্যাকুল লোচনান্তর

নীরে [পূরিল]

মন্মথ মীনকে বংশী দিয়া বিঁধিল,

তাহারি…] দশ দিকে ফিরিতেছে।

কোমল কামিনী অসহ কত সয়- যামিনী জীবন দিয়া গেল। ২৯

[মৈথিলী: বিদ্যাপতি-৬]

 

 

কবিতা-

 

(২৭৭)

‘অভিলাষ’ কবিতার ৩, ৪ ও ১৬ সংখ্যক স্তবকে কবি বাঁশরির বন্দনায় বলেন, বিমোহিত বাঁশরির স্বর অনুসরণ করে বোধহীন মানবের দল পর্বত, মরুপথ, হিমক্ষেত্র, জনশূন্য কানন, প্রান্তর এমনকি সাগরের তরঙ্গ তুচ্ছ করে অগ্রসর হতে হতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মুক্তার আশায় ডুবে মরে পাপের সাগরে।

 

(৩)

“তোমার বাঁশরি স্বরে বিমোহিত মন-

মানবেরা, ওই স্বর লক্ষ্য করি হায়,

যত অগ্রসর হয় ততই যেমন

কোথায় বাজিছে তাহা বুঝিতে না পারে।”

 

(৮)

“হিমক্ষেত্র, জনশূন্য কানন, প্রান্তর,

চলিল সকল বাধা করি অতিক্রম।

কোথায় যে লক্ষ্যস্থান খুঁজিয়া না পায়,

বুঝিতে না পারে কোথা বাজিছে বাঁশরি।”

 

(১৬)

“দেখো দেখো বোধহীন মানবের দল

তোমার ও মোহময়ী বাঁশরির স্বরে

এবং তোমার সঙ্গী আশা উত্তেজনে

পাপের সাগরে ডুবে মুক্তার আশয়ে।”

[অভিলাষ, কবিতা]

 

 

(২৭৮)

“পার কি বলিতে কেহ কী হল এ বুকে

যখনি শুনি গো ধীর সংগীতের ধ্বনি

যখনি দেখি গো ধীর প্রশান্ত রজনী

কত কী যে কথা আর কত কী যে ভাব

উচ্ছ্বসিয়া উথলিয়া আলোড়িয়া উঠে!

দূরাগত রাখালের বাঁশরির মতো

আধভোলা কালিকার স্বপ্নের মতন-

কী যে কথা কী যে ভাব ধরি ধরি করি

তবুও কেমন ধারা পারি না ধরিতে!”

[পার কি বলিতে কেহ, মালতী পুঁথি- ধৃত]

(২৭৯)

“সহসা মনের মধ্যে উঠে না জাগিয়া? কখন যে জাগি উঠে পার না জানিতে।

দূরতম রাখালের বাঁশিম্বর সম

কভু কভু দুয়েকটি ভাঙা-ভাঙা সুর

অতি মৃদু পশিতেছে শ্রবণবিবরে:

আধো জেগে আধো ঘুমে স্বপ্ন আধো-ভোলা-

তেমনি কি সে-দিনের দুয়েকটি কথা

সহসা মনের মধ্যে উঠে না জাগিয়া?

স্মৃতির নির্ঝর হতে অলক্ষ্যে গোপনে, পথহারা দুয়েকটি অশ্রুবারিধারা সহসা পড়ে না ঝরি নেত্রপ্রান্ত হতে, পড়িছে কি না পড়িছে পার না জানিতে!”

[বিষ ও সুধা, সন্ধ্যা সংগীত]

 

(২৮০)

“হম সখি দারিদ নারী!

জনম অবধি হম পীরিতি করনু

মোচনু লোচন-বারি।

ত্ম———————-

নিঠুর বিধাতা, এ দুখ-জনমে

মাঙব কি তুয়া পাশ!

জনম অভাগী, উপেখিতা হম,

বহুত নাহি করি আশ,-

দূর থাকি হম রূপ হেরইব,

দূরে শুনইব বাঁশি।

[ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’-২, ছবি ও গান]

 

সেই কৈশোরে বিশ্বকবি অন্তঃপুরের কোণের ঘরে বসে

“গহনকুসমকুঞ্জমাঝে

মৃদুল মধুর বংশি বাজে।”

এই পদাবলী দিয়ে শুরু করেছিলেন কাব্য রচনা। এরপর দির্ঘ জীবনে তিনি অজস্র গান অজস্র কবিতা লিখেছেন দুহাত ভরে। আর এই গান ও কবিতার মূল সুর ও স্বরকে বিশ্ব মাঝারে ছড়িয়ে দিতে বাঁশিকে সঙ্গী করেছিলেন আমৃত্যু।

(চলবে-)

 

 

নাজমুল টিটো, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।