এখন সময়:বিকাল ৪:১৩- আজ: মঙ্গলবার-২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:বিকাল ৪:১৩- আজ: মঙ্গলবার
২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

বেড়ালের মৃত্যু

ফাহমিনা নূর

 

রইসুদ্দিন মোল্লাকে যেদিন দাফন করা হলো তার ঠিক সতের দিন পরে ফকফকা উঠানের মাঝে ময়লা ত্যানার মত বাদাইম্যার নিথর দেহটা পড়ে থাকতে দেখা গেলো। ‘বাদাইম্যা’ বাড়ির বেড়াল। পোষা বেড়াল। পোষ মানলেও তার ভবঘুরে স্বভাব যায় নাই। মাঝেমাঝে দু’তিন দিনের জন্য উধাও হয়ে যেতো। মাদী বেড়াল হলে এতদিনে কয়েক হালি বাচ্চা বিয়ানো সারা হতো। বাদাইম্যা নামটা রইসুদ্দিন মোল্লার বিবি মতিয়া বেগমের দেয়া। ভবঘুরে স্বভাবের জন্যই তার এই নাম জুটেছিলো। আপাতত নামটা গালির মত শোনালেও মতিয়া বেগম যে তাকে অপত্য স্নেহ করতেন তাতে কারো মনে কোনো সংশয় নাই। সদ্য চোখ ফোটার পর যখন তাকে এ বাড়িতে আনা হয় তখন একটা আদুরে নামে ডাকা হতো। সেই নাম এখন আর কারো মনে নাই। গল্পকারের কল্পনাতেও সেই হারানো নাম খুঁজে পাওয়া যায় না এমনই দূরের বিষয় হয়ে গেলো সেটা। আজ তার অকাল মৃত্যু এই পৃথিবীর অতি নগণ্য ঘটনাবলির একটা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশি ও বাড়ির লোকজন রইসুদ্দিনের  মৃত্যুশোক কাটিয়ে আলাপ করার মত একটা নতুন বিষয় পেয়ে তা—ই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। বাদাইম্যাকে রইসুদ্দিন এনেছিলেন এক হাটবারে বাজার থেকে ফেরার পথে। শালধর বাজারে চালের আড়তের মালিক বদিউল কয়েকটি বেড়াল পালেন ইঁদুরের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে। তাদেরই একজনের বংশের বাতি গল্পের এই বাদাইম্যা। ইঁদুরের উৎপাত তখন রইসুদ্দিনের ঘরেও অল্প স্বল্প দেখা দিয়েছে।

ছয় বছর বয়সী বাদাইম্যার মৃত্যু রহস্য ঘনিয়ে উঠলে নানান জল্পনা কল্পনা ডালপালা মেলতে শুরু করলো।  তারই একটা শাখা বাতাসে দুলে দুলে হিম্মত মিঞার দিকে ইশারা করে। বেড়ালের মাথায় আঘাতের চিহ্ন আর পাশে পড়ে থাকা লাঠি সে ইশারাকে পাকাপোক্ত করে তোলে। হিম্মত মিঞা বাড়ির ভৃত্য, বোবা এবং বধির। তার মাঝে হিম্মতের ঘাটতি আছে। রাত বিরাতে অশরীরী কিছু দেখে সে যে অদ্ভুত স্বরে গোঙাতে থাকে সেই সাথে ঘুমের মধ্যে তার কান্নার মত যে অবোধ্য উচ্চারণ তা শুনে সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে তার সাহস কম।

 

হিম্মতকেও রইসুদ্দিন এ বাড়িতে এনেছেন বাদাইম্যাকে আনার প্রায় তিরিশ বছর আগে। রেলপাড়া বস্তির হিম্মত মিঞার যেদিন বাপ আর মা দুজনই বিষাক্ত পোটকা মাছ খেয়ে মারা পড়লো সেদিনই সবাই আবিষ্কার করলো সাত বছরের হিম্মত মিঞার  তিনকূলে কেউ নাই। স্থানীয় এক নেতার পরামর্শে রইসুদ্দিন তাকে ঘরে নিয়ে এলেন। হিম্মত মিঞার থাকার একটা ঠাঁই হলো আর বাড়ির লোক পেলো হুকুম তামিল করার জন্য এক সহজ বান্দা। পৃথিবীতে বিনিময় ছাড়া কোনো আদান কিংবা প্রদান ঘটে না। বাক ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন নতুন মানুষদের সাথে বোবা ও বধির হিম্মত মিঞার যোগাযোগ কিছুটা কঠিন হলেও ক্ষুধা ও কাজের মতো দ্বিপাক্ষিক প্রয়োজন তা অনেকটাই সহজ করে দিলো। হুকুম তামিল করতে করতে হিম্মত মিঞা শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে যুবাকাল অতিক্রম করে এখন মধ্যবয়সে পাহাড়সম অপ্রাপ্তির ভার বয়ে চলেছে। ইত্যবসরে এ বাড়িতে বেশ কিছু জন্ম, বিবাহ ও মৃত্যুর মত স্বাভাবিক ঘটনা ঘটে গেছে আর ক্রমে ক্রমে হিম্মত মিঞা বুঝে গিয়েছে তার জীবন ঠিক মানুষের জীবনের মত নয় যদিও  তার এই জীবন রইসুদ্দিন পরিবারের আশ্রয়ে অনেকটা নিশ্চিত। এ সত্য সে মেনেই নিয়েছিলো কিন্তু বিপত্তি ঘটালো বাদাইম্যার আগমন। বাদাইম্যার প্রতি মানুষের অপরিসীম মায়া আর মমতা দেখে হিম্মত মিঞা ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না দুপেয়ে মনুষ্য সমাজের অংশ হয়ে চারপেয়ে জীবকে ঈর্ষা করা কতটা সমীচীন। দিন যায় আর বেড়াল নিয়ে মানুষের আদিখ্যেতা দেখতে দেখতে হিম্মত মিঞা ভেতরে ভেতরে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ওঠে। বোবা বলে তার বিরক্তি প্রকাশের সুযোগও যেমন তেমন। তিরিশ বছর ধরে এ বাড়িতে কামলা খাটার পরও সে মনে করতে পারে না এ বাড়িতে কেউ কোনোদিন এক বাটি গরম দুধ আদর করে খাইয়েছিলো কি না। বেড়ালের দুধপানের চুকচুক শব্দ তার কানে না পৌঁছালেও বাটির দুধ ক্রমশ নিঃশেষ হওয়ার দৃশ্য তাকে হতবিহ্বল করে তোলে। বিনিময় এখানেও আছে সেটা সে বোঝে। বাড়ির মানুষের এতো এতো আদরের বিনিময়ে যে আমোদ বাদাইম্যা তাদের দিয়েছিলো তার হিসেব কষতে গিয়ে তিরিশ বছর ধরে পেটে—ভাতে শ্রম দিয়ে যাওয়া হিম্মত মিঞা যে বৈষম্য আবিষ্কার করে তা তাকে একটা বেড়ালের হন্তারক বানিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি বেড়ালের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেন তার অন্তরে বহুদিন জমে থাকা জ্বালা বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পেলো।

 

ফাহমিনা নূর, গল্পকার

আন্দরকিল্লা প্রকাশনার ২৮ বছর আগামীর পথ ধরে অনাদিকাল

রূপক বরন বড়ুয়া আমি মাসিক ‘আন্দরকিল্লা’ কাগজের নিয়মিত পাঠক। প্রতিবারের মতো হাতে নিলাম এবারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঢাকা জুলাই ২০২৫ সংখ্যা, হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই

জলে জঙ্গলে (পর্ব-২)

মাসুদ আনোয়ার   ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বোর্ডের রেজাল্ট আউট হলো। আমি কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। যে কোনোদিন কুমিল্লা বোর্ডও ফল প্রকাশ

স্বপ্নে গড়া অবয়ব

সৈয়দ মনজুর কবির   মনটা যখনই কেমন অজনা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তখনই কেয়া জানালার ধারে এই চেয়ারটাতে এসে বসে। আজ অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে

অন্তহীন সুড়ঙ্গ

সুজন বড়ুয়া   কবর থেকে বেরিয়ে মহিম অশরীরী রূপ নিল। সঙ্গে সঙ্গে গত কয়দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ে গেল তার। ফার্স্ট সেমিস্টারের পর

রাত যখন খান খান হয়ে যায়…

মনি হায়দার   চোখ মেলে তাকায় সোাহেল হাসান। প্রথম দৃষ্টিতে সবকিছু অচেনা লাগে। কোথায় এলাম আমি? উঠে বসতেই মনে পড়ে গতরাতে অনেক ঝক্কি আর ঝামেলার