এখন সময়:দুপুর ১:২১- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১:২১- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

মাদল রাত

রাজকুমার শেখ

পাকা ধান রঙের মতো আজকের ভোরটা। সারারাত কেটেছে কুসুমের সঙ্গে গল্প করে। গত রাতে কথায় পেয়েছিল কুসুমকে। সে প্রথম কোনো জংলী জায়গায় তার আসা। কুসুম একটা স্কুলে বাংলা পড়ায়। অনেক দিন থেকে আসবে বলছিল সে। কিন্তু ও আসার সময় করে উঠতে পারে না। কুসুম দেখতে সুন্দরী।  চোখগুলো ওর বাদাম খেতের মতো গভীর। যেন কেনো নদীর ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। এই চোখের জন্য মহি পাগল হয়ে যায়। মহি বলে কথায় কথায়, ‘ কুসুম,  তোমার চোখে আমি কেন তলিয়ে যাই?

‘তুমি যে কি পাগলের মতো বলো না!  আমার শরম লাগ’।

মহি হা হা শব্দ করে হাসে। কুসুমের মুখ লাল ওয়ে ওঠে।  ওকে কেমন লাজুক লাগে। মহি বড়ো বড়ো চোখ করে ওকে দেখে। ওর ঠোঁটের পাশে চুপ করে শুয়ে থাকা একটা মিহি কালো তিল। যেন সে মহি কে বলে, এসো,  আমাকে চুমু খাও’।

 

মহি আরও বেশি মুগ্ধ হয়। কুসুমের ভরাট বুকে মাথা রেখে ও একটু শান্তিতে ঘুমেতে চায়। কিন্তু ও কোনো দিনই কুসুম কে আবদারের কথা বলতে পারে না। মহি কি একটু বেশি লাজুক?

ও জানে না। এই বনের মধ্যে সে এত দিন একাই আছে। কুসুমের কথা ও ভুলতে বসেছিল। হঠাৎ ওর ফোন পেয়ে মহি আবার কুসুম কে নিয়ে ভাবতে বসেছে। এই সুন্দর ভোরটা শুধুই ওর জন্য। খোলা জানালা দিয়ে কুসুমের সুন্দর মুখটা দেখা যাচ্ছে। আজ বনের মাথায় চাঁদটা ছিল। ঢলে পড়েছিল চাঁদের মায়াবী আলো।  তারও থেকে কুসুমকে বেশি মায়াবী লাগছিল। মহি ওর হাত ছোঁয়। কুসুম কেমন কেঁপে ওঠে। বনও যেন কেঁপে ওঠে।  সুন্দর মুখটাতে আলো খেলে গেল। মহি ওর হাত ধরে বসে থাকে। ওরা কতক্ষণ ওই ভাবে বসে থাকে কে জানে। রাত ঢলছে চাঁদের সাথে। সকালে মহি কে যেতে হবে কাজের সাইডে। কিন্তু ওর কাজে যেতে মন করছে না। কুসুম এসে ওর সব এলোমেলো করে দিয়েছে। ওর গোছানো হয়না কোনো কিছুই। কুসুম আসার পর থেকে মহি ভালো করে আয়না দেখছে। নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। না — এবার তার জীবন সঙ্গী দরকার। কথাটা ভাবতেই ওর হাসি ফোটে। কেউ এ অবস্থায় দেখলে পাগল ভাববে।

মহি ভোরের আবেশটাকে অনুভব করছিল। কুসুমকে ভাবলো ডেকে তুলি। কিন্তু ও গভীর ঘুমে আছন্ন।  মহি চা করে আনে এক পেয়ালি।  চায়ে চুমক দেয় আরাম করে। ওর ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গেল।

আর একটু পরেই সূর্য উঠবে। ফর্সা হবে। চারপাশে আলো আর আলে। বেঁচে থাকতে ওর মন করে। কিন্তু তা কি হবার আছে! মহি আরও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকে। বনে বনে পাখি ডাকছে। মুখরিত গোটা বন। ও পাখির ডাক শুনছিল। এমন সময় কুসুম এসে পাশে দাঁড়ায়। কুসুমের গা থেকে কেমন একটা সুগন্ধি বের হচ্ছে। মহিকে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। কুসুমের দুচোখ এ কেমন এক নেশা নেশা ভাব। যেন মহুয়া ফুলের মাদকতা। মহি চা করে আনে। কুসুম খুব আয়েশ করে চুমুক দেয়। দুজনে বন দেখছে। সবুজ সবুজ গন্ধ। বুনো ফুলের গন্ধ।  শিশিরে মাখামাখি ঘাস।  যেন বৃষ্টি নেমেছিল রাতে। মহি জিজ্ঞেস করে, ‘ রাতে ঘুম হয়েছে কুসুম?

‘না। কোথায় যেন শেয়াল ডাকছিল। আমি ভয়ে ঘুমোতে পারিনি। আজ আমি তোমার কাছে ঘুমাবো”।

‘পারবে তুমি”?

‘পারব। তুমি মহিদা, আমাকে ভয় পাও বুঝি? কেন গো? আমি কি বাঘ ভালুক? আঃ! তোমরা ছেলেরা বড্ড বেশি ভীতু”।

কথাটা বলেই কুসুম হাসতে থাকে। বনে ছড়িয়ে গেল সে হাসির শব্দ। যেন মহির বুকেও বেজে উঠলো হাসির শব্দ। মহি কিছু বলে না। শুধু কুসুমের দিকে তাকিয়ে থাকে। বনে কোথায় একটা বন টিয়া ডেকে পালালো। কুসুমের ভরাট বুকের ছোঁয়াটুকু কেমন তার মনে আষাঢ় নদীর ও ঢেউ অনুভব করে। ও কি এবার নষ্ট হয়ে যাবে?

ছিঃ! ও সব কি ভাবছে মহি। কুসুম তার কাছে অনেক কিছু। তাকে ছুঁতে গেলে ও পুড়ে যাবে। কুসুম যে তার পবিত্র মানসী। ওকে বুকের কাছে আগলে রাখবে। এই মিষ্টি ভোরে তার মনের শান্তি জল ফোঁটা। ওরা দুজনে চা শেষ করে। কুসুম এগিয়ে যায় শিশিরে পা ডুবিয়ে হাঁটতে। বনে বসন্ত ঢলে পড়েছে।  মহি মগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকে কুসুমের নগ্ন পায়ের দিকে। বন টিয়াটা আবার ডেকে উড়ে গেল।

 

২.

আজ ঝুমুর এসেছিল নিমন্ত্রণ করতে। মহি তাদের বড়ো বাবু। ঝুমুর শুনছে যে বড়ো বাবুর বউ এসেছে। তাই ওদের পরবে নিমন্ত্রণ দিয়ে গেছে। আজ ওদের বন দেবতার পুজো। কুসুম তো যাবার জন্য এক পায়ে খাড়া।  আজ মহির ছুটি। আজ ঝুমুররা কেউ কাজে যায়নি। বছরকার দিন। ওরা চজ সারা রাত আনন্দ করে কাটাবে। সারা বন জেগে থাকবে।

 

মহি আর কুসুম রাত নামার আগেই বেরিয়ে পড়লো। বনের পথ ধরে জংলী নালার পাশ দিয়ে ঝুমুরদের বসতি। মহি মাঝে মাঝে যায় লেবারের জন্য।  অনেকে চেনে তাকে। ওরা সব সরল সহজ মানুষ।  মহিকে খুব পছন্দ করে।  কেউ বিপদে পড়লে মহি ওদের পাশে দাঁড়ায়। সেবার ঝুমুরের মেয়েটার খুব অসুখ করে ছিল।মহি টাকা দিয়ে চিকিৎসা করায়।   তাই ঝুমুর এত ভালবাসে তার বড়ো বাবুকে।

ববে বনে হাঁটতে হাঁটতে রাত হয়ে এলো। কুসুম লেপ্টে ধরে মহিকে। তার বনে হাঁটা অভ্যেস নেই।  মহির গায়ে কুসুমের নরম বুকটা চেপে বসে। মহির কেমন গাটা শিরশির করে। কিন্তু কুসুমকে সে সরিয়ে দিতে পারে না। নদীর বাঁধ ভাঙলেই বিপদ। কুসুম কেন যে এলো এই বুনো জায়গায় হরিণী হয়ে! পাগল বাঘ কি শিকার ছেড়ে দেবে?

 

ওরা ঝুমুরের বসতি আসতেই ঝুমুর ছুটে এলো। মৃদল বেজে উঠল।  মপয়েরা নাচছে। বনের মূয়রী যেন। ওদেরকে নিয়ে বসালো ঝুমুর। কুসুমও যেন মাদলের তালে তালে নাচছে। মহুয়ার নেশা ওকে ধরছে একটু একটু করে।  ঝুমুর ওকে মহুয়া খাইয়ে দেয়।  কুসুম আরও চেয় খায়। বাতাস ওর গায়ে লাগতেই কুসুম মাতাল হয়ে উঠলো। মহিও কুসুমের বাহু ধরে মাদলের তালে তালে নাচছে।  কুসুম এখন বন ময়ূরী।  মহি ওকে জড়িয়ে ধরে নাচছে। ঝুমুর আরও মহুয়া এনে দেয়। আজ বনেরও নেশা হয়েছে।  সেও নাচছে। আজ ভরপুর পূর্ণিমা। বনের রাস্তা আজ ওরা ভুলে গেছে। আজ হয়তো ওরা ফিরতে পারবে না। কুসুম কে দারুণ লাগছে। ওর নেশাতুর চোখে আজ বসন্ত বাহার। মহী বুকে মুখ রেখে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।  ঝুমুর ওদের দেখছে। ওর বুড়ো বাবু কোথায় যেন ডুবে আছে। ঝুমুর আরও মহুয়া এনে দেয়। কুসুম মহির হাত শক্ত করে ধরে বনের দিকে নিয়ে যায়। বন এখন মাতাল। মাদল বাজছে। কুসুম এখন শুধু মহিকে চায়। তার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। আজ ডুবে যাবে দুজনে।  মন নদীর তীরে আজ শুধু ভালবাসার নরম ঢেউ। সেই ঢেউয়ে মহিকে নিয়ে ও ভেসে যাবে। মহি শুধুই তার একার। কুসুম নিবিড় হয়ে আসে মহির বুকে। মহি এই কুসুম কে সে চেনে না। যে এত দিন তাকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে। সেই কুসুম এখন নদীর মতো। তাকেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আজ সত্যি ও ভেসে যাবে এই বননদীর নায়ে। কুসুম এখন ভরা নদী। ওর জলের ঢেউয়ে আর কতক্ষণ ও ভেসে থাকবে? এবার বনের মায়াবী চাদরে ওকে নিয়ে ঘুমিয়ে যাবে দুজনে। মহুয়া বড়ো মিষ্টি। নেশা ধরিয়ে দেয় মনে। কুসুমকলি এখন শুধুই তার।

 

রাজকুমার শেখ, কথাসাহিত্যিক, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।