এখন সময়:দুপুর ১২:২৮- আজ: সোমবার-৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:২৮- আজ: সোমবার
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

মারমা লোকবিশ্বাসে দেব-দেবী

চিংলামং চৌধুরী

 

জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে জন্ম নিয়েছে মারমাদের বিভিন্ন লোকদেবতা। যদিও মারমা নৃ-গোষ্ঠীর বৌদ্ধধর্ম চর্চা অতি-প্রাচীন। পার্বত্য অঞ্চলের  বিপদসংকুল আরণ্যক জীবন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এদের অধিক শক্তিসম্পন্ন কোন কিছুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়েছিল। প্রাচীন মারমা নৃ-গোষ্ঠী ঝড়, বন্যা, খরা অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় বোধ করত। প্রকৃতির যেসকল জিনিষের উপর তাদের জীবন নির্ভরশীল ছিল, সেগুলোর আত্মা তাঁদের কাছে অত্যন্ত প্রধান হয়ে দেখা দিল। মূলত আত্মরক্ষার তাগিদ থেকেই লোকদেবতা এবং তাঁর পূজা পরিক্রমার উদ্ভব। মারমা নৃ-গোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ বৌদ্ধধর্ম চর্চার পাশাপাশি এই সব লোকদেবতার উপাসক। তাঁরা পূর্বপুরুষবাহিত অনুকরণে অন্নসংস্থান, রোগমুক্তি, নিরাপদ জীবন, শত্রুনিধন বিবিধ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লোকদেবতার পূজা দিয়ে থাকে। গাছ বা গাছতলা বিশেষ মর্যাদা যেমন পেয়ে থাকে তেমনি পাহাড় নদী মাটি জলের প্রতি তাঁদের গভীর বিশ্বাস ও আস্থা লক্ষ্য করা যায়।  এসব দেব- দেবীকে কেন্দ্র করে সংঘটিত পূজার আনুসঙ্গিক কর্ম ‘বৈদ্য’ দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। ‘বৈদ্য’ মারমাদের লোক চিকিৎসক। পূজা সম্পন্ন করার জন্য বৈদ্যকে পারিশ্রমিক দিতে হয়। মারমা ভাষায় দেবতাকে নেইৎ ও দেবীকে নেইৎ-সিমিং বলা হয়। প্রবন্ধের নামকরণ মারমা লোকদেবতা হলেও লোকদেবীদের আলোচনায় আনা হয়েছে প্রাসঙ্গিকতা বিচারে। অঞ্চলভেদে লোকদেবতা পূজা-আনুষ্ঠানিকতায় কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও তা সামগ্রিক ধারণায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে অনুমান করা যায়।

 

 

খ্যয়ং-শ্যাংমা নেইৎ সিমিং:

মারমাদের জীবন জুমের চেয়ে অধিক নদীকেন্দ্রিক। প্রাচীনকালে চাষাবাদ ও যোগাযোগের সুবিধার্থে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে মারমাদের গ্রাম গড়ে উঠেছিল। এ নদীকেন্দ্রিক জীবন থেকে খ্যয়ং-শ্যাংমা দেবীর জন্ম বলে অনুমেয়। খ্যয়ং-শ্যাংমা দেবীর আরেক নাম ‘মুনি-মেক্লা নেইৎসিমিং’। মারমা খ্যয়ং শব্দের অর্থ নদী/জল,শ্যাংমা অর্থ মালিক আর নেইৎ সিমিং অর্থ দেবী। অর্থাৎ জল/নদী দেবী। গঙ্গা দেবীর মারমা সংস্করণ খ্যয়ং-শ্যাংমা। খ্যয়ং-শ্যাংমা সর্ব মঙ্গলদায়িনী দেবী, সকল প্রকার বিপদ থেকে উদ্ধারকর্ত্রী। গভীর পূর্ণিমার রাত্রে শ্বেত বস্ত্র পরিহিত রমনীর নদী বেয়ে উজান ও ভাটির দিকে গমনের দৃশ্য কেউ কেউ দেখে থাকে বলে লোক-দাবী রয়েছে। দেবীর উজানে গমন সুখ-সমৃদ্ধি ও ভাটির দিকে গমন আগাম বিপদের সংকেত দেয় বলে সমাজে প্রচলিত। তাই দেবীর তুষ্টি ও প্রাত্যাহ্যিক জীবনের নানান বিপদ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য পূজা পরিক্রমার উদ্ভব। তবে কালের পরিক্রমায় এ দেবীকে নিয়ে পূজার আয়োজন ও ক্ষেত্র সীমিত হয়েছে। তথাপি নিয়মিত পুকুর, নদীতে গোসল, নদী পাড় হওয়ার সময় মাথায় কয়েক ফোটা জল দিয়ে প্রার্থনা, সুখ ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপনের জন্যও মারমা নব দম্পত্তির পূজা, পূর্ণিমায় বিশ্বশান্তি কামনায় সন্ধ্যাকালে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনার রেওয়াজ এখনও চোখে পড়ে। রোগমুক্তি ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্যও দেবী মারমাদের পূজা পেয়ে থাকে। পূজা বৈদ্যের মাধ্যমে দেয়া হয়। পূজা দেয়ার স্থান হিসেবে বৈদ্যরা অপেক্ষাকৃত রোগীর পার্শ্ববর্তী নদীকে নির্বাচন করে। রোগীর অবস্থাভেদে সাদা ও কালো এ দুই ধরনের পূজা দেয়া হয় । সাদা পূজা দেওয়ার জন্য বাশঁ দিয়ে ডালি বানিয়ে ডালিতে কলা পাতা দিয়ে, তাতে বিভিন্ন রকমের ফুল,দশ ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাদ্য (কলা, গুড়, বিস্কুট, লিচু, আম, আনারস, আঁখ ইত্যাদি) দিয়ে নদীর ধারে পূজা সম্পন্ন করা হয়। পূজায় ডালি বৈদ্য নিজে তৈরি করে। কালো পূজার ক্ষেত্রে বৈদ্য নদীর ধারে পরিস্কার জায়গা নির্বাচন করে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর তিন/সাত মুঠো চাল চালের উপর মুরগী কেটে রক্ত দিয়ে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে পূজা সন্ধ্যার সময় হয়ে থাকে। লোক বিশ্বাস আছে যে- কোন ব্যাক্তি বুধবার রোগাক্রান্ত হলে তা খ্যয়ং-শ্যাংমা কৃপা ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। এ  ক্ষেত্রে খ্যয়ং-শ্যাংমার পূজা না দিলে মৃত্যু অনিবার্য। যেহেতু অধিকাংশ মারমা গ্রাম নদী,খাল এর নিকটবর্তী তাই পাড়া-গ্রামের সুখ-শান্তির জন্য অন্ততঃ বৎসরে একবার যৌথভাবে ছাগল ও শুকর বলি দিয়ে খ্যয়ং-শ্যাংমার পূজার রেওয়াজ অঞ্চলভেদে লক্ষ্য করা যায়। খ্যংশ্যাংমার আবাসস্থল নদী,ছড়া, খাল হওয়ায় মারমারা এসব স্থান পবিত্র রাখার চেষ্টা করে। এসব স্থানে কোন প্রকার মল-মূত্র ত্যাগ, থুথু ও ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে।

 

বুঃমাজু নেইৎ (টংমাং):

মারমাদের লোক বিশ্বাস অনুসারে পৃথিবীর সকল পাহাড়, পর্বত,টিলা,বন ও জঙ্গলের মালিক ‘বুঃমাজু নেইৎ’। যাঁর আরেক নাম ‘টংমাং’। এসবের মালিক হওয়ায় রাজ্যে বসবাসকারী সকল প্রকার প্রাণি তাঁর অধীনস্থ প্রজা। এসকল প্রাণি তাঁর অধীনে থেকে নির্দেশ পালন করে। এ বিশ্বাস থেকে পাহাড়, টিলায় জুম চাষ করার সময় অনুমতি প্রার্থনা, ভালো ফলন, আরণ্যক পথে বন্য প্রাণির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা দেয়া হয়। চাষের পূর্বে অনুমতি নিয়ে পূজা না দিলে চাষির প্রাণ নাশের আশংকার বিশ্বাস মারমাদের প্রচলন আছে। চাষের অনুমতি ও ভালো ফলনের জন্য চাষের জায়গায় বিভিন্ন জাতীয় জঙ্গলি ফুল, দশ রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে পূজার ডালি প্রস্তুত করে; পূর্ব দিকে মুখ করে পূজা দিতে হয়। বৈদ্য দ্বারা বিশেষ মন্ত্র পাঠ করে মারমারা এ পূজা সম্পন্ন করে থাকে। এ মন্ত্রের সার কথা হলো- পূজা গ্রহণের জন্য আহবান, চাষ কালে কোন বন্য কীট-পতঙ্গের প্রাণহানি হলে অগ্রীম ক্ষমা প্রার্থনা, ভালো ফলন ও ফসল রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য দেবতাকে দায়িত্ব অর্পণ।

পায়ে হাঁটা দীর্ঘ জঙ্গল পথ অতিক্রমকালে বণ্য প্রাণির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও পথিক  পূজা দিয়ে থাকে। এ পূজায় বৈদ্য বা পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না। পথিক যাত্রার পূর্বে জঙ্গলের যে কোন গাছের কচি পাতা ছিড়ে বুঃমাজু নেইৎ -এর উদ্দেশ্যে পথ অতিক্রম করার অনুমতি ও বিপদ থেকে রক্ষার প্রার্থণা করে বৃক্ষের কচি ডাল পাহাড়ের কোন একজায়গা রেখে দেয়। এ পূজায় বিশেষ কোন শাস্ত্রীয় মন্ত্র পাঠের প্রয়োজন নেই। পথিক নিজ ভাষায় এ প্রার্থনা করে থাকে।

 

আবংমা

শস্য প্রদানকারী দেবী ‘আবংমা’ মারমাদের খুবই জনপ্রিয়। এর কৃপা হলে গৃহস্থের ধানের গোলা বড় হয়, গোয়াল ভরা গরু হয়,ধন ঐশ্বর্য্য বৃদ্ধি পায়। অনেকটা লক্ষী দেবীর মারমা সংস্করণ বলা যেতে পারে। ভালো ফলনের আশায়  মারমা চাষীরা চাষের পূর্বে এই দেবীকে উদ্দেশ্য করে জমিনে/জুমে খাবার ও বৈদ্যের দ্বারা মন্ত্র পাঠ করে পূজা দিয়ে থাকে। পূজা কাঁচা, পাঁকা এই দুইভাবে দেয়া হয়। এদের মধ্য কেবল পূজার উপকরণের পার্থক্য। কাঁচা পূজায় বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল, বিস্কুট, জিলাপি দিয়ে পূজার ডালি সাজিয়ে চাষের স্থানে পূজা দেয়। পাঁকা পূজায় আবংমার উদ্দেশ্যে চাষের দিন ভাত তরকারী রান্না করা হয়,রান্নার শেষে প্রথমে ঘরের সদস্য দ্বারা বুদ্ধের নিকট খাবার দান করে; পরে বৈদ্যের মাধ্যমে চাষের স্থানে পূজার ডালিতে খাবার নিয়ে মন্ত্র পাঠ করে আবংমার পূজা দিতে দেখা যায়। বাকি খাবার ঘরের আশে-পাশে লোকদের পরিবেশন করা হয়। রাতের বেলায় ভাতের হাড়িতে আবংমার উদ্দেশ্যে  অল্প পরিমাণ ভাত রেখে দেওয়ার রেওয়াজ প্রচলন আছে।

 

রওয়াজং নেইৎ

অশুভ শক্তি, মহামারি, অশান্তি থেকে গ্রাম রক্ষার দায়িত্ব ‘রওয়াজং নেইৎ’ বা গ্রাম রক্ষক দেবতার। গ্রাম রক্ষক দেবতার কল্যাণে গ্রাম টিকে থাকে। এই বিশ্বাস থেকে মারমারা দেবতার আসনে বসিয়ে রওয়াজং নেইৎ পূজা দেয়। সাংগ্রাইং (মারমাদের বর্ষবরণ দিন)-এর দু’দিন পর অর্থাৎ ‘আতাদা’র দিন রওয়াজং নেইৎ-এর পূজার জন্য ধার্য্য। প্রত্যেক বছর মারমা অধ্যুষিত গ্রামে যৌথভাবে এ পূজা দেয়া হয়। এর ফলে এক বছর মেয়াদি গ্রাম সুরিক্ষত থাকে। রওয়াজং নেইৎ উদ্দেশ্যে পূজা দেয়া হলেও এর সাথে থাকে গৌতম বুদ্ধ,উপগুপ্ত বুদ্ধসহ আরো দশ নেইৎ বা দেবতা। দেবতাগণ হলেন- ১। দার্থাথ ২। উরুলাগ্ ৩।ঊইরুপাগ্ ৪। কুউয়ের ৫। সেঃগ্রা ৬। ক্রোজং ৭। আ-গাজু ৮। রুক্ষাজু ৯। বুমাজু ১০। খ্যায়ং শ্যাং। প্রথমে গ্রামের সীমানার চারিদিকে বিশেষত গ্রামের রাস্তার উপর গুংগা (বাঁশ সরু করে কেটে রংধনুর মত করে মাটিতে গাড়াকে গুংগা বলে) গাড়ায়। গ্রামের সবচেয়ে বড় গাছ নির্বাচন করে এর তলায় বুক সমান বাঁশের মাচাং তৈরি করা হয়। মাচাং-এ পরিস্কার কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর বিভিন্ন রকমের ফল-ফুল, মুড়ি, গুড়, বিভিন্ন রকম বিস্কুট, লজেন্স, দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজার ডালি সাজানো হয়। এরপর বৈদ্য পূর্ব দিকে মুখ করে মন্ত্র পাঠ শুরু করলে গ্রামের সকল সদস্য এ সময় উপস্থিত থেকে বৈদ্যের উচ্চারিত মন্ত্র অনুকরণ করে। মন্ত্র পাঠকালীন গ্রামে ভিতর প্রবেশ ও বাহির সম্পূর্ণ রূপে নিষেধ থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে পূজা বিফলে যায়। এলাকাভেদে পূজার ধরনে কিছুটা ভিন্নতাও লক্ষ্য করা যায়। বড় গাছ তলার পরির্বতে গ্রামের মূল প্রবেশ মুখে চারটি গুংগা (বাশঁ সরু করে কেটে রংধুনুর মত করে মাটিতে গাড়াকে গুংগা বলে) পুতে পুজাঁর স্থান প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন রকমের ফল ফুল, মুড়ি, গুড়,বিভিন্ন রকম বিস্কুট, লজেন্স এর পরির্বতে রওয়াজং নেইৎ’র উদ্দেশ্যে শুকুর বা ছাগল বলি দিতে দেখা যায়। পূজার অন্যান্য আনুষ্ঠানাদি অভিন্ন থাকে। উভয় ক্ষেত্রে রাত দশটা/এগারটা অথবা ভোর থেকে পূজা শুরু হয়। ব্যাপ্তি থাকে  দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত। ঈংজং নেইৎ

ঘর রক্ষাকারী দেবতা হলো ‘ঈংজং নেইৎ’। ঘরের উপর অশুভ আত্মার প্রভাব মুক্ত,সুখ-সমৃদ্ধি-শান্তি প্রতিষ্ঠা ঈংজং নেইৎ -এর আর্শিবাদে হয়ে থাকে। এ দেবতার উদ্দেশ্যে বছরে একবার পূজা দেয়া হয়। পরিবার প্রধান এ পূজার আয়োজক। কুছুং লাহঃ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) এর যে কোন দিনকে পূজার দিন হিসেবে নির্বাচন করা যায়। নির্বাচিত দিনে ভোর বেলায় বৈদ্যের দ্বারা মুরগী বা ছাগল বলি দেয়া হয়। মুরগীর সংখ্যা তিন, সাত অথবা বারটি মধ্যে হতে হয়; ছাগলের বেলায় একটি। এরপর বৈদ্য ঈংজং নেইৎ কে মন্ত্রের মাধ্যমে পূজা গ্রহনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বলিকৃত মুরগী বা ছাগল ঘরে রান্না করে বৈদ্য, পরিবারের সকল সদস্যসহ আশেপাশে পরিবারদেও নিয়ে একবেলায় খেয়ে শেষ করতে হয়। কথিত আছে যে এ পূজা যে একবার দেয় তাকে প্রতি বছর এর ধরাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়; না হলে ঘরে অশুভ আত্মার প্রভাবে রোগ-ব্যাধি, অশান্তি বেড়ে যায়। মারমাদের ঈংজং নেইৎ পূজা এখনও অঞ্চলভেদে প্রচলন আছে। বিশেষত প্রান্তিক এলাকায়।

 

ক্রোজং/কুঃজং নেইৎ

দেহ বা শরীর রক্ষক দেবতা। কুঃজং এর বিকৃত উচ্চারণে ক্রোজং শব্দের প্রচলন হয়েছে। কুঃ অর্থ নিজ আর জং অর্থ রক্ষক। ‘কুঃজং নেইৎ’-এর অর্থ নিজ শরীর রক্ষক দেবতা। বর্তমানে ক্রোজং নেইৎ নামে অধিক পরিচিত। শরীর/ব্যক্তিকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা, সঠিক পথে পরিচালনা, সুচিন্তা, সুপথে রাখার মালিক ক্রোজং নেইৎ। কুছুং লাহঃ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) এর যে কোন দিনকে ক্রোজং নেইৎ  পূজার দিন হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এ পূজা বছরে একবার দেওয়ার রেওয়াজ আছে। পরিবার কেন্দ্রিক এ পূজার আয়োজন পরিবারের প্রধান করে থাকেন। এ পূজা মারমাদের লোক বিশ্বাস অনুসারে আটটি গ্রহকে উদ্দেশ্যে করে দেয়া হয়। যেমন- ১।তালাংগুনিং-গ্রু (রবিগ্রহ) ২। ত্লাংলাহঃ-গ্রু (সোমগ্রহ) ৩। আংগা-গ্রু(মঙ্গলগ্রহ) ৪। বঃধু-গ্রু (বধুগ্রহ) ৫। কহ্সহবিঃডি-গ্রু (বৃহঃস্পতি গ্রহ) ৬। সঃউক্রা-গ্রু (শুক্রগ্রহ) ৭। চিনিং-গ্রু (শনি গ্রহ) ৮। রুঃহু-গ্রু (রাহুগ্রহ) । এদের বিশ্বাস মতে এ গ্রহের প্রভাবে ব্যক্তির জীবনে সুখ,শান্তি,সমৃদ্ধি,সাফল্য,দুঃখ,অসুখ,ব্যর্থতা ইত্যাদি আসে। একেক গ্রহের প্রভাব একেক রকম। যেমন- ত্লাংলাহঃ-গ্রু  (সোমগ্রহ), বুঃধু-গ্রু (বধুগ্রহ), কহ্সহবিঃডি-গ্রু (বৃহঃস্পতি গ্রহ), সঃউক্রা-গ্রু (শুক্রগ্রহ) এ গ্রহগুলোকে একত্রে বলা হয় স্মাঃগ্রু বা মিঃমাগ্রু। এসব গ্রহের প্রভাবে ব্যাক্তির জীবনে সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। অপরদিকে চিনিং-গ্রু (শনি গ্রহ), তালাংগুনিং-গ্রু (রবিগ্রহ), আংগা-গ্রু(মঙ্গলগ্রহ) ,  রুঃহু-গ্রু (রাহুগ্রহ) এ গ্রহগুলোকে একত্রে পাপা গ্রু বলা হয়। এসব গ্রহের প্রভাবে ব্যাক্তির জীবনে দুঃখ,অসুখ-বিসুখ,অশান্তি,ব্যর্থতা নেমে আসে। খারাপ গ্রহের প্রভাব যাতে না পরে তার জন্য মারমারা ক্রোজং নেইৎ-এর পূজা দিয়ে থাকে। রাতের বেলায় এ পূজার আয়োজন করা হয়।  বৈদ্য নিজের হাতে বাশঁ দিয়ে আট গ্রহের উদ্দেশ্যে আটটি পূজার ডালা তৈরি করে। আটটিতে সমান ভাবে দশ রকমের ফুল, দশ রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে গৃহস্থের ঘরের ভিতর বা উঠানে পরিস্কার জায়গায় আসন পেতে পরিবারের সকল সদস্যকে বয়স ক্রমানুসারে পর্যায়ক্রমে মন্ত্র পাঠ পূর্বক চুলে পানি ঢেলে পূজা করার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। চুলে পানি ঢেলে পূজা ধরনকে মারমারা ‘আ-গং ছিঃ খ্রাং’  বলে থাকে। পূজার ব্যাপ্তি জনপ্রতি সর্বোচ্চ বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট। অনেকে এ দেবতাকে প্রতিদিন দুপরের খাবার গ্রহণ পূর্বে খাবার আসনে বসে বাটিতে দু’মুঠো ভাত-তরকারী দিয়ে মন্ত্র পাঠে করে উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা প্রর্দশন করে।

 

চঃমাংলে নেইৎ

প্রসূতি প্রসব বেদনায় কাতর। সময় গড়ায় কিন্তু সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় মারমারা এক মুঠো চাউল দিয়ে প্রসূতির মাথায় রেখে ‘চঃমাংলে নেইৎ’ -এর নিকট নিরাপদ প্রসবের জন্য পূজা মানত করে। মানত করা চাউল যত্নের সাথে সংরক্ষণে থাকে। নিরাপদে প্রসবের পর  বৈদ্যকে দিয়ে পূজার শুভদিন নির্বাচন করা হয়। পূজা দেওয়ার স্থান হিসেবে গোলা বা ঘরের কোণে চাল রাখার স্থানকে নির্বাচন করা হয় । এ স্থানে বাঁশ দিয়ে দুই স্তর বিশিষ্ট ছোট নেইৎ-চাং (মাচাং সদৃশ্য) বানানো হয়। নেইৎ-চাং এর উচুঁ স্তরে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর সংরক্ষিত চাল দিয়ে চালের উপর মুরগী কেটে রক্ত দিয়ে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন  করা হয়। কাটা মুরগী রান্না করে বৈদ্যসহ পরিবারের সকল সদস্যকে একবেলায় খেয়ে শেষ করার নিয়ম প্রচলিত আছে। ক্ষেত্র বিশেষে বৈদ্যকে খাবারের সাথে স্থানীয় তৈরি মদ দেওয়ার প্রচলনও লক্ষণীয়। এ দেবতাকে দ্রুত পূজার আসনে আনতে পূজার উপকরণে মদের সংযোজন বলে জানা যায় নেইৎ-জাং আনুষ্ঠানিকতার শেষে ঘরের উঁচু স্থানে ঝুলিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

 

বদঃ নেইৎ

‘বদঃ নেইৎ’ গৃহপালিত প্রাণি রক্ষাকারী দেবতা হিসেবে পরিচিত। বছরের যেকোন সময়ই তাঁর পূজা দেয়া যায়। গৃহপালিত প্রাণির রোগব্যাধি থেকে মুক্তি ও গেরস্থালি জিনিস হারিয়ে গেলে চোর চিহ্নিত করতে পূজা দেওয়া হয়। বৈদ্য এ পূজা দিয়ে থাকে। সাধারণত নদীর তীর এ পূজা স্থান। স্থান নির্বাচন করার পর পরিস্কার করে চারটি গুংগা (বাশঁ সরু করে কেটে রংধনুর মত করে মাটিতে গাড়ানোকে গুংগা বলে), একটি পরিস্কার পানি ভর্তি বাঁশের চুংগা, তিনটি পুওয়েচা (বাঁশ ছেঁচে বানানো ফুল বিশেষ) গেড়ে পুজার স্থান প্রস্তুত করা হয়। গুংগার মাঝখানে পরিমাণ মত চাল তার উপর মুরগী কেটে রক্ত ও বলিকৃত মুরগির কলিজার এক টুকরো দিয়ে পূজার প্রথম পর্ব সম্পন্ন করে। এরপর ঐ স্থানের পাশে বলিকৃত মুরগীর গিলা-কলিজা তেল, মরিচ, লবণ সহকারে হালকা রান্না করে গুংগার মাঝখানে রেখে মন্ত্র পাঠ করে পূজার দ্বিতীয় পর্ব সম্পন্ন করা হয়। রান্নার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মসলা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার সর্ম্পূণ রূপে নিষেধ। মারমা লোক-বিশ্বাস মতে দেবতারা মসলা জাতীয় খাবার গ্রহণ করে না।  চোর ধরার ক্ষেত্রে বিশ্বাস আছে যে এ পূজার পর চোর রক্ত বমি করে এবং এর মাত্রা বাড়লে সে নিজে এসে মালিকের নিকট স্বীকার করে।

লেংদাউ নেইৎ

খ্যয়ং-শ্যাংমা দেবীর ছোট ভাই ‘লেংদাউ নেইৎ’। বিলম্বিত  প্রসবের বেদনা থেকে মুক্তি ও স্বাভাবিক প্রসবের জন্য লেংদাউ নেইৎ মারমাদের পূজা পেয়ে থাকে। প্রসূতি এ রূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে বৈদ্যের মাধ্যমে প্রথমে ডালায় চাল দিয়ে প্রসূতির মাথার উপরে রেখে মন্ত্র পাঠে লেংদাউ নেইৎ এর নিকট নিরাপদ প্রসবের জন্য প্রার্থনা করা হয়। এরপর ডালাসহ পার্শ্ববর্তী নদীতে গিয়ে কলার ভেলা বানিয়ে ভেলার উপর ডালাটি রাখে; ডালায় থাকা চালের উপর মুরগী কেটে কয়েক ফুটা রক্ত দিয়ে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে ভেলা ভাসিয়ে দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ আধুনিক চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ায় এতৎ অঞ্চলে লেংদাউ নেইৎ পূজা এখনও প্রচলন আছে।

 

মাদরা নেইৎ

আরোগ্যদায়ী দেবতা ‘মাদরা নেইৎ’।এ দেবতা মাদলা নামেও পরিচিত। বিশেষ করে শূন্য থেকে বার বছর পর্যন্ত শিশুর যে কোন রোগের মুক্তি ঘটে মাদরা দেবতার পূজায়। প্রধানত প্রচন্ড পেটে ব্যাথা ও ঘাম ঝরা মাদরা রোগের লক্ষণ। এর মুক্তির জন্য মাদরা দেবতার পূজার প্রচলন শুরু হয়। মারমা সমাজে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রবেশ পূর্বে এ মাদরা পূজা সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে বলে অনুমান করা যায়। এলাকাভেদে পূজার ধরনে ভিন্নতা লক্ষনীয়। তবে উভয় ক্ষেত্রে বৈদ্যের দ্বারা শাস্ত্রীয় মন্ত্র পাঠ প্রায় একই থাকে।

১। যাকে কেন্দ্র করে পূজা দেয়া হবে তার আশেপাশে পরিস্কার জায়গা নির্বাচন করে, সে জায়গায় ছোট নেইৎ-চাং (মাচাং সদৃশ্য) বানিয়ে, তার পাশে তাংখৈঙ(লম্বা বাশেঁ সাদা কাপড় লম্ব^া-লম্বি ঝুলানো কে তাংখৈঙ বলে) উত্তলন করে পূজার জন্য প্রস্তুত করা হয় । পূজার ডালিতে প্রদীপ,ফুল সহ দশ রকমের মিস্টি জাতীয় খাবার দিয়ে তা প্রথমে রোগীর সামনে রেখে মন্ত্র পাঠ ;এরপর সোজা প্রস্তুতকৃত পূজার নেচাং এর মাঝখানে গিয়ে পূজার ডালি বসিয়ে উত্তর-পূর্ব কোণ মুখী হয়ে বৈদ্যকে মন্ত্র পাঠ করে পূজা দিতে দেখা যায়। এ পূজার জন্য ভোর ও সন্ধ্যা সময়কে বেছে নেয়া হয়।

২। পূজার উপকরণ: সাতটি ছড়ার শামুক, সাতটি কাঁকড়া সাথে মাটির হাড়িতে দশ রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার ও একটি প্রদীপ।

পূজার স্থান: বড় গাছ তলা বা জঙ্গল। পূজার সময়: ভোর, সন্ধ্যা।

আনুষ্ঠানিকতা: রোগাক্রান্ত শিশুসহ মাকে পূজার স্থানে নতুন কাপড় নিয়ে উপস্থিত থাকতে হয়। বৈদ্যের মন্ত্র পাঠ শেষ হলে সেখানে দু’জনকে পুরাতন কাপড় ফেলে নতুন কাপড় পরিধান করে সোজা ঘরের রাস্তা ধরে ফিরতে হয়। এ সময় পিছন দিক থেকে কেউ ডাকলে ফিরে দেখা, পথে কারোর সাথে কথা বলা সর্ম্পূণ রূপে নিষেধ থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনির্বায হয়ে দাড়াঁয় বলে লোক বিশ্বাস প্রচলন আছে।

৩। সন্ধ্যার আলো-আধাঁরিতে কিংবা ভোর রাতে ঘরের চালের উপর উঠে মন্ত্র পাঠ করে বৈদ্য পূজা সম্পন্ন করে। পূজার উপকরণ হিসেবে মাটির হাড়িতে এক জোড়া কাঁচা ডিম, একটি কালো মুরগী ও যার উদ্দেশ্যে পূজা দেয়া হয় তার  ব্যবহৃত যে কোন জিনিস দেয়া হয়। পূজার সময় ঘরের চালে বৈদ্যকে বিবস্ত্র অবস্থায় পূজা দেওয়ার রেওয়াজ এ ধরনের পূজায় প্রচলিত। বর্তমান মারমা সমাজে এ পন্থায় মাদরা নেইৎকে পূজার বিলুপ্তি ঘটেছে বলে অনুমিত।

 

ছেং-ছা-বালা

‘ছেং-ছাং-বালা’ উভয় লিঙ্গ দেবতা। তাই একে দেব না দেবী নামে ডাকা হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা যায় পূজারীদের মাঝে। তবে অধিকাংশ ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায় ছেং-ছা-বালার এই লিঙ্গ পরিচয় সংকটের কারণে তাঁর নামের পিছনে নেইৎ (দেবতা) বা নেইৎমা/নেইৎ-সিমিং (দেবী) ব্যবহার করা হয় না। মারমাদের লোকবিশ্বাস মতে শিশুদের কান্না না থামার লক্ষণসহ হালকা জ্বরের উপশমকারী এ ছেং-ছা-বালা। সন্ধ্যা থেকে এ রোগ শুরু হয়। উপশমের জন্য বৈদ্যের মাধ্যমে পূজা দিতে হয়। পূজার ডালিতে আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত যে কোন জিনিস, তার উপর মায়ের দুধ এক ফুটা দিয়ে ঘরের উঠানে বা শিশু ঐদিন কোন বড় গাছ তলা বা পুকুর ধারে গিয়ে থাকলে সেখানে ছেং-ছা-বালার উদ্দেশ্যে মন্ত্র পাঠ পূর্বক পূজা দেয়া হয়। রাতকানা ক্ষেত্রেও ছেং-ছা-বালার পূজা মারমা সমাজে প্রচলিত। ছেং-ছা-বালার আছড় থেকে রক্ষার জন্য শিশুদেও সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের না করা; বাইরে নিলেও পুরানো কাপড়ের বেণী জ্বালিয়ে সঙ্গে নেয়া, দিনের বেলায় ঘরের সীমানার বাইরে নেয়ার পূর্বে পাতিলের কালির ফুটা শিশুর কপালে দেয়ার অঞ্চলভেদে প্রচলন আছে।

 

সৈতবী নেইৎ

শনি পূজার মারমা সংস্করণ ‘সৈতবী/ছিনিং নেইৎ’ পূজা। তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে মুক্তি বা কোন সাফল্য লাভের আশায় সৈতবী নেইৎ-এর নিকট মানত করার রীতি মারমাদের মধ্যে অঞ্চল ভেদে প্রচলন আছে। এ পূজার জন্য নূন্যতম দু’জন পুরোহিতের প্রয়োজন হয়। যে কোন পুরুষ এ পূজায় পুরোহিত হতে পারে। তবে তাকে সুর করে মন্ত্র পাঠ করতে জানতে হয়। অঞ্চলভেদে পুরোহিতের স্থলে বৌদ্ধ ভিক্ষু এ মন্ত্র পাঠ করে থাকেন । এ মন্ত্র দেখে দেখে পড়তে হয়। পুরোহিতকে পূজার জন্য প্রতিকী পারিশ্রমিক দিতে হয় এ ক্ষেত্রে পূজায় ব্যবহৃত পান-সুপারির কিছু অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে দেখা যায়।পূজার দিন শনি ও মঙ্গলবার । উঠানে মাদুর বিছিয়ে  পশ্চিমদিক মুখ করে প্রদীপ জ্বালিয়ে, চালের গুড়া,ফুলের স্তুপ,বাংলা কলার চামড়া ছিলে চালের গুড়া স্তুপের চারপাশে সাজিয়ে,পাশে পান ও শুকনা সুপারি রেখে পূজার আসর প্রস্তুত করা হয়। পুরোহিত মাথায় গামছা বা সাদা কাপড় বেঁধে পরিস্কার হাড়িতে স্তুপে থাকা কলা ও চালের গুড়া নিয়ে মেখে ‘ ও… সৈতবী ছিনিং সঃফুলউ…লউ’ বলে নূন্যতম তিন বার হাঁক দিয়ে সৈতবী দেবতাকে আমন্ত্রণ জানায়। মাখা শেষ হলে পরিস্কার পানি অথবা দুধ দিয়ে তরল করে প্রথমে দেবতার উদ্দেশ্যে পান ও সুপারির উপর এক কাপ ঢেলে পূজা দেয়। এরপর প্রথমে পূজার আয়োজক পশ্চিম দিক মুখ করে সৈতবী নেইৎ উদ্দেশ্যে প্রণাম করে পূজা গ্রহণের জন্য অনুরোধ ও বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ধন্যবাদ জানায়। পুরোহিত পাশে স্তুপ করে রাখা ফুল থেকে একটি ফুল পূজার আয়োজককে দেয় এভাবে উপস্থিত সকল পর্যায়ক্রমে প্রণাম করে থাকে।

পূজায় মিশ্রিত তরল ও সুপারি সকলের মাঝে বিতরণ করা হয়।

উপসংহার

উল্লেখিত দেবতা ছাড়াও মারমাদের লোক বিশ্বাসে জায়গা করে নিয়েছে আরো অনেক দেব-দেবী। তাঁদের মধ্যে ম্রুজং নেইৎ:, নিং নেইৎ: চছি:, ক্যয়ং জং নেইৎ:, রোখেয়া (রুকজমা):, ম্রুই ফলুৎ:, করহ্না গইং:, ইত্যাদি দেব-দেবীর পূজা এখনো অঞ্চলভেদে প্রচলন আছে। অতি-প্রাচীন কাল থেকে বৌদ্ধধর্ম পালন করলেও লোক দেবতার বিশ্বাস ও তাঁর পূজা পরিক্রমা মারমা সমাজে থেকে গেছে। তবে লোক বিশ্বাসের দ্বারা মারমাদের বৌদ্ধ ধর্মর্চচা যেভাবে প্রভাবিত ঠিক তেমনি লোক দেবতার পূজাও বৌদ্ধ ধর্মের আর্দশ দ্বারা ক্রমে প্রভাবিত হচ্ছে। এর প্রভাবে লোক দেবতা পূজায় পশু বলি ক্রমশ হ্রাস পেয়ে তার স্থলে কেবল প্রদীপ,ফুল,ফল,মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য দ্বারা পূজা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

 

 

এ সব পূজায় কেবল বিশ্বাস নয় এক শ্রেণির  ঐতিহ্যিক পেশাও জড়িত। লোকদেবতা  পূজাকে কেন্দ্র করে  মারমাদের বেত শিল্প, মন্ত্র সাহিত্যও উদ্ভব হয়েছে। যা মারমাদের শিল্প সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। সুতরাং বলা যায় মারমাদের দৈনন্দিন জীবনে, বিপদ -আপদে এই লোকদেবতারা যেমন জড়িয়ে পড়েছে তেমনি মারমাদের শিল্প-সাহিত্যেকেও সমৃদ্ধ করেছে ।

 

তথ্যঋণ:

১। জনাব অংসুই মারমা, কবি ও প্রাবন্ধিক;

২। জনাব মংসানাই মারমা, বৈদ্য, সোনাইআগা,রামগড়,খাগড়াছড়ি;

৩। জনাব অংগ্যজাই মারমা, বৈদ্য, সোনাইআগা,রামগড়,খাগড়াছড়ি;

[১১:১৬, ১৯/০৮/২০২৫] অনংধৎ ইু:

 

চিংলামং চৌধুরী, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।